আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

আরোরা - পর্ব ১৪ - তাসমিয়া তাসনিন প্রিয়া - ধারাবাহিক গল্প


#আরোরা (ফ্যান্টাসি, রোমান্টিক)
#পর্ব_১৪
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া



রৌদ্রজ্বল দিন। হলিথান শহরের বাজারে আজ অন্য দিনের থেকে লোকজনের সমাগম একটু বেশি। মেঘলা দিন মানেই এখানে আতংক বিরাজ করে। তবে একটা বিষয় হচ্ছে আগের তুলনায় ভ্যাম্পায়ারদের আনাগোনা কমে গেছে। কিন্তু ওয়ারউলফরা ঠিকই প্রতিদিন মানুষ শিকার করে যাচ্ছে। আজ কোনো কৃষককে কিংবা কাল কোনো ব্যবসায়ীকে। এখানকার লোকজনের কাছে এখন এসবকিছু স্বাভাবিক হয়ে গেছে। বাজারের পূর্ব পাশে বড়সড় একটি মাংশের দোকান। দোকানের মধ্যে দুপাশে সারি করে মাংশ সাজিয়ে রাখা। গুলিনদের ভেড়ার মাংসের ব্যবসা। তবে ইদানীং ব্যবসায় তেমন ভালো যাচ্ছে না। অবশ্য সেসব নিয়ে গুলিনের তেমন ভাবান্তর ঘটেনা। ওদের আর্থিক অবস্থা বেশ উন্নত। দোকানে গুলিন বাদেও আরো দু'জন কর্মচারী আছে। ওরাই মূলত কাজকর্ম করে, গুলিন শুধু কাজ ঠিকঠাক মতো হচ্ছে কি-না সেসবের তদারকি করে। এনা সব সময় এদিক থেকেই চিকিৎসালয় যাওয়া-আসা করে। আজও সকাল সকাল ক্যারিজে করে রওনা হয়েছে সে। গুলিন জানে ঠিক কোন সময় এনা যাবে। তাই সেই সময়টাতে একদৃষ্টি রাস্তায় তাকিয়ে থাকে সে। এনা অবশ্য গুলিনকে পাত্তা দেয় না। কিন্তু অবহেলা পেলে মানুষ আরো বেশি করে ভালোবাসতে চায় সেকথা এনা ভাবে না। 

চাঁদের আলো ম্লান হয়ে গেছে। অন্ধকারে ছেয়ে গেছে হলিথান শহরের অলিগলি। রাতের নিস্তব্ধতা ছাপিয়ে মাঝে মধ্যে কোথাও থেকে কুকুরের ডাক ভেসে আসছে। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে আরোরা। আঁখি ছলছল করছে মেয়েটার। জীবনটা কেমন এক রাতের মধ্যে এলোমেলো হয়ে গেলো ভাবতেই বুকটা কেমন হু হু করে উঠছে। এডওয়ার্ডকে চাইলেও জড়িয়ে ধরতে পারছেনা,পারছে না একটু দু-চোখ ভরে দেখতে। সে এক ভীষম যন্ত্রণা! আরোরার আকাশপাতাল ভাবনার মাঝে হঠাৎ আশেপাশে কোথাও থেকে কারো আর্তনাদ ভেসে এলো। আরোরা নড়েচড়ে দাঁড়িয়ে কান খাঁড়া করে শব্দের উৎস কোথায় বোঝার চেষ্টা করছে। 

আচমকা আরোরার বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে নেকড়ের আনাগোনা দেখে সতর্ক হয়ে গেছে এডওয়ার্ড। আকাশে ভেসে আরোরার বাড়ির দিকে নজর রাখছিল সে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ভালো করে তাকাতেই লিওকে দেখতে পাচ্ছে। কিন্তু লিও এমন অদ্ভুত আওয়াজ করছে কেনো? এমন করে শব্দ করছে মনে হচ্ছে কেউ বিপদে পড়েছে! কিছুটা সময় অতিক্রম হতেই এডওয়ার্ডের খেয়ালে আসলো এসবকিছু আরোরাকে বাইরে বের করার জন্য হয়তো। আরোরা যে আগের মতো ভীতু নেই সে তো এডওয়ার্ড জানে। তাই রাতে কেউ বিপদে পড়েছে ভেবে নিশ্চিত মেয়েটা বাসা থেকে বের হবে। এডওয়ার্ডের সমস্ত শরীর রাগে থরথর কাঁপছে। আজকে লিও এর শেষ করেই ছাড়বে সে। এডওয়ার্ড মাটিতে নামতেই যাবে এমন সময় অন্য একটা নেকড়ের আগমন ঘটলো। ধবধবে সাদা রঙের একটা নেকড়ে দাঁড়িয়ে আছে লিও এর সামনে। শ্বেতরশ্মি বিচ্ছুরিত হচ্ছে ওর চোখ থেকে। সাদা নেকড়েটাকে দেখে লিও নিজেও অবাক হয়ে গেছে। এমন ধরণের নেকড়ে তাদের সম্রাজ্যে দেখেনি লিও। এডওয়ার্ড নিঃশব্দে একটা গাছের আড়াল থেকে ওদের উপর নজর রাখতে লাগলো। 
" কে তুই? আগে তো দেখিনি!"
লিও মনুষ্য রূপে থেকেই সামনে দাঁড়িয়ে থাকা শুভ্র রঙের নেকড়েকে জিজ্ঞেস করলো। কিন্তু প্রত্যুত্তরে কিছু বললো না সে। আশেপাশে ভালো করে নজর বুলিয়ে অন্য দিকে চলে যেতে লাগলো নেকড়েটা। যেনো লিওকে কোনো পাত্তা দেওয়ার দরকার নেই। বিষয়রা লিও এর গায়ে লেগেছে ভীষণ। সে নেকড়ের রূপ ধারণ করে শুভ্র রঙের নেকড়ের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে আক্রমণ করার জন্য উদ্যোত হতেই পাল্টা আক্রমণের শিকার হলো। শেতাঙ্গ নেকড়ের থাবায় কিছুটা দূরে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো সে। ব্যথায় গোঙানির মতো শব্দ হতেই এডওয়ার্ড মুচকি হাসলো। বেশ হয়েছে। বজ্জাত নেকড়ে একটা। লিও এর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে মানবী রূপ ধারণ করলো শুভ্র রঙের নেকড়েটা। লিও এর বিস্ময় কাটছে না। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা। 
" তুমি! "
লিও অস্ফুটে স্বরে বলে উঠলো। ওদিকে এডওয়ার্ড পেছন দিকে থাকায় কারো চেহারা দেখতে পারছে না। 
" হ্যাঁ আমি। কী ভেবেছিলেন? আমাকে মারা এতো সহজ? আমি চাইলে এই মুহুর্তে তোমার প্রাণ নিতে পারি।"
" আমি বুঝতে পারিনি তুমি মানুষ নও। আমাকে ক্ষমা করো। আসছি।"
লিও আরকিছু না বলে ব্যথা ভর্তি শরীর নিয়ে যতটা দ্রুত সম্ভব পালিয়ে গেলো। এডওয়ার্ড গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে এখন। মন ও মস্তিষ্ক বিদ্রোহ শুরু করেছে। সবকিছু কেমন এলোমেলো লাগছে এডওয়ার্ডের। কিন্তু নিজেকে সামলে নিতে হবে সবকিছু, সবকিছুই। লিও এর চলে যাওয়ার পথের দিকে খানিকটা সময় তাকিয়ে থেকে পেছন ফিরতেই চমকে উঠে আরোরা! এডওয়ার্ড! এখন এখানে?
" এডওয়ার্ড! "
আরোরার বিস্ময় কাটাতে এডওয়ার্ড ওর দিকে এগিয়ে আসলো। মুচকি হেসে বললো, 
" হ্যাঁ আমি। সবকিছু ঠিক আছে, শান্ত হও তুমি। "
" তুমি মানে আসলে কতক্ষণ ধরে আছো এখানে? "
" তুমি আসার আগ থেকে। "
এডওয়ার্ডের কথার বিপরীতে আর কী বলবে বুঝতে পারছে না আরোরা। তাহলে সবকিছুই জেনে গেছে এডওয়ার্ড! আরোরার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে এডওয়ার্ড আলগোছে কোমর ধরে নিজের কাছে টেনে নিলো আরোরাকে। বুকে মাথা চেপে ধরে, মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
" আমার ভালোবাসায় কি কোনো কমতি আছে? না-কি বিশ্বাস করতে পারোনি? আমাকে তো সবকিছু বলতে হতো! বললে না কেনো আরোরা?"
এডওয়ার্ডের শান্ত ভঙ্গিতে বলা প্রতিটি কথা আরোরার বুকে ঝড় সৃষ্টি করেছে। দু'হাতে পিঠ শক্ত করে আগলে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো সে। এডওয়ার্ডও আরেকটু গভীরভাবে জড়িয়ে নিলো আরোরাকে।
" এডওয়ার্ড আমি ভেবেছিলাম তুমি ভয় পাবে কিংবা এসব শুনে আমাকে ঘৃণা করবে অথবা আমার সাথে থাকলে তোমার বিপদ হবে। "
" শান্ত হও আরোরা, চুপ চুপ করো। "
আরোরার কান্নারত অবস্থায় এডওয়ার্ড এসব নিয়ে কথা বলতেই চাচ্ছে না। প্রিয়তমা ভীষণ মানসিক অশান্তিতে ছিলো ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে এডওয়ার্ডের।
ঠিক কতক্ষণ দু'জন দু'জনাকে জড়িয়ে ধরে আছে কারোরই খেয়াল নেই। আরোরা এখন কিছুটা শান্ত হয়েছে। এডওয়ার্ড আরোরার মাথায় এখনো হাত বুলিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। 
" আরোরা!"
" হুম। "
" বাসায় যাবে না?"
" তোমার ভয় করছে না? "
আরোরা এডওয়ার্ডের চোখের দিকে দৃষ্টিপাত করলো। এডওয়ার্ড জবাবে মৃদু হেসে বললো, 
" নাহ! "
" জানতে চাইবে না কীভাবে এসব হলো?"
" আগামীকাল শুনবো সবকিছু। আর কালকেই তোমাকে বিয়ে করবো। আমি এনার সাথে কথা বলে রেখেছিলাম। তোমার সম্মতি বাকি!"
আরোরা চমকাল এডওয়ার্ডের কথায়। এতো ভালোবাসে? অথচ এডওয়ার্ড কেনো এতো তাড়াহুড়ো করে বিয়ে করতে চাইছে সেসবের কিছুই আন্দাজ করতে পারছে না মেয়েটা। ছলছল নয়নে সে বললো, 
" আমাকে তো অনেক আগেই তোমার নামে করো দিয়েছি।"
" বেশ! উত্তর পেয়ে গেছি।"
আরোরা এডওয়ার্ডের বুকে মুখ গুঁজে উষ্ণ নিঃশ্বাস ছড়ালো। এডওয়ার্ড ওভাবেই ধরে ধরে বাসার দিকে এগোতে লাগলো। মেয়েটার ভীষণ হাসি পাচ্ছে এডওয়ার্ডের এই পাগলামি দেখে।

দু'দিন ধরে সাঁচির ধুম জ্বর। সেই নিয়ে মেরিনা ভীষণ চিন্তিত। একমাত্র মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে সব মায়েরই চিন্তা হয়। সাঁচির মায়ের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে আছে সাঁচি। বালিশের পাশে বসে কপালে জলপট্টি দিচ্ছেন মেরিনা। সুস্থ মেয়েটা হুট করে কেমন অসুস্থ হয়ে গেছে এসব ভেবে চোখের জল ফেলছেন তিনি। সাঁচি এতটা অসুস্থ যে ক্যারিজে বসিয়ে একা একা হলিথান শহর পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারছেনা মেরিনা। সাঁচি আবছা আবছা মায়ের ক্রন্দনরত হতবিহ্বল মুখশ্রী দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। 
" মা এভাবে কান্না করছো কেনো? আমার তো একটু জ্বর হয়েছে শুধু। "
সাঁচি থেমে থেমে কথাগুলো বললো। ভীষণ দূর্বল শোনাচ্ছে কণ্ঠস্বর। মেরিনা মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে বলেন,
" তোর একটু জ্বরেই আমার ভেতরটা তো তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে। কালকেই যেভাবে হোক তোকে ডাক্তার আপার কাছে নিয়ে যাবো।"



চলবে...........................
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।