চোখের তারা তুই - পর্ব ১১ - তাইয়েবা বিন কেয়া - ধারাবাহিক গল্প


#চোখের-তারা-তুই 
#পর্ব ১১ 
#লেখিকাঃতাইয়েবা_বিন_কেয়া 



ফারিশ কিছু বলতে যাবে তখন আঁধারের ফোনে একটা পুরুষ কণ্ঠ আসে। একটু চুপ হয়ে যায়। 

নীরব দেখে সবাই খাবার খেয়ে নিয় কিন্তু আঁধার এখনো রুম থেকে বের হয় নাই। তাই ওর রুমে ঢুকে যায় 

" আরে আঁধার তুমি এখানে সবাই খাওয়া দাওয়া করছে যাও খেতে যাও।দেরি করে খাবার খেলে শরীর খারাপ করবে "।

হঠাৎ করে নিরব স্যারের কণ্ঠ শুনে আঁধার পিছনে ফিরে তাকায়। ফোন হাতে রেখে বলে 

" আরে স্যার আপনি এসেছেন আসলে শরীর একটু টায়ার্ড তাই এসে রেস্ট নিতে রুমে চলে এসেছি "।

-" রেস্ট নিলে শুধু হবে খাবার খেতে হবে না সবাই খাবার খেতে বসেছে চলো। আর কার সাথে ফোনো কথা বললে তোমার পরিবারের কারো সাথে "।

আঁধার এখন কি বলবে ফারিশের কথা বলতে পারবে না কারণ বিয়ের বিষয়ে কিছু জানাতে ফারিশ বারণ করে দিয়েছ৷। তাই আঁধার মিথ্যা কথা বলে 

-" আসলে স্যার তুলি ফোন করেছে ও আমার জন্য টেনশন করছে তাই তুলির সাথে কথা বলছিলাম। আপনি খাবার খেতে যান আমি রেডি হয়ে আসছি "।

"আচ্ছা ঠিক আছে তাড়াতাড়ি চলে আসো খাবার ঠান্ডা হয়ে যাবে "।

নীরব স্যার চলে যায় আঁধার ফোন কানে দেয় আর ফারিশকে জিজ্ঞেস করে 

" আপনি খাবার খেয়ে রেস্ট নেন আমি খাবার খেতে যায় না হলে নীরব স্যার আবার রাগ করবে "।

ফারিশ ফোনো আঁধার আর নীরব কথা শুনছে বুকের মধ্যে একটু কষ্ট অনুভব করছে। কারণ নীরব স্যার হয়তো ফারিশের চেয়ে ভালো করে আঁধারের কথা চিন্তা করে। ফারিশ জিজ্ঞেস করে 

" আচ্ছা আপনার নিরব স্যার মনে হয় অনেক খেয়াল রাখে আপনার। আসলে আপনাকে নিয়ে একটু টেনশন হচ্ছে তাই কল দিয়েছি কিন্তু এখন মনে হয় আমার টেনশন করার কিছু নাই কারণ আপনার নীরব স্যার খুব ভালো করে আপনার খেয়াল রাখবে। আর আপনাদের যদি বিরক্ত করে থাকি তাহলে সরি "।

ফারিশ কি বললো আঁধার কিছু বুঝতে পারে নাই কারণ নীরব স্যার খেয়াল রাখছে বলে কি ফারিশ ফোন করতে পারে না। সত্যি ওনি অদ্ভুত। আঁধার খাবার খেতে যায় খাওয়া শেষ করে নিজের রুমে চলে আসে। আসলে আজকে কোনো কাজ নাই জায়গা অনেক দূরে তাই বাস দিয়ে আসতে আসতে বিকেল হয়ে গেছে। তাই কাল থেকে কাজ শুরু করবে রুমে এসে ব্যাগ থেকে বই বের করে পড়তে থাকে। 

ফারিশ নিজের রুমে বসে আছে আজ রুম একটু বোরিং লাগছে মনে হয় কিছু একটা মিসিং কিন্তু কি। হঠাৎ দরজায় কেউ টোকা দেয় ফারিশ দেখে বড় আব্বু দাঁড়িয়ে আছে। 

" ভিতরে আসতে পারি এমপি সাহেব "।

" বড় আব্বু তোমার আমার রুমে আসতে হলে অনুমতি নিতে হবে। আর আমি সবার কাছে এমপি হলেও আমার বড় আব্বুর কাছে এখনো সেই ছোট ফারিশ তাই এইসব এমপি সাহেব বলে ডাকবে না "।

" আচ্ছা ঠিক আছে ডাকবো না আর তোর কাছে আসতে দরজায় নক করে আসি কারণ তুই আমার উপর রাগ আছে কি নাই সেটা বুঝতে "।

" - আমি সবার উপর রাগ করে থাকতে পারি কিন্তু আমার প্রিয় বড় আব্বুর উপর না। আর আমার রাগ, অভিমান, কেয়ার সবার কাছে মূল্যহীন বড় আব্বু "।

"- কি হয়েছে তোর ফারিশ দুঃখের সাথে কথা বলতে তোকে দেখি নাই আগে। আঁধার নেই বলে ওকে মিস করলি একটা ফোন কর আঁধারকে "।

"- আঁধারকে ফোন করেছি ওনি ঠিক আছেন আর ওখানে আঁধারের কেয়ার করার অনেক মানুষ আছে আর যদি বলে দুঃখ নিয়ে কথা বলার কথা তাহলে আজকে একটু কাজের পেশার ছিলো তাই কথাগুলো এমন মনে হচ্ছে "।

"- ফারিশ তোর কোন কথা টায়াড হয়ে বললি আর কোন কথা মন খারাপ নিয়ে বললি সেটা তোর বড় আব্বু বুঝতে পারে। কিন্তু মন খারাপের মূল কারণ তোকে খুঁজে বের করতে হবে"।

"-আচ্ছা এই বিষয়ে কথা বলা বাদ দাও তুমি কিছু বলতে এসেছো বলো "।

"- ওহে আচ্ছা শোন আমাদের কোম্পানির পুরানো কমর্চারি আশরাফ আলী মেয়ের বিয়ে ওর পড়াশোনার সব খরচ তুই দিলি এখন পরশু ওর বিয়ে সবাই তোকে যেতে বলেছে "।

"-সত্যি আশরাফ চাচার মেয়ে টুনির বিয়ে। মেয়েটা কতো বড় হয়ে গেছে আচ্ছা ওর বিয়েতে যেতে হবে কিন্তু এখন যেতে ইচ্ছা করছে না "।

" - ফারিশ তোকে যেতে হবে আশরাফ অনেক করে তোকে যেতে বলেছে কালকে তোকে যেতে। কালকে থেকে বিয়ে হয়ে গেলে পরেরদিন বিকালে চলে আসবি সমস্যা নাই "।

" - আচ্ছা ঠিক আছে চলে যাবো কোনো সমস্যা নাই কিন্তু জায়গায় কোথায় "।

"-সিলেটে একটা ছোট গ্রামে ওর বাড়ি তোকে ড্রাইভারকে ঠিকানা মেসেজ করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আচ্ছা এখন আমি যায় তাহলে "।

বড় আব্বু চলে গেছে ফারিশ বিছানায় শরীর ছেড়ে দিয়ে শুয়ে রয়েছে অন্যসময় থাকলর হয়তো সিলেটে যেতে রাজি হতো না। কিন্তু এখন বাড়িতে অনেক বোরিং লাগছে তাই একটু ঘুরে আসতে চাই। 

আঁধার একটু রেস্ট নেয় পরে বাহিরে চলে আসে সবাই আগুন জ্বালিয়ে এই সুন্দর রাত উপভোগ করছে। আসলে শহরে এখন গরম চলছে কিন্তু গ্রামে একটু ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে আর এই গ্রাম পাহাড়ের কাছে তাই একটু শীত করছে। একটা চাদর মুড়ি দিয়ে আগুন কাছে যায়। 

আঁধারকে দেখে দিশা বলে 

" আরে আঁধার তুমি এতো সময় কোথায় ছিলে সবাই এখানে আনন্দ করছে আর তুমি রুমে গিয়ে বসে আছো "।

আঁধার একটু হেসে দিশাকে বলে 

" সরি দিশা আপু আসলে একটু রেস্ট নিতে রুমে গিয়েছি কিন্তু এখন পুরো রাত ইনজয় করতে চাই। কি সুন্দর পরিবেশ। 

" হুম অনেক সুন্দর পরিবেশ আচ্ছা এই নাও একটু চা খেয়ে নাও অনেক শীত পড়েছে"।

" আমি চা খেতে থাকি আর সবাই গান করছে নাচ করছে সেটা দেখতে থাকি।

নীরব দেখে সবাই মধ্যে একটা সুন্দরী রমনী বসে আছে একটা চাদর গায়ে দিয়ে নিভু নিভু আলোতে এতো সুন্দর দেখাচ্ছে মুখ যেনো কোনো পরী বসে আছে। নীরব আনমনে বলে উঠে আমার সিন্ধফুল।

আঁধার পরিবেশ উপভোগ করছে সবাই গান করছে এবার আঁধারকে গান করতে হবে সবাই তাই বলছে।

" আরে আমি গান বা নাচ করতে পারি না তোমরা সবাই শুধু বিরক্ত করছো। আমি সত্যি কিছু পারি না "।

তখন নীরব এসে বলে 

" সবাই গান না হয় নাচ কিছু একটা করছে তোমাকে করতে হবে। তুমি বরং নাচ করো "।

সবাই ওকে বলছে কিছু করতে আঁধার কি করবে নাচ করতে চাই। নীরব কাছে যায় আর আঁধার বলে 

" স্যার একটা ভালো গান ছাড়েন রবীন্দ্রনাথ সংগীত জাতীয় কোনো গান দেন"।

নীরব একটা গান ছাড়ে আঁধার অনেক সুন্দর করে নাচ করে সবাই অবাক হয়ে যায়। এতো সুন্দর নাচ কেউ করতে পারে একদম প্রফেশনাল ডান্সার মতো দারুণ হয়েছে। সবাই ওর নাচ দেখে মুগ্ধ হয়ে যায় আর নীরব শুধু তাকিয়ে দেখছে আঁধারকে।

আঁধার নাচ শেষ করে নিচে নেমে আসে সবাই ওর নাচের প্রশংসা করছে। তখন নীরব আসে

" স্যার আপনি অনেক সুন্দর গান বাজালেন। ধন্যবাদ "।

নীরব একটু হেসে বলে 

" বাহ সব গুণ তাহলে আমার সুন্দর গানের কিন্তু তুমি এতো সুন্দর করে নাচ করলে সেটা। সত্যি আঁধার বেরি গুড ডান্সার তুমি "।

" আরে স্যার আপনি কি বলেন আমি এতো ভালো ডান্স করতে পারি না। ছোটবেলা নাচের শখ ছিলো তাই শিখা হয়েছে বড়ো হয়ে পড়াশোনা চাপে শখের কথা ভুল৷ গেছি। কিন্তু আজ অনেকদিন পর সবার কথায় নাচ করেছি "।

" ধন্যবাদ সবাইকে নাচ করতে বলেছে তোমাকে না হলে এতো ভালো নাচ মিস করতাম সবাই। 

আঁধার একটু হেসে নিরব স্যারের সাথে কথা বলতে থাকে সবাই একপাশে আড্ডা দিচ্ছে।

অন্যদিকে ফারিশ ঘুম থেকে উঠে যায় রেস্ট নিবে বলে বিছানায় শুয়ে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝতে পারে নাই। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে যায় সবাই টিভি দেখছে সবার সাথে একটু সময় কাটাতে থাকে। জরিনা খালাকে ডাকে ফারিশ 

" জরিনা খালা আমার কাপড় একটু আয়রন করে দাও। কালকে সিলেটে যেতে হবে "।

জরিনা ডাক শুনে আসে 
" আচ্ছা ঠিক আছে ফারিশ বাবা তোমার রুমে গিয়ে কাপড় আয়রন করে দিতে যাচ্ছি "।

ফারিশের বাবা সব শুনে জিজ্ঞেস করে 

" ফারিশ কোথায় যাবে তুমি কালকে "।

" আসলে আব্বু পরশু আশরাফ চাচার মেয়ে টুনির বিয়ে তাই সিলেট যেতে হবে "।

" টুনি এতো বড়ো হয়ে গেছে ওর বিয়ে। আশরাফ আমাদের অনেক বিশস্ত লোক ওর মেয়ের বিয়েতে তোর যাওয়া দরকার। 

ফারিশ বাবার সাথে কথা বলে রুমে চলে যায় জরিনা খালাকে কাপড় দেখিয়ে দিতে হবে। না হলর সব আয়রন করে ফেলবে। 

অপরিচিত একটা মানুষ ফোন করে পুলিশ অফিসার ফোনে 

" হ্যালো স্যার আপনার কথা মতো ফারিশ ফারহান চৌধুরীকে যারা খুন করতর চেয়েছে তাদের লুকিয়ে রেখেছি। আর কি করতর হবে স্যার "।

" শোনো কালকে ফারিশ সিলেটে যাচ্ছে এইটা সঠিক সময় ওকে খুন করার। আর ওই গ্রামে কোনো হাসপাতাল নাই সো ফারিশকে মারলে কোনো ভাবে বাঁচতে পারবে না। এবার কাজে যেনো কোনো ভুল না হয়। 

" স্যার কাজ ঠিক করে হয়ে যাবে কিন্তু আমার টাকা "।

" কাজ শেষ হলে টাকা পেয়ে যাবে। কিন্তু ফারিশ যেনো বেঁচে ফিরতে না পারে "।



চলবে.........................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন