#আরোরা (ফ্যান্টাসি, রোমান্টিক)
#অন্তিম_পর্ব_২০
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
" সে অনেক লম্বা গল্প। সংক্ষিপ্ত আকারে বলছি, সে অনেক বছর আগের কথা। আমাদের দুই বংশের মধ্যে বেশ ভালো সম্পর্ক ছিলো তখন। বলতে গেলে সবাই আমাদের নিজেদের মধ্যের সম্পর্ক দেখে অবাক হতো। তবে সবকিছুই ছিলো ভ্যাম্পায়ারদের ছলকপট। কিন্তু একদিন নেকড়েদের সপরিবারে আমাদের প্রাসাদে আমন্ত্রিত ছিলো। "
এতটুকু বলে দম নিলো ম্যাক। তারপর আবারো বলতে লাগলো সে। সাঁচি মনোযোগী হয়ে ম্যাকের কথা শুনছে।
" হাসি মুখে সবাই একসাথে বসেই খাওয়াদাওয়া শেষ করেছিলো। তারপরই ঘটে সেই ঘৃণ্য ঘটনা! আমাদের পূর্ব পুরুষ চক্রান্ত করে ওদের খাবারের সাথে রূপার ছোটো ছোটো দানা মিশিয়ে দিয়েছিল সেদিন । আর জানোই তো নেকড়ের শরীরে রূপা প্রবেশ করলে কোনো শক্তির জোরেই আর বাঁচা সম্ভব হয় না? "
" হ্যাঁ জানি। তারপর বলো।"
" তারপর আর কী? আরোরা তখন খুব ছোটো থাকায় ওর বাবা-মায়ের সাথে আসেনি। তাই সে বেঁচে গিয়েছিল। পরবর্তীতে আরোরাকে কেউ একজন হলিথান শহরে রেখে আসে। এনার পরিবার ওকে নিজেদের বাড়ির সদস্যদের মতোই বড়ো করে তোলে। আর ভ্যাম্পায়াররা নেকড়ে রাজা-রানিকে এভাবেই হত্যা করে। আমি এসব কিছু রাজা জোহানসনের কাছে শুনেছি। "
সাঁচি দীর্ঘশ্বাস ফেললো। যদিও আরোরার পরিবারের উপর অন্যায় হয়েছিল কিন্তু এখানে তো এডওয়ার্ড নির্দোষ! বেচারা আরোরাকে কতটা ভালোবাসে সেসব তো সাঁচি স্বচক্ষে দেখে। প্রতিদিন একটু একটু করে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছে সে।
" জানি না ম্যাক কীভাবে আরোরা এবং রাজার মিল হবে। "
ম্যাক সাঁচির কোমরে হাত দিয়ে নিজের বুকের সাথে হেঁচকা টানে মিশিয়ে ফেলে বলে,
" ভাগ্যে যা আছে তাই হবে সাঁচি। তবে প্রার্থনা করি ওরা এক হোক। যতই লড়াই করুক দিনশেষে দু'জন দু'জনাকে ভীষণ ভালোবাসে তো।"
" হ্যাঁ ঠিক। তা তোমার মতলব কী? বিশেষ সুবিধার ঠেকছে না!"
" কীসের মতলব? "
ম্যাক কিছু না বোঝার ভান করে বললো। সাঁচি ভ্রু নাচিয়ে বলে,
" ইশ কিছু বোঝে না। "
" বলো না কী বুঝি না? একটু বুঝাও।"
" ঢং!"
" সাঁচি! "
" কী?"
" বলো বলো।"
" গোছানো আমাকে যে এখন তুমি এলোমেলো করে দিবে সেটাই বলছি।"
" তাহলে নিজে থেকেই সব এলোমেলো করে দাও আমার সুবিধা হবে। "
ম্যাক সাঁচির ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিতেই সাঁচি " ধ্যাৎ! "
বলে ম্যাককে সরিয়ে দিয়ে কক্ষের বাইরে চলে যায়। বেচারা ম্যাক মাথা চুলকাতে চুলকাতে বউয়ের গমনপথের দিকে তাকিয়ে থাকে।
কেটে গেছে কতগুলো বছর। কতকিছু বদলে গেছে এরমধ্যে। এনা গুলিনকে বিয়ে করে সংসার করছে। গুলিন এনার থেকে বয়সে কম হলেও এনা সেসব পাত্তা দেয়নি। বোনের সত্যিটা জানার পরে একটু ভেঙে পড়েছিল এমা কিন্তু আরোরা এনাকে ভালোবেসে সবকিছু বুঝিয়েছে। হলিথান শহরে মানুষের আতংক কমেছে। সবাই এখন প্রাণ খুলে বাঁচে। বাচ্চারা ঠিকমতো লেখাপড়া করতে পারে। মোটকথা গ্রামে আরোরা এখন স্থায়ীভাবে ওয়ারউলফ প্রাসাদে থাকে। সমস্ত রাজ্যের হাল ধরেছে সে। প্রেম,ভালোবাসা সব সম্পর্ক ভুলে কেবল নিজ সম্রাজ্য নিয়ে বেঁচে আছে। ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের প্রায় তিন ভাগের একভাগ ভ্যাম্পায়ার মারা গেছে আরোরার হাতে। কিন্তু এখন আর মারা সহজ না তাদের। প্রথম প্রথম এডওয়ার্ড আরোরাকে বোঝাতে চাইলেও সে বুঝাতো না বলে এডওয়ার্ডও চুপ করে থাকতো। কিন্তু নিজের প্রজাদের রক্ষা করতে এখন কঠিন হয়েছে এডওয়ার্ড নিজেও। সেই থেকে আজ পর্যন্ত এদের দু'জনের মধ্যে শত্রুতা চলছে। যদিও এডওয়ার্ড কখনো আরোরাকে শত্রু ভাবেনি কিন্তু আরোরার কাছে এডওয়ার্ড সদাসর্বদা শত্রু এবং বাবা - মায়ের খুনির বংশের লোক!
বর্ষাকাল। হলিথান শহর। বাজারে টিপ টিপ বৃষ্টির মধ্যেও গুলিন দোকান খুলে বসেছে। এনা অবশ্য কয়েকবার বলেছিল আজকে দোকান বন্ধ রাখতে। কিন্তু গুলিন বলেছে দোকান খুলে কর্মচারীদের সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে সে বাড়ি ফিরবে। এনা নিজেও আজ বাড়ি থেকে গেছে। চেম্বারে যায়নি। দু'জনেই সারাদিন কাজ করে ক্লান্ত থাকে বলে নিজেদের ঠিকঠাক সময় দিতে পারে না। তাই আজ একান্তে কিছু মুহুর্ত উপভোগ করতে চাচ্ছিল তারা। দোকানের দরজা খুলে বাকি দু'জন কর্মচারীকে সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে ছাতা হাতে এগোচ্ছে গুলিন। মেঘলা দিন, বাতাসের সাথে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির ছোঁয়া। আচমকা সামনে আরোরাকে দেখে চমকায় গুলিন,থমকে দাঁড়ায় । সত্যি বলতে আরোরার সত্যি জানার পরে গুলিন ভীষণ ভয় পায় ওকে। যদিও ভয়টা যতটা সম্ভব আড়াল করতে চায় গুলিন কিন্তু আরোরা বুঝেই ফেলে।
" আরোরা তুমি! "
" হ্যাঁ। কেমন আছো? "
আরোরা ভিজতে ভিজতে গুলিনের দিকে এগিয়ে আসছে।
" ভালো। তোমার খবর বলো। হঠাৎ এখানে এলে?"
" অনেক দিন হলো আপাকে দেখি না। তাই এসেছি, তুমি ভয় পেও না দয়া করে। "
" না ভয় লাগছে না। চলো বাসায় চলো বরং।"
আরোরা আর কথা না বাড়িয়ে বোনের বাড়ির দিকে অগ্রসর হয়। বেচারা গুলিন মনে মনে ভাবে একান্তে সময় কাটানো আর হলোনা। দুপুরে এনাদের সাথেই খাওয়াদাওয়া করে আরোরা। ঠিক গোধূলির আগে চলে যায় শহর থেকে।
ভরসন্ধ্যায় ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে আরোরা। আগে কতো সুন্দর ছিলো জীবনটা আর এখন! দায়িত্ব কাঁধে ছাড়া জীবনে আর কিছু নেই। দিনশেষে সব কথাগুলো শোনার মতোও কেউ নেই। তবে মাঝে মধ্যে সেলিনের সাথে বসে কথাবার্তা বলে। আর্থারের কথা শুনে আরোরার ভীষণ খারাপ লাগে সেলিনের জন্য। মেয়েটা ভীষণ ভালোবাসত আর্থারকে। নেকড়ে হওয়ার পরেও প্রিয় এডওয়ার্ডের কথা যতই ভুলতে চায় ততই আরো বেশি করে মনে পড়ে আরোরার। এই মানুষটাকে তার মারতে হবে এবং সেটা যতটা দ্রুত সম্ভব। কিন্তু কীভাবে? এডওয়ার্ড তো মনের ভুলেও আরোরাকে আঘাত করবে না। তাহলে? কীভাবে হত্যা করবে সে এডওয়ার্ডকে! ভাবনা যেনো শেষ হয় না মেয়েটার। তারমধ্যে সবাই জানে ভ্যাম্পায়ার কিং এডওয়ার্ডের সাথে আরোরার বিয়ে হয়েছিল। তাই সবাই আরোরাকে কটাক্ষ করে বলে সে ইচ্ছে করে স্বামীকে মারছেন না। কী অদ্ভুত মানুষ! যতই সম্পর্কে তিক্ততা থাকুক কিন্তু একজন স্ত্রী কিছুতেই তার স্বামীকে ত্যাগ করতে পারে না। তবে এর বিপরীতেও কে।
" কী ভাবছেন মহারাণী? "
হঠাৎ আলেক্সার কণ্ঠে চমকে উঠেছে আরোরা। এমনিতে কেউ ছাদে আসে না খুব একটা।
" তেমন কিছু না আলেক্সা। তোমার খবর বলো।"
" আমি ভালো আছি। আপনি ভালো নেই সেটা বুঝতে পারছি। ছোটো মুখে একটা বড়ো কথা বলবো?"
" এরকম না বলে সরাসরি বলে ফেলো তুমি। "
" আপনি বরং ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে গিয়ে শত্রুদের সাথে থাকুন। "
আলেক্সার কথায় রেগে উঠলো আরোরা। মৃদু চিৎকার করে বললো,
" কী বলছো তুমি! "
" আগেই তো বললাম রাগ করবেন না। শত্রুর সাথে থাকলে সহজেই আপনি আপনার প্রতিশোধ নিতে পারেন। আপনি বুদ্ধিমতী বাকিটা বুঝবেন, আসছি।"
আলেক্সা কক্ষ ত্যাগ করতেই চিন্তার মহাসাগরে ডুব দিলো আরোরা।
আজকেই সেই ভয়ংকর দিন। হ্যাঁ আজকে আরোরা ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের রাণী হিসেবে এই রাজ্যে প্রবাশ করবে। এডওয়ার্ড গেছে তাকে সাথে নিয়ে আসতে। আরোরার পরিকল্পনা এডওয়ার্ড জানা সত্বেও কতটা পাগলামি করতেছে বউয়ের জন্য। ওর বিশ্বাস দুজন একসাথে থাকতে ঠিক সবকিছু ভুলে নতুন করে সম্পর্কের সমীকরণ বদলাবে। আসলেই কি বদলাবে আরোরা ও এডওয়ার্ডের সম্পর্কের রসায়ন? না-কি সত্যি সত্যি দু'জন ভালোবাসার মানুষের মধ্যে সংঘর্ষ হবে! প্রশ্ন থেকেই যায়। আরোরা ও এডওয়ার্ডের ভবিষ্যত নিয়ে ফিরবো কিছুদিন পরে আবারও।
সমাপ্ত........................