আরোরা - পর্ব ১৬ - তাসমিয়া তাসনিন প্রিয়া - ধারাবাহিক গল্প


#আরোরা (ফ্যান্টাসি, রোমান্টিক)
#পর্ব_১৬
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া



" নির্লজ্জ তো তুমি! "
" তা একটু। এখন থেকে বুঝবে সেটা। বিয়ের আগে নেহাৎ ভদ্রলোক হয়ে ছিলাম।"
আরোরা বড়ো বড়ো চোখ করে এডওয়ার্ডের দিকে তাকিয়ে আছে। লোকটা কী বলছে? 
" কীসব বলছো এডওয়ার্ড? "
" যা শুনলে তাই। এসো এসো জলদি বুকে এসো।"
এডওয়ার্ড দু-হাত বাড়িয়ে বাচ্চাদের মতো করে আবদার করছে আরোরার কাছে। মেয়েটা অনেক দিন পর প্রাণখুলে হাসছে দেখে এডওয়ার্ডও ঠোঁট টিপে হাসছে। 
" তুমি যে এতো ঢং পারো এর আগে তো জানতামই না এডওয়ার্ড। "
" বউয়ের জন্য সব পারি আমি, বুঝলে?"
আরোরার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললো এডওয়ার্ড। ভ্রু নাচিয়ে ভেংচি কাটে সে। 

ঘড়ির কাঁটায় সময় রাত বারোটা বেজে পাঁচ মিনিট। প্রচণ্ড জ্বরে ক্লান্ত শরীরে ঘুমিয়ে গেছে সাঁচি। সেজন্য মেরিনা নিজের কক্ষে চলে গেছে একটু আগে। জানালা দিয়ে হু হু করে দক্ষিণা বাতাস প্রবেশ করছে ঘরে। ম্যাকও প্রবেশ করলো সেই সাথে। কক্ষে দাঁড়িয়ে আশেপাশে সবকিছুর দিকে নজর বুলিয়ে নিলো একবার। তারপর ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে দরজা ভেতর থেকে আঁটকে নিলো। মেয়েটা অসুস্থ বলে কিছু টের পাচ্ছে না। ম্যাক আস্তে আস্তে সাঁচির পাশে গিয়ে বসেছে। দুই দিন চেহারার কী হাল হয়েছে দেখে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ওর কপালে চুম্বন এঁকে দিলো ম্যাক। নিজের উপর ভীষণ রাগ হচ্ছে ম্যাকের। মানব শরীর তার মতো পিশাচের জঙ্গলীপনা সহ্য করতে পারেনি বলেই এতটা অসুস্থ হয়ে গেছে মেয়েটা। সাঁচির চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে ম্যাক। এই দুই দিন কিয়ামের সাথে একটু ঝামেলা ছিলো ম্যাকের। বাবার কাছে সাঁচির বিষয় বলতেই তিনি ঝামেলা শুরু করেছিলেন। তিনি যে কিছুতেই কোনো মানবীকে তার ছেলের পাশে দাঁড়াতে দিবেন না সেটা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন। তাছাড়া ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে কীভাবে সাঁচি থাকবে? যতই ম্যাক তাকে আগলে রাখুক সুযোগ পেলেই তো কিয়াম শেষ করে ফেলবে ওকে! তাছাড়া মানুষের লোভ ক'জন ভ্যাম্পায়ার সহ্য করতে পারবে? সবমিলিয়ে সাঁচির কাছে আর আসতে পারেনি ম্যাক। 
" আপনি এসেছেন? না-কি আমার স্বপ্ন! "
সাঁচির ক্ষীণ স্বরে ম্যাক নড়েচড়ে উঠলো। কপালে আরেকটা চুম্বন এঁকে বললো,
" আমি এসেছি সাঁচি। কিন্তু তোমার কী হাল? এভাবে অসুস্থ হয়ে শুয়ে থাকলে আমি কার সাথে কথা বলবো বলো?"
সাঁচি মৃদু হেসে ম্যাকের অন্য হাত ধরে নিজের বুকের মাঝখানে চেপে ধরলো। 
" আমি ভালো আছি এখন। আপনি এসেছেন সুস্থ হয়ে যাবো।"
" ঠিক বলেছো। আমার জন্য তোমার এই হাল,আমিই ঠিক করবো।"
সাঁচি ম্যাকের কথার ভাবার্থ বুঝতে পারেনি। শরীর ও মস্তিষ্ক দুই-ই এখন অচেতন প্রায়। ম্যাক সাঁচির শরীরে শুভ্র রঙের কিছু একটা স্পর্শ করাতে সাঁচি কেঁপে উঠল। কিছুক্ষণ সময় লাগলো স্বাভাবিক হতে। সাঁচি হুড়মুড়িয়ে উঠে বসলো। ম্যাকের ঠোঁটের কোণে দুষ্ট হাসি। 
" কী করলেন এটা? আপনি এতো বড়ো ডাক্তার আগে তো জানতামই না!"
ম্যাক সাঁচিকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে থুতনি রেখে বলে,
" আমি তোমার সব রোগের ঔষধ। বুঝতে হবে তোমার প্রেমিক এবং হবু বর কোনো সাধারণ মানুষ নয়।"
" আসলে ভুলেই গিয়েছিলাম! আপনার বড়ো বড়ো দাঁত দু'টো না দেখলে আমার মনেই থাকে না, আপনি ভ্যাম্পায়ার। পিশাচরা যে এতো আকর্ষণীয় হয় জানলে তো আগে ভয়টয় না পেয়ে তাড়াতাড়ি প্রেম করে ফেলতাম।"
সাঁচির কথায় ম্যাক শব্দ করে হেসে উঠলো। সাঁচি পিঠে হাত দিয়ে চাপ দিয়ে বললো,
" আস্তে! মা চলে আসবে তো।"
" কেউ আসবে না সাঁচি। আর আমাদের কথা কেউ শুনতেই পাবে না। "
" বাব্বাহ! কতশত শক্তি আপনার। "
" তা আছে একটুখানি। চুলগুলোর অবস্থা কী করেছো বলো তো? এলোমেলো হয়ে গেছে। "
ম্যাক সাঁচির চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিক করতে গেলে সাঁচি ব্যথায় শব্দ করে উঠে। 
" আহ! এভাবে কেউ চুল ঠিক করে? চিরুনি দিয়ে ঠিক করতে হয়।"
" দুঃখিত! দাঁড়াও। "
ম্যাক তার শক্তি দিয়ে কাঠের একটি চিরুনি এনে সাঁচির চুল আঁচড়ে দিচ্ছে। সাঁচি বসে বসে দুদিনের ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার কথা বকবক করতে শুরু করেছে। 

অন্তরঙ্গতার শেষ মুহুর্তে এসে এডওয়ার্ডকে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে দিয়ে হাঁপাতে লাগলো আরোরা। বিছানার চাদর দিয়ে অনাবৃত শরীর ঢেকে নিয়ে চুপচাপ বসে আছে সে। এডওয়ার্ড কিছুটা রেগে বললো,
" উফ! কী হলো? এখন সরে গেলে কেনো?"

" এডওয়ার্ড আমার পক্ষে তোমার সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়া সম্ভব না। আমি তোমার জন্য নই!"

আচমকা আরোরার মুখে এমন কথা শুনে স্থির হয়ে গেছে লোকটা। কামনাবাসনা ভুলে প্রেয়সীকে হারানোর ভয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে বুকে।
 
" আরোরা! প্লিজ এসব বইলো না। তুমি আমার।"
" এডওয়ার্ড আমি নেকড়ে আর তুমি মানুষ! আমাদের মিলন সম্ভব না। আমার সবকিছু মনে পড়ে গেছে,সব। আমাকে এক্ষুণি যেতে হবে। "

এডওয়ার্ডকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে আরোরা বিছানা থেকে উঠে দ্রুত পোশাক পরে নিলো। এডওয়ার্ড নিজেও আরোরার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে বললো,
" আরোরা দয়া করে সবকিছু খুলে বলো আমাকে। ভুলে যেওনা আমি এখন তোমার স্বামী। আমাকে রেখে কোথাও যাচ্ছো?"

" এডওয়ার্ড আমার পক্ষে সংসার করা সম্ভব না। আমার জন্ম হয়েছে ওই পিশাচদের ধ্বংস করার জন্য। ওরা আমার পরিবারকে হত্যা করেছিল। আমি ওদেরকে বাঁচতে দিবো না। আমি ওয়ারউলফ রাজ্যের রাজকুমারী আরোরো। ওঁরা আমাদের সবাইকে মেরে ফেলেছিল। সেই জন্য আমার পূর্নজন্ম হয়েছে। আমাকে প্রাসাদে যেতে হবে এডওয়ার্ড। আমি যাচ্ছি। এনা আপাকে তুমি সামলে নিও। শীঘ্রই ফিরবো।"
আরোরার কথা শুনে এডওয়ার্ড স্তম্ভিত হয়ে গেছে যেন। চোখের সামনে জানালা দিয়ে লাফিয়ে বের হলো মেয়েটা। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে এডওয়ার্ড আরোরার নেকড়ে রূপে পথ পাড়ি দেওয়ার দৃশ্য দেখতে লাগলো। কী বলে গেলো ও? এডওয়ার্ডের মা যা বলতেন ওয়ারউলফদের নিয়ে তাহলে সব সত্যি! আরোরা এখন তার প্রতিশোধ নিতে ভ্যাম্পায়ারদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। মেয়েটা যখন ভ্যাম্পায়ারদের নাম নিচ্ছিল ওর চোখেমুখে তীব্র ঘৃণা, ক্রোধ ও প্রতিশোধের আগুন দেখতে পেয়েছে এডওয়ার্ড। এই ক্রোধ, ঘৃণা আর প্রতিশোধের নেশার সামনে এডওয়ার্ডের ভালোবাসার কী কোনো মূল্য দিবে আরোরা? নাহ! আরোরা যখন জানতে পারবে এডওয়ার্ড নিজেই পিশাচদের রাজা তখন? তাছাড়া এডওয়ার্ডের দায়িত্ব এখন তার রাজ্য রক্ষা করা। একদিকে নিজের ভালোবাসা, নিজের স্ত্রী অন্যদিকে ভ্যাম্পায়ার রাজ্য! কী ধর্ম সংকটে পড়লো এডওয়ার্ড? সবকিছু কেমন বিষাদ বিষাদ লাগছে এডওয়ার্ডের। ধীর পায়ে এসে বিছানায় বসে চারদিকে দৃষ্টি ছড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো সে। আরোরার সাথে কি-না শেষমেশ সম্পর্কটা শত্রুতে পরিণত হলো। এডওয়ার্ড আর কিছু ভাবতে পারছেনা। ভীষণ অসহায় লাগছে নিজেকে। এবার আরোরা সবকিছু জেনে যাবে। সে কি বুঝবে তাকে হারানোর ভয়ে এতদিন সবকিছু লুকিয়ে ছিলো এডওয়ার্ড? 

রাতের শেষ প্রহরে প্রাসাদের দিকে দ্রুত গতিতে শুভ্র রঙের নেকড়ে ছুটে আসতে দেখে চমকাল ডেবিট ও আলেক্সা। নিজেদের কক্ষের বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভালোবাসাময় সময় কাটাচ্ছিল দু'জন। আচমকা দূর থেকে বিদ্যুৎ গতিতে কোনো সাদা রঙের জিনিস আসতে দেখে ভালো করে নজর দিতেই নেকড়ের অস্তিত্ব খুঁজে পেলো। আলেক্সা ডেবিটের আলিঙ্গন থেকে নিজেকে মুক্ত করে নিলো সহসাই। 
" কী হয়েছে আলেক্সা? "
" সে এসে গেছে ডেবিট। এতো দ্যুতি, এতো ক্ষিপ্রতা অন্য কারো হতেই পারে না। "
" আমাদের রাজকন্যা! "
" হ্যাঁ। চলো রাজাকে ডাকতে হবে। "
আলেক্সার আর সময় নষ্ট না করে দ্রুত নিজেদের কক্ষ থেকে বেরিয়ে রাজার কক্ষের দিকে এগোলো। ডেবিটও আলেক্সার সাথে পায়ে পা মিলিয়ে এগিয়ে চলছে। অবশেষে সমস্ত অপেক্ষার অবসান ঘটলো তাদের। 



চলবে..........................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন