উন্মুক্ত লাইব্রেরী
পর্ব ২১
আয্যাহ সূচনা
চালের দোকানের সামনে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে আছে বর্ণ। দাঁতের পাটি বের করে মোকলেস মাতবরের পানে চেয়ে।সবসময়ের মত তার হাসির রহস্য বুঝলেন না মোকলেস মাতবর।প্রশ্ন করার ইচ্ছাটুকু নেই।এভাবে হিসাবের খাতায় মনোযোগী হন।
“আপনার পোলা কই?”
বর্ণের প্রশ্নের জবাবে মোকলেস সাহেব হলে উঠেন,
“তোর আমার পোলারে দিয়া কাম কি?”
“আপনার পোলার উপরে দুয়েকবার হাত না ঝাড়লে আমার আত্মা ঠান্ডা হয়না।সপ্তাহে দুয়েকবার পাঠাইবেন আমার কাছে।মাল যন্ত্র যেটিতে জং ধরছে ঝালাই কইরা দিমু নে।”
“আমার পোলার গায়ে আবার একটা ফুলের টোকা পড়ুক! তোরে জিন্দা গাড়ুম!”
চেঁচিয়ে উঠলেন মোকলেস সাহেব।কণ্ঠে ঝাঁঝ মিশ্রিত।চোখজোড়া রক্তবর্ণ।হুট করে এভাবে রেগে যাওয়া দেখে বর্ণ উচ্চ হাসে। শত্রুকে খেপানোর মাঝেও আলাদা বিজয়ের সুবাস মিশ্রিত।রেগে গিয়ে যত গলা উঁচু করবে,ছটফট করবে ততই প্রশান্তি মিলবে।
“আরেহ আপনিতো চেইতা গেলেন।কুল কুল!এই বয়সে এত তেজ ভালা না।”
“তুই সর চক্ষের সামনে থিকা!”
“গ্রাহকরে কেউ এমনে খেদায় দেয়?আমিতো চাইল কিনতে আইছি।এলাকার স্বনামধন্য চাইল বিক্রেতা আপনে।তাই আপনার কাছেই আইলাম।”
ব্যবসায় হেলাফেলা করা যাবেনা। ব্যক্তিগত শত্রুতা তার নিজের জায়গায়।দোকানে কর্মরত এক ছেলেকে ডেকে বললেন বর্ণের কি লাগে সেটা দিতে।বর্ণ হাসি মুখে দু কেজি চাল নিলো।নিয়ে টাকা না দিয়েই হাঁটতে শুরু করলে মোকলেস মাতবর দৌঁড়ে বেরিয়ে এলেন।গালি দিয়ে বললেন,
“এই জানোয়ার এর বাচ্চা ট্যাকা কে দিবো?”
বর্ণ কিছু পথ এগিয়েছিল।ফিরে চেয়ে প্রশ্ন করে,
“টাকা লাগবো নাকি আবার?”
“লাগবো না তাইলে?জমিদারি পাইছোস নিহি?”
“হ জমিদারি পাইছি।যেদিন জমিদারি ছাড়ুম ওইদিন আপনে পচতাইবেন সবচেয়ে বেশি।……..কি কইছি বুঝছেন না?”
অর্ধেক কথা বলে মোকলেস সাহেবকে অজানা অদৃশ্য ভয়ে ফেলে দেওয়ার স্বভাব পুরোনো বর্ণের।ছেলের হাড় ভাঙার পর এখন পর্যন্ত সোজা হয়ে হাঁটতে পারেনা সে।উল্টো থানায় জিডি করে এসেছে বর্ণ।তার কখনো কিছু হলে সমস্ত দায়ভার মোকলেস মাতবর এবং তার ছেলের।সম্পূর্ণ এলাকাবাসী জানে এই খবর।উপায় পাচ্ছে না খুঁজে তাকে এলাকা থেকে বের করার।এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে এবার আলোচনায় না বসলেই নয়।চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা দোলান মোকলেস মাতবর।বর্ণের ব্যবস্থা করতেই হবে।
বাড়ির সদর দরজায় এসে বিরক্তির চরম সীমায় বর্ণ।সামনেই ওড়নায় আঙ্গুল পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে আসছে সাদিয়া।কপালে আঙ্গুল চালিয়ে এড়িয়ে যেতে চেয়েও পারলো না।সাদিয়া ডেকে বসে।
অভিমানী গলায় সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
“হুনলাম বিয়া করছো?”
“হ”
“কামটা কি ভালো হইলো?” দুখিনীর মত প্রশ্ন করলো সাদিয়া।
“তোমারে কেঠা কইলো?”
“সাব্বিরের মা আমগো বাড়িত কাম করে।হেই কইছে।”
“ওহ আচ্ছা”
“তোমার না বলে কি সমস্যা আছে?তাইলে বিয়া করলা কেমনে?আমারে না কইরা?”
ভনিতা করে বর্ণ বলে উঠে,
“তোমারে বিয়া না করার আরো একটা কারণ আছেগো ছাদিয়া!”
“সাদিয়া আমার নাম….. কি কারণ হুনি?”
“কারণ হইলো তোমার এই চেহারা”
সাদিয়া মুখে হাত রাখে।তার চেহারার সাথে বিয়ে না করার কারণ?জানতে চেয়ে প্রশ্ন করে,
“কি হইছে আমার চেহারায়?”
বর্ণ বলে উঠলো,
“এত সুন্দর চেহারার মাইয়া যদি মা হইবার না পারে কেমন দেহায় কও?আমি কাউলা একটা পোলা।তোমার লগে মানাইবো না।আমি যেই ছেমড়িরে বিয়া করছি দেখতে এক্কেরে কটকটির মতো।ছিঃ!এত্ত বিশ্রী কি কমু। আন্ধারে বাত্তি ছাড়া দেহাই যায় না।আমার সিস্টেমে সমস্যা দেইখাই তো এই কালীরে বিয়া করছি নইলে আমি তোমারে কষ্ট দিবার পারি কও?”
এক নিঃশ্বাসে অনবরত মিথ্যে কথা বলে দম ফেললো বর্ণ।সাদিয়া বুঝতে পারছে না হাসবে নাকি মন খারাপ করবে? কাদো কাদো মুখে জানতে চাইলো,
“আমি অনেক সুন্দর না?”
“পুরাই হুরপরী!”
সাদিয়া হাসলো। মিথ্যে প্রশংসায় বেশ খুশি সে।অল্প খানিক সান্ত্বনা নিয়ে হেলেদুলে হাঁটতে শুরু করে।বর্ণ তার যাওয়ার পানে চেয়ে ধীর কণ্ঠে বলে উঠে,
“কুত্তাও পুছবো না তোরে!”
সাদিয়া পিছু ফিরে চায়। প্রশ্ন করে,
“কিছু কইলা?”
বর্ণ দ্রুত মাথা দুলিয়ে জবাব দেয়,
“না না আফসোস করতাছিলাম আরকি!”
_________
অনেক লম্বা সময় পর সকালের নাস্তা দেখে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো বর্ণ।এই প্রাণহীন আত্মায় আবেগ এলো কি করে?অন্তর কাঁপছে অবিরামভাবে।মনে পড়লো মায়ের কথা।এভাবেই সকাল বেলা পরোটা আর আলুভাজি নিয়ে হাজির হতেন।পরম যত্নে খাইয়ে দিতেন মুখে তুলে।তার কেউ ছিলো না। একমাত্র পুত্রধন ছাড়া। অন্বেষা দেখলো বর্ণের মুখপৃষ্ট।নির্জীব মূর্তির মত থমকে।বিষাদভারাতুর দৃষ্টি তুলে তাকালো অন্বেষার দিকে।
অন্বেষা বললো,
“খাচ্ছো না কেনো?”
“তুমি বানাইছো?”
“হুম”
“আটা কই পাইলা?”
অন্বেষা বললো,
“পেট চালানোর জন্য মানুষ চুরি পর্যন্ত করে।আমিতো তোমার মত না যে নিজের উপর নিজে জুলুম করবো।কষ্ট দিবো নিজেকে।সৃষ্টিকর্তার দেওয়া আত্মা,দেহ,অন্তর এর উপর জুলুম করার অধিকার আমাদের নেই।তাই আমি সবকিছুর ব্যবস্থা করা শেষে নিজের ব্যবস্থাটুকু করে রাখি।”
বর্ণ অবসন্ন হয়ে বলে উঠে,
“একটা প্রশ্ন জিগাইছি।ভাষণ দিতে কই নাই।”
অন্বেষার বলা কথাগুলো তার কাছে কোনোভাবেই অযৌক্তিক মনে হচ্ছে না।যা বলেছে বেশ বলেছে। কপট রাগ দেখিয়ে বলে উঠলো,
“আমার কথা ভালো লাগবে কেনো?ভালো লাগবে ওড়নায় আঙ্গুল পেঁচাতে থাকা ঢঙ্গি মেয়েদের কথা। দীর্ঘলাপ করলেও দোষ নেই।আমি একটা শব্দ বললে বিরাট পাপ।”
আকার ইঙ্গিতে কি এবং কার কথা বলা হচ্ছে বুঝতে ভুল হয়নি বর্ণের। ভারাক্রান্ত মনটা অদ্ভুতভাবে রেহাই পেলো। আলগোছে হাসলো বর্ণ।আরো একটু জ্বালালে মন্দ হয়না। গুরুত্বহীনভাবে খাবারে মনোযোগ দিলো।
অন্বেষা রেগে যায়।বর্ণের যে মতলব ছিলো সেটা পূর্ণ হয়েছে। আড়চোখে তাকিয়ে দেখলো রাগে গদগদ করতে থাকা অন্বেষার মুখ।
কোনো প্রকার কদর না পেয়ে অন্বেষা বললো,
“আমি বেরোবো একটু পর।খাবার রান্না হয়ে গেছে।ভালো মানুষের মতো খেয়ে নিবে।”
বর্ণ পরোটা মুখে হাত নাড়িয়ে বললো,
“দুর হও”
রাগ বেড়ে গিয়ে অগ্নিমানবী রূপ ধারণ করে অন্বেষা।বর্ণের সামনে থেকে খাবারের প্লেট কেড়ে নিয়ে বললো,
“খাওয়া লাগবে না তোমার। উপোস থাকো!”
“আয়হায়!এই ছেড়ি খিদা লাগছে কইলাম! ফিরত দাও”
বলে এক প্রকার অন্বেষার হাত থেকে খাবার প্লেট পূনরায় হাতিয়ে নিলো। ফুঁসতে লাগলো অন্বেষা। অতিরিক্ত রেগে গেলে মুখ ফুটে কথা বেরোয় না। ঠোঁট শক্ত করে চেপে দাঁড়িয়ে রইলো।বর্ণ হাসছে।তার বাজে স্বভাব অযথা অকারণে হাসার।আগুনে আরেকটু খানি ঘি যোগ করে ওড়না টেনে ধরলো। বিগত দুদিন যাবত তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে এটি। বল প্রয়োগে ওড়নার সাথে সাথে অন্বেষাকেও কিছুটা এগিয়ে আনলো।রাগের সাথে সাথে অসস্তি যোগ হয় অন্বেষার।চোখ নামিয়ে নিলো সাথে সাথে।মুখের চারিপাশ ভালোভাবে মুছে বর্ণ ঢেঁকুর তুলে।ওড়নার শেষভাগ অন্বেষার মুখের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বললো,
“পরিষ্কার জিনিস ময়লা করতে আমার হেব্বি মজা লাগে।”
কয়েক মিনিটে সাবাড় করা নাস্তার খালি প্লেট তুলে নেয় অন্বেষা।সকাল সকাল আফজাল মিয়ার স্ত্রীর তদারকীতে পানির নল ঠিক করেছে।প্লেট ধুয়ে ভাত বসালো অন্বেষা।বিছানায় আরাম করে আধ শোয়া হয়ে তাকে পর্যবেক্ষণ করে চলেছে বর্ণ।
ভার্সিটি নেই কিন্তু কাজে যেতেই হবে।একদিন কামাই করার কারণে টাকা কাটবে নিশ্চিত।কি আর করার?ভাগ্য বলে মেনে নিলো। একদিন কাজ না করে নিজের সংসার গুছিয়ে নিয়েছে এরচেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কি হতে পারে।তবে অন্বেষার মন প্রশ্ন করলো,
“তবে এই সংসার যে বড্ড অনুভুতিহীন।”
মনের কাজই প্রতারণা করা।বিছানায় বসে অন্বেষার ফোনে বাবল শুটার গেম খেলতে থাকা বর্ণের দিকে চেয়ে মুচকি হাসলো।নিজের মনকে বুঝ দিলো,
“আমি আশাবাদী,খুব শীগ্রই অনুভূতির ধ্বনি ভেসে বেড়াবে এই চার দেয়ালে। তাড়াহুড়োর সব কাজই শয়তানের।”
নিজেকে পরিপাটি করলো অন্বেষা।চুল খোঁপা করে মাথায় ওড়না পেঁচালো সেফটিপিন দিয়ে।কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বর্ণের কাছে গিয়ে ফোন কেড়ে নেয়।বলে,
“খাবার গরম করে নিবে।আমি সন্ধ্যায় ফিরবো।”
অন্বেষা দরজার দ্বারে গিয়ে দাঁড়ালে বর্ণ অযথা বাঁধ পেতে দাঁড়ায়।উদ্দেশ্য তাকে বিরক্ত করা ভালোভাবেই বুঝেছে।সকালে সাদিয়ার সাথে কথা বলা নিয়ে ফুলে বোম হয়ে আছে অন্বেষা এটা বর্ণের অজানা নয়।
অন্বেষা চেঁচিয়ে বললো,
“কি সমস্যা?”
বর্ণ সুরেলা কণ্ঠে বলে উঠলো,
“মনে চায় তোমারে বাইন্ধা রাখি এই চাইর দেয়ালে।”
অন্বেষা নাক ফুলিয়ে বলে উঠে,
“যত্তসব ঢং!”
বুকে ধাক্কা গিয়ে বেরিয়ে গেলো। জানা আছে বেকুবের মতো হাসছে বর্ণ পিছনে দাঁড়িয়ে।তার হাসির চেয়ে কাজে যাওয়া বেশি দরকারি।
_________
সারাক্ষণ মুখে মিথ্যে হাসি টেনে রাখা বর্ণ প্রায়শই একাকী গম্ভীর হয়ে উঠে।অন্বেষার বের হওয়ার সাথে সাথে সেও বেরিয়ে পড়ে। টিউশনে যাবে।উন্মুক্ত লাইব্রেরীর দিকে যাওয়ার পথে তাকালো একবার।এখানে তার কেনো যেনো আজ মন টানছে না।বই পড়ার সঙ্গী এখন তার চিরসঙ্গী।তারই ঘরে ঘাঁটি জমিয়েছে।
স্টুডেন্ট এর মায়ের কাছে বেতন বাড়াতে বললো বর্ণ।তিন হাজার টাকায় কিছুই হয়না।যেখানে তার চাকরিও নেই।ছাত্রের মা জানিয়েছেন ভেবে দেখবেন।প্রায় দুই ঘন্টা পড়ানো শেষে বেরিয়ে পড়লো ধোলাই খালের উদ্দেশ্যে। যন্ত্রপাতি,গাড়ির পার্টস ইত্যাদির ব্যবসা এখানে।দেখতে যেমন তেমন কিন্তু ধোলাইখাল এর ব্যবসা সর্বদা জমজমাট থাকে।দোকান মালিকদের মধ্যে বেশিরভাগই বিরাট বড়লোক।আপাতত এখানে কাজ খুঁজা মুখ্য।
বর্ণ নিজেকে নিজে বলে উঠলো,
“গরীব হইছোস শালা কিন্তু আত্মসম্মান এত বেশি ক্যালা? গরীবের এত আত্মসম্মান থাকবার নাই।এসব বড়লোকের কাজ করবার।”
পুরুষ জাতির পুংভাব যেনো ঘাড় চেপে ধরলো। কিছুতেই মানতে পারছে না সম্পূর্ণ সংসারের ভার একা অন্বেষা বহন করবে।পৌরুষ গৌরব মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে।এটাই হয়তো সমাজের নিয়ম।এভাবেই বড় হয়েছে তারা।যুগের পর যুগ এই নিয়মে চলছে সর্বকুলের মানুষ। পুরুষত্বের অহংকারে দাবিয়ে রাখা হচ্ছে নারীকে।যেখানে সিংহভাগ সম্মান পাওয়ার যোগ্য নারীকূল।
_________
বর্ণের বাড়ি ফিরতে প্রায় রাত নয়টা। অন্বেষা রান্না করে পাঠিয়ে দিয়েছে জব্বার চাচার কাছে।ময়লা হয়ে থাকা আশপাশ পরিষ্কার করতে করতে অনুভব করলো কেউ তার ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে।ভয় হলো না এক বিন্দু।নিজের কাজে লেগে পড়লো।
বর্ণ অন্বেষার কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলে উঠে,
“সকালে যে ছেড়িটারে দেখলা না?ওর নাম সাদিয়া।বর্ণ কইতেই ফিট।আমার লেইগা পাগল বুঝলা? ওরে নিয়া একটু ঘুইরা আইলাম।”
রক্ত টগবগ করে উঠে অন্বেষার।ইচ্ছে হলো কনুই দিয়ে আঘাত করে বুকের হাড়গোড় গুড়িয়ে ফেলুক।তবে বেশি ব্যথা পেলে তারই অন্তর পুড়বে।সরে গেলো সেখান থেকে। থালা বাসন আওয়াজ করে কাজ করতে লাগলো।রাতের খাবার এনে বর্ণের সামনে শব্দ করে রেখে নিজেও খেতে বসে।
খাওয়া শেষে বারান্দায় গিয়ে মুখ ফুলিয়ে বসে অন্বেষা। মনের কোণে আশার দানা বাঁধতে শুরু করে এসে ক্ষমা চাইবে।সামান্য উঁকি দিয়ে বর্ণকে আবারো অন্বেষার ফোনে গেম খেলতে দেখে সেই আশাটাও ভেস্তে গেলো। অন্বেষাও পণ করে।সেও এখানেই থাকবে সারারাত।
কাটায় কাটায় আড়াই ঘন্টা গেম খেলে ফোনের চার্জ শেষ করেছে। ফোন বন্ধ হয়ে গেলে মনে পড়লো বর্ণের,তার একটা বউও আছে।যে অনেকক্ষণ হলো গায়েব।ফোন চার্জে রেখে বারান্দার দিকে পা বাড়ায়।গিয়ে দেখলো দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে গভীর ঘুমে মগ্ন অন্বেষা।
বর্ণ ডাকে,
“এই ছেড়ি এই!”
কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি। অন্বেষার ঘুম ভারী।কেউ তুলে নিয়ে গেলেও হদিস মিলবে না।বর্ণ কয়েকদফা বাহু ঝাঁকায়।উঠলো না। উল্টো ঘুমের মাঝেও তেজ দেখিয়ে হাত ঝাড়া দিয়ে বিড়বিড় করে কিছু একটা বললো।বর্ণ সাত পাঁচ না ভেবে একটানে তুলে নেয় অন্বেষাকে।দুহাত টেনে দাঁড় করিয়ে ঝুঁকে পাঁজাকোলে তুলে নিলো। অন্বেষা ঘুমের ঘোরেও যেনো শান্তি পাচ্ছে। গলা পেঁচিয়ে ধরলো দুইহাতে।
বর্ণ বলে উঠে,
“জাতে মাতাল তালে ঠিক!”
অন্বেষাকে শুইয়ে দিলো।কিন্তু নিজে উঠতে পারলো না।সাপের মত গলা পেঁচিয়ে রেখেছে।ঠিক বর্ণের বলা কালনাগিনীর মত।নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করার পূর্বেই চোখ স্থির হয় অতি নিকটে থাকা অন্বেষার মুখপানে।মুখ ফেরাতে পারেনি তৎক্ষনাৎ।টেনে ধরে রেখেছে যেনো কোনো অদৃশ্য শক্তি। কৃষ্ণাভ মুখটা সংকীর্ণ হয়ে উঠে। অন্বেষার হাতের বাঁধন আলগা হয়ে এলেও একচুল নড়লো না বর্ণ।এক ভিন্ন চাহনি আর ভিন্ন অস্থিরতার সহিত দেখছে তাকে।ঠিক গতরাতের মত।তবে এই দেখা আর সেই দেখায় তফাৎ আছে।আলাদা টান অনুভব করে।বুঝে উঠতে পারলো না সম্পর্কের সম্মোহনে পড়ছে কি?মস্তিষ্ক তাড়না দিলো। ত্বরিতে দেহ ভার ছেড়ে গ্রিবাদেশে মুখ গলিয়ে চোখ বুঁজলো সর্বাঙ্গীণ অচৈতন্যে।
চলবে……......................