আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

নীরবে নিভৃতে - অন্তিম পর্ব ৪০ - তাসমিয়া তাসনিন প্রিয়া - ধারাবাহিক গল্প


" কেনো মারলে ওদের? আমি তো বললাম ওদেরকে একটা সুযোগ দাও! কেনো মারলে? মেয়েটা সেদিন কতটা খুশি মনে আমাকে বলতে এসেছিল, ও মা হতে চলেছে। রাকিব! কী করলে!"

আয়েশা রাকিবকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদছে। নিজের শরীরের কষ্টের থেকেও যেনো মেহেকের মৃত্যুতে বেশি কষ্ট পেয়েছে ও। রাকিব নিজেও বুঝতে পারেনি মেহেক প্রেগন্যান্ট! তাছাড়া আয়েশার কথা তখন শুনতেও পায়নি। আয়েশা আর রাকিবের মাঝে ছয় বছরের সম্পর্ক। চাকরির সূত্রে দু'জনের আলাপ। 

" আয়েশা! আয়েশা প্লিজ শান্ত হও। কী হয়েছে তোমার? ওরা সন্ত্রাসী ছিলো! হ্যাঁ মানছি মেয়েটা প্রেগন্যান্ট ছিলো কিন্তু সেটা তো আমরা কেউ জানতাম না বলো? দিস ইজ আওয়ার প্রফেশন, ডিয়ার। টেইক ইট ইজি! শান্ত হও । "

আয়েশা রাকিবের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগেই জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। রাকিব তড়িঘড়ি করে ওকে নিয়ে ছুটলো। দু'টো নিথর দেহ একে অন্যের হাত ধরা অবস্থায় পড়ে রইলো এখানেই! 

একটি ভয়ংকর রাত পেরিয়ে নতুন ভোরের সূর্য উঠেছে। সারা রাত গোলাগুলির শব্দে গ্রামের লোকজন ভয়ে তটস্থ হয়ে ছিলো। আর মেহেকের বাবা-মা ছিলেন ভীষণ চিন্তিত। সকাল হতেই মিষ্টি আর আহনাফ এ বাড়িতে চলে এসেছে। আশপাশের বাড়ির কিছু লোকজনও এসে উপস্থিত হয়েছে সিদ্দিক আহমেদের বাড়ির উঠোনে। সবাই মেহেকের কথা বলাবলি করছে। গতকাল রাতে যে হারে ঝামেলা হয়েছে তাতে জঙ্গলে কেউ হয়তো বেঁচে নেই। এসব কথাই সবাই নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছে। আহনাফ অবশ্য সবাইকে এসব নিয়ে আলোচনা করতে মানা করছে। কিন্তু এসব লোকজন কি কারো নিষেধ শোনে? মিষ্টি বাবাকে অনেকক্ষণ ধরে বুঝিয়ে যাচ্ছে ওর আপুর কিছু হয়নি বলে। আহনাফ ফোনে নিউজ দেখছে। এখানে বসে তো কোনোভাবেই জঙ্গলের খোঁজ নেওয়া সম্ভব না। তাই সোস্যাল মিডিয়া আর নিউজ চ্যানেলই একমাত্র ভরসা। 
" বাবা শান্ত হও একটু। "

মিষ্টি সিদ্দিক আহমেদকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে বললো। আনজুম বেগমের অবস্থাও ভালো না। মিষ্টির মা হওয়ার আগে তো সে মেহেকের মুখেই মা ডাক শুনেছিল! মেয়েটার কিছু হয়েছে ভাবতেই গায়ে বারবার কাটা দিচ্ছে। 
" আমার মন ভালো বলছে না রে মিষ্টি। "
" কিছু হবে না। "
" তাই যেনো হয় মিষ্টি। "
আনজুম বেগম মেয়েকে বললেন। মনে মনে সৃষ্টিকর্তার নামজপা শুরু করেছেন তিনি। মানুষ হয়তো বিপদে পড়লেই সৃষ্টিকর্তার নাম বেশি করে স্মরণ করে। আনজুম বেগমকে দেখে অন্তত সেটাই মনে হচ্ছে। 

আহনাফ এরমধ্যেই গতকাল রাতের মিশনের সমস্ত নিউজ দেখে ফেলেছে। প্রশাসনের লোকজন বলেছে, 
" সকল ডাকাত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। আমরা অনেক করে বলেছিলাম ওদেরকে আত্মসমর্পণ করতে। কিন্তু সন্ত্রাসীরা কি শান্তির পথ চিনে? নাহ! তারা আত্মসমর্পণ করার বদলে উল্টো ক্ষিপ্তভাবে আমাদের উপর হামলা করতে শুরু করে। ফলশ্রুতিতে আমরা বাধ্য হয়ে গোটা জঙ্গলে চিরুনি অভিযান চালিয়ে সমস্ত ডাকাতদের নিশ্চিহ্ন করি। "

খবরটা শোনার পর আর কোনো দ্বিধা রইলো না কারোর। এই পৃথিবী থেকে মেহেক, রোশন নামের মানুষ দু'টোর অস্তিত্ব চিরতরে মুছে গেছে। তবে সেই সাথে যে তৃতীয় একটা প্রাণও পৃথিবীতে আসার আগে প্রাণ হারালো সে খবর আর কেউ জানতে পারেনি। মেয়ের শোক সহ্য করতে না পেরে সিদ্দিক আহমেদ মিনি স্ট্রোক করেন। অসুস্থ হয়ে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেন বিছানায়। এখন অবশ্য মোটামুটি হাঁটাচলা করতে পারেন সিদ্দিক আহমেদ। তবে কাজকর্ম করার ক্ষমতা লোপ পেয়েছে। সাথে মানসিক অবস্থাও কিছুটা খারাপ। আহনাফই এখন শ্বশুর বাড়ির সবকিছু সামাল দেয়। শ্বাশুড়ির কোনোরকম কষ্ট না হয় সেজন্য একজন কাজের লোকও রেখে দিয়েছে। মিষ্টি গ্রাজুয়েশন শেষ করে মাস্টার্সে পড়ে এখন। আহনাফও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিবর্তে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে চাকরি পেয়েছে। 

পড়ন্ত বিকেল। সূর্যের আলো প্রায় ম্লান হয়ে এসেছে। মৃদুমন্দ বাতাসে মিষ্টির খোলা চুলগুলো বাতাসে বারবার এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। নদীর শান্ত পানির দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেয়েটা। নদীর ওপারে জঙ্গল। আহনাফ পাশেই বসে আছে। হাতে হাত রেখে কিছুটা শান্ত করতে চাইছে মিষ্টিকে। বোনকে হারানোর যন্ত্রণা ভুলতে পারেনি মিষ্টি। এভাবে সবটা শুরু করার আগেই দু'টো ভালোবাসার পাখি পৃথিবী থেকে বিদায় নিলো! সবকিছুই তো অসম্পূর্ণ থেকে গেলো ওদের। সবে তো ভালোবাসার গল্প শুরু হয়েছিল, স্বাভাবিক একটা সংসার করার ছিলো, সেই সংসারে ছোটো ছোটো পায়ে ওদের সন্তানদের হাঁটার কথা ছিলো। কিছু তো হলোনা! 
" মিষ্টি? "

" হুম বলো। "

" এদিকে এসো। "

আহনাফ মিষ্টিকে বুকে জড়িয়ে নিলো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ফের বললো,

" পৃথিবীতে আমরা কেউ চিরস্থায়ী নই মিষ্টি। সবাই একদিন চলে যায়, যাবে, যেতেই হয়। তবে অসময়ে গেলে মনটা মানতে চায় না। কিন্তু একটা বিষয় দেখো, মেহেক আর রোশন একসাথেই চলে গেলো! ওদের ভালোবাসা এতটাই শক্তিশালী যে কেউ কাউকে রেখে গেলোনা। "

" তাহলে কি ওরা আবারো ফিরবে? সেটা কি আদৌও সম্ভব! "

নিজের বলা কথাগুলো ভেবে নিজেই সন্দিহান মিষ্টি। আহনাফ বললো,

" পৃথিবীতে অনেককিছুই অসম্ভব। তবে মাঝে মধ্যে অসম্ভবও যে সম্ভব হয়ে যায় মিষ্টি। যদি ওদের কোনো অসম্পূর্ণ ইচ্ছে থাকে হয়তো ফিরবে। "

মিষ্টির ঠোঁটের কোণে ম্লান হাসির রেখা ফুটে উঠেছে। কোথাও গিয়ে যেনো মনে হচ্ছে শেষ থেকেই শুরু! তবে একি কখনো সম্ভব হবে? 
দূর আকাশে দুটো সাদা মেঘের ভেলা ভাসছে। মিষ্টি আর আহনাফের কথায় হয়তো তাঁদেরও আনন্দ হলো৷ ভেসে ভেসে অনেক দূর যাচ্ছে ওরা। 

" নাবিলা? এই নাবিলা ? কই তুই! "

সারা ঘর খুঁজেও এতটুকু মেয়েটাকে খুঁজে পাচ্ছে না মিষ্টি। কখন থেকে হাতে ভাতের প্লেট নিয়ে নাম ধরে ডেকে যাচ্ছে। কিন্তু যাকে ডাকছে তার কোনো সাড়াশব্দ নেই। সেই যে বললো, বাবা আসার আগ পর্যন্ত বেরোবো না। আর বেরুলো না। 
" নাবিলা! এই মেয়েটা আমাকে মেরে ছাড়বে। "

মিষ্টির ডাকাডাকির শব্দে আহনাফের বাবা ধীর পায়ে এগিয়ে এলেন। এমনিতে খুব একটা হাঁটাচলা করেননা উনি। তবে নাতনির বিষয় আলাদা। 

" কী হয়েছে মিষ্টি? নাবিলাকে ডাকছ কখন থেকে! কোথায় আমার নাতনি? "
" দেখুন না বাবা, কখন থেকে ডাকছি সাড়া দিচ্ছে না। আমি ভাত আনতে যাওয়ার আগে শুনলাম লুকোতে যাচ্ছে সে। তার বাবা না আসা পর্যন্ত না-কি বের হবে না। "
ভাতের প্লেট টেবিলের উপর রেখে ক্লান্ত ভঙ্গিতে বললো মিষ্টি। 
" আহনাফ এখুনি চলে আসবে। তখন দেখো নাবিলাও বের হবে। তুমি ততক্ষণে বসে নাও একটু। ভারী দুষ্ট হয়েছে মেয়েটা। "

মিষ্টি বিছানায় বসতেই কলিংবেলের আওয়াজ ভেসে আসলো। তড়িঘড়ি করে গিয়ে দরজা খুলে দিতেই কোথা থেকে যেনো দৌড়ে নাবিলা চলে এলো। আহনাফ ঘরে ঢুকতেই তাকে জড়িয়ে ধরলো নাবিলা। লাল রঙের পোশাকে ছোট্ট নাবিলাকে পরীর মতো লাগছে। আহনাফ আদর করে কোলে তুলে নিলো মেয়েকে।
" দেখেছেন বাবা? "
" হ্যাঁ দেখলাম। "
নাতনির দুষ্টমি দেখে হাসতে হাসতে নিজের ঘরের দিকে এগোলেন আহনাফের বাবা। মেয়েকে নিয়ে কিছুক্ষণ খেলা করে আহনাফ গেলো গোসল করতে। ততক্ষণে নাবিলাকে খাইয়ে দিয়ে আহনাফের আজ খাবার পরিবেশন করতে যায় মিষ্টি। 

আনজুম বেগম প্রায় আসে মেয়ে, নাতনিকে দেখতে। ওঁরাও প্রতি বৃহস্পতিবার চলে যায় ও বাড়িতে। সবকিছুই খুব সুন্দর করে এগোচ্ছে। তবে এতকিছুর পরেও কোথাও যেনো সুর নেই। কোথাও যেনো সুরের তাল কেটে গেছে। সেই সুর,তালের নাম মেহেক ও রোশন! 



সমাপ্ত........................…
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।