পাতা বাহার - পর্ব ২৪ - বেলা শেখ - ধারাবাহিক গল্প


সবাই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সেদিকেই চায়। পাতাও ঘার ঘুরিয়ে চায় চোখ ছোট করে। দেখতে পায় গাড়ি থেকে নামে দুজন লোক। দূর থেকে মানুষের ভিড়ে চিনতে পারে না। লোক দুটো বাড়ির আঙিনায় আসে। লাল নিয়নবাতির আলোয় দৃশ্যমান হয় তাদের মুখশ্রী। সবাই সরে গিয়ে সভার ভিতরে প্রবেশ করতে সাহায্য করে।পাতা পাশের জন কে চিনতে পারে না। তবে অরুণ সরকারকে চিনতে ভুল হয় না। শার্ট প্যান্ট পড়নে সাধারণ বেশে। চোখে চশমা পড়া! গম্ভীর মুখটা যেন আরেকটু গম্ভীর হয়ে আছে। তাদের একটু দূরে পকেটে হাত গুজে সম্মুখ পানে চেয়ে বলে,

-" মাই সেল্ফ অরুণ সরকার!"

পাতা এমন পরিস্থিতিতেও মনে মনে ভেংচি কাটে। নাক উঁচু লোক!‌ 'মাইতেল্ফ অলুন তলকাল' হুহ।

 অরুণ বলেই পাশে বসা শুকলার দিকে চায়। শুকলার হাত নাকের ব্যান্ডেজে ওঠে। খানিকটা ভীত হয়ে ছেলের দিকে তাকিয়ে বোঝায় এই সে! শামিম অরুণের দিকে চায় শানিত দৃষ্টিতে। হালকা পাতলা চেনে একে। কিন্তু ওসবে সে ভয় পায় নাকি! অরুণ শামিমের নজরের তোয়াক্কা করে না। ঘার ঘুরিয়ে সামনে চায়! সামনে বসা হারুণ মুন্সির দিকে খানিক চেয়ে মজুমদারের দিকে চায় তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে!মজুমদার ভারি ক্ষুব্ধ হয়! মুরুব্বিরা সব বসে; সালাম কালাম নেই! অভদ্র! সে ঝুঁকে পাশে থুতু ফেলে বলে,

-" ওহ তুমিই সেই পোলা! যদিও পোলা লাগতেছে না! বেশ হাট্টাখাট্টা তাগড়া জোয়ান! মাইয়াটার থাইকা বয়সেও বেশি! তাতে কি পোলা হোক বা বুড়া আজকালকার মাইয়াদের টাকা হইলেই হইবো! তা বাবা তুমি কেন এদের.."

তাকে থামিয়ে অরুণ চশমা খুলে বুক পকেটে ঝুলিয়ে বলে,

-" সোনা, রুপা, হিরক সব ধাতু নিয়েই কাজ করি আমি! তাই কোনটা আসল নকল দেখলেই বুঝতে পারি।‌ আপনাকে দেখে ও আপনার কথা শুনেই বুঝতে পেরেছি আপনি কোন ধাতুর তৈরি! ভেজাল মেশানো নেই! বরং পুরোটাই ভেজাল মা*ল! এখানে আসার আগে যদিও কিছু লোকের কুন্ডুলি জানলাম গাড়িতে বসে! আমার বন্ধু বললো। ওর পরিচয়.. না থাক আপনারা ভয় না পেয়ে যান!"

হারুণ মুন্সি উঠে আসে চেয়ার থেকে। অরুণের সামনে দাঁড়িয়ে আঙ্গুল তুলে শাসিয়ে বলে,

-" তোমারে না সাবধান করলাম এসব থেকে দূরে থাকবে? শুকলাকে মেরেছো কিছু বলি নি! মানে এই না যে তোমারে ডরাই! ভালো সমস্যায় পড়বা.."

-" আমিও তো বলেছি দেখি আপনারা আমার কি করতে পারেন! আপনাদের হাত কতদূর। আর যেখানে ঘটনার মুখ্য চরিত্রে আমি সেখানে আমাকে ছাড়া আপনারা কিভাবে দরবার ডাকেন? ব্যাপারটা কেমন হয়ে গেল না?"

হারুণ মুন্সির মুখে কথা নেই। মজুমদার দাড়িতে হাত বুলাতে থাকে। লোকটা তাকে সবার সম্মুখে অপমান করলো? সেও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়!

পাতার ঠোঁটের কোণে অল্প হাসির ঝিলিক দেখা দেয়! সে তখন দূর থেকে সবার কথা মনোযোগ সহকারে শুনছিল! সবাই তাদের বিপক্ষে! সে তবুও চুপ ছিল। কিন্তু যখন ভাইকে শুকলার ছেলে শামীম মারলো! শুকলা বাবাকে যাতা বলে অপমান করলো সে বুঝে যায় সব! পরিস্থিতি খুবই জটিল। এখান থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার রাস্তা হিসেবে অরুণ সরকারের নাম মাথায় আসে। লোকটি তো বলে গিয়েছিল কেউ টু কথা বললেও যেন তাকে জানায়। অথচ পুরো গ্রাম জুড়ে এ বিষয়ে চর্চা হচ্ছিল। দরবার ডাকা হলো। সে দেড়ি করে না। অরুণ সরকারের নাম্বারে ডায়েল করে দেয়। তবে সে শঙ্কায় ছিল নাক উঁচু লোকটি আসবে কি না!

রাতুল লুবমানকে ছেড়ে অরুণের পাশে দাঁড়িয়ে বলে,

-" বড় ভাই?আমি রাতুল ভুঁইয়া।আপনি ব্যবসায়ী মানুষ। শুনেছি ব্যস্ত থাকেন! তবে এতো এতো ব্যস্ততার ভিড়ে পাতাকে নিয়ে রাস্তায় পার্কে হাত ধরে জরাজরি করে ঘুরা ঘুরি করেন! মাঝে মাঝে আড়ালে আবডালে হোটেলেও যান! এসব তো কখনো জানতামই না। এই দরবারে জানতে পারলাম।"

অরুণ ভ্রু যুগল কুঁচকে চায় তার দিকে। কি বললো? সে রাতুলকে চিনতে পেরেছে। ভার্সিটিতে পরিচয় তাদের। একসাথে অনেক কাজও করেছে, যদিও জুনিয়র। তাঁর রাতুলের ইশারা বুঝতে কষ্ট হয় না। তার চোয়াল শক্ত হয়। সে একনজর পাতার দিকে চায়। বড় কালো ওড়নায় মুখশ্রী ঢেকে আছে। তারপর গলা উঁচিয়ে বলে,

-" হোয়াট আ ইন্টারেস্টিং স্টোরি! রাইটার কে? শুয়ার না কি যেন নাম! শুকলা! গুড! আপনাদের এলাকার গুপ্তচর গুলো দেখছি খুবই কাজের। না হওয়া সিন গুলোও সুন্দর ভাবে বর্ণনা করেছে। আর আপনারাও শালিসি ডেকেছেন। আপনারা এলাকার খুবই দায়িত্ববান লোক দেখছি! অন্যায় একদম সহ্য করতে পারেন না। বিকেলে ঘটনা ঘটলো আর সন্ধ্যার পরেই বৈঠক। ইম্প্রেসিভ! অথচ একজন রেপিস্ট এলাকায় গলা উঁচিয়ে চলে। তাদের ব্যবস্থা কেন করেন নি?"

থামে অরুণ। সবাই তার দিকে উৎসুক হয়ে চেয়ে। শুকলার মুখ বিবর্ণ হয়ে যায়। মুরুব্বিরা নজর এদিক ওদিক করে মুখ লুকানোর চেষ্টায়। মজুমদার কিছু বলবে এর পূর্বে অরুণ দ্বিগুণ জোর গলায় শুকলার দিকে আঙুল তুলে বলে,

-" এই‌ জানোয়ার চার বছর আগে একটা সিক্সে পড়ুয়া বাচ্চা মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। যোদ্ধা বাচ্চা মেয়েটা নিজেকে বাঁচিয়ে নেয়। মেয়ের বাবা মা থানায় কেসফাইল করতে চাইলে আপনারা সাহায্য না করে ভুজুং ভাজুং বুঝিয়ে গোল বৈঠক বসিয়ে মেয়েটার বিয়ের ব্যবস্থা করে মামলা ডিসমিস করে দেন। কি অভিনব বুদ্ধি আপনাদের! প্রশংসার যোগ্য! এই মানুষ রুপি পশুর নামে তো আরো অনেক মেয়ে ঘটিত ব্যাপার আছে। ওর ছেলের মাদক ব্যবসায়ীর সাথে লিঙ্ক আছে। শুধু সে না এখানে উপস্থিত আরো অনেকের!
 কই সেসব বিষয়ে আপনাদের গুপ্তচর খবর পায় না? এলাকায় শালিস বসে না? নাকি পকেট ভর্তি করিয়ে দিলেই খালাস?"

শুকলার ছেলে সহ বেশ কয়েকজন তেড়ে আসতে নেয় অরুণের দিকে। আতিকুর, রাতুল, লুবমান পাশে দাঁড়ায় তার। পাতা ভয় পেয়ে যায়। অরুণ ওদের দিকে আঙুল তুলে হুঙ্কার দিয়ে বলে,

-" খবরদার! এক পা এগোলে দাঁড়িয়ে থাকার জো রাখবো না! চুপচাপ ওখানেই দাঁড়িয়ে থাক!"

অরুণের সাথে আশা লোকটি শার্টের নিচে কোমড় থেকে কিছু বের করে। ব্যস! সবাই পিছু হটে! অরুণ হালকা হেসে হারুণের দিকে তাকিয়ে বলে,

-" পাতি গুন্ডা নয়! আর্মির মেজর। আমার বন্ধু! সেই সব ইনফরমেশন দিলো।‌আরো অনেক ইনফরমেশন দিয়েছে।কোনটা রেখে কোনটা বলবো বলুনতো? সে যাই হোক আসল কথায় আসি!"

অরুণ পাতার দিকে এগিয়ে যায় কিছু বলবে তখনি বেশ কিছু বাইক, পুলিশের গাড়ি, দুটো গাড়ি এসে থামে রাস্তর পাশে। সেই শব্দে সবাই উৎসুক হয়ে চায়। শুকলা সহ বেশ কয়েকজনের কপালের ঘাম ঝড়ে পড়ে। পুলিশ ফোর্স নিয়ে আসলো এই লোক?

পাতা অরুণের দিকে চায় বড় বড় চোখে। এই লোক আর কি কি দেখাবে? সে ঢোক গিলে। অরুণ পাতার ভয়ার্ত মুখশ্রী দেখে মৃদু হেসে ভ্রু নাচিয়ে ইশারা করে ওদিকে তাকাতে। পাতা চায় সেদিকেই।

গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে বন্দুক হাতে কালো পোশাক ধারি গোটাকয়েক গার্ডস। কিছু পুলিশ সহ আরো কিছু লোক। একজন গার্ড মাঝখানে অবস্থান রত গাড়ির দরজা খুলে দিলে গাড়ি থেকে বের হয় বয়স্ক লোকটি। পরনে পাঞ্জাবীর উপর মুজিব কোট। 

আস্তে ধীরে এগিয়ে এসে বৈঠকে উপস্থিত অরুণের সামনে দাঁড়ায়। অরুণের দিকে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে বলে,

-" অনেক দিন পরে দেখা অরু! ভুলেই গেছো?"

অরুণ হ্যান্ডশেক করে না। দু হাত বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরে।

-" তুমি ব্যস্ত মেয়র! তোমার প্রত্যেকটা সময় মূল্যবান! তাই অপচয় করিয়ে কি লাভ! ভালো আছো?"

মেয়র স্বাধীন চৌধুরী হেসে অরুণের পিঠ চাপড়িয়ে বলে,

-" তোর সাথে কথায় পারা যাবে না! ভালো আছি! তোর কি খবর? আমার ছোট্ট নাতির?"

-" আলহামদুলিল্লাহ! তোমার ব্যস্ততম সময়ের মধ্যে আমার কথা শুনে এখানে এসেছো! কি বলে ধন্যবাদ দিবো?"

-" আরে রাখ তোর ধন্যবাদ! আগে মামলা সেট করি। কি অবস্থা এখানের?"

সবাই অবাক হয়ে দেখছে মেয়রকে! তাদের এলাকার মেয়র! সবাই কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। শমসের মজুমদার গ্লাসে পানি ঢেলে ঢক ঢক করে পানি পান করে। আজ তার কি হবে? সে কটমট চোখে হারুণের দিকে চায়। সব দোষ এই মুন্সির! তার পকেটে মালপানি ঢুকিয়ে বলে 'সেই রকম বেইজ্জতি করবেন ' আরে এখন তার নিজের মান ইজ্জত নিয়ে টানাটানি! সে চেয়ার ছেড়ে উঠে আসে। হারুণ মুন্সিও বাদ যায় না!

অরুণ তাদের উঠে আসতে দেখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে। শুকলা ও তার ছেলে কি করবে ভেবে পায় না।‌ বসে থাকা সকল মানুষ দাঁড়িয়েছে অনেক আগেই। কতবড় মানুষ এসেছে।

মজুমদার হারুণ সহ অনেকে এসে সালাম জানায় মেয়রকে। হাত মেলায়! স্বাধীন চৌধুরী হেসে সকলের সাথে কুশল বিনিময় করে। অরুণ পাশেই দাঁড়িয়ে তীক্ষ্ণ চোখে। হারুণ মুন্সির সাথে চোখাচোখি হয়। হারুণ মুন্সি কাঁচুমাচু মুখে নজর ফিরিয়ে নেয়। মজুমদার মেয়রকে অনুরোধ করে,

-" আমাদের কত সৌভাগ্য আপনি এসেছেন আমাদের দুয়ারে। আসুন বসুন স্যার?"

-" না! বসার সময় নেই! অরু একটু জলদি ফিরতে হবে।‌ কিছু মনে করিস না।"

অরুণ হেঁসে বলল,

-" না মামা! এদের জন্য আমি একাই যথেষ্ট! আর সেফটি সরূপ রাসেল আছে না।"

পাতা ঠোঁট উল্টায়! পুরো পল্টন সমেত এসে বলছে আমি একাই যথেষ্ট!! অরুণ বাকি সবার দিকে তাকিয়ে বলে,

 -"তোমাকে এখানে আনার উদ্দেশ্য ভিন্ন! এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক না! তোমার আন্ডারের এলাকায় রেপিস্ট গলা উঁচিয়ে ঘুরে বেড়ায়! আড়ালে মাদকচক্র চালিয়ে যাচ্ছে। এলাকার ছেলেমেয়ে তো নেশায় মেতে উঠছে অজান্তেই! বিভিন্ন গ্যাং তৈরি হচ্ছে। আরো কতশত! রাসেল খবর দিলো আমায়। এখন তুমি কি বলতে চাও?"

স্বাধীণ চৌধুরী অরুণের দিকে শান্ত চোখে চায়।

-" আমি ব্যাপারটা খতিয়ে দেখবো। প্রমিস করছি! এখন এই ব্যাপারটা দেখি?"

মজুমদার চট করে বলে,

-" স্যার! বসুন আপনি। আমি জানতাম না এ আপনার ভাগ্নে। সবাই বললো মেয়েটার সাথে ওনাকে বেশ কয়েকবার দেখা গেছে। তারপর বিকেলের মারামারি তাই.."

স্বাধীন চৌধুরী তাকে থামিয়ে বলে,

-" আমার ভাগ্নে বলে কোনো কথা না। ন্যায় টাই আসল। আমি সব শুনলাম তার কাছ থেকে। আপনাদের মানসিকতা দেখে আমি অবাক! সে যাই হোক অরু এখন কি করতে বলছো?"

অরুণ সরকার পকেটে হাত ঢুকিয়ে এগিয়ে আসে। পাতার দিকে তাকিয়ে বলে,

-" আগে তো ভিক্টিমের কাছ থেকে শুনি! তার মতামত জানতে হবে না? মিস পাতাবাহার আপনি বলুন? আসল ঘটনা কি? আমি শুরু থেকে জানতে চাই?"

পাতা অবাক হয় খানিকটা। এতো মানুষের ভিড়ে সে কথা বলবে? লুবমান এসে বোনের কাঁধে হাত রেখে বলে,

-" আমি বলছি আসল ঘটনা! এতো মানুষের ভিড়ে পাতা বলতে পারবে না আমি জানি!ওই কু*ত্তার বাচ্চাকে দেখছেন?আমার বোনকে হ্যারাস করতো।রাস্তাঘাটে দেখা হলে মামুনি মামুনি বলে গায়ে হাত দেয়ার চেষ্টা করতো। কিছুদিন আগে বৃষ্টির দিন ভরা রাস্তায় নোংরা প্রস্তাব দেয়। পাতা তাকে থাপ্পড় মেরে জবাব দিয়ে দেয়‌। এতেই জানোয়ারটা ক্ষেপে গেছে। এরপর থেকে হুমকি ধামকি দেওয়া শুরু। আজ সকালেও স্কুলে যাওয়ার সময় হুমকি দিয়েছে 'মুখ দেখানোর জো রাখবে না! তার পরের ঘটনা তো আপনি জানেনই। এলাকার আরো কয়েকটা কুত্তার সহায়তায় হাবিজাবি করে কত বড় বদনাম বের করলো!"

অরুণের চোয়াল শক্ত হয়। বড় পা ফেলে শুকলা মন্ডলের কলার টেনে সামনে আনে। শুকলার ছেলে বাঁধা দিলে তাকে এক থাপ্পড়ে শান্ত করিয়ে দেয়। শুকলাকে পাতার সামনে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে পাতার উদ্দেশ্যে বলে,

-" মিস পাতাবাহার মেয়েরা নরম মনেরই মানানসই। তবে সব ক্ষেত্রে নয়। আপনি বিকেলে ওদের নোংরা কথার জবাব পায়ের জুতো খুলে বুঝিয়ে দিলেন না? ট্রাস্ট মি আমি অবাক হয়েছি! সাথে অনেক খুশি। এখন পুনরায় পায়ের জুতো খুলে ওদের বুঝিয়ে দিন মেয়েদের সম্মান তাদের অহংকার। আর সেই অহংকারে হাত দেয়ার পরিণতি কি! জুতো খুলুন? খুলছেন না কেন?"

শেষের হুংকারে পাতা কেঁপে ওঠে। তার হাত পা কাঁপছে। তার পক্ষে এখন টু শব্দটি করার শক্তি নেই অথচ লোকটা জানোয়ার পেটাতে বলছে?

শুকলা দাঁতে দাঁত চেপে মাথানিচু করে পড়ে থাকে। তার ভিতরে দাও দাও করে আগুন জ্বলছে। পাতাকে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অরুণ দন্ডায়মান পুলিশের হাত থেকে লাঠি নিয়ে পাতার হাতে দিয়ে বলে,

-" নিজের জুতো কেন নোংরা করবেন এটা নিন? নিন বলছি? দয়া হচ্ছে নাকি?"

পাতা লাঠি ধরে রাখতে পারে না। পরে যায়। নিজেও টলতে থাকে। শক্তি হারিয়ে ফেলেছে যেন। পরে যেতে নিলে আতিকুর ইসলাম ধরে তাকে। পাতা বাবার বুকে চুপটি মেরে থাকে। দৃষ্টি অরুণের দিকে স্থির। লোকটা বেশ রেগে। মুখশ্রী লাল হয়ে আছে। ভয়ংকর লাগছে দেখতে। লুবমান তুলে নেয় লাঠিঠা। আতিকুর ইসলাম মানা করে ছেলেকে। লতা কোথা থেকে তেড়ে এসে লুবমানের থেকে লাঠি কেড়ে নিয়ে শুকলাকে এলোপাথাড়ি মারতে থাকে। শুকলা ব্যাথায় আর্তনাদ করতে থাকে। লুবমান, রাতুলের মুখের হাসি ফুটে ওঠে। অরুণ সরকার আরেকটা লাঠি নিয়ে সাথে যোগ দিল। শুকলার ছেলে করুণ চোখে চেয়ে। কিন্তু এগোনোর সাহস পায় না। হারুণ মুন্সি সুযোগ বুঝে কেটে পরে ফাঁক ফোকড় দিয়ে। অনেকেই সেটা দেখে হাসে। মজুমদার ফ্যাকাশে মুখে মেয়রের সাথে দাঁড়িয়ে দেখছে। সে মোটেও শুকলার চিন্তায় না। বরং আগে তার কি হবে সে চিন্তায়। শরীফ, আজম সহ এলাকার আরো দাপট দেখানো লোকজন চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের মুখেরও রঙ পাল্টে গেছে। তবে সাধারণ লোকজন বেশ খুশি মনেই সবটা ইনজয় করছে। ফ্রিতে এন্টারটেইনমেন্ট কেই বা মিস করতে চায়।

লাবনী আক্তার এসে লতাকে আটকায়। মরে টরে না যায় আবার।‌ স্বাধীন চৌধুরী রাসেলকে ইশারা করে অরুণকে থামাতে। রাসেল অরুণের হাত থেকে লাঠি কেড়ে নেয়। শুকলা মন্ডল রক্তাক্ত হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। শামিম এসে তাকে ধরে অরুণের উদ্দেশ্যে বলে,

-" কাজ টা ভালো করলেন না মোটেও? আর মজুমদার সাব আপনেও?"

মজুমদার কলার ঠিক করে। অরুণ তেড়ে আসতে নিলে রাসেল আটকায়। শামিমের উদ্দেশ্যে বলে,

-" হসপিটাল নিয়ে যাও! পরে কথা হবে!"

শরিফ আজম সহ কিছু লোক এসে ধরাধরি করে তাকে নিয়ে যায়। রাসেল অরুণের কাঁধে হাত রাখল। অরুণ ঘেমে নেয়ে একাকার।শার্ট গায়ে লেপ্টে। চশমাটা ভেঙে পায়ের তলায় গড়াগড়ি খাচ্ছে।

-" কুল ম্যান!"

অরুণ নিজেকে শান্ত করে। স্বাধীন চৌধুরী তার দিকে টিস্যু বাড়িয়ে হেসে বলে,

-" একদম বদলাস নি! শুধু ছেলের সামনে ভদ্রলোক সেজে থাকার নাটক!!"

অরুণ হেসে টিস্যু নিয়ে মুখ মুছে। ছেলেটা ঘুমিয়ে পড়েছে কি? নাকি তার অপেক্ষায়? মেয়র স্বাধীন আতিকুর ইসলামের সামনে যায়।

-" হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে। শাস্তি এখনো শেষ হয়নি। ওর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে আপনি চিন্তা করবেন না!"

পাতা বাবার বুক থেকে মাথা তুলে সোজা হয়। আতিকুর হেসে বলে,

-" ধন্যবাদ আপনাদের। আপনারা না থাকলে কি যে হতো! দোষ না করেও মেয়েটা কাঠগড়ায় দাঁড়ালো! অন্যের কটুক্তি সহ্য করলো। ভবিষ্যতেও করতে হবে। কারণ ঘটনা এখানেই শেষ নয়। এই যে এলাকাবাসী দেখছেন এরা স্বচক্ষে দেখলো অপরাধী কে! তবুও পিঠ পিছে সমালোচনা করে বেড়াবে 'মেয়েটা খারাপ। ভালো না। বাজে কাজ করে বেড়ায়' এটাই মানুষের স্বভাব। এখন এদের মুখ তো বন্ধ করতে পারবো না। তবে আমি ওই শুকলা মন্ডলের শাস্তি চাই! কঠোর শাস্তি!"

মেয়র তার কাঁধে হাত রেখে স্বান্তনা দেয়। কথাগুলো মিথ্যে নয়। দুঃখজনক বাস্তবতা। এখন মানুষের ধারণা তো বদলাতে পারবে না। অরুণ কথা গুলো মনোযোগ সহকারে কর্ণপাত করে। কথাগুলো চরম বাস্তব। সমাজে একজন বিয়ের বয়সী কন্যার নামে কোনো কিছু রটে গেলে সেটা খুবই বাজে ভাবে এফেক্ট করে তার জীবনে। সে অল্প সময়ে অনেক কিছুই ভেবে নেয়। নিজেকে পড়ে নেয়। মনকে প্রশ্ন করে, সাথে সাথে উত্তরও পেয়ে যায়। অরুণ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ছেলের আদুরে মুখ খানি স্মরণ করে আতিকুর ইসলামের সামনে দাঁড়িয়ে সিনা টান টান করে কথা পাড়ে।

-" আঙ্কেল? আমার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনবেন। আন্টি,মিস পাতাবাহার, রাতুল সবাই! আমার আর মিস পাতাবাহারকে জড়িয়ে যে কথাগুলো উঠেছে সব মনগড়া কাল্পনিক কাহিনী। মিস পাতাবাহার আমার বাচ্চার টিচার।দ্যাটস ইট! আঙ্কেল আপনার কথাগুলো হান্ড্রেড পার্সেন্ট সত্য। আমাদের সমাজে নিন্দুকের অভাব নেই। তারা এসব কল্পকাহিনীকে আরো মসলা মাখিয়ে রোস্ট করবে। এতে পাতাবাহারের লাইফে বাজে এফেক্ট পড়বে। আমি ব্যবসায়ী মানুষ। আমার নামেও বলবে অনেক কথা। কিন্তু আমার বেলা বলাই শেষ। আমার কিচ্ছুটি করতে পারবে না। কারণ আমার নাম, জস, টাকা, পাওয়ার। সব চেয়ে বড় কথা আমি ছেলেমানুষ।এটা দূর্ভাগ্যবশত সত্যকথা!
কিন্তু মিস পাতাবাহার?"

পিন পিন নিরবতা। পাতা স্থির দৃষ্টিতে অরুণের দিকে তাকিয়ে। তার বুকটা ধ্বক ধ্বক করছে।অরুণের কথা গুলো কানে বাজছে। অরুণের দৃষ্টি আতিকুর ইসলামের দিকে স্থির। সে পুনরায় বলতে শুরু করে,

-" দেখুন আমি সরাসরি কথা বলতে পছন্দ করি। আমি ভেবেচিন্তে আপনার কাছে বিয়ের প্রস্তাব রাখছি আমি মিস পাতাবাহারকে মিসেস পাতাবাহার বানাতে চাই! আপনি বলবেন এমনটা হলে লোকে কথা বলার সুযোগ পেয়ে যাবে! হ্যা পাবে, কিন্তু লোকে এমনটা না হলেও কথা বলা বাদ দেবে না। তবে হ্যা অরুণ সরকারের স্ত্রীর ব্যাপারে কথা বলতে লোকে একশবার ভাববে!"

পাতার চক্ষুদ্বয় কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম। এই লোকের মাথা টাথা গেছে নাকি!! আতিকুর ইসলায় সহ বাকি সকলেরও সেম অবস্থা। মেয়র সাহেব অবাক হন। তবে পরিস্থিতি বিবেচনা করে অরুণের গার্ডিয়ান হিসেবে আতিকুর ইসলামের হাত ধরে একপ্রকার অনুরোধের সুরেই বলে,

-" দেখুন ভাই? আমার ছেলে লাখে একটা। আপনারা চেনেনই নিশ্চয়ই। আমার বোনটা ওকে ছোট রেখেই গত হয়েছে। ওর বাপটাও বেঁচে নেই। আমি অভিভাবক হয়ে আপনার মেয়ের হাত চাইছি! খুব আদর যত্ন করে রাখবে দেখবেন! ভালোবাসার কাঙাল ও! ভালোবাসতে জানে খুব করে। ভাই?"

আতিকুর ইসলাম বিপাকে পড়ে যান। কি বলবেন? একজন সম্মনীয় মেয়র হাত ধরে অনুরোধ করছে? একছেলের বাবার সাথে কি করে অবিবাহিত মেয়ের বিয়ে দিবেন? তার সাথে বয়সের পার্থক্যও তো অনেক। প্রায় এক যুগের মতো! সে পাতার দিকে চায়। পাতা বেশ অস্বস্তিতে পড়ে এবার। বাবা কি রাজি হবে? সে বোনের দিকে চায়। লতা বোনের চাহনি দেখে আর চুপ থাকে না। এগিয়ে এসে বলে,

-" আঙ্কেল আমার কথায় কিছু মনে করবেন না। অরুণ ভাইয়াকে আমি চিনি। তিনি নিঃসন্দেহে একজন ভালো মানুষ। একজন সুপাত্র। আমার বোনটা নরম মনের। বাবা রাজি হলে তার উপর কথা বলবে না। তবে আমি রাজি না। স্যরি বাট অরুণ ভাইয়া একজন ডিভোর্সি সাথে একটা ছেলের বাবা। তাছাড়া বোনের থেকে বয়সেও অনেকটা বড়। আমার বোনটা ছোট থেকে অনেক সহ্য করেছে। ছোট্ট জীবনে শুধু মানিয়েই গেছে। আমি চাই না ভবিষ্যতেও এমন হোক! আপনারা আজ অনেক করেছেন আমাদের জন্য তার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।"

স্বাধীন চৌধুরী ভাগ্নের পানে চায়। গম্ভীর মুখশ্রীতে আতিকুর ইসলামের পানে চেয়ে। সেও চায়। আতিকুর ইসলামের হাত এখনো তার মুঠোয়। অরুণ পকেটে হাত গুজে গম্ভীর মুখে একনজর পাতার দিকে চায় যে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে। সে কাঁধ উঁচিয়ে বলে,

-" আমি প্রস্তাব রেখেছি। এখন বাকিটা আপনাদের ব্যাপার। মামা চলো?"

স্বাধীন চৌধুরী মাথা নাড়ে। মজুমদার সহ বাকি গ্রামবাসীর মধ্যে বিরাট কৌতুহল। জন সাধারণের মাঝে তো গুসুর ফুসুর চলছে। এতো ভালো প্রস্তাব কেন নাকচ করল? হ্যান ত্যান! রাসেল এখনো শকে আছে। ডিভোর্সের পর যে বন্ধু পুনরায় বিয়ের কথা উঠলে চেতে উঠতো! আজ হঠাৎ কি হলো? এই হাঁটুর বয়সী মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দিলো! আবার রিজেক্টও হলো! আহ তার বন্ধুর জন্য বেজায় কষ্ট হচ্ছে। লাবনী আক্তার এগিয়ে এসে স্বামীর কাছে নিচু গলায় ফিসফিসিয়ে বলে,

-" ভেবে দেখুন একবার। প্রস্তাবটা মন্দ নয়। এমনিতেই এই ঘটনার পরে মনে হয় না পাতার জন্য ভালো প্রস্তাব আসবে!"

খুবই ধীর গলায় বলেছে লাবনী আক্তার। যেন শুধু আতিকুর ইসলামের কানেই যায়। তবে আতিকুর ইসলামের পাশে নিচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পাতা সোজা হয়। কথাটা তার কানেও পৌঁছেছে। তার বুকটা যেন চৌচির হয়ে গেছে।সে আতিকুর রহমানের উত্তরের আশায়। আতিকুর ইসলাম গম্ভীর মুখে স্ত্রীর কথায় জবাব দিলো,

-"ওর লাইফ ওর ডিসিশন। আমি দায়িত্ব পালনে কখনো পিছপা হবো না।"

পাতা শ্রবণ ইন্দ্রিয়ে 'দায়িত্ব' কথাটা ঘুরপাক খায়। তার চোখ ভরে ওঠে। সে পলক ঝাপটিয়ে লুকানোর চেষ্টায়। একটু আগেও বাবার আচরণে বুক ফুলে উঠলেও এখন ভারী হয়ে উঠেছে। পিছন ফিরে লোকের ভিড়ে অরুণ সরকারকে খোঁজে। সবাই রাস্তার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। লম্বাচওড়া অরুণ সরকারকে সকলের ভিড়ে খুঁজে পেতে কষ্ট হয় না। সে আশে পাশে চায়। সবাই যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কেউ কেউ চলেও গেছে। মজুমদার সহ কিছু মুরুব্বি এখনো দাঁড়িয়ে। সেও বৈঠক থেকে বেরিয়ে গলা পরিষ্কার করে ডাক দেয়,

-" মি. অরুণ সরকার?"

তার ডাকে অনেকেই তার দিকে তাকিয়ে। আতিকুর ইসলাম,লাবনী ,লতা, রাতুল , লুবমান পাতার পাশে এগিয়ে আসে চিন্তিত মুখে। তবে কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তির কর্ণগহ্বরে পৌঁছায় নি সেই ডাক। সে তো মামা ও বন্ধুর সাথে পা মিলিয়ে রাস্তায় উঠে কথা বলছে টুকিটাকি বিষয়ে। পাতা তার ব্যাকসাইড দেখতে পায় শুধু। সে আবারও গলা উঁচিয়ে ডাক দেয়,

-" মি. অরুণ সরকার? এই নাক উঁচু ম্যানারলেস লোক?"

রাতুল স্বাধীন চৌধুরীকে এলাকার লোকের বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা বলছিল সংক্ষেপে। অরুণ নীরব স্রোতা। তবে হঠাৎ কিছু শ্রুতিমধুর কন্ঠে ভর্ৎসনা কানে বাজায় ভ্রু যুগল কুঁচকে পিছে মোড়ে। পাতাকে দেখে রাসেল ও মামার উদ্দেশ্যে বলে,

-" আমি আসছি তোমরা কথা বলো!"

বলে এগিয়ে আসে। পাতার সন্নিকটে দাঁড়িয়ে দুহাত বুকে গুঁজে প্রশ্নবিদ্ধ চাহনি নিক্ষেপ করে। পাতা নাক টানে। এক বুক সাহস নিয়ে অরুনের চোখে চোখ রাখে ঘার উঁচিয়ে। আর বিনা দ্বিধায় বিনা সংকোচে প্রশ্ন করে,

-" আপনি প্রস্তাব টা ভেবে চিন্তে দিয়েছেন? মন থেকে বলবেন!"

অরুণ পাতার চোখে চায়। আঁখি জোড়া টলমল করছে। শ্বেত জলে ভাসমান কালো কর্ণিয়া যেন কিছু খোঁজার প্রচেষ্টায়।

-" জি!"

পাতা বৃদ্ধাঙ্গুল দ্বারা আঁখি জোড়ার নোনাজল মুছে। পুনরায় নাক টানে। ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে। সে আত্নবিশ্বাসের সাথে স্পষ্ট সুরে আওড়ায়,

-" আমি আপনার প্রস্তাব মেনে নিচ্ছি।"

লাবনী আক্তারের মুখশ্রী উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। আতিকুর ইসলাম শান্ত চোখে পাতার দিকে চায়। লতা এগিয়ে এসে পাতার বাহু ধরে বলে,

-" পাগল হয়ে গেছিস?"

পাতা মাথা নাড়ে। না হয় নি সে পাগল! সে তো শুধু দায়িত্ব হতে নিস্তার পেতে চায়‌। চায় না কারো দায়িত্ব হয়ে থাকতে। অরুণ শান্ত চোখে পাতার দিকে চেয়ে।পাতা অরুণের চোখ থেকে চোখ সরায় না। অরুণ দৃষ্টি স্থির রেখে বলে,

-" আপনি ভেবেচিন্তে বলছেন তো? পরে পস্তাবেন না?"

-" না। আমি পাতা স্বজ্ঞানে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত জানাচ্ছি!"

অরুণের অধরকোনে ক্ষীণ হাসির ঝিলিক দেখা যায়। সে পাতার দিকে তাকিয়েই গলা উঁচিয়ে স্বাধীন চৌধুরীর উদ্দেশ্যে বলে,

-" মামা কাজি মৌলভি যেটা পাও হাজির করো। এক্ষুনি মানে এক্ষুনি। এই মুহূর্তে বিয়ে হবে। আপনার কোনো সমস্যা?"

শেষের কথাটা পাতাকে জিজ্ঞেস করে। পাতা না করে সমস্যা নেই। বরং সে যতো তাড়াতাড়ি দায়িত্ব নামক সম্পর্ক থেকে মুক্তি পাবে তত তাড়াতাড়ি স্বস্তিদায়ক শ্বাস টানতে পারবে। কারো দায়িত্ব নামক বোঝা নামিয়ে নিজ ঠিকানায় চলে যাবে। অরুণ দেড়ি করতে চায় না। বলা তো যায় না কখন না করে দেয়! আর একবার যেহেতু রাজি হয়েছে আর কোনো কথাই শুনবে না।

আতিকুর ইসলাম,লতা, রাতুল, লুবমান সহ এলাকাবাসী সব নীরব দর্শক। স্বাধীন চৌধুরী হেসে এগিয়ে আসেন , সাথে রাসেল। রাসেল এসেই বন্ধুর কাঁধ জড়িয়ে কানে কানে কিছু বলে। অরুণ তাকে ইশারায় শান্ত করে। স্বাধীন চৌধুরী মজুমদারের কাছে যায় মৌলভি বা কাজির খোঁজে। শমসের মজুমদার এলাকার ইমাম সাহেবকে ডাকে। সাথে অনুরোধ করে,

-" স্যার? বিয়েটা আমার বাড়িতে গিয়ে পড়াবেন? স্যার প্লিজ? আমি নিজেকে ধন্য মনে করবো! আর ওদের থেকে ক্ষমাও চাইছি!"

অরুণ না করে দেয় সরাসরি। এই বৈঠকেই পড়ানো হবে বিয়ে। মৌলভি সাহেব বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তাই দেড়ি হয় না। ওযু সেরে এসে সব কার্যক্রম শুরু করে।

মেঘাচ্ছন্ন চাঁদনী রাতে পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয় পাতা ও অরুণ। উপর ওয়ালাকে সাক্ষী রেখে তিন কবুল বলে একে অপরের সাথে জুড়ে যায় এক পলকে। একে অপরের অর্ধাঙ্গ হয়ে কালেমা পাঠ করে দুজনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয় একে অপরের ঢাল হয়ে থাকার। পাতা পুরোটা সময় নিশ্চুপ ছিল। কবুল বলার সময়ও তার কন্ঠ কম্পিত হয় নি। সে অরুনের দিকে একপল চেয়ে বিনা দ্বিধায় তার জীবনে অরুণ সরকারকে স্বাগতম করেছে।

অরুণ সরকারও চুপচাপ ছিল। কবুল বলার আগ মুহূর্তে তার প্রাক্তন স্ত্রী বর্ষার কথা স্মরণে আসে। এভাবে পূর্বেও একজনকে কবুল বলে নিজের সাথে জড়িয়ে ছিল। সে সম্পর্ক ছিন্ন করে চলে গিয়েছে। সে চোখ বুজে ছেলের কথা স্মরণ করে। একবার বলেছিল 'আব্বু মিস পাতা আমার আম্মু হলে খুব ভালো হবে তাই না?' সে কবুল বলতে আর সময় নেয় না। পাতার প্রতি ভালোবাসা নেই হয়তো বা। কিন্তু সে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে তাকে ভালোবাসার চাদড়ে মুড়িয়ে নেয়ার। তবে তার শুধু একটাই কামনা তার কলিজাটাকে যেন আগলে নেয়।
.
.
.
চলবে......................................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp