আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

আরোরা - পর্ব ০১ - সিজন ২ - তাসমিয়া তাসনিন প্রিয়া - ধারাবাহিক গল্প


#আরোরা (সিজন ২)
#সূচনা_পর্ব
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া



আজকের দিনটা অন্যান্য দিনের থেকে আলাদা। আবহাওয়াও স্বাভাবিক নেই। মেঘলা আকাশ। থেকে থেকে কালো মেঘেরা তীব্র গর্জন করছে। বাতাসের তীব্রতা বুঝিয়ে দিচ্ছে প্রকৃতি কতটা বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। ওয়ারউলফ প্রাসাদের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে ভ্যাম্পায়ার কিং এডওয়ার্ড! প্রাসাদের মূল ফটকে সমবেত হয়েছে সকল নেকড়েরা। এডওয়ার্ডকে পারলে ছিড়েখুঁড়ে খেয়ে ফেলে সবাই এমন অবস্থা । কিন্তু কেউ কিছু করতে পারছেনা শুধু । আরোরা সবাইকে বিদায় জানিয়ে প্রাসাদ থেকে বের হচ্ছে। 
আজকেই সেই ভয়ংকর দিন। হ্যাঁ আজকে আরোরা ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের রাণী হিসেবে ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে প্রবাশ করবে। একজন নেকড়ে ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের রাণী ইতিহাসে প্রথম এই অঘটন ঘটবে। এডওয়ার্ড সবকিছু বুঝেও এসেছে তাকে সাথে নিয়ে যেতে । আরোরার পরিকল্পনা এডওয়ার্ড জানা সত্বেও কতটা পাগলামি করতেছে বউয়ের জন্য। ওর বিশ্বাস দুজন একসাথে থাকলে ঠিক সবকিছু ভুলে নতুন করে সম্পর্কের সমীকরণ বদলাবে। আসলেই কি বদলাবে আরোরা ও এডওয়ার্ডের সম্পর্কের রসায়ন? না-কি সত্যি সত্যি দু'জন ভালোবাসার মানুষের মধ্যে জ্বলবে শুধু প্রতিশোধের অনল! প্রশ্ন থেকেই যায়। তবে উত্তরও আছে.... ভালোবাসা সবকিছু জয় করতে পারে, সব!

নিজের কক্ষের বারান্দায় পায়চারি করছেন জোহানসন। হেলগা নিজেও একপাশে দাঁড়িয়ে আছে চিন্তিত মুখ নিয়ে। ছেলেটা নিজেই ধ্বংসকে সাথে করে নিয়ে আসছে। সমগ্র ভ্যাম্পায়ার রাজ্যকে একপ্রকার বিপদে ফেলতে চলেছে এডওয়ার্ড। কিন্তু এই কথা মানতে নারাজ সে। ওর মতে শত্রু চোখের সামনে থাকলেই সুবিধা। কারণ তাহলে তার পরিকল্পনা সম্পর্কে ভালো ধারণা করা যাবে। তবে এসব যে এডওয়ার্ড মুখেই বলছে শুধু সেসব কারোরই বুঝতে অসুবিধা হয়নি। কেবল ভালোবাসে বলেই ওই মেয়েকে আনতে গেছে ছেলেটা। 
" একটু স্থীর হয়ে দাঁড়ান। এতো পায়চারি করে কোনো লাভ তো হবে না। "
" তা হবে কেনো? নিজের ছেলেকে তো বোঝাতে পারো না। ও কেনো বুঝতে পারছে না, আরোরা ওর প্রাণের শত্রু! ওকে মেরে ফেলাই ওই মেয়ের একমাত্র লক্ষ্য। "
জোহানসন হেলগার সামনে দাঁড়িয়ে চোখ পাকিয়ে বললেন। হেলগা শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। স্বামী ভীষণ রাগ করে আছে সেটা ভালো করেই বুঝতে পারছেন তিনি। দু'জনে একসাথে রাগ করলে সংসার চলে না। একজনকে চুপ করা জানতে হয়। হেলগা এই নিয়ম মেনেই চলে সব সময়। 
" আপনি শান্ত হোন। এডওয়ার্ড আসুক আগে, আমি কথা বলবো। এই কয়মাসে তো দেখেছেন, দরকার হলে আমাদের ছেলে ঢাল হয়ে তার রাজ্যকে রক্ষা করতে পারে।"
জোহানসন লম্বা লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে বাইরে দৃষ্টিপাত করলেন। 
" ঠিক আছে। দেখি কী হয়! "

সমস্ত পথ একসাথে আসলেও কেউ কারো সাথে কোনো কথা বলেনি। এমনকি এডওয়ার্ডের চেহারার দিকেও তাকায়নি আরোরা। চোখের দিকে তাকাতে চায় না ও। এডওয়ার্ডের চোখগুলো ভীষণ টানে আরোরাকে। সেই প্রথম দিন থেকেই! ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে প্রবেশের পর নতুন বউ হিসেবে যা যা অনুষ্ঠান হওয়ার কথা সেসব কিছুর আয়োজন করেছেন এডওয়ার্ডের মা। একমাত্র ছেলের বউ,সে যেই হোক তবুও তো বংশের পুত্রবধূ। আরোরা বিষয়টা নিয়ে একটু ভেবেছিল অবশ্য। এতো ভালো সবাই? কিন্তু না পরক্ষণেই আরোরার মস্তিষ্ক অন্য গল্প সাজিয়ে নেয় নিজের মনে। তাকে ভোলানোর জন্যই এতো নাটক আর কিছু নয় ভেবে নিজেকে শান্ত করে মেয়েটা। 

" আলমারিতে তোমার পোশাক রাখতে পারো। আমার জন্য আলাদা আলমারির ব্যবস্থা করবো।"

আরোরা নিজের জন্য নিয়ে আসা পোশাকগুলো নেড়েচেড়ে দেখছিল বলে এডওয়ার্ড কথাটি বলে। রাতের আঁধার নেমেছে ধরণীর বুকে। নিস্তব্ধ রজনীতে দু'জন ভালোবাসার মানুষ একই কক্ষে অবস্থান করলেও দু'জন দু'জনার থেকে বহুদূর আজ।
" দরকার নেই। "
" আরোরা!"
" হ্যাঁ বলো।"

আরোরা বিছানার পাশে পা দুলিয়ে বসে আছে। এডওয়ার্ড গিয়ে ওর সামনে মেঝেতে বসে। চোখে চোখ রেখে সাহস করে প্রিয়তমার হাত দু'টো নিজের হাতে আবব্ধ করে। 
" আমি মানছি আমরা অপরাধী। কিন্তু আমরা অনুতপ্ত তবুও তুমি চাইলে আমাদের শাস্তি দিতে পারো। তবে প্রাণে মেরে নয়। তাছাড়া আমি তো কিছু করিনি বলো? তুমিও আমাকে ভালোবাসো তবে কেনো এভাবে নিজেকে কষ্ট দিচ্ছ?"
এডওয়ার্ড আরোরার দু'হাত নিজের হাতের মধ্যে রেখে শান্ত কণ্ঠে বললো। আরোরা কয়েক মুহুর্তের জন্য এডওয়ার্ডের চোখে চোখ রেখে চুপ করে আছে। বুকটা কেমন হুহু করে উঠছে। এই মানুষটার সাথে কতগুলো রাত বাইরে সময় কাটিয়েছে, হেঁটেছে! কত-শত মুহুর্ত দুজনের! 

" কিছু বলো আরোরা? আমার বিশ্বাস তুমি একদিন আমাকে গ্রহণ করবে। আবারো ভালোবাসবে।"

নিজের বাবা-মায়ের মৃত শরীরের কথা ভাবতেই মস্তিষ্ক বিক্ষিপ্ত হয়ে উঠে আরোরার। রাগে থরথর করে কাঁপছে শরীর। এক ঝটকায় এডওয়ার্ডের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো। এডওয়ার্ড বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আরোরার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কী মায়াভরা অসহায় সেই দৃষ্টি! ভালোবাসার মানুষটা সামনে আছে অথচ ভালোবাসার অধিকার নেই। 
" এডওয়ার্ড এসব ভালোবাসার কথা ভুলে যাও তুমি। আমাদের মধ্যে আর কোনো ভালোবাসা অবশিষ্ট নেই। যেটুকু আছে তা কেবল প্রতিশোধের আগুন। "
" নেই বলছো? আমি তো তোমার চোখে এখনো আমার জন্য ভালোবাসা দেখতে পাই আরোরা। "

আরোরা দৃষ্টি অন্য দিকে সরিয়ে ফেলে। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিজেকে সামলে নেয়। এডওয়ার্ড আগের মতোই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। 
" এডওয়ার্ড! চুপ করো নয়তো আমি তোমাকে আঘাত করতে বাধ্য হবো।"
" সবচেয়ে বড়ো আঘাত তো এখানে করেছো! এই আঘাতেই তো দগ্ধে দগ্ধে শেষ হচ্ছি।"
এডওয়ার্ড আরোরার ডান হাতটা নিজের বুকের বামপাশে চেপে ধরে মৃদু হেসে বললো। আরোরা কিছু বললো না। হাতটা সরিয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। এভাবে চলবে না। আরো শক্ত হতে হবে। আরো!

সকাল সকাল এনার গোঙানির শব্দে ঘুম ভেঙে গেছে গুলিনের। ঘুম ঘুম চোখে বিষয়টা বোঝার জন্য পাশে হাতড়ে এনাকে না পেয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলো। 
" এনা! এই এনা! কই তুমি? "
তড়িঘড়ি করে বিছানা থেকে উঠে রান্নাঘরের দিকে এগোলো গুলিন। শব্দ তো সেখান থেকে আসছে। খুব সম্ভবত এটা বমি করার শব্দ। গুলিন দ্রুত পা চালিয়ে রান্নাঘরে প্রবেশ করে দেখে এনা চোখেমুখে পানি দিচ্ছে। 
" কী হয়েছে তোমার? "
এনার কাঁধে হাত রেখে নিজের বুকে জড়িয়ে শুধালো গুলিন। এনা ওড়না দিয়ে চোখমুখ মুছে নিলো। 
" শরীরটা হুট করে খারাপ লাগছে। মাথা ঘুরছিল সকাল থেকে, এখন আবার বমি হলো।"
" সকালবেলা উঠে কিছু তো খেয়ে নিতে পারো? খালি পেটে রান্না করতে শুরু করো। চলো ঘরে চলো। "
গুলিন এনাকে ওভাবেই ধরে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে যেতে চাইলে এনা দাঁড়িয়ে বলে,
" আরে রান্না তো শেষ হয়নি গুলিন।"
" আমি বাকিটা শেষ করবো। আগে তোমাকে ঘরে রেখে আসি। "
" আমি যাচ্ছি,তুমি থাকো এখানে। "
" চুপ! বয়সে ছোটো হলেও আমি তোমার স্বামী। তাই আমার কথাই শুনতে হবে। চুপচাপ আমার সাথে ঘরে চলো।"
এনা আরকিছু বললো না। মুচকি হাসলো শুধু। লোকটা পাগলের মতো ভালোবাসে যে! 

" ম্যাক! কী করছো দিনেদুপুরে? "
বারান্দায় দাঁড়িয়ে বিকেলের ম্লান রোদ গায়ে মাখছিল সাঁচি। এই সময়ের রোদে কোনো সমস্যা হয় না ওদের। হঠাৎ পেছন থেকে ম্যাক জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিতেই চমকাল মেয়েটা।
" এখন দিন কিন্তু দুপুর না সাঁচি। তাছাড়া ভালোবাসার কোনো সময় হয় না। "
সাঁচির খোলা চুলগুলো আঙুলের সাহায্যে সামনে রেখে উন্মুক্ত পিঠে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে ম্যাক। সাঁচি মুচড়ে সরতে চাইছে কিন্তু ম্যাক ওর দু-হাত চেপে ধরায় পারছেনা। 
" ঘরে চলো দয়া করে। নিচ থেকে কেউ তাকালেই দেখতে পাবে। "
" আগে বলবে তো প্রকাশ্যে মিষ্টি খেতে তোমার লজ্জা! চলো চলো।"
ম্যাক সাঁচিকে কোলে তুলে নিয়ে কক্ষের ভেতর এসে বিছানায় শুইয়ে দিলো। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে সাঁচি। একটা নির্লজ্জ ছেলে জুটেছে ওর কপালে। ম্যাক কালক্ষেপণ করলোনা। সাঁচির কপাল থেকে ঠোঁট ছোঁয়াতে ছোঁয়াতে গলায় এসে থামলো সে। সাঁচি ম্যাকের কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলছে । ভালোবাসার মানুষের স্পর্শ প্রলয়ঙ্কারী ঝড়ের ন্যায়। কিছুতেই সামলে রাখা যায় না। বরং সবকিছু এলোমেলো করে দেয়।



চলবে............................
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।