আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

আরোরা - পর্ব ০৭ - সিজন ২ - তাসমিয়া তাসনিন প্রিয়া - ধারাবাহিক গল্প


#আরোরা (সিজন ২)
#পর্ব_৭
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া



আরোরা কালক্ষেপণ না করে দ্রুত এগিয়ে গেলো। এডওয়ার্ডের পাশে বসে কলসি থেকে ধীরে ধীরে তরল ঢালতে লাগলো ওর মুখে। কিন্তু এডওয়ার্ডের শরীরের অবস্থা এতটাই দূর্বল যে পানিও খাচ্ছে না। হেলগা কাঁদছেন। ম্যাক আর সাঁচিও চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে আছে। জোহানসন কক্ষে প্রবেশ করেন এসময়। 

" কী হচ্ছে এখানে? আরোরা কী পান করাচ্ছে আমার পুত্রকে?"
জোহানসন হেলগার কাছে এগিয়ে এসে শুধালো। হেলগা সবকিছু বলতে পারবেনা এখন। তাই সংক্ষিপ্ত কথায় বলেন,
" ঔষধ খাওয়াচ্ছে। প্রার্থনা করুন এখন,যাতে আমাদের পুত্র সুস্থ হয়ে উঠে। "
জোহানসন স্ত্রীর কাঁধে হাত রেখে মাথা দুলিয়ে চুপ করে দাঁড়ান। আরোরার অস্থির লাগছে এবার। রাত শেষ প্রায়! কিন্তু এডওয়ার্ড তো পানি গিলছে না। সবটুকু পানি ঠোঁটের পাশ থেকে গড়িয়ে পড়ে যাচ্ছে। যেভাবেই হোক এডওয়ার্ডের হৃদয় অর্থাৎ হৃদপিণ্ডে সঞ্জীবনী প্রবেশ করাতে হবে। তবেই এই বিশের প্রতিক্রিয়া কমবে ওর শরীর থেকে। 
" কী হয়েছে আরোরা?"
ম্যাকের প্রশ্নে আরোরা ম্লান কন্ঠে বলে, 
" এডওয়ার্ড জল পান করছে না। শরীরে কোনো শক্তি অবশিষ্ট নেই ওর। "
" তাহলে কী করবে এখন?"
আরোরা এডওয়ার্ডের পাশ থেকে উঠে দাঁড়ালো। ম্যাকের কথার উত্তর দিলো না। জোহানসন ও হেলগা ওর দিকেই অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। 
" বাবা-মা আপনারা আমাকে বিশ্বাস করেন?"
আচমকা আরোরার এমন প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেছে সবাই। কিন্তু সত্যি বলতে আরোরাকে একটু আগেও অবিশ্বাস করতো এডওয়ার্ডের বাবা-মা। কিন্তু এখন পুরোপুরি বিশ্বাস না করলেও অবিশ্বাসও করেন না।
" হ্যাঁ। কিন্তু এই সময় এ ধরনের প্রশ্ন কেনো আরোরা?"
" বাবা এডওয়ার্ডের পক্ষে এখন জল শুষে নেওয়া সম্ভব না। তাই আমাকে অন্য কিছু করতে হবে। আমি যা করবো ওর ভালোর জন্য করবো এতটুকু বিশ্বাস রাখুন শুধু আপানরা। সময় নেই, এখুনি করতে হবে। "
আরোরার হেয়ালির মানে কেউ বুঝতে পারছে না। কী করবে ও? আরোরা এডওয়ার্ডের পাশে গিয়ে বসেছে আবারো। চোখ বন্ধ করে কিছু একটা যপ করতেই আরোরার ডান হাতের নখগুলো অস্বাভাবিকভাবে বড়ো হতে লাগলো। এতটা বড়ো আর তীক্ষ্ণ নখ দেখে সবাই চমকে যাচ্ছে। সময় নিলো না মেয়েটা। এডওয়ার্ডের ঠিক বুকের বাম পাশে হৃদপিণ্ড বরাবর একটা আঙুল রেখে চোখ বন্ধ করে ফেললো। মুহুর্তেই আঙুল মাংস ভেদ হয়ে পাজর ছেদ করে দিলো। একটু নড়ে উঠলো এডওয়ার্ডের নিশ্চল দেহটা। আঁতকে উঠল সবাই। হেলগা দৌড়ে আসতেই যাবে কিন্তু জোহানসন আঁটকে দিলো। আরোরা চোখ মেলে তাকিয়ে অন্য হাত দিয়ে কলসি থেকে একফোঁটা সঞ্জীবনী এডওয়ার্ডের বক্ষ ছিদ্রে দিলো। তখনও আরোরার আঙুল এডওয়ার্ডের শরীরের ভেতর। কিন্তু সঞ্জীবনী ওর শরীরে প্রবেশ করতেই খুব সাবধানে আঙুল বের করে ফেললো। আশ্চর্যজনকভাবে সাথে সাথে মাংস মিলে গিয়ে ছিদ্রটা অদৃশ্য হয়ে গেলো এডওয়ার্ডের শরীর থেকে। জোহানসন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। হেলগা চোখ বন্ধ করে ছিলো এতক্ষণ। স্বামীর লম্বা নিঃশ্বাস ফেলায় চোখ মেলে তাকাল। এডওয়ার্ডের শরীর থেকে আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে। হেলগা ব্যতিব্যস্ত হয়ে শুধালো, 
" এটা কী হচ্ছে আরোরা! এডওয়ার্ডের শরীর থেকে এসব কী? কেনো হচ্ছে এমন! "
" আপনার ছেলের শরীরের সমস্ত বিষ হৃদপিণ্ডে জমা হচ্ছে। এই অমৃত জল সবটুকু বিষ শুষে নিবে। একটু অপেক্ষা করতে হবে শুধু মা। "
" ঠিক আছে আরোরা। আমরা সবাই অপেক্ষা করছি।"

আলোর বিচ্ছুরণ সমাপ্ত হতেই এডওয়ার্ড নড়েচড়ে উঠতে লাগলো। হেলগার ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে উঠেছে। দ্রুত ছেলের পাশে এসে বসেছেন তিনি। এডওয়ার্ডের জ্ঞান ফিরছে আস্তে আস্তে। মিনিট পাঁচেক লাগলো সম্পূর্ণ জ্ঞান ফিরতে। ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন হেলগা। আরোরাসহ সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে এডওয়ার্ডের দিকে। এডওয়ার্ড চোখ মেলে তাকাল৷ মায়ের হাসি হাসি মুখটা দেখেই প্রাণ জুড়িয়ে গেলো ওর। এবার আশপাশে সবাইকে দেখছে এডওয়ার্ড। আরোরাকে দেখে মনে শান্তি পেলে ছেলেটা। 

" এডওয়ার্ড! ঠিক আছিস এখন বাবা? "
" ঠিক আছি আমি মা।"
এডওয়ার্ড নিজে থেকেই উঠে বসলো। হেলগা একটু বিচলিত হচ্ছেন দেখে আরোরা বলে,
" চিন্তার আরকিছুই নেই। ওর সমস্ত দূর্বলতা কেটে গেছে এখন।"
" হ্যাঁ মা-বাবা, আমি এখন একেবারে সুস্থ হয়ে গেছি। আমি দুঃখিত তোমাদের চিন্তায় ফেলার জন্য। "
" দোষ তোমার নয় এডওয়ার্ড। এর পিছনে অন্য কারো হাত ছিলো। আমি নিশ্চয়ই খুঁজে ছাড়বো কে করেছিল এই জঘন্য কাজ। "
জোহানসন এডওয়ার্ডের কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়ে বললেন। আরোরা বলে,
" সেটা আমিই করছি বাবা। সামনে তাকান শুধু আপনি। "
আরোরার কথামতো সবাই সামনে তাকাতেই একটা দৃশ্য ভাসতে লাগলো দেয়ালে। সঞ্জীবনী পান করাতে আরোরা আগের তুলনায় আরো শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। এছাড়াও অতীতে সংঘটিত সকল কিছু ওর শক্তির মাধ্যমে এখন দেখাতে পারবে। সবাই সবকিছু দেখে হতবাক হয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত কিয়াম! ম্যাকের বাবা সাবেক সেনাপতি করেছে এই জঘন্য অপরাধ। জোহানসন ভীষণ রেগে গেছে। ম্যাকও রাগান্বিত হয়ে কক্ষ ত্যাগ করেছে। বাবা বলে কোনোভাবেই ছাড় পাবে না কিয়াম। হেলগা জোহানসনকে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে । সবার উদ্দেশ্য এখন কিয়ামকে শাস্তি দেওয়া। এডওয়ার্ড এবং আরোরাও যাবে কিন্তু তার আগে আরোরাকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে নিলো এডওয়ার্ড। 
" কী করছ! চলে গিয়ে দেখি বাইরে। "
" হ্যাঁ যাবো। কিন্তু তার আগে তৃষ্ণাতুর বুক টাকে একটু ঠান্ডা করি। "
" তার জন্য আজীবন পড়ে আছে। "
" সত্যি? "
" হ্যাঁ সত্যি! "
" বেশ। চলো তাহলে। "
এডওয়ার্ড, আরোরাকে নিয়ে কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেলো। 

সূর্য উঠেছে পূর্ব আকাশে। নতুন ভোরের আগমন বার্তায় পাখপাখালির গুঞ্জন ভেসে আসছে আশেপাশ থেকে। প্রাসাদের মূল ফটকের বাইরে হাতপা বেঁধে রোদের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে বিশ্বাসঘাতক কিয়ামকে। মৃত্যুদণ্ড নয় আরোরার নির্দেশে এভাবেই শাস্তি দেওয়া হচ্ছে কিয়ামকে। মৃত্যুর চেয়েও ভয়াবহ শাস্তি হচ্ছে পরপর তিনদিন এভাবে রোদে দাঁড়িয়ে থাকা। যদিও কিয়াম অনেকবার ক্ষমা প্রার্থনা করেছে কিন্তু তবুও কেউ ছাড় দেয়নি ওকে। এডওয়ার্ড সবার প্রিয়, এই রাজ্যের রাজা। রাজাকে হত্যা করতে চাওয়ার পরেও যে বিনা শাস্তিতে ছেড়ে দিবে এটা তো হয় না। ম্যাক নিজেও চেয়েছিল ওর বাবার শাস্তি হোক। আগে থেকেই এডওয়ার্ডের প্রতি কিয়ামের মনে বিষ ছিলো। আজকের দিনে এসে কালের পরিক্রমায় সত্যি সেই বিষ এডওয়ার্ডের প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছিল ।

ঘুম ভাঙতেই আরোরাকে নিজের বুকের উপর শুয়ে থাকতে দেখে কিঞ্চিৎ অবাক হয়েছে এডওয়ার্ড। গতকাল রাতে সবকিছু মিটিয়ে বিছানায় এসে তো দু'জন আলাদা আলাদা শুয়েছিল! তাহলে কি সত্যি আরোরা এবার দূরত্ব ঘুচিয়ে কাছাকাছি আসতে চাচ্ছে? মুহুর্তেই এডওয়ার্ডের মন চনমনে হয়ে উঠলো । আরোরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো একবার। নড়েচড়ে উঠলো তাতে মেয়েটা। সেটা দেখে আরো একবার মাথায় হাত ছুঁইয়ে দিলো এডওয়ার্ড। ফলশ্রুতিতে আরোরার ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম ঘুম চোখে এডওয়ার্ডের দিকে তাকিয়ে বলে,
" ঘুমোতে দাও একটু, জ্বালিও না।"
এডওয়ার্ড থমকে গেছে আরোরার চাহনি দেখে। কী দারুণ লাগছে নিজের স্ত্রী'কে সেটাই ভাবলো মিনিটখানেক। তারপর ফের মাথায় হাত দিয়ে বললো,
" আমি জ্বালাচ্ছি? জ্বালিয়েছ এতদিন তুমি আমাকে। আজ সবকিছু মেটানোর সময় হয়ে গেছে। "
এডওয়ার্ডের হাসি হাসি মুখে দুষ্ট কথা শুনে শোয়া থেকে উঠে বসলো আরোরা। হাত দিয়ে চোখ ঢলে পিটপিট করে তাকাল একবার সামনের দিকে। রয়েসয়ে বললো,
" পারলে মেটাতে এসো সবকিছু। "
এডওয়ার্ড আধশোয়া হয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলে, 
" হু হু ক্ষেপাচ্ছ? ভালোই! তাতে অবশ্য আমারই লাভ। "
" আমারও লাভ, লস নেই কোনো। "
আরোরা মুচকি হেসে বিছানা থেকে নামতে চাইলে এডওয়ার্ড হাত ধরে আঁটকে ফেলে। শোয়া থেকে উঠে বসে আরোরাকেও নিজের কোলে বসালো এডওয়ার্ড। 
" লাভলেস এর হিসাব করে কই যাচ্ছ? আগে হিসেব মিটিয়ে নেই তারপর...... "



চলবে...........................
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।