উন্মুক্ত লাইব্রেরী
পর্ব ০২
আয্যাহ সূচনা
পুরান ঢাকার বেশিরভাগ বিল্ডিংয়ের দালান কোঠার অবস্থা নাজুক।প্রায় অর্ধেকই পুরোনো আমলের।এখন যদিও আধুনিকতার ছোঁয়ায় অনেকটা বদলেছে তবে ঐতিহ্য বজায় আছে যথেষ্ট।সেই দালানের ছাদেই পটু হাতে নাটাই আর সুতো।সামনের ঘুড়িকে যে করেই হোক কাটতেই হবে।নয়তো নাক কাটা যাবে বর্ণের।এলাকায় এক নামে চেনে সকলে বর্ণকে।তার ছন্নছাড়া, বাউন্ডুলে জীবনযাপনের জন্য।উচ্চবিত্ত মানুষ থেকে শুরু করে চায়ের দোকানদার অব্দি তার চেনা জানা।এখানেই জন্ম এখানেই বেড়ে উঠা।এটাই তার পরিচয়। মোকলেস মাতবরের একমাত্র ছেলে জনি।তার সাথেই একমাত্র রেষারেষি।বড়লোক বাপের রংবাজ ছেলে বলে আখ্যায়িত।আর বর্ণের জাত শত্রু।পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সাব্বির এর হাতে নাটাই দিলো বর্ণ।বললো,
“টাইট দিয়া ধর সাব্বির।”
সাব্বির ছেলেটা হ্যাংলা পাতলা।বয়স সতেরোর কোঠায়।ভাইয়ের উত্তেজিত গলায় শরীরের সব শক্তি দিলো।কথামত ঢিল দিচ্ছে আর ধরছে।সর্বশেষে আরো একবার এর মতো বিজয় বর্ণের কাছেই আসে।একটানে জনির ঘুড়ি কেঁটে লম্বা হাসে।পরপর এক ছাদ থেকে অন্য ছাদে লাফিয়ে গিয়ে রাগান্বিত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা জনির গাল টেনে বললো,
“কিরে জইন্না!আমি হইলাম ঘুড়ি উড়ানোর মাস্টার। বারবার ইজ্জতের ফালুদা করতে কেন আহোস?”
জনি বর্ণের হাত সরিয়ে দেয় ঝাড়া দিয়ে।ভীষণ রেগে আছে সে।প্রতিবার এই বখাটেটার কাছে হেরে যেতে হয় তাকে।এবারের হার সহ্য হচ্ছে না। ধেই ধেই করে সিঁড়ি বেয়ে ছাদ থেকে নেমে গেলো।বর্ণ পড়ে থাকা ঘুড়ি দুটো হাসতে হাসতে হাতে তুলে নিলো।আবারো রেলিং টপকে সাব্বির এর সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো,
“এই ঘুড়ি তোর যা নিয়া যা”
“আচ্ছা ভাইজান।”
“এই খাড়া”
“জ্বি ভাইজান?”
“তোর মা আজকে কি রাঁনছে?”
সাব্বির জবাব দিলো, “ভাইজান মায় আজকা লাল শাক রানছে আর শুটকি ভর্তা।”
বর্ণ ঝুঁকে এলো।সাব্বিরের কানে কানে বললো,
“তোরে দুইটা ঘুড়ি দিছি।এর বিনিময়ে আমারে গরম গরম ভাত,লালশাক আর শুটকির ভর্তা খাওয়াবি। নাইলে কিন্তু ঘুড়ি পাবি না কইলাম”
সাব্বির ছেলেটা বাধ্য আর ভীষণ ভালোবাসে বর্ণকে। ঘুড়ি রেখে কোনোদিকে তোয়াক্কা না করে দৌঁড় লাগায় ঘরের দিকে।ভাই আজ নিজ থেকে কিছু খেতে চেয়েছে।তাকে খালি মুখে ফিরাবে না কোনোভাবে।দরকার পড়লে নিজের ভাগেরটুকু খাওয়াবে বর্ণকে।
বর্ণ খাবার চেয়েছিলো।তাকে ডেকে নিয়ে খাইয়েছেন সাব্বির এর মা।বেশ আদর যত্ন করে।পেট পুরে ভাত খাওয়ার পর মনে পড়লো আবার যেতে হবে গাধার খাটুনি খাটতে। গার্মেন্টস এ এই এক ঝামেলা।সারারাত বসে বসে কার্টনে মালপত্র রাখতে রাখতে মাথা এদিক ওদিক হয়ে যায়।চায় না এসব কিছুই করতে।ভার লাগে মাথাটা।কিন্তু পেটের দায়ে করাই লাগবে কোনো উপায় নেই। ম্যাজম্যাজে একটা মেজাজ নিয়ে ছাদ ঘর থেকে নামার পূর্বেই সামনে এসে দাঁড়ায় এক মেয়ে।ওড়না আঙুলে পেছাচ্ছে মুখের ভঙ্গি লাজে রাঙানোর এক ব্যর্থ চেষ্টা।মনে মনে বর্ণ ধরেই নিলো এসেছে তার সময় নষ্ট করতে।ন্যাকা ভঙ্গিতে বললো,
“কি খবর বর্ণ?”
“খবরতো একদম ফার্স্ট ক্লাস চা-দিয়া”
মুখ কুঁচকে মেয়েটি বললো, “আমার নাম সাদিয়া।চাদিয়া না”
বর্ণের মাথায় জঘন্য এক ছন্দ আসছে তার নামের সাথে মিলিয়ে।সেটা মনেই রাখলো।এই আরেক মেয়ে!ঘুরে ফিরে বর্ণের পেছনেই আঠার মতো লেগে থাকে।লাজুক হেসে সাদিয়া বললো,
“আব্বাজানে তো আমার লিগা পোলা দেখতাছে।”
“ভালো খবর!দাওয়াত দিবা না?”
মুখ লটকে যায় সাদিয়ার।অভিমানী সুরে বললো, “আমিতো তোমারে বিয়া করবার চাই।”
মুখ ভঙ্গি অদ্ভুত করে বর্ণ বলে উঠে, “এহহে!”
“কিহ?”
“না কিছুনা”
“তুমি আব্বাজান এর কাছে আইয়া আমার হাত চাও না। বিয়ার পর আমরা আমগো বাসায় থাকুম।”
“হ কথা তুমি ঠিক কইছো।কিন্তু একটা যে সমস্যা আছে”
সাদিয়া উদ্বিগ্ন গলায় জানতে চায়, “কি সমস্যা?আমারে কও।আমি আব্বারে বুঝাইয়া তোমার সমস্যার সমাধান করামু”
বর্ণ হতাশ হয়ে বলতে লাগলো, “ওরে চাদিয়ারে!এই সমস্যা তোমার বাপজানও সমাধান করতে পারবো না।”
“সমস্যাটা কি কইবা?”
“আমিতো…কেমনে যে কই!”
“কও না?”
“আমি জীবনেও বাপ হইবার পারুম না। সিস্টেমের মেইন জায়গায় একটু সমস্যা আছে।তুমি অন্য একটা ভালো দেইখা পোলা বিয়া কইরা ফালাও।দুআ করলাম একশোটা বাচ্চার মা হইবা।”
_________
“আব্বা!এই বর্ণ কিন্তু বেশি উড়া উড়তাছে।ওর পাংখাগুলি কাইটা দাও না কেন?”
পান কৌটা থেকে একটি পান মুখে দিয়ে মোকলেস মাতবর।ছেলের দিকে চাইলেন নির্নিমেষ। ভাবভঙ্গি বুঝা দায়। জনি রেগেমেগে আগুনের গোলা হয়ে আছে।কোনো উত্তর না পেয়ে আবার প্রশ্ন করলো,
“আব্বাজান কথা কন না কেন?”
“কি কমু!তোগো দুইদিন পরপর এই কীর্তি কারবার আমার দেখবার মন চায় না।আইজকা কি লইয়া লাগছোস?”
“আমার ঘুড্ডি কাটছে আব্বাজান”
শিশুবৎ আচরণে ক্ষেপে গেলেন মোকলেস সাহেব
বয়স বাইশ এর কাছাকাছি এই ছেলের।একটা ঘুড়ি নিয়ে এমন করছে?এতটা রেগে যাচ্ছে? নেহাতই বুড়ো বয়সে বাচ্চাদের মতন আচরণ।
“বন চটকোনা খাস না কবে থিকা আমার হাতে? বড়সড় কোনো ক্যাঁচাল হইলে আমারে কইবি।এর আগে এই খোমা নিয়া আমার সামনে আইবি না কইয়া দিলাম।”
“আব্বাজান আপনি আজকাও ওই মাদারী বর্ণের সাপোর্ট টানলেন?আপনি না আমার আব্বাজান।”
“আমিও মাঝেমধ্যে ভাইবা বিভীষিকায় পইড়া যাই আমার মতন একটা লোকের ঘরে এই কুকর্মা জন্ম নিলো কেমতে?ব্যবসা বাণিজ্যের কোনো খোঁজ খবর আছে নিহি নাকি সব বুড়িগঙ্গায় ভাসায় দিয়া আইছো?”
জনির রাগ হচ্ছে বাবার কথায়।যেনো বর্ণের দোষটা সে জনির ঘাড়ে চেপে দিয়ে তাকে দেমাগ দেখাচ্ছেন। ফোঁসফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে জনি বললো,
“আমিও জনি ইবনে মোকলেস মাতবর।ব্যবসাও দেহুম লগে ওই কুলাঙ্গার বর্ণর চ্যাপ্টারও এক্কেরে ক্লোজ কইরা দিয়া আহুম।”
চলে যাচ্ছে জনি ঘর ত্যাগ করে।পেছন থেকে মোকলেস হোসেনের চেঁচানোর আওয়াজ উচুঁ থেকে উচুঁতর হয়। মোকলেস মাতবর বলছেন,
“বর্ণের লগে লাগিস না জনি। ওয় তোরে ছাইড়া দিবো না।”
_________
ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে তাড়াহুড়ো করেই যাচ্ছিলো অন্বেষা।দ্রুততম সময়ে অফিসে পৌঁছাতে হবে।নাহয় প্রতি ঘন্টার বেতন কাটা হবে তার। ঘন্টায় একশো টাকা। একশো টাকা দিয়ে ঢাকা শহরে একদিন খেয়ে বাঁচা যায়।একশো কেনো এক পয়সাও কম পাক সেটা সহ্য হবেনা।যেখানে হেঁটে যেতো সেখানে আজ রিকশা নিবে।ত্রিশ টাকা রিকশা ভাড়া।একশো টাকা বাঁচাতে ত্রিশ টাকা বিসর্জন।লস প্রজেক্ট মনে হচ্ছে না এখন বিষয়টা। তাড়াহুড়োর কাজ শয়তানের।নীলক্ষেত মোড়ে দেখা মিললো তার রুমমেটদের সাথে।রুম্পা এবং ঝুমা। অন্বেষা তাদের দেখে স্মিত হাসি উপহার দিলেও তারা মুখ কুচকায়। অন্বেষার মন খারাপ হলো।তারা কেনো করে এমন?কিসের এত ভেদাভেদ?তাদের এড়িয়ে চলে যেতে নিলে ঝুমা আকস্মিক পা এগিয়ে দিলো।ভিড়ের মাঝে রুম্পা ওড়না টানে অন্বেষাকে বাজে পরিস্থিতে ফেলতে।ভরা রাস্তায় বুকে ওড়নাবিহীন ভারী মুখ থুবড়ে পড়ে যাওয়া এক রমনীর তামাশা দেখার জন্য অধীর আগ্রহে চেয়ে ছিলো দুজনে তবে সেটা সম্ভব হলো না। একজোড়া হাত তাকে পুরোপুরিভাবে বুকে আবদ্ধ করে সামলে নিয়েছে।কৌশলে ওড়নাটাও ঠিক করে দিলো।সকলের চোখের অগোচরে।
পুরুষলোকের বাহুতে এভাবে পড়ে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে না অন্বেষা। বরঞ্চ অসস্তি হচ্ছে।তাল সামলাতে না পেরে লোকটার শার্ট খামচে ধরেছিল।ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতেই আরেকদফা চমক।এতো সেই উন্মুক্ত লাইব্রেরীর ছেলেটা।দুজনের চোখাচোখি হলে বর্ণ ভ্রু নাচিয়ে ‘কি’ প্রশ্ন করে।মুখে হাসি।নিজেকে সামলে পাশে তাকাতেই দেখলো ঝুমা আর রুম্পা উল্টো ঘুরে হাঁটা দিচ্ছে।বর্ণ দুয়েক কদম এগিয়ে গেলো।বললো,
“এই চুন্নী মুন্নী?কই যাও!”
ভ্রু কুচকে ফিরে তাকায় ঝুমা আর রুম্পা।তাদের উদ্দেশ্য করেই বলা হয়েছে এসব কথা।বর্ণ আরো এগিয়ে যায়।দুজনের সামনে দাঁড়িয়ে পকেটে হাত গুঁজে বললো,
“মাইয়া মানুষের রগে রগে হিংসামি আর শয়তানী।”
রুম্পা রেগে বলে উঠলো, “হু দ্যা হেল ইউ আর?”
“মাইরি ইংলিশ কয় দেহি!”
অন্বেষার দিকে চেয়ে বিদ্রুপূর্ণভাবে বললো বর্ণ। অন্বেষা কেনো যেনো হাসি আটকাতে পারলো না।মুখ চেপে হেসে উঠলো।
“এক ব্যাটায় কইছিলো মাইয়া মানুষ মাইয়া মানুষের সবচেয়ে বড় দুশমন।আজকে এটা ঠিক প্রমাণ করলা চুন্নী মুন্নী। তা এই অবলা বেটি কি তোমাদের ভাতে কালা রঙের ছাই দিছে?ওরে ধাক্কা দিলা কেন?”
ঝুমা জবাব দেয়, “কে ধাক্কা দিয়েছে?”
“তোমার মাননীয় ঠ্যাং”
পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে দুজনের।ছেলেটাকে দেখে সুবিধের মনে হচ্ছে না।তারপরও রুম্পা বললো,
“বললেই হলো!আমরা কেনো যাবো ওকে ধাক্কা দিতে?খেয়ে পড়ে কোনো কাজ নেই আমাদের?”
“মনেতো হয়না”
“জাস্ট রাবিশ!”
বর্ণ অন্বেষার দিকে ঘুরে তাকালো।আঙুলের ইশারায় ডাকলো হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটাকে। অন্বেষা এগিয়ে আসে।বর্ণ বলে,
“ইংরেজ এর বংশধর!পতন ঘটছে বহু আগে এই দুইটারে মনে হয় ভুলে এই দেশে ফালায় রাইখা গেছে।”
অন্বেষার হাসি অবশিষ্ট নেই। মুখজুড়ে একরাশ বিস্ময়।ছেলেটার সাথে তার প্রথম দেখা এবং কথা অন্যরকম ছিলো।ভালো নয় বলতে গেলে।তর্ক হয়েছে দুজনের।একে অপরের দিকে তীর ছুঁড়েছে।দ্বিতীয় দেখা অনেকটাই শালীন।তর্কবিহীন; ঝামেলাহীন। আজ তাকে সাহায্য করলো।তার হয়ে লড়ছে।বর্ণ কিছু সময় একাকী হাসে।ঝুমা আর রুম্পা রেগে যাচ্ছে অনেকটা।হাসি থামিয়ে বর্ণ দাম্ভিক ভাব তাকে মুখে এবং কণ্ঠে।ঝুমা আর রুম্পার উদ্দেশ্যে বললো,
“আমি মানুষরে উপদেশ অনেক কম দেই।এতে নিজের জ্ঞান কইমা যায়।কিন্তু চুন্নী মুন্নী তোমাদের জ্ঞানের অনেক দরকার তাই নিজের ভান্ডার থিকা একটু দেই”
রুম্পা কোলাহলময় রাস্তায় বাজখাই গলায় বলে উঠলো,
“এই আপনার জ্ঞানের আমার প্রয়োজন নেই।ঝুমা চল!”
“আরেহ মাইয়া দাঁড়াও।বর্ণ বাবার জ্ঞান সভা থিকা কেউ খালি মগজে ফিরা যায় না। ঠাইসা জ্ঞান দেই।যেহেতু মগজের সিন্দুক খুলছি দিয়াই ছাড়মু। এহন শুনো”
কপাল কুঁচকে দুজনই চোখ কটমট করে চেয়ে আছে বর্ণের দিকে।বর্ণ বলতে লাগলো,
“মাইয়া মানুষের ইজ্জত হইলো অনেক দামী।দুনিয়া গোল একজনের ইজ্জত নিলামে তুললে আরেকদিন আরেকজন তোমার ইজ্জত নিলামে তুলবো।এটা ছোট্ট খুপড়ির সাইজের মগজে তালা মাইরা নাও।এগুলারে ইংরেজিতে গোল্ডেন ওয়ার্ড কয়।বর্ণের গোল্ডেন ওয়ার্ড”
“বস্তি কোথাকার!”
ঝুমা বর্ণের পোশাক এর দিকে চেয়ে বললো।সহজেই বিচার করে ফেলেছে।বর্ণ প্রতিবাদে কিছু বললো না। অর্ধ চন্দ্রের ন্যায় বাঁকা হেসে বলে,
“বস্তি কিন্তু রক্তে ভেজাল নাই।কিন্তু তমগো নিয়তে ভেজাল আছে।আইতে পারো”
ঝুমা আর রুম্পা প্রস্থান করেছে। দাঁড়িয়ে শুধু বর্ণ আর অন্বেষা।একে উপরের মুখোমুখি হয়ে উভয়েই হাসলো।তবে স্মিত হাসি অন্বেষার। সংকোচ আর দ্বিধার মাঝে জর্জরিত।প্রাণবন্ত বর্ণের হাসি মুখ। অন্বেষা বললো,
“ধন্যবাদ আপনাকে”
“দরকার নাই” টুথ পিক দিয়ে দাঁত খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বললো বর্ণ।
“কেনো?”
“আপনি আমার উপরে আইসা পড়ছেন।আমার পায়ের উপর পারা দিছেন।ব্যথা পাইছি তাই মাইয়া দুইটারে কষ্ক সাবান দিয়া হালকা একটা ঘষা দিলাম।অন্তরের জ্বালা মিটছে।”
অন্বেষা মৃদু বিচলিত কণ্ঠে বলে উঠে, “দুঃখিত”
বর্ণ কপাল কুঁচকে হুট করে বলে উঠে, “আরেহ বাপ!আপনিতো আরো বড় জ্বালা।একবার ধন্যবাদ কন আবার দুঃখিত।”
হতবিহ্বল অন্বেষা প্রশ্ন করে, “তো কি করবো?”
“যেদিকে যাইতাছিলেন যান।চায়া আছেন কেন?”
উদাস হয়ে অন্বেষা বলে উঠলো, “আর কি লাভ!দেরি হয়ে গেছে।”
বর্ণ শুনতে পায়নি কথাটি।জানতে চেয়ে বলে, “হুম?”
“না কিছুনা আসি”
নীলক্ষেত মোড়ের দিকে চলে গেলো অন্বেষা।রাস্তা পাড় করতে হবে।ফুট ওভারব্রিজে যাওয়ার ইচ্ছে নেই তার।উল্টো খাটুনি।ততক্ষণে রাস্তা দিয়ে পাড় হয়ে রিকশা নিয়ে অফিসে পৌঁছে যাবে সে যতক্ষণে ফুট ওভার পাড় হবে।বিপত্তি বাঁধলো বেগতিক গাড়ির চলাচলে।রাস্তা পার হতে পারছে না। এভাবেতো তাড়াতাড়ি নয় আরো দেরি হবে। ফুট ওভার ব্রিজে যাবে কি?ভাবনা চিন্তার মধ্যে সেই ছেলেটির দেখা আবার।তার চেয়ে একটু সামনে দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে ইশারা করছে তার সাথেসাথে আসার জন্য।অন্বেষা বুঝলো।হাঁটতে গিয়েও পা পেছনে নিয়ে যাচ্ছে রিকশার এলোমেলো চলনে।বর্ণ কোনো উপায় খুঁজে পেলো না মাঝরাস্তায়।এক কাঁধে ঝুলানো ব্যাগটার ফিতা ধরে গরুর মত টেনে নিয়ে তাকে রাস্তা পাড় করিয়ে দেয়।
“মাইয়া মানুষ আসলেই একটা বিদিক বুঝলেন!”
মুখ ছোট করে ফেলে অন্বেষা।ভুল তারই ছিলো।সামান্য রাস্তা পাড় হতে এত কাহিনী।বর্ণ বললো,
“যান এবার”
অন্বেষা মাথা দুলিয়ে পা এগোয়।কোমরে দুহাত রেখে বর্ণ চেঁচিয়ে বলে,
“সাবধানে চোখ মেইলা তারপর হাঁইটেন। চেগায়ে মইরা থাইকেন না আবার।সব জায়গায় বর্ণরে পাইবেন না সাহায্যে করতে”
চলবে….....................