আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

আরোরা - পর্ব ০৬ - সিজন ২ - তাসমিয়া তাসনিন প্রিয়া - ধারাবাহিক গল্প


#আরোরা (সিজন ২)
#পর্ব_৬
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া



ক্ষণে ক্ষণে ছেলের শরীরের অবনতি দেখে মানসিকভাবে ভীষণ ভেঙে পড়েছেন হেলগা। জোহানসন এরমধ্যে কয়েকবার এসে দেখে গেছেন এডওয়ার্ডকে। সন্তানের সামনে নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও বাবামায়ের যখন কিছু করার না থাকে তখন তাদের মনমানসিকতা কেমন হয় তা বলে বোঝানো যাবে না। সাঁচি এসে ছিলো কতক্ষণ আগে। ম্যাকের ডাকাডাকিতে আবার নিজের কক্ষে ফিরে গেছে। ম্যাক বলছিল কোনো এক সাধুর কাছে যাবে এডওয়ার্ডের জন্য। কিন্তু সূর্যাস্তের পরে! 

বেশ কিছুক্ষণ সময় পেরিয়ে গেছে। আরোরা এখনো পাতাল থেকে বের হয়নি। কিছুটা চিন্তিত মুখেই দাঁড়িয়ে আছে নিক,আলেক্সা, আর হেক্সা। 
" কী হলো বলো তো আলেক্সা! আরোরা এখনো ফিরছে না কেনো?"
হেক্সার প্রশ্নের উত্তর সঠিক জানে না আলেক্সা। তবুও বললো,
" হয়তো কোনো সমস্যা হয়েছে। "
" না আলেক্সা। নেকড়ে কুইনের জন্য পাতালপুরী সম্পূর্ণ নিরাপদ। হয়তো সঞ্জীবনী খুঁজে পেতে সময় লাগছে। "
নিকের কথা শেষ হওয়ার আগেই আরোরাকে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে আসতে দেখলো সবাই । মুহুর্তেই সকলের ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফুটে উঠেছে। আরোরার হাতে ছোটো একটা সোনার কলসি। সবার দৃষ্টি সেদিকেই। আরোরার হাত ধরে উপরে উঠানোর বদলে আলেক্সা কলসি নিজের হাতে নিলো। কারণ আরোরাকে ধীরে সুস্থ উপরে আসতে হবে। সঞ্জীবনী মাটিতে পড়লে বিপদ! আরোরা সাবধানে উঠে দাঁড়ালো এতক্ষণে। 
" আমি পেরেছি আলেক্সা!"
আরোরার কথায় হাসলো আলেক্সা। ওর হাত থেকে কলসি নিক নিলো। 
" হ্যাঁ পেরেছ তুমি। "
" কিন্তু তোমার কাজ এই পর্যন্ত ছিলো আরোরা! এরপর তোমার কোনো দরকার নেই। "
নিক কথাটা বলেই কলসি থেকে ডগডগ করে সমস্ত তরল পান করে নিতে লাগলো। আরোরা দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ। বাকিরা কিছুটা অসন্তুষ্টি নিয়ে নিকের কাজকর্ম দেখছে। হেক্সা নিককে বাঁধা দিতে চেয়ে বলে,
" সবটুকু নিজেই পান করছেন কেনো? কথা ছিলো ভাগাভাগি করে নেওয়ার। "
নিক কারো কথায় কর্ণপাত করেনি। সবটুকু সঞ্জীবনী পান করে কলসি মাটিতে ফেলে দিয়ে বিজয়ীর হাসি হেসে বললো সে,
" সবকথা রাখা যায় না প্রিয়তমা। তোমাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার জন্য খুবই দুঃখিত আমি। "

" নিক আপনি মোটেও ঠিক করেননি! "
আলেক্সা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে নিকের দিকে আক্রমনাত্মক ভঙ্গিতে এগিয়ে যাচ্ছে। নিক আকাশের চাঁদের দিকে তাকাল। কিছু একটা ইশারা করলো আলেক্সাকে আর চুপ করে গেলো সে। আরোরা এখনো চুপ করে দাঁড়িয়ে এদের কার্যকলাপ দেখছে। নিক এবার আরোরার দিকে দৃষ্টিপাত করে শয়তানি হাসি দিলো। 
" কিছু বুঝতে পারছ না নিশ্চয়ই? "
" আমি সবকিছু বুঝে গেছি। কিন্তু সমস্যা হলো তোরা তিনজন কিছু বুঝিসনি।"
আরোরার এমন আচরণে তিনজনই চমকাল। দৃষ্টি তীক্ষ্ণ করে তাকাল ওর দিকে। 
" বুঝতে দেরী হয়ে গেছে আমার রাজকন্যা। সবকিছু এখন আমার হাতে। "
" তাই? আমাকে আহাম্মক মনে হয় তোর? এই বুদ্ধী নিয়ে এতদিন রাজ্য চালেয়েছি আমি? আরে আমি শত্রুপুরীতে পর্যন্ত থাকি আর তুই এসেছিলিস আমাকে বোকা বানাতে?"
আলেক্সার দিকে তাকিয়ে নিক সন্দিহান সুরে জিজ্ঞেস করলো, 
" সেলিনকে কক্ষে বন্দী করেছিলে তো আলেক্সা?"
" হ্যাঁ। "
আলেক্সা উত্তর দিলো। 

" বন্দী ঠিকই করেছে কিন্তু তোমরা মনে হয় ভুলে গেছো, রাণী আমি সমস্ত মায়া নেকড়েদের! অমৃত শক্তির অধিকারী আমি। সেলিন যেখানেই থাকুক ও যখন আমাকে ওর মনের কথাগুলো বলছিল সবকিছু শুনেছি আমি। কারণ তোরা ভুলে গেছিস,কোনো নেকড়ে বিপদে পড়লে মনে মনে তাদের রাণীকে স্মরণ করলে সেটা আমি টের পাই।"

আলেক্সা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু নিক একটুও তার জায়গা থেকে টলেনি। সে উল্টো দাম্ভিকতা বজায় রেখে বলে,
" সে যাইহোক এখন আমি অমর। সঞ্জীবনী পান করে দ্বিগুন অমৃত শক্তি লাভ করেছি। আমার সাথে তুই পারবি না আরোরা। তারচে বরং তুই মর। আর হ্যাঁ আরেকটা কথা জেনে রাখ মরার আগে, আমারই পিতা ভ্যাম্পায়ারদের বুদ্ধি দিয়েছিল কীভাবে তোর বাবা-মাকে শেষ করবে। "

আরোরার বুকের ভেতর নিভে থাকা প্রতিশোধের আগুন ধপ করে জ্বলে উঠলো। চাঁদের আলোয় আরোরার শরীর থেকে শ্বেত রঙের আলোর বিচ্ছুরণ ঘটছে। 

" এমনি তুই মরতি নিক এখন মারাটা আরো সহজ হবে। আর শোন, যেটা পান করে এতো বাহাদুরি দেখাচ্ছিস ওটা সঞ্জীবনী নয়, জল ছিলো। সাধারণ জল। পাতালে জল পাওয়া যায়? সেখান থেকে কলসি ভরে এনেছি তোদের জন্য। সঞ্জীবনী আমার শরীরে বিরাজ করছে এখন আর বাকিটা এডওয়ার্ডের জন্য রাখা আছে। "
আরোরার এই কথা শোনার জন্য কেউ প্রস্তুত ছিলোনা। চমকাল,থমকাল তিনজন। ভয়ও পেলো সাথে। আরোরা মুচকি হেসে এগিয়ে গেলো নিকের দিকে, 
" নিজের মৃত্যুর জন্য তৈরি হ বিশ্বাসঘাতক! "
নিক নেকড়ে রূপ ধারণ করে দৌড় দিলো। আরোরাও মুহুর্তেই শ্বেত রঙের নেকড়েতে পরিণত হয়ে এগিয়ে গেলো নিকের দিকে। ওর শরীর থেকে এতো আলোর বিচ্ছুরণ ঘটছে যে আলেক্সা আর হেক্সা তাকাতে পর্যন্ত পারছেনা। জোছনায় চকচক করছে আরোরার দাঁতগুলো। চোখের পলকের মধ্যে আরোরা নিককে ধরে ফেললো। সোজা ঘাড়ে কামড়ে ধরে শূন্যে তুলে আছাড় মারলো নিককে। বেচারা এই বয়সে এতটা আঘাত সহ্য করতে না পেরে কুকিয়ে উঠলো। আর তারপরই আলেক্সা আর হেক্সা দেখতে পেলো আরোরার ভয়ংকর রূপ! ঘাড়ে কামড় দিয়ে শরীর থেকে মাথা আলাদা করে ফেললো নিকের। রক্ত ছিটকে পড়লো আরোরার শুভ্র লোমশ শরীরে। ভয়ে কেঁপে উঠেছে হেক্সা ও আলেক্সা। নিককে শেষ করে ওদের দিকে এগোলো আরোরা। আজ আর কোনো মায়াদয়া প্রদর্শন করবে না রাণী আরোরা। শত্রুর শেষ করে ঘরে ফিরবে! 

রাত প্রায় শেষের পথে। এডওয়ার্ডের মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছেন হেলগা। দু-চোখ বেয়ে অবিরত অশ্রু ঝরছে। ম্যাক দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে শুধালো, 
" রাজ মাতা আসবো?"
নড়েচড়ে উঠলেন এডওয়ার্ডের মা। হাত দিয়ে চোখ মুছে ইশারায় ভেতরে ঢুকতে বললো। ম্যাকের পেছন পেছন সাঁচিও প্রবেশ করলো কক্ষে। 
" কিছু বলবে ম্যাক?"
" হ্যাঁ রাজমাতা! আমি একজন সাধুবাবার কাছে গিয়েছিলাম। উনি মানুষ, পশ্চিমের পাহাড়ের এক গুহায় ধ্যান করেন। উনি এডওয়ার্ডের সুস্থ হওয়ার উপায় বলেছেন। "
" কী উপায়? বলো ম্যাক! "
উত্তেজিত হয়ে উঠলেন হেলগা। বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ম্যাকের দিকে এগোলো। 
" উনি বলেছেন, পাতালে থাকা কোনো এক অমূল্য জল নাম তার সঞ্জীবনী। সেই জল এডওয়ার্ডকে খাওয়ালে নতুন করে প্রাণ সঞ্চার হবে। নয়তো আজীবন এমন জীবনমৃত্যুর মাঝখানে ঝুলে থাকবে এডওয়ার্ড। "
" তুমি জিজ্ঞেস করোনি কীভাবে আনতে হবে সেই জল?"
" করেছি। কিন্তু ভ্যাম্পায়ারদের পক্ষে তো পাতালে যাওয়া সম্ভব না রাজ মাতা। আপনি তো সেটা জানেন। আমরা অভিশপ্ত পাতালে।"

হেলগা ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। ছেলেকে বাঁচানোর উপায় জানা স্বত্বেও সেই উপায় কাজে লাগাতে পারছে না। এরচেয়ে বেদনার আর কী আছে একজন মায়ের কাছে? 

" মা! এডওয়ার্ড ঠিক আছে? "
আচমকা আরোরাকে দেখে চমকাল সবাই। ওর সমস্ত শরীরে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ লেগে আছে। এমনকি ঠোঁটের কোণেও রক্ত। হেলগা ক্ষেপে গেলেন। রাগান্বিত স্বরে বললেন, 
" পেটের ক্ষিদে মেটাতে শিকার করতে গিয়েছিলে? সারা রাত বাইরে থেকে এখন এসেছ আমার ছেলের খোঁজ নিতে? "
" মা এখন এসব বলার সময় নয়। রাত শেষের পথে মা। তার আগেই আমাকে এডওয়ার্ডকে এই সঞ্জীবনী পান করাতে হবে। কারণ সঞ্জীবনী কেবল এই পূর্ণিমার রাতেই কার্যকরী থাকে। আজ না হলে আবারো পরবর্তী পূর্ণিমা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে মা!"
আরোরার হাতে সোনার কলসি দেখে আর সঞ্জীবনীর কথা শুনে শান্ত হয়ে গেলেন হেলগা। ম্যাক ও সাঁচির মুখে হাসি ফুটেছে। 

" সত্যি আরোরা? সত্যি তুমি এনেছো সঞ্জীবনী! যাও যাও খাইয়ে দাও ওকে।"
হেলগা আরোরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে এডওয়ার্ডের দিকে ইশারা করে বললো। আরোরা কালক্ষেপণ না করে দ্রুত এগিয়ে গেলো। এডওয়ার্ডের পাশে বসে কলসি থেকে ধীরে ধীরে তরল ঢালতে লাগলো ওর মুখে।



চলবে............................
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।