#আরোরা (সিজন ২)
#পর্ব_৮
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
আরোরা মুচকি হেসে বিছানা থেকে নামতে চাইলে এডওয়ার্ড হাত ধরে আঁটকে ফেলে। শোয়া থেকে উঠে বসে আরোরাকেও নিজের কোলে বসালো এডওয়ার্ড।
" লাভলেস এর হিসাব করে কই যাচ্ছ? আগে হিসেব মিটিয়ে নেই তারপর...... "
আরোরার গোলাপি রঙের কম্পনরত ঠোঁট জোড়ায় ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো এডওয়ার্ড। কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠল আরোরার বদনখানি। ভালোবাসা দিয়ে ভালোবাসা ছুঁয়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে উঠলো দু'জন।
ওয়ারউলফ প্রাসাদের বাইরে সভা আয়োজন করা হয়েছে। আরোরার নির্দেশে সেলিনই সবকিছুর ব্যবস্থা করেছে। হেক্সা ও আলেক্সাকে মুণ্ডপাত করা হয়েছে সকলের সামনেই। কারণ বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তি সকলের দেখা দরকার। সকলকে একত্র করার পেছনে অবশ্য অন্য একটা কারণ আছে। আরোরা প্রজাদের সামনে সবকিছু জানাতে চায়। সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। তাদের কুইন কী বলবে সেজন্য। কালো রঙের গাউনে, খোলা সোনালী চুলে ভীষণ সুন্দর লাগছে আরোরাকে। এডওয়ার্ড আছে আরোরার মাথার উপরে, মেঘের আড়ালে। যতই হোক শত্রুপুরী বলে কথা! বউ আপন হলেও তার প্রজারা তো এতো তাড়াতাড়ি আপন হবে না।
" আজ আমার জন্য একটি বিশেষ দিন। আমার সমস্ত শত্রুদের নিশ্চিহ্ন করেছি আজ। এতদিন যাদের শত্রু ভেবে লক্ষ্য স্থির করে রেখেছিলাম, একটা সময় পর জানলাম আমার শত্রু আমার ঘরে! হ্যাঁ, তোমাদের সাবেক কিং নিক এবং কুইন হেক্সা ছিলো আমার শত্রু। সাথে আলেক্সাও। তোমরা ইতিমধ্যে দেখেছেন কীভাবে পূর্ণিমা রাতে ওরা আমাকে ঠকাতে চেয়েছিল। তাই আশা করি এখন সবার কাছে সবকিছু দিনের আলোর মতোই পরিষ্কার। "
আরোরা একটু থেমে ফের বলতে লাগলো,
" আলেক্সার কুবুদ্ধিতে তোমাদের মধ্যে যারা আমার বিরুদ্ধে চলে গিয়েছিলে তারা চাইলে এই রাজ্য ত্যাগ করতে পারো এবং নিজেদের মতো জীবনধারণ করতেও পারো। তবে একটাই শর্ত! মানুষ হত্যা করা যাবে না, পশুপাখি শিকার করতে হবে। আর একটা কথা, আমি এখন থেকে পাকাপাকিভাবে আমার শ্বশুর বাড়ি থাকবো। তবে সপ্তাহে দু'দিন এসে এখানেও থাকবো। বাকি দিনগুলো সেলিন তোমাদের দেখেশুনে রাখবে অথবা তোমাদের সব সমস্যার কথা ওর কাছে বলবে। যেহেতু ভ্যাম্পায়াররা একা দোষী ছিলো না, আমাদের লোকই তাদের ষড়যন্ত্রে ইন্ধন যুগিয়েছিল তাই ভ্যাম্পায়ারদের উপর কোনো প্রতিশোধ নেওয়ার নেই আর। তাছাড়া এখন কোনো ভ্যাম্পায়ার আমাদের সাথে শত্রুতার সম্পর্ক রাখতে চায় না। আমি চাচ্ছি আমরা দুই জাতি মিলেমিশে বাস করি, কেউ কাউকে আক্রমণ না করি। এখন তোমরা বলো কারো আপত্তি আছে? "
