উন্মুক্ত লাইব্রেরী - পর্ব ০৬ - আয্যাহ সূচনা - ধারাবাহিক গল্প


উন্মুক্ত লাইব্রেরী
পর্ব ০৬
আয্যাহ সূচনা



“কোথায় ছিলেন?”

“হাজতে”

সোজাসাপ্টা প্রশ্নের উত্তরও ঠিক তেমনি।একপা তুলে হাঁটু ভাঁজ করে বসে বর্ণ।হাত ছড়ানো বেঞ্চির উপরে।অন্য আরেক হাতে দাঁত খোঁচাচ্ছে। অন্বেষার কাছে বর্ণের উত্তর বিশ্বাসযোগ্য মনে হলো না। নিশ্চিত করতে পূনরায় প্রশ্ন করে,

“মজা করছেন না?”

বর্ণ নেতানো চোখগুলো তুলে তাকায়।তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছুঁড়ে বললো,

“ বেয়াই লাগেন আমার যে মজা করমু?”

এমন জবাবের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না অন্বেষা।যত দেখা হচ্ছে ততই ভিন্ন ভিন্ন রূপ প্রকাশ পাচ্ছে বর্ণের। অন্বেষা তাদের বরাদ্দকৃত জায়গায় বসলো।বর্ণের পাশে।এক পলক চেয়ে আবার চোখ নামিয়ে ফেলে।পূনরায় আবার চোখ তুলে চায়।বর্ণ পিঠ অনেকটা পেছনের দিকে এলিয়ে সরাসরি আকাশের দিকে চেয়ে রয়।সূর্যের তেজে ভরা আলো চোখ ঝলসে দিতে লাগলো।ঝাপসা হতে শুরু করলো।রং বেরঙের রেখা ফুটছে চোখের সামনে।তবে চোখ সরায় না।সূর্যকে শাসিয়ে চেয়ে রইলো সেখানেই।যেনো জিতে যাচ্ছে সূর্যের সাথেও।তার তেজ বর্ণকে নড়াতে পারছে না একবিন্দু। এমন অদ্ভুত ক্রিয়া উপভোগ করতে করতে টানা কণ্ঠে বর্ণ বলে উঠে,

“মিনমিনা বিলাইয়ের মতো সুযোগ না খুঁইজা মানুষের মতো প্রশ্ন করেন।আমি জানি আপনার কলিজার পানি শুকায় খরা হইয়া যাইতাছে।”

“হাজতে কেনো গেলেন?”

“পুলিশের মাইয়ার লগে প্রেম করতে গিয়া ধরা খাইছি।”

“ওহ” 

বিশ্বাস করে নিতে চাইলো অন্বেষা।তার পূর্বেই মাথা তুলে বর্ণ।প্রশ্ন করে,

“বিশ্বাস করছেন?”

অপ্রস্তুত অন্বেষা বললো, “করবো না কেনো?”

“তাইলে ঠকছেন”

ওতো শান্ত নয় অন্বেষার স্বভাব। নেহাতি অপরিচিত মানুষ তার উপর ব্যাটালোক। স্বভাবেরও কোনো ইস্টিশন নেই।এর সাথে ঝামেলায় না জড়ানোই ভালো।লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে অন্বেষা বলে উঠলো,

“একবার নাহয় ঠকলাম, দ্বিতীয়বারে সত্যটা শুনি?”

“যদি না কই?”

ভনিতা করে হেসে অন্বেষা বললো, “তাহলে দূরে গিয়ে পটল তুলুন”

“ঝাঁঝ আছে কিন্তু কথায়”

“আচরণেও আছে। চিনেনই বা কতদূর আমায়?”

“মারামারি কইরা এলাকার এক হিজড়ারে হাসপাতালে পাঠাইছি।ওই কারণে হাজতে নিয়া কতদিন খাতিরদারি করলো”

এবার এসেছে লাইনে। অন্বেষা ঠোঁট কামড়ে হাসলো।ভাবলো হেরে গেছে বর্ণ।আর সে বিজয়ী মুখ থেকে কথা বের করতে পেরে।

“ভাল্লাগছে না শুইনা?এহন এটাও যদি মিথ্যা হয়?”

কথার মারপ্যাঁচে পড়ে অন্বেষা।যে প্রথমবার মিথ্যে বলতে পারে সে দ্বিতীয়বার পারবে না কেনো?তারপরও জবাব দিলো,

“সেদিন আপনাকে দেখেছি ব্যান্ডেজ করতে।আঘাত পেয়েছেন নিশ্চয়ই মারামারি করেই।আপনার কথা আর সেদিনের ঘটনা মিলে যাচ্ছে তার মানে আপনার দ্বিতীয় কথা সত্যি”

বর্ণ সশব্দে হেসে তালি দেয় অন্বেষার কথায়।বর্ণ যে সুনাম করছে না এটা অন্তত বোধগম্যতার বাহিরে নয়। ব্যাঙ্গই করছে তাকে।

“মাইয়া মানুষের অতি চালাক হওয়া ভালো না”

“পুরুষরা যদি বুদ্ধি বাজারে বেঁচে দিয়ে মারামারি করতে ব্যস্ত থাকে তাহলে নারীদেরই এগিয়ে আসতে হবে।নাহয় সমাজ চক্র চলবে কি করে?”

“এতো শুদ্ধ ভাষা আমার হজম হয়না।ঢাকাইয়া ভাষায় কথা কইতে পারেন না?”

“জ্বি নাহ”

“তাইলে কামের কাম কিছুই পারেন না”

অযথা হাসা বর্ণের স্বভাব হিসেবে ধরে নিলো অন্বেষা।কারণে অকারণে হাসে।অন্যের কথায় আর নিজের কথায়ও হাসে।অন্বেষার চোখ গেলো বর্ণের পায়ের জুতোর দিকে।কালো মোটা জুতোটা ছিঁড়ে যা-তা অবস্থা।বরাবরের মতো পরণের কাপড়ও ঠিক নেই।এদিক ওদিক কালচে ময়লা লেগে আছে।

বর্ণ অন্যদিকে চেয়ে প্রশ্ন করে, “কি দেখতাছেন?”

“আপনার বয়স কত?”

“সাতাইশ”

“এতো বড় বুড়ো দামড়া ছেলে এভাবে মারামারি করে?মাথার মধ্যে আক্কেল জ্ঞান এর বড্ড অভাব। ছোটবেলায় সব টিকা নিয়েছেনতো ঠিক মত?আমার মনে হয় নেননি।তাই মস্তিষ্কের বিকাশ হয়নি ঠিকঠাক”

“ছোটবেলা?”

“হ্যাঁ”

মাথায় হাত রেখে এলোমেলো কোকড়ানো চুলগুলো ঝেড়ে জবাব দেয়,

“নেই নাই টিকা”

“এই জন্যেই”

“বস্তির বখে যাওয়া পোলা হইবার পারি গায়রতহীন না।আমার দিকে শত্রুতার এক কদম বাড়াইলে আমি দুই কদম বাড়াই। শত্রুরে শুরু করতে দেই জানি শেষ আমি করতে পারি।আর শেষে কি হয়?”

অন্বেষা শুনলো এবং বুঝার চেষ্টা করে।তবে শেষে কি হয় এই প্রশ্নের উত্তর জানা উচিত।বললো,

“কি হয়?”

“যে শুরু করে দোষ তার পড়ে।কিন্তু মজার কাহিনী কি জানেন? শত্রুরা ভাবলো বর্ণরে জেলের ভাত খাওয়ায় ওরা জিতা গেছে।ওরা জানে না আমি খারাপের মধ্যে ভালো থাকা মানুষ” বলে আবারো উচ্চ হাসে বর্ণ।

“পড়ালেখা করেন না?”

“উহু!ইন্টার পাশ কইরা ভার্সিটিতে ভর্তি হইছিলাম। পরে বুঝলাম এসব বালছাল আমারে দিয়া হইবো না।”

“কেনো?”

বর্ণ তেরছা চোখে চাইলো।চোখের মণি উপর নিচ করে অন্বেষাকে দেখে নিলো।প্রশ্ন করলো,

“তোমার এত আগ্রহ কেন ছেমরি?”

আপনাআপনি চোখ গোল গোল হয়ে উঠে অন্বেষার।সরাসরি তুমি বলে সম্বোধন করছে।এখন কি প্রশ্ন করবে কেনো করলো?নাকি আগ্রহের প্রশ্নের জবাব দিবে?বর্ণের প্রশ্নের জবাব দিলো অন্বেষা।বললো,

“ক্লাস সিক্সে থাকাকালীন আমাদের স্যার বলেছিলেন মানবজাতির অজানা জিনিসের প্রতি বিশেষ আগ্রহ।সেই বিষয়ে জানা প্রয়োজনীয় হোক আর অপ্রয়োজনীয় আগ্রহ থাকে ব্যাপক।”

“এসব কথার জবাব দিতে মন চাইতাছে না।আমি আপনারে আমার চুরি চামারির গল্প কই?”

