আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

আরোরা - পর্ব ০২ - সিজন ২ - তাসমিয়া তাসনিন প্রিয়া - ধারাবাহিক গল্প


#আরোরা (সিজন ২)
#পর্ব_২
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া



সন্ধ্যা নেমেছে হলিথান শহরের বুকে। লোকজন স্বাভাবিকভাবে তাদের কাজকর্ম করতে ব্যস্ত। শীতের প্রকোপ ইদানীং বেড়েছে। মাঝে মধ্যে তুষারপাত হচ্ছে। লোকজন সেই জন্য গরম কাপড়চোপড় পরছে। তবে চাহিদার তুলনায় কাপরের সরবরাহ কম বলে পোশাকের অনেক দাম। কেউ কেউ তো এই সুযোগে অন্য ব্যবসা রেখে পোশাকের ব্যবসা শুরু করেছে। বাজারের উত্তর দিকে গুলিনের বাসা। দোচালা ঘরে দু'জন সদস্য নিয়ে সুখের সংসার ওদের।

" আপা সত্যি! সত্যি নতুন অতিথি আসছে?"
বোনকে জড়িয়ে ধরে উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে শুধালো আরোরা। বিছানার একপাশে বসে আছে দু'জন। সামনে থাকা ছোটো টেবিলে গুলিন আরোরার জন্য শরবত এনে রাখলো। সুখবর শোনার পর থেকে স্ত্রী'কে কোনো কাজকর্ম করতেই দেয়নি সে। 
" হ্যাঁ আরো। সত্যি। "
" আমার যে কী আনন্দ হচ্ছে না আপা!"
" পাগলি বোন আমার। "
বড়ো বোন ছোটো বোনের মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। গুলিনও সামনে একটা চেয়ার টেনে বসলো। 
" এডওয়ার্ডকেও নিয়ে আসতে। "
" আমি না বলে এসেছি। তাই জানতো না সে।"
" বললি না কেন আরো? ছেলেটা তো আমাকে শ্রদ্ধা করে খুব। "
এনার কথায় চুপ করে যায় আরোরা। সেই স্বাভাবিক সম্পর্ক তো এডওয়ার্ডের সাথে ওর নেই। আর কখনো হবেও না। সবটা তো আপা জানে তবুও কেনো বলে এসব! হঠাৎ দরজায় ঠকঠক আওয়াজ পেয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো গুলিন। 
" আমি দেখে আসছি।"
দুই বোনকে বলেকয়ে দরজা খুলে দিতে এগোলো গুলিন। দরজা খুলতেই ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে উঠেছে ওর। 
" আরে এসো এসো। তোমার কথাই তো হচ্ছিল। "
এডওয়ার্ডকে ঘরের ভেতর আসতে বলে দরজা আঁটকে দিলো গুলিন। এডওয়ার্ডও হেসে বলে,
" তা কী কথা হচ্ছিল? "
" এই যে তোমাকে কেনো নিয়ে আসলোনা আরোরা সেসব। চলো ভেতরের কক্ষে ওরা আছে। "
" বেশ চলুন।"
গুলিনের পিছু পিছু শোয়ারঘরে গিয়ে উপস্থিত হলো এডওয়ার্ড। আরোরা চমকাল ওকে দেখে। কাউকে তো জানিয়ে আসেনি কোথায় গেছে, তবুও জানলো কীভাবে লোকটা? এনা এডওয়ার্ডকে দেখে বেজায় খুশি হয়েছে। 
" কেমন আছো এডওয়ার্ড? "
" ভালো আছি এনা। তুমি কেমন আছো? হঠাৎ আরোরা এই সময় এলো! কোনো সুখবর আছে নাকি?"
এডওয়ার্ডের কথায় মুচকি হাসলো এনা। আরোরা চুপ করে আছে। গুলিন হেসে বললো, 
" নতুন সদস্য আসতে চলেছে এডওয়ার্ড। দাঁড়াও মিষ্টি নিয়ে আসছি আমি। "
" তুমি থাকো গুলিন ভাই, আমি নিয়ে আসছি।"
গুলিন বসলো চেয়ারে আর পাশের চেয়ারে এডওয়ার্ড। আরোরা রান্নাঘরে গিয়ে মিষ্টি নিয়ে এলো। কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে সুন্দর সময় কাটিয়ে এডওয়ার্ডের সাথেই বেরুলো আরোরা।

 অন্ধকার রাত। গতকাল অমাবস্যা ছিলো। ভীষণ ঠান্ডা বাইরে। আরোরার কাঁপা-কাঁপি অবস্থা প্রায়। পাতলা গাউনে তো ঠান্ডা মানে না। পাশাপাশি হাঁটছে দু'জন ওরা। কিন্তু কেউ কোনো কথা বলছে না। এডওয়ার্ড চাইলেও কিছু বলতে পারছেনা। দূরে থেকে অবহেলা সহ্য করা যেতো কিন্তু কাছাকাছি থেকেও এই দূরত্ব ভীষণ পোড়ায় ওকে। আরোরার ঠান্ডা লাগার কথা নয় কারণ নেকড়েরা বরফের মধ্যেও থাকতে পারে। তবুও এমন শীত লাগছে কেনো বুঝতে পারছে না এডওয়ার্ড। শরীর খারাপ হলো না-কি? 
" আরোরা তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে?"
" না,ঠিক আছি আমি। "
" মনে তো হচ্ছে না। "
পাশাপাশি হাঁটার ফলে মাঝে মধ্যে আরোরার হাতের সাথে এডওয়ার্ডের হাতের স্পর্শ হচ্ছে। এডওয়ার্ড যদিও ইচ্ছে করেই এমন করছে৷ আরোরা না চাইতেও চুপ করে আছে। মনে হচ্ছে কতদিন এডওয়ার্ডের স্পর্শ পায়নি সে। তৃষ্ণার্ত হয়ে আছে হৃদয়। 
" এতো ঠান্ডা লাগছে কেনো তবে? "
এডওয়ার্ডের প্রশ্নের উত্তর আরোরা চুপ করে আছে। গতকাল রাত থেকে ভীষণ জ্বর ওর। কিন্তু আলাদা আলাদা শোয়ার ফলে সেই খবরটুকু এডওয়ার্ড জানে না। তাছাড়া আরোরার চোখমুখ দেখেও কিছু বোঝা যাচ্ছে না। কারণ নেকড়ে নিজে না চাইলে তার অসুস্থতার কথা কেউ জানতে পারে না। আরোরার নীরবতায় এডওয়ার্ড যা বোঝার বুঝে গেছে। সাহস করে আচমকাই আরোরাকে কোলে তুলে নিলো সে। চমকাল, থমকাল আরোরা। ডানা ঝাপটে আকাশে উড়তে শুরু করেছে এডওয়ার্ড। 
" এটা কী করলে এডওয়ার্ড? "
" তোমার জ্বর এসেছে বলোনি কেনো? গা তো জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে! হেঁটে যেতে হবে না তাই এভাবে যাচ্ছি। যাবো তো একজায়গায়, তাহলে এভাবেই চলো।"
" না। আমাকে নিচে নামিয়ে দাও৷ "
" তোমার সব কথা শুনলেও এটা শুনছি না। "
" এডওয়ার্ড! "
" ধমক দিয়ে লাভ নেই। কারণ মাটির এতো উপরে বসে কোনো নেকড়ে কিছু করতে পারে না। "
ঠোঁট টিপে হেসে বললো এডওয়ার্ড। আরোরা ওর হাসি দেখে তাকিয়ে আছে। কতটা বজ্জাত লোকটা! সুযোগে সৎ ব্যবহার করছে। 

ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে আরোরা গিয়েছে মাস দুয়েক হলো। এখনো এডওয়ার্ডকে মারতে না পারায় ওয়ারউলফ রাজ্যের কিছু কিছু নেকড়ে ক্ষেপে গেছে আরোরার উপর। আর তাদের ইন্ধন যোগাচ্ছে স্বয়ং আলেক্সা। এই নিয়ে নিক ভীষণ চিন্তিত। রাজ্যের এই হাল দেখে খুব চিন্তায় থাকেন তিনি। আলেক্সার এই পরিবর্তনেও অবাক হয়েছিলেন নিক। যে আলেক্সা আজীবন বাধ্য প্রহরীর মতো কাজ করে গেছে আজ হঠাৎ কী হলো তার? এই প্রশ্নের উত্তর কিছুতেই খুঁজে পান না তিনি। আরোরার পরিস্থিতি নিক বুঝতে পারেন। এডওয়ার্ড আঘাত না করলে আরোরা তাকে হত্যা করতে পারবে না। আর এডওয়ার্ড আরোরাকে কতটা ভালোবাসে সেটা দুই রাজ্যের সবাই জানে। তাই সে কখনোই আঘাত করবেনা আরোরাকে। তাই এখানে তো আরোরার কিছু করারও নেই! 

ছেলের ভবিষ্যত নিয়ে সব সময় দুশ্চিন্তায় থাকেন হেলগা। কোনো যুদ্ধ না হলেও ছেলে ও ছেলের বউয়ের মধ্যে যে অস্বাভাবিক সম্পর্ক সেটা উনি বোঝেন। কিন্তু কী করবেন! এভাবে কি একটা সম্পর্ক হয়? এডওয়ার্ড তো আজীবনেও কোনো ক্ষতি করবে না আরোরার। আর আরোরাও হয়তো অপেক্ষা করবে সেই ক্ষণের। কিন্তু এভাবে কতকাল অতিবাহিত হবে? 
" রাজ মাতা কী ভাবছেন এখানে দাঁড়িয়ে? "
ছাঁদে দাঁড়িয়ে আনমনে ভাবছিলেন হেলগা। হঠাৎ সাঁচির আগমনে নড়েচড়ে উঠলেন। হালকা গোলাপি রঙের গাউনে ভীষণ সুন্দর লাগছে সাঁচিকে।
" কিছু না সাঁচি। তুমি এখানে! কিছু বলবে? "
" না রাজ মাতা। এমনি এসেছিলাম। "
" এখন থেকো না এখানে। সূর্যের আলো তোমার জন্য বেশি ক্ষতিকর। তুমি নতুন ভ্যাম্পায়ার হয়েছ। তাছাড়া তোমার শরীরে মানুষের রক্ত। "
" ঠিক আছে। কিন্তু আপনি যাবেন না? আপনার শরীরও তো কেমন উজ্জ্বল হয়ে গেছে। "
" আমার কিছু হবে না সাঁচি। তুমি বরং ম্যাককে রাতে একবার আমার সাথে দেখা করতে বলবে।"
" ঠিক আছে রাজমাতা। আসছি আমি। "
" এসো।"
সাঁচি চলে গেলো। হেলগা আগের ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করলো। 

" আরোরা এটা তুমি কী করলে? আমার নানার দেওয়া পোশাকটা এভাবে নষ্ট করলে!"
মেঝেতে কেটে ফেলে রাখা এডওয়ার্ডের ছোটোবেলার পোশাক দেখে বললো এডওয়ার্ড। পোশাকটা ওর নানা দিয়েছিল কোনো এক জন্মদিনে। তিনি পৃথিবীতে নেই এখন। আরোরা নিজে কিছু করেনি এমন ভাব নিয়ে এডওয়ার্ডের সামনাসামনি দাঁড়িয়ে আঙুল নাচিয়ে বলে,
" হ্যাঁ করেছি। তোমার সবকিছু নষ্ট করে দিবো আমি। "
" আরোরা!"
রাগে থরথর করে কাঁপছে এডওয়ার্ডের শরীর। মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসে কাটা পোশাকের অংশগুলো হাতে নিলো সে। আরোরা ভীষণ খুশি হলো। এটাই তো চাচ্ছিল সে। এডওয়ার্ডকে ক্ষেপিয়ে নিজের উপর আঘাত করাতে পারলেই ওর উদ্দেশ্য সফল হয়।
" ধমক দেওয়ার সাহস হয় কীভাবে তোমার? তোমার থেকে কি দূর্বল মনে হয় আমাকে? এসো ক্ষমতা থাকলে লড়াই করো।"
আরোরার এরকম কথায় মেজাজ আরো বিগড়ে গেলো এডওয়ার্ডের। বসা থেকে উঠে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো স্ত্রী'র দিকে। আরোরার ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে উঠেছে। এখনই হয়তো এডওয়ার্ড নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে আঘাত হানবে। এডওয়ার্ড এগিয়ে আসছে আরোরার দিকে। মেয়েটা হাসছে দাঁড়িয়ে। আচমকা এডওয়ার্ড ওর কোমরে হাত দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরে। মুহুর্তেই হেঁচকা টানে বুকের সাথে মিশিয়ে ফেলে আরোরাকে। ঠোঁটে ঠোঁট রেখে সমস্ত রাগ ঠোঁটেই উগড়ে দেয় এডওয়ার্ড। আরোরা খুব চেষ্টা করেও নিজেকে ছাড়াতে পারছেনা এডওয়ার্ডের থেকে । ঠোঁটের ব্যথায় চোখ টলমল করছে। 



চলবে...........................
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।