পাতার পদযুগল থেমে যায় শুকলার ডাকে। পাতার মন খানিকটা ভিত হয়। শুকলার মনে কি চলছে? সে অরুণকে উদ্দেশ্য করে ধীমে সুরে বলে,
-" মি. ভোরের বাবা আপনি চলে যান প্লিজ! প্লিজ?"
অরুণ যায় না। পাতার চিন্তিত মুখশ্রী দেখে সামনের লোকদের পরখ করে নেয়। পাঁচজন মধ্যবয়স্ক লোক। দুজনের পরনে পাজামা পাঞ্জাবী একজনের পরনে ফতুয়া লুঙ্গি অপর দুজন খালি গায়ে লুঙ্গি পরে হনহন করে তাদের সামনে আসে। অরুণ পকেটে হাত ঢুকিয়ে গম্ভীর মুখে তাদের পর্যবেক্ষণ করে। লোকগুলোর হাবভাব সুবিধাজনক নয়।
শুকলাসহ বাকি চারজন লোক পাতার সামনে দাঁড়িয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দুজনকে পর্যবেক্ষণ করে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক লোকটির নাম হারুণ মুন্সি! সে পানের পিক ফেলে মাথার টুপি ঠিক করে পাতার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালো। লাল টকটকে ঠোঁট আওড়িয়ে জিজ্ঞেস করে,
-" কি চলতেছে এইখানে? এই বেডা কেডা?"
পাতা ঘাবড়ে যায় খানিকটা। কপাল বেয়ে শ্বেদ জল গড়িয়ে পড়ে। ঢোক গিলে উত্তর দেয়,
-" আমার এক ছাত্রের বাবা! ছাত্র ওইযে গাড়িতেই। একি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল তাই ড্রপ করে দিল!"
অরুণ মাথা নেড়ে সায় জানালো পাতার কথায়।
তবে লোকগুলো তাদের কথা বিশ্বাস করলো বলে মনে হয় না। ওরা বেশ সময় নিয়ে ওদের পর্যবেক্ষণ করছিল। পাতার লাক্সারি গাড়ি থেকে বের হওয়া! তার পর গাড়ি থেকে একজন তাগড়া পুরুষ বেড়িয়ে পাতার কাছে যাওয়া। তাদের আলাপ আলোচনা কানে না আসলেও তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পড়ে ফেলছিলো যেন। তারা যখন পুরুষটিকে শার্ট খুলে পাতার কোমড়ে বেঁধে দিল তখন শুকলার কথায় আর বসে থাকে না। হন্তদন্ত পায়ে চলে আসে। এই লোকটাকে পাতার সাথে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় এর আগেও দেখেছে। আর শুকলাও বলেছে পাতাকে শহরে এই লোকের গাড়িতে উঠতে বসতে অনেক বার দেখা গেছে! তাদের নজরে এটা তো চলতি ফিরতি বেহায়াপনা! এটা চলতে দেওয়া যাবে না! লোকগুলোর মধ্যে শরিফ নামক একটি লোক কোমড়ে বাঁধা গামছাটা খুলে কাঁধে নিয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,
-" সেটা তো দেখতেই পেলাম! নামায়া দিয়া রসের আলাপ জুড়িয়ে দিছিলা! শার্টও খুলল লোকটা! কোমড়ে বেঁধেও দিলো! "
অরুণের শরীরের রক্ত কনিকা শীরায় শীরায় যেন জ্বলে উঠলো। হাতের মুঠ শক্ত করে। লোকটার বলার ভঙ্গি কতটা বিশ্রী! পাতা চোখ বুজে নিজেকে শান্ত করে। চোখ খুলে কিছু বলবে এর আগেই অরুণ শক্ত কণ্ঠে বলে,
-" আপনারা যেমন ভাবছেন তেমনটা নয়! ওনার.."
অরুণ থেমে যায়। পাতার শারীরিক সমস্যার কথা বলা ঠিক হবে না। এমনিতেই এই লোকগুলোর মন মানসিকতা জঘন্য বলেই মনে হচ্ছে!
শুকলা মন্ডল আর চুপ থাকে না। পাতার আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করে বলে,
-" চোরের মন পুলিশ পুলিশ তাই না? এই যে মামুনি ছাত্রকে পড়াইয়া আইলা নাকি ছাত্রের বাপকে? বাপকেই মনে হয়! খুব ভালোভাবেই পড়িয়েছো মনে হয়! শার্ট খুলে সম্মাননা দিল!"
পাতা জলন্ত চোখে চায় শুকলার দিকে।যেন নজরেই ভস্ম করে দেবে।
-" জবান সামলে কথা বলবেন আঙ্কেল! নিজের মতো সবাইকে ভাবেন নাকি? একদম বাজে ইঙ্গিতে কথা বলবেন না!"
শুকলার পাশ থেকে আরেকজন লোক পাতাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-" বাহ বাহ কথার ধার আছে দেখছি! দেখে তো মনেহয় ভাজা মাছ উল্টিয়ে খাইতে জানে না! এই মাইয়া তুমি এতো সাধু তো ভর দুপুরে জোয়ান মাইয়া হইয়া পর পুরুষের সাথে ঢলাঢলি করো ক্যা? এর আগেও অনেকবার দেখেছি তোমায় এই বেডার লগে! আতিক তো ভালো মানুষ তার বড় মাইয়াটাও বেশ ভালো! তোমারেও ভালোই ভাবতাম! কিন্তু এতো দেখি উপরে ফিটফাট ভিতরে সদরঘাট!"
পাতার সর্বশরীর রাগে কাঁপছে। চোখ ফেটে জল মনে হয় এই গড়িয়ে পড়বে কিন্তু পড়ছে না অনেক কষ্টে আটকে রেখেছে। চোখের পানি সামনের মানুষকে দুর্বলতার হাতছানি দেয়। অরুণ আশ্চর্য বনে যায়। এই লোকগুলো তো কোমড় বেঁধে নেমেছে। সে কিছু বলবে এর আগে শুকলা মন্ডল ছিঃ ছিঃ করে বলে,
-" আরে কি যে বল না আজম! ওর তো জন্মেরই ঠিক নাই! ওর বাপ আতিক নাকি তার ভাইরা রহিমা কে জানে। কয়েকবছর আগে রহিম রেখে গেল না! না জানি ওইখানে কি কান্ড ঘটাইয়া আইছে! "
শুকলা পাতার সামনেই দাঁড়িয়ে। পাতা সময় ব্যয় করে না। পায়ের স্লিপার খুলে শুকলার গালে ঠাস করে মারে। উপস্থিত সবাই হতবাক। অরুণ তো পুরাই শকড্! এতো ছোট প্যাকেট বড় ধামাকা! কি সাহস এইটুকুনই মেয়ের। পাতা চিবিয়ে চিবিয়ে শুকলাকে বলে,
-" তোর নিজেরই তো জন্মের ঠিক নেই। আবার অন্যের ব্যাপারে কথা বলিস বেজন্মা?"
শুকলা যেন ক্ষ্যাপা পাগলা কুকুর বনে গেছে। পাতার দিকে তেড়ে এসে স্কার্ফের উপর দিয়েই চুলের মুঠি চেপে ধরে।
-" মাগি! বেশ্যাগিরি করিস আবার মুখে বড় বড় কথা! না"গর নিয়ে ঘুরিস রাস্তাঘাটে ঢলাঢলি করিস আর আমরা বললেই দোষ! আজম, শরিফ, মুন্সি দেখছো মাগির ত্যাজ?"
অরুণ শুকলার হাত থেকে পাতাকে ছাড়িয়ে ঠাস ঠাস করে পর পর তিনটা চর লাগায় শুকলাকে। চরের জোর এতো ছিলো যে শুকলার কানে ঝিঁঝিঁ ধরে। ঠোঁটের কোনা বেয়ে ক্ষারীয় পদার্থ বেরিয়ে আসে। পাতা অরুণের পিছনে দাঁড়িয়ে। তার চোখ ছাড়িয়ে কপোল বেয়ে বারিধারা বহমান। অরুণ শক্ত চোয়ালে দাঁড়িয়ে। চোখ দুটো যেন জলন্ত কয়লা! সবাইকে রাখ করে দেয়ার প্রচেষ্টায়!
-" মুখ সামলে কথা বলবেন! ফেলা থুতু আর বের হয়ে আসা জবান কখনো ফিরিয়ে নেয়া যায় না! আর কার সামনে কথা বলছেন একটু জেনে নিবেন!"
হারুণ মুন্সি সবার মধ্যে মুরুব্বি গোছের সে অরুণকে ধাক্কিয়ে সরিয়ে দিল। শরীফ সবার মধ্যে জোয়ান তাগড়া যুবক। সে এগিয়ে এসে অরুণের টি শার্টের কলার টেনে ধরে,
-" কে রে তুই? হুম? মেয়ে নিয়ে লটরপটর করিস আবার বড় বড় কথা! শালা বারো..."
আর বলতে পারে না। ব্যথাতুর ধ্বনিতে আর্তনাদ করে ওঠে। অরুণ তার হাত কৌশলে পিছনে নিয়ে মুচরে ধরে।
-" বলেছিলাম না জবান সামলে! এমন মার মারব নিজের মায়ের নাম ভুলে যাবি! আমি অরুণ সরকার কি জিনিস তোদের ধারনার বাইরে!"
বলে লাথি মেরে ফেলে দেয় পিচঢালা রাস্তায়। পাতা অরুণের টি শার্টের কোনা চেপে। বাকি লোকগুলো অরুণ সরকার নাম শুনে খানিকটা ঘাবড়ে যায়। তারা এগোনোর সাহস পায় না।
একটু দূরে গাড়িতে বসে ড্রাইভার ও আভারি ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করছিল। হঠাৎ পাতাকে জুতো দিয়ে কাউকে মারতে দেখে তাদের চোখ কপালে। গাড়ি থেকে বের হয়ে অরুণকে মারামারি করতে দেখে পা চালায় দ্রুত। ছোট্ট ভোর অচেনা কাউকে বাবার কলার ধরতে দেখে কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে যায়। দৌড়ে গিয়ে অরুণের পা জড়িয়ে আব্বু বলে কেঁদে ওঠে। আভারি ড্রাইভার ও ঘটনাস্থলে পৌঁছে। অরুণ লোকগুলোর দিকে কড়া চাহনি নিক্ষেপ করে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে আভারিকে বলে,
-" ওকে নিয়ে যাও। আমি আসছি!"
আভারি ভোরকে কোলে নিল জোর করে। সে বাবাকে ছাড়া যাবে না! কাঁদতে থাকে। আভারি ও ড্রাইভার তাকে নিয়ে একটু দূরে যায়।
এলাকার ভিতরের রাস্তা। আশে পাশে কিছু বসতবাড়ি। সবুজ ধানক্ষেত আশেপাশে। কেউ কেউ গন্ডগোল দেখে এগিয়ে আসে। জানতে চায় কি হইছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হারুণ মুন্সি তাদের কিছু বলে না। অরুণকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-" তোমার বাবার নাম অনিক সরকার? তুমি সরকার জুয়েলারি ফ্যাশন হাউসের মালিক?"
অরুণ মাথা নাড়ে। হারুণ মুন্সি পরিস্থিতি সামলাতে চেষ্টা করে। কিন্তু শুকলা যেন তা চাইছে না। সে থুতু ফেলে জমিনে। থুতুর সাথে তাজা রক্ত দৃশ্যমান। এতো সহজে ছাড় দেবে না সে। অরুণের পিছনে চুপটি মেরে দাঁড়িয়ে থাকা পাতার দিকে ঘার বাঁকিয়ে বললো,
-" বাহ বেশ্যা মাগি ভালোই মালদার মাল ধরছিস! একেবারে সোনার হরিণ! শরীর খুশি করার সাথে মাল পানিও ভালোই পাস তাই না?"
অরুণ তেরে এসে হাত মুঠ করে নাক বরাবর ঘুষি মারে। দন্ডায়মান শুকলা রাস্তায় পড়ে যায়। অরুণ তার পেটে এক লাথি লাগায়।ড্রাইভার ও হারুণ মুন্সি এসে অরুণকে ধরে সরে নিয়ে যায়। পাতা দু হাতে মুখ ঢেকে ডুকরে কেঁদে ওঠে। শুকলার নাক ফেটে গলগলিয়ে তাজা রক্ত মনে হয় ঢেলে দিচ্ছে। পেটে লাথি দেয়ার দরুণ গুঙ্গিয়ে জ্ঞান হারায় শুকলা মন্ডল! হারুণ মুন্সি অরুণকে সরিয়ে এনে কড়া গলায় বলে,
-" দেখ তুমি হবে তোমার এলাকার স্বনামধন্য শক্তিশালী ব্যাক্তি! এখানে তোমার দাপট চলবো না! শুকলার কিছু হয়ে গেলে ঝামেলায় পড়বা বইলা দিলাম! যাও এখান থাইকা?"
আশেপাশের কয়েকজন সাথে সাথে গর্জে ওঠে। তাদের এলাকায় এসে তাদের এলাকার লোককে মেরে আধমরা করবে আর তারা এমনি এমনি যেতে দেব?
-" মুন্সি এইডা কি কও? যাইবো মানে? বেডারে ধইরা বান্ধো! এমনি এমনি যেতে দেব নাকি!"
অরুণ ঝটকায় মুন্সি ও ড্রাইভারের হাত থেকে ছাড়িয়ে নেয়।
-" যাবো মানে? আমিও এর শেষ দেখতে চাই! আপনাদের কত ক্ষমতা দেখান? আমার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আপনারা!"
হারুণ রেগে আঙ্গুল তুলিয়ে বলে,
-" বেশি সাহস ভালো না মিয়া! এটা শহর না যে মাইয়া মানুষের সাথে ওরকম রঙ ঢঙ নিয়ে ঘুরে বেড়াইবা! এখন যাইতে বলছি যাও? ঝামেলা বাড়াইয়ো না!"
অরুণ ঘেমে একাকার। টি শার্ট গায়ে লেপ্টে। ফর্সা মুখ রাগে ও গরমে লাল হয়ে আছে। মুখশ্রী জুরে শ্বেদ জলের মেলা! সে কিছু বলবে এর আগে ড্রাইভার অরুণের কাছে গিয়ে মিনমিন করে বলে,
-" স্যার ভোর বাবা কাঁদছে এসব দেখে! ভয় পেয়েছে অনেক, চলুন স্যার। এসব ঝামেলায় পড়বেন না!"
অরুণ দূরে দাঁড়িয়ে থাকা আভারির কোলে ক্রন্দনরত কলিজার মুখখানি দেখে শান্ত হয় খানিকটা। তারপর পাশ ফিরে পাতার কান্না করা মায়াময় মুখখানি দেখে রাগ যেন ফিরে আসে। তবে নিজেকে শান্ত রাখে!
-" আপনাদের মন মানসিকতা যে কতটা জঘন্য তার পরিচয় পেলাম। সি ইজ আয় সান'স স্কুল টিচার! ছেলেটা তাকে বেশ পছন্দ করে! ওনার বাড়িতেও এসেছিল একবার! ওনার বাবাও আমার পরিচিত! রাস্তায় টিচারকে দেখে গাড়িতে উঠতে বায়না করে!উনি মানা করলেও শোনে না জোর করেই বসায় একপ্রকার! এখানে নামিয়ে দিই। গাড়ি থেকে নামার সময় শাড়িটা ছিঁড়ে যায় বাজে ভাবে। আশেপাশে লোকজন ছিল তাই শার্টটা বেঁধে দিলাম! আর আপনারা তিল থেকে তাল বানালেন!"
বলে থামে। পিনপিন নিরবতা! ঘটনাস্থলে পরে আসা লোকজন এখন বুঝতে পারে। হারুণ মুন্সিও খানিকটা দমে যায়। তারা সবাই শুকলার উস্কানিমূলক কথাবার্তা শুনে যাচাই-বাছাই না করেই চলে এসেছে । কিন্তু এখন মাঝপথে থেমে গেলে হবে না! সেও অরুণের মতো গলা চড়িয়ে বলে,
-" আমাদের চুল এমনি এমনি পাকে নি। কিছুটা হলেও বুঝতে পারি! এই মাইয়া বাড়ি যাও?"
পাতাকে শাসনের সুরে বলে। পাতা অরুণের দিকে চায়। অরুণ হারুণের দিকে তাকিয়ে বলে,
-" মিস পাতা আপনি যান! আর কেউ কোনো টু কথা বললে আমাকে জানাবেন সাথে সাথে। এদের একেকটাকে দেখে নেব! খুব এসেছে একেক মাতব্বর! যান আপনি। আমি এখানেই দাঁড়িয়ে আপনি যতক্ষন না বাড়িতে ঢুকছেন।"
বলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক মহিলাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-" আপনি একটু ওনার সাথে যান!আর মিস পাতা আপনার বাবার সাথে আমি কথা বলে নেব! আর এখানকার মেয়রের সাথেও!"
পাতা চোখ মুখ মুছে পা চালায়। তার হাত পা ভয় অস্বস্তিতে কাঁপছে। জীবনের প্রথম এরকম সিচুয়েশনে পড়েছে সে। ভোরের বাবা না থাকলে শুকলা আরো কি কি বলতো! আর কিছু করতো যদি?সকালে হুমকিও দিয়েছিল! তখন তার উপর হামলা করায় সে বেশ ভয় পেয়েছে! জীবনে এতটা ভয় সে কখনো পায় নি! বাড়ি গিয়ে আগে সে লুব ভাইকে সব বলবে! সব! তার চোখ বেয়ে আবার অনর্গল জল গড়িয়ে পড়ে!
পাতা চলে গেলে অরুণ বাকি সবার দিকে তাকায়। চোখ দিয়েই যেন শাসায় সকলকে! হারুণ মুন্সি গর্জে ওঠে,
-" দেখা যাবে তুমি তোমার কোন বাপকে ডেকে আনো! ভয় পাই না!"
অরুণ তার চেয়ে তীব্র গলায় যেন বাঘের যতো গর্জে ওঠে।
-" খবরদার বাবা তুলে কথা বলবেন না।
পরবর্তীতে কথা বলার জন্য জুবান পাবেন না!"
উপস্থিত সকলে যেন কেঁপে ওঠে তার গর্জনে। ভোর আব্বু বলে জোরে চিল্লিয়ে কাঁদতে থাকে। অরুণ ছেলের গলা ফাটিয়ে কান্না দেখে আর দাঁড়ায় না। সবাইকে একনজরে পর্যবেক্ষণ করে নিয়ে ছেলের কাছে চলে যায়। আভারির কোল থেকে ভোরকে নিয়ে চুমুতে ভরিয়ে দিল মুখশ্রী! অশান্ত কান্নারত বাচ্চারা যেমন মায়ের কোলে গেলে শান্ত হয়ে যায় তেমনি ভোরও বাবার গলা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ফোপাতে থাকে। যেন যুদ্ধের ময়দানে ঢাল সরূপ! অরুণ হারুণ মুন্সির দিকে তীক্ষ্ণ নজর দিয়ে ছেলেকে নিয়ে গাড়িতে ওঠে! আভারি ড্রাইভার সাথে সাথে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয় চটজলদি!
ওদিকে আজম, শরিফ সহ সকলে অটো ডেকে শুকলাকে নিয়ে একটু দূরে সদরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। হারুণ মুন্সি আধাপাকা দাঁড়িয়ে হাত বুলিয়ে ব্রিক্ষিপ্ত চোখে অরুন সরকারের গাড়ির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রয়!
ঘটনাস্থলে উপস্থিত কিছু লোক গুসুর ফুসুর আলাপ আলোচনা শুরু করে দেয়। উপস্থিত কিছু মহিলা ঘটনাস্থলের রঙ চঙ মসলা মাখিয়ে রটিয়ে দিল পুরো এলাকা।এসব ঘটনা তো হাওয়ার চেয়েও তীব্র গতিতে ছড়িয়ে পড়ে! আধা ঘন্টার ব্যবধানে পুরো এলাবাসির মুখে মুখে রটে যায় পাতা ও আরেকটা লোক অবৈধ কাজে লিপ্ত হয়ে ধরা পরে! অনেক মারামারি হয়! শুকলা মন্ডলের মর মর অবস্থা!
••••••••••••
মধ্যাহ্ন পেরোলে বলে! ছুনছান নীরবতা! ব্যস্ততম মানুষ হয়তো মধ্যাহ্নের নাওয়া খাওয়া শেষে ভাতঘুমের তোরজোর করছে এই নীরবতায়। পাখির দলও হয়তোবা মানবজাতির সাথে যোগ দিয়েছে। কোনো আওয়াজ নেই! মাঝে মাঝে শুধু গাড়ির হর্নের আওয়াজ ভেসে আসছে। বিশাল বিশাল গাছগাছালি থেকে শুরু করে ছোট ছোট ঘাসফুলের দলও যেন স্থির হয়ে আছে। যেন সময় থমকে গেছে। কোথাও একটু বাতাসের ছিটেফোঁটাও নেই! সব স্ট্যাচু হয়ে আছে। সরকার বাড়ির গেটের দারোয়ানও স্থির হয়তোবা! না সে স্থির নয়। হা করা মুখ গহ্বর থেকে নিঃশ্বাস বেরোচ্ছে সাথে অল্প বেরিয়ে আসা উদরের উঠানামা ! তবে দূর থেকে মনে হয় সেও স্থির! এমন সময় যান্ত্রিক গাড়ির তীব্র প্রতিবাদে চিল্লাচিল্লিতে দারোয়ানের ঘুম থেকে ধর ফড়িয়ে ওঠে! পাশে রাখা লাঠি হাতে নিয়ে গেইট খুলে দিতে সময় ব্যয় করে না। খুলে দেয়ার সাথে সাথে একটা গাড়ি ভিতরে ঢোকে। গেটের ভিতরের দোতলা বাড়ির মেইন ডোরের সামনে গিয়ে থেমে যায়। দরজা খুলে বের হয় অরুণ সরকার। কোলে ঘুমন্ত ছেলে ভোর সরকার! অরুণ আভারি ও ড্রাইভারকে সাবধান করে তখনকার ঘটনার টু কথা যেন কারো কানে না যায়। তারা দুজন মাথা নাড়ে। তাদের ঘাড়ে কয়টা মাথা অরুণ সরকারের কথা অমান্য করার। অরুণ ছেলেকে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে । মেইন দরজা সারাদিন খোলাই থাকে। বাইরে গেট, সাথে দাড়োয়ান থাকায় অযথা কেউ ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না। ভিতরে প্রবেশ করার সাথে সাথে ছোট একটা প্রাণী এসে অরুণের আগে পিছে ঘুর ঘুর করে মিও মিও করে ডাকে! সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সে মালিকহীন শুকিয়ে গেছে কিনা! তাই একটু আদর খেয়ে চাঙা হবে! অরুণের মেজাজ বিগড়েই আছে। মাথা এখনো ঠান্ডা হয় নি! বিড়াল শাবক আদর করা এখন তার ঔধতে নেই! আর ছোট মালিক তো ঘুমে বিভোর! ড্রয়িংরুম ফাঁকা থাকায় বিনা প্রশ্নে অরুণ নিজের রুমে যায়। ছেলেকে শুইয়ে দিয়ে নিজের পায়ের শু মুজো খুলে টি শার্টও খুলে ছুড়ে মারে। পাতাবাহার নামক বিড়াল শাবকটি মুজো জোড়া নখের সহায়তায় টবের পাশে রেখে টি শার্ট নিয়ে টানাটানি করে। অরুণের সেসবে মনোযোগ নেই! সে ছেলের পরনের স্কুল ড্রেস, মুজো, শু খুলে বিছানার পাশে রাখে। ছেলের পরনের প্যান্ট খুলে এসির পাওয়ার কমিয়ে দিয়ে কম্ফোর্ট গায়ে দিল। কারুকাজ খচিত আলমারি খুলে কাপড় চোপড় বের করে তোয়ালে নিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে। একটা ঠান্ডা শাওয়ার দরকার মেজাজ ফিরিয়ে আনতে! পাতাবাহার ওয়াশরুমের দরজার দিকে কুটুর মুটুর চেয়ে লাফ দিয়ে ছোট্ট মালিকের শিয়রে গা এলিয়ে দেয়!
সময় নিয়ে গোসল সেরে কোমড়ে তোয়ালে পেঁচিয়ে ওন্য তোয়ালে গলায় ঝুলিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বের হয়। বিছানায় ঢিল দিয়ে রেখে যাওয়া শার্ট প্যান্ট পরে নেয়! ঘুমন্ত ছেলের মুখের সামনে ভেজা চুল ঝাপটালে একটু বড় হওয়া চুলের আগা বেয়ে পানির ফোঁটা পড়ে ভোরের মুখে। ভোর পিট পিট করে চোখ খুলে মুখ কুঁচকে আব্বু বলতে গিয়ে থেমে যায়। চোখের সম্মুখে ভাসে বাবার দেয়া শক্ত হাতের থাপ্পড়! সে পুনরায় চোখ মুখ বুজে নেয়। অরুণের গোমড়া মুখে হাসির ঝিলিক দেখা যায়। কম্পোর্ট সরিয়ে ছেলেকে পাজা কোলে করে নিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে যায়। ছোট্ট টুলে দাড় করিয়ে ট্যাপ ছেড়ে আজলায় পানি ভরে ছেলের মুখ ধুয়ে দেয়। মুখ গহ্বরে কুলকুচি করার জন্য পানি দিলে ভোর মুখে পানি নিয়ে চোখ বন্ধ করে মুখের পানি অরুণের মুখে ছুড়ে দিল। অরুণ কড়া চোখে ছেলের দিকে চায়! কিন্তু কি লাভ! সে তো চোখ বুজে মিটিমিটি হাসছে! অরুণ ছেলের মাথায় পানি ঢালে পট দ্বারা! ভোর চিল্লিয়ে ওঠে! এবার অরুণ হাসে! বিনা কথাবার্তায় বাবা ছেলের অভিমানে ভরপুর খুনসুটিতে মেতে ওঠে।
••••••••••••
একজন সৎ সচ্ছল মানুষের মনে মানসম্মানের ভয় তীব্র ভাবে গেঁথে থাকে। সে সব সময় তটস্থ থেকে নিজের কদম আগায়! যেন তার দ্বারা কোনো ভুল বা এমন কাজ না হয় যার দ্বারা তার মানসম্মানে আঙ্গুল উঠে! আর মধ্যবিত্তরা মানসম্মানের ব্যাপারে একটু বেশিই সতর্কতা অবলম্বন করে চলে! তারা একবেলা কম খাবে! পড়বে! সব কিছুতেই আপোষ মেনে চলবে কিন্তু সম্মানের ব্যপারে আপোষহীনতার প্রশ্নই আসে না!
পাতা নিজের রুমে গুটিসুটি মেরে জানালার ধারে বসে আছে। চোখ, নাক, কপোল রক্তিম! তখন বাড়ি ফিরে গোসল সেরে নেয়। তারপর তার জায়গা এখানে। লতা খেতে ডাকলেও যায়নি মাথাব্যথার বাহানায়! শুধু লুবমানের কথা জিজ্ঞেস করে সে কোথায়! কিন্তু লুবমান বাড়ি নেই। একটা চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গেছে! কখন আসবে জানা নেই! আতিকুর ইসলাম তো কর্মস্থলে! বাড়ির কেউ এখনো জানে না ব্যাপারে! পাতা বাবা মায়ের ব্যাপারে অনেক চিন্তিত।তারা জানলে তাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবে নিশ্চিত! এমনিতেই সে এ বাড়িতে দায়িত্ব হয়ে অবস্থানরত! আর আরেকবাড়ি! সেটা তো তার ছিলই না! সেখান থেকে আগেই নির্বাসিত হয়েছে! কি করবে পাতা! শুকলাসহ গ্ৰামের ওই মুরুব্বিরা নিশ্চয়ই এই ঘটনার পর চুপ করে থাকবে না। আর তার চরিত্রে যে জোর করে দাগ লাগানো হলো! হাজারবার সত্য প্রমাণিত হলেও মানুষ সামনে স্বীকার করলেও আড়ালে আবডালে বলে বেড়াবে যে, ওই পাতা মেয়েটা এক নম্বরের চরিত্রহীন!
পাতার ভাবনার মাঝেই কেউ ধাক্কা দিয়ে দরজা খোলে। পাতা ভয়ে কেঁপে ওঠে! দরজায় দন্ডায়মান লুবমানকে দেখে ডুকরে 'লুব ভাই' বলে কেঁদে ওঠে। লুবমান দৌড়ে এসে বোনকে একহাতে জড়িয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। সে এলাকায় পা রাখতেই একে একে সব জানতে পারে! তবে পাতুর উপর তার সম্পূর্ণ বিশ্বাস আছে। তার পিঠাপিঠি ছোট বোন সম্পর্কে সে অবগত!
-" ভাই আছে না? কিচ্ছু হবে না! এখন বল কি হয়েছে?"
পাতা ঘরে উপস্থিত মা, বড় বোন ও বোন জামাইকে একনজরে দেখে নেয়। কি লুকাবে এখন?
-" ভাই..."
সে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব খুলে বলে লুবমানকে! লুবমান শান্ত ছেলে। সে ধীরে সুস্থে সব শুনে বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে স্বান্তনা দিবে তখনি লাবনী আক্তার পাতাকে ভাইয়ের বাহু থেকে টেনে গালে সপাট করে চর মেরে দেয়। লতা এগিয়ে এসে মাকে আটকায়! রাতুল ভুঁইয়া বিচক্ষণ মানুষ! আর অরুণ সরকার সম্পর্কে কিছুটা হলেও অবগত! লুবমান মায়ের কাজে অবাক হয়ে বলে,
-" মা পাতুকে মারলে কেন? ওর কি দোষ? ওই শুকলা জানোয়ারটাকে একবার হাতের কাছে পাই জবাই করবো!"
লাবনী আক্তার পাতার দিকে তেড়ে এসে বলে,
-" লুব ও আগে জানাতে পারে নি এতসব কান্ড! জানালে এসব হতো? আর শুকলাকে কে না চেনে! লুচ্চা এক নাম্বারের! আমাদের জানালে ওর হাত পা ভেঙ্গে হাতে ধরিয়ে দিতাম! কতবড় সাহস আমার মেয়ের সাথে অসভ্যতামি! এই তুই আগে আমায় জানাতি! আমি কি ওতটাই খারাপ মা যে মেয়ের দুঃসময়েও পাশে থাকবো না?"
শেষের কথাগুলো পাতাকে জড়িয়ে ক্রন্দনরত গলায় বলে! পাতা মায়ের বুকে মাথা রেখে যেন শত বিপদের মাঝেও একবুক শান্তি খুঁজে পায়!
লতা, লুবের ঠোঁটে শুকনো হাসি ফুটে ওঠে।রাতুল দরজায় তাকাতেই মুখ বিবর্ণ হয়ে যায়।
-" আব্বা?"
সকলে দরজায় তাকায়। আতিকুর রহমান দাঁড়িয়ে আছে গম্ভীর মুখে! পাতার মুখটা যেন রক্ত শুন্য হয়ে যায়! আব্বু কি বলবে? তাকে বকবে? নাকি মারবে? না বাড়ি থেকেই বের করে দেবে! তবে তেমন কিছুই হলো না। আতিকুর রহমান ধীর পায়ে ঘরে ঢুকে পাতার সামনে দাঁড়িয়ে তার মাথায় এক হাত রাখে। পাতা ঝরঝর করে কেঁদে দেয়। আতিকুর ইসলাম কোমল সুরে বলে,
-" কেঁদো না! যা হওয়ার হয়ে গেছে! আমরা আছি তো! আমাদের মেয়েকে আমরা ঢের চিনি! সে কেমন? তার চরিত্র কেমন? আমাদের থেকে ভালো কে জানে? আম্মু কেঁদো না?"
••••••••••••••
পুরো রুম জুড়ে হইচই বিদ্যমান! যেন কোনো বাচ্চাদের স্কুল! রুমের অবস্থাও যাতা! ওখানে বালিশ তো ওখানে চাদর পড়ে! চিপসের প্যাকেট! চকলেটের খোসা! ইত্যাদি ইত্যাদিতে রুমের অবস্থা খুবই করুণ! ভোর আর আনিকা ফোনে 'চিকু ওর বান্টি' দেখছে! বলা চলে দেখছে কম ঝগড়া করছে বেশি! চিকু বান্টির মধ্যে একদন্ডও ভাব হয় না! একজন ইস্ট তো অপরজন ওয়েস্ট! তো ভোর বান্টির পক্ষে আর আনিকা চিকুর পক্ষে! এখন এটা নিয়েই দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি! অরুণ কয়েকবার ধমকও দিয়েছে কাজে দেয় নি! তারা দুজন যেমন তেমনই! ভোর বুকে দু হাত ভাঁজ করে আনিকার উদ্দেশ্যে বলে,
-" চিকু তো বোকা! ওর মাথায় কোনো আইডিয়াই আসে না! বান্টি কত ইন্টেলিজেন্ট! সবসময় বুদ্ধি দিয়ে বাজিমাত করে!"
আনিকাও কম যায় না। ভোরকে ভেঙিয়ে বলে,
-" এসেছে আমার ইন্টেলিজেন্ট! ওই বান্টির তো দাঁত ভাঙ্গা! আর একদম বিচ্ছু! ঠিক তোর মতো!"
-" আনিবুড়ি চড়চরি!"
-" ভোর পান্টি বাজাস না ঘন্টি!"
এখন রাত সাতটা সারে সাতটা! অরুণ রুমের সিঙেল সোফায় বসে অফিসের কিছু কাজ করছিল। ভোর আনিকার এক্সাম শেষ হওয়ার দরূন বেকার বসে। আনিকা এসে আবদার করে ফোনে কার্টুন দেখবে তাই বড় চাচ্চু ফোন দাও! অরুণ হাসিমুখে দিয়ে দেয়। ভোর মুখ ফুলিয়ে রাখে! সে চাইলে তো এত সহজে দেয় না! আবার দিলেও কতশত শর্ত জুড়ে দিবে! আর আনিবুড়ি বলা মাত্রই দিল! হুহ! তারপর দুজনের কার্টুন শো আর ঝগড়া!
অরুণ বিরক্ত হয়ে ল্যাপটপের সাটার ওফ করে এসে বিছানায় রাখা ফোনটা নিয়ে পকেটে পুরে। আনিকাকে কোলে নিয়ে চুমু দিয়ে বলে,
-" মামনি অনেক হয়েছে! এবার ড্রয়িং রুমে চল! আভারি ভাই ডেকে গেল খাবার খেতে চলো?"
আনিকা হেসে অরুণের গালে চুমু দিয়ে মাথা নাড়ে। অরুণ পা বাড়ায়! ভোর বিছানায় বসে গাল ফুলিয়ে! ওহ! তার কথা মনেই নেই! ওই আনিবুড়িই সব! মামুনি তার! আর সে তো নামমাত্র কলিজা!
অরুণ দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। পিছনে ঘুরে ভোরের দিকে চায়। গাল ফুলিয়ে বসে আছে। সে জানে এই জেদি ছেলে সে কথা না বললে! মান না ভাঙালে এমন ফুলেই থাকবে! তবে সে এবার আর অভিমান ভাঙাবে না! সেও অভিমান করেছে! সে এগিয়ে এসে আনিকাকে এক হাতে নিয়ে অপর হাত দিয়ে ভোরকে কাঁধে নিয়ে পা বাড়ায়! এই জিদের খুটিকে না নিয়ে গেলে সে যাবেই না!
ড্রয়িংরুমে এসে দেখে সবাই কারুকাজে খচিত কাঠের ডাইনিং টেবিলের রাজকীয় চেয়ারে বসেছে। মিনু খাবার পরিবেশন করছে! আভারি তাকে সাহায্য করছে। আদুরি অরুণের কোলে আনিকা ও ভোরকে দেখে হেসে বলে,
-" আরে রাজকন্যা ও রাজকুমার যে! এসো এসো তোমাদেরই অপেক্ষায়!"
আনিকা হেসে অরুণের কোল থেকে নেমে আদুরির কোল দখল করে। আদুরি ফুপ্পি খুব আদুরে কিনা! ভোর মুখ ফুলিয়ে এখনো! আদুরি আনিকাকে আদর করে ভোরকে বলে,
-" রাজকুমার আজ বাবার ক্যারেক্টারে আছে? গোমড়া মুখো! কি হয়েছে জনাব? বলুন?"
অরুণ এগিয়ে এসে আদুরির পাশের চেয়ার টেনে তার মাথায় টোকা দিল। আদুরি 'আউচ' বলে হেসে ওঠে। ভোর আসমা বেগমের দিকে তাকিয়ে আবদারের সুরে বলে,
-" দাদি? আজ আমায় খাইয়ে দিবে? প্লিজ?"
আসমা বেগম অরুণের দিকে চায়। অরুণ ছেলেকে নামিয়ে দিল। আসমা বেগম ইশারায় সম্মতি দিলে ভোর দেড়ি করে না তার কোল দখল করতে! আর আনিকাকে ভেংচি কাটতে! রুবি হেসে বলে,
-" ভোরের মন খারাপ কেন আজ? গাল ফুলিয়ে রেখেছে কখন থেকে?"
আরিয়ান ভ্রু যুগল মাঝে ঢেউ খেলিয়ে বলে,
-" ভোর নির্ভয়ে বলো ! যে তোমার হাসি গায়েব করেছে আমি তাকেও গায়েব করে দেব।"
শেষের কথা অরুণের দিকে আড়চোখে চেয়ে বলে। গম্ভীর অরুণের ঠোঁট হালকা হাসির দেখা মিলে!
-" এক্সাম শেষে মায়ের সাথে দেখা করতে গিয়েছিল! আভারিকে না জানিয়েই! আমি ও আভারি ভাই তাকে খুঁজে খুঁজে হয়রান! জান বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম! পরে জানতে পারি! তাই একটা চর লাগিয়ে দিয়েছিলাম রাগের বশে! উনি মাকে পেয়ে বাবাকে ভুলে গেল! মায়ের সাথেই থাকবে! কিন্তু উনার মমতাময়ী মা সাথে নিল না তাই এই দুয়ারে!"
সবাই অবাক হয়ে অরুণ আর ভোরের দিকে চেয়ে! ভোরের চোখ ভরে ওঠে আস্তেধীরে! আরিয়ান বলে,
-" বাংলাদেশে এসেছে?"
-" হুম! স্বামী ছেলে নিয়ে!"
আসমা বেগম গম্ভীর মুখে বলে,
-"সে বাংলাদেশ থাকুক আর পাশের এলাকায় তাতে আমাদের কি! শুধু ভোরের থেকে দূরে থাকে যেন! আর অরুণ তোমার হাত আবারও বেশি লম্বা হচ্ছে দেখছি! কথায় কথায় ছেলের গায়ে হাত তুলছো?
অরুণ মাথা নিচু করে বলে,
-" রাগের বশে হয়ে গেছে। আর হবে না ছোটমা!"
পরপর সকলের নীরবতার মাঝে অরুণের ফোন বেজে ওঠে। অরুণ পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে স্ক্রিনে 'পাতাবাহার' নাম জ্বল জ্বল করছে। সে রিসিভ করতে সময় ব্যয় করে না। কানে ধরতেই ওপাশের ব্যক্তির কথা কানে আসতেই ছোট করে বলে,
-" আমি আসছি! চিন্তা করবেন না!"
.
.
.
চলবে........................................................................