আরোরার লম্বা কথাবার্তা শেষ হওয়ার পর সবাই সমস্বরে চিৎকার করতে লাগলো। কারো কোনো সমস্যা নেই। সবাই মিলেমিশে থাকতে প্রস্তুত। কিন্তু এরমধ্যেও কিছু নেকড়ে সভা থেকে নিঃশব্দে বেরিয়ে গেছে। ওরা সংখ্যায় নগন্য, তাই আরোরা ওদের বিষয় আর ভাবলো না। এডওয়ার্ড সবকিছু দেখে বেশ খুশি হয়েছে। এবার দুই রাজ্য একসাথে বাস করবে পৃথিবীতে বিনা সংঘাতে।
বোনের সাথে বেজায় রাগ করেছে এনা। বিছানায় বাচ্চা কোলে বসে আছে ও। আজ চারদিন হলো ইয়ানের জন্ম হয়েছে। অথচ আজকে সবে ওর খালা এলো। আরোরা কাচুমাচু মুখ করে এনার পাশে বসে কান ধরে ইয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। এডওয়ার্ড আর গুলিন একটু দূরে দাঁড়িয়ে ঠোঁট টিপে হাসছে। দুই বোনকে দেখার মতোই অবস্থা এখন।
" আপা! আগে শোনো না, খুব সমস্যার মধ্যে ছিলাম গো। এজন্য আসতে দেরি হয়েছে। তুমি বলো আমি কি নইলে এতদিন না এসে পারতাম? "
এনা সবকিছু শুনেও কিছু বলছে না। যেনো শুনেও শুনছে না। আরোরা আবারো বললো,
" আপা!"
" এনা সত্যি খুব ঝামেলায় ছিলাম আমরা। সব বলি বুঝবে।......"
এডওয়ার্ড ঘটে যাওয়া সবকিছুই সংক্ষিপ্ত কথায় বুঝিয়ে বললো এনাকে। আরোরা এখনো কান ধরে বসে আছে। এনা সবকিছু বুঝতে পারলো এতক্ষণে। আরোরার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো এনা।
" কান ধরতে হবে না আর। নে ইয়ানকে কোলে নে।"
" লক্ষ্মী আপা আমার। "
এনা হেসে ইয়ানকে আরোরার কোলে তুলে দিলো। ছোটো ছোটো হাত-পা নড়াচড়া করছে ইয়ানের। মায়া মায়া চোখগুলো দিয়ে আরোরার দিকে তাকিয়ে আছে পিচ্চিটা। এডওয়ার্ড এগিয়ে এসে আরোরার হাতে একটা সোনার বালা দিলো। এতো ছোটো বয়সে ছেলেমেয়ে বিবেচনা না করে সোনার বালা দেওয়াই রাজকীয় প্রথা। আরোরা ইয়ানের হাতে বালা পরিয়ে দিলো।
" তোমরা আজকে থেকে যাও না এডওয়ার্ড! সব সময় চলে যাও। এখন তো সব সমস্যা মিটেছে বলো।"
গুলিন এডওয়ার্ডকে বললো। আরোরা হেসে বললো,
" তা থাকতেই পারি আজ। এডওয়ার্ড তোমার কোনো সমস্যা আছে? "
" বউয়ের কাছে আবার সমস্যা! বউয়ের আদেশ শিরোধার্য রাণী সাহেবা। "
এডওয়ার্ডের কথা শেষ হতেই হাসির রোল উঠলো। সারাদিন হাসি-তামাশা করে কাটলো। বিকেলে আরোরা নিজেই রান্নাবান্না করলো। এনার শরীর এখনো বেশ দূর্বল। গুলিন সব কাজকর্ম করে। সবার পছন্দের খাবার রান্না হয়েছে আজ। এডওয়ার্ডের প্রিয় মাশরুমের স্যুপ, গুলিনের ভেড়ার মাংস ভুনা, আরোরার কবুতরের মাংস সাথে চালের গুড়োর রুটি। এনা আবার সর্বভুক প্রাণী, সব খাবারই ওর খুব পছন্দ। তবুও এনার জন্য ফলের জুস, ডিম দিয়ে তরকারি, ফালুদা তৈরি করেছে।
