উন্মুক্ত লাইব্রেরী
পর্ব ২৫
আয্যাহ সূচনা
শুক্রবার সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে বর্ণ আবিষ্কার করলো অন্বেষা তাকে জড়িয়ে গভীর নিদ্রায় মশগুল। আঠার মতো লেগে আছে বর্ণের চওড়া বুকে।বর্ণের হাতটিও তার মাথার নিচে বালিশ রূপে পাতা।
বর্ণ মুখ নামায়।অন্বেষার মুখ বরাবর এনে চেয়ে দেখলো তার ঘুমন্ত মুখ।চাইলো নিজের মস্তিষ্ককে সচল করতে।আজকাল চোখজোড়া বিশেষভাবে আকর্ষিত হয় তার দিকে।এড়িয়ে যাওয়া মুশকিল হয়ে উঠছে।কাছে এলেই বুকের মাঝে উত্তাল ঝড় উঠে। অবসন্ন,নিস্তেজ নিঃশ্বাস ফেলে বর্ণ।কত লুকাবে?
আনমনে বিড়বিড় করতে লাগলো,
“আমি যেটা চাই নাই ওইটাই হইতাছে!আমারে একজন কইছিলো পোলা মানুষের জীবনে দুই ধরনের টান থাকে নাড়ির টান আরেকটা নারীর টান।এই দুই টান থিকা মুখ ফিরানি মুশকিল।……আমি চাই নাই কেউ আমার জীবনে দখলদারিত্ব করুক।কেউ আমার লগে থাকুক।আমি কি করতাছি এহন?নিজেই সুযোগ কইরা দিতাছি।এটাতো আমার জীবনের লক্ষ্য না!আমি চাইছি চিন্তা ছাড়া মুসাফির এর মত ঘুইরা বেরামু।একদিন মইরা যামু।……কি হইতাছে আমার জীবনে?আমি এই মাইয়ার দিকে কেন ঝুঁকতাছি?আমার এই কয়লা অন্তরে প্রেমের ফুল ফুটবো এবার?.....আমার এই ছেড়ির কাছাকাছি থাকবার ভাল্লাগতে শুরু করছে!....আমি নিজের অধঃপতন নিজেই ডাইকা আনছি”
ভাবনার মাঝে ডুবে অন্বেষার কপালে কপাল ঠেকিয়েছে বর্ণ।একে অপরের নাকের ডগা প্রায় ছুঁই ছুঁই। দপদপ করছে মাথাটা।এলোমেলো ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছে মস্তিষ্ক জুড়ে।অস্থির মনোভাব বিচলিত করে তুললো।নিজের কাছে নিজেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়,কেনো এতো বিভ্রান্ত তার মন?কেনোই এত জটিলতা?অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পূর্ণ ব্যয়িত জীবন।স্বাভাবিক সবকিছুই যেনো অস্বাভাবিক লাগে।
অন্বেষাকে চেপে ধরলো বাহুডোরে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করে।এই দমবন্ধ পরিস্থিতিতে অন্বেষার ঘুম ভেঙে যায়।নড়েচড়ে বলে উঠলো,
“চাপা দিয়ে মেরে ফেলবে নাকি?”
বর্ণ আচমকা অন্বেষার শুষ্ক ঠোঁটে তর্জনী আঙুল চেপে বললো,
“পাঁচ মিনিট পর ছাইড়া দিমু।আমি একটা জিনিস ভাবতাছি।চুপচাপ থাকো।বেশি তিড়িং বিড়িং করলে খাট থেকা ফালায় দিমু”
অন্বেষা বর্ণের কণ্ঠের গভীরতা বুঝলো,লালাভ চোখের অর্থ বুঝতে অক্ষম।এই বর্ণ খুব ভাবায়।বড্ড ভাবায় তাকে।জানতে হবে হয়তো কিছু অজানা রহস্য।যা বর্ণের বুক পকেটে সযতনে লুকানো।
অবাধ্য মুখ তারপরও চলে উঠে, “কি ভাবছো?”
ক্ষুদ্র চোখজোড়া অতর্কিতে আগুনের গোলার রূপ ধারণ করে।নাকের পাটা ফুলেফেঁপে উঠছে।বর্ণ কঠিন গলায় বলে উঠে,
“তোমার বুঝা উচিত কোন সময় আমি মজার মুডে থাকি আর কোন সময় সিরিয়াস।….আপাতত আমি ফাত্রামির মুডে নাই।কথার অবাধ্য হইবা না একদম!”
অন্বেষার বুদ্ধিতে কিছুই ধরছে না।কণ্ঠের তেজ বলছে আসলেই সিরিয়াস মুডে।বাহুতে শক্ত একজোড়া হাতের চাপ পড়ে। হৃদপিণ্ডের উঠানামা খুব কাছ থেকেই অনুভব করছে। অন্বেষার ঢোক গিলে।চুপচাপ ঠোঁট কামড়ে শুয়ে রয় যথাস্থানে।
আধ ঘন্টা যাবত এভাবেই দুনিয়া জাহানের সমস্ত এলোমেলো চিন্তায় নিজেকে মাতিয়ে রেখেছে বর্ণ।বাধ্য মেয়ের মত তাকে সহায়তা করা অন্বেষা একটু নড়চড় করলো।বর্ণ ফোস করে শ্বাস ছাড়লো। বললো,
“হুম! এহন তোমার মোটরের মতো মুখ চালু দিতে পারো”
অন্বেষা যেনো এই অপেক্ষাই ছিলো।দ্রুত প্রশ্ন করলো,
“কি ভাবছিলে?”
বর্ণ অন্বেষার নেত্রদ্বয়ে দৃষ্টি রেখে জবাব দিলো,
“তোমার জানার দরকার নাই”
“আমার সবকিছু জানার দরকার আছে”
বর্ণ একইভাবে চেয়ে জবাব দিলো, “উহু”
“আচ্ছা তোমার সাথে জনি ছেলেটার কিসের এত শত্রুতা?”
বর্ণ নিষ্পলক। কাঠিন্য মুখ অবয়ব।কোনো এক অজানা ঘোরে মজে শুধুই শুনছে প্রশ্নগুলো।জবাব দিতে অপরাগ।তারপরও নিজের বিরুদ্ধে গিয়ে বললো,
“পোলা মাইনষের বন্ধুত্ব করতে কোনো কারণ লাগে না, শত্রু বানাইতেও লাগে না”
“আর ভালোবাসতে?”
বিব্রত বোধ ছাড়াই বর্ণ জবাব দেয়,
“তুমি নিজে পুড়বা,আমারেও পুড়াইবা….”
ভয়হীন চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করার সাহস আর অবশিষ্ট রইলো না অন্বেষার। জ্বিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে উঠে গেলো।চুল বাঁধতে বাঁধতে এগিয়ে যাচ্ছে।
হুট করেই বর্ণের মনে ধরলো দৃশ্যটা। অন্বেষার এদিক ওদিক চলনের সাথেসাথে নড়ছে তার নেত্রমণি।
“বিছানার চাদরের নিচে টাকা আর লিস্ট আছে। বাজারে গিয়ে একটু পর কিনে আনবে।আজ তোমার পছন্দের কালা ভুনা আর ভুনা খিচুড়ি রান্না হবে।” বলে হাসলো অন্বেষা।
বর্ণ জবাব দিলো,
“বেশি বেশি হইয়া যাইতাছে না?গরুর গোস অনেক দাম।আমার লেইগা এত দ….”
অন্বেষা রেগে বলে উঠলো,
“দয়া শব্দটা কখনো উচ্চারণ করবে না আর।আপন মানুষের জন্য কিছু করাকে দয়া বলে না।”
বর্ণ একলাফে উঠে আসলো।বড় কদম ফেলে অন্বেষার তিন চার ইঞ্চি দূরে এসে দাঁড়িয়েছে।জানতে চাইলো,
“আমি তোমার আপন?”
অন্বেষা চোখ নামিয়ে জবাব দেয়,
“পরওতো না”
“বর্ণ কারো আপন না।”
“তোমার আসল রূপ আমার সামনে ধীরেধীরে স্পষ্ট হচ্ছে।আমার সাথে অভিনয় না”
বর্ণ কোনো জবাব দিলো না।ব্রাশ নিয়ে হাত মুখ ধুতে চলে যায়।
_______
নিজের ঘরে চিৎকার চেঁচামেচি করছে জনি।ভাংচুর করছে জিনিসপত্র।মা দিলারা ছেলের হিংস্র রূপে এক কোণে দাঁড়িয়ে।এগিয়ে যাওয়ার সাহস নেই।থামানোর চেষ্টায় ব্যর্থ তিনি।উপায় না পেয়ে স্বামীকে কল করেছেন।গতরাত থেকেই ছেলের মাঝে এক চাপা রাগের আভাস পাচ্ছিলেন।আজ সেটি ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছেন।
দ্রুত দোকান বন্ধ করে এসেছেন মোকলেস মাতবর।বয়সের কারণে স্বল্প হেঁটে এবং সিঁড়ি বেয়ে ক্লান্ত।ঘরের নাজেহাল অবস্থায় তার কপালের রগও ফুটে উঠলো।তেড়ে গিয়ে ছেলের শার্টের কলার চেপে মুখোমুখি আনেন।
“কিরে কুত্তার ছাও! জিদ্দের ঠেলায় যে ঘরের জিনিসপাতি ভাঙতাছোস!এডি কি তোর ট্যাকায় কিনা রে মাদারী?”
জনি ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে বাবার দিকে চায়।ছিটকে সরে যায় বাবার বাঁধন থেকে।চিৎকার করে বলে,
“বর্ণ আমার জিতা গেছে আব্বা! এলাকাতো এলাকা আমার প্রিয় জিনিসও কাইড়া লইছে”
বর্ণের সাথে আবার কিছু হয়েছে।এটা বুঝতে পেরে আরো রেগে যান মোকলেস সাহেব।ছেলের চুল মুঠ করে ধরে বললেন,
“এই জানোয়ার তাকা আমার দিকে!কিয়ের প্রিয় জিনিস? হ্যাঁ! জনি!আমি কইলাম জানি তুই নিজে থিকা যাস বর্ণের লগে গ্যাঞ্জাম করতে….”
দিলারা বানু বলে উঠলেন,
“হ আপনিতো আমার পোলার দোষই দেখবেন সবসময়।ওই হারামজাদার কোনো দোষ আপনার চোখে ঠেকে না।”
ছেলের পক্ষ হয়ে কথা বলায় মোকলেস সাহেব স্ত্রীর দিকে রাগী দৃষ্টি ছুঁড়ে বললেন,
“চুপ!একদম চুপ থাক। তোর লাই পায়া জইন্নার এই অবস্থা।ভালা শিক্ষা দিতে পারোস না?”
পরপর চাইলেন অগ্নিমূর্তি হয়ে চেয়ে থাকা জনির দিকে।বললেন,
“এই ব্যাটা এই!তোর কিয়ের প্রিয় জিনিস ক। আইজকা যদি তোর কথায় তোর যুক্তিতে ওজন না থাকে তোরে আমি আর এই বাড়িতে রাখুম না।”
জনি জবাব দেয়,
“আমি যেই মাইয়ারে পছন করছি ওই মাইয়ারে বর্ণ বিয়া কইরা লাইছে আব্বা।”
মোকলেস সাহেব এর চোখ রসগোল্লার ন্যায় হয়ে গেলো ছেলের কথা শুনে। ধিক্কারের সুরে বললো,
“ছিঃ ছিঃ ছিঃ! বাপের সামনে ওর পিরিত জাহির করে।লজ্জা শরমের মাথা খাইয়া বইছে!বাল পাইকা গেছে তোমার?”
“আব্বা!”
“কি আব্বা! হ্যাঁ? কি আব্বা? বর্ণ আর ওই মাইয়া বিয়া করছে এটা ওগো ব্যাপার।আমারে একটা কথা ক ওই মাইয়া তোরে কোনোদিন কইছে ওয় তোরে পছন করে?”
“না”
জনির গালে চড় দিয়ে মোকলেস সাহেব বললেন,
“তাইলে তুই ক্যাঠা প্রেমের জ্বালায় ঘর জ্বালানির?কোন মজনু তুই?”
“আব্বা আমার ওই মাইয়ারে লাগবো।”
সাথেসাথে গলা চেপে ধরলো ছেলের।বললো,
“খবরদার! মাইয়া কেলেংকারীরে জড়াবি তোরে আমি ত্যাজ্য করুম!”
জনিকে ছেড়ে সোফায় ধপ করে বসলেন মোকলেস সাহেব।আর ধৈর্যে কুলায় না তার।বয়স বাড়ছে।সাথে অস্থিরতা।হয়রান হয়ে গেছেন চেঁচিয়ে।দিলারা বানু পানি এগিয়ে দিতেই হাত ঝাড়া দিয়ে পানির গ্লাস ফেলে দিলেন। ভীত হয়ে উঠেন দিলারা বানু।সরে যান সাথেসাথে।
মোকলেস সাহেব উঠে গেলেন জনির ঘরে।ওর আলমারি খুলে একাডেমিক কাগজপত্র বের করে গোছাতে শুরু করেন দ্রুত হাতে।সবশেষে তিনি বলেন,
“এই এলাকায় থাকলে হয়তো ওয় কারো মার্ডার এর খুনি হইবো নইলে নিজে মরবো।আমি শান্তি চাই।এই বয়সে আমার এতো অশান্তি ভাল্লাগে না।”
“এগুলি কি করতাছেন আব্বা!”
“তোরে সুমন এর কাছে দুবাই পাঠামু।তোর পাসপোর্ট করতে যামু কালকেই। কামলা খাইটা ট্যাকা কামাবি তুই জানোয়ার। তোর শিক্ষা হওয়া উচিত।”
দিলারা বানু এসে পায়ে পড়ে গেলেন স্বামীর।ইতিমধ্যে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। জনি বলে উঠে,
“আপনি ওই রাস্তার পোলার লেইগা আমারে দূর করবেন”
কথাটি শুনে নিষ্পলক চাইলেন তার ছেলের দিকে। বিমূঢ় রইলেন কিছুক্ষন।সময় নিয়ে জবাব দিলেন,
“তোর ভালার লেইগা করমু”
“আপনি কামটা ভালো করতাছেন না আব্বাজান।”
“আরেহ রাখ তোর ভালো খারাপ!আর তোর মায় যদি বাঁধা দেয় ওরে আজীবনের লেইগা বাপের বাড়ি পাঠায় এই জায়গা সম্পত্তি জ্বালায় পুড়ায় ছাই করমু।মনে থাকে জানি কথাটা!”
________
বাজার সদাই সম্পর্কে বর্ণের ধারণা নেই বললেই চলে।শূন্যের কোঠায় সেই জ্ঞান। অন্বেষা তাকে তোতা পাখির মতো শিখিয়ে পড়িয়ে পাঠিয়েছে। পইপই করে বলে দিয়েছে সবকিছুর দাম।লিখেও দিয়েছে অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য।তারপরও বর্ণের মাথায় যেনো বিশাল বোঝা।গরুর গোশতের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আহাম্মকের মত।
মনে মনে অগণিতবার উচ্চারণ করেছে,
“শালা”
পকেট থেকে কাগজ বের করলো।দেখলো গরু গোশত কতটুকু আনতে হবে।কত টাকা দাম।পাশে ছোটছোট অক্ষরে লেখা,
“শুনো আমার অকর্মার ঢেঁকি সোয়ামি।আমাদের ঘরে ফ্রিজ নেই।যতটুকু বলেছি ততটুকু আনবে। হাড় যেনো বেশি না থাকে।ভালো মতো চেক করে আনবে”
বর্ণের রাগ হলো প্রথমে।পরপর অজান্তেই হেসে ফেলে কথার ধরনে। দোকানদারকে বললো,
“দেহি ভাই আপনার চাপাতিতে কেমন ধার?”
দোকানি কপাল কুঁচকে ফেলে।কেনো দিবে তার মনে প্রশ্ন।তার চোখ ফাঁকি দিয়ে চাপাতি হাতে তুলে বর্ণ বলতে লাগলো,
“হুনেন মিয়া ভাই!প্রথমবার সদাই করতে আইছি।মক্কেল ভাইবা যদি গোশতের জায়গায় হাড্ডি দেন?তাইলে আমিও পুরান ঢাকাইয়া পোলা দরকারে কসাই হইয়া যামু।মানুষের গোশতের।”
দোকানি ভড়কে উঠে।কথা নেই বার্তা নেই হুমকি শুরু।ডাইরেক্ট একশন!দোকানি বর্ণের হাত থেকে চাপাতি ছিনিয়ে নিতে চাইলে বললো,
“উহু!এটা আপাতত আমার।আরেকটা আছে না?গোশত কাটা শুরু করেন জলদি।এই যে টাকা” পকেট থেকে টাকা বের করে দিলো।
দোকানি গোশত কাটা শুরু করে।রাগে গজগজ করছেন তিনি।আবার ভয়ও আছে আহত হওয়ার। গোশত কেটে দ্রুত বিদায় করলো বর্ণকে।বর্ণ দাঁতের পাটি বের করে হেসে সালাম জানিয়ে চলে যায়।এরপর একে একে সবকিছু কিনে প্রায় দুই ঘন্টা পর হাজির হলো। অন্বেষার মেজাজ তুঙ্গে।
রাগী সুরে বলে,
“এই একটু বাজার করতে এতক্ষণ লাগলো?আমি আধ ঘন্টার মধ্যে করে ফেলতাম।”
“আমার তোমার মত ফড়ফড় করার স্বভাব নাই।”
অন্বেষা কপাল কুঁচকে বললো,
“এখন পেটে ক্ষিদে নিয়ে বসে থাকো।রাঁধতে সময় লাগবে।”
“বেশি ক্ষিদা লাগলে তুমি আছো না?মশলা পাতি মিশায় চাবায় চাবায় খামু।”
বলে চোখ টিপ দিয়ে হাসে বর্ণ।অন্বেষা এরূপ কথা শুনে এক মুহূর্ত সেখানে দাঁড়ায়নি।কথা বলার ভঙ্গি আর মুখের ভাব পুরোপুরি অসভ্যের মত।বর্ণ আরো সুযোগ পায়।এগিয়ে এসে অন্বেষার হাত কষে চেপে ধরে।নিজের দিকে টেনে এনে বললো,
“উম হাতগুলি মোটামুটি নরম! চাবাইতে সমস্যা হইবো না।”
“বর্ণ!”
আচমকা অন্বেষার কোমরে দুহাত পেঁচিয়ে কাছে টেনে বর্ণ বলে উঠে,
“কি হইছে সোনা?রাগ করছো?কি লাগবো তোমার কও?আদর?”
চোখ জোড়া কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম।ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে,
“অসভ্য!ইতর!”
“আমি তোমারে চুমা দিলে দোষ?তুমি দিলে সোয়াব?”
দুইয়ে দুইয়ে চার হিসাব মিলেছে মস্তিষ্কে।বর্ণ কোন বিষয়ে কথা বলছে বুঝতে এক সেকেন্ড সময় লাগলো না।গতরাতে কপালে চুমু খেয়েছিলো।কান লাল হয়ে উঠলো অন্বেষার।লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে।বর্ণ খুব কাছ থেকে রক্তিম সূর্যের ন্যায় মুখখানা দেখে।বর্ণ হুট করেই অনুভব করলো এক আবেশিত ভালো লাগা ছুঁয়েছে অন্তর গভীরে।তার অন্তর ধূসর থেকে রঙিন হচ্ছে।অন্বেষার বদনে সেই বিভ্রম চিত্র সচক্ষে দেখছে।এইতো হুটহাট হারিয়ে যায় নিজের উদ্ভট চিন্তায়। আজ এই উদ্ভট চিন্তারা পরিতৃপ্তি দিচ্ছে।
বর্ণ অন্বেষার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলে উঠে,
“খাওয়ন মজা না হইলে তোমারে আমি ব্যাকাপ হিসেবে গিলমু।”
“নির্লজ্জ!”
“তুমি আমার কথার ভুলভাল মিনিং বাইর করো ক্যালা?আমি তোমারে কাছে লইয়া আদর সোহাগ করমু? ছ্যাহ!তোমারে জবাই দিমু তারপর, পিস পিস করমু।মশলা মিশায়া ভুনা কইরা খামু।আজকে কসাই এর থিকা সব শিখা আইছি।জামাইর সোহাগ পাওয়ার আশা বাদ দাও।”
চোখ খিঁচে বন্ধ করে রেখেছে অন্বেষা।মুখ কুচকে।কান বন্ধ করে নিলো দুইহাতে।কিচ্ছু শুনতে চায় না।নাই বর্ণের মুখ দেখতে চায়।অস্থির লাগছে এমন বুকের সাথে লেপ্টে থাকতে।ছাড়া পেলেই হাঁফ ছেড়ে বাঁচে।তার আগে বর্ণই ছেড়ে দিলো। অন্বেষা এক প্রকার দৌঁড়ে রান্নায় নিজেকে মনোযোগী করলো।
মিনিট খানেক পর বর্ণ আবার ফিরে আসে। অন্বেষার পাশে পা গুটিয়ে বসে বলতে লাগলো,
“অনেকদিন তো হইলো বিয়ার।যদিও তুমি দেখতে সুন্দর না।তোমার প্রতি আমার কোনো রুচি নাই।কিন্তু….”
অন্বেষা গরম খুন্তি হাতে তুলে চোখ পাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
“কিন্তু কি?”
“মানে একবার বাসর করার পর যদি তোমারে জবাই দিতাম তাইলে ভালো হইতো না?”
অন্বেষা ঝড় নিঃশ্বাস ফেললো। চুলোয় পানি ফুটছে। থমথমে গলায় বললো,
“এই গরম পানি দেখছো?ছুঁড়ে দিবো তোমার মুখে।যদি এই মুখ বন্ধ না করো।”
“বাসর করার পর উড়ায় মাইরো?”
“বর্ণর বাচ্চা!আরেকটা কথা না!যাও এখান থেকে”
“বাচ্চা লাগবো তোমার সোনা? এহনতো দিনের বেলা।খারাপ দেহাইবো।রাইতে দেখতাছি ব্যাপারটা।”
চলবে.........................