অন্তর্নিহিত কালকূট - পর্ব ৯৯ - অনিমা কোতয়াল - ধারাবাহিক গল্প


অন্তর্নিহিত কালকূট
পর্ব ৯৯
অনিমা কোতয়াল
.
.
.
ইকবাল মারা গেছে। পালস্ চেইক করে সেটাই নিশ্চিত হল রুদ্র আমের। স্থির চোখে তাকিয়ে রইল লাশটার দিকে। সেই শক্তপোক্ত শরীরের ইকবাল কেমন শুকিয়ে গেছে। সারা শরীরে ভয়ংকর সব আঘাতের চিহ্ন। মুখ দিয়ে ফ্যানা পড়া বন্ধ হয়েছে। তবে মাথা দিয়ে তখনও র*ক্ত বের হচ্ছে। র*ক্ত আর ফ্যানার মিশ্রনে অদ্ভুত দেখতে লাগছে ফুলে ওঠা ঠোঁটজোড়া। চোখ দুটো বিস্ফোরিত অবস্থায় খোলা। দীর্ঘশ্বাস চাপল রুদ্র। হাত দিয়ে আস্তে করে বন্ধ করে দিল খোলা চোখজোড়া।
উচ্ছ্বাস আর জাফরকে কল করে সবটা জানিয়েছে নীরব। আসছে তারা। কুহু ছুটে এসে নীরবের বুকে মুখ লুকালো। নীরব কান্নায় কেঁপে কেঁপে উঠল শরীরটা। দুহাতে কুহুকে আকড়ে ধরল নীরব। এতো সরলভাবে বেড়ে ওঠা মেয়েটা গত দুমাসে কী ভয়ংকরসব অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছে! নীরব বিষণ্ন চোখে তাকিয়ে রইল ইকবালের লাশটার দিকে। ইকবালকে ঠিকভাবে ওর আর কুহুর এনগেইজমেন্টের দিনই দেখেছিল। দেখেছিল, গোটা আমের পরিবারের প্রতি কতটা সমর্পিত ছিল লোকটা।

লাশটা রেখে আস্তে করে উঠে দাঁড়াল রুদ্র। তীক্ষ্ম চোখজোড়া লালচে রঙ ধারণ করেছে। পাশেই স্তম্ভিত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে ছিল প্রিয়তা। হঠাৎই মাথাটা ঘুরে উঠল ওর। পড়ে যেতে নিলে একহাতে ধরে ফেলল রুদ্র। চোখ নামিয়ে তাকাল প্রিয়তার দিকে।

' জ্যোতি।' প্রিয়তার দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে থেকেই থমথমে গলায় ডাকল রুদ্র।

জ্যোতিও অদ্ভুত এক ঘোরে ছিল এতক্ষণ। রুদ্রর ডাকে চমকে উঠল। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে ছলছলে চোখ তাকাল রুদ্রর দিকে। থমথমে আওয়াজেই রুদ্র বলল, 'ভেতরে নিয়ে যা ওকে।'

মাথা নাড়ল জ্যোতি। এগিয়ে এসে ধরল প্রিয়তার হাত। রুদ্র ছেড়ে দিল। প্রিয়তাও মাথা নিচু করে চুপচাপ ভেতরে চলে গেল জ্যোতির সঙ্গে। দেখে মনে হল সত্যিই অসুস্থ খুব। 
জ্যোতি নিজের ঘরেই নিয়ে গেল প্রিয়তাকে। আস্তে করে বিছানায় বসাল। বেডসাইড টেবিল থেকে একগ্লাস পানি এগিয়ে দিল। প্রিয়তা ডান হাত বাড়িয়ে নিল গ্লাসটা। ঢকঢক করে এক নিঃশ্বাসেই ফাঁকা করে ফেলল সেটা। তারপর কম্পমান হাতে ফিরিয়ে দিল জ্যোতির দিকে। গ্লাসটা রেখে প্রিয়তার পাশে এসে বসল জ্যোতি। কাঁধে হাত রেখে বিষণ্ন গলায় বলল, ' ঠিক আছো তুমি? শোবে একটু?'

লম্বা একটা শ্বাস ফেলল প্রিয়তা। মাথা নেড়ে না করল। আস্তে করে বলল, 'ওয়াশরুমে যাব একটু।'

' একা যেতে পারবে?'

' পারব। তুমি নিচে যাও। ওদিকটা দেখো। আমি একটু স্টেবল হয়ে আসছি।'

মাথা নাড়ল জ্যোতি। প্রিয়তা আস্তে করে উঠে চলে গেল ওয়াশরুমে। সেদিকে তাকিয়ে চাপা শ্বাস ফেলল জ্যোতি। দেরী না করে নিচে যাওয়ার জন্যে পা বাড়াল।

ওয়াশরুমে ঢুকে সোজা কমোডের সামনে গেল প্রিয়তা। আঙ্গুলের ফাঁক থেকে সুচটা ছেড়ে দিল কমোডে। অতঃপর ফ্ল্যাশ করে দিল। এরপর বেসিনের সামনে গিয়ে অন করে দিল পানির ট্যাপ। প্রথমে পানি দিয়ে হাত ধুলো। এরপর হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে। পরপর তিনবার। বি*ষ কোনভাবে হাতে লাগলেও এখন আর ভয় নেই। কিন্তু অস্বস্তি কাটলনা প্রিয়তার। দুহাতে পানি দিয়ে বারবার বারবার ঝাপটা দিতে থাকল নিজের মুখে। বিরতিহীন কিছুক্ষণ এমনটা করর পর থামল ও। ধীরচোখে তাকাল আয়নায়; নিজের প্রতিবিম্বের দিকে। চোখদুটো লাল হয়ে আছে। মনে পড়ল ইকবালের বলা সেই কথাটা, "এমন করােনা প্রিয়তা। রুদ্র প্রচণ্ড ভালাবাসে তোমাকে। এই সত্যি যদি ও কোনভাবে জানতে পারে, ভেতর থেকে একদম গুড়িয়ে যাবে। ছােটবেলা থেকেই প্রচুর কষ্ট পেয়েছে ও। ওর নিজের বলতে এখন কেবল তুমিই আছাে। তােমাকে ওর খুব প্রয়াজন। এখনো সময় আছে। সব ছেড়ে রুদ্রর কাছে ফিরে যাও। ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখাে ওকে। ছেলেটাক এভাবে শেষ করে দিও না বােন। যেভাবেই হোক, একসময় ভাই বলে ডেকেছো তুমি আমাকে। ছোট বোন হিসেবে অনুরোধ করছি। ফিরে যাও।"

নিজের ভেজা হাতজোড়া চোখের সামনে মেলে ধরল প্রিয়তা। প্রিয়তার মনে পড়ে গেল সেই দিনের কথা। এই ষোল বছর বয়স। জীবনে করা প্রথম খু*ন। সারা শরীরে র*ক্ত। স্পষ্ট মনে আছে, সেদিন শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে যখন সেই রক্ত ধুচ্ছিল। বাথরুমের সাথা টাইলস লাল হয়ে গিয়েছিল। কত র*ক্ত! আরও কয়েকবার পানির ঝাপটা দিল প্রিয়তা। মুখে, গলায়, হাতে। আয়নায় প্রতিবিম্বে তাকাল আরও একবার। চোখ দিয়ে পানি বের হল কি-না, কাঁদল কিনা বোঝা গেলনা! সারা মুখেযে পানির ছেটা। প্রিয়তার মনে হয় সেদিন সেই র*ক্ত ধুয়ে যায়নি। আজও লেপ্টে আছে ওর সারা শরীরে। মনে, হৃদয়ে, আত্মায়। মৃত্যুর আগ অবধি সেই র*ক্ত ওর পিছু ছাড়বেনা। ও প্রাণপণে চাইলেও না!

-

ইন্সপেক্টর আজিজ এসেছেন আমের ভিলায়, সঙ্গে সাব-ইন্সপেক্টর ফারুক। আমের ভিলা থেকে কাউকে খবর দিতে হয়নি। ওনারাই খবর পেয়েছেন। সেই গোডাউন থেকে বেরিয়ে যখন ইকবাল একটা গাড়ির জন্যে আকুতিমিনতি করছিল রাস্তায়। সেই দৃশ্যের ভিডিও করেছে অনেকে। ছেড়ে দিয়েছে সোস্যাল মিডিয়ায়। যার মধ্যে বেশ কয়েকটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে ইতিমধ্যে। ইকবালকে খুব ভালোভাবেই চেনেন ইন্সপেক্টর আজিজ। ভিডিও দেখামাত্র চিনতে পেরে যায়। তাই বিন্দুমাত্র দেরী না করে চলে আসে আমের ভিলায়। ব্যপারটা খতিয়ে দেখার জন্যে। এসে দেখে ইতিমধ্যেই ইকবাল এসে পৌঁছে গেছে আমের ভিলায়। তবে এখন সে মৃত।

আধঘন্টার মধ্যে উচ্ছ্বাস, জাফর দুজনেই প্রায় হন্তদন্ত হয়ে ফিরেছিল আমের ভিলায়। ফ্লোরে তখনও শুইয়ে রাখা হয়েছে ইকবালের লাশ। দুজনের হতবাক হয়ে যায়। কিছুক্ষণের জন্যে বিশ্বাস করতে পারেনা, সত্যিই এখানে এসে, এভাবে মারা গেছে ইকবাল। জীবনের দীর্ঘ কয়েকবছর একসঙ্গে কাটিয়েছে বলেই বোধ হয় চোখ দিয়ে চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে আসে জাফরের। ইকবালের লাশের পাশে বসে হাতের মুঠোয় তুলে নেয় ওর নিথর একটা হাত। দু ফোঁটা জল গড়িয়ে নামে তার চোখ থেকে।
উচ্ছ্বাসের চোখ দিয়ে জল আসেনা। কিন্তু চাপা এক যন্ত্রণায় ভাড় হয়ে থাকে বুকটা। ওর আমের ভিলায় প্রবেশের চাবিটুকুই ছিল ইকবাল ভাই। স্পষ্ট মনে পড়ে, দশ বছরের উচ্ছ্বাস খিদের জ্বালায় ছটফট করছিল সেদিন। সুযোগ খুঁজছিল কারো পকেট মারার। রেললাইনের ধারে একটা দোকানে চা খেতে দাঁড়িয়েছিল ইকবাল। সিগারেট কেনার পর টাকা দেয় দোকানিকে। ফেরত পাওয়া খুচরোটা খোলাভাবেই রেখে দেয় প্যান্টের পকেটে। সেই সুযোগটাকেই কাজে লাগানোর চেষ্টা করে উচ্ছ্বাস। কৌশলে পকেট মারার চেষ্টা করে। কিন্তু ধরা পড়ে যায়। খপ করে হাতটা ধরে ফেলে ইকবাল। তবে জনসম্মুখে কিছু বলেনা। আড়ালে নিয়ে কানটা মুলে ধরে দিয়ে বলে, ' চুরি করছিল কেন?'
কোন উপায় না পেয়ে ইকবালের পায়ে পড়ে গিয়েছিল সেদিন উচ্ছ্বাস। কান্নাকাটি করে নিজের খিদে পাওয়ার কথা বলেছিল। অন্যদের মতো কটা টাকা দিয়ে বিদায় দেয়নি ইকবাল ওকে। বরং কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছিল আমের ভিলায়। বাকি সবতো ছিল স্বপ্ন।
বুকের মাঝে চাপটা যেন কয়েকগুন বেড়ে যায় উচ্ছ্বাসের। কান্না আসতে গিয়েও আটকে যায় ভেতরে কোথাও একটা। সোফার হাতলটা ধরে দাঁড়িয়ে থাকে কেবল। জ্যোতি এসে হাত রাখে উচ্ছ্বাসের কাঁধে। হালকা চাপ দেওয়ার সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু সবকিছুর সান্ত্বনা এ জগতে নেই।

ডিপার্টমেন্টে খবর পাঠিয়েছিলেন আজিজ। আজিজের প্রাথমিক পরীক্ষার শেষ। ইকবালের লাশটা নিয়ে যাবে তারা। নীরব কুহুকে নিয়ে ভেতরে চলে গেছে। এখানে মেয়েটার না থাকাই ভালো। ততক্ষণে নিচে নেমে আসে প্রিয়তাও। আজিজ প্রশ্ন করে, ' উনি আসার আগে কোনভাবেই কোন খবর দেয়নি ইকবাল আপনাদের?'

জ্যোতি উত্তর দেয়, ' না, হুট করেই চলে আসেন উনি। অবস্থা এতোটাই খারাপ ছিলোযে দাঁড়াতে অবধি পারছিলনা লোকটা।'

' এসে কিছুই বলেনি?' প্রশ্নটা করল ফারুক।

প্রিয়তা বলল, 'বলার সুযোগ পায়নি। কিছু বলতে চাইছিল কিন্তু বুঝতে পারিনি আমরা কেউ। ওনার অবস্থা এতোটাই খারাপ ছিলোযে গলা দিয়ে আওয়াজই বের হচ্ছিলো না।তারপরেই তো_'

ইন্সপেক্টর আজিজ বললেন, ' কে কে ছিলেন তখন?'

উত্তর দিল উচ্ছ্বাস, ' জ্যোতি, নীরব, কুহু আর বউমণি_ আইমিন প্রিয়তা ছিল।'

মাথা ঝাঁকিয়ে ইকবালের লাশের দিকে তাকিয়ে থাকলেন আজিজ। আপনমনেই বলে, 'দেখেতো মনে হচ্ছে মৃত্যুর কারণ বি*ষক্রিয়া। কিন্তু শরীরে আরও সব আঘাতের চিহ্নও আছে। দেখা যাক পোস্টমর্টেম রিপোর্ট কী বলে।'

কথাটা বলে তাকাল রুদ্রর দিকে। রুদ্র তখনও গম্ভীর, স্তব্ধ। স্থির চোখে দেখে যাচ্ছে ইকবালের লাশটা। আজিজ রুদ্রর কাছে গিয়ে আস্তে বলল, ' ভেবেছিলাম ইকবালকে তুমি আরও আগেই টপকে দিয়েছো। কিন্তু এখনতো দেখছি ঘটনা ভিন্ন। ভেতরে কী জটলা পাকছে বলোতো?'

রুদ্র গম্ভীর গলায় বলল, 'এজন্যই নিজের সব থিওরিতে বিশ্বাস করতে নেই।'

' সে না হয় করলাম না। কিন্তু প্রথমে রাশেদ বাবা এখন ইকবাল। পঞ্চ পান্ডবের মধ্যে দুজনেরই বধ হয়ে গেল। সোলার সিস্টেম আর বেশিদিন ধরে রাখা সম্ভব নয় রুদ্র। বুঝতে পারছো সেটা?'

দীর্ঘক্ষণ পর ইকবালের লাশ থেকে চোখ সরায় রুদ্র। নিজের লালচে চোখজোড়া আজিজের চোখে রেখে বলল, 'আপনার দেরী হচ্ছে বোধহয়।'

মাথা ঝাঁকায় আজিজ। কথা বাড়ায় না। কিছুক্ষণের মধ্যেই লোক চলে আসে স্ট্রেচার নিয়ে। ইকবালের লাশটা নিয়ে বেরিয়ে যায়। আমের ভিলার উপস্থিত সদস্যদের ওপর একপলক চোখ বুলায় ইকবাল। নিজের বেরিয়ে আসে। 

ইকবালের লাশটা নিয়ে বেরিয়ে যেতেই কেমন থমথমে এক পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে ওখানে। কারো মুখে কোন শব্দ নেই। কিছু বলার নেই, কিছু করার নেই। আছে কেবল দীর্ঘশ্বাসের শব্দ আর একরাশ শূন্যতা।

*

ঐদিন রাতেই বৈঠক ঘরে আলোচনায় বসে রুদ্র, উচ্ছ্বাস এবং জাফর। বরাবরের মতোই রাশেদ আমেরের চেয়ারটা ফাঁকা। তবে রুদ্রকে বেশ নীরব মনে হচ্ছে। সন্ধ্যা থেকে এতোকিছু হয়ে গেল। ইকবাল মারা গেল। তার লাশ নিয়ে যাওয়া হল। রেখে গেল কয়েকটা অমীমাংসিত জটিল প্রশ্ন। অথচ রুদ্র গতি খুবই মন্থর। এতোটা লম্বা সময়ে মাত্র কয়েকটা শব্দই বের হয়েছে ওর মুখ দিয়ে। এখনো কেমন থম মেরে বসে আছে চেয়ারে। হাতের সিগারেটটায় ছাই জমে যাচ্ছে। টান দেওয়ার নাম নেই।

' ঠিক আছিস তুই?' হালকা গলায় প্রশ্ন করল উচ্ছ্বাস।

রুদ্র নড়ল। অ‍্যাশট্রেতে সিগারেটের ছাই ঝেড়ে ধীরে সুস্থে একটা টান দিয়ে বলল, 'শুনছি। বল।'

উচ্ছ্বাস একটু অবাক হল। কিন্তু পরিস্থিতি বুঝে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, ' আমরাতো ভেবেছিলাম ইকবাল ভাইকে হয় ওরা মেরে ফেলেছে, নয়তো পালিয়ে গেছে সে। কিন্তু আজ যা হলো তাতেতো পুরো ইকুয়েশনটাই বদলে গেল। যদি সত্যিই ইকবাল ভাই তথ্য পাচার করে থাকতেন তবে এতোদিন কোথায় ছিলেন? বেঁচে ছিলেন তারমানে মারেনি ওরা ওনাকে। আর যদি ধরে নেই পালিয়ে গিয়েছিলেন তবে ফিরে এলেন কেন? এরকম গুরুত্বর খারাপ অবস্থাইবা কীকরে হলো ওনার?'

জাফর বলল, 'শরীর দেখে মনে হচ্ছিল অনেকদিন যাবত টর্চার করা হচ্ছিল।'

' এক্সাক্টলি। কিন্তু কেন? মেরে ফেলতো পারতো! এভাবে বাঁচিয়ে রাখার কারণ কী ছিল?'

রুদ্র সোজা হয়ে বসল। অ‍্যাশট্রেতে ছাই ঝাড়তে ঝাড়তে বলল, ' ধরে নেওয়া যাক, ওনার কাছে এমন কিছু ছিল যেটা ডার্ক নাইট বা ব্লাক হোলরও দরকার ছিল। আমাকে কল করেছিলেন ইকবাল ভাই। সিএনজি ওয়ালার ফোন থেকে। কিন্তু আমি হুসাইন আলীর সঙ্গে মিটিংয়ে ছিলাম। যার ফলে বন্ধ ছিল আমার ফোন।'

' আমাকেও। কিন্তু আজ নাজিফাদের বাড়িতেই ভুল করে রেখে এসেছিলাম ফোনটা। নয়তো ধরতে পারতাম ওনাকে বাঁচাতে না পারলেও কোন তথ্য অন্তত জানা যেতো।' উচ্ছ্বাসের কন্ঠে স্পষ্ট আফসোস।

জাফর বলল, ' কিন্তু মারা গেল কীকরে সেটাই বড় প্রশ্ন। রিপোর্ট না আসা অবধি কিছু বলাও যাচ্ছেনা।'

পাশ থেকে একটা ডায়েরি খুলল রুদ্র। পাতা উল্টাতৈ উল্টাতে বলল, ' এসব নিয়ে ভাবার সময় নেই এখন। উচ্ছ্বাস, ভাইরাল হওয়া ভিডিওটা চেক কর। লোকেশনটা বের করে লোক নিয়ে কাল একবার রেট দিয়ে আয় জায়গাটা।'

উচ্ছ্বাস বলল, 'লোকেশন দেখেছি। খবরে শুনলাম ওখানকার এক গোডাউনে নাকি কাল ঐসময়ই আগুন লেগেছে।'

' হতে পারে ওখানেই আটকে রেখেছিল ওরা ওনাকে। তুই যা একবার কাল। আর হ্যাঁ। কাল একজনের টাকা দেওয়ার কথা আছে। আমি এড্রেস দিয়ে দিচ্ছি। কাল আসার সময় কালেক্ট করে নিবি।'

হঠাৎ কিছু একটা মনে পড়তেই উচ্ছ্বাস বলল, ' হুসাইন আলীর সঙ্গে মিটিংয়ের কী হলো?'

চোখমুখ গম্ভীর হয়ে উঠল রুদ্রর। থমথমে গলায় বলল, ' সে কোনরকম সময় দিতে রাজি হয়নি। হয় সময়মতো তার কাছে মাল পৌঁছে দিতে হবে নয়তো টাকা। আর না হলে_'

সাদা কাগজের মতো ফ্যাকাশে হয়ে উঠল উচ্ছ্বাস আর জাফরের মুখ। তা না হলে কী সেটা বুঝতে বাকি থাকেনা ওদের। জাফর অন্যমনস্ক গলায় বলল, 'আর ফ্যাক্টরি বেঁচে দেওয়ার সিদ্ধান্ত?'

সিগারেট ঠোঁটে লাগাতে গিয়েও থেমে গেল রুদ্র। শূণ্য দৃষ্টিতে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে বলল, ' ব্রানথুইস আপাতত কোন তাড়া দিচ্ছেনা আমাদের। বাকি থাকে "বিধারাত" আর "ক্রইট" দল। ওদের ডেডলাইনটা কাছে হলেও একটা মিটিং করব আমি। বিধারাতের লীডার দুবাইতেই আছেন। বাকি রইল ক্রুইট। সেও আসছেন দুবাই। বিজনেস কাছে। দুবাই যাচ্ছি আমি। ওনাদের সঙ্গে একটা মিটিংয়ে বসতে হবে। মিটিংটা সেড়ে এসে দেখছি কী করা যায়।'

চমকে উঠল উচ্ছ্বাস, জাফর দুজনেই। বিস্ময় চাপতে না পেরে জাফর বলল, ' দুবাই যাচ্ছিস তুই? বলিসনিতো?'

তেমন গুরুত্ব দিলোনা রুদ্র। নির্বিকারভাবে বলল, 'শিওর ছিলাম না তখনও। আজ শিওর হয়েছি। তাছাড়া ভিসাও রেডি ছিলোনা। এখন অল ওকে।'

' কবে যাচ্ছিস।' কপালে গভীর রেখা ফেলে জানতে চাইলেন জাফর।

' কালকেই ফ্লাইট।'

আরেকদফা চমকে উঠল ওরা। পিনপতন নীরবতা নেমে এলো ঘরটাতে। ফ্লাইট কালকেই তারমানে পরিকল্পনা আগে থেকেই করা ছিল। তবে এই মুহূর্তে বিষয়টা নিয়ে ঘাঁটলনা। কিছুক্ষণের নীরবতার পর আনমনেই উচ্ছ্বাস বলল, ' হুসাইন আলীর ব্যপারটা কী করবি?'

ঠোঁট থেকে সিগারেটের শেষ অংশটুকু নামিয়ে অ‍্যাশট্রেতে গুঁজে রাখল রুদ্র। আলোচনায় ইতি টেনে বলল, ' দেখছি সবটাই। আমি দুবাই থেকে ফিরে আসার পর।'

*

রুদ্রর লাগেজ গোছাচ্ছে প্রিয়তা। চেহারায় নির্লিপ্ততা থাকলেও মনে মনে অস্থির হয়ে উঠছে ও। সন্ধ্যায় ঘটা আকস্মিক ঘটনার রেশ এখনো কাটেনি আমের ভিলায়। সকলের মধ্যেই গুমোট একটা ভাব। থমকে গেছে সবাই। জ্যোতির সঙ্গে সবকিছু সামলে রাত প্রায় বারোটায় ঘরে আসে প্রিয়তা। ও ঘরে আসার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই বৈঠকঘর থেকে ফিরে আসে রুদ্র। প্রিয়তাকে বলে ব্যাগ গোছাতে। প্রিয়তা কারণ জানতে চাইলে ওকে অবাক করে দিয়ে রুদ্র বলে, দুবাই যাচ্ছে সে। সেটাও কালকেই।
রুদ্রর হঠাৎ দুবাই যাওয়ার পরিকল্পনা ভাবাচ্ছে প্রিয়তাকে। এমনিতেই কম বিপদ নেই চারপাশে। তারওপর আজ হঠাৎ ইকবালের মৃত্যু। এরকম পরিস্থিতিতে হঠাৎ বিদেশ কেন যেতে চাইছে রুদ্র? হুসাইন আলীর সঙ্গে মিটিংয়ের পরতো রুদ্রর অন্যকিছু ভাবার কথা ছিল। কিন্তু ঘটছে ভিন্ন কিছু। কী চলছে রুদ্রর মনে? কী পরিকল্পনা? এমনিতেও ইদানিং ঠিকঠাকভাবে কাজ করেনা মাইক্রোফোনটা। দুদিন চার্জ দিতে পারেনি। ঘুমই ভাঙেনি ওর। আর রুদ্র দুবাই চলে গেলেতো চার্জ দিতেই পারবেনা। জানতেই পারবেনা ওখানে আসলে কী করছে রুদ্র। সবকিছুর উর্ধ্বে গিয়ে এটাও সত্য যে চিন্তা হচ্ছে ওর রুদ্রর জন্যে। যদি ভয়ংকর কোন বিপদে জড়িয়ে যায় সেখানে?
হাজারটা চিন্তায় ডুবে থেকেই লাগেজটা বন্ধ করল প্রিয়তা। চেইন লাগাতে লাগাতে একবার উঁকি দিল বারান্দায়। সেই কখন প্রিয়তাকে ব্যাগ গুছিয়ে রাখতে বলে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে লোকটা। এখনো আসার নাম নেই। অথচ বাইরে হাঁড় কাঁপানো ঠান্ডা। লাগেজটা রুমে একসাইডে চাপিয়ে রাখল প্রিয়তা। বিছানাটা ঝেড়ে গুছিয়ে নিল ঠিকঠাকভাবে। অতঃপর পা বাড়ালো বারান্দায় দিকে। এই আবহাওয়ায় বাইরে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে অসুস্থ হয়ে পড়বে রুদ্র। তারসাথে কৌশলে কিছু জেনে নেওয়ার একটা চেষ্টা করতে হবে।

বারান্দায় গিয়ে প্রিয়তা দেখল, নতুন একটা সিগারেট জ্বালিয়েছে রুদ্র। দৃষ্টি আকাশের দিকে স্থির। বাইরে থেকে হিমশীতল হাওয়া আসছে। যা কাঁটার মতো বিঁধছে গায়ে। এই ঠান্ডাতেও গায়ে একটা পাতলা গেঞ্জি মাত্র। ভ্রু কুঁচকে গেল প্রিয়তার। এগিয়ে গিয়ে বলল, ' এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? ঠান্ডা লাগবেতো!'

রুদ্র তাকালোনা প্রিয়তার দিকে। আকাশের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখেই বলল, 'গোছানো শেষ?' 

' হ্যাঁ। বিছানাটাও গুছিয়ে দিয়েছি। ভেতরে এসে শুয়ে পরুন। অনেক রাত হয়েছে, ঠান্ডা বাড়ছে। শরীর খারাপ হবে পরে।সকাল সকাল বের হবেনতো আপনি।'

জবাব দিলোনা রুদ্র। আকাশের দিকে দৃষ্টি রেখেই টান দিল সিগারেটে। অন্ধকার আকাশে উড়িয়ে দিল নিকোটিনের সাদা বিষাক্ত ধোঁয়া। প্রিয়তা অপলক চোখে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে রইল সেদিকে। তারপর এগিয়ে গিয়ে হাত রাখল রুদ্রর কাঁধে। নরম গলায় বলল, ' কী হয়েছে রুদ্র? ঠিক আছেন আপনি?'

' আছি।'

' ইকবাল ভাইয়ের মৃত্যুটা নিয়ে ভাবছেন?'

' বিষয়টাতো ভাববার মতোই।'

চুপ করে গেল প্রিয়তা। কী বলবে বুঝে উঠতে পারল না। একটু চুপ থেকে বলল, 'হঠাৎ দুবাই যাচ্ছেন। কোন বিপদ হয়েছে?'

' মিটিং আছে দুটো দলের লীডারের সঙ্গে। বলেছিলাম না ফিনানশিয়ার ক্রাইসিস? অনেক পুরোনো পার্টনারশিপ। দেখি কথা বলে কিছুটা বেনিফিট নেওয়া যায় কিনা। কয়েক পয়েন্ট আর আমার ফিউচার প্ল্যানটা ভালোভাবে বুঝিয়ে বললে কিছু হতে পারে।'

ভেতরকার অস্থিরতা বাড়ল প্রিয়তার। আস্তে করে হাত সরিয়ে আনল রুদ্রর কাঁধ থেকে। নির্লিপ্ত থাকাটা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠল। ফিউচার প্ল্যানটা কী? জিজ্ঞেস করে ফেলার ঝোঁকটাকে একপ্রকার গলা টিপে মারল। কিন্তু কিছু হতে পারে মানে কী! কিছু হলেতো হবে না। কিছু না হলেইতো দ্রুত সব ছাড়বে রুদ্র। পরিবারকে নিয়ে চলে যাবে অনেক দূরে। আড়ালে! কিন্তু সেটাই যদি না হয় তাহলে? কী করবে প্রিয়তা? সবদিক সামাল দেবে কীকরে?

' ভয় পেলে?'

রুদ্র প্রশ্নে চমকে উঠল প্রিয়তা। আপনাআপনি মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো, 'হুঁ?'

দীর্ঘক্ষণ পর আকাশ থেকে চোখ সরালো রুদ্র। ঘুরে তাকাল প্রিয়তার দিকে। রুদ্রর চোখের দিকে তাকিয়ে ভেতরটা কেমন করে উঠল প্রিয়তার। এখনো সামান্য লালচে ভাব আছে তীক্ষ্ম ঐ চোখজোড়াতে। ঠান্ডায়, চিন্তায়, নাকি অন্যকোন কারণে বোঝা দ্বায়। রুদ্র আবার বলল, ' এতো ঠান্ডার মধ্যেও ঘামছো তুমি। তাই জিজ্ঞেস করলাম। ভয় পেয়েছো?'

নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করল প্রিয়তা। ঘাড়ে মুখে হাত দিয়ে বুঝল উত্তেজনায় সত্যিই ঘেমে গেছে ও। কোনমতে বলল, 'ভয় পাওয়াটা কী স্বাভাবিক নয় রুদ্র? বিগত দুমাস যাবত যা যা হচ্ছে এরপর_ এরপর আপনি চোখের আড়াল হলেও কলিজা শুকিয়ে যায় আমার। যতক্ষণ বাইরে থাকেন পাগলের মতো ছটফট করি। সেখানে দুবাই_' বাক্যটা শেষ করতে পারলনা প্রিয়তা। অস্থির হয়ে থেমে গেল। দুকদম এগিয়ে গিয়ে বলল, 'না গেলে হয়না?'

মৃদু হেসে সিগারেটে পরপর কয়েকটা দিল রুদ্র। অবশিষ্ট অংশটা অ‍্যাশট্রেতে গুজে রেখে পুরোপুরিভাবে ঘুরল প্রিয়তার দিকে, 'এতো ভয় পাওয়ারতো কিছু নেই। শুধু মিটিংয়ে যাচ্ছি। এর আগে অনেকবার অনেকরকম ভয়ংকর মিশনে গেছি আমি। ব্যপারটাতো নতুন কিছু নয়।'

ছলছলে চোখ নিয়ে না বোধক মাথা নাড়ল প্রিয়তা, ' আপনি বুঝবেন না আমার অবস্থাটা। বুঝলে অনেক আগেই শুনতেন আমার কথা। আগের ব্যপার আর এখনকার ব্যপার এক নয়। সেটা জানেন আপনি।'

রুদ্রর একটা হাত নিজের দুহাতের মুঠোয় নিয়ে নিল প্রিয়তা। আলতো করে চুমু খেলো। এক ফোঁটা উষ্ণ জল গড়িয়ে পড়ল রুদ্রর হাতে। অজান্তেই মৃদু কেঁপে উঠল রুদ্র। প্রিয়তা বলল, 'যদি সম্ভব হতো আপনার সঙ্গে যেতাম আমি। কোনকিছু, কোনভাবেই আটকে রাখতে পারতোনা আমাকে। আপনিও না। কিন্তু আমি জানি, সেটা সম্ভব না। তাই একটা কথা চাইছি। ওয়াদা করুন, ফিরে আসবেন।'

ক্লিষ্ট হাসল রুদ্র। অপলকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল প্রিয়তার মুখের দিকে। ধীরকন্ঠে বলল, 'এতোটা ডেস্পারেশন?'

রুদ্রর হাতটা আরও শক্ত করে ধরল প্রিয়তা। ফিসফিসে আওয়াজে বলল, ' ডেস্পারেশন কি-না জানিনা। কিন্তু আপনাকে ধরে রাখার জন্যে আমি সব সীমা অতিক্রম করতে পারি রুদ্র।'

রুদ্র আরও কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল প্রিয়তার দিকে। অতঃপর আলতো করে হাত রাখল ওর অশ্রুসিক্ত গালে। প্রিয়তার মতোই ফিসফিসে আওয়াজে বলল, 'কথা দিচ্ছি, ফিরে আসব।'

ঝরঝর করে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল প্রিয়তার সেই অপূর্ব, ঘনপল্লব ঘেরা চোখ থেকে। রুদ্র তাকাল সেই চোখে। এই চোখজোড়াইতো রুদ্রর সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। এই চোখের দিকে তাকালেই সব গুলিয়ে যায় রুদ্রর। সব ভুলে যায়। সমস্ত জগতকে তুচ্ছ করে একাকার হয়ে যায় নিজের প্রিয়র সঙ্গে। 
রুদ্র কাছে টেনে নিল প্রিয়তাকে। গভীরভাবে চুম্বন করল কপালের মাঝখানে। আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলল প্রিয়তা। সারা শরীর হালকা হয়ে গেল। নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী নারী মনে হলো ওর। হঠাৎই মস্তিষ্কে ঝংকার দিয়ে উঠল ইকবালের বলা ওকে বলা সেই শেষ কথাটা, "ওপরওয়ালা তােমাকে ক্ষমা করবে কি-না জানিনা। কিন্তু রুদ্র আমের কোনকিছুর বিনিময়েই তোমাকে ক্ষমা করবেনা সেটা তুমিও জানো। রুদ্রর ঘৃণাই তোমাকে মূৃত্যু দেবে। আর এটা হবে। হবেই। রাশেদ বাবার মৃ-ত দেহের ভাড়, কুহুর চিৎকার-যন্ত্রণার ধ্বনি, আমের পরিবারের প্রতিটা সদস্যের দীর্ঘশ্বাস থেকে তুমি বাঁচতে পারবেনা রাণী মীর্জা। এগুলো তােমাকে শান্তিতে মরতেও দেবেনা, বাঁচতেও দেবেনা। অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করবে তুমি। এতোটা ছটফট করবে যে জল্লাদেরও তোমাকে দেখে করুণা হবে।"

সারা শরীর থরথর করে কেঁপে উঠল প্রিয়তার। দমবন্ধ হয়ে এলো। ঝিম ধরে গেল যেন মস্তিষ্কে। কোনরকম পূর্বসংকেত ছাড়াই রুদ্রকে জাপটে ধরল প্রিয়তা। ফুঁপিয়ে উঠল নিজের অজান্তেই। রুদ্র দুহাতে আকড়ে ধরল ওকে। ইচ্ছে করেই চুপ থাকল। বলল না কিছু। সময়ের হিসেব ছাড়াই একে অপরের সঙ্গে মিশে রইল দীর্ঘসময়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ঠান্ডা। গরম কাপড় ছাড়া এখানে থাকা দ্বায় হয়ে দাঁড়িয়েছে একপ্রকার। প্রিয়তাকে ছাড়াতে চাইল রুদ্র। কিন্তু ছাড়তে চাইল না প্রিয়তা। শক্ত করে ধরে রাখল নিজের সঙ্গে। উপায় না পেয়ে কোলে তুলে নিল রুদ্র প্রিয়তাকে। পা দিয়ে বন্ধ করে দিল বারান্দার দরজাটা। আলতো করে বিছানায় শুইয়ে দিলে প্রিয়তাকে। কম্ফোর্টারটা গায়ে দিয়ে দিয়ে উঠে যেতে নিলেই দুহাতে আকড়ে ধরল প্রিয়তা ওকে।
দ্বিতীয়বার রুদ্রর চোখ পড়ল প্রিয়তার চোখ। আরও একবার গুলিয়ে গেল সবকিছু। এই মেয়েটা আজ নিয়ন্ত্রণহীনভাবে টানছে ওকে। স্তব্ধ, নীরব ঘরটায় দুজনের নিঃশ্বাসের শব্দ প্রবল হচ্ছে। নিজের স্নায়ুর ওপর বেশি চাপ প্রয়োগ করল না রুদ্র। মরুর তৃষ্ণার্ত কোন পথিকের মতোই নিজের শুষ্ক তামাটে ঠোঁটজোড়া এগিয়ে নিল প্রিয়তার ভেজা কমলাটে ঠোঁটে। 

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা যত বাড়ল। ততই নিঃশ্বাস বন্ধ হতে থাকল প্রিয়তার। নিদারুণ কষ্টে সর্বাঙ্গ জ্বলতে লাগল। রুদ্রর প্রতিটা স্পর্শ হাহাকার তৈরী করল ওর বুকে। রুদ্র যত কাছে আসল, প্রিয়তার সেই যন্ত্রণা ততই বাড়তে থাকল। মনের গহীনে কেউ চিৎকার করে বলল, এই স্পর্শ ও আর কোনদিন পাবেনা। এতোটা ভালোবেসে ওর শ্যামপুরুষ আর কোনদিন ছোঁবেনা ওকে। দুচোখ দিয়ে জল গড়িয়ে নামল প্রিয়তার। ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেলল।
থেমে গেল রুদ্র। প্রিয়তার চোখে চোখ রেখে বলল, 'কাঁদছো কেন?'

প্রিয়তা আকুল নয়নে তাকাল রুদ্রর চোখে। কাতর কন্ঠে বলল, 'আপনি আমাকে ভালোবাসেন রুদ্র?'

হাসল রুদ্র। প্রিয়তার কপালে নিজের কপাল ঠেকিয়ে বলল, 'ভালোবাসি প্রিয়। ঠিক যতটা ভালোবাসলে নিজেকে নিঃশেষ করে দেওয়া যায়; ততটাই ভালোবাসি।'

রুদ্রর দুগালে হাত রেখে আরও একবার ফুঁপিয়ে উঠল প্রিয়তা। ভেতরের হাহাকার আরও বাড়ল। ওর মনে হল, এই শেষ। আর কোনদিন রুদ্রর মুখ থেকে 'ভালোবাসি' শব্দটা শুনতে পাবেনা প্রিয়তা। "ভালোবাসি প্রিয়" শব্দদুটি আর শোনা হবেনা ওর। কোনদিন না।'

***

সকাল সকালই শওকত মীর্জার ঢাকার বাড়িটাতে এসেছে প্রিয়তা। এখানে আসার ইচ্ছা ছিলোনা আজ ওর। কিন্তু গতকাল রাতে কল করেছিল শওকত। বলল, সম্রাট আর করিম তাজওয়ারও আসছে। গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা আছে। প্রথমে অফিসেই বসতে চেয়েছিল শওকত; কিন্তু রাজি হয়নি প্রিয়তা। সবাইকে ওদের বাড়িতেই আসতে বলেছে। আমের ভিলা থেকে স্কুলের উদ্দেশ্যে বের হলেও জয়কে নিয়ে সোজা চলে এসেছে শওকতের বাড়িতে। সম্রাট বা করিম এখনো এসে পৌঁছয়নি। তাই নিজের রুমটাতে চলে এসেছে প্রিয়তা। স্যালোয়ার স্যুট ছেড়ে কমফর্টেবল টিশার্ট আর একটা টাউজার পড়ে নেয়। শানকে বলে এসেছে সবাই উপস্থিত হলে ওকে ডেকে পাঠাতে। বরাবরের মতোই এদের দেরী করার বাতিকটা খুব বিরক্ত করে প্রিয়তাকে।

গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা কী সেটা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেনা প্রিয়তা। এখন অন্যচিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে মস্তিষ্কে। রুদ্র দুবাই চলে গেছে পরশু সকালে। এখনো অবধি রুদ্রর সঙ্গে কোন যোগাযোগ নেই প্রিয়তার। ফোন নট-রিচেবল। সেদিকের কী অবস্থা জানার উপায় নেই প্রিয়তার। যেটা বর্তমানে প্রিয়তার সবচেয়ে বড় চিন্তার কারণ।
ঘুম থেকে উঠে রুদ্রকে পাশে পায়নি প্রিয়তা। প্রথমে ভাবে ওয়াশরুমে, বারান্দায় কিংবা নিচে গেছে। ছোট্ট হাই তুলে পিটপিটে চোখে ফোনের স্ক্রিনটা অন করে। সময় দেখামাত্র চমকে ওঠে ও। সকাল তখন ন'টা বারো। অথচ ফ্লাইট ধরার জন্যে সাতটায় বের হয়ে যাওয়ার কথা ছিল রুদ্রর। দ্রুত উঠে বসে প্রিয়তা। শরীরে পোশাক না থাকায় কম্ফোর্টারটা আকড়ে ধরে নিজের সঙ্গে। বিভ্রান্তের মতো চারপাশে তাকায়। ওয়াশরুমের লাইট অফ। বারান্দার দরজাটাও বন্ধ। রুদ্র কী চলে গেছে? সময় হিসেব করলে চলে যাওয়ারই কথা। কিন্তু...। দ্রুত পোশাক খুঁজে পড়ে নেয় প্রিয়তা। কোনমতে ফ্রেশ হয়ে প্রায় দৌড়ে নিচে যায়। নিচে গিয়ে জানতে পারে রুদ্র সাতটার দিকেই বেরিয়ে গেছে। কাউকেই নাকি সেভাবে বলে যায়নি। শুধু বের হওয়ার সময় ড্রয়িংরুমে দেখা হয়ে যায় জ্যোতির সঙ্গে। একটু দাঁড়িয়ে কেবল বলেছে, 'যাচ্ছি। বাড়ির সবার খেয়াল রাখিস।' 
জ্যোতি মাথা নাড়ে। এরপর নাকি আর দাঁড়ায়নি রুদ্র। সোজা বেরিয়ে গেছে। ব্যপারটায় মন খারাপ হয় প্রিয়তার। কাউকে বলে না গেলেও ওকেও বলে যায়নি ব্যপারটায় বড্ড বেশি অভিমান হয় ওর।  

দরজা খোলার শব্দে প্রিয়তার ধ্যান ভাঙল। তাকিয়ে দেখল সম্রাট এসেছে। দরজা লক করছে সে। আজ বাদামি রঙের একটা ফুলহাতা গেঞ্জির সঙ্গে কালো জিন্স পরনে। সেদিকে একপলক তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিল প্রিয়তা। চুপচাপ ফোন স্ক্রোলিং করতে শুরু করল। এগিয়ে এসে প্রিয়তার বিছানায় বসল সম্রাট। প্রিয়তা ঠিক মাঝখানে হেডরেস্টে হেলান দিয়ে বসে ছিল। সম্রাটও হেলান দিল হেডরেস্টে। মুচকি হেসে বলল, 'ভালো আছো সুইটহার্ট?'

চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল প্রিয়তার। তবে কন্ঠস্বর যথাসম্ভব স্বাভাবিক রেখে বলল, ' ভালো। তোমার কী খবর?'

' বেশ ভালো।'

' ভালো থাকাই ভালো। কিন্তু আদবকায়দা ভুলে যাওয়া না। প্রথমত, কারো বেডরুম ঢোকা আগে নক করতে হয়। দ্বিতীয়ত, আমার অনুমতি ছাড়াই বিছানায় উঠে বসাটা উচিৎ হয়নি তোমার।'

ঠোঁটের হাসিটা মিলিয়ে গেল সম্রাটের। অপমানে থমথমে হয়ে গেল মুখটা। ভেতরে ভেতরে একধরনের চাপা ক্রোধ অনুভব করল ও। বলতে ইচ্ছে করল, একটা সময় একে অপরের রুমে আসতে, বিছানায় বসতে এমনকি শুতেও অনুমতির দরকার হয়নি আমাদের। অথচ এটা বললেই সেই পরিচিত উত্তর আসবে, জানে সম্রাট। গম্ভীর গলায় রাণী বলবে, আগের পরিস্থিতি এখন আর নেই। কিন্তু রাণীর এই হুটহাট পরিস্থিতি বদলের সঙ্গে মানিয়ে চলতে বাকি সবাই বাধ্য নয়, সেটা বলে এইমুহূর্তে ঝগড়ার পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইছেনা সম্রাট। সবাই মিলে যখন আলোচনায় বসবে তখন এমনিতেই ঝগড়া সৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। তাই চুপ এ বিষয়ে থাকাটাকেই উপযুক্ত মনে করল। কথা ঘুরিয়ে বলল, ' ব্রেকফাস্ট করেছো?'

' হ্যাঁ। তুমি?'

' করেছি।'

প্রিয়তা ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে থেকেই বলল, 'তাজওয়ার সাহেব এসেছে?'

হবু শ্বশুরকে নাম ধরে ডাকছে! সম্রাট মনে মনে কথাটা ভাবলেও মুখে বলল, 'আসছে। উনি আসলেই লোক আসবে আমাদের ডাকতে। বাকি সবাই চলে এসেছে অলরেডি।'

প্রিয়তা ভ্রু উঁচু করে তাকাল সম্রাটের দিকে, ' "টাইম ম্যানেজমেন্ট " শব্দদুটো আছে তোমাদের ডিকশনারীতে? নাকি ঘাসের সঙ্গে গিলে খেয়েছো?'

ক্রোধটা এবার চেপে রাখা দায় হল সম্রাটের। ঠান্ডা গলায় বলল, 'ডোন্ট ইউ থিংক ইউ আর বিয়িং ডিজরেস্পেক্টফুল ডে বাই ডে?'

উত্তর দিলোনা প্রিয়তা। সম্রাট বলল, 'ডেলিভারি হবে সামনে অনেক সেটআপ তৈরী বাকি। সেগুলি ঠিকঠাক করতে গিয়েছিলাম। ফিরতে ফিরতে দেরী হয়ে গেছে আমার। কাজেই গিয়েছিলাম।'

ঠোঁটে মৃদু তাচ্ছিল্যের হাসি মিশিয়ে প্রিয়তা বলল, 'সঙ্গে হোটেলরুমে মেয়েদের নিয়ে ফুর্তিও করেছো।'

 সারা শরীর গরম হয়ে উঠল সম্রাটের। কিন্তু ব্যপারটা ঘাটালোনা ও। পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা বের করল। নিজে একটা নিয়ে আরেকটা বারিয়ে দিল প্রিয়তার দিকে। প্রিয়তা নিল সেটা। পরপর দুবার গ্যাসলাইট জ্বলার আওয়াজ হল। কেটে গেল দুটো মিনিট। প্রিয়তাকে আজ দু'টানের বেশি দিতে দেখে অবাকই হল সম্রাট। বিস্ময় চেপে রাখতে না পেরে বলল, ' আবার রেগুলার শুরু করেছো?'

প্রিয়তা একবার তাকাল হাতে ধরা সিগারেটটার দিকে। রাণী থেকে প্রিয়তা হওয়ার পর ছেড়েই দিয়েছিল সম্পূর্ণভাবে। সেই আড়াই বছরে সর্বোচ্চ চারটা কী পাঁচটা টেনেছে। কিন্তু দুদিন হল ক্রেভিংসটা বাড়ছে ওর। মনের অস্থিরতার জন্যে কি-না জানেনা। নিকোটিন পোড়া এই ধোঁয়াটুকু ফুসফুস ছুলেই কেমন শান্তি লাগছে ওর। ধ্বংসাত্বক শান্তি। প্রশ্নটা এড়িয়ে গিয়ে প্রিয়তা বলল, ' হঠাৎ এই মিটিংটার কী দরকার ছিল?'

সম্রাট নাক দিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বলল, 'দরকার ছিলো বলেই ডাকা হয়েছে। রুদ্র থাকলে এখানে হুটহাট আসতে পারতেনা তুমি। রুদ্র দেশে নেই। আলোচনার জন্যে এটাকেই উপযুক্ত সময় মনে হয়েছে আমাদের।'

চোখ ছোট করে সিগারেটে টান দিল প্রিয়তা। বলল, 'রুদ্র না থাকলেও উচ্ছ্বাস আছে। ওকে খাটো করে দেখার ভুল করোনা। আমি ইশ্যুটা জানতে চেয়েছি।'

মেজাজ খারাপ হল সম্রাটের। দুবছর আগের সেই ঘটনার পর উচ্ছ্বাস নামটা শুনলেই তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে ও। ইচ্ছে হয় নিজ হাতে কু*পি*য়ে মারতে। নিজেকে সামলে নিল সম্রাট। প্রিয়তার হাতটা নিজের হাতে নিয়ে বলল, 'এখন আমরা সেসব কথা না বলি? কতগুলোদিন পর এভাবে আলাদা বসার সুযোগ পেয়েছি বলোতো?'

বলতে বলতেই প্রিয়তার হাতে চুমু খেতে গেল সম্রাট। কিন্তু বিদ্যুৎ গতিতে হাতটা সরিয়ে নিল প্রিয়তা। রেগে গিয়ে বলল, 'আমি নিষেধ করেছি সম্রাট।'

চোখেমুখে বিরক্তি নিয়ে প্রিয়তার মুখের দিকে তাকাল সম্রাট। বিতৃষ্ণা নিয়ে সিগারেট টান দিয়ে বলল, 'ফাইন!'

অতঃপর নীরবতায় কাটল আরও কিছুক্ষণ। সেই নীরবতায় ছেট ঘটিয়ে সম্রাট নিজেই বলল, ' ঐ বাড়িতে কতদিন থাকবে? আই মিন তোমার আর রুদ্রর এই বর-বউ খেলাটা কবে শেষ করবে?'

' যতদিন দরকার পড়বে।' নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলল প্রিয়তা।

' কিন্তু আমারতো মনে হয়না ওখানে তোমার আর কোন দরকার আছে। যা করার, যতটুকু করার করে ফেলেছো তুমি। অযথাই পড়ে আছো ওখানে। রুদ্র আসার আগেই এবার ফিরে এসো। এসে বউ খুঁজবে নাকি দল সামলাবে সেটা ডিসাইডস করতেই হিমশিম খাবে বেচারা।'

' কী করতে হবে সেটা আমার ওপরই ছেড়ে দাও। কখন কী করতে হবে, সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি।'

' তোমার করণীয় নিয়ে কিছু বলছিনা আমি। জাস্ট থাকার কারণটা জানতে চাইছি।'

' বলার প্রয়োজন মনে করছিনা আমি?'

' প্রয়োজন মনে করছোনা? কিন্তু আমি যদি বলি তোমার ফিয়োন্সি হিসেবে এইটুকু জানার অধিকার আছে আমার। তবে?'

নিজের গভীর তীক্ষ্ণ চোখজোড়া সম্রাটের চোখে রাখল প্রিয়তা। ঠোঁট থেকে সিগারেট নামিয়ে বলল, 'ষোল বছর বয়সের পর থেকে আমার জন্মদাতা বাবাও আমার কাছ থেকে কৈফিয়ত চাওয়ার সাহস করেনি সম্রাট। কথাটা আগেও বহুবার বলেছি তোমাকে। আজ আবার মনে করিয়ে দিলাম।'

আধ খাওয়া সিগারেটটা অ‍্যাশট্রেতে ফেলে দিল প্রিয়তা। হাত ভাজ করে বন্ধ করে ফেলল নিজের চোখজোড়া। অর্ধেকেরও বেশি শেষ হওয়া সিগারেটে টান দিতে দিতে প্রিয়তাকে দেখল সম্রাট। ভেতরে ভেতরে ফুঁসে উঠল চাপা এক ক্রোধে। এই একটা মেয়ের সামনে কেমন একটা হয়ে যায় ও। হ্যাবলা টাইপ। যেখানে মশার মতো মানুষ খু*ন করতে পারে, সেখানে এই মেয়েটার সামনে ঠিকভাবে গুছিয়ে কথাও বলতে পারেনা সম্রাট। গুলিয়ে যায় সবকিছু। এটা রাণী মীর্জার প্রতি ওর চরম দুর্বলতারই পরিচয়। সেটা স্বয়ং রাণীও জানে। তবে সেটাযে কেবল একটা নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্তই প্রযোজ্য তা জানেনা রাণী। যেদিন সেই সীমা অতিক্রান্ত হবে, সেদিন সম্রাটের হিংস্রতাও দেখবে। আপাতত আসন্ন আলোচনার বিষয়ে ভাবাটাই ভালো।

-

' ইকবালেরকে খু*ন করার কী দরকার ছিল?'

গম্ভীর কন্ঠে প্রশ্নটা করল শওকত মীর্জা। হাতে জ্বলন্ত সিগারেট। উপস্থিত আছে করিম, পলাশ, শান এবং সম্রাট। প্রিয়তা বাদে সবার হাতেই আড্ডা জমার খোরাক, সিগারেট। সোফায় পায়ে পা তুলে বসে ফোন স্ক্রোল করছে প্রিয়তা । দৃষ্টি ফোনের স্ক্রিনে রেখেই বলল, ' যদি একটা শব্দও ঠিকভাবে উচ্চারণ করার সুযোগ পেতো তবে আজ তোমরা এখানে নিশ্চিন্তে বসে থাকতে পারতেনা।'

' কিন্তু ওকে মাঝরাস্তা থেকে তুলে নেওয়ার সুযোগ ছিল আমাদের। তুমি বারণ করেছো তনুজাকে দিয়ে। কেন?' প্রশ্নটা করল পলাশ। 

ফোনের স্ক্রিন থেকে এবারও চোখ তুলল না প্রিয়তা। অদম্য সেই নির্বিকারত্ব বজায় রেখেই বলল, ' আটকে রেখেই বা কী অসাধ্য সাধনটা করেছো তোমরা। ছিলোতো এতোগুলো মাস। বার করতে পেরেছো পেট থেকে কিছু?'

এবার ফিচেল কন্ঠে আওয়াজ করে উঠল করিম, ' তাতে তোমার কৃপাতো কিছু কম নেই মা। গায়ে একটা ফুলের টোকাও দেওয়া যাবেনা। তিনবেলা গরম গরম গেলাতে হবে। তাহল মুখটা খুলবে কেন সে?'

রেগে গেল প্রিয়তা। ফোন থেকে চোখ সরিয়ে শক্ত চাহনী দিল করিমের দিকে। রাগী গলায় বলল, 'সেটা বলেছি কটা দিনই হয়েছে। কিন্তু তার আগেতো নাক গলাইনি আমি। তখন কোন বা* ছিড়েছেন আপনারা? এতোদিনে কিছু ছিড়তে পারেনি, কটা দিনে কয়লা থেকে হিরে খুলে আনতেন চাঁদু।'

অপমানে কান লাল হয়ে উঠল করিমের। এই মেয়ের সঙ্গে মুখ লাগাতে যাওয়ার অপরাধে নিজেকেই অকথ্য এক গালি ছাড়লেন মনে মনে। থমথমে একটা পরিবেশ নেমে এলো ঘরটাতে। কেউ হাসি নিয়ন্ত্রণ করল, কেউ রাগ।
কিন্তু ইকবালের মৃত্যু নিয়ে হেলদোল নেই সম্রাটের। ও বুঝে গিয়েছিল ব্যাটা এমনিতেও মুখ খুলবেনা। রাণী না মারলে কবে যেন নিজেই মেরে ফেলতো ওকে।

মৃদু গলা ঝেড়ে শান বলল, ' আচ্ছা, আমার মনে হয় ইকবালেে এখন এতো মাথা না ঘামানোই ভালো। এমনিতেও বলছিলনা কিছু। যা হয়েছে ভালোই হয়েছে। আপদ বিদেয় হয়েছে একটা। খুঁজেতো দেখেছিলাম আমরা ওর গোটা ঘর। পাইনি কিছু। মনে হয়না অন্যকেউ পাবে।'

মাথা নাড়লেন শওকত, ' ব্যাপারটা এতো সহজ নয়। ঐ পেনড্রাইভটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ বোঝার ক্ষমতা নেই তোমাদের। এক হাতে পড়লে_'

শওকতের কথায় বাঁধা দিল সম্রাট, 'এখন এটা নিয়ে না ভেবে আমার মনে হয় রুদ্রকে নিয়ে ভাবা উচিত। পরশু দুবাই গেছে ও। কেন? এই মুহূর্তে ওর এই মুভটা সবচেয়ে বেশি আনএক্সপেক্টেড।'

সিগারেট ছোট্ট একটা টান দিয়ে শওকত বলল, ' ওর মুভ সব বরাবরই আনএক্সপেক্টেড হয়।' অতঃপর প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে বলল, 'তোমাকে কিছু বলে গেছে?'

প্রিয়তা ভাবলেশহীনভাবে বলল, ' দুটো দলের লীডারের সঙ্গে না-কি মিটিং আছে। মাইক্রোফোনের রেকর্ডে ওদের বৈঠকঘরের আওয়াজ শুনে জেনেছি দলদুটো বিধারাত আর ক্রুইট।'

ভ্রু কুঁচকে গেল উপস্থিত বাকি সবারই। সম্রাট চিন্তিত গলায় বলল, ' ক্রুইট দুবাই আসছে?'

' মাইক্রোফোনের মাধ্যমে জানতে পারছোনা কিছু? ওখানে কী ঘটছে?'

প্রিয়তা চোখ ছোট ছোট করে তাকাল নিজের কাকার দিকে। দাঁতে দাঁতে চেপে বলল, ' মাইক্রোফোন ওটা। ডোরেমনের গ্যাজেট না।'

শওকত মীর্জা ধমকে পলাশকে থামিয়ে বলল, 'ওসব টেকনিক্যাল ব্যপার। তুই বুঝবি না। এখন ভাবার বিষয় হচ্ছে আমাদের করণীয় কী।'

করিম তাজওয়ার অসন্তুষ্ট গলায় বলল, 'করারতো অনেককিছুই ছিল। কিন্তু অনেকের অনেক রেস্ট্রিকশন আছে কি-না।'

কথাটা বলে আড়চোখে তাকাল প্রিয়তার দিকে। প্রিয়তা সেদিকে পাত্তাও দিলোনা। শান বলল, ' আমার মনে হয় আমাদের ডেলিভারীর কাজটাতে এখন মন দেওয়া উচিত। রুদ্রর ব্যপারে কী করব সেটা রুদ্র ফিরে আসার পর-ই ভাবা সম্ভব। ওর পরবর্তী পদক্ষেপ দেখার পর।'

মৌন থাকল উপস্থিত সবাই। অর্থাৎ এটাই আপাতত সবচেয়ে কার্যকারি সিদ্ধান্ত। চুপচাপ সিগারেট টানায় মনোযোগ দিল সবাই। সেই মৌনতা থাকল টানা তিনমিনিট। তিনমিনিট পর হঠাৎই প্রিয়তা বলে উঠল, 'তাজওয়ার সাহেব? আপনাদের দলে একটা ছেলে ছিলোনা? কী যেন নাম?' মনে করার ভান করল প্রিয়তা, ' হ্যাঁ, রাতুল। কোথায় সে?'

পিনপতন নীরবতা নেমে এলো ঘরটাতে। থম মেরে তাকিয়ে রইল করিম তাজওয়ার। চমকে উঠলেন শওকত মীর্জাও। এদিকে সম্রাটের হৃদপিণ্ডে যেন হাতুরির বাড়ি পড়েছে। করিম কোনরকমে বলল, 'ক-কেনো? হঠাৎ ওর খোঁজ করছো যে?'

' না, অনেকদিন হল দেখছিনা। তাই জিজ্ঞেস করলাম।'

' দলের পাতি সদস্যদের নিয়ে হঠাৎ এতো ভাবছো যে?' থমথমে গলায় প্রশ্নটা করলেও ভেতরে ভেতরে ভয়ে অস্থির হয়ে উঠেছে সম্রাট।

সোফায় হেলান দিল প্রিয়তা। ঠোঁটে রহস্যময় এক বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বলল, ' বেশ পছন্দ হয়েছে ওকে আমার। অ‍্যাসিস্টেন্ট করতে চাই ওকে। আমার সঙ্গে একটু দেখা করতে বলবেতো।'

কারো মুখে কথা জোগালো না। উঠে দাঁড়াল প্রিয়তা। সকলের উদ্দেশ্যে বলল, ' রুদ্রর আসতে এখনো কয়েকদিন বাকি। এরমধ্যেই যোগাযোগ করতে বলবেন রাতুলকে আমার সঙ্গে। নয়তো আমি করব। আর আমি করলে ব্যপারটা আরও জঘন্য হবে।' 

শেষ বাক্যটা বলার সময় সম্রাটের দিকে অদ্ভুত এক আক্রোশ নিয়ে তাকাল প্রিয়তা। অতঃপর পা বাড়ালো নিজের রুমের দিকে। চেঞ্জ করে আমের ভিলায় ফিরবে ও।
সাদা কাগজের মতো ফ্যাকাশে মুখটাতে রঙ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করল করিম। শওকতের দিকে তাকিয়ে বলল, ' মেয়েকে থামান কিন্তু মীর্জা। ঐ দুটোর মতো রাতুলকেও যদি আবার..'

হতাশ নিঃশ্বাস ফেলল শওকত, ' কিছু করার নেই। রাতুলকেও খরচের খাতায় ফেলে দাও।'

*

গাড়ি ড্রাইভ করে আমের ভিলার উদ্দেশ্যে যাচ্ছে জয়। পেছনের সিটে বসে আছে প্রিয়তা। দুপুর হয়ে গেলেও কুয়াশায় ঢেকে আছে সূর্য। চারপাশটা একদম সাদাকালো সিনেমার মতো। গাড়ির জানালা দিয়ে হঠাৎ তীব্র ঠান্ডা বাতাস এলো। চোখ বন্ধ করে ফেলল প্রিয়তা।
-
কক্সবাজারে ঘুরতে যাওয়ার সেই সময়ের কথা। যাওয়ার উদ্দেশ্য ভিন্ন থাকায় রুদ্র সময় দিতে পারছিলনা প্রিয়তাকে। ফলসরূপ একদিন রাতে যখন রুদ্র ফেরে, ডিনারের পর হোটেলের ছাদে যাওয়ার বায়না করে প্রিয়তা। সারাদিন সময় দিতে পারেনা মেয়েটাকে, তাই একবাক্যে রাজি হয়ে যায় রুদ্র। সেদিন রাতে খুব সুন্দর সময় কাটিয়েছিল ওরা। 
বাবলস্ লিকুইড দিয়ে অসংখ্য বাবলস্ তৈরী করে উদ্দেশ্যহীনভাবে আকাশে ছুড়ে দিচ্ছিল প্রিয়তা। খিলখিল করে হাসছিল। হাত ভাজ করে মুগ্ধ দৃষ্টিতে সেই দৃশ্য দেখছিল রুদ্র। রুদ্রর দৃষ্টি দেখে দুষ্টুমি দেখে দুষ্টুমি খেলে যায় প্রিয়তার মাথায়। একগাদা বাবলস্ ফু দিয়ে ছুড়ে মারে রুদ্রর মুখে। চমকে ওঠে রুদ্র। অতঃপর হেসে পেলে প্রিয়তার কান্ডে। প্রিয়তাকে তাড়া করে ও। প্রিয়তাও নিজেকে বাঁচাতে ছোটে ছাদের এদিক সেদিক। শাস্তিসরূপ সুরসুরি দিয়ে অস্থির করে তোলে ওকে। অতঃপর একে অপরকে জড়িয়ে ধরে দেখে আকাশের গোল মশ্রিন চাঁদ।
সুইমিংপুলের পানিতে পা ভিজিয়ে বসে দুজন। প্রিয়তার রুদ্রর কাঁধে মাথা রেখে তাকাতে থাকে আকাশের দিকে। তখনও প্রিয়তা সন্দেহ করছিল ও প্রেগনেন্ট। তাই হুট করেই রুদ্রকে বলে, ' আচ্ছা রুদ্র। আমরা আমাদের বাচ্চা, নাতি-নাতনিসহ ধুমকেতু দেখব বলেছিলাম। মনে আছে আপনার?'

' আছে। কেন?'

' আপনি মেয়ে চান নাকি ছেলে?'

ভ্রু কোঁচকায় রুদ্র, ' হঠাৎ এসব প্রশ্ন কেন প্রিয়তা?'

' বলুন না?' কন্ঠে বিরক্তি ঢেলে বলে প্রিয়তা।

' আমার মেয়ে চাই। তোমার মতো। মিষ্টি একটা রাজকন্যা।'

রুদ্রর উত্তর ভালো লাগেনা প্রিয়তার। অস্থিরতা আর অসন্তোষ নিয়ে বলে, 'না মেয়ে না। আমার মতোতো একদমই না। আমি চাইনা আমার মেয়ে হোক। আমার মতো হোক। আমাদের ছেলে হবে। ঠিক আপনার মতো। আমার রাজপুত্র।'

অন্যমনস্ক থাকায় প্রিয়তার অস্থির ভাবটা খেয়াল করেনা রুদ্র। ওর মাথায় চুমু খেয়ে বলে, 'বেশ, সময় এলেই দেখা যাবে সেটা।'

লম্বা করে শ্বাস ফেলল প্রিয়তা। রাতুল! ঐ ছেলেটাক চাই ওর। রুদ্র আসার আগেই চাই। রুদ্রর রাতুলকে খুঁজে পেতে সময় লাগলেও প্রিয়তার লাগবেনা। কারণ রাতুল ওদেরই দলের লোক। তাই পালাতে হল বা গা ঢাকা দিতে হলে ওদের দলেরই কারো না কারো সাহায্য নিতে হবে। আর জয় এবং তনুজা দলের প্রত্যেককে হাতের তালুর মতো চেনে। সুতরাং খুঁজে পেতে বেগ পেতে হবেনা ওকে। ও শুধু অপেক্ষা করছিল রুদ্রর দূরে কোথাও যাওয়ার। নিশ্চিন্তে কাজ করার একটা সুযোগের।

আস্তে করে চোখ খুলে তাকাল ও। জয়ের দিকে তাকিয়ে বলর, ' রাতুলের খোঁজটা যত দ্রুত সম্ভব চাই আমি। তনুজাকেও বলে দিও সেটা'

' জি ম্যাম।' 

' আর সেটাও তোমার স্যার ফেরার আগে।'

' জি।'

গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দেয় জয়। মিররে একবার দেখে প্রিয়তার মুখের দিকে। সেখানে ঘায়েল কোন সিংহিনীর আক্রোশ দেখতে পাচ্ছে ও।

*

রাত বারোটা। থমথমে এক পরিবেশ। লালচে ডিম লাইটের আলো ছড়িয়ে আছে রুমজুড়ে। স্তব্ধ রুমটাতে কিছুক্ষণ আগেই ঘন নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ চলছিল। অশ্লীল শব্দ আর উন্মাদনায় মেতে ছিল যুবক-যুবতি। যুবকটি আর কেউ নয়, সম্রাট তাজওয়ার। 

উঠে বসে হেডরেস্টে হেলান দিল সম্রাট। হাত বাড়িয়ে সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করল। ঠোঁটের মাঝে চেপে ধরল ঠিকই কিন্তু লাইটার দিয়ে জ্বালানোর আগেই হারিয়ে গেল গভীর ভাবনায়। শরীরের তৃপ্তি মিটলেও মন অশান্ত ওর। আজকে রাণীর বলা কথাগুলো অস্থির করে তুলেছে একপ্রকার। রাতুলকে যদি কোনভাবে রাণী পেয়ে যায়? যদি জানতে পারে সম্রাট-ই রাতুলকে দিয়ে সেদিন, সেই হস্পিটালের সিঁড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলিয়েছিল ওকে? নষ্ট করিয়েছিল ওর বাচ্চাটা? কী হবে তখন? কীভাবে রিঅ্যাক্ট করবে রাণী? কতটা রিঅ্যাক্ট করবে? রাণীর প্রতিক্রিয়া পুরোপুরিভাবে অনুমান করতে না পারাটাই বেশি অস্থির করছে ওকে।

সেন্টু আর বুলেটের কথা মনে পড়তেই গলা শুকিয়ে এলো সম্রাটের। ওর চোখের সামনে কী ভয়ংকরভাবে খু*ন করেছিল রাণী ওদের। ওদের অপরাধ ছিল, দলের অর্ডার মাথায় না রেখে রে*প করেছিল ওরা রাশেদ আমেরের ঐ মেয়েকে। যাতে ওদের খুব বেশি ক্ষতি না লাভই হয়েছিল। কিন্তু রাণী কী করল? কী নৃ*শংসভাবে মারল ওদের। এমনিতে মারধোরতো চলছিলই। প্রথমে জিহ্বা কে*টে ফেলল দুজনের। চোখের পলকে। ঘ্যাচ ঘ্যাচ করে। এরপর হাতের কবজি! অ*ন্ডকোষ থেতলে দিল কী নির্মমভাবে। ওদের সজ্ঞানে রেখেই কে*টে ফেলল দুজনের পু*রু*ষাঙ্গ। এককটা আঘাতে রক্ত ছিটকে ছিটকে সারা শরীরে মেখে যাচ্ছিল প্রিয়তার। কী বিভৎস দৃশ্য! এরপর গিয়ে গরম শিক দিয়ে দুজনের চোখদুটোই গেলে দিল। সেন্টু আর বুলেটের আকাশ কাঁপানো চিৎকার এখনো কানে বাজে সম্রাটের। শেষমেশ মৃত্যু আঘাতটা করেছিল ঠিক কলিজায়। উফফ! ভাবলেও গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। সেখানে রাতুল? রাতুলতো ওর বাচ্চাকে মেরেছে! কী অবস্থা হবে ওর? ফোনটাও বন্ধ পাঠার। ওকেও দোষ দেওয়া যায়না। সম্রাট নিজেই বলেছিল সবকিছু বন্ধ করে গা ঢাকা দিতে। কিন্তু রাণী মীর্জা ওকে পেয়ে গেলে কী হবে?

গ্যাসলাইট জ্বলার আওয়াজে ভ্রুজোড়া কুঁচকে উঠল সম্রাটের। পাশের মেয়েটা জ্বালিয়ে দিয়েছে ওর ঠোঁটে গোজা সিগারেটটা। কিছু বলল না সম্রাট। চোখ ছোট ছোট করে টান দিল কেবল একটা। একটা গ্লাসে হুইস্কি ঢেলে সম্রাটের হাতে ধরিয়ে দিল মেয়েটা। কাঁধ জড়িয়ে ধরে গলায় নাক ঘষল। কোনরকম কোন প্রতিক্রিয়া দেখালনা সম্রাট। অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে চুমুক দিল গ্লাসে। ভ্রুকুটি করে সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে দিয়ে ভাবল, শান সেদিন ঐ দুটোর কাছে আমেরের মেয়েকে রেখে গিয়েছিল। ভুল করে। তাতেই এখনো শানের সঙ্গে ঠিক করে কথা বলেনা প্রিয়তা। সেখানে ওতো সরাসরি বাচ্চাটাকে শেষ করার অর্ডার দিয়েছিল। ওর প্রতিইবা কী প্রতিক্রিয়া দেখাবে সে? তাছাড়া সম্রাটের অপরাধতো একটা না...

মীরা! শওকত মীর্জার কর্মচারীর মেয়ে। প্রিয়তার বোর্ডিংয়ের সেই বান্ধবী। প্রিয়তা জানে ওকে খু*ন করেছে সম্রাট। লা*শটা ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে দিয়ে সকলের চোখে বানিয়েছে সু*ই*সাইড। ব্যপারটায় কিছুটা অসন্তুষ্ট হলেও বেশি ঝামেলা করেনি প্রিয়তা। কারণ মীরা ছিল প্রিয়তার সত্যি জানা সবচেয়ে সহজ-সরল সাক্ষী। যে পুরো সত্যিটা জানতোনা। তাই ওর বেঁচে থাকাটা সত্যিই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল।
কিন্তু প্রিয়তা এটা জানেনা, মীরাকে গলা টিপে খু*ন করার আগে ধ*র্ষ*ণও করেছিল সম্রাট। পরপর দু'বার!
.
.
.
চলবে............................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন