আরোরা - পর্ব ১৮ - তাসমিয়া তাসনিন প্রিয়া - ধারাবাহিক গল্প


#আরোরা (ফ্যান্টাসি, রোমান্টিক)
#পর্ব_১৮
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া



ম্যাক তার বিশাল ডানা ঝাপটে জানালা থেকে লাফ দিয়ে উড়তে লাগলো। চোখ বন্ধ করে আছে সাঁচি। খানিকক্ষণ সময় পর চোখে মেলে তাকিয়ে আশেপাশে নজর বুলিয়ে নিলো সাঁচি। 
" ওটা কথার কথা বলেছি। এখন চারপাশে দেখো তো। "
" দেখছি তো! নেহাৎ আপনার সাথে প্রেম-ভালোবাসা হলো, নইলে এরকম আকাশে উড়ে বেরানোর স্বপ্ন স্বপ্নই থেকো যেতো।"
" তাহলে আকাশে উড়ে বেরানোর স্বপ্ন ছিলো তোমার? "
ম্যাকের ঠোঁটের কোণে দুষ্ট হাসির রেখা দেখে সাঁচি আরো শক্ত করে আঁকড়ে ধরলো।
" হ্যাঁ। "
" আর কী কী স্বপ্ন আছে? "
ম্যাক কণ্ঠ খাদে নামিয়ে বললো। সাঁচির ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে অমৃত পানের ন্যায় বিভোর হয়ে রইলো কিছুক্ষণ। সাঁচি ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলছে। ম্যাক মুচকি মুচকি হাসছে। 
" এসব কেউ করে আকাশে বসেও? যদি পড়ে যাই তাহলে জীবনে আর কোনো স্বপ্ন অবশিষ্ট থাকবে না।"
" আমি থাকতে তুমি পড়বা? "
" যদি পড়ে যাই?"
" পড়ে গেলে আমি আরেকটা মেয়ে জুটিয়ে নিবো ঠিক, তোমার মতো।"
সাঁচি চোখমুখ কুঁচকে ফেললো ম্যাকের কথায়। আচমকা ম্যাকের বুকে আলতো করে কামড় বসিয়ে দিলো। ছেলেটা তো ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেছে ওর এমন কাণ্ডে। 
" আমি মরলেও আপনার পিছু ছাড়বো না। পেত্নী হয়ে আপনার ঘাড়ে চেপে থাকবো হুহ্। "
" তা বুঝলাম কিন্তু কামড়টা দিলে কি ভালোবেসে না-কি রেগেমেগে?"
সাঁচি অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বললো, " যা মনে করেন।"
" মনে তো হচ্ছে বেশি বেশি অন্য মেয়েদের কথা বলতে হবে। তবেই তোমার থেকে এমন কামড় পাওয়া যাবে। কী বলো?"
ম্যাকের ইশারায় লজ্জা পেলো সাঁচি। বেচারি মুখে কিছু না বলে প্রিয়তমর বুকে মাথা ঠেকিয়ে দিলো। 

সমস্ত রাজ্যবাসী আজ ওয়ারউলফ প্রাসাদে উপস্থিত হয়েছে। সকল নেকড়েরা তাদের নতুন রাণীকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করে নিয়েছে। আরোরাও প্রজাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছে শীঘ্রই ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে আক্রমণ করবে তারা। কিন্তু নেকড়েদের নিয়ম হচ্ছে ভ্যাম্পায়ার কিং নিজে যতক্ষণ তাদের কাউকে আঘাত না করবে ততক্ষণ তারাও ভ্যাম্পায়ারদের কোনো আঘাত করতে পারবেনা। কয়েকশো বছর আগে পিশাচরা নেকড়েদের যেভাবে ষড়যন্ত্র করে মেরেছিল সেসব ছিলো ছলচাতুরী। নেকড়ে রাণী সেই ছল করতে পারবেনা। কারণ এটা নিয়মবহির্ভূত। তবে আরোরা নিশ্চিত ভ্যাম্পায়ার কিং তাকে দেখলে অবশ্যই আক্রমণ করবে। আর তখুনি আরোরা তার প্রতিশোধ নিবে। আরোরার এসব কথা শুনে আলেক্সা খুব একটা খুশি হয়নি। রাজসভায় উপস্থিত আছে সবাই। আরোরাকে উদ্দেশ্য করে আলেক্সা বলে,
" কিন্তু কুইন ভ্যাম্পায়ার কিং যদি আক্রমণ না করে তবে? "
" না করলেও সমস্যা নেই। কিং আঘাত করা না পর্যন্ত আমি কেবল উনাকে হত্যা করতে পারবোনা। কিন্তু বাকিদের ঠিক মারতে পারবো। "
" মহারাণী আমার আপনার শক্তি ও বুদ্ধির উপর যথেষ্ট ভরসা রয়েছে। আপনি এগিয়ে যান।"
নিকের কথায় মুচকি হাসলো আরোরা। আলেক্সাও চুপ করে গেছে। প্রায় দু'দিন হলো বোনের সাথে দেখা হয়নি ভেবেই আরোরা অস্থির হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া এডওয়ার্ডকে তখন ওভাবে রেখে আসাটাও ঠিক হয়নি। হলিথান শহরে ফিরতে হবে আরোরাকে। এবং সেটা আজকেই! 
" আমি আপনাদের ভরসা রাখবো। তাছাড়া এই প্রতিশোধ আপনাদের থেকে আমাকে বেশি শান্তি দিবে। আমার বাবা-মায়ের হত্যাকারীদের কীভাবে আমি শান্তিতে বাঁচতে দিবো!"
সবাই আরোরার কথায় সন্তুষ্ট হয়েছে। এবার শুধু অপেক্ষা..... 

এনা মুখোমুখি চেয়ারে বসে আছে এডওয়ার্ড। সন্ধ্যা নেমেছে। একদিন, একরাত কেটে গেছে আরোরা নেই বাড়িতে। এনাকে এডওয়ার্ড কোনোরকমে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে রেখেছিল কিন্তু এখন এনা বুঝতে পারছে এডওয়ার্ড ও আরোরা ওর থেকে কিছু লুকাচ্ছে। 
" এডওয়ার্ড দয়া করে বলবে আরোরা ঠিক কোথায় গেছে? "
" আরোরা নিজে এসে সবকিছু বলবে তোমাকে এনা। "
" কিন্তু কখন,কবে?"
এনার প্রশ্নের উত্তর এডওয়ার্ড নিজেও জানে না। এমন পরিস্থিতি এডওয়ার্ড চাইলেও আরোরার কোনো খোঁজ পাচ্ছে না। নেকড়ে রাজ্য থেকে কোনো খবর এডওয়ার্ডের পক্ষে পাওয়া সম্ভব না। আরোরাকে ছাড়া কী ভীষণ অসহায় লাগছে এডওয়ার্ডের সে কেবল এডওয়ার্ড নিজেই জানে। 
" আসবে।"
" এডওয়ার্ড! আমার আর ভালো লাগছে না এসব রহস্য। আচ্ছা এডওয়ার্ড তোমার বাড়ির লোকজন কেউ তো এলোনা! তুমি কি তোমাদের বিয়ের কথাটা এখনো বাড়িতে জানাতে পারোনি?"
" সত্যি পারিনি এনা। চেয়েছিলাম আরোরাকে সাথে করে নিয়ে.... "
এডওয়ার্ডের কথা শেষ হওয়ার আগেই দরজায় ঠকঠক আওয়াজ করে উঠলো। বসা থেকে দ্রুত উঠে দাঁড়ালো এনা। বোন এসেছে ভেবে প্রায় ছুটে গিয়ে দরজা খুলে দিলো সে। এডওয়ার্ডও এনার পিছন পিছন গেছে। 
" আরো! বোন আমার! কোথায় ছিলি?"
আরোরাকে দেখা মাত্রই এনা জড়িয়ে ধরেছে। এডওয়ার্ড যেনো দেহে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। নিজের জন্য প্রিয় মানুষগুলোকে এতটা অস্থির হতে দেখে খারাপ লাগছে আরোরার।
" আপা বাড়ির ভেতরে চলো আগে তারপর বলবো।"
" হ্যাঁ হ্যাঁ চল।"
দরজা আঁটকে আরোরার কক্ষে এসে বসেছে তিনজন। ঘরের এককোনায় থাকা লন্ঠনের আলোতে আরোরার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে এডওয়ার্ড। এনা কিছু খাবার আর পানি এনে আরোরার সামনে রেখেছে। এডওয়ার্ড চুপ করে আছে। কেমন একটা ভয় ভয় লাগছে। আরোরা এখন অমৃত শক্তির অধিকারী। কোনোভাবে যদি বুঝে যায় এডওয়ার্ড ভ্যাম্পায়ার! অস্থির লাগছে ভীষণ। কীভাবে নিজের ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে রাখবে সে?

" কিছু ভাবছ এডওয়ার্ড? আমি তো চলে এসেছি। এখন আর চোখমুখ এমন করে রেখোনা। "
আরোরার কথায় এডওয়ার্ড মৃদু হেসে বললো, 
" আমি ঠিক আছি আরোরা৷ "
" আরো খাবারগুলো খেয়ে নিয়ে বল তো কোথায় গিয়েছিলি বাসররাতে?"
এনার প্রশ্নে আরোরা থতমত খেয়ে গেছে। এখন কী বলবে বোনকে? তাছাড়া বিয়ের প্রথম রাতে ওভাবে এডওয়ার্ডকে রেখে যাওয়ার কথাও মনে পড়ে গেছে ওর। এডওয়ার্ডকে কোনোভাবেই হারাতে চায় না আরোরা। নিজের প্রতিশোধ পূর্ণ হলে নিকের হাতেই আবার রাজ্যের দায়দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে সাধারণ মানুষের মতো সংসার করবে বলে ভেবেছে আরোরা।
" আপা কালকে বলি? এখন অনেক ক্লান্ত লাগছে। আমি কিছু খাবো না এখন। একটু বিশ্রাম করবো শুধু। তোমরা দু'জন বরং রাতের খাওয়াদাওয়া সেড়ে নাও।"
" আমি খেয়ে এসেছি আরোরা। এনা বরং খেয়ে নাও।"
" হ্যাঁ এতগুলো খাবার আমি একা খাবো! যাইহোক, তোরা বিশ্রাম নে। আমি যাচ্ছি। আগামীকাল কথা হবে। "
" আচ্ছা আপা।"
এনা কক্ষ ত্যাগ করতেই এডওয়ার্ডের দিকে দৃষ্টিপাত করলো আরোরা। শুভ্র পোশাকে ভীষণ সুন্দর লাগছে মানুষটাকে। ইশ সেদিন রাতের কথা ভাবতেই হাসি পাচ্ছে আরোরার। অন্তিম মুহুর্তে এসে সরে যাওয়াতে সে কী রাগ লোকটার! 
" কী দেখছো ওভাবে?"
কিছুটা ভয় নিয়ে প্রশ্ন করলো এডওয়ার্ড। আরোরা মুচকি হেসে বললো, " দেখছি বিশেষ কিছু। "
এডওয়ার্ড শুকনো ঢোক গিলে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আরোরার দিকে। মনে হচ্ছে এখুনি বুঝি সবকিছু বুঝে ফেলবে মেয়েটা। আরোরা এক পা একপা করে এডওয়ার্ডের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। এডওয়ার্ড চুপচাপ হয়ে দেখছে কী হয়। আরোরা ওকে অবাক করে দিয়ে পায়ে পা রেখে গলা আঁকড়ে ধরে দাঁড়াল। এডওয়ার্ড হাঁপ ছেড়ে বাঁচল। 
" কী ব্যাপার? বউয়ের প্রেম পাচ্ছে নাকি?"
" হ্যাঁ ভীষণ! অসমাপ্ত প্রেম পূর্ণ করতে হবে না? "
আরোরার চোখেমুখে কামুকতা। এডওয়ার্ড হঠাৎ করে আগের আরোরার কথা ভাবলো একবার। নিজের শক্তি পাওয়ার আগে একেবারে ভিতু,সহজসরল একটা মেয়ে ছিলো সে। কিন্তু এখন অনেকটা বদলে গেছে। আরোরার ইশারায় এডওয়ার্ড ওর ঠোঁটের দিকে এগিয়ে এসে ফিসফিস করে বললো,
" এসো সবকিছু কানায় কানায় পূর্ণ করে দিচ্ছি। "
আরোরা কিঞ্চিৎ লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেলেছে। এডওয়ার্ড ওকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানার দিকে এগোচ্ছে। 



চলবে............................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন