রোদরঞ্জন - অন্তিম পর্ব ৪৫ - আশফি শেহরীন চিত্রা - ধারাবাহিক গল্প


সময় কত দ্রুত বয়ে যায়! মনে হয়, এইতো সেদিনই না শীত শেষ হলো..অথচ শীতের শেষ হওয়ার আজ পাঁচ মাস। সম্মুখে শান্ত, নির্মল সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে গভীর শ্বাস নেয় পলক। হীরে খচিত তারা ঝিকিমিকি করছে গাঢ় নীল আকাশে। বড় চাঁদ সমুদ্রের বুকে হেলে গেছে। যেন সমুদ্রের অতলে এখনি ডুব মারবে। সমুদ্রের শো শো আওয়াজে মৃদু গর্জন তুলে তীরে আছড়ে পড়ছে। পায়ের দিকে তাকায় পলক। সফেদ ফেনারা গাঢ় হয়ে আবার মিলিয়ে নিজের অবস্থানে ফিরে যাচ্ছে। হিম বাতাস, বাতাসে ভেসে আসা বেলী ফুলের সুবাস- সবমিলিয়ে মনমোহনের পরিবেশ। 

পলক এক পা সমুদ্রের ফেনা তুলা পানিতে রাখলে অনুভব করে তার পাশে কারো উপস্থিতি। মাথা তুলে দেখল তার স্বপ্নের রমণী আনমনা হয়ে চাঁদের দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে আছে। পলকের ঠোঁটে মৃদু হাসির রেখা দেখা দেয়। বেলী ফুলের সুবাস তাহলে ইনানের কাছ থেকেই আসছে। আড় চোখে ইনানকে পর্যবেক্ষণ করে। সাদা লং গাউনে আবৃত ইনানের ছোট্ট দেহ, বাতাসে খোলা চুল এলোমেলো উড়ছে। চাহনি নির্বিকার। ইদানীং ইনানের চোখের ভাষা বোঝা দায় হয়ে পড়েছে পলকের জন্য। কেন যেন সে বুঝতেই পারছে না ইনানের মনে কী চলছে কিংবা তার আবেগ কী!

পলক ঠাণ্ডা হাত ইনানের সরু হাতের দিকে বাড়িয়ে দিতে গিয়েও থমকে যায়। মনের মধ্যে এক অদৃশ্য শিকল তাকে অচেনা অজানা বন্ধনে আবদ্ধ রাখছে‌। ইনানের দিকে এগোতে গিয়েও পারছে না কেন যেন…

আড়ষ্ট হয়ে হাত জোড়া পকেটে পুরে নেয়। তার উচিত ইনানের পাশে থাকা এই সময়টাতে। যদিও সে জানে না ইনান ভেতর থেকে আদৌ স্বাভাবিক আছে নাকি চিৎকার করে কাঁদছে। কয়েক মাসের মধ্যেই কত ধাক্কা সামলাতে হয়েছে মেয়েটাকে…

ইফাজ খান মা’রা গিয়েছেন। ইফাজ খানের যেই অবস্থা হয়েছিল তাতে উনি বিদায় না নিলেই বরং অবাক হতৌ পলক। কিছু ঘৃণ্য সত্যের মুখোমুখি হওয়ার পর, সত্যি বলতে, আগের মতো সম্মানটা ইফাজ খানের জন্য একবিন্দুও আসেনি পলকের। মুখোশের আড়ালে থাকা জন্তুমানবকে বৃথা মান্য করে এসেছিল…এত শার্প মস্তিষ্কের অধিকারী হয়েও পলক কখনো বুঝতেই পারেনি ইফাজের খোলসের আড়ালে যে কত জঘন্য একজন জানোয়ার আছে।

তাজবীরের মুখ থেকেই সবটা শুনেছিল সে। বেচারা এতগুলো বছর মনের মাঝে ক্ষোভ নিয়েই বেড়ে উঠেছিল। পুষে রেখেছিল মনের অভ্যন্তরে বিধ্বংসী প্রতিশোধের আগুন। তাও কত চতুরভাবে হ্যান্ডেল করলো! একটা আঙুল না তুলেও ইফাজ খানকে জনমের শাস্তি দিয়ে গেল সে। 

তাজবীর ইফাজের অবৈধ সন্তান। তিনি ইনানের মাকে বিয়ে করার আগে তাজবীরের মায়ের সাথে প্রেম করে তাজবীরকে জন্ম দিয়েছিলেন। তাজবীর ছোট থেকেই একটা অচেনা জায়গায় বড় হয়েছিল। বুঝ হওয়ার বয়স থেকে দেখল সে এমন একটা জায়গায় যেখানে তার সমান, ছোট, বড় অনেক ছেলেমেয়েই রয়েছে। তথাকথিত ‘এতিমখানা’ নামে যে জায়গা পরিচিত। একজন স্যুটবুট পরনের ভদ্রলোক এসে তাকে প্রায়শই দেখে যেত। আদর করত, খেলনা কিনে দিতো। লোকটি তাকে বলেছিল তাকে বাবা বলে ডাকতে। অবুঝ তাজবীর তা-ই ডাকত। সাথে একজন ভদ্রমহিলাও ছিল অবশ্য। লোকটি সেই মহিলাকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলল,

‘এটা তোমার মা।’

মা- শব্দটির সাথে নতুন পরিচয় কিশোর তাজবীরের সাথে। ছোটো থেকেই তার বুঝ বয়সের তুলনায় কম ছিল বিধায় তার মাথায় অনেক কিছুই ঢুকত না। কোনো ছেলেমেয়েদের মুখে কখনো ‘মা’ ডাক শোনেনি তাই সম্পূর্ণ অচেনা-ই ঠেকল তার কাছে। শুধু সে এটুকু জানত, যাদের কেউ নেই তারাই এই আশ্রমে থাকে। তখন তাজবীরের মনে শুধু এই একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খেত ‘তার তো বাবা আছে, মা আছে, তাহলে তাকে কেন এখানে থাকতে হয়?’ কিন্তু মুখ ফুটে কাউকে বলতে পারত না। 

চুপচাপ উপভোগ করত নামেমাত্র বাবার আদর। কিন্তু মায়ের আদর… সেটা সে কখনো পায়নি। মহিলাটি ছিল চমৎকার দেখতে, যথেষ্ট সুন্দরী। লম্বা ঘন চুল, মাথায় থাকত সানগ্লাস। একেক দিন একেক সাজে দেখা যেত তাকে। আশ্রমের ছেলেমেয়েদের মাঝে গুঞ্জন ছুটত, ‘পরী’ এসেছে। মহিলাটি তাজবীরকে কেন যেন হেলায় ফেলায় দেখত। তাজবীরের দিকে তাকাত যেন কোনো কুৎসিত জীবের দিকে তাকিয়ে আছেন। অন্যান্য ছেলেমেয়েরা তার কাছে আসলে তিনি সুন্দর হেসে হেসে কথা বলতেন, অথচ তাজবীরের বেলাতেই ছিল তার নাক ছিটকে তাকানো… মা ডাকলে সাড়াও দিতেন না তিনি…

তাজবীরের যখন আরেকটু বয়স বাড়লো, একটু একটু বুঝ হলো, তখন দেখল ঐ বাবা নামের লোকটি একদম আসতেন না বললেই চলে। খুব..খুব কমই আসতো। দাড়োয়ান কাকাকে দিয়ে, স্যারদের মোবাইল দিয়ে কত চেষ্টা করত সে বাবাকে কল দেয়ার.. শুধু ওপাশ থেকে শোনা যেত ‘আপনি যেই নাম্বারে তা এই মুহূর্তে ব্যস্ত আছে, কিছুক্ষণ পর আবার কল করুন’। কিন্তু কিছুক্ষণ পর কল দিলেও একই কথা বারবার শোনা যেত।

কেমন যে কাটছিল বাবার খোঁজ ছাড়া, সেটা শুধুমাত্র তাজবীরই ভালো জানে। প্রতিদিন গেটের দিকে তাকিয়ে থাকত এই বুঝি তার বাবা কালো গাড়ি নিয়ে তাকে দেখতে আসবে। কিন্তু আসতো না…। যখন একেবারেই আশা ছেড়ে দিলো তখন তাজবীরকে ডাকা হলো আশ্রমের হেডস্যারের রুমে। তাজবীর বাবা এসেছে ভেবেই ছুটে যায়।
কিন্তু গিয়ে দেখল সেখানে শুধু ঐ মহিলাটি বসে আছেন। তার পরনে ঝলমলে থ্রিপিস এবং চুলে আটকানো বড় সানগ্লাস। চেহারায় ছিল মেকাপের আস্তর। 

হতাশ তাজবীরকে দেখে মহিলাটি মনে হয় কিছু একটা বিড়বিড় করে বললেন। তখনি তাজবীর একটা বাচ্চা মেয়ের খিলখিল হাসার শব্দ শুনতে পায়। দেখে মহিলাটির চেয়ারের পেছন থেকে একটা ছোট্ট মেয়ে খেলনা তোতাপাখি হাতে বেরিয়ে আসলো। মেয়েটি দেখতে অসম্ভব সুন্দর। যেন পুতুল। গাল গুলো ফুলো ফুলো, গোলাপী ঠোঁট, দুপাশে ঝুঁটি বাঁধা- তাজবীরের ইচ্ছা করল গাল টেনে ছিঁড়ে ফেলে। মেয়েটা দেখতে একদম মহিলাটির মতো। বড় বড় চোখে তাজবীরের দিকে তাকিয়ে হাসছে। তাজবীর জানতো না তার যে এত কিউট ছোট একটা বোন আছে…।

‘মা..’ মুখ থেকে শব্দটি নিঃসৃত হতে না হতেই সপাটে চড় পড়ল তাজবীরের গালে।

‘একদম মা ডাকবে না আমাকে বেয়াদব বেজন্মা…’

চড়ের তোড়ে তাজবীরের ঘাড় সামান্য হেলে গেল। আকস্মিক চড় খেয়ে স্তব্দ হয়ে গেল তাজবীর। বুঝতে পারল না তার কী অপরাধ ছিল। 

ছোট মেয়েটা অবাক চোখে চেয়ে বলল,

‘তুমি কি আমার ভাইয়া…’

মহিলাটি ধমকে উঠলেন সঙ্গে সঙ্গে, ‘ই…।’

নামটা তাজবীরের স্মৃতির পাতায় অস্পষ্ট। কারণ তখন সে তার করা অপরাধ খুঁজতে ব্যস্ত ছিল।

‘যাও, বাইরে যাও।’ কড়া স্বরে আদেশ করলেন মেয়েটাকে। 

মেয়েটা মুখ ফুলিয়ে চলে গেল বাইরে। মহিলাটি তখন হাত ভাঁজ করে তাজবীরের সামনে দাঁড়ায়।

‘শুনো ছেলে, এতদিন ইফাজ সামনে থাকায় তোমাকে কিছু বলতে পারিনি। কিন্তু এখন সময় এসেছে তাই বলছি। বড় হয়েছ, মাথায় ঢুকিয়ে নাও। তোমার মা-বাবা কেউ নেই। ইফাজ তোমাকে রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছিল সেই অজুহাতে তোমাকে এসে দেখে যায়‌। বুঝলে? সারাদিন কল করা বন্ধ করো। ইফাজ এতে বিরক্ত হয় সাথে আমিও। একটু আদর করে দেখে একদম মাথায় চড়ে গেছ দেখছি। অসভ্য ছেলে…’

আরো অনেক কড়া কথা শুনিয়েছিল মহিলাটা। তাজবীর খালি মাথা নিচু করে হজম করেছিল সবটা। তার কানে বাজছিল ‘তোমার মা-বাবা কেউ নেই’

তারপর থেকে তাজবীর কেমন যেন হয়ে গেল। ছটফটে দুরন্ত ছেলে চুপচাপ থাকতো। ইফাজ তাকে করুণা করেছে এতদিন- ব্যাপারটা মেনে নিতে কষ্ট হতো অনেক। 

তারপর অনেকদিন পর তাজবীর একবার গেটে বই খাতা হাতে ঢুকছিল আর সেই সময়ই একজন বয়স্ক মহিলা তার হাত ধরে থামায়। ভড়কে যায় তাজবীর। কারণ এই মহিলাকে গত কয়েকদিন গেটের কাছে ঘুরঘুর করতে দেখেছিল সে, আর তাকিয়ে থাকত তাজবীরের দিকে, অস্বাভাবিক দৃষ্টিতে। সে পাগলনি মনে করে এড়িয়ে যেত। কিন্তু আজ হঠাৎ সসেই পাগলনির খপ্পরে পড়ে ভয় পেয়ে গেল সে। মহিলার এক হাত নেই, জামাকাপড় নোংড়া, চুলে জট পেকে আছে। মহিলাটি তাজবীরকে টেনে নিয়ে যায় এক সাইডে। 

তাজবীরের গাল, চুল, এলোমেলো হাতে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখে, তার মুখে তৃপ্তির হাসি।

‘আব্বারে আব্বা।’

প্রথমবার…জীবনে প্রথমবার কারো মুখে এত স্নেহের ডাক শুনল তাজবীর। 

‘কেমন আছিস আব্বা? কী করিস তুই? কোথায় ছিলি এতদিন?’

তাজবীর বুঝতে পারে না মহিলার বলা কথার মানে। কিন্তু সে এতটা স্নেহের ডাকে মজে গিয়েছিল যে হঠাৎ তার ইচ্ছে করছিল মহিলাটিকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে। 

‘ইফাজ তোর কিছু করেনি তো? তোকে কোনো কষ্ট দেয়নি তো?’

আগন্তুকের মুখে ইফাজ খানের নাম শুনে বিস্মিত হয় সে। তার মুখ দিয়ে এটুকু বের হয়,

‘কে আপনি?’

তারপর..তারপর ঘটে যায় অনেক কিছু। তাজবীর তার জীবনের কালো অধ্যায় জানতে পারে। মহিলাটি তাজবীরের জন্মদাত্রী। মহিলাটির সাথে ইফাজের দুইটা ছবিই তার প্রমাণ, আরেকটা প্রমাণ ছিল মহিলার চেহারা হুবহু তাজবীরের মতো। জানতে পারে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে সম্পর্ক করে ইফাজ তার সাথে। সম্পর্কের মাঝেই একজন বড়লোক বাবার মেয়ের সাথে পরিচয় হয় ইফাজের। প্রেমে পড়ে যান আরেক মেয়ের। তাজবীরের মায়ের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে গেলেই জানতে পারে সে গর্ভবতী। ইফাজ তখন নতুন প্রেমিকার প্রেমে এতই মাতোয়ারা যে প্রাক্তন এবং প্রাক্তনের বাচ্চাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। তাজবীরের জন্মের পর তার মা তাকে এই খানেই রেখে যান। এটাও জানতে পারে ইফাজের নতুন প্রেমিকা তার সম্পর্কে জানেন এবং এতে একটুও বিচলিত না বরং ইফাজকে আদেশ করেন তাজবীরের মাকে মেরে ফেললেই তার শান্তি হবে। অন্ধ ইফাজ তাই করার জন্য হন্যে হয়ে তাজবীরের মাকে মা’রার চেষ্টা করেন। এত অত্যাচার করেন যে এক হাত হারাতে হয় তাজবীরের মাকে। ভাগ্যক্রমে পালিয়ে নিজের জীবনটাই বাঁচাতে পারেন তিনি। 

তারপর তাজবীরের খোঁজ জানার পর ইফাজ প্রায়ই আশ্রমে এসে দেখে যেতেন, যদিও পিতৃ প্রেম তার মনে জেগে উঠেছিল তবে তার মূল লক্ষ্য ছিল তাজবীরের মাকে খোঁজা। এইজন্যই এখানে আসা প্রতিদিন, ভাবতেন তাজবীর থেকেই তাজবীরের মায়ের খোঁজ পেতে পারবেন।

তাজবীরের মা শুনেছেন তার সাথে সম্পর্ক ছিন্নের কয়েকবছর পর ইফাজ আর তার প্রেমিকার বিয়ে হয়, এবং তাদের ঘরে ফুটফুটে মেয়েও হয়। ভেবেছিলেন এই বুঝি তার রক্ষা, কিন্তু ইফাজের বউ এতটাই হিংস্র এবং ঈর্ষান্বিত ছিলেন যে তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন তাজবীরের মাকে মেরে ফেলার জন্য। এতটা বছর লুকিয়ে ছিলেন তিনি। তাজবীরের মা কান্না করতে করতে তাজবীরের কাছে মিনতি করেন,

‘আব্বা তুই ঐ জানোয়ারটাকে ছাড়িস না আব্বা। আমার জীবনটা নষ্ট তো করছেই সাথে তোরটাও করছে। ঐ জানোয়ার যদি আমার খোঁজ পায় তাইলে আমারে মাইরাই ফেলবোরে বাপ। আমি এখন আর ম’রার চিন্তা করি না। আমি জানি ঐ জানোয়ার এখনো নজর রাখে তোর উপর, যদি আমার দেখা পাওয়া যায়। কিন্তু আমার মনে হইলো তোরে সত্যি কথা না বললে তুই ঐ জানোয়াররে সারাজীবন ভালো মানুষই ভাইবা যাইতি। তাই আমি জীবন বাজি রাইখা আসছি তোরে বলতে। তুই ওগোরে ছাড়িস না। আমারে যেই কষ্ট দিছে ঐ কষ্টটা তুই ফিরায়া দিস।’

তার পরদিন তাজবীর তার মাকে দেখতে পায় তাদের পাশের নদীতে ভাসমান অবস্থায়, গলায় দড়ির ছাপ। মানুষ ভাবে, পাগলনি নিজেই আত্মহত্যা করেছে, কিন্তু তাজবীর জানে এই অবস্থা কে করতে পারে। তারপর থেকে তাজবীরের মন আক্রোশে ফুঁসতে থাকে, বাবার জন্য জমে থাকা এক বিন্দু ভালোবাসা ঘৃণায় পরিণত হয়। আশ্রম থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ইফাজের ঠিকানায় গেলেও তাদের দেখা পায় না। শুধু জানে অন্যত্র চলে গেছে তারা। নাম্বারও বদলে ফেলেছে। 

ব্যস, পলক এটুকুই জানে। তাজবীর এটুকুই বলেছিল। ইফাজ খানের খোঁজ পাওয়ার পরও তাজবীরকে কিচ্ছু করতে হয়নি। কারণ ততদিনে ইনান মেন্টাল ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ছিল, এটাই ইফাজকে শাস্তি দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। 

ইনানকে তাজবীর বলেও দিয়েছিল সবটা, প্রমাণসহ। ইনান ভেঙে পড়ে বাবাকে দূরে ঠেলে দেয়, চোখের সামনে আসতে বারণ করে দেয় ইফাজকে। বাবার এবং মৃত মায়ের করা অপরাধ মনে দাগ কাটে গভীরভাবে। মাকে এতটা নিষ্পাপ ভেবেছিল, এতটা ভালোবেসেছিল, তার মাও তাকে কত আদর করতেন, কখনো মনেই হয়নি তার মন যে কতটা কালো। হয়তো এই পাপের শাস্তিই ছিল তার অকাল মৃত্যু।

আদরের মেয়ের অবহেলা সইতে না পেরে ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে যান ইফাজ, সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েন তিনি। ইনানের কাছে ক্ষমাও চান, কিন্তু মেয়ের মন গলে না। এত বড় একটা অপরাধের পর তাকে মেনে নেওয়া আসলেই সহজ নয়। দুইটা মাসেই পাগলের মতো হয়ে যান ইফাজ, হাত পা নাড়াতে পারতেন না ঠিকমতো, কথা বলতে পারতেন না, হসপিটালাইজ করার পরেও তার অবস্থার অবনতি ছাড়া কিছুই হচ্ছিল না। নিজের করা পাপকর্মের জন্য সারাদিন আফসোস করেন। আর একা একা পাগলের মতো কান্না করতে থাকেন। এরপর একদিন হুট করেই স্ট্রোক করে বিদায় নেন। 

ইফাজের মৃত্যুর সময় তাজবীর এবং ইনান দুজনেই গিয়েছিল। তাজবীরের ঠোঁটে ছিল প্রতিশোধ নিতে পারার তৃপ্ত হাসি। আর ইনানের মুখ ছিল কঠোর, শুধু তার দুচোখ বেয়ে অঝোরে নোনা পানির ধারা বয়ে পড়ছিল। 

তারপর সবাই সবার রাস্তায়। পলক ইনানকে সুস্থ করার জন্য যা লাগে সব করে। ভালো সাইকিয়াট্রিস্টের শরণাপন্ন হয়। এরমধ্যে তাজবীর মাঝে মাঝে এসে ইনানকে দেখে যেত। তাজবীর ইনানের খরচ বহন করতে চাইলে পলক বাঁধা দেয়। কিন্তু তাজবীরের কথা, সে একজন ভাই হিসেবে ইনানের জন্য কিছুই করতে পারেনি, তাই অন্তত এইটুকু করে যাতে ভ্রাতৃত্বের মান রাখতে পারে। পলক তা শুনে আর বারণ করেনি। 

ইনানের অবস্থার উন্নতির কথা উঠলে, পলক ঠিকঠাক কিছুই বলতে পারবে না। ইনানকে প্রথম প্রথম দুই রুমের বাসাতেই বন্দী রাখতো তারা। 

কিছু মুহূর্ত পরপর ইনানের পার্সোনালিটি চেঞ্জ হয়ে যেত। সে জেহফিলের সাথে একা একা কথা বলতো। তাকে শত বুঝানোর পরেও সে কারো কথা মাথায় নিতো না। জেহফিল যে নেই, এটা কেউ বলতে গেলেই হিংস্র হয়ে যেত ইনান। যখন ইনানের মাঝে জেহফিল চলে আসতো তখন তাকে চেয়ারে বেঁধে রাখতে হতো। জেহফিল তখন পলককে আজেবাজে ভাষায় গালি দিতো ইনানের কাছে আসার জন্য। তখন সেগুলো পলক রেকর্ড করে ইনান স্বাভাবিক অবস্থায় আসলে তাকে দেখাত। 

জেহফিলের পার্সোনালিটি যখন চলে আসতো তখন কাউসার এবং আরো দুই তিনজন সাইকিয়াট্রিস্ট খুব শান্তভাবে জেহফিলের সাথে কথা বলে বলে তার সাথে ভাব জমান। এবং যখন সে শান্ত হয়ে যেত তখন তারা ইনানের অবস্থা, শারীরিক এবং মানসিক অবস্থা দুটোই করুণভাবে জেহফিলের কাছে বলতেন, এভাবে চললে ইনানকে সত্যি সত্যিই মেন্টাল হসপিটালে ভর্তি করাতে হবে আর এতে ইনান আরো অ্যাবনরমাল হয়ে কখন না কখন সুইসাইড করে ফেলে। জেহফিল ইনানের ব্যাপারে প্রচুর কনসার্ন। সেটাকে কাজে লাগিয়ে কাউন্সিলররা জেহফিলকে বুঝাতো সে যদি তার হঠাৎ চলে আসাটা কমিয়ে দেয় এবং তার অ্যাগ্রেসিভনেস দূর করে তবে ইনানের সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। 

তারা ইনানকে ব্রেইনওয়াশ করতে পারলেও জেহফিলকে করতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে তাদের। বর্তমানে ইনান আগের থেকে অনেকটা শান্ত এবং জেহফিলের পার্সোনালিটি হুটহাট আর আসে না তার মধ্যে। দিনে একবার কিংবা দুইদিনে একবার করে আসে, নরমাল কথাবার্তা হয় আবার চলে যায়। ইনানের চিকিৎসা খুবই সময়সাপেক্ষ ব্যাপার তবে আশা রাখা যায় ইনান ঠিক হবে…হয়তো।

‘জেহফিল।’

পলকের ভাবনার ইতি ঘটে। তার পাশে দাঁড়ানো ইনান বিষণ্ণ সুরে জেহফিলের নাম ধরে ডেকে উঠে। পলকের কষ্ট হয়। সত্যি অনেক কষ্ট হয়‌। ইনান মাঝেমাঝেই জেহফিলকে ডাক দেয়। ইনানকে পাওয়ার আশায় একসময় হাল ছেড়েই দিয়েছিল সে। কিন্তু এখন ইনানের কেউ নেই। না আছে বাবা না আছে জেহফিল। ইনানকে ভালো করে চেনার মতো তাজবীর না। তাই তার উপর ছেড়ে না দিয়ে পলক নিজেই সব ভার নিজের কাঁধে তুলে নেয়। এখন তো ইনানকে সে হান্ড্রেড পার্সেন্ট পাবেই। শুধু সময়ের অপেক্ষা। পলক পকেটের মধ্যে রাখা ডায়মন্ড রিংটার দিকে তাকায়, হাতের মুঠোয় নিয়ে বিড়বিড় করে,

‘শুধু সময়ের অপেক্ষা।’

***

‘কোথাও ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছা আছে ইনান?’

পলক কথা বাড়ানোর চেষ্টায় প্রশ্ন করল। ইনান দুদিকে মাথা নাড়িয়ে না সূচক জবাব দেয়। মুখে কিছু বলে না। হাত আড়াআড়িভাবে ভাঁজ করে ভাবলেশহীন হয়ে সমুদ্র অবলোকন করছে সে। শান্ত সমুদ্র ধীরে ধীরে অশান্ত হয়ে উঠছে। নীরব ঢেউগুলো আওয়াজ তুলে হাঁটুর নিচ অবধি ধাক্কা খাচ্ছে। পলক আরো কয়েকবার চেষ্টা করল, কিন্তু জবাবে ইনানকে মাথা নাড়ানো ছাড়া আর কিছুই করতে না দেখে হতাশ হয়ে পড়ল সে। ইনানের এই নির্বিকারত্ব পলককে পীড়া দেয়। থেরাপির থেকে ব্রেইন রিফ্রেশ করার জন্যই ইনানকে সমুদ্রের তীরে নিয়ে আসা। সাথে নিজের বন্ধুত্ব প্রগাঢ় করা ছিল আরেকটা উদ্দেশ্য। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। 

ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সমুদ্রের অবস্থা দেখে মনে হয় না এখানে থাকা আর উচিত হবে। পলক ইনানকে চলে যাওয়ার জন্য বলার আগেই ইনান বলে উঠে,

‘জেহফিল।’

পলক কিঞ্চিৎ বিরক্ত হয়,

‘জেহফিল নামের কেউ নেই এইটা তুমি বিশ্বাস করছো না কেন?’

কিছুটা কঠিন গলায় বলে ইনানের দিকে তাকায় সে। ইনান অন্যদিকে তাকিয়ে আছে এখন, অবাক চোখে। চোখের কোলে জল চিকচিক করছে,

‘ঐ তো, জেহফিল।’

‘তোমার ভ্রম…’ পলক সেইদিকে একবার তাকিয়ে নিরাশ গলায় বলল।

‘না। একদমই না।’ ইনানের গলা অস্থির, ছটফটানো, ‘ঐ যে, আমি জেহফিলকে দেখেছি। ঐ যে উনি।’

এই বলে ইনান ছুটতে আরম্ভ করে সমুদ্রের কিনার ঘেঁষে। পলক পিছু পিছু ছুটে,

‘ইনান, যেও না ইনান। ওয়েট।’

ইনান পলকের কথা শুনল না। বড় বড় ঢেউগুলো ভেঙে পড়ছে ইনানের হাঁটুতে। ভারী বর্ষণের ধারা নেমে এসেছে ধরণীতে। সাদা গাউন ভিজে ইনানের পা’য়ে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে দৌড়ানোর জন্য। কিন্তু ইনান থেমে থাকেনি, 

‘জেহফিল,‌জেহফিল..’ বলে চিৎকার করতে করতে নিজের সমস্তটা দিয়ে দৌড়াচ্ছে।

পলক ইনানকের হাত ধরে হেঁচকা টান দিলো। হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,

‘পাগল হয়ে গেছ তুমি? দেখছো আকাশের অবস্থা ভালো না, তার উপর তোমার পাগলামি। চলো এক্ষুনি, জেহফিল…’

ইনান পলককে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেয়। ইনানের চুল, গাল বেয়ে টুপটুপ করে বৃষ্টির পানি পড়ছে। সে চিৎকার করে বলল,

‘ঐ যে জেহফিল আপনি দেখছেন না? উনি আমাকে ডাকছেন। আপনি চলে যান প্লিজ। প্লিজ পলক…’

এই বলে আবার ছুটতে শুরু করল। পলকও থেমে থাকে না। ঢেউ মাড়িয়ে ইনানের পিছু নেয়। ঠিক তখনি ইনান যেদিকে যাচ্ছে সেইদিকেই একটা অবয়ব অস্পষ্টভাবে দেখতে পেল সে। বৃষ্টির কারণে ভালো করে বুঝতে পারল না। কিন্তু তার মনটা অস্থির হয়ে যাচ্ছে হঠাৎ, খারাপ চিন্তারা আসছে, ধোঁয়াশায় তলিয়ে যাচ্ছে সে। কিছুতেই হতে পারে না। হয়তো ইনান অচেনা কোনো এক লোককে জেহফিল ভেবে এগিয়ে যাচ্ছে, হতে পারে…মনে মনে স্বগতোক্তি করল পলক। কিন্তু মন তার মিথ্যে আশায় পানি ফেলল। অবয়বটিও সাদা কিছু একটা পরনে, অবয়বটির চেহারার গড়ন ঝাপসা হলেও পলকের মনের মধ্যে থাকা কণ্ঠ বলল এটা তার সেই প্রতিদ্বন্দ্বী।

ধরে আসা গলায়, ভেঙে ভেঙে বলল,

‘ইনান আমার, ভালোবাসা। যেও না আমাকে ছেড়ে…ফিরে আসো দয়া করে…ইনান…’

অবাক হলো যখন নিজের কণ্ঠ নিজেই শুনতে পেল না। কেউ যেন গলা টিপে কণ্ঠরোধ করে রেখেছে তার। চিৎকার করে ডাকল ইনানকে। আশ্চর্য! ইনানকে ডাকল ঠিক কিন্তু আওয়াজ বের হলো না! পা আগাতে চাইছে না কেন? ছোটার গতি কমে এলো ধীরে ধীরে। পা থেমে যাচ্ছে না চাইতেই। অথচ সে চাইছে ইনানকে থামাতে, ইনানের হাত ধরে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে, কিন্তু তার শরীর অজানা কারণে কেমন অবশ হয়ে আসছে।

হাঁটু ভেঙে হঠাৎ বসে পড়ল। গর্জন তোলা ঢেউ আক্রমণ করছে পলককে। সে ঘোলাটে চোখে দেখল সাদা গাউন পরিহিত ইনান একটা অবয়বের দিকে ছুটে যাচ্ছে। যে হাত বাড়িয়ে ইনানকে বাহুডোরে আবদ্ধ করছে…তারপর…পলকের চোখ ভিজে উঠল, পলক চোখে হাত দিলো, এগুলো বৃষ্টির পানি, তাই না? নিজেকে বুঝ দিলো। কিন্তু সে জানে, এগুলো যে বারিধারা নয়, বরং অশ্রুধারা…

কাঁধে কারো হাত পড়ল। পলক তাকায় না। চেনা কণ্ঠের একজন পুরুষ বলে উঠে,

‘আপনি অনেক করেছেন পলক। নিঃস্বার্থে ভালোবেসে গেছেন। তবে একতরফা ভালোবাসা দিয়ে আসলে কিছুই হয়না। আপনার মনে ইনান থাকলে ইনানের মন কিন্তু অন্যের দখলে। মেনে নিন পলক। আপনার ডেস্টিনি ইনান ছিল না, আর না ইনানের আপনি।’

.
.

উত্তাল মেঘেদের গর্জন, ঢেউয়ের তাণ্ডবে ধরাধাম মাতোয়ারা। থেকে থেকে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। সেই বিদ্যুৎ চমকানোর আলোয় ইনান দেখল একজোড়া ধূসর চোখ তার দিকে গভীর চাহনি মেলে তাকিয়ে আছে, যার অতলে ইনানের জন্য ব্যকুলতা, এক আকাশ ভালোবাসা। ইনানের উত্তেজনা বেড়ে চলছে, ঠিক মতো দাঁড়াতে অবধিও পারছে না। দৌড়ে গিয়ে ঝাপটে ধরে সামনে দাঁড়ানো চওড়া বুকের লম্বা মানুষটিকে। অঝোরে কান্না করতে করতে জেহফিলের গলা জড়িয়ে ধরল শক্ত করে। জেহফিলও পেশিবহুল বাহুর মধ্যে ইনানকে বন্দী করে নিলো। 

ইনান মাথা তুলে জেহফিলের মুখ, গলা, বুকে হাত বুলিয়ে চুমু খেতে লাগল অস্থির হয়ে। আকুল হয়ে বলল,

‘আপনি জেহফিল তো? প্লিজ বলুন আপনি সত্যিকারের জেহফিল? আমি কল্পনা করছি না তো, তাই না?’

জেহফিল ইনানের হাত নিয়ে নিজের গালে রাখে। প্রায় বহুমাস পর ইনানের কর্ণকুহরে তার স্বপ্ন পুরুষের ভরাট, হাস্কি কণ্ঠস্বর মধুর মতো প্রবেশ করে,

‘বাটারফ্লাই।’

ইনান নিশ্চল হয়ে যায় যেন। শরীরের ভার ছেড়ে দেয়। চোখ আবারও টলমল করে উঠে। জেহফিল ইনানের কোমর তুলে নিজের সাথে মিশিয়ে ধরল এক হাতে, আরেক হাত ইনানের গলার পেছনে নিয়ে কোমল ভাবে ধরল। 

জেহফিলের চুলগুলো ভিজে কপালের সাথে লেপ্টে আছে। ইনানের কপালে গভীর চুমু খায় জেহফিল। চোখ বন্ধ করে নেয় ইনান। সে নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছে না, তার এতদিনের কল্পনা যে আসলেই বাস্তবে রূপ নিবে তার ধারণাতেই ছিল না। আচ্ছা তার হ্যালুসিনেশন হচ্ছে না তো? নিজের সাথে একা একা কথা বলছে না তো?

জেহফিলের গালে থাকা দুর্বল হাত নিয়ে জেহফিলের ঠোঁটে রাখল। থেমে থেমে বলল,

‘আপনি আমার ভ্রম। আমি কল্পনা করছি আপনাকে। আমার পার্সোনালিটির মধ্যে..’

আর কিছু বলার আগেই ইনানের পেলব ঠোঁট দখল করে নিলো জেহফিল। উগ্র কিন্তু কোমলভাবে। ইনান থামায় না জেহফিলকে। হোক কল্পনা, সে এই মুহূর্তটা হারাতে চায় না। পরে যদি জেহফিল আর না আসে? 

জেহফিলের স্পর্শ গাঢ়ভাবে রূপ নিচ্ছে। ছন্নছাড়া হয়ে যাচ্ছে সে। বৃষ্টি ও জেহফিলের গাঢ় চুম্বনের কারণে ইনানের নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। সে জেহফিলের বুকে হাত রেখে ছুটতে চাইলে জেহফিল হাত মুড়ে পেছনে চেপে ধরে।‌ ইনানের নিঃশ্বাস নেয়ার জন্য মিনি সেকেন্ড সময় দিয়ে সাথে সাথেই আবার ইনানের ওষ্ঠাধর আয়ত্ব করে নেয় সে।

বহু সময় পর ইনানকে ছাড়ল সে, ইনান বড় বড় করে নিঃশ্বাস নিচ্ছিল কিন্তু জেহফিলকে কিচ্ছুটি বলল না, তার চোখে মুখে তৃপ্তির ঝলক। জেহফিল তার কল্পনা না। সত্যি। জেহফিল তাহলে সত্যিই তার চোখের সামনে। খুশিতে ঝলমল করে ওঠে তার চেহারা। জেহফিল এতদিন কোথায় ছিল, কী হয়েছিল কিচ্ছু জানতে চায় না সে, সে শুধু এই মুহুর্তটাকে স্বর্গীয় করে রাখতে চায়।

জেহফিল ইনানের কপালে কপাল ঠেকায়। ঠিক কতটা দিন পর সে বাটারফ্লাইকে দেখছে সে? ২৫৩ দিন ১৮ ঘন্টা ২০ মিনিট! যেই জেহফিল একটা সেকেন্ড তার বাটারফ্লাইকে ছাড়া থাকতে পারত না এতদিন তাকে তার অসাবধানতার কারণে দূরে থাকতে হয়েছে। মন মোচড় দিয়ে উঠল। সে যদি সেদিন বাটারফ্লাইকে নিয়ে না বের হতো তাহলে এসব দিন দেখা লাগতো না, তার প্রিয় একটা জায়গায় বাটারফ্লাইয়ের সাথে সময় কাটানোর জন্য সেদিনই কেন বেছে নিতে হয়েছিল তাকে? সেদিনই কেন তাকে ডেটে যেতে হলো? যার ফলাফল, সাদা বিছানায় ক্যানোলা হাতে কাতরাতে কাতরাতে দিনরাত পার করতে হচ্ছিল। শরীরের ব্যথায় না, মনের ব্যথায়। তার সহজ সরল বাটারফ্লাই একা একা কীভাবে ভুতুড়ে অট্টালিকায় থাকছে, রাতে কীভাবে ঘুমাচ্ছে, এসব ভেবে ভেবে তার শরীরের অবস্থা আরো খারাপ হয়ে গিয়েছিল। যখন জানল ইনান জেহফিলকে কল্পনা করে দিন কাটাচ্ছে তখন জেহফিলের খরা হৃদয়ে যেন এক পশলা বৃষ্টি নামল। ইনান জেহফিলকে কল্পনা করছে, তার মানে ইনানের ভালোবাসা উদ্ভ্রান্তের পর্যায়ে চলে গেছে!

সে যেমনভাবে ইনানকে ভালোবাসে, ঠিক তেমনভাবে তাকেও ভালোবাসবে, এই একটা ক্ষীণ আশা জেহফিলের মনে ছিল। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে ইনানের মুখশ্রীতে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে শুধু ভাবত, আসলেই কি মনপ্রাণ দিয়ে ইনান তাকে ভালোবাসবে?

বেসেছে। তাও হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে, পাগলের মতো। জেহফিল যতটাই না খুশি ছিল ততটাই বিষণ্ণ ছিল তার হৃদয়। এক আকাশ পরিমাণ ভালোবাসার সাক্ষী থাকতে না পারাটা তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিল পুরোটা সময়। ঠিকমতো খাওয়া ঘুম কিচ্ছু হতো না, আর সেটাই তার আরো একটা ভুল ছিল, যার কারণে অসুস্থ হয়ে আরো বেশিদিন ডাক্তারদের আন্ডারে থাকতে হয়েছিল। চোখ বন্ধ করলেই ইনানের চেহারা ভেসে উঠত। চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করে দিন গুণত। কতটা হিংস্র হয়ে গিয়েছিল সে এই কয়েকমাস… আরো হিংস্র বানিয়েছিল যখন শরৎএর করা কাজগুলো শুনল। নিজেকে কাপুরুষ এবং অথর্ব মনে হতে থাকল। তারপর মন শীতল করা খবরটা কানে এলো। ইনান শরৎকে মে’রেছে। কু’পিয়ে, ছিন্নভিন্ন করে। এই না হলে বাঘের বউ…তার শান্তশিষ্ট বাটারফ্লাইয়ের অশান্ত রূপ…

জেহফিল কাতর গলায় বলল,

‘ইট ওয়াজ সো টাফ বাটারফ্লাই। তোমাকে ছাড়া থাকা যেন মৃ’ত্যুসম ছিল। প্রতিটা দিন, প্রতিটা মুহূর্ত আমি যে কত ছটফট করেছি কবে তোমাকে চোখে দেখতে পাবো, ইউ হ্যাভ নো আইডিয়া বাটারফ্লাই। আই ওয়াজ…আই ওয়াজ সো ম্যাড অ্যাট মি…’

‘আপনিও জানেন না জেহফিল। আমি, আমিও যে পাগল হয়ে গেছিলাম। যখন সবাই বলেছিল আপনি নেই, আমার যে কী করতে ইচ্ছে করছিল, ইচ্ছে করছিল সবাইকে মে’রে দিতে। আপনাকে আমি এতটাই কল্পনা করতাম যে আমার পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার হয়েছিল।’

‘আই নো বেবিগার্ল। সব জানি। এসব নিয়ে চিন্তা করবে না আর। এসব পাস্ট। বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাববে।’

ইনান আশ্চর্যান্বিত হয়ে বলে, ‘আপনি জানেন? তার মানে কি আপনি সবসময় আমার কাছেই ছিলেন? লুকিয়ে?’

‘দুর্ভাগ্যবশত না। আমি যদি তোমার কাছেই থাকতাম তাহলে লুকিয়ে থাকতাম না, ঐ শরৎএর মতো জানোয়ার তোমার কাছে আসার আগেই রাস্তায় ওর লা’শ গড়াগড়ি খেতো। বাট আমার ব্যর্থতা আমি ঐ বাস্টার্ডকে নিজ হাতে মা’রতে পারিনি।’

জেহফিলের কণ্ঠে আগুন ঝরে পড়ছে। চোখে ধিক ধিক করছে আগুনের হলকা। নিজেকে ধাতস্থ করে বড় শ্বাস নিয়ে বলল,

‘তোমার থেকে দূরে থাকলেও তোমার প্রতিদিনের আপডেট আমার কাছে চলে যেত।’

ইনান আর প্রশ্ন করল না, শুধু ব্যস্ত হয়ে বলল, ‘জেহফিল, আপনি আমাকে ছেড়ে আর কখনো যাবেন না তো তাই না?’

ইনানের চোখের পানি মুছে দিয়ে ইনানের লাল হয়ে ফুলে থাকা ঠোঁটে ছোট্ট চুমু খেল,

‘নেভার এভার। ইউ আর মাইন। আমি আমার জিনিসকে কখনো হাতছাড়া করি না। আমার অসতর্কতার কারণেই তোমাকে দূরে থাকতে হয়েছে, আমার হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিলে তুমি। তার জন্য আ’ম রিয়েলি স্যরি। কিন্তু আর না। তুমি আমার চোখের আড়ালেও যাতে না যেতে পারো তার সব ব্যবস্থা আমি করে রাখব, আই প্রমিস।’

ইনান হেসে জেহফিলের গালে চুমু খায়, বুকে মাথা রেখে বলল,

‘আমিই তো যাবনা আপনার চোখের সামনে থেকে। আপনিও গেলে খবর করে ছাড়ব। যেখানে যাবেন, আমাকে নিয়ে যাবেন। ঘরের বাইরে গেলেও। বোঝা গেছে?’

ইনানের হাতের উল্টোপিঠে কিস করে মাথা নিচু করে কুর্নিশ করার ভঙ্গিতে বলল,

‘Your word is my command, princess.’

ইনানকে কোলে তুলে নেয় সে। লাজ রাঙা বাটারফ্লাইকে সে আর ছাড়ছে না। ইনানকে বুকে নিয়ে ঘুমানো হয় না অনেকদিন, ইনানকে রান্না করিয়ে নিজ হাতে খাওয়ানো হয়নি অনেকদিন, ইনানকে শাসন করা, ভালোবাসা হয়নি আজ অনেক,অনেকদিন…

নির্ধারিত রিসোর্টে গিয়ে ইনানকে তার রুমে নিয়ে এলো। ইনানের মনে প্রশ্ন অনেক। কিন্তু জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে না কিছুই।

রুমটা খুব সুন্দর করে ডেকোরেশন করা। সোনালী রঙের মৃদু আলোয় আলোকিত। ফ্লোরে আর বিছানায় গোলাপের পাপড়ি। মিষ্টি সুবাসে মো মো করছে চারিদিক, সাথে বাইরের হিম বাতাস এবং বজ্রপাতের গগণবিদারী আওয়াজ।

কাকভেজা ইনানকে বিছানায় সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। সাদা গাউন ভেদ করে ইনানের ধনুকের মতো বাঁকানো দেহের প্রতিটি ভাঁজ স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এত মোহনীয় লাগছিল ইনানকে! জেহফিল চোখ সরাতে পারল না। তার চোখের সামনে স্বর্গ থেকে নেমে আসা পরী। সদ্য প্রস্ফুটিত গোলাপের পাপড়ির ন্যায় লাগছিল ইনানকে। মাতাল হয়ে যাচ্ছিল সে। 

ইনানের বড় আয়নার সামনে তার পেছনে দাঁড়ালো জেহফিল। আয়নায় নিজের আবেদনময়ী প্রতিবিম্ব দেখে এত লজ্জা পেল ইনান যে সঙ্গে সঙ্গে তার গাল এবং কান লাল হয়ে গেল, কান দিয়ে উষ্ণ ধোঁয়া বেরোতে আরম্ভ করল। জেহফিলের প্রগাঢ় চাহনি ইনানের হৃদয় কাঁপিয়ে দিচ্ছে যেন। 

লালিমা আভায় নিমজ্জিত ইনানকে দেখতে দেখতে ইনানের ঘাড়ের চুল সরিয়ে ঠোঁট বসায় সেখানে। ঠোঁট না সরিয়েই মোহিত কণ্ঠে বলল,

‘তুমি এত সুন্দর কেন বাটারফ্লাই?’

‘কারণ আপনার অন্তদৃষ্টি‌ সুন্দর।’

‘আমার অন্তর্দৃষ্টি কলুষিত ছিল। তুমি এসে কালো মেঘ দূর করেছ।’

‘জেহফিল, চলুন না কোথাও হারিয়ে যাই?’

‘কোথায়?’

‘যেদিকে চোখ যায়, যেদিকে আমাদের চেনা পরিচিত কেউ নেই।’

জেহফিল দুষ্টু হেসে বলল, ‘আমি আশা করছিলাম তুমি বলবে আমার মাঝে হারিয়ে যেতে।’

কনুই দিয়ে জেহফিলের পেটে হালকা করে মারে ইনান, লজ্জা লুকানোর চেষ্টা করে বলে,

‘আপনি এখনো সেই দুষ্টই রয়ে গেছেন।’

‘সারাজীবনই থাকব, তোমার জন্য।’
 
‘একটা প্রশ্ন জেহফিল। আমি আপনার আর্ট রুমের ড্রয়ারে একটা ডায়েরী পেয়েছিলাম। সবুজ রঙের।’

জেহফিলের হাস্যোজ্জ্বল মুখে গাম্ভীর্য নেমে আসে, রাশভারী গলায় বলল,

‘তুমি পড়েছিলে?’

‘নাহ চাবি পাইনি। কী নিয়ে লেখা ছিল?’

জেহফিল চুপ থাকে। 

‘বলুন জেহফিল প্লিজ। কারণ আমার কল্পনার জেহফিল কিন্তু ডায়েরী সম্পর্কে কিছু জানে না। আপনি যদি আমার জবাব না দেন তাহলে বিশ্বাস করতে হবে আপনি আমার ভ্রম।’

‘ওয়েল। ওটায় আসলে কিছু বাজে কথা লেখা ছিল।’

‘কী নিয়ে?’

‘মা’র্ডার।’

ইনান বিষম খায়। জেহফিল মুখ দুহাতের আঁজলায় নিয়ে বলে,

‘বাটারফ্লাই, আমি তোমাকে অনেক টেনশনে থাকি সবসময়। বিয়ের আগে যখন তোমাকে দেখেছিলাম, আমি ভেবেছি আমার পথে অনেক বাঁধা আসবে তোমাকে নিজের করে নিতে। আমি এতটাই ক্রেজি ছিলাম যে আমি ভেবেছি তোমাকে পেতে হলে আমার হাত রক্তাক্ত করতে হবে। মানুষকে মা’রার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি মাথায় ঘুরঘুর করত। প্রতিদিন নতুন নতুন আইডিয়া আসতো আর লিখে ফেলতাম ডায়েরীতে, কীভাবে একটা মানুষকে সর্বোচ্চ কষ্ট দিয়ে মা’রা যায় তার পদ্ধতি, গুম করার পদ্ধতি ইভেন অনেক সরঞ্জামেরও লিস্ট করে রেখেছিলাম। ঐ সব লেখা ছিল ঐ ডায়েরীতে। তুমি…তুমি আমাকে ভুল বুঝো না প্লিজ।’

ইনান ঠোঁট চেপে হেসে বলল,

‘আপনি পাগল। এই পাগলামি শুধু আমার জন্যই যাতে থাকে। অন্য কারোর জন্য হলে আপনার পদ্ধতিতে আপনাকেই মে’রে গুম করে দেব।’

ইনানকে সহজ হতে দেখে জেহফিলও বাঁকা হেসে বলে,

‘আমার মা’র্ডারার তুমি হলে আমি হাসিমুখে তোমার ভিক্টিম হবো।’

ইনান পায়ের আঙ্গুলের উপর ভর দিয়ে উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে নিজ উদ্যোগে জেহফিলের ঠাণ্ডা অধর নিজের মাঝে নিয়ে নিলো। জেহফিল যতটা উগ্র হয়েছিল তার থেকেও দ্বিগুণ উগ্র হলো ইনান। আগ্রাসী হয়ে জেহফিলকে কামড়ে দিতে লাগল। জেহফিল ইনানের কোমর তুলে উঁচু করে নিলো যাতে ইনান সহজেই তার কাজ করতে পারে।

ইনানের হিংস্র আদর শেষে জেহফিল ইনানকে নিয়ে বিছানায় বসে। ইনানের হাতার লেস কাঁধ থেকে খুলতে খুলতে ঘোর লাগা গলায় বলল,

‘You are the best thing that ever happened to me butterfly, and our night has just begun. Every moment, every touch is mine to possess, and I will protect what's mine, I promise.’

বাইরে বৃষ্টির ঝমঝম এবং উড়ে যাওয়া পর্দার আড়ালে দুই মানব মানবীর একে অপরের মাঝে গভীরভাবে ডুবে যাওয়া ভালোবাসার বর্ষণ।

.

.

তীক্ষ্ণ শব্দে ইনানের ঘুম ভেঙে যায়। আড়মোড়া ভেঙে জেহফিলের পাশে হাত রাখতেই দেখে জেহফিল নেই। চমকে উঠে চাদর গায়ে জড়িয়ে বসে পড়ে ইনান। জেহফিল কোথায়? নিঃশ্বাস দ্রুততর হয় তার। গতরাতের ভালোবাসাবাসি এতটাই জীবন্ত ছিল যে জেহফিল বাস্তবে আছে- তা বিশ্বাস করেই ফেলেছিল। না, খারাপ চিন্তা মাথায় আনবে না। ইনান নিজেকে শান্ত করল। জেহফিল যদি কল্পনায হতো তাহলে ওর প্রশ্নের উত্তর কখনোই দিতে পারত না। জেহফিল বাস্তব।

আবারও আওয়াজ হয়। ইনান খাট থেকে নেমে দেখল শার্ট নিচে পড়ে আছে। বুকে হাত দিয়ে স্বস্তির শ্বাস ফেলে। জেহফিলের শার্ট এটা। তাহলে গত রাত কোনো কল্পনা ছিল না।‌ সত্যি সত্যিই জেহফিল এসেছে।

জেহফিলের শার্ট পরে রুমের বাইরে মাথা বের করে উঁকি দেয়। দেখে সিঁড়িতে তাজবীর চিৎপটাং হয়ে পড়ে আছে, তার ঠোঁট আর কপাল ফেটে রক্ত বের হচ্ছে, আর জেহফিল তার সামনে দাঁড়িয়ে ফুঁসছে। ইনান রুম থেকে বেরিয়ে দুহাতে মুখ চেপে ধরে শব্দ করে উঠে,

‘ও মাই গড!’

জেহফিল ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়, জেহফিলের শার্ট পরার কারণে ইনানের ফর্সা পা উন্মুক্ত হয়ে আছে, বুকের কাছের বোতামও খোলা। তা দেখে অগ্নিমূর্তি ধারণ করে জেহফিল। চোখ গরম করে ইনানের দিকে তাকায়। জেহফিলের চোখ রাঙানি দেখে আত্মা এইটুকুনি হয়ে যায় ইনানের। জেহফিলের চোখের ভাষা বুঝতে পেরে নিজের দিকে তাকায় আর সাথে সাথে রুমে ঢুকে যায়‌।

সাদা গাউন শুকিয়ে গিয়েছিল, সেটা পরেই বের হয়ে যায় সে। 

‘তাজবীর ভাই, আপনি এখানে কী করছেন?’

তাজবীর তার আঘাত লাগা চোয়ালে হাত বুলিয়ে ব্যথাতুর গলায় বলে,

‘দেখছো না, দুলাভাইয়ের আদর খাচ্ছি।’

বলতে না বলতেই আরেকটা ঘুষি এসে লাগল তাজবীরের বুকে। ইনান হতভম্ব। হঠাৎ তাজবীর এখানে কেন, আর জেহফিলই বা তাকে মারছে কেন?

‘তোর জন্য সব হয়েছে, শালা, তোর কারণে আমার বাটারফ্লাই থেকে দূরে থাকতে হয়েছে, তোকে তো আমি..’

এই বলে জেহফিল উদ্যত হলো আরো মা’রার জন্য। তাজবীর নিজেকে দুইহাতে আড়াল করে বলল,

‘আস্তে, আস্তে দুলাভাই। আর না দোহাই লাগে, ইনান, তুমি ঐখানে দাঁড়িয়ে মজা না নিয়ে এখানে এসে থামা…।’

আরো একটা ঘুষি তাজবীরের পেটে, তাজবীরের কলার চেপে ধরে উঠিয়ে গজরাতে গজরাতে বলল,

‘আমার ওয়াইফকে একদম আদেশ করবি না। ওর সাথে গলা উঁচিয়ে কথা বললে গলার রগ টেনে ছিঁড়ে ফেলব একদম।’

তাজবীর করুণ গলায় বলল,

‘স্যরি ইনান। বোন আমার, ভাইকে দয়া করে বাঁচাও।’

ইনান এসে জেহফিলের হাত থেকে তাজবীরকে ছাড়ালো।

‘আশ্চর্য মানুষ তো আপনারা। ছোট বাচ্চারা মনে হয় যেন মা’রামারি লেগেছে। কী একটা অবস্থা। এই আপনি ভিতরে চলুন তো।’

ইনান জেহফিলকে টেনে ভেতরে নিয়ে আসে, তাজবীর পা টেনে টেনে রুমে চলে আসলে জেহফিল ওর বুকে হাত দিয়ে ধাক্কা মে’রে দরজা থেকে বের করে দেয়‌। 

‘যখন বলব তখন আসবি। বাইরে দাঁড়িয়ে থাক শালা।’

‘গালি দিচ্ছেন কেন?’

‘গালি দিলাম কোথায়? আমার ওয়াইফের ভাই তো শালা-ই লাগবে।’ 

জেহফিল চোখ ঘুরিয়ে রুমে দরজা ঠাস করে মুখের উপর বন্ধ করে দেয়। দুজনে মিলে খাট গুছিয়ে নিচের ফুলগুলো ঝাড়ু দিয়ে রুমটাকে পরিপাটি করে তারপর তাজবীরকে ভেতরে ডাকে। 

তাজবীর সোফায় বসে কাতরাচ্ছে খালি। ইনান এইড নিয়ে ওর পাশে বসতেই জেহফিল ধমকে উঠে।

‘তুমি সরো। ও নিজেই লাগাতে পারবে।’

তাজবীর মুখ গোমড়া করে বলে, ‘যাও ইনান, পরে দেখা যাবে আবারও আমাকে মা’রবে।’

এই বলে নিজেই নিজের ক্ষত জায়গায় মলম লাগানো শুরু করল।

‘এবার বলুন। কী হয়েছে আপনাদের মাঝে?’

তাজবীর টেবিলের উপর থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে ঢকঢক করে পান করে, শার্টের হাতা দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বলে,

‘এক্সিডেন্টের পর জেহফিলের কী হয়েছিল ও তোমাকে বলেছে?’

‘জানতে চাইনি এখনো।’

‘আচ্ছা, আমি এজন্যই এসেছিলাম ক্ল্যারিফাই করতে। জেহফিল তো খালি নিজের কথাই বলবে, আমাকে বাদ দিয়ে। তাই আমি নিজে এসেছি।’

জেহফিল ঘাড় এপাশ ওপাশ করে অবহেলার স্বরে বলে, 

‘নিজের কথা বলে বিদায় হও শালা।’

এই বলে সে গোসলে ঢুকে যায়।

তাজবীর ইনানের দিকে ফিরে। গভীর শ্বাস নিয়ে শুরু করল কথা,

‘তোমরা যেদিন গিয়েছিলে ঘুরতে, ঐদিন আমি আমার কাজে বের হয়েছিলাম‌। ওহ, তার আগে একটা কথা বলি। জেহফিলকে কিন্তু আমি দেখতে পারতাম না। তার কারণ ছিল ও আর আমি একই আশ্রমে বড় হই। যদিও আমি বড় হওয়ার পর একটা ফ্যামিলিতে চলে যাই আর ও একা। আশ্রমে যা হয় আরকি, আমাদের মাঝে ফাইট হয়েছিল, ফর ইওর ইনফর্মেশন, মা’রামারি জেহফিলই শুরু করেছিল। তুচ্ছ কারণে, তখন বাবা আমাকে ভালোবাসতো সেটা দেখে মনে হয় ওর হিংসা হয়েছিল। এইজন্য ও’কে একাডেমিতে আমার স্যার হিসেবে দেখতে পারতাম না, তার উপর অপমান তো করতই। তাই আমাদের সাপে নেউলে সম্পর্ক ছিল বলা যায়।

তো যাইহোক, সেদিন তোমাদের কার ক্র্যাশ হয়েছিল যে রাস্তায়, ঐ রাস্তার নিচের রাস্তায় ছিলাম আমি। নির্জন এলাকা, পাহাড়ি রাস্তা, তার উপর পাশে নদী। একটু কেয়ারলেস হলেই শেষ। সেটাই হয়েছিল তোমাদের ক্ষেত্রে। আমি যখন গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলাম তখন দেখি দুইটা গাড়িই বাঁধের কিনারে হেলে পড়েছিল। দেখে মনে হচ্ছিল একটু আগেই এক্সিডেন্ট হয়েছে। আমার সাথে কেউ ছিল না, না ছিল মোবাইল। আমি গিয়ে দেখি এক গাড়িতে জেহফিল আর আরেকটায় একজন ড্রাইভার রক্তা’ক্ত অবস্থায়। জানো, আমি আমার লাইফ রিস্কে নিয়ে ওদের উদ্ধার করি। জেহফিলকে যখন গাড়ি থেকে বের করেছিলাম সাথে সাথেই ওর গাড়ি নদীতে পড়ে যায়, আর ঐ ড্রাইভারেরটাও কিছুক্ষণ পর পড়ে যায় ওনাকে বের করার পর। 

আমি গাড়ি ঘুরিয়ে ওদের নিয়ে কাছেই আমার এক ফ্রেন্ডের হসপিটালে যাই। লং স্টোরি শর্ট। জেহফিলের স্পাইনাল কর্ড, পা আরেকটা হাত ইনজুর হয়েছিল। আর ঐ ড্রাইভার লোকটার ছিল ট্রমাটিক ব্রেইন ইনজুর। আমি ভেবেছি পুলিশকে ফোন দিয়ে তাদের হাতে ছেড়ে দেব। তো জেহফিলের মোবাইল যখন নিলাম, ওর ফোনের পাসওয়ার্ড জানতাম না, তোমার নাম দিলাম হয়নি, পরে বাটারফ্লাই লিখেছি আর হয়েছে। আমি কী মনে করে যেন ওর অ্যালবামে গেলাম, মূলত এমন কিছু খুঁজে বের করতে যাতে জেহফিলকে ব্ল্যাকমেইল করে অপমান‌ করা যায়। ঐখানে একটা অ্যালবাম চোখে লাগল। যেটায় ছিল তোমার বাবার আর তোমাদের একত্রে একটা ছবি। আই ওয়াজ সো শক্ড ইফাজ খানকে দেখে। আমি তোমার আইডিতে ঢুকলাম। দেখলাম বাবার সাথে অনেক ছবি। আই কুডন্ট বিলিভ যে তুমিই ইফাজ খানের মেয়ে ছিলে, ইফাজ খান, যাকে আমি এতটা বছর খুঁজেছিলাম তুমি জানো কারণটা। আমার ইচ্ছা ছিল না জেহফিলের সাথে নিজেকে জড়ানোর কিন্তু ইফাজ খানকে শাস্তি দেওয়ার প্রতিশোধে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম যে তোমাকে দাবার গুটি হিসেবে ইউজ করতে হয়েছে আমার। 

জেহফিল কোমায় ছিল প্রথম কয়েক সপ্তাহ। আমি পুলিশকে খবর দেয়া অফ রাখলাম। জেহফিলের উপর থেকে রাগ ঝরে গেল। হয়তো তোমার ভালো থাকার খুঁটি হিসেবে ওর উপর রাগ দেখাতে পারিনি। তবে ও যে লেভেলের সাইকোরে ভাই, আমি খালি দোয়া করতাম তুমি যাতে ওর থেকে দূরে চলে যাও, কিন্তু পরে দেখি তুমিও আরেক সাইকো। তাই আর আমি মাঝে বাঁধা দিয়ে কী করব? দুই পাগলে সংসার করলে যদি সুখী হয় তাহলে আমি বাঁধা দেয়ার কে? আর ঐ ড্রাইভারকে তার ফ্যামিলির হাতে বুঝিয়ে দিলাম। মাঝে দিয়ে তোমার খোঁজও নিতাম। তোমার মা মা’রা গিয়েছিল, আমার ইচ্ছা ছিল নিজ হাতে ওনাকে মা’রার। আফসোস পারিনি। সত্যি বলতে কী, তোমাকে ইউজ করার জন্য আমার কষ্টই লাগছিল, কিন্তু মায়ের মৃ’ত্যুর প্রতিশোধ আরো বড় একটা দায়িত্ব ছিল। ততদিনে জানলাম তুমি নাকি অসুস্থ হয়ে গেছ জেহফিলকে না পেয়ে, তোমার বাবার অবস্থা দেখতাম, টেনশনে খারাপ হয়ে গিয়েছিল। ভালোই লাগতো আমার। তখন আরো ছক কষলাম, জেহফিলের সুস্থ হতে অনেক দেরি লাগত। লং টার্ম ইফেক্ট। তাই আমি ও’কে এখানে রেখেই তোমাকে দিয়েই তোমার বাবার শাস্তি দিতে চেয়েছি।

জেহফিলের জ্ঞান ফিরলেও ওর হাফ বডি প্যারালাইজড ছিল। ও সারাদিন তোমার নাম জপত, তোমাকে দেখতে চাইত, আর আমাকে গালিগালাজ দেওয়া তো আছেই, কেন আমি তোমার কাছে ওকে যেতে দিচ্ছি না ব্লা ব্লা। আমি আমার ব্যাপারটা নিজের মধ্যেই রাখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ও এতটা হিংস্র হয়ে গেছিল যে বাধ্য হয়ে আমাকে বলতে হয়েছিল। তবে তোমার অসুস্থতার কথা প্রথমে চেপে গিয়েছি। ইফাজ খানের কুকর্মের কথা বলেছি। জেহফিল ইফাজ খানকেও দেখতে পারত না, আমাদের দুজনের পথের কাটা ছিল উনি। সো, ও কনভিন্সড হলো। ওর বুদ্ধিতেই আমি তোমার পাশের বাসায় উঠলাম‌, জেহফিলের টাকা দিয়েই কিনেছিলাম। প্রতিটা দিনের আপডেট চলে যেত ওর কাছে। যখন তোমার অসুস্থতার কথা শুনল ও তো পারে না আমাকে মে’রেই ফেলে, তুমি অসুস্থ আর ও’কে কেন তোমার থেকে দূরে রেখেছি তাই। দেখলে না তাই এতদিনের রাগ এখন আমার উপর নিলো। ওর হাতে পায়ে পড়ে আমি বুঝিয়েছি ও’কে, ওর অসুস্থতাও আরেকটা কারণ ছিল ওকে শিফ্ট‌ না করার। তবে কী জানো, তোমার ঐ একা একা নাচ, কথা বলা, এসব দেখে কিন্তু খুশিও হতো, শরৎকে তুমি মে’রেছ, ওটার জন্য তোমাকে কত প্রশংসা করেছে ও। ওহ হ্যাঁ, তোমার বাবা কিন্তু জেহফিলের খোঁজ নেয়ইনি বলতে গেলে, শুধু এটুকু খোঁজ নিয়েছেন যে গাড়ি নদীতে পড়ে গেছে। মা’রা গেছে নাকি না তার খোঁজ নেয়ার প্রয়োজনও মনে করেননি। আমি তোমার কাছের ফ্রেন্ডদের কাছে তোমার খোঁজ নিতে চেয়েছি। বাট ওরা এত স্বার্থপর, ওরা তোমার নাম শুনলেই বলত, ‘যে আমাদের খোঁজ নেয় না তার খোঁজ আমরাও নেই না।’ তোমার সিচুয়েশন বুঝলোই না। শুধু জানত তুমি অসুস্থ আর জেহফিল মা’রা গেছে। আর ওদের ফ্রেন্ডশিপটা টিকেনি। সবাই আলাদা হয়ে গেছে। 

জেহফিল যখন সুস্থ হলো, ইফাজ খান ততদিনে মাটির নিচে। তারপর আর কি! নিয়ে আসলাম ও’কে। অ্যান্ড লাস্টলি, আই অ্যাম সো স্যরি ইনান। আমার স্বার্থের কারণেই তোমাদের আলাদা থাকতে হয়েছে। তাই আমার মনে হয় আমি আরো মা’র খাওয়া ডিজার্ভ করি।’

‘বাকিটা অ্যাকাডেমিতে।’ জেহফিল বেরিয়ে বলল। আলমারি থেকে চেক বের করে দুইটা চেক ছিঁড়ে তাজবীরের পকেটে গুঁজে দিলো।

‘একটা তোর। এটায় আমার এবং ইনানের পেছনে যত খরচ হয়েছিল তার দ্বিগুণ দিয়ে দিয়েছি। আর বাড়ি থেকে ঝটপট বেরিয়ে যাবি। ঐটা বাটারফ্লাইএর রেস্ট হাউজ বানাবো। আরেকটা ঐ পাখির পালকের। ওকে দিয়ে দিস, আর ওয়ার্ন করে দিস ও যাতে আমার চোখের সামনে না আসে, আসলে যাতে কাফনের কাপড় নিয়ে আসে সাথে।’

‘আসবেনা বেচারা। যেই বড় ছ্যাঁকা খেয়েছে, মনে হয় না এই জীবনে আর প্রেম ভালোবাসার দিকে যাবে।’

‘হু কেয়ারস!’

‘তো আর কী!’ তাজবীর উঠে দাঁড়ায়, ‘দেখা হবে ইনান। গেলাম। বায় বায়।’

_____

আজকে বৃষ্টি নেই কিন্তু বাতাস অনেক। জ্যোৎস্নায় ভেসে যাচ্ছে পরিবেশ। জোনাকি পোকারা টিমটিমে আলো জ্বালিয়ে আপনমনে উড়ে বেরাচ্ছে। চাঁদের আলোয় ঝলমল করা বারান্দার কাউচে জেহফিল বসে আছে, তার বুকে হেলান দিয়ে ইনান তার কোলে বসে আছে। দুজনের শরীরে চাদর মোড়ানো। তাদের পাশেই জানালার সাথে লাগোয়া বড় আয়না। সেখানে এক অপরকে পলকহীন দেখছে তারা।

‘মনে আছে বাটারফ্লাই? বাকি একটা শর্তের কথা?’ নীরবতা ভাঙল জেহফিল।

ইনান মনে করার চেষ্টা করল, মনে পড়তেই মাথা উপর নিচ করে।

জেহফিল ইনানের ঘাড়ে কামড় দিলো। শিউরে উঠে ইনান। কামড়ের জায়গায় চুমু দিয়ে বলল,

‘একবার না বলেছি মুখে বলতে? ভুলে যাও কেন?’

ইনান সঙ্গে সঙ্গে মুখে বলল,

‘হ্যাঁ, মনে আছে।’

‘গুড গার্ল।’  

ইনান এক্সাইটেড অনেক। উত্তেজনায় থরথর করে কাঁপছে। আগের জেহফিল, সেই আগের জেহফিলের কড়া শাসন, আদেশ, এগুলো সে কত মিস করেছে…এখন আর এসব আগের মতো বিরক্ত লাগে না, বরং ইচ্ছে করছে এসব বারবার শুনতে।

ইনানের চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করল,

‘শুনতে চাও না কী শর্ত?’

‘চাই।’

‘কী মনে হয়? সহজ নাকি কঠিন?’

‘সহজ।’

‘সহজ?’ জেহফিল ভ্রু নাচায়।

‘আপনি যেই শর্তই দেন না কেন, আমি জানি আমার কষ্ট হবে এমন কিছুই করবেন না আপনি।’

ইনানের কণ্ঠে আত্মবিশ্বাস টের পেয়ে জেহফির মৃদু হাসে। অবশেষে তার বাটারফ্লাই তার মতো হয়েছে।

‘যদি বলি আমার হাতের সাথে হাত বেঁধে রাখতে চাই সবসময়?’

‘রাজি।’

‘যদি বলি ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে অন্ধকার রুমে তোমাকে নিয়ে থাকতে চাই কারণ আমি আলো বাতাসকেও হিংসা করি?’

‘তাও রাজি।’

‘যদি বলি শ্বাস নেওয়ার আগেও আমার পার্মিশন নিতে?’

ইনান নিঃশ্বাস বন্ধ করে বলল, ‘আমি কি শ্বাস নিতে পারি জেহফিল?’

জেহফিলের চোখে বিজয়ের আনন্দ। দুইহাতে ইনানের পেট কোমল হাতে জড়িয়ে ধরে ধীরস্বরে বলল,

‘ইয়েস প্রিন্সেস।’

ইনান শ্বাস নিলো। ইনানের গাল ঘুরিয়ে কপালে ভালোবাসার চিহ্ন এঁকে দেয় জেহফিল। 

‘দ্যাটস মাই গার্ল।’

‘তাহলে আপনার শর্ত কি এগুলোই ধরে নিবো?’

ইনানকে নিজের দিকে ফিরায়। কপালের চুল সরিয়ে ইনানের দুচোখের পাতায় গাঢ় স্পর্শ করে। 

‘নাহ। এত নিষ্ঠুর তোমার জেহফিল? আমি শুধু চাই তুমি আমাকে ভালোবাসো, যেভাবে এখন বাসছো। যদি কখনো তোমাকে শাসন করি, মাথায় রাখবে, আমি তোমার ভালো চাই বলেই করছি।’

‘জেহফিল।’

‘বলো বাটারফ্লাই।’

ইনান ঠাণ্ডা বাতাস নিজের মধ্যে টেনে নিলো। শীত শীত লাগছে। জেহফিলের বুকের সাথে লেপ্টে গেল সে। জেহফিলও ইনানকে বুকে টেনে নিজের উষ্ণ দেহে মিশিয়ে ফেলল।

‘জানেন, আমি কখনো চিন্তাও করিনি আপনি যে আমার হাজব্যান্ড হবেন?’

‘ভালো কাউকে আশা করছিলে?’

‘হুম। আমি আগে কল্পনা করতাম আমার হাজব্যান্ড হবে অনেক শান্তশিষ্ট ভদ্রলোক, সোশ্যাল বাটারফ্লাই। কিন্তু ভাগ্য যে কখন কাকে কোথায় নিয়ে ফেলে কেউই জানে না!’

‘তুমি কি রিগ্রেট করছো?’ তর্জনী দিয়ে ইনানের চিবুক তুলল জেহফিল।

‘অবশ্যই না। আমি বরং অনেক অনেক হ্যাপি আপনি যে আমার লাইফে এসেছেন। আপনি আমার জীবনে না এলে আমি জানতামই না, আমার মন যে ভদ্রলোককে না, আপনার মতো মানুষকেই চেয়ে ছিল।’

‘তুমি ডেস্টিনি বিশ্বাস করো?’

‘আগে করতাম না। এখন করি।’

জেহফিল ইনানের কণ্ঠমনিতে চুমু দিয়ে তাকে নিজের সাথে সর্বশক্তি দিয়ে জড়িয়ে ধরল। চুলে বিলি কেটে কপালে আদর দিয়ে জেহফিল স্নিগ্ধ হেসে বলল,

‘Butterfly, forever remember that you are my destined love, my fated soulmate. We were always meant to be together.’
.
.
.
সমাপ্ত..........................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন