সায়র - পর্ব ১২ - আশফি শেহরীন চিত্রা - ধারাবাহিক গল্প


কিরণের দিন ব্যস্ততায় কাটে ইদানীং। সারাদিন অফিস করে এসে জাওভানের পাগলামী সহ্য করা এই নিয়েই তার জীবন। সে চেয়েছিল চাকরিটা ছেড়ে দেবে। প্রাইভেট কোম্পানীতে বেতনের চেয়েও গাধার খাটুনি দ্বিগুন। সকালে গিয়ে রাতে ফেরাটা কিরণের পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছে না। শরীরে আর কত কুলায়? আর তার বেতনটাও কেটে দিয়েছে বস। পরের মাস থেকে বেতন কমাবে কারণ কোম্পানি ভালো যাচ্ছে না। পড়াশোনা লাটে উঠিয়েছে আরো আগেই। মাস্টার্স কমপ্লিট করে বসে আছে। সে ভাবছে কোনো ব্যবসা করবে। কিন্তু কী ব্যবসা করবে? অনলাইনে শুরু করতে চেয়েছিল, খুব বড়সড় ধোঁকা খেয়েছে কাস্টমারদের থেকে। ফ্রিল্যান্সিং করতে চেয়েছিল, সেখানেও অনেক সময় যাবে আর্নিং করতে, তার চেয়ে বড় কথা স্ক্রিনে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারে না, মাথা ব্যথা করে। টিউশনিতে আরো প্যারা। কিরণের মাথায় কাজ করে না সে কী করবে, তার উপর জাওভানের পাগলামী তো আছেই। হুটহাট করে অফিসে চলে আসে, রাত যতটাই গভীর হোক না কেন, জাওভানের মন চাইলে তাকে কল করে বসে। কিরণের ক্লান্তির কথা চিন্তা করে না। যদি কিরণ বলে তার খারাপ লাগছে, তাহলে জাওভানের মন যদি ভালো থাকে তাহলে শুয়ে পড়তে বলবে, আর মন ভালো না থাকলে কিরণকে ঘুম নষ্ট করে জাওভানের ঘ্যানঘ্যান শুনতে হয়। 

লাইফের উপর খুব বিরক্তি এসে গেছে কিরণের। কয়েকদিন আগে কিরণের ভাই কিয়াদ এক্সিডেন্ট করেছে। স্কুল থেকে আসার পথে গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়ে পা ভেঙেছে। ডাক্তার বেড রেস্টে থাকতে বলেছে আপাতত। প্রাইভেট হাসপাতাল থেকে তাকে সদরে শিফ্ট করেছে কিরণ, কারণ প্রাইভেটের সিটের চার্জ দেয়ার মতো তার কাছে টাকা নেই। কিরণের মাও অসুস্থ। 

ব্যাংকে যা জমা ছিল তার চার ভাগের তিন ভাগ শেষ হয়েছে ভাইয়ের পেছনে। জাওভান চেয়েছিল কিরণকে টাকা দিয়ে হেল্প করতে, কিরণ দেয়নি, কারণ সে একটা ব্যাপার খুব ভালো করে জানে জাওভান সম্পর্কে, তা হলো, জাওভান যদি কখনো কোনোভাবে হেল্প করে, আর তার যদি কোনোসময় খুব রাগ উঠে তাহলে সে ঐ হেল্প করা নিয়ে খোঁটা দেয়। একবার কিরণের উপর প্রচণ্ড রাগ হয়েছিল জুভের, তাদের ঝগড়ার এক পর্যায়ে জাওভান খুব ছোটো একটা বিষয় নিয়ে খোঁটা দিয়েছে। বিষয়টা ছিল, কিরণ মাঝে মাঝে খুব প্রয়োজনে জাওভানের গাড়িটা ব্যবহার করতো। জাওভান নিজেই কিরণকে বলেছিল এটা তার গাড়ি ভেবে ব্যবহার করতে, কিরণও বোকার মতো ব্যবহার করেছে, আরেকদিন বিপদে পড়ে জুভের থেকে ষাট হাজার টাকা ধার নিয়েছিল, জুভ বলেছে এই টাকা তাকে ফেরত দিতে হবে না, কিন্তু কিসের কি! সেসব নিয়ে শেষে জুভের থেকে গায়ে আগুন জ্বালানোর মতো খোঁটা সহ্য করতে হয়েছে তাকে। খুব কষ্টে নিজের মাসিক হাতখরচ জমিয়ে, ওভারটাইমে কাজ করে কিরণ তখন তার টাকা পরিশোধ করেছে। রাগ কমায় জুভ অবশ্য তার থেকে টাকা নিতে চায়নি, কিন্তু কিরণ জোর করে ফেরত দিয়ে দিয়েছে, কারণ জুভ পরে রাগলে ঠিকই খোঁটা দিবে। তারপর থেকে কিরণ কানে ধরেছে, তার জীবনে দুর্ভিক্ষ এলেও সে জাওভানের থেকে সাহায্য চাইবে না, ভুলেও না। 

কিরণ ভাবছে, কোনো ব্যাংক থেকে লোন নেবে, কিন্তু মাসের কিস্তি পরিশোধ করবে কীভাবে? তার এডুকেশনাল সার্টিফিকেটে তার নাম্বার খুবই কম, যার জন্য কোনো ভালো জবে পোস্ট হচ্ছে না। সত্যি বলতে সে কোনোদিন পড়ালেখার প্রতি সিরিয়াস ছিল না, কোনোরকমে টেনেটুনে পাশ করা ছাত্রী সে। পড়ালেখার মতো সিচুয়েশন কিংবা সেই পরিবেশ তার কোনোদিন ছিলোই না। কিরণের চোখের কোণ বেয়ে গরম জলের ফোঁটা পড়ল। অতীতের কত দুর্বিষহ স্মৃতি এখনো তাড়া করে বেড়ায় তাকে। অতীত কেন মুছে ফেলা যায় না জীবন থেকে? দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে কিরণ, সেই দীর্ঘশ্বাসের সাথে কত নাম না জানা কষ্ট, আর্তনাদ, হাহাকার বেরিয়ে আসে। ইদানীং সে খিটমিটে মেজাজের হয়ে যাচ্ছে। কোনোকিছুই ভালো লাগে না তার। তার জীবনটার আসলে কোনো মানেই নেই। তার যদি কোনো পিছুটান না থাকত তাহলে কবেই আত্মহত্যা করত। 

কিরণ বসে আছে গার্ডেনে। সকাল থেকে পেটে কিছু পড়েনি, বাসাতেও রান্না করেনি সে। এখন প্রয়োজনে জাওভানের ফ্লাটে এসেছিল। বাসার কেচিগেইট লক। কিরণ গেইট দিয়েই ভালো করে দেখল, উজানের ফ্লাটে তালা মারা কিন্তু জুভেরটায় নেই। তারমানে জুভ বাসায় আছে, তাহলে গেইট এখনো খুলছে না কেন? নিশ্চয়ই পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে এই বেলা দশটাতেও। কিরণ অনেকবার কলিংবেল চেপেছে, জুভের মোবাইলে কল দিয়েছে অনেকবার, ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে। জুভের ফ্লাটের পাশটাতেই দেয়াল, যার কারণে কিরণ ফ্লাটের পাশে গিয়ে জানালায় টোকা দিতে পারছে না, আর জুভের রুমটাও ভেতরে। জুভের আজ বাসায় থাকারই কথা, কারণ আজ শুক্রবার, আর ছুটির দিনে জুভ এগারোটা বারোটায় ঘুম থেকে উঠে। কিরণকে তাহলে আরো একঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে।

জুভের বাসায় কিরণের অনেক জিনিসপত্রই রয়ে গেছে। সে তার বর্তমানের বাসাটা ছেড়ে দিবে, বাসা ভাড়ার সাথে কুলাতে পারছে না। একা একটা মেয়ে, কতদিক সামলাবে সে? মায়ের অসুস্থতা, ভাইয়ের পড়াশোনা, অসুস্থতা, বাড়তি খরচ, তার এখানে থাকা খাওয়ার খরচ, এসব এই অল্প বেতনে চলে? তাও তো আগে কিরণ ভালো এমাউন্টের বেতন পেত, এখন তাও নেই। এই অল্প বয়সেই তার ক্লান্তি চলে এসেছে। মীরাও চলে গেছে হোস্টেলে। কিরণ ভাবছে সেও হোস্টেলে চলে যাবে। এই মাসের ভাড়া দিয়ে সামনের মাস থেকে হোস্টেলে উঠবে, তাতে খরচ যদি কিছু কমে। আজ এখান থেকে যাওয়ার সময় হোস্টেল সুপারের সাথে কথা বলতে হবে তার। 

কিরণ যখন এতসব চিন্তা করছিল তখন গেটের ভেতরে প্রবেশ করতে থাকা একটি গাড়ি হর্ন বাজায়। কিরণ ঘুরে দেখে এটা উজানের গাড়ি। উজান গাড়ি থেকে নেমে ঘরে ঢোকার পথে কিরণকে বাগানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। কিরণ উজানকে দেখে এগিয়ে আসে। উজানের কাছে গেট আর ফ্লাটের সবকিছুরই চাবি থাকে। 

উজান তার দিকে দুর্বল পায়ে এগিয়ে আসতে থাকা কিরণকে একপলক চেয়ে চোখ ফিরিয়ে আবারো তাকাল। কিরণের চোখের নিচে কালি, মুখ শুকিয়ে আছে, দেখে মনে হয় পেটে কিছু পড়েনি তার, চুল এলোমেলো।

কিরণ উজানের সামনে এসে দাঁড়াল। তার দিকে চেয়ে থাকা রহস্যময় চোখের দিকে চেয়ে কিরণ স্তিমিত কন্ঠে বলল, 

'গেইটটা একটু তাড়াতাড়ি খুলো।'

উজান চোখ ফিরিয়ে নেয়। গেইট খুলতে খুলতে জিজ্ঞেস করে, 

'তুমি এখানে কেন? তাও নিজ থেকে?'

'বাসা চেঞ্জ করব, জিনিসপত্র নিতে আসছি।'

'বাসা চেঞ্জ করবে কেন? জাওভান জানে?'

'আজকে জানবে।'

উজান আবার প্রশ্ন করে, 'বলছো না যে কেন বাসা চেঞ্জ করবে?'

কিরণ কিছুটা বিরক্ত হয়। সেইদিন সরি বলার পর থেকে উজান এখন আর তার সাথে লাগেনা তেমন। আগে যেখানে কথায় কথায় অপমান করত এখন শুধু চোখ উল্টিয়ে সরিয়ে নেয়। একদম চুপচাপ থাকে। যেন কিরণকে এখন আর সে শত্রু হিসেবে দেখে না। উজানের হঠাৎ এই পরিবর্তন কিরণের কাছে সম্পূর্ণ অচেনা। কেমন ভদ্র ছেলের মতো কথাবার্তা হয়ে যাচ্ছে তার, যদিও উজানের ভদ্র কথাবার্তা সবার বেলাতেই খাটত শুধু কিরণ ছাড়া। কিন্তু এখন কত পরিবর্তন! যেমন এখন অনেক প্রশ্ন করছে, অথচ তার উচিত ছিল কিরণকে পাত্তা না দিয়ে নিজে গেইট খুলে নিজের কাজে মন দেয়া। 

কিরণের থেকে উত্তর না পেয়ে উজান পেছন ফিরে দেখে কিরণের চিন্তিত মুখ। 

'কী এমন ভাবছো এত?'

কিরণের ধ্যান ভাঙে, 'হুম কিছু না তো।' 

'সকাল থেকে কিছু খাওনি?'

'হুম?' কিরণের চোখে খেলা করছে বিস্ময়। উজান বুঝল কীভাবে?

'বলছি সকাল থেকে কিছু খাওনি?'

'খেয়েছি।' কিরণ নিজেকে সামলায়।

'তাহলে চোখমুখ এমন শুকনো লাগছে কেন?'

নাহ! কিরণ ঠিকই শুনছে এসব। উজানের মুখ থেকে এসব বেরিয়েছে। ভাবতে অবাক লাগলেও বিষয়টা হজম করতে কষ্ট হচ্ছে কিরণের। উজান কিনা তাকে ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করছে, আবার যেখানে উজান এক কথা একবার বলে সেখানে তাকে দু'বার বলছে! খুবই বিস্ময়কর ব্যাপার। কিরণ উজানের মুখের দিকে ভালো করে চোখ মেলে দেখল, উজানকে বড্ড সতেজ লাগছে। গোসল করলে মানুষকে যেমন ফ্রেশ লাগে ঠিক তেমন। 

'দেখা শেষ?'

'হুম?' 

'কী বারবার হুম হুম করছো? এক কথা কয়বার জিজ্ঞেস করা লাগে তোমাকে? ভেতরে চলো।'

এই বলে উজান পা বাড়াল ভেতরে। শেষ কথাটা কিছুটা ধমকের সুরে বলল উজান। কিরণ আসলেই ভাবে তার কী হয়েছে? এত টেনশনে মাথা আউলিয়ে গেছে নাকি? 

কিরণ জুভের ফ্লাটে পরপর কয়েকবার কলিংবেল বাজায়, তারপর মনে পড়ে সে তো এখনো ঘুমায়। সে উজানের কাছে ফ্লাটের চাবি চাইল। উজান তখন তার নিজের ফ্লাট খুলছিল। কিরণকে চাবি দিতে গিয়ে তার হাত থেমে যায়। তার মুখ দেখে মনে হয় হঠাৎ খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা যেন তার মনে পড়েছে। সে চাবি আবার পকেটে ঢুকিয়ে নেয়। কিরণের ভ্রুযুগল কুঞ্চিত হয়ে আসে। 

'কী হলো?'

'তুমি এখন আমার ফ্লাটে চলো।'

কিরণের মুখ হা হয়ে যায়, হতভম্ব গলায় বলে, 'মানে কী?'

'কানে শুনোনি? বলেছি আমার ফ্লাটে আসতে। জাওভান ঘুমাক। ও ঘুম থেকে উঠলে যেও।'

'জাওভানের প্রয়োজন নেই, তুমি চাবিটা দাও, আমার কিছু জিনিস আছে, তা নিয়ে চলে যাব।'

'কানে যায় না কী বলেছি? পরে যেও। চলো।'

উজান এবার কিরণের হাত টেনে ভেতরের দিকে অগ্রসর হয়। ঠিক সেই মুহুর্তে জুভের ফ্লাটের দরজা খুলে। তখন অনেকবার বেল বাজানোর জন্য এখন খোলা হয়েছে। কিরণ ঘাড় ঘুরায়। কিন্তু যা দেখে তাতে তার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। পা থামে তার। উজান কিরণের হাত ধরা অবস্থায় থেমে যায় কিরণের থামা দেখে। 

কিরণ দেখে দরজা খুলেছে ইয়ানা। তার পরনের জামা দেখেই কিরণ বেশ চমকায়। তার পরনে জাওভানের শার্ট। যা ইয়ানার হাঁটু পর্যন্ত ঢেকে রেখেছে। বোতাম কয়েকটা লাগানো, দেখে মনে হয়, দ্রুত পরতে যেয়ে উল্টাপাল্টা পরেছে। 

ইয়ানাও চমক লাগা চোখে একবার কিরণ আরেকবার উজানের দিকে তাকায়। সে দ্রুত দরজা আটকাতে যায়। ততক্ষণে কিরণ ঝাড়ি মেরে উজানের হাত সরিয়ে দরজা ঠেলতে শুরু করেছে। ইয়ানা কিরণের শক্তির সাথে পারেনি। কিরণ দরজা ঠেলে খুলে তড়িৎ পায়ে জাওভানের রুমের দিকে হাঁটা দেয়। তার মাথায় দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। পেটের জ্বালা, মাথার জ্বালা মিলে মনে হয় অগ্নিকাণ্ড ঘটাবে আজ। 

জুভের রুমে গিয়ে কিরণ থামে। ইয়ানাকে দেখে যা ভেবেছিল তাই। বিছানায় নগ্ন অবস্থায় জাওভান ঘুমিয়ে আছে। তার পেট অবধি শুধু একটা চাদর জড়ানো। তার সারা গায়ে কামড়ের দাগ। বিছানায় গোলাপ ফুলের পাপড়ি ছিটানো। ফ্লোরে ইয়ানার আন্ডার গার্মেন্টস আর জাওভানের শর্টস পড়ে আছে। এছাড়া ‌প্রটেকশনের প্যাকেট পড়ে আছে বেডসাইড টেবিলে। টেবিলের ড্রয়ার খোলা, সেখানে কয়েকটা নিউ প্যাকেট গুছিয়ে রাখা। তারমানে এসব নতুন কিছু না!

কিরণের মনে হলো বুকের ভেতর কেউ ভারী পাথর চাপা দিয়ে রেখেছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তার। নাহ! ভালোবাসার না, ধোঁকার কষ্ট। জাওভানের প্রতি কিছুটা হলেও তার মায়া ছিল। জাওভানের এত পাগলামী দেখে ভেবেছিল সে সত্যি কিরণকে ভালোবাসে। এ ব্যাপারে কিরণ শতভাগ নিশ্চিত ছিল। অথচ আজ! সবটা মিথ্যে প্রমাণিত হলো। জাওভানের চরিত্র এত নোংরা! তার চরিত্রের সার্টিফিকেট তো ঐদিন বাসেই পেয়ে গিয়েছিল। সে ভেবেছিল জুভ অতটুকু পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। কিন্তু ভেতরে ভেতরে যে এসব করে বেড়ায় সে সম্পর্কে তো কিরণ সম্পূর্ণ অজ্ঞ ছিল। কিরণকে এভাবে ধোঁকা দিলো? এত নিষ্ঠুর ভাবে? 

উজান কিরণের পিছু পিছু আসে। উজানের উপস্থিতি টের পেয়ে কিরণ পিছু তাকায়। তার চোখে জল। মুখশ্রী কঠিন। ভেজা গলায় শক্ত কন্ঠে উজানকে বলে, 

'তোমার ভাইয়ের কুকীর্তি তুমি আগে থেকেই জানতে তাই না? ছিঃ! এতটা নিকৃষ্ট মন কী করে হতে পারে কারো?' বলেই ঘৃণায় একদলা থুথু ছুঁড়ল নিচের দিকে। 

উজান নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। মুখে রা নেই। কিরণ জাওভানের দিকে এগিয়ে যায়। আর ভাবতে থাকে, মানুষের কত রূপ! একেকজনের কাছে প্রকাশ পায় একেক রূপ। সে জাওভানকে ভালোবাসে না। কিন্তু তাকে এভাবে ধোঁকা দেওয়াটা কিরণ মানতে পারেনি। এমন যদি হতো যে, কিরণ যদি জানত জুভের চরিত্র আগে থেকেই এমন, তাহলে আজকের ঘটনাটা মেনে নিতে কষ্ট হতো না। কিন্তু জাওভান অভিনয় করে গেছে এই এতগুলো মাস। এত নিখুঁত অভিনয়! কাকপক্ষীটিও টের পায়নি। 

কিরণ বেডসাইড টেবিল থেকে পানির জগ নিয়ে পুরোটা ছুঁড়ে মারে জাওভানের মুখে। হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় মুখে ঠান্ডা পানি পড়ায় হকচকিয়ে উঠে জাওভান। বিরক্ত নিয়ে সে ডান পাশে তাকায়, দেখে ইয়ানা আর উজান দাঁড়িয়ে আছে, উজানের চোখমুখ গম্ভীর। আর ইয়ানা তার গতরাতের শার্ট পরে আছে। কিন্তু পানিটা মারল কে? জাওভান এবার বাম পাশে তাকানোর সাথে সাথেই শক্ত চড় এসে গালে পড়ে। চড়টা এতটাই শক্ত ছিল যে জুভের গাল জ্বলে গেল। সে গালে হাত দিয়ে কিরণের দিকে তাকাতে গেলে আরেকটা শক্ত চড় তার আরেক গালে লাগে। কিরণ জুভের মুখের উপর থুথু ছুঁড়ে মারে।

'তুই যে কি লেভেলের হিপোক্রিট তা এখানে না এলে জানতাম না। জানোয়ারের বাচ্চা।' বলে আরেক দলা থুথু জুভের উপর ছুঁড়ে মেরে চলে যায় কিরণ। 

এতক্ষণের ঘটনা বুঝতে একটু সময় লাগে জুভের। সে কিরণকে এই সময় এখানে আশা করেনি একদমই। কিরণ তো কখনো নিজ থেকে আসে না। আজ কেন আসলো? সে চেঁচিয়ে বলে, 

'কিরণ দাঁড়াও।'

জাওভান উঠে দাঁড়িয়ে প্যান্ট পরতে পরতে বলে, 

'ফাক! কিরণ এখানে কী করছে? গড!'

তারপর উজানের দিকে তাকিয়ে চিল্লিয়ে উঠে, 

'তুই কিরণকে এনেছিস এখানে? মাদারফাকার।'

জাওভান খালি পায়ে কিরণের পিছু পিছু দৌড়ে যায়। ততক্ষণে কিরণ উধাও। 
.
.
.
চলবে…....................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন