আরোরা - অন্তিম পর্ব ০৯ - সিজন ২ - তাসমিয়া তাসনিন প্রিয়া - ধারাবাহিক গল্প


#আরোরা (সিজন ২)
#শেষ_পর্ব_৯
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া



শীতের রুক্ষতা বিদায় নিয়ে প্রকৃতিতে তপ্ত গরমের আবির্ভাব ঘটেছে। সেই নিয়ে এডওয়ার্ডের ভীষণ অশান্তি। শীতকাল খুব ভালো লাগে ওর। কিন্তু আরোরার আবার বর্ষা পছন্দ। গরমকালেও বেশ ভালোই লাগে। এখন কেনো ভালো লাগে সেই নিয়ে গতকাল এডওয়ার্ডের সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছে। ফলশ্রুতিতে কালকে আলাদা ঘরে শুয়েছিল আরোরা। তবে সবটাই যে মিছিমিছি তা এডওয়ার্ড জানে। আরোরা চাচ্ছিল এডওয়ার্ড ওকে মানিয়ে সবকিছু ঠিকঠাক করে আবার নিজের কক্ষে ফিরিয়ে নিয়ে আসুক। প্রতিবার সেটাই হয় কিন্তু! এবার সেরকম কিকিছু ঘটেনি। এডওয়ার্ড ইচ্ছে করে ভাবলেশহীন হয়ে ছিলো গোটা সময়। তাই অভিমানের পাল্লা কিছুটা ভারী হয়েছে আরো। 

" আরোরা কিছু হয়েছে? তোমাকে দেখলাম গতকাল অন্য ঘরে গিয়ে ঘুমালে! "

বিকেল গড়িয়ে প্রায় সন্ধ্যা হওয়ার আগমুহূর্ত। আরোরাকে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সাঁচি এগিয়ে এসে শুধালো। 

" তেমন কিছু না সাঁচি। "
" বুঝলাম। মান-অভিমান চলছে। আচ্ছা শোনো একটা কথা বলার আছে। "
সাঁচি লজ্জা মাখা মুখে থেমে থেমে বললো। লজ্জায় গাল লাল হয়ে গেছে মেয়েটার। আরোরা ওর এমন হাবভাব দেখে কিছুটা গম্ভীর হয়ে দৃষ্টিপাত করলো ওর দিকে। 
" কী হয়েছে বলো তো।"
" আমি.... না মানে আমরা বাবা-মা হতে চলেছি।"

সাঁচি কথাটা বলা শেষে মাথা নিচু করে মুচকি হাসলো। আরোরা ফিক করে হেসে উঠলো। আলতো করে আলিঙ্গন করলো সাঁচিকে। হাসি হাসি মুখে বললো সে,
" দারুণ খবর সাঁচি। সবাইকে বলেছো? ম্যাক তো এডওয়ার্ডকে কিছু বললো না! "
" কাউকে বলিনি তো। প্রথমে তোমাকে বললাম। ম্যাক তো প্রাসাদে নেই, রাতে ফিরবে। তখন বলবো।"
" বেচারা খুশিতে পাগল না হয়ে যায়। আমরা সবাই জানি ম্যাক তোমাকে কতটা ভালোবাসে। আর সেই ভালোবাসার ডালপালা প্রসারিত হল শুনলে ভীষণ খুশি হবে।"
সাঁচিও হাসতে হাসতেই বলে,
" হ্যাঁ ঠিকই বলেছো।"
" এখন থেকে সাবধানে থেকো বুঝলে? "
" ঠিক আছে। তুমিও মান- অভিমান মিটিয়ে একটা সুখবরের ব্যবস্থা করো।"
সাঁচি কথাটা বলে হাসতে হাসতে স্থান ত্যাগ করে। আরোরা কথাটা ভেবেই লজ্জায় দৌড়ে ঘরে চলে যায়। ভাগ্যিস এডওয়ার্ড কক্ষে নেই! নয়তো এই লাজরাঙা মুখটা দেখে ফেলতো।

রাতের খাওয়াদাওয়া শেষে অন্য ঘরে না শুয়ে নিজের ঘরেই ফিরে আসে আরোরা। এডওয়ার্ড কিছু একটা ভাবছে। আরোরাকে দেখে নড়েচড়ে বসলো। 
" হঠাৎ এখানে এলে? ওই ঘরেই যাও। আজকে একটু একা থাকতে চাই আমি আরোরা।"

এডওয়ার্ডের এমন আচরণে ভীষণ আহত হলো আরোরা। কিন্তু কিছু বললো না। বলার মতো মন মানসিকতা নেই এখন। এডওয়ার্ড ওকে এভাবে চলে যেতে বললো ভেবেই অবাক হচ্ছে ও। 

" আচ্ছা।"

আরোরা চলে যায় কক্ষ থেকে। এডওয়ার্ড নিজেও ঘর থেকে বেরিয়ে ছাঁদের দিকে এগোলো। 

" ছাড়ো না! একটা কথা বলবো, শোনো।"
ম্যাক সাঁচিকে না ছেড়ে ঘাড়ে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়েই শুধালো, 
" কী কথা বলো শুনছি। তারজন্য ছাড়তে পারবো না হুহ্। "
" ধরে থাকো তাহলে। তুমি না মানে আমি... "
" আমতা আমতা করে কী বলছ? ভালো করে বলো।"
ম্যাক এবার সাঁচিকে বাহুডোর থেকে মুক্ত করে সামনাসামনি বসে। সাঁচি কিছুটা ইতস্ততভাবে বলে, 
" তুমি, তুমি বাবা হতে চলেছো।"
" কী! কী বললে? আবার বলো?"
" আমরা বাবা-মা হবো ম্যাক। "

ম্যাক এক মুহুর্ত বিলম্ব না করে সাঁচিকে কোলে তুলে নিয়ে খুশিতে দু'একটা ঘুরি দিয়ে চিৎকার করে বলতে লাগলো,  
"আমি বাবা হবো! হুররেএ! "
" উফ আস্তে বলো না। "
" কীসের আস্তে? আমি বাবা হবো সবাই জানবে না?"

 " উঁহু! জানবে তবে স্বাভাবিকভাবে বলবে। নামাও এখন, মাথা ঘুরছে আমার। "

সাঁচিকে আস্তে করে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে ম্যাক নিজেও ওর পাশে বসেছে। 
" দুঃখিত! কষ্ট হচ্ছে না তো?"
" না। শান্ত হও, এতো উত্তেজনা ভালো না। "
" উফ কী যে বলো না সাঁচি! জীবনে প্রথম বাবা হচ্ছি, তুমি বুঝবে না কী হচ্ছে আমার মনেপ্রাণে। "

সাঁচি নিজের গালে হাত রেখে হেসে বললো, 
" আমি তো আগেও একবার মা হয়েছিলাম তাই সবই বুঝি।"
" এহহ!"
" নয়তো কী? তুমি প্রথম বাবা হচ্ছ তাহলে আমি কি দ্বিতীয়বার মা হচ্ছি!"
ম্যাক সাঁচির পেটে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। খুশি খুশি মুখখানা এগিয়ে ললাটে চুম্বন এঁকে দিলো।
" এসব বাদ দাও। এখন ঘুমাও। রাতজাগা যাবে না একদমই। চলো চলো।"
" আরে শোনো...."
" কাল শুনবো সব। "
সাঁচিকে বালিশে শুইয়ে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো ম্যাক। সাঁচি গোপনে নিঃশব্দে হেসে সৃষ্টিকর্তার নিকট সন্তুষ্টি প্রকাশ করছে। সবার জীবনে নায়ক নয় কারো কারো জীবনে ভিলেন এসেও জীবন বদলে দিতে পারে। আর সেই ভিলেনই প্রিয়তমাকে বুক দিয়ে আগলেও রাখে। 

বিছানায় শুয়ে এপাশ-ওপাশ করছে আরোরা। এডওয়ার্ডের রূঢ় আচরণ ভীষণভাবে ভাবাচ্ছে। হঠাৎ কী হলো? ভাবনার ছেদ ঘটলো দরজার কষাঘাতে। আরোরা শোয়া থেকে উঠে বসলো। 
" কে? কে বাইরে? "
উত্তর পেলো না কোনো। বিষয়টা দেখার জন্য দরজা খুলে ঘরের বাইরে দেখছে আরোরা। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও কেউ নেই। তবে দরজার বাইরে একটা উজ্জ্বল রঙের আলোকরশ্মি স্থির হয়ে আছে। কেউ সংকেত পাঠিয়েছে! কিন্তু কে? আরোরা কিছু ভাবার আগেই আলোকরশ্মিটা তার নিজ গতিতে এগোতে লাগলো। আরোরাও পিছু নিলো সে আলোকরশ্মির। একেবারে ছাঁদে এসে থামলো আরোরা। এই পর্যন্ত আসতেই গায়েব হয়ে গেছে আলোকরশ্মি। তাহলে কেউ এখানেই ডেকে পাঠিয়েছে ওকে। কে এবং কেনো সেই প্রশ্ন আরোরার মস্তিষ্কে ঘুরপাক খাচ্ছে বারবার। পরমুহূর্তেই ঘটলো এক বিস্ময়কর ঘটনা। ছাঁদে হুট করে নানান রঙের লন্ঠন জ্বলে উঠলো। মানে আগুনের রঙ আলাদা আলাদা! কোনোটার আগুনের রঙ লাল আবার কোনোটার নীল! কী অদ্ভুত ব্যাপার-স্যাপার। তবে জাদুবলে তো সবকিছুই করা যায় এটা ভেবেই আশেপাশে সতর্ক দৃষ্টি বুলাতে চেষ্টা করছে মেয়েটা। 

“ শুভ পঞ্চম বিবাহবার্ষিকী প্রিয়তম অর্ধাঙ্গিনী। আগামী পাঁচ কোটি বছর এভাবেই আমার সাথে থেকো, ভালো থেকো।"
আরোরা চমকে পিছনে তাকিয়ে দেখে এডওয়ার্ড হাতে লাল রঙের গোলাপফুল নিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে আছে। মেয়েটা হাসলো। এগিয়ে গেলো প্রিয়তম স্বামীর দিকে। 
" কম হয়ে গেলো না? পঞ্চাশ কোটি বছর বলতে? পাগল একটা। এজন্যই ওরকম করছিলে দু'দিন? চমকে দিবে বলে?"

গোলাপফুল গুলো হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো আরোরা। এডওয়ার্ড হেসে বললো, 
" বুদ্ধিমতী বউ। "
" অবশ্যই! কিন্তু তুমি ভীষণ বাজে। এরকম করতে হবে সেজন্য? আমার কষ্ট হয়েছে, চিন্তা হয়েছে। "
" আরকিছু হয়নি? আদর মিস করোনি? "
" ধ্যাৎ! "
এডওয়ার্ডের বুকে কয়েকটা আদুরে ঘুষি মারলো আরোরা। বুকে মুখ গুঁজে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলো কিছু সময়। এডওয়ার্ড ওকে জড়িয়ে ধরে ডানা ঝাপটে আকাশে উড়াল দিলো। শূন্যে শূন্যে ভেসে প্রেমালাপ করলো মধ্যরাত পর্যন্ত দু'জন। 

সকাল হতেই সমস্ত প্রাসাদে সাঁচির মা হওয়ার খবর ছড়িয়ে গেছে। সবাই খুব খুশি। কিয়ামও খুশি। কঠিন শাস্তির পর থেকে নিজেকে শুধরে নিয়েছে লোকটা। তবে ম্যাক এখনও পুরোপুরি বিশ্বাস করে না বাবাকে। তবে মিলেমিশে থাকে। ঘুম ঘুম চোখে চোখ মেলে তাকিয়ে আছে আরোরা। এডওয়ার্ড বসে আছে গম্ভীর হয়ে। আরোরা উঠে বসলো। 
" কী হয়েছে? "
" অনেক কিছু। "
" কী?"
" আমার আগে ম্যাক বাবা হয়ে গেছে। "
এডওয়ার্ডের বাচ্চামিতে আরোরা হেসে কুটিকুটি অবস্থা। 
" তাতে কী? "
" কথা কম কাজ বেশি। আমাকেও বাবা হতে হবে..... "
আরোরা কিছু বলার সুযোগ পেলো না। প্রিয়তমর উষ্ণ অভ্যর্থনা সাদরে গ্রহণ করতে ব্যস্ত হয়ে উঠলো। ভালোবাসা সুন্দর, ভীষণ সুন্দর। তবে মানুষটা যদি সঠিক হয় তবেই। ভালোবাসা সবকিছুর উর্ধ্বে, তাই এক নেকড়ে ও এক ভ্যাম্পায়ারকেও একত্র করতে পেরেছে এই কল্পনার জগতে। 



সমাপ্ত........................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন