সকাল বেলা একটা স্কুলে যেমন পরিবেশ থাকে আজও তেমনি! বাচ্চারা ব্যাগ কাঁধে নিয়ে স্কুলে আসছে। কেউ কেউ বন্ধু বান্ধবীদের সাথে গলা জড়িয়ে গল্প করতে করতে আসছে! কেউবা চকলেট আইসক্রিম খেতে খেতে আসছে। ছোট বাচ্চাদের ,মা অথবা বাবা এনে রেখে যাচ্ছে আবার কোনো কোনো গার্ডিয়ান বাচ্চাকে ক্লাসে বসিয়ে প্যারেন্টস রুমে অপেক্ষা করে, ছুটি হলে নিয়ে যাবে। কিছু বাচ্চা বাবা মা'র কোলে হাসতে হাসতে যাচ্ছে তো কিছু বাচ্চা গলা ফাটিয়ে কাঁদছে স্কুলে যাবে না! মা বাবা এটা ওটা বলে ভুলানোর চেষ্টায়! পাতা স্কুটি স্কুলের পার্কিং জোনে রেখে ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে টিচার্স রুমের দিকে যাচ্ছে। ছোট মেয়ে দুটোকে আগেই নামিয়ে দিয়েছে। একটু এগোতেই ভোর মিস বলতে বলতে দৌড়ে আসে তার সামনে। হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,
-" মিস আপনাকে কত ডাকলাম আপনি শুনলেন না কেন? আব্বুও ডেকেছিল আপনাকে! আপনি তাকলেনই না। আমি সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছিলাম আপনার সাথে বাইকে আসবো বলে! আর আপনি ওই আপু দুটোকে নিয়ে আসলেন! আমি ডেকেছি আপনি শোনেননি কেন?"
একসাথে অনেকগুলো কথা বলে ভোর আরো হাঁপিয়ে যায়। শেষের কথা গুলো বলতে বাচ্চাটার গলা কাঁপছিল। পাতা বুঝতে পারে! একটু মায়াও হয়! পাতা সামনে তাকতেই দেখে ভোরের বাবা আসছে! সেদিনের মতোই গম্ভীর মুখশ্রী। কালো প্যান্ট সাদা ইন করা শার্টের উপর কালো কটি! ব্লেজারটা হাতে। চুল জেল দ্বারা সেটা করা। কানের পিঠের সাদা চুল গুলো উকি দিচ্ছে! গালে চাপ দাড়ি! চোখে কালো ফ্রেমের চশমা যেটা নতুন দেখলো পাতা। মনে মনে ভেংচি কেটে ভোরের প্রশ্নের জবাবে বলল,
-" শুনেছি তোমার ডাক সাথে তোমার আব্বুরও!"
ভোর মুখ মলিন হয়ে আসে। মিস তাহলে ইচ্ছে করেই তাকে আনে নি!
-" তাহলে দাঁড়ালেন না কেন?"
-" কাল বিকেলে তুমি দৌড়ে চলে গেলে! আমি ডেকেছিলাম কতবার দাঁড়িয়েছিলে?"
ভোর মাথা নাড়ে দাঁড়ায় নি!
-" আমি স্যরি মিস! আব্বু মানা করেছিল তাই!"
পাতা যা ভেবেছিল তাই! সব ওই নাটের গুরু ম্যানারলেস লোকের কার্যকলাপ।
ভোর পাতার হাত ধরে বলে,
-" আই এম স্যরি মিস! আর হবে না! সব দোষ আব্বুর! আপনি প্লিজ কালকে আমাকে নিয়ে আসবেন বাইকে? আমি ওয়েট করবো কিন্তু?!"
পাতা সামনে চায়! মি. অরুণ সরকার অল্প দূরত্বেই দাঁড়িয়ে তাদের দিকে চেয়ে! আজও কিছু বলছে না! খানিক মোটা গোছের আভারি নামক লোকটা তার পিছনে দাঁড়িয়ে, যেন বডিগার্ড! পাতা সেদিকে তাকিয়ে ভোরের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
-" তোমাকে বাইকে নিয়ে এলে দেখা যাবে তোমার আব্বু স্কুটির ডিজেলের দাম দিয়ে দেবে কৌশলে!! আর সেটা আমার চাই না! ভোর যাও ক্লাসে !"
বলেই চলে যায় টিচার্স রুমের দিকে । অরুণ ভ্রু কুঁচকে সেদিকে তাকায় একপল। এই হাঁটুর সমান মেয়ে তাকে খোঁচা মেরে কথা বললো!! এক ধমক দিলে জান হাতে নিয়ে পালাবে অথচ ভাবখানা দেখ যেন ঝাসি কি রানি!! ভোর অরুণের সামনে দাঁড়িয়ে রাগি চেহারায়। নাকে সর্দি আসায় নাক ডলে শাসানোর ভঙ্গিতে অরুণকে বলল,
-" আব্বু সব তোমার জন্য! কাল কেন করতে বললে এমন? মিস রেগে গেল তো!"
অরুণ পকেট থেকে রুমাল বের করে ছেলের নাক মুছে বলে,
-" কি বলল মিস পাতাবাহার?"
-" কাল আমি মিসের ডাকে দাঁড়াই নি তাই আজ মিস আমার ডাকে দাঁড়ায় নি!! সব তোমার জন্য হয়েছে! আমি তো স্যরি বলেছি! তুমিও স্যরি বলে নেবে? ঠিকাছে?"
আঙ্গুল তুলে ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে বলে ভোর! অরুণ ঝুঁকে তার আঙ্গুলে আলতো কামড় দিয়ে ভোরকে কোলে তুলে নিয়ে বলে,
-" কখনো না! বরং মিস পাতাবাহারকে বলবে সে যেন স্যরি বলে! আমি তার অনেক বড়! বড়দের কথা শুনতে হয়।আমি ডেকেছিলাম তবুও সে দাঁড়ায় নি! আমার আব্বুটাকেও কাঁদিয়েছে! সো তার স্যরি বলা উচিত! এখন চলো প্রিন্সিপাল ম্যামের কাছে! এক্সামের সব ডিটেইলস জেনে নিই! ফি ও তো পরিশোধ করতে হবে! এডমিট কার্ড নিতে হবে! আমার কলিজার টুকরোর প্রথম এক্সাম বলে কথা!!"
ভোর মুখ গোমড়া করে বাবার কোলে পড়ে থাকে। মিসের রাগ কিভাবে ভাঙবে সে? অরুণ ছেলেকে নিয়ে প্রিন্সিপাল ম্যামের কাছ থেকে এক্সামের সব খবরাখবর নিয়ে ছেলেকে আদর করে ক্লাস রুমে ব্রেঞ্চে বসিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বলল,
-" আব্বু ভালোভাবে ক্লাস করবে! মনোযোগ দিবে ক্লাসে। দুষ্টুমি করবে না! টিচার্সদের কথার অবাধ্য হবে না! ছুটি হলে আভারি ভাইয়ের সাথে গাড়িতে বসে বাড়ি যাবে! অফিসে নয়! এমনিতেই কাল দুটো টিউশনিই মিস দিয়েছো! আর না! আসি আব্বু!"
বলে পাশে বসা রোহানের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
-" আঙ্কেল আমার আব্বুটার খেয়াল রেখো কেমন? আর দুজনে মিলেমিশে থেকো ঝগড়া করবে না!"
বলে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। দরজার কাছে এসে পিছনে ঘুরে ভোরের দিকে চায়! ভোর মিষ্টি হেসে হাত নাড়িয়ে 'টাটা আব্বু' বলতেই অরুণ পুনরায় রুমে ঢুকে ছেলের গালে মুখে আদর করে বলল,
-" কলিজা আব্বু! সাবধানে থাকবে! দৌড়ঝাঁপ করবে না। "
•••••••••••
ক্লাসের হৈচৈ শুরু হয়েছে। ক্লাস শেষের দিকেই! স্যার চলে যাবেন একটু পরেই এখন সবাইকে এক্সামের পড়াগুলো দাগিয়ে দিচ্ছে। ছোট ছোট বাচ্চারা হইচই করে সেটা বুঝে নিয়ে বইয়ে টুকে নিচ্ছে পেন্সিল দিয়ে। কিছু বাচ্চা কিছুই বুঝতে না পেরে পেন্সিল কামড়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। রোহান বুদ্ধিমান একটা ছেলে, খুবই শার্প ! একবার বলাতেই বুঝতে পারে পড়া! ক্লাসের সবার থেকে এগিয়ে আছে! নিয়মিত পড়া দেয় হোমওয়ার্ক করে। সব টিচার্সদের পছন্দের। সে স্যারের কথা শুনে সব পড়া টুকে নেয়! স্যার চলে যাওয়ার সময় সবাই 'বায় বায় টিচার' বলে দাঁড়িয়ে পুনরায় সিটে বসে এর ওর থেকে ভালো করে টুকে নেয় পড়া গুলো। রোহানও বসে ভোরের বই নিজের দিকে নিয়ে সব দাগিয়ে দিল। ভোর চুপচাপ বসে আছে। রোহান খেয়াল করেছে আজ আসার পর থেকেই ভোর চুপচাপ অথচ অন্যদিন ভোরের মুখ বন্ধই হয় না। বাড়িতে কি কি হলো! দাদি, চাচ্চু, চাচিমনি আনি, ছোট রূপম,টুম্পা মিস , হুজুর কি কি বলে সব বলবে! দুষ্টুমি করবে। ক্লাস চলাকালীন সময়েও একদন্ড চুপ থাকবে না! ফিসফিস করে কথা বলবে!
-" এই ভোর কি হয়েছে তোর? সকাল থেকেই চুপ করে আছিস? আঙ্কেল বকেছে?"
ভোর রোহানের দিকে তাকালাম মাথা নাড়ে।
-" না! মিস পাতা আমার উপর রেগে আছে!!"
রোহান প্রশ্ন করে,
-" কেন?"
ভোর ঠোঁট উল্টিয়ে সব বলে রোহানকে। রোহান বুঝতে পারে না। টিস্যু দেয়াতে মিস রেগে গেল কেন? ভোরের আব্বুই বা ভোরকে টিস্যু দেয়ার পর চলে আসতে বলেছিল কেন?
-" হয়েছে আর মন খারাপ করে থাকিস না। একটু পর পাতা মিস ক্লাস নিতে আসবেন। তখন আবার স্যরি বলিস!"
ভোর মাথা নাড়িয়ে নাক টানে। কাল আইসক্রিম বেশি খাওয়ার জন্য ঠান্ডা লেগে গেছে আবারও। অবশ্য তার বারো মাসই ঠান্ডা! সর্বদা নাক পিট পিট করে! ভোর হাতের উল্টো পিঠে নাক মোছে! এতে হাতে সর্দি লাগে। রোহান সেটা দেখে নাক সিঁটকিয়ে বলে,
-" ভোর তুই কি নোংরা! ছিঃ ইয়াক! আমি তোর কাছে বসবোই না! আমার বমি পাচ্ছে!"
বলেই ব্যাগ বই নিয়ে উঠে পাশের সিটে বসে। ভোর দরজার পাশের সামনের সিটে একা বসে আছে। লজ্জা পায় বেশ! আশ্চর্য ওদের নাকে কি সর্দি হয় না নাকি? হয় তো! তাহলে বমি পাওয়ার কি আছে!! কই তার বাবার তো বমি পায় না! সে কত ভালো ভাবে পরিষ্কার করে দেয়!!ভোর মাথা নিচু করে ব্যাগে টিস্যু , রুমাল খোঁজে, বাবা রেখেছিল তো!! কিন্তু খুঁজে পায় না! একটু পরেই তো পাতা মিস আসবে! তাকে এভাবে দেখে যদি নোংরা বলে? চোখ ভরে ওঠে তার। পাশের সিটে রোহানের দিকে চায়! রোহান ঘার ফিরে ভোরের দিকে একবার চেয়ে বই ব্যাগ নিয়ে আবার তার পাশে বসে। ভোরের ব্যাগ থেকে রুমাল বের করে হাতে দেয়।
-" সবসময় সর্দি! তোর আব্বুকে বলতে পারিস না ভালো ডাক্তার দেখাতে?"
ভোর খুশি হয়ে রুমাল দিয়ে হাত নাক মুছে ব্যাগে রেখে বলে,
-" দেখিয়েছে তো! আবার হয়! আব্বুকে গিয়ে বলব নাকটাই কেটে দিতে। না থাকবে নাক না থাকবে সর্দি।"
রোহান খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে সাথে ভোরও। আশেপাশের কয়েকজন তাদের দিকে তাকিয়ে আবার যার যার মতো কথা বলায় ব্যস্ত হয়! কেউ কেউ টিফিন বক্স বের করে পাস্তা, নুডুলস, ওটস ইত্যাদি খাচ্ছে তো কেউ চকলেট খাচ্ছে। অনেকে হাই ব্রেঞ্চের উপর বসে খেলছে। ভোর রোহানকে বলে,
-" তোর না বমি পাচ্ছে! ওই সিটে বসলি! এখন এখানে আসলি কেন?"
-" বাহ রে! তুই না আমার বন্ধু? তো আলাদা কেন বসবো? তাই এসেছি।"
ভোর হেসে ব্যাগ থেকে বড় দুই টা চকলেট বের করে একটা রোহানকে দেয়। রোহান নেয় না।
-" আম্মু বলেছে কারো কোনো জিনিস না খেতে!"
ভোর তার হাতে দিয়ে বলে,
-" সে তো আমার আব্বুও বলে।তুই দিলে আমি খাইনা? তাহলে? না নিলে তোর সাথে কথা বলবো না কিন্তু?"
রোহান ইতস্তত করে চকলেট ছিঁড়ে কামড় বসায়। ভোর হেসে নিজের চকলেটে কামড় দেয়! দুই বন্ধু হাসিমজায় মেতে ওঠে। বাচ্চাদের বন্ধুত্ব তো এমনই। এই মারামারি ঝগড়া তো, এই গলায় গলায় ভাব!
একটু পরেই পাতা ক্লাসে প্রবেশ করে। সবাই দাঁড়িয়ে সালাম জানায়। পাতা হেসে জবাব দেয় সালামের। সবাইকে জিজ্ঞেস করে,
-" হাউ আর ইউ স্টুডেন্টস?"
সব বাচ্চারা সমস্বরে বলে ওঠে,
-" উই আর ফাইন মিস। হাউ এবাউট ইউ?"
-" আলহামদুলিল্লাহ! আই এম ওলসো ফাইন। লেটস স্টার্ট আওয়ার ক্লাস স্টুডেন্টস!"
হেসে ক্লাস শুরু করে দিল পাতা। ভোর সিটে বসে মিসের কথা শুনছে মনোযোগ দিয়ে! ক্লাসের মাঝখানে রোহান মিসের অগোচরে ভোরকে ফিসফিস করে বলে,
-" মিস কে স্যরি বলবি না?"
ভোরও রোহানের মতো ফিসফিসিয়ে বলে,
-" কিভাবে বলব? মিস যদি আরো রেগে যায়?"
পাতার নজরে পড়ে ভোরের ফিসফিস করে কথা বলা। গম্ভীর মুখে ডেকে ওঠে,
-" ভোর সরকার স্ট্যাড আপ! হোয়ায় আর ইউ ডিসটার্বিং ইন দা ক্লাস?
ভোর জিভে কামড় বসায়! ইশ ধরা পড়ে গেল! সে দাঁড়িয়ে কাঁচুমাচু করে বলে,
-" স্যরি মিস!"
পাতা ভোরের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
-" ওকে। টেল মি দা রাইমস 'দা মুন' ?
ভোর জানে ছড়াটা। গত রাতেও পড়েছে বাবার কাছে। তাই হাসি মুখে বলতে নেয়,
-" দা মুন
আই সি দা মুন
মু সি ব্লেস..."
আর বলতে পারে না। তার মনে পড়ছে না। সব তালগোল পাকিয়ে গেছে। অসহায় চোখে পাতার দিকে চায়। পাতা বুকে হাত গুজে গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে।
-" নেক্সট?"
ভোর মিনমিনে গলায় বলে,
-" মনে পড়ছে না মিস!"
-" কেন? পারো না তুমি?"
-" পারি। তবে.."
-" পারো কিন্তু বলতে পারছো না! এটা কেমন কথা?"
ক্লাসের বাকি বাচ্চারা হেসে ওঠে। ভোর লজ্জা পায় বেশ! ছলছল চোখে মিসের দিকে চায়! পাতা সবাইকে চুপ করায়,
-" সাইলেন্টস! রোহান? দাঁড়াও, তুমি বলো তো?"
রোহান দাঁড়িয়ে সুন্দর ভাবে আবৃত্তি করে,
-" দা মুন
আই সি দা মুন
এন্ড দা মুন সিই'স মি
গড ব্লেস দা মুন
এন্ড গড ব্লেস মি ।
ভোর মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে শুনে। পাতা রোহানকে বসিয়ে ভোরকে বলে,
-" বাকি ক্লাস দাঁড়িয়ে থাকবে!"
ভোরের নাকের পাটা ফুলে ওঠে। পুরো ক্লাস মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।
••••••••••••
স্কুল ছুটি হলে ভোর ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে আসে। রোহান তার সাথেই। তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে। মন খারাপ না করতে বলছে। ভোর কিছু বলছে না চুপচাপ হাঁটতে থাকে। টিচার্স রুমের পাশ দিয়ে তারা দুজন যেতে নিলে পাতার মুখোমুখি হয়। অন্যসময় হলে ভোর সালাম দিয়ে কত কথা বলতো মিসকে! কিন্তু এখন ভোর পাতার দিকে তাকায় না! মাথা নিচু করে সাইট কেটে চলে যায়! রোহান সালাম দেয় পাতাকে। পাতা উত্তর নিয়ে ভোরের দিকে চায়! মুখটা মলিন। ক্লাসে যে কোনো স্টুডেন্ট ডিস্টার্ব করলে পাতা দাড় করিয়ে রাখে। ক্লাসে ডিস্টার্বনেস তার পছন্দ নয়। তাই ভোরকেও দাড় করিয়ে ছিল। বাচ্চাটা তার থেকে মুখ ফুলিয়ে নিয়েছে। যেন পাতা তার টিচার নয় বন্ধু! পাতা হেসে ডাক দেয় ভোরকে।
-" ভোর? শুনে যাও তো! এই অরুণাভ ভোর সরকার? এদিকে এসো?"
ভোর একবার ঘার ফিরে তাকিয়ে হাঁটা দিল। রোহান তার পিছু পিছু। আভারি এসে ভোরের কাঁধ থেকে ব্যাগ নিয়ে তাকে কোলে তুলে রোহানের থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। পাতা সেদিকে তাকিয়ে থাকে। ইশ বাচ্চাটা অনেক কষ্ট পেয়েছে বোধহয়! কাল এলে অনেক আদর করে দেবে!
ঝিরঝির বৃষ্টি পড়ছে! গ্রীষ্মের খরতাপে অতিষ্ট জনজীবন বোধকরি একটু স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ল! ধুলা ধোয়া হীন পরিবেশ। বৃষ্টির পানিতে ধুলা ধোয়ার ছিটে ফোঁটা নেই। পানিতে ভিজিয়ে দিচ্ছে রাস্ত ঘাট দোকানপাট বাড়ি গাড়ি সব! কেউ কেউ ছাতা মাথায় হাঁটছে তো কেউ মাথায় পলি গুজে বাসে চড়ছে। বেশিরভাগ লোক দোকান পাঠ বা স্টপেজে দাঁড়িয়ে আছে বৃষ্টির কবল থেকে বাঁচতে। ফুটপাতের বাচ্চাদের ওসবে ধ্যান নেই! তারা তো রাস্তার পাশে বৃষ্টি বিলাসে ব্যস্ত! মনের আনন্দে লাফিয়ে লাফিয়ে নাচছে। ভাঙ্গা রাস্তায় জমে থাকা পানিতে লাফ দিয়ে হেসে কুটিকুটি। ভোর তাদের দিকে তাকিয়ে আছে গাড়ির গ্লাসে মাথা ঠেকিয়ে। একধ্যানে পলকহীন চোখে তাকিয়ে থাকা যাকে বলে। তবে অধরকোনে মিষ্টি হাসির ফুলঝুড়ি টা নেই। শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে। হঠাৎ করে একটা মহিলা এসে ফুটপাতের বৃষ্টি বিলাসরত বাচ্চাদের বকছে বৃষ্টিতে ভেজার জন্য। হাতে তার কাপড়ের ঝুলন্ত টুপলি। ওতে কি আছে? মহিলাটি একটা ছোট বাচ্চার পিঠে এক ঘা লাগিয়ে দিল। বাচ্চাটা কাদলো না বরং হেসে পুনরায় লাফাতে শুরু করে। মহিলাটি বিরক্ত হয়ে তাকে কোলে নিয়ে চলে যায় আর বাকি বাচ্চাদেরও শাসিয়ে যায়। ভোর ভাবতে থাকে মহিলাটি কে? ওই বাচ্চার মা?
আভারি ভোরের পাশে বসে। ভোর আজ চুপচাপ কিছু বলছে না। বাচ্চাটাল মন খারাপ! কিন্তু কেন? জিজ্ঞেস করলে কিছুই বলছে না। তাই আভারি আর কিছু বলে না। শুধু আড়চোখে নজর রাখছে। জানালায় মাথা ঠেকিয়ে আছে! হঠাৎ ব্রেক কষলে যদি ব্যাথা পায় তাই সে ডাকে ভোরকে। ভোর সারা দেয় না। আভারি কাঁধ ঘুরিয়ে এদিকে আনতেই ভোর ঢুলু ঢুলু চোখে চায়!
-" ঘুম পাচ্ছে?"
ভোর উপর নিচ মাথা রেখে আভারির কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে। আভারি খানিক হেসে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। অল্প সময় পরেই তারা বাড়ি পৌঁছে যায়। আভারি ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ভোরকে কোলে করে বাড়িতে ঢোকার সাথে সাথে আসমা দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে উদ্বিগ্ন ভরা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,
-" আভারি কি হয়েছে ভোরের? ভোর?"
আভারি তাকে আস্বস্ত করে বলে,
-" কিছু হয় নাই ম্যাডাম! ঘুমাই পড়ছে!"
আসমা বেগম কিছুটা শান্ত হয়ে বলে,
-" ভয়ই পেয়ে গেছিলাম! দাও আমার কোলে দাও! শুইয়ে দিই। ঘুমিয়ে নিক!"
আভারি বিনা বাক্যব্যয়ে দিয়ে দেয়। আসমা বেগম তাকে কোলে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে অরুণের রুমের দিকে যায়। আভারি নিজের ঘরে যায়। মিনুকে শুয়ে থাকতে দেখা কপালে হাত রেখে চিন্তিত স্বরে বলে,
-" কি হইছে? শুইয়ে আছো যে? জ্বর তো নাই তাইলে?"
মিনু আভারির দিকে তাকিয়ে বলে,
-"ওই একটু মাথার বিষ! ভোর আব্বা আইছে?"
-" হুম। ঘুমাইয়ে পড়ছে গাড়িতেই। মন খারাপ কেনো জানি! কিছু কইতেছেও না!দাড়াও স্যার রে ফোন করে জানাই।"
বলেই আভারি ফোন লাগালো অরুণকে। অরুণ কেটে দিল। একটু পরেই ব্যাক করে আভারি ফোন রিসিভ করতেই অরুণ বলে,
-" হ্যা আভারি ভাই বলো? তোমরা পৌঁছে গেছ বাড়িতে? ভোর কি করছে? বৃষ্টি হচ্ছে হালকা হালকা , ভেজে নি তো ?"
আভারি হাসে অরুণ সরকারের উদ্বিগ্নতা ভরা প্রশ্নের বানে। ছেলে যে তার প্রাণ ভোমড়া!
-" আমরা পৌঁছে গেছি স্যার। ভোর বাবা ঘুমিয়ে পড়েছে গাড়িতেই। আর বৃষ্টিতে ভিজে নি! না আবদার করেছে ভেজার!"
-" ভালো হয়েছে। এমনিতেই বারোমাস ঠান্ডা লেগেই থাকে। তবে আবদার করে নি শুনে অবাক হলাম!"
-" স্যার ভোর বাবার মনটা খারাপ! স্কুল ছুটির পর থেকেই গোমড়া মুখে! চুপচাপ ছিল! কারো সাথে মারামারি বা ঝগড়া কিছুই হয়নি। জিজ্ঞেস করলেও বলে নি!"
অরুণের কপালে ভাঁজ পড়ে। সর্বদা হাসিখুশি ছেলেটার আবার কি হলো? মিস পাতাবাহারের ব্যাপার টা নিয়ে কি মন খারাপ?
-" আচ্ছা আমি আসলে শুনব। ভোর উঠলে কিছু খাইয়ে দিও। আর ওর এক্সাম আছে শনিবার থেকে টিচার আসলে তাকে জানিও। রাখছি। ছেলেটার খেয়াল রেখ।''
বলেই কল কাট করে।
•••••••••••••
দুপুরে টানা বর্ষণে পরিবেশ শীতল। বর্ষনের পরপর সূরা উকি দিলে পরিবেশটা এক অনন্য অসাধারণ সৌন্দর্যে পরিণত হয়। বৃষ্টির পানিতে ভিজে থাকা ঘাস, গাছ গাছালির লতা পাতার উপর পড়ে থাকা বৃষ্টির ফোঁটার পরে সূর্যের আলো পড়লে ঝিলিক দিয়ে ওঠে।
হালকা মৃদুময় ঠান্ডায় বৃষ্টির উষ্ণতা বেশ উপভোগ্য! আর ভারি বর্ষণের পর মুক্ত আকাশে অল্প মেঘের ঘনঘটা আর সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি ছড়িয়ে এক অপরূপ সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম!
আসমা বেগম ও আরিয়ান ড্রয়িং রুমে বসে আলোচনায় ব্যস্ত সাথে রুবি, আদুরি। তাদের আলোচনায় বিষয়বস্তু অরুণের বিয়ে। তারা একটা ঘটক ঠিক করেছে। সেই ঘটক কিছু মেয়ের ছবি পাঠিয়েছে। মেয়েগুলো বেশ সুন্দর। কেউ ডিভোর্সি! কারো স্বামী মারা গেছে! আবার অবিবাহিতও আছে কয়েকজন। আসমা বেগম একজন ভালো ডিভোর্সি মেয়ে খুঁজছেন। তার ধারনা অবিবাহিত মেয়েরা অরুণের টাকার জন্য বিয়ে করলেও ভোরকে নিশ্চয়ই মেনে নেবে না! আর তাছাড়াও কোনো অবিবাহিত মেয়েই সাঁইত্রিশ বছর বয়সী এক বাচ্চার বাপকে ভালোবেসে বাচ্চাসহ মেনে বিয়ে করবে এটা নাইন্টি নাইন পয়েন্ট নাইন পার্সেন্ট মিথ্যে। রুবি শাশুড়ির পক্ষে কথা বলছে। আরিয়ান আদুরি একটু গাইমুসি করছে! দেখতে মাশাআল্লাহ ভাই তার! বিয়ে করবো বললে এখনো কত অবিবাহিত মেয়েরা হুমরি খেয়ে পড়বে। সাঁইত্রিশ বয়স হলে মোটেও বুড়িয়ে যায় নি। এখনো তাগড়া যুবক যেন ! তবে হ্যা চুল পেকেছে বেশ কয়েকগাছি।চাপ দাঁড়িতেও সেম অবস্থা। দেখতে সাতাশ আটাশ না লাগলেও বুড়ো বলা যাবে না। মাশাআল্লাহ সুদর্শন সুপুরুষ চেহারা তার!
-" দেখ আরিয়ান মেয়ে অবিবাহিত, ডিভোর্সি বা বিধবা সেটা বিষয় না। আসল কথা হলো ভোর! যে ভোরকে মায়ের মতো ভালোবাসা দিতে পারবে আগলে রাখতে পারবে নিজের সন্তান সন্ততি আসলেও দূরে ঠেলবে না !ভালোবাসা ফুরোবে না! সেরকম একজনকে দরকার আমাদের! তাই সব কিছু দেখে শুনে ভেবেচিন্তে খোঁজ খবর নিয়ে তবেই এগোতে হবে!! তাড়াহুড়ো করার কোনো প্রয়োজন নেই।"
রুবির কথায় আরিয়ান আদুরি সায় জানালো। আদুরি বলে,
-" ঠিক বলেছ ছোট ভাবি! তবে ভোরের সাথে ভাইকেও যেন একটু যত্নে আগলে নেয়! সেরকম!"
আসমা বেগম কিছু বলে না। চুপচাপ তাদের মতামত শুনতে থাকে । তার চোখে মুখে অনুতাপের ছাপ স্পষ্ট!
তাদের আলোচনার মাঝেই এক বাইশ তেইশ বছরের মেয়ে আসে তাদের সালাম দিয়ে বলে,
-" ভালো আছেন সবাই? ভোর কোথায়?"
আসমা বেগম খানিক হেসে বলল,
-' ভালো আছি আমরা। তুমি কেমন আছো টুম্পা? তোমার ছাত্র তো স্কুল থেকে এসেই ঘুমিয়ে পড়েছে। এখনো ওঠে নি। মিনু? এই মিনু?''
মিনুকে ডাকতে থাকে। মিনু না এসে আভারি এসে উপস্থিত হয় সেখানে।
-" মিনুর মাথাটা ধরেছে! আমায় বলেন ম্যাডাম?"
আসমা বেগম বলল,
-" ভোরকে তুলে দাও ওর টিচার এসেছে! ছেলেটা এখনো খায়নি। আর টুম্পা তুমিও যাও। বসো গিয়ে।"
আভারি সায় জানিয়ে চলে গেল উপরে।তার পিছু পিছু টুম্পা! তারা রুমে গিয়ে দেখে ঢোর শুয়ে আছে হাত পা ছড়িয়ে। পড়নে স্কুল ড্রেস। টাই ,আইডি কার্ড ড্রেসিং টেবিলের উপর। শু জোরা নিচে পড়ে আছে। মুজো এখনো পায়েই। আভারি গিয়ে ডাকে তাকে। ভোর গড়াগড়ি খেয়ে বিড়বিড় করে আবার শুয়ে পড়ে। টুম্পা হেসে এগিয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে ডাকতে থাকে। ভোর খানিকটা বিরক্ত হয়ে চোখ খুলে। সামনে মিস টুম্পাকে দেখে ভ্রূযুগল কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,
-" মিস আপনি এতো ভোরে কেন এসেছেন? আমি এখন পড়বো না। বিকেলে পড়বো। এখন ঘুমাবো! আব্বু?"
বলেই বিছানা হাতরে বাবাকে খুঁজতে থাকে। না পেয়ে ঝট করে উঠে বসে আব্বু বলে। আভারি এসে কোলে তুলে নেয়। রুম্পা মুচকি হেসে বলে,
-" ভোর? এখন সকাল নয় বিকেল। ঠিক সময়েই এসেছি আমি। তুমি তো স্কুল থেকে ফিরে ড্রেস চেঞ্জ না করেই ঘুমিয়ে পড়েছো! এতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলে ভাবা যায়! যাও ফ্রেশ হয়ে এসো আমি স্টাডি রুমে বসছি। তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে!"
ভোরের ঘুম ছুটে গেছে ততক্ষনে। সারপ্রাইজের কথা শুনে চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়। আভারির কোল থেকে নেমে রুম্পার কাছে গিয়ে মিষ্টি হেসে বলে,
-" কি সারপ্রাইজ মিস? এখনি দিন!"
টুম্পা হেসে তার গালে চুমু দিয়ে বলল,
-" আগে ফ্রেশ হয় আসো। তারপর বুঝলে ?"
ভোর মাথা নেড়ে বড় আলমারি খুলে ভিতর থেকে টি শার্ট ও হাফ প্যান্ট নিয়ে দৌড় লাগায় ওয়াশ রুমে। সারপ্রাইজ পেতে যে ভোরের খুবই ভালো লাগে। আভারি বেরিয়ে যায়। ছেলেটা সেই সকালে খেয়েছে তারপর থেকেই না খাওয়া। কিছু খাবার আনা যাক।
ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে ভোর কোনো মতে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে স্টাডি রুমে যায়। তাদের ঘরের সাথেই লাগোয়া রুম। সেই রুমকে ছোট খাট লাইব্রেরী বলা যায়। রুমের দেয়াল ও তাক জুড়ে বিভিন্ন ধরনের বই। উপন্যাস, কাব্যগ্রন্থ, ছোটগল্প, পাঠ্যবই, একাডেমিক বই সমূহ, গবেষণা মুলক, সনেট ,নবেল ইত্যাদি ইত্যাদি। রুমে একটা চেয়ার টেবিল সহ ছোট্ট খাটে বিছানা পাতা আছে আর বই ছাড়াও ভোরের খেলনায় ভর্তি রুম। ভোর রুমে ঢুকে তড়িঘড়ি মিসকে সালাম দিয়ে ব্যাগ টেবিলে রেখে চেয়ারে বসে বলে,
-" আমার সারপ্রাইজ?"
টুম্পা হাসে ছেলেটা এতো আদুরে না? মনে হয় টুপ করে খেয়ে নিতে পুরাই রসগোল্লা! আর ছেলের বাবা তো মাশাআল্লাহ চমচম! সে প্রথম দেখায়ই তার এটিটিউড পারসোনালিটি আর মার্জিত স্টাইল দেখে বিরাট ক্রাশ খেয়েছে। যদিও সে জানে তার ক্রাশ খাওয়া পুরাই লস প্রজেক্ট! তবুও!!
ভোর মিসকে চুপ থাকতে দেখে তার হাত ঝাঁকিয়ে ডাকে, টুম্পার স্বয়ংবিত ফেরে। ভোরের গাল টিপে কাঁধের ব্যাগ থেকে একটা বাটি বের করে ঢাকনা খুলে। ভোরের দিকে বাড়িয়ে বলে,
-" তোমার জন্য আলুর পরোটা! তুমি খেতে চেয়েছিলে না? আমি বানিয়েছি স্পেশালি তোমার জন্য! নাও?"
ভোর বাটি হাতে নিয়ে নাক কাছে নিয়ে শ্বাস নেয়! আহ! সেই ঘ্রাণ বেরিয়েছে। তার ক্ষিধে যেন তরতর করে বৃদ্ধি পায়। মিসকে কোনো মতে ধন্যবাদ জানিয়ে অল্প ছিড়ে নিয়ে গপাগপ মুখে পুরে নেয়। মুখে নিয়ে অনেক মজা পায়! আলুর পরোটা পিস পিস করে কেটে রাখা হয়েছে বাটিতে। পাশে গরুর কলিজা ভুনা। ভোর অনভিজ্ঞ হাতে পরোটা দিয়ে সেটা গপাগপ মুখে নেয় পুনরায়। মুখে গালে লেগে একাকার। তবে সেটা ভাবার সময় নেই যে! অনেক ক্ষিধে পেয়েছে তার। টুম্পা হেসে টেবিলের পাশে টিস্যু বক্স থেকে টিস্যু তুলে নিয়ে ভোরের মুখ মুছে দেয়।ভোর মিষ্টি হেসে ছোট হাতে পরোটা মিসের মুখেও দেয়। টুম্পা বিনাবাক্য ব্যয়ে মুখে নেয়। ভোর হাসে । তার মন খারাবি দূর হয়ে গেছে খানিকটা যত্ন ও ভালোবাসার ছোঁয়ায়।
-" স্কুল থেকে এসে ড্রেস খুলে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে দেয়ে ঘুমোতে যাবে। তার আগে না। বুঝলে?"
ভোর মাথা নাড়ে। মুখে পরোটা আছে বলে কথা বলতে পারছে না। এরই মধ্যে আভারি আসে ট্রে তে নুডুলস নিয়ে। দুই বাটি সাথে দুটো পানির গ্লাস। ভোরের টিচার ও ভোরের জন্য। ভোর তাকে দেখে বলে,
-" মিস কে দাও! আমি সারপ্রাইজ খাচ্ছি! আলুর পরোটা! অনেক টেষ্টি ! মিনু খালাকে বলব বানিয়ে দিতে! তবে তুমি কিন্তু বাবাকে বলবে না পরোটা খাওয়ার কথা? বললে তোমার সাথে আড়ি!"
আভারি চোখ পাকায় খানিকটা! মিসের সামনেই বলছে !!
টুম্পা চোখ ছোট ছোট করে বলে,
-" আমার আনা খাবার খেলে তোমার আব্বু বকবে? আর আপনি বলে দেন সব স্যারকে?"
আভারি হেহে করে হেসে বলে,
-" ছোট বাচ্চা কি থেকে কি বলে!! কিছু মনে করবেন না! আর ভোর বাবার পরীক্ষা শনিবার থাইকে! এই শনিবারেই। আমি গেলাম।এই নুডুলস দুইজনে শেষ করেন!"
বলে চলে যায়। টুম্পা গাল ফুলিয়ে বলে,
-" আমি কিছু দিলে তোমার বাবা বকে?"
ভোরও বুঝতে পারে ভুল জায়গায় ভুল কথা বলে ফেলেছে। সে মিষ্টি হেসে বলে,
-" না না মিস! কিছু বলে না। তখন মজা করে বলেছি।"
.
.
.
চলবে.........................................................................