নিজেদের কক্ষে বসে কথা বলছেন হেলগা ও জোহানসন। প্রাসাদের সবাই খুব খুশি আজ। এতগুলো বছর পরে এডওয়ার্ড ও আরোরার মাঝের সব ঝামেলা মিটেছে। সেইজন্য একটা অনুষ্ঠানের আয়েজন করতে চাচ্ছেন জোহানসন।
" অবশ্যই! আপনি চাইলে অনুষ্ঠান হবে। যদিও আমি বলতাম আপনাকে। কিন্তু তার আগেই আপনি বললেন। কাল ওরা ফিরুক তারপর না হয় আপনি বলবেন। "
সহাস্যমুখ করে বললেন হেলগা। জোহানসন আধশোয়া থেকে সোজা হয়ে শুয়ে বললেন,
" ঠিক আছে। আরোরা আর এডওয়ার্ড ফিরুক। যাক এতদিন পর একটু শান্তি লাগছে। লণ্ঠন নিভিয়ে দাও রাণী। চোখ লেগে আসছে। "
" ঠিক আছে। "
হেলগা লণ্ঠন নিভিয়ে নিজের জায়গায় শুয়ে চোখ বন্ধ করলেন। নিমিষেই রাজ্যের ঘুম এসে ভর করলো দুজনের চোখে।
মাঝরাতে আচমকা কেমন দমবন্ধ হওয়া অনুভূতি হওয়ায় ঘুম ভেঙে গেলো সাঁচির। ঘুম ঘুম চোখে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখলো বজ্জাত ম্যাক ওর গায়ের ওপর উঠে ফ্যালফ্যাল করে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। বিরক্তিতে ' চ' জাতীয় শব্দ করে উঠল সাঁচি।
" এসব কী হচ্ছে ম্যাক? দমবন্ধ হয়ে মরে..."
" এসব বলবে না। গায়ের উপর উঠে বসলে কেউ মরে না। আমি অন্তত আজ পর্যন্ত শুনিনি,আদর করতে গিয়ে বর গায়ের ওপর বসার ফলে কোনো স্ত্রী মারা গেছে। তাই তোমারও কিচ্ছু হবে না। "
সাঁচি চোখমুখ কুঁচকে ফেললো। এই মাঝরাতে ঘুম নষ্ট করে এসব শুনতে কার ভালো লাগে!
" ও ম্যাক! সরো না। "
" নাহ। তুমি উঠে বসো আমার ওপরে। তারপর আদর করো। আজকে তুমি আদর করবে আর আমি খাবো। "
" খাই খাই না করে ঘুমাও। আমি ঘুমালাম এমন অবস্থায়ই! "
সাঁচি খামখেয়ালি করে চোখ বন্ধ করে রইলো। ম্যাক তো ছাড়ার পাত্রী নয়। সে-ও উঠলো না। আলগোছে সাঁচির দু'হাতে নিজের হাত রাখলো। সাঁচি চোখ খুলতেই জোরেশোরে চেপে ধরলো হাতদুটো।
" কী হলো? তুমি ঘুমাও। আমি করছি যা করার।"
" তুমি না!"
" কী?"
" ক্ষ্যাপাটে বর একটা। "
সাঁচি হেসে বললো। ম্যাক সাঁচির উদর থেকে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিতে দিতে গলা অবধি এসে থামলো।
" জানোই যখন তখন সহযোগিতা করছো না কেন?"
" একটু দাম দেখালাম। "
" তাই না?"
" হ্যাঁ তাইইই......."
সাঁচি মুচকি হেসে ম্যাককে নিজের দিকে ইশারা করলো। শুনশান নীরবতার মাঝে দু’জোড়া মানব-মানবীর তপ্ত নিঃশ্বাসে মুখরিত হতে লাগলো চারদেয়ালে বন্দি কক্ষ।
চলবে...................