আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

নীরবে নিভৃতে - পর্ব ২৩ - তাসমিয়া তাসনিন প্রিয়া - ধারাবাহিক গল্প


সকালের নাস্তা শেষে পড়তে বসেছে মিষ্টি। গতকাল সন্ধ্যায় আহনাফ স্যার পড়াতে আসেননি। বিষয়টা নিয়ে মনটা কেমন খচখচ করছে ওর। ওরকম আচরণ করার ফলেই কি স্যার রাগ করলেন? কই রাগ করলে তো ছাতা দিয়ে যেতেন না! তাহলে কী হলো? মিষ্টির মন আজ পড়ায় যতটা তারচে আহনাফ স্যারের উপর বেশি। এর কারণ হিসেবে বলা যায়, শুক্রবার সকাল সকাল পড়তে বসতে ইচ্ছে করে না। কিন্তু মায়ের ধমকে পড়তে হয়। তাই হয়তো ভাবনা হিসেবে আহনাফ স্যারকে নিয়েই মনটা ভাবছে! 

" মিষ্টি! বাসায় আছো?"

আচমকা রোশনের কণ্ঠস্বর শুনে চমকাল মিষ্টি। নিজের মনের ভুল কি-না যাচাই করতে এক দৌড়ে সদরদরজার কাছে গিয়ে বাইরে উঁকি দিয়ে দেখলো। রোশন মেহেককে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সাথে লিমন, ফয়সাল। নিজের বোনকে এরকম অবস্থায় দেখে দিশেহারা লাগছে ওর। দৌড়ে উঠোনে গিয়ে মা'কে ডাক দিলো কয়েকবার। সিদ্দিক আহমেদ বাড়িতে নেই। 
" আপুর কী হয়েছে দুলাভাই? ও এমন কোলে কেনো!"
ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠেছে মিষ্টি। এরমধ্যে আনজুম বেগম হাতে সাবান মাখা অবস্থায় মেয়ের ডাকে হন্তদন্ত হয়ে পুকুর ঘাট থেকে দৌড়ে উঠোনে এসে দাঁড়িয়েছেন। 
" আগে ওকে ঘরে নেওয়ার ব্যবস্থা করো। ভীষণ জ্বর।"
" জামাই! মেহেকের কী হয়েছে? "
" ঘরে গিয়ে শুনবে। আগে আপুকে ওর ঘরে নিয়ে চলো।"
আনজুম বেগমের প্রশ্নের উত্তর মিষ্টি দিলো। তিনিও চুপচাপ রোশনের পিছু নিলেন। মিষ্টি আগে আগে হেঁটে মেহেকের ঘর কোন দিকে সেটা দেখিয়ে দিলো। মেহেককে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে পাশে বসলো রোশন। লিমন আর ফয়সাল সামনের বারান্দায় চেয়ারে বসেছে। আনজুম বেগম একফাঁকে শরবত দিয়ে এসেছে ওদের। 

" প্রায় সপ্তাহখানেক ধরে জ্বর, ঔষধ এনে খাইয়েছি। কিন্তু ডাক্তার ছাড়া কাজ হবে না মনে হচ্ছে।"

" কী বলো!"

" আপনি প্লিজ ডাক্তারের ব্যবস্থা করুন। এই অবস্থায় ও ডাক্তারের কাছে যেতে পারবে না। আপনারা ডাক্তার বাসায় আনার ব্যবস্থা করুন। টাকাপয়সা যা লাগে আমি দিচ্ছি। কিন্তু ওর চিকিৎসায় যেনো কোনো ত্রুটি না থাকে। "

আনজুম বেগম মেহেকের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। কিছুটা অভিমান বুকে চেপে রেখে বললেন, 
" মেয়েটা গেলো সুস্থ আর ফিরলো!"
" আহ মা! মানুষ কি অসুস্থ হতে পারে না বলো? এখানে থাকতে কি কখনো অসুস্থ হয়নি! দুলাভাই তো ডাক্তার দেখানোর জন্যই নিয়ে এসেছে। "

রোশনের কিছুটা গিল্টি ফিল হচ্ছে। নম্র কণ্ঠে শ্বাশুড়ির দিকে দৃষ্টিপাত করে বলে,
" মা আমার পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব ছিলো করেছি। আপনারা তো জানেনই, জঙ্গলে কোনো ডাক্তারকে নেওয়া সম্ভব নয়। "
" আমি ওর বাবাকে কল দিয়ে বলছি। ডাক্তারকে নিয়ে আসতে পারে কি-না। "
" পারে কি-না? পারতেই হবে! বেশি টাকার অফার করতে বলবেন বাবাকে। তারপরও না আসলে তুলে আনবো গিয়ে। "

রোশনের মৃদু হুমকিতে দমে গেলেন আনজুম। মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে স্বামীকে কল দিতে নিজের ঘরের দিকে এগোলেন। মিষ্টি বোনের পাশে বসে কপালে হাত ছুঁইয়ে জ্বরের তীব্রতা বোঝার চেষ্টা করছে। জ্বরের ঘোরে সবকিছু বুঝতে পারলেও কথা বলছে না মেহেক। শরীর খুব দূর্বল। মাথা ব্যথা সাথে আছেই! রোশন মেহেকের অন্য পাশে বসে মিষ্টির দিকে দৃষ্টিপাত করে। 

" মিষ্টি একটু জলপট্টির ব্যবস্থা করো তো। "

" ঠিক আছে দুলাভাই। আমি এখুনি ব্যবস্থা করছি। "

মিষ্টি তড়িঘড়ি করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। মেহেকের দু-চোখ বেয়ে জল পড়ছে। চোখ জ্বালাপোড়া করছে খুব। রোশনের বুকের ভেতর কেমন উথাল-পাতাল করছে সেই জল দেখে। দম বন্ধ বন্ধ লাগছে। হাত দিয়ে মেহেকের চোখের কোণ মুছে দিলো ও। মেহেককে বালিশ রেখে নিজের কোলে শুইয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয় রোশন। ভীষণ রাগ হচ্ছে নিজের উপর। আরো আগেই কেনো নিয়ে এলোনা এখানে? ভেবেছিল স্বাভাবিক জ্বর, প্যারাসিটামল খেলেই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু নাহ ঘটনা আলাদা। জঙ্গলের পরিবেশে তো মেহেক অভ্যস্ত না। সেজন্য হয়তো কিছু হয়েছে। লোকটার অস্থির মন নানান জল্পনা-কল্পনা করতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। 
" দুলাভাই এই যে, বাটিতে পানি আর রুমাল নিয়ে এসেছি।"
মিষ্টি পাশে বস বললো। রোশন কালক্ষেপণ না করে দ্রুত কপালে ভেজা রুমাল দিলো মেহেকের। 

দুপুরের কড়া রোদে উঠোনের একপাশে দাঁড়িয়ে আছে রোশন। ফয়সাল ও লিমনও দাঁড়িয়ে। ঘরে মেহেককে ডাক্তার দেখেছ। সিদ্দিক আহমেদ মোটা অংকের টাকাপয়সা দেওয়ার কথা বলে অবশেষে গ্রামের সবচেয়ে বড়ো ডাক্তার সিরাজুল ইসলামকে নিয়ে এসেছেন। ডাক্তার সিরাজুল ইসলাম বেশ কিছুক্ষণ মেহেককে দেখে পরিশেষে জানালেন, ব্লাড টেস্ট করতে হবে। খুব সম্ভবত টাইফয়েড হয়েছে মেয়েটির। পুরোপুরি নিশ্চিত হতে টেস্ট করানো দরকার। এখুনি চিকিৎসা না করালে জীবন-মরণ সমস্যা হতে পারে। আনজুম মিষ্টির হাত ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলেন ডাক্তারের কথায়। মিষ্টি ইশারায় চুপ করতে বলে মা'কে। 
" তাহলে বিকেলে হাসপাতালে নিতে হবে মেহেককে?"
" হ্যাঁ সিদ্দিক ভাই। কারণ বাড়িতে ওসব টেস্ট করার মতো ব্যবস্থা আমাদের এখানে তো নেই! "
" ঠিক আছে। বিকেলে নিয়ে যাবো। আমার মেয়েটা ঠিক হয়ে যাবে তো ডাক্তার সাহেব? "
বাবার আকুতিভরা টলটলে চোখের দিকে তাকিয়ে ডাক্তার সিরাজুল ইসলাম বললেন,
" একদম ঠিক হয়ে যাবে। শুধু একটু সময় লাগবে। চিন্তা করবেন না। "
" ঠিক আছে। "

মেহেক চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে আছে। সিদ্দিক আহমেদ ডাক্তারকে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন মাত্র। মিষ্টি আর আনজুম ঘরে দাঁড়িয়ে। 
" মিষ্টি! "
বোনের ক্ষীণ আওয়াজে চমকে ওঠে মিষ্টি। সাথে আনজুমও! তড়িঘড়ি করে পাশে বসে দু'জন। 
" কী হয়েছে আপু? কোথায় কষ্ট হচ্ছে তোমার? "
" মেহেক? এই মেহেক? মা আমার বেশি কষ্ট হচ্ছে? "
দু'জনার সম্মিলিত প্রশ্নের উত্তর দিতে সময় লাগলো মেহেকের। থেমে থেমে বললো,
" এমনিতে শরীর ব্যথা খুব, মাথা কেমন ভার হয়ে আছে। তাছাড়া ঠিক আছি এখন। বিকেলের পর সন্ধ্যায় আর হুঁশ থাকে না। তোমরা কেমন আছো? "

" আমরা ঠিক আছি রে। তোকে এতো কথা বলতে হবে না। মিষ্টি তুই মেহেকের কাছে বস। আমি জামাই আর ওর বন্ধুদের হাতমুখ ধোয়ার ব্যবস্থা করে, খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করি। দুমুঠো খেয়ে তারপর আবার হাসপাতালে যেতেও হবে। "

মেহেক চাইলেও কিছু বলতে পারলোনা। এই মুহুর্তে রোশনকে নিয়ে ক্ষেপে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি ওর নেই। মিষ্টিও মায়ের কথায় মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে বসে রইলো। 

লিমন আর ফয়সাল গোসল করলোনা। ওরা বিকেলেই ফিরে যাবে, নৌকা পাবে না তখন। তাই নদী সাঁতরে যেতেই হবে। অযথা এখন গোসল না করে তাই হাতমুখ ধুয়ে নিলো দু'জন। রোশন গোসল সেড়ে মেহেকের ঘরের দিকে এগোলো। আনজুম এরমধ্যে মিষ্টিকে ডেকে পাঠিয়েছেন। একা হাতে সব খাবার খাওয়ার ঘরে নিয়ে যাওয়া মুশকিল! সিদ্দিক আহমেদ মেয়ের সাথে কথাবার্তা বলে গোসল করতে পুকুর ঘাটের দিকে গেছেন একটু আগে।

ভেজা চুলগুলো কপালে ঝুলছে রোশনের। টপটপ করে পানি ঝরছে চুল থেকে। তোয়ালে কাঁধে নিয়েই মেহেকের পাশে বসেছে সে। অর্ধনগ্ন শরীরে, লুঙ্গি আর কাঁধে তোয়ালে থাকায় মেহেকের কাছে লোকটাকে বেশরম ছাড়া আর কিছু মনে হচ্ছে না। 

" এখন কি একটু ভালো লাগছে সুন্দরী? এমন ড্যাবডেবে চোখে তাকিয়ে আছো যে!"

রোশনের দুষ্ট হাসির ঝিলিকে মেহেকের কপাল কুঁচকে গেলো। সাথে ভ্রু উঁচিয়ে সে বললো,

" দেখার মতো কিছু থাকলে তো দেখবো? সবাই দেখেছে যা তা আমি কেন দেখবো? নেহাৎ এটা আমার বাবার বাড়ি, তাই চিল্লাতে পারছি না। "

রোশান মেহেকের মুখের উপর ঝুঁকে দু-হাত বালিশের দুইপাশে রেখে মুচকি হাসলো। এরমধ্যে রোশনের চুল থেকে কয়েক ফোঁটা পানি চুইয়ে পড়লো মেহেকের ললাটে। বিরক্ত লাগছে ওর। 

" সবাই যা দেখেনি সেসব দেখতে চাও তুমি? তাহলে দেখাই?"

পাশ ফিরে শুয়ে রোশানকে সরাতে চাইলো মেহেক। কিন্তু শরীর দূর্বল হওয়ায় পারলোনা। রোশন নিজে থেকেই উঠে দাঁড়ালো। 

" আমার কিছু দেখার ইচ্ছে নেই। আপনি যান এখন, খেয়ে আসুন।"

তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে রোশান ফিক করে হেসে উঠলো। 
" কেয়ার করলে! খেয়ে আসতে বললে সুন্দরী? "
" মোটেও না! এখান থেকে সরানোর জন্য বলছি। "
" তাহলে ঠিক আছে। আমিও ভাবছিলাম, ভুতের মুখে রামনাম! "



চলবে...........................
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।