আরোরা - পর্ব ০৩ - সিজন ২ - তাসমিয়া তাসনিন প্রিয়া - ধারাবাহিক গল্প


#আরোরা (সিজন ২)
#পর্ব_৩
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া



মিনিট পাঁচেক পরে এডওয়ার্ড আরোরাকে ছেড়ে দেয়। ঠোঁট কেটে গেছে মেয়েটার। এডওয়ার্ড জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছে। নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে কামনার অনলে জ্বলছে এখন। 
" তুমি এভাবে জোর করতে পারো না আমাকে এডওয়ার্ড। "
রাগান্বিত হয়ে বললো আরোরা। এডওয়ার্ডের মস্তিষ্কও বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। নিজেকে শত চেষ্টা করেও যেনো শান্ত করতে পারছে না। 
" তুমি আমার বিবাহিতা স্ত্রী। আমি তোমাকে জোর করিনি। জোর করলে তো তুমি নিজেকে সরিয়ে নিতে। কই প্রথম এক মিনিট পরে তো আর নড়লে না? "
এডওয়ার্ডের কড়া প্রশ্নের উত্তরে কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না আরোরা। সত্যি বলতে প্রথম নিজেকে ছাড়াতে চাইলেও প্রিয় পুরুষের স্পর্শে স্বায় না দিয়ে পারেনি সে। এডওয়ার্ড ফের এগিয়ে গেলো আরোরার দিকে। 
" আজ একটা শিক্ষা দরকার তোমার। আমাকে ক্ষেপিয়ে নিজেকে আঘাত করানোর জন্য আমার প্রিয় জিনিস যাতে আর নষ্ট না করো সেজন্য। "
আরোরা চমকাল এডওয়ার্ডের এমন রাগান্বিত অবতার দেখে। আরোরাকে পাশ কাটিয়ে গিয়ে দরজা আঁটকে দিলো সে। মেয়েটি তার স্বামীর হালচাল বুঝতে চেষ্টা করছে খুব করে। 
" এডওয়ার্ড তুমি কী করতে চাচ্ছো?"
" সেটাই করছি যা এখন আমার ইচ্ছে করছে। "
" এডওয়ার্ড..... ছাড়ো আমাকে। "
" শক্তিশালী তো তুমি! ছাড়াও নিজেকে আমার থেকে। "
এডওয়ার্ড কথা বলতে বলতেই আরোরাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে আলতো করে কামড় বসিয়ে দিলো। আরোরা চেষ্টা করছে নিজেকে মুক্ত করার। এডওয়ার্ড সময় না নিয়ে দ্রুতবেগে কাঁধ পর্যন্ত নামিয়ে ফেললো আরোরার গাউন। এই মানুষটার এমন ভয়ংকর রূপ আগে দেখেনি আরোরা। 
" এডওয়ার্ড!"
" বলো শুনছি। "
আরোরার কোনো বাঁধাই আজ যেনো এডওয়ার্ড শুনবে না। দীর্ঘ সময়ের সুপ্ত অনুভূতি আজ যেনো প্রকাশিত হতে চাইছে। আরোরার দু'হাত পেছনে শক্ত করে চেপে ধরে ঘাড় নিচু করে পিঠ পর্যন্ত ঠোঁট ছুঁইয়ে যাচ্ছে এডওয়ার্ড। আরোরা চাইলেও এডওয়ার্ডের জংলীপনায় স্বায় না দিয়ে পারলোনা শেষমেশ। সমস্ত শত্রুতার সম্পর্ক ভুলে ভালোবাসার মধ্যে ডুবতে লাগলো দু'জন। বন্ধ ঘরে এলোমেলো হয়ে গেলো দু'টি মানব-মানবী। 

" আলেক্সা তুমি কেনো প্রজাদের ভুলভাল বুঝিয়ে রাজ্য বিরোধিতা করাতে চাচ্ছ?"
মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সেলিন ও আলেক্সা। সেলিনের প্রশ্নের উত্তর দিতে খুব একটা ইচ্ছুক না আলেক্সা। কিন্তু বারবার পথ আঁটকে একই প্রশ্ন করায় বাধ্য হয়ে মুখ খুললো সে। 
" তোমার সেসব দিয়ে কী দরকার সেলিন? "
" কারণ এ রাজ্য আমাদের সকলের। তুমি কেনো রাজ্যের শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট করতে চাও?"
" তোমার? ছিলে তো মানুষের বাচ্চা! বলতে গেলে কয়েকদিন হলো এসেছ এখানে, তাতেই এতো দরদ?"
আলেক্সা বিদ্রুপের হাসি হেসে বললো। সেলিন তাতে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না অবশ্য। 
" আলেক্সা তোমার যে মতিভ্রম হয়েছে সেটুকু আমি ভালো করেই বুঝতে পারছি। তাই তোমার সাথে আর কথা বাড়াতে চাচ্ছি না।"
সেলিন এক মুহুর্ত কালবিলম্ব না করে নিজের গন্তব্যে এগোলো। তাতে অবশ্য আলেক্সা ক্ষেপে গেলো কিছুটা। এভাবে কথা বলে চলে যাওয়ায় কিছুটা অপমানিত বোধ করেছে। তবে কার ইন্ধনে আলেক্সার এই দুঃসাহস তা ভেবে ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে উঠেছে আলেক্সার। 

চারদিকে তুষারপাত হচ্ছে। হলিথানে রোদের দেখা মেলেনি বহুদিন। অনেক লোকজন ঠান্ডায় অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এনাকে দেখতে আজকেও এসেছিল আরোরা। বোনকে তো খুব ভালোবাসে মেয়েটা। কিন্তু পথিমধ্যে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন লোকের সাথে দেখা হয় ওর। লোকটা অদ্ভুতভাবে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে আরোরার দিকে। তারপর বলে, সঞ্জীবনী পাওয়ার সময় হয়ে এসেছে। আগামী পূর্ণিমায় সেই অমৃত শক্তির প্রকাশ ঘটবে পাতালে। আর তখনই আরোরাকে সেই সঞ্জীবনী নিয়ে আসতে হবে এবং পান করতে হবে। ভুলক্রমে যদি ভুল লোক পান করে ফেলে ওই অমৃত তাহলে ঘটবে বিনাশ! সেটা ভ্যাম্পায়ার ও উলফ দুই জাতিরই। নিজের কক্ষে শুয়ে এসবই ভাবছে আরোরা। হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজে নড়েচড়ে উঠলো সে। 
" রাণী মা আসবো?"
সাঁচিকে দেখে মুচকি হাসলো আরোরা। শোয়া থেকে উঠে বসলো। 
" এসো সাঁচি। তুমি আবার কবে থেকে আমাকে রাণী মা বলে ডাকতে শুরু করলে বলো তো? ম্যাকও তো নাম ধরে ডাকে!"
সাঁচি হেসে কক্ষে প্রবেশ করে। লন্ঠনের আলোতে অপরূপ সুন্দরী লাগছে ওকে। এমনিতেও মানুষ থাকতে যতটা না সুন্দর ছিলো ভ্যাম্পায়ার হয়ে যাওয়ার পর দ্বিগুণ সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে। 
" তা ঠিক আছে। কিন্তু মাঝে মধ্যে একটু ডাকতে হয় তো।"
" মোটেও হয় না। বসো।"
সাঁচি আরোরার পাশে বিছানায় বসে। 
" আচ্ছা আরোরা কতদিন তো হলো বলো, এডওয়ার্ড ভাই তো কখনো তোমাকে আঘাত করবে না। তাহলে কীভাবে তোমার প্রতিশোধ পূর্ণ হবে বলো?"
সাঁচির প্রশ্নে চুপ করে রইলো আরোরা। সত্যি বলতে আজকাল এসব ভাবতে চায় না ও। এডওয়ার্ড তো নির্দোষ! সে তো কিছু করেনি। আর না তো করেছে ওর বাবা-মা। ওর পূর্বপুরুষরা অন্যায় করেছিল এবং তারা পৃথিবীতে নেই এখন। তাহলে কার উপর প্রতিশোধ নিবে? এডওয়ার্ডের কাছাকাছি থাকতে থাকতে ওর প্রতি বেশ দূর্বল হয়ে গেছে আরোরা। বিশেষ করে সেদিন ঘনিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে সবকিছু আরো বদলে গেছে। এডওয়ার্ডকে কোনোভাবে রাগানোর চেষ্টা আর করেনি। কারণ আরোরা বুঝে গেছে এডওয়ার্ড কোনো কিছুর বিনিময়ে ওর সাথে শত্রুতা করতে আসবে না। বরং অন্যভাবে শাস্তি দিবে। যেমন এখনো ঠোঁটে কাটা দাগ রয়ে গেছে, পিঠেও কামড়ের দাগগুলো স্পষ্ট! 
" কী হলো?"
আরোরার নীরবতায় ফের শুধালো সাঁচি। নড়েচড়ে উঠলো সে। 
" আমি এর উত্তর এখুনি দিতে পারবোনা তোমাকে। আচ্ছা জানো আজকে একটা ঘটনা ঘটেছে। "
" কী?"
" একজন মানসিক ভারসাম্যহীন লোকের সাথে দেখা হয়েছিল। উনি কীসব অমৃত শক্তির উৎস সঞ্জীবনীর কথা বললেন। "
" সেসব আবার কী?"
" সেটা তো আমিও জানি না সাঁচি। তবে হ্যাঁ সঞ্জীবনী হলো এমন এক তরল যা পান করলে অমরত্ব লাভ করা যায়। "
" তুমি একবার এডওয়ার্ড ভাইকে জিজ্ঞেস করে দেখো।"
" দেখি। "
" আচ্ছা। আমি আসছি এখন। পরে আসবো।"
" ঠিক আছে সাঁচি। আবার এসো। কথা বললে ভালোই লাগে। "
" অবশ্যই আরোরা।"
সাঁচি হাসিমুখে বিদায় জানিয়ে কক্ষ ত্যাগ করলো। আরোরা এখনও সেই লোকটার বলা কথাগুলোই ভেবে যাচ্ছে। কেনো জানি মনে হচ্ছে ওগুলো নিছক পাগলের প্রলাপ ছিলো না। অন্য কিছু ছিলো। খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু। রাত পেরোলে সকালে উলফ প্রাসাদে যাবে বলে ঠিক করে আরোরা। পূর্ণিমার বাকি মাত্র তিন দিন। এরমধ্যে জানতে হবে এই সঞ্জীবনীর রহস্য কী আসলেই আছে? না-কি সবকিছু অহেতুক কথা! 

ঘরে ঢুকতেই সাঁচিকে হেঁচকা টানে বিছানায় শুইয়ে দিলো ম্যাক। বেচারি আচমকা এসব হওয়ায় চমকে গেছে। 
" কী করলে এটা? "
ম্যাকের চোখেমুখে দুষ্ট হাসির ঝিলিক। এগিয়ে গেলো সাঁচির দিকে। পাশাপাশি শুয়ে বললো,
" কতকাল ধরে অপেক্ষা করছি জানো?
" কতকাল? কতক্ষণ বলো। মাত্র কিছুক্ষণ হলো চোখের আড়ালে ছিলাম আমি আর তুমি বলছ কতকাল? "
ম্যাক সাঁচির বুকে মাথা রেখে উদরে হাত রেখে বললো,
" তুমি বুঝবে না এসব। আমার মতো করে যেদিন আমাকে ভালোবাসতে পারবে ঠিক সেদিন বুঝবে। ভালোবাসার মানুষকে এক মুহুর্ত চোখের আড়াল করা মানে কয়েক কোটি বছর না দেখার সমান।"
সাঁচি ঠোঁট টিপে হাসছে ম্যাকের রোমান্টিক কথাবার্তায়। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো সাঁচি, 
" তাই বুঝি? "
" হ্যাঁ একদম তাই। "
ম্যাক সাঁচির থুতনিতে চুম্বন এঁকে দিয়ে আবারো বুকে মাথা রেখে শুয়ে বললো,
" সাঁচি তুমি কি আমার সাথে খুশি?"
" হঠাৎ এই প্রশ্ন? "
" মনে হলো। তুমি তো আলাদা একটা জীবনে ছিলে। আমি তো জোর করেই তোমার কাছাকাছি যেতাম তখন।"
" হ্যাঁ তাতে কী? তখন তো সবকিছু আলাদা ছিলো। আমি তো তোমাকে ভালোবেসেই তোমার সাথে আছি এখন। তোমাকে ছাড়া এখন আমি অস্তিত্বহীন।"
স্ত্রী'র কথাগুলো মনপুত হলো ম্যাকের। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বুকের মাঝখানে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো সে। সাঁচি কেঁপে উঠল একটু। 
" এইতো আমার লক্ষ্মী বউ!"
" হু। আচ্ছা শোনো।"
" বলো।"
" ভাবছি একবার মায়ের কাছে যাবো।"
" হ্যাঁ অবশ্যই। কখন যাবে বলো?"
" কাল সন্ধ্যায়? "
" ঠিক আছে। "



চলবে...........................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন