আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

নীরবে নিভৃতে - পর্ব ২৬ - তাসমিয়া তাসনিন প্রিয়া - ধারাবাহিক গল্প


" মেহেক মা, কী করছিস?"
ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে শুধলেন সিদ্দিক আহমেদ।রাতের খাওয়াদাওয়া শেষে নিজের বিছানায় বসে আছে মেহেক। বসে বসে রোশনের কথা ভাবছিল মেয়েটা। হঠাৎ বাবার আগমনে ভাবনায় ছেদ ঘটে। বসা থেকে দাঁড়িয়ে মৃদু হেসে বলে মেহেক,
" কিছুই না! ভেতরে এসো বাবা।"
সিদ্দিক আহমেদ মেয়ের কথামতো ঘরে প্রবেশ করে চেয়ার টেনে বসলেন। মেহেক দাঁড়িয়ে। কেমন একটা থমথমে পরিবেশ! মেয়ের নীরবতা ভালো লাগে না উনার। তাই সিদ্দিক আহমেদ সিন্ধান্ত নিয়েছেন আগামীকাল সকালে যেভাবেই হোক জঙ্গলে যাবেন। তাতে যা হয় হোক!
" মেহেক আমি ঠিক করেছি সকালে রোশনের খোঁজে যাবো।"
" একদম না বাবা! তোমাকে ওদের দলের সবাই চেনে না। নদীর পাড়ের লোকজন তোমাকে দেখা মাত্র গুলি করবে। "
" তাহলে কী করবো বল? এভাবে তোকে দেখতে ভালো লাগে না আমার। ছেলেটা তোর খুব খেয়াল রাখত বলেই মনে হয়েছিল। হঠাৎ কী হলো! "
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বিছানায় বসলো মেহেক। বাবার চোখে চোখ রেখে শান্ত কণ্ঠে বলে,
" আমি যাবো বাবা। অনেক ভেবেছি এতদিন। এভাবে ঘরে বসে চিন্তা করার থেকে গিয়ে একবার দেখা দরকার। "
" বেশ। তুই যেহেতু ওদের পরিচিত তাই একটু হলেও চিন্তা কম হচ্ছে। আমি তোর জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করে দিবো সকালে। নদীর পাড়ে পৌঁছে দিবে।"
মেহেক মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো। সিদ্দিক আহমেদ আরো কিছুক্ষণ সংসারের কথা, মিষ্টির বিষয় কথাবার্তা বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। মেহেকের সামনে আগামীকাল এক নতুন লড়াই। জানে না কী আছে কপালে! কী হয়েছে রোশনের? কোনো বিপদ-আপদ না-কি মতিভ্রম! 

বিদ্যুৎ নেই অনেকক্ষণ। তাই গরমে অতিষ্ট হয়ে বিছানায় এপাশ-ওপাশ করছে মিষ্টি। তাছাড়া 
সন্ধ্যার ঘটনার পর থেকে মিষ্টির অস্থির লাগছে। সত্যি সত্যি আহনাফ স্যার ওকে বিয়ে করবে? কিন্তু স্যারকে বিয়ে! বয়সের এতো পার্থক্য কি মেনে নিবেন মিষ্টির পরিবার? আর ওভাবে হুট করে জড়িয়ে ধরা! কেনো যে ধরলো তখন সেসব ভেবে লজ্জায়, রাগে অসহ্য লাগছে মেয়েটার। কিন্তু এতদিন স্যার যখন বিয়ে করেননি তার পেছনে নিশ্চয়ই কারণ ছিলো? থাক কারণ। সবার জীবনেই একটা অতীত থাকে। তাই অতীতকে সামলে রেখে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। 
" মা তুমি! "
মায়ের আগমনে হকচকিয়ে গেল মিষ্টি। চার্জার ফ্যান নিয়ে এসেছেন উনি। মিষ্টির পাশে ফ্যানটা রেখে সেটা চালু করে দিলেন। 
" গরমে তো ঘুমাতে পারবি না। সেজন্য তোর বাবাকে বলে গতকাল এটা কেনালাম। সামনে তোর বিয়ে, ঠিকমতো না ঘুমালে চেহারায় ছাপ পড়বে। আর শোন, পরশু পাত্রপক্ষ আসবে আনুষ্ঠানিক তোকে দেখতে।"
মায়ের কথায় কী বলবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। আহনাফ স্যারের কথা কি বলা উচিত? নাহ! উনি বলবেন। 
" আচ্ছা মা।"
মিষ্টির মা আর কালক্ষেপণ না করে স্থান ত্যাগ করলেন। 

কথামতো সকাল সকালই মেহেকের জন্য গাড়ি ঠিক করে দিয়েছেন সিদ্দিক আহমেদ। সকালে খাওয়াদাওয়াও করেনি মেয়েটা। সে নিয়ে অবশ্য কেউ জোর করেনি। অটোরিকশা চলছে। গাড়ি যতই সামনে এগোচ্ছে ততই অস্থিরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে মেহেকের। বাড়ি থেকে বেশি দূরে নয় নদীর পাড়। আর হয়তো মিনিট পাঁচেক লাগবে। কিন্তু নৌকা যদি না থাকে কীভাবে যাবে ওপারে? সাঁতার জানলেও একা একা কীভাবে পেরোবে নদী? কিন্তু যেতে তো হবেই! 
" মেহেক নাম রে, এসে গেছি।"
শামসুল চাচার কথায় টনক নড়ে মেহেকের। দ্রুত অটো থেকে নেমে দাঁড়ায় সে।
" ধন্যবাদ চাচা।"
" সাবধানে যাস মা। আমি গেলাম।"
শামসুল চাচা ফের অটো চালিয়ে চলে গেলেন। সিদ্দিক আহমেদের সাথে উনার সম্পর্ক বেশ ভালো। ছোটো থেকে মেহেককেও খুব স্নেহ করেন। 

ঘুম থেকে উঠেই আহনাফকে নিজের বাড়ির উঠোনে বসা দেখবে ভাবেনি মিষ্টি। বাবার সাথে কথা বলছে আহনাফ স্যার। আনজুম বেগম অবশ্য দূরে দাঁড়িয়ে জামাকাপড় দড়িতে মেলে দিচ্ছেন। আহনাফ সরাসরি মিষ্টির বাবাকেই বলবে সবকিছু। 
" তারপর বাবা এতো সকালে এলে, সবকিছু ঠিক আছে? "
মিষ্টির বাবার প্রশ্নে মুচকি হাসলো আহনাফ। শান্তভাবে উত্তর দিলো, 
" জি আঙ্কেল। আসলে কথাটা হয়তো বাবা-ই বলতেন কিন্তু উনার শরীর দিনদিন খারাপ হচ্ছে। তাছাড়া আগে আমি বলি, আপনাদের যদি মত থাকে তাহলে বাবা আসবেন।"
মিষ্টি বারান্দার জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে সবকিছু শুনছে, দেখছে। এরমধ্যে মিষ্টির মা-ও আহনাফের কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছেন। অবশ্য আহনাফের কথার আগামাথা খুঁজে পাচ্ছেন না উনারা। 

" তোমার কথা বুঝতে পারছি না বাবা। "

" আন্টিও এসেছেন যখন সরাসরি বলছি, আমি মিষ্টিকে বিয়ে করতে চাই। জানি ওর বিয়ে নিয়ে কথা এগিয়েছে তবুও আঙ্কেল! প্লিজ একবার ভেবে দেখবেন। নিজেকে বুঝতে সময় লেগে গেছে আমার। "

সিদ্দিক আহমেদ ও আনজুম বেগম চুপ করে আছেন। সত্যি বলতে আহনাফের কাছে এমনকিছু আশা করেননি উনারা। তাই বিষয়টা হজম করতে সময় লাগছে যে সেটা ভালো করেই বুঝতে পারছে মিষ্টি। 
" মিষ্টির সাথে কি তোমার কথা হয়েছে? কিংবা তোমাদের মধ্যে...... "
" না আন্টি! আপনি যেমন ভাবছেন আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই, ছিলো না। আমি পারিবারিকভাবেই প্রস্তাব দিলাম। এখন আপনারা যা বলবেন তাই হবে। আমি আসি এখন।"
আনজুম বেগম চুপ করে গেলেন। 
" আরে বসো কিছু তো খেলেই না!"
" কপালে থাকলে আবারো আসবো আঙ্কেল। তখন না হয় খাবো। আজ আসছি। আসসালামু আলাইকুম। "
" ওয়া আলাইকুম আসসালাম।"

আহনাফ চলে যেতেই আনজুম বেগম মেয়ের সাথে কথা বলবেন বলে ঘরের দিকে এগোলেন। সিদ্দিক আহমেদ পড়লেন ভাবনায়। এক তো মেহেক গেলো ওদিকে এখন আবার এই বিষয়! বাবার মন বলছে মিষ্টি হয়তো আহনাফকেই পছন্দ করে। এখন আনজুম বেগম বুঝলেই হয়। 

ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিলো বলেই নৌকায় নদী পার হতে পেরেছে মেহেক। খায়রুল ভাই ছিলো নদীর ওইপাশে কিন্তু মেহেককে দেখা মাত্রই তিনি এগিয়ে এসেছিলেন। খায়রুল খুব ভালো মানুষ। গত সাত বছর ধরে উনিই এই ডাকাত দলের নদী পারাপারের ভরসা। খায়রুলকে বেশ কয়েকবার রোশনের কথা জিজ্ঞেস করলেও কিছু বলেননি তিনি। শুধু বলেছেন একটু অসুস্থ ছিলো। সেটা শুনে মেহেকের দুশ্চিন্তা আরো বেড়ে গেছে। তাই জঙ্গলে ঢুকেই দ্রুত পা চালাচ্ছে। 
" ভাবি! "
আচমকা শান্তর কথায় ভড়কে গেল মেহেক। তবে পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে শান্তর দিকে দৃষ্টিপাত করলো মেহেক।
" ভাইয়া কেমন আছেন? উনি কোথায়? "
" ভালো আছি। ভাই ঘরেই আছে। আপনি যান। আমি সবাইকে জানিয়ে আসি আপনার কথা। "
শান্তর মতিগতি ঠিক বুঝল না মেহেক। দেখে তো মনে হচ্ছে, ওকে দেখে দারুণ খুশি হয়েছে। যদি সব ঠিক থাকে তাহলে এতদিন রোশন ওর সাথে কোনো যোগাযোগ না করে কীভাবে রইলো? নাহ, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কোনো উত্তর পাওয়া যাবে না। আরেকটু সামনে গেলেই হয়। মেহেক আরো তাড়াতাড়ি হাঁটছে এখন। কী হচ্ছে কিছু বোধগম্য হচ্ছে না ওর। 

" তাহলে সবকিছুই শুনেছিস তুই? "
মায়ের গম্ভীর কথাবার্তায় সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে মিষ্টির। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই কি এই প্রশ্ন করলো মা?
" হ্যাঁ, মা।"
" তুই কি আহনাফকে পছন্দ করিস মিষ্টি? "
প্রশ্নগুলো ভীষণ অদ্ভুত লাগছে মিষ্টির কাছে। হ্যাঁ বললে রাগ করবে না-কি না বললে? সত্যি বলতে আহনাফের প্রতি তো কোনো অনুভূতি নেই ওর। তবে অচেনা কাউকে বিয়ে করার চেয়ে পরিচিত মানুষকে বিয়ে করা সহজ। তার উপর সে যখন ওর অতীত জেনেও সবকিছু মানতে রাজি সেখানে তাকে অপছন্দ হওয়ার জায়গা নেই। 
" যদি বলো দু'জনের মধ্যে কাকে পছন্দ তবে আহনাফ স্যারের কথা বলবো। কিন্তু আলাদা করে কোনো পছন্দ-অপছন্দের বিষয় নেই মা।"

মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন আনজুম। চমকে উঠলো মিষ্টি। 
" আহনাফ ছেলে হিসেবে যথেষ্ট ভালো। কাছাকাছি এতো ভালো ছেলে থাকতে মেয়েকে দূরে বিয়ে দেওয়ার দরকার নেই আর। আমি তাহলে তোর বাবাকে বলবো আহনাফের সাথে কথা বলতে।"
" কিন্তু মা তুমি যে কথা দিয়েছ তাদের? "
" কথা দেওয়ার থেকেও আমার কাছে তোর খুশি আগে মিষ্টি। সবকিছু বাদ দিয়ে এখন ভাত খেতে যা। অনেক বেলা হলো।"
মিষ্টি আহ্লাদে মা'কে জড়িয়ে ধরে। আনজুমও হেসে আগলে রাখে মেয়েকে। 



চলবে..............................
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।