জোৎস্না স্নাত রাত! ঘনঘটা অন্ধকার নেই। তবে জোৎস্না রাতে যেরকম আলো বিরাজমান থাকে তেমন নয়! মেঘাচ্ছন্ন আকাশ চাঁদের ম্লান আলো পুরোপুরি প্রকাশ করতে দিচ্ছে না! তবে মেঘাচ্ছন্ন আকাশে ম্লান চাঁদ দেখতে মন্দ লাগছে না! বরং মেঘমল্লার যেন সৌন্দর্য আরো একধাপ বাড়িয়ে দিয়েছে! দক্ষিণ পশ্চিম আকাশে অবস্থানরত চাঁদের আশে পাশে কালো মেঘও যেন চাঁদের আলো ধারণ করে উজ্জ্বীবিত হয়ে উঠেছে! সব মিলিয়ে যেন এক অপূর্ব স্বর্গীয় সৌন্দর্য একটু প্রতিচ্ছবি!
ধরনী জুরে মেঘে ঢাকা চাঁদের ক্ষিন আলোর বিচ্ছুরণ! সাথে তনুমন জুড়ানো মৃদু হাওয়া! গাছের পাতা গুলো দুলছে এলোমেলো! মজুমদার বাড়ির পরিবেশটা এই শীতল পরিবেশেও বেশ গরম! শমসের মজুমদার ওত্র এলাকার একজন স্বনামধন্য ব্যক্তি! প্রৌঢ় গোছের লোকটা এলাকার বড় মুরুব্বি! সবাই তার কথার উপর কথা বলার সাহস করে না। এমন কি বর্তমানের রক্ত গরম জোয়ান ছেলেপুলেও না! তার বাড়ির সামনের আঙিনায় এলাকার শালিশ বলো আর মিটিং সব হয়ে থাকে। পাতার ব্যাপারটা নিয়েও হারুণ মুন্সি, আজম, শুকলা, শরিফসহ সকলে শালিশ ডেকেছে। আর তাছাড়াও ঘটনাটা এলাকার সবার মুখে মুখে। শমসের মজুমদারের কানে পৌঁছাতেও সময় নেয় নি!
আঙিনা জুড়ে গোল বৈঠক! প্লাস্টিকের চেয়ার গোল করে পুরো আঙিনায় রাখা। সেখানে সব গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বসে। সম্মানিত মুরুব্বিদের চেয়ার গুলোর সামনে একটা টেবিল যার উপর পানির বোতল সহ কোল্ডড্রিঙ্কস! আর সাধারণ জনগণ দাঁড়িয়ে আছে পেছনে। মহিলাদের দল একটু দূরে খেজুর গাছের তলায় শান বাঁধানো জায়গায় বসে গুসুর ফুসুর করতে ব্যস্ত। লতা, পাতা ও লাবনী আক্তার তাদের পাশেই দাঁড়িয়ে রুম্পাকে কোলে নিয়ে। পাতা কালো ওড়নায় মুড়ে শান্ত হয়ে সব অবলোকন করছে। সে ভেঙে পড়ে নি মোটেও! কেন ভেঙে পড়বে! সে তো কোনো অন্যায় করে নি! না তার মনে কোনো দোষ আছে! তাহলে কেন ভেঙে পড়বে! ভয় পাবে? ভেঙে না পড়ে, মনে সাহস রাখলেও তার ভয় করছে! ভয় করছে ভরা মঞ্জিলে হেনস্থা হওয়ার! সে জানে এখানে কেউ তার কথা শুনবে না! তাকে কোনো কথা বলার সুযোগ দেয়া হবে না! বরং তার উপর আরো আরোপ লেগে কলঙ্কিত করতে পিছপা হবে না নিশ্চয়ই! আর শুকলা তো ভরা সভায় উপস্থিত! নাকে ব্যান্ডেজসহ! কু"ত্তার বাচ্চা তো চুপ থাকার মানুষ না! তবে পাতার ভেঙে না পড়ার এবং এক বুক সাহসের সাথে ভরা সভায় উপস্থিত থাকার সাথে বাবা, মা, ভাই সহ সকলের পাশে থাকা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আজ এতো বাজে স্মৃতির সাথে বাবার কিছুটা ভরসা ও ভালোবাসা আজীবন স্মরণে থাকবে! সে চোখের কোনে জমা জল মুছে সভায় মনোযোগ দেয়।
আতিকুর ইসলাম ও রাতুল ভুঁইয়া বসে আছে সকলের সাথে। রাতুলের কোলে ছেলে লাবিব! ছোট বাচ্চাদের এসব দরবারে আনা অনুচিত তবে রেখে আসারও ওয়ে নেই ফাঁকা বাড়িতে! লুবমান বাবার পাশে দাঁড়িয়ে আছে গম্ভীর মুখে। তার সম্মুখের চেয়ারে শুকলা বসে। হারুণ মুন্সি শমসের মজুমদারের পাশে বসে। সে মজুমদারের কানে কানে কিছু বললে তিনি মুখ খোলেন। আতিকুর ইসলামের উদ্দেশ্যে বলেন,
-" দেখো আতিক তোমারে আমরা চিনি একজন সৎ ভদ্রলোক হিসেবে। কখনো কারো সাথে না ঝগড়া বিবাদ, না কোনো হিংসা বিদ্বেষ দেখেছি। তোমার ঘরনী তোমার বড় মেয়েও বেশ নম্র ভদ্র। তোমার ছোট মেয়ের নামেও কিছু শুনি নি। তবে বেশ কিছুদিন হলো তার কিছু কিছু কথা কানে আসছিল! আর আজ এতো কিছু ঘটে গেলো! তুমি কি বলবে এ বিষয়ে?"
আতিকুর ইসলাম গম্ভীর শান্ত লোক। সে ঠান্ডা মাথায় বলে,
-" চাচা আমি সহজ-সরল মানুষ।কাজে কথায় সর্বদা সৎ থাকার চেষ্টা করি! আমার ছেলে মেয়েদেরও সেই শিক্ষাই গড়ে তুলেছি! ওরা কোনো অন্যায় কাজ করতে পারে না। পাতা আমার কাছে ছোট থেকে না থাকলেও বাবা হয়ে তাকে চিনতে ভুল করি নি! সে আমার রক্তই বহন করে! এতো বাজে কাজ কখনোই করবে না! করবে দূরের কথা চিন্তাও করতে পারবে না! আপনাদের কোথাও ভুল হচ্ছে!"
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লুবমান জোর গলায় বলে,
-" ভূল না। এটা সরযন্ত্র! ওই শুকলা মন্ডলের! তার চরিত্রের বর্ণনা আশা করি দিতে হবে না!"
শুকলা জলন্ত চোখে চায় লুবমানের দিকে। লুবমানের কড়া চাহনি তার উপরেই ন্যস্ত। হারুণ মুন্সি চেয়ার ছেড়ে উঠে লুবমানকে ধমকে বলে,
-" তোমার বাপের বয়সী সে! মুখ সামলে কথা বলো চ্যাংড়া! আর আমরা বড়রা কথা বলছিই তো! তুমি চুপ থাকো!"
আতিকুর ইসলাম ছেলেকে চুপ থাকতে বলে। রাতুল ছেলেকে বসিয়ে লুবমানের পাশে দাঁড়ায়! হারুণ মুন্সি চেয়ারে বসে। শরিফ ঠোঁট বাঁকিয়ে আতিককে ব্যঙ্গ করে বলে,
-" কাকা আপনি কাজ নিয়া পড়ে থাকেন! মেয়ের খোঁজখবর কিছু রাখেন?মেইন শহরে চলাফেরা সে একলা করে না। আমরাও করি! প্রায়ই তাকে ওই লোকটার লগে দেখা যায়। কখনো হাত ধরে হাসতে হাসতে তো কখনো একেঅপরের সাথে লেপ্টে! গাড়িতে উঠতেও কতবার দেখলাম! আড়ালে আবডালে হোটেলে.."
আতিকুর ইসলাম তাকে থামিয়ে বলে,
-" শরিফ ভিত্তিহীন কথা বলবে না। এমনি এক কথা বলবে আর আমরা মেনে নেব? আছে তোমার কাছে এসব প্রমাণ? আর কে বলেছে আমি কাজ নিয়ে পড়ে থাকি মেয়ের খোঁজখবর রাখি না! আমি যথেষ্ট খবর রাখি! আর এসব কথা কখনো কারো মুখে না শুনেছি না নিজের চোখে দেখেছি। আজ হঠাৎ তোমরা বলবে আর বিশ্বাস করে নেব? আগে দেখেছো, বলছো? কই কখনো আমায় বলো নি তো!"
-" চাচা.."
আতিকুর আবার তাকে থামিয়ে দিল।
-" কার কথায় এসব কালকাঠি নরছে বুঝতে পারছি! তোমরা যার কথায় নাচছো একবার তার চরিত্র ঘেঁটে দেখো? সে দুধে ধোয়া তুলসী পাতা? তার চরিত্র সম্পর্কে তুমি না জানলে ভালো তোমার মা বোনকে সহ এলাকার সব মা বোনদের জিজ্ঞেস করতে পারো! আমার মেয়ে শান্ত শিষ্ঠ! কিন্তু আত্মসম্মানে কেউ আঘাত করলে ছেড়ে দেবে না। সে যথেষ্ঠ স্ট্রং! তাকে নিয়ে খারাপ মন্তব্য করবে আকারে ইঙ্গিতে বাজে প্রস্তাব করবে আর সে চুপচাপ সহ্য করবে ? কখনো না! উচিত জবাব দিয়ে প্রতিবাদ করবে। আর আমরা তার পাশে আছি!"
শুকলা সহ কারোরই বুঝতে অসুবিধা হয় না কার কথা বলছে আতিকুর! কিন্তু তাঁরা অন্যায় যেনেও দাপট দেখিয়ে যাবে। এটাই তাদের বৈশিষ্ট্য! শুকলা পয়সাওয়ালা লোক। এখানে আসার আগে পকেট ভারী করেছে সাথে আরো দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তো তার পক্ষ ছেড়ে কথা বললে অন্যায় হবে না!! শুকলার একমাত্র ছেলে উপস্থিত সভায়। সে আঙ্গুল তুলে বলে,
-" বাহ চাচা ভালো! নিজের মাইয়ার দোষ ঢাকতে অন্যের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন! আমার তো সন্দেহ হচ্ছে আপনিই না আবার লোভে পড়ে মেয়েকে বড়লোক ছেলের পিছনে লেলিয়ে দিয়েছেন! মেয়ে নিয়ে ব্যবসা খুলে বসেছেন নাকি?"
শান্ত লুবমান উপস্থিত মুরুব্বিদের তোয়াক্কা না করে তেড়ে গিয়ে কলার ধরে একটা ঘুষি মারে!
-" শালা নিজেদের মতো ভাবিস সবাইকে?"
রাতুল ,আতিকুর এগিয়ে এসে ছেলেকে ধরে। শুকলার ছেলে শামিম মার খেয়ে চুপ থাকে নি। সেও দ্বিগুণ তেড়ে এসে লুবমানকে দুই তিনটা ঘুষি দেয়। আতিকুর, রাতুল থামাতে পারে না। বিশাল দেহি ত্রিশোর্ধ শামিমের কাছে ছাব্বিশ বছরের হ্যাংলা লাবিব যেন চুনোপুঁটি! উপস্থিত বাকি মুরুব্বিরা এসে থামায়। রাতুল লুবমানকে টেনে নিয়ে যায়। শুকলা দাত কিড়মিড় করে বলে,
-" জাওড়া পোলাপাইন সব! আমারে নাগর দিয়া মাইর খাওয়াইলো! পোলাডারেও ছাড়লো না! মজুমদার সাব আপনি বিচার করেন! এই নেশারু আমার ছেলেরে জখম কইরা দিলো! কয়েকদিন আগে না জেল খাইটা আইলো! বোনটা হইছে বেশ্যা আর ভাইয়ে খাজাখোর নেশাখোর!"
আতিকুর ইসলামও জোর গলায় বলে,
-" ভদ্র ভাষায় কথা বলবেন! সবাই আপনার মতো নোংরা স্বভাবের না! আপনার ছেলেকে আগে ঠিক করেন। আমার ছেলে কোনো নেশাখোর গাজাখোর না! উঠতি বয়সে এই এলাকার বাজে ছেলেদের প্ররোচনায় পড়ে দু একবার ছুঁইয়ে দেখেছিল। আমি রিহ্যাবে পাঠিয়েছিলাম। সে তার ভুল বুঝতে সময় নেয় নি! আর বাজে ছেলেগুলো কারা আমি আপনি ভালো করেই জানি! আর মেয়েকে নিয়ে কোনো বাজে কথা সহ্য করবো না। আমি ভালোর ক্ষেত্রে ভালো খারাপের বেলায় খুব কঠোর! বেশ্যাগিরি কারা করে বেড়ায় আপনার থেকে ভালো কে জানবে?"
শুকলা তেড়ে আসে,
-" বাহ সবাই দেহি সাধু! তুমি লোক ভালোমানুষীর মুখোশ পরে থাকো! এই পাতা মেয়ে ডা তোমার তো? নাকি ভাইরারে বউয়ের ঘরে ঢুকাইছিলা! তার জন্যই.."
আতিকুর ইসলাম আশ্চর্যের শেষ সীমানায়! এ কি লোক? এর ধর্ম কর্ম দেখে শয়তানও দৌড়ে পালাবে! ওপর দিকে হারুণ মুন্সি সহ শমসের মজুমদারের ঠোঁটের কোনায় শয়তানি হাসির ঝিলিক।
লুবমানকে রাতুল জাপ্টে ধরে। লুবমান তেড়ে যেতে নেয় শুকলার দিকে। রাতুল আটকায়। এই ছেলে মারতে পারবে না একটা! শুধু খেয়েই আসবে! আর তাছাড়াও মারামারি করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। আতিকুর ইসলাম কিছু বলবেন এর আগে রাতুল মুখ খোলে।
-" এসব কেমন চিপ মেন্টালিটির কথা? এসব বলে আপনারা নিজেদের জঘন্য মন মানসিকতার পরিচয় দিচ্ছেন! আপনি বয়স্ক মানুষ! এক পা কবরে অলরেডি চলে গেছে! এবার তো পরপারের চিন্তা করবেন? নাকি আল্লাহকে ভয় পান না? আপনার কথাবার্তা শুনেও মনে হয় না! আমি জামাই এ এলাকার! আমার শশুরকে এক যুগ হলো চিনি! তার মতো সচ্চরিত্রবান লোক কমই দেখেছি! আপনারা তো আমার আগে থেকেই দেখে এসেছেন। এখন তার নামে কুৎসা রটাচ্ছেন? আর আমার শ্যালিকা পাতার কথা! আসছি! আপনাদের সামনে উপস্থিত এই শুকলা মন্ডল লোকের চরিত্র সম্পর্কে আপনারা সবই জানেন বলে আমি মনে করি! এখন আপনারা এটা কেন স্বিকার করবেন না সেটা জানি না! হয়তো টাকা ওয়ালা লোক তাই! তবে টাকাই কিন্তু সব না! মজুমদার সাহেব আশা করি ন্যায় বিচার করবেন! এই লোকটা পাতার পিছনে পড়ে ছিল বেশ সময় ধরে। রাস্তা ঘাটে বাজে প্রস্তাবও দিতো! পাতা থাপ্পড় লাগায় জনসম্মুখে! এতেই ওনার মেল ইগোয় আঘাত হানে! রাস্তা ঘাটে হুমকি দিতে থাকে। মেয়ে মানুষ সে সম্মানের ভয় থাকবে না? আর তাছাড়া এসব বিষয় মেয়েরা কাউকে জানায় না ভয়ে! পাতার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে! কাউকে জানায় নি। একাই প্রতিবাদ করে গেছে। উনার সাজানো নাটক বলা চলে আজ দুপুরের ঘটনা.."
রাতুলকে থামিয়ে দেয় হারুণ মুন্সি। রেগে গলা চড়িয়ে বলে,
-" তুমি জামাই মানুষ বেশি কথা বলিও না! আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম। সচক্ষে দেখছি ওদের রঙ লীলা। আর ওই মাইয়া সাধু তো ওই পোলার লগে হাত ধইরা জরাজরি কইরা ঘুরাফেরা এগুলা বানোয়াট কথা? আমাদের আবাল পাইছো? মজুমদার ওই মাইয়ারে ডাকো? আজ ন্যাড়া করাইয়া মুখে চুনকালি লাগাবো!"
শমসের পানের পিক ফেলে সবার দিকে তাকিয়ে বলে,
-" আহ সবাই শান্ত হও তো! আমি সব শুনলাম! আতিক শুকলা সবার কথাই! জামাই বাবাজি তোমার সাথে কথা বলি! তুমি সত্যিই বলতাছো মাইনা নিলাম! বাকি সবাই কি তাইলে মিথ্যা বলতেছে? শুকলা খারাপ খুব খারাপ! একেবারে জঘন্য! পাতা মেয়েডা খুব ভালো! তয় তার নামেই এতোসব রটলো কেন? গ্রামে খারাপ মাইয়া আর নাই? কই তাদের কথা তো উঠলো না? শোন যা রটে তা কিছুটা হইলেও ঘটে! ওই মাইডাও সাধু না আবার শুকলাও সাধু না! আমি কি খারাপ কিছু বললাম?"
রাতুল কিছু বলবে কিন্তু সে বলতে দেয় না। এ লোক গভীর জলের মাছ! শমসের হেসে বলে,
-" তোমার থাইকা বেশি দুনিয়া দেখছি বুঝলা? এখন মাইয়াডারে ডাকো? তার কথা শুনি? দেখি কি বলে?"
রাতুল বুঝতে পারে এদের সাথে কথায় পারা যাবে না। এরা কোমড়ে গামছা বেঁধে নেমেছে! মুরুব্বি সবাই তাদের বিপক্ষে কথা বলছে! নিশ্চয়ই পকেট গরম করেছে। এখন আল্লাহ তুমি সহায় হও! আতিকুর ইসলাম ভিড় ঠেলে বেরিয়ে মেয়ের কাছে যায়। পাতা মাকে আকরে ধরে কাঁপছে। চোখ মুখ বিবর্ণ হয়ে আছে। সে এগিয়ে এসে মেয়ের কাছে দাঁড়ায়। বাকি মহিলা গুসুর ফুসুর করে কথা বলছে সেদিকে তাকিয়ে। আতিকুর মেয়ের মাথায় হাত রেখে বলে,
-" তোমার আব্বু, ভাই সাথে আছে। কিচ্ছু হতে দেব না!মনে সাহস রেখ! আসো?"
পাতা মাথা নাড়ে। আতিকুর মেয়ের কাঁধ জড়িয়ে নিয়ে আসে ভরা দরবারে। পাতা মাথা নিচু করে বাবার পায়ের সাথে পা মেলায়।
জনসম্মুখে দাঁড়িয়ে সে! সকলের দৃষ্টি তার দিকে নিবদ্ধ! পাতা চোখ বুজে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। চোখ খুলে ভাইয়ের জখম হওয়া মুখ দেখে। বাবার হাত জোড়া শক্ত করে চেপে ধরে নিজেকেও শক্ত করে। নাহ পাতা! তোকে দূর্বল হলে চলবে না! সাহস রাখতে হবে!পাতা বিড়বিড় করে পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করে 'ইয়া রহমান! ইয়া রাহিম তুমি তোমার এই পাপি বান্দার সহায় হও! সাহায্য করো! সকল বালা মুসিবত থেকে মুক্ত করো!'
হারুণ মুন্সি পাতাকে কিছু বলবে শমসের থামিয়ে গলায় ঝুলানো একটা কাটার মতো তামার চিকন সুইয়ের মতো দন্ড দিয়ে দাঁত খিচে বলে,
-" পাতা! তুমিই পাতা! দেখতে শুনতে ভালোই তো! তোমার নামে তো বেশ অভিযোগ জমা হয়েছে! এখন তুমি কি বলতে চাও? দেখো সত্যিটা বলবে! এতে শাস্তির ভার কমে আসবে! আর ..."
আর বলতে পারে না। তীব্র ধ্বনিতে বেজে ওঠা হর্ণের শব্দে থেমে যায়। হর্ণের আওয়াজ থামে না। বেজেই চলেছে। সবার নজর রাস্তায় দাঁড়ানো বি এম ডাবলিও গাড়ির দিকে। গাড়ির হেড লাইট জ্বালানো! সবাই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সেদিকেই চায়। পাতাও ঘার ঘুরিয়ে চায় চোখ ছোট করে। দেখতে পায় গাড়ি থেকে নামে দুজন লোক। দূর থেকে মানুষের ভিড়ে চিনতে পারে না। লোক দুটো বাড়ির আঙিনায় আসে। লাল নিয়নবাতির আলোয় দৃশ্যমান হয় তাদের মুখশ্রী। সবাই সরে গিয়ে সভার ভিতরে প্রবেশ করতে সাহায্য করে। পাতা পাশের জন কে চিনতে পারে না। তবে অরুণ সরকারকে চিনতে ভুল হয় না। শার্ট প্যান্ট পড়নে সাধারণ বেশে। চোখে চশমা পড়া! গম্ভীর মুখটা যেন আরেকটু গম্ভীর হয়ে আছে। তাদের একটু দূরে দাঁড়িয়ে পকেটে হাত গুজে সম্মুখ পানে চেয়ে বলে,
-" মাই সেল্ফ অরুণ সরকার!"
.
.
.
চলবে......................................................................