অন্বেষা বর্ণের সুরেই বললো, “কন!”

“আমি যে একটা পিচ্চিরে পড়াই ওর বাপ মা জানে আমি ঢাকা ভার্সিটিতে পড়ি।”

“মানে?”

“হ! নীলক্ষেত থিকা একটা জাল আইডি কার্ড বানায় বলদ বেডিরে দেহাইলাম। বেডিও বিশ্বাস কইরা নিলো।আর রামছাগল পোলার দায়িত্ব আমার ঘাড়ে দিয়া দিলো।কি যত্ন করে বাবারে বাবা!”

“আপনার মনে হয়না আপনি ছেলেটার ভবিষ্যতের সাথে খেলছেন?”

“ক্লাস নাইনের আর্টসে পড়া একটা পোলারে পড়ানের লেইগা কি আমার এহন বিদেশ গিয়া ডিগ্রি নেওয়া লাগবো?আমার স্টুডেন্ট আমার সাব্জেক্টগুলাতে আশির উপরে নাম্বার পায়। মূর্খ ভাবছো নি আমারে?”

“ব্রিলিয়ান্ট আপনি?”

“না কিন্তু মূর্খও না”

তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে অন্বেষা।কথার জোরে পারা মুশকিল।আজ তারও বই পড়ার কোনো ইচ্ছে নেই।প্রশ্ন করলো,

“খেয়েছেন?”

“না”

“কেনো?”

“তোমার জ্বলে?”

ত্যাড়া প্রশ্নে প্যাঁচার মত মুখ করে ফেললো অন্বেষা।ভালো কথার জবাব হতে হয় ভালো।কিন্তু বর্ণের দুনিয়াতে বোধহয় ভালো বলতে কোনো শব্দ নেই।হুট করে বর্ণ বললো,

“এই মাইয়া শাঁখারি বাজার যাইবা?”

“এই ছেলে কেনো যাবো?”

বর্ণ অন্বেষার কথা ধাঁচে হাসলো।বললো,

“ঘুড়ি কিনুম।”

“আমাকে নিয়ে যাবেন?”

বর্ণ মুখ বেঁকিয়ে বললো, “কানে কি কম হুনো নাকি বেশি?”

“চলুন”

_______

“আমার কি মনে হয় আব্বাজান জানেন?আপনি বর্ণরে ডরান!বহুত ডরান!আপনার পোলা আজকে হাসপাতাল এর বিছনায় শুইয়া আছে।আর আপনে?হুনলাম জেল থিকা ছাড়া পাইছে?এত সহজে কেমনে বাইর হইতে দিলেন? মাইরা শেষ কইরা দিলেন না কিল্লেগা?”

মোকলেস সাহেব চটে গেলেন। ক্রুর কণ্ঠে বলে উঠেন,

“হ তোমার মোটা মাথার বুদ্ধি লইয়া কাম করলেতো হইছিলোই।”

“আপনারে যহনি কই আব্বা আপনি খালি বুদ্ধিমত্তা দেহান!কামের কাম কিছুই হয়না।এলাকার পোলাপান আমার কোনো কথা হুনে না।”

হাসপাতাল থেকে একটু পরই ডিসচার্জ করা হবে জনিকে। একটু সুস্থতা আসতে না আসতেই প্রতিশোধের আগুনে দাউ দাউ করছে সর্বাঙ্গ।এলাকায় ক্ষমতা স্থাপনের জন্য পাগলপ্রায় জনির প্রথম শত্রু বর্ণ। মোকলেস সাহেব বললেন শান্ত গলায়,

“তুই কি পোলাপান জনি!দিনদিন বড় হইতাছোস আর বুদ্ধিশুদ্ধি হাঁটুতে নামতাছে নিহি?”

“আপনি একলাই বুদ্ধিমান আব্বাজান।আমি জনি কইয়া রাখলাম বর্ণ এই এলাকা ছাড়া হইবো নইলে দুনিয়া ছাড়া।”

কপাল কুঁচকে মোকলেস সাহেব সাহেব ছেলের পানে প্রশ্ন ছুঁড়েন, 

“মার্ডার করবি নিহি?”

“হ করুম লাগলে! পুরা এলাকার মাইনষের সামনে আমারে বেধড়ক পিটাইলো।কি ইজ্জত রইয়া যাইবো আমার?”

তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলেন মোকলেস সাহেব।তার পুত্র ছেলেমানুষীতে নেমে এসেছে।টগবগে রক্ত তার।বুঝানোর ভঙ্গিতে বললেন,

“বর্ণ এই এরিয়ার পুরান বটগাছ। কাটলে হইবো না গোড়া থিকা উপড়ায় ফালান লাগবো।সময় দে আমারে ওর ব্যবস্থা আমি করতাছি।তুই শান্ত থাক”

“এবার জানি ব্যবস্থাটা হয় আব্বাজান।নইলে কিন্তু আমার হাতে খুন হইবো বান্দির পোলায়”

______

এ যেনো রঙের রাজ্য।বসেছে মেলা চারিদিকে।রৌদ্রের আলোর ঝলক দেখাচ্ছে পুরোনো দালান ভেদ করে।শাঁখারি বাজার পুরান ঢাকার প্রাণ কেন্দ্রের মতই।দুয়েক কদম এগিয়ে কর্ণপাত হলো পুরোনো দিনের গান।সাথে ঘ্রণেন্দ্রিয়তে মিষ্টি ঘ্রাণ।অন্বেষা ঘুরে তাকায়।বাহারি মিষ্টান্ন তৈরিকে আরো আনন্দদায়ক করতে এক মধ্য বয়স্ক লোক আগের যুগের রেডিওতে চলা গানের সাথে সুর মেলাচ্ছেন।

“তোমার বাড়ির রঙ্গের মেলায়
দেখেছিলাম বায়স্কোপ
বায়স্কোপের নেশায় আমায় ছাড়েনা।

ডাইনে তোমার চাচার বাড়ি
বায়ের দিকে পুকুরঘাট
সেই ভাবনায় বয়স আমার বাড়েনা।”

ঠোঁটে হাসি ফুটলো অন্বেষার।গানটা তার ভীষণ প্রিয়।আরো চার কদম হাঁটলে রঙ্গিন সবজি, আর ফলের ঢালি।কাঁসার বাসন, পিতলের থালায় দৃষ্টিপাত হয়।পুরোনো ঐতিহ্যের ছায়া এখানে।দোকানের সারিতে নিজ কর্মের যত্নের ছোঁয়া।মানুষের হাসি গানে গানে। বেশ খোশমেজাজ তো সকলে।

বর্ণ অন্বেষাকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো,

“এটা সাখারি বাজার....রঙ্গিলা দুনিয়া।চেহারা দেইখা বুঝবার পারতাছি আল্লাহর দুনিয়ায় এসব প্রথমবার দেখতাছো”

রঙের দুনিয়ায় হারিয়ে থাকা অন্বেষা অন্যমনস্ক। অপ্রস্তুত ছিলো প্রশ্নের জন্য।হেঁয়ালি করে উত্তর দিলো,

“হুম সবই নতুন”

বর্ণ হাঁটা থামায়। অন্বেষার সামনে এসে দাঁড়িয়ে জেরা করার ভঙ্গিতে বললো,

“এই মাইয়া দেশের বাড়ি কই তোমার?....খবরদার বরিশাইল্লা কইবা না।নইলে এক্ষণই ঘেঁটি ধইরা বাজার থিকা বাইর কইরা দিমু”

টনক নড়ে অন্বেষার।বর্ণের দিকে মুখ ঘুরিয়ে প্রশ্ন করলো,

“কেনো?যদি আমি বরিশালের হই তাহলে কি সমস্যা?”

“বরিশাইল্লা দেখতে পারিনা.....আমি কেন খাস ঢাকাইয়া বেশির ভাগ মানুষ বরিশাইল্লা দেখবার পারেনা।”

“কেনো?কেনো?”

বর্ণ পকেটে হাত গুঁজে বললো, “বরিশাইল্লারাও আমাগোরে দেখবার পারেনা।সহজ হিসাব”

“আপনার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে আমি বরিশালের নই”

“এই যাত্রায় তোমার ঘেঁটি বাঁইচা গেলো।কিন্তু আমারতো এহন একটা গান মনে পড়তাছে।গামু নাকি?”

“কি গান?”

“বরিশালের লঞ্চে উইঠ্যা লমু ক্যাবিন রুম….”

অন্বেষা চেঁচালো।গানটা তার অপছন্দের তালিকায় এক নাম্বার।অশ্লীল মনে হয়।বললো,

“চুপ! একদম চুপ….সামনে হাঁটুন”

ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী সে। ঐতিহাসিক বিষয়ে আগ্রহ ব্যাপক।বর্ণের কথা বলার ধরন রপ্ত হয়ে গেছে খুব দ্রুত।একে সুযোগ দিলেই কানের পোকা নাড়াবে।

প্রাচীন মন্দিরের ঘন্টাধ্বনি সঙ্গে মায়াবী আলোতে মসজিদের নূর।নকশা খচিত বাড়ির দেওয়ালে
ইতিহাসের স্মৃতিচারণ ভাসে ধীরে ধীরে।তামার বাসনের ঝিকিমিকি আর রুপার গহনার মৃদু ঝনঝন অসম্ভব ভালো লাগছে অন্বেষার।ভালো লাগাকে দ্বিগুণ করলো কবুতরের দল।মাথার ঠিক উপর দিয়ে উড়ে গেছে আকাশে।শাঁখারিদের শাঁখার শব্দ ও পুরোনো গান শুনতে শুনতে বর্ণের ঘুড়ি কেনা শেষ।একজোড়া চুড়িও কিনে নিলো অন্বেষা।

“এই ছেমড়ি ঝালমুড়ি খাওয়াইবা?”

অসভ্য ছেলেটা করুন মুখে আবদার করছে।এসবই ভন্ডামি।জানে অন্বেষা।কিন্তু বারণ করলো না। বিশ টাকার ঝালমুড়ি কিনে বুড়িগঙ্গার দিকে পা বাড়ায় দুজনে।

পা জোড়া দোলাতে দোলাতে বর্ণ প্রশ্ন করলো,

“তোমার লজ্জা করেনা বখাইট্টা একটা পোলার লগে ঘুরতে।”

আশ্চর্যের চরম সীমানায় গিয়ে দাঁড়ালো অন্বেষা।বুড়িগঙ্গার তীরে ধীরে ধীরে সূর্যাস্ত হচ্ছে।প্রকৃতির শান্ত নীরবতা প্রশান্তির।প্রহর প্রহর বিস্ময়ে ভরা যেনো।ময়লা পানির বাজে গন্ধ তেমন একটা বিরক্ত করছিলো না। নীল থেকে কালোতে রূপান্তরিত হওয়া আকাশ দেখছিলো এক ধ্যানে।তখনই বর্ণের কথায় ধ্যান ভঙ্গ হয়।

“আপনি কি গিরগিটি?”

“হইতে পারি,আবার নাও হইতে পারি।”

“হবেনই… মিনিটে মিনিটে রং বদলান।নিজেই আমাকে নিয়ে এলেন আবার নিজেই বলছেন”

মুখে ঝালমুড়ি পুড়ে অস্পষ্ট স্বরে বর্ণ বললো,

“আমি তোমারে পরীক্ষা করতাছিলাম।আমার এক ডাকে আইয়া পড়লা। ডরাও না?”

“কেনো আপনি চোর না বাটপার?”

“ছিনতাইকারীও হইবার পারি।”

“এই মেগাসিটিতে চার কোটির বেশি মানুষ বসবাস করে।এত মানুষের ভিড়ে দিনে দুপুরে না পারবেন চুরি ডাকাতি করতে না পারবেন ছিনতাই করতে।”

বর্ণ হাসলো সশব্দে।বললো,

“ঢাকারে এহনও চিনো নাই ছেমড়ি।তুমি এহনও কচি খুকি।এক সেকেন্ডে তোমার চৌদ্দ গুষ্টি লইয়া টান দিবো। তোমারে গড়বো নইলে ধ্বংস করবো।”

অন্বেষা বর্ণের মুখপানে চেয়ে প্রশ্ন করে বসে,

“তা এই শহর আপনাকে গড়েছে নাকি ধ্বংস করেছে?”

বর্ণের মুখের বর্ণ পাল্টায় অকস্মাৎ। ঘাড় বেঁকিয়ে স্থূল দৃষ্টি দিলো অন্বেষার পানে। মুখ পৃষ্ট সংকীর্ণ।গোলমেলে ভীম চাহনি।ভারী নিঃশ্বাস ছেড়ে অত্যন্ত ভারী সুরে জবাব দিলো,

“কার সাধ্য আমারে গড়ার আর ধ্বংস করার?...এই বেজান শহরের?....আমি ওর বুকেই পাড়া দিয়া রাজত্ব করতাছি.....”



চলবে..........................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন