চোখের তারা তুই - পর্ব ১৭ - তাইয়েবা বিন কেয়া - ধারাবাহিক গল্প


#চোখের_তারা_তুই 
#লেখিকাঃতাইয়েবা_বিন_কেয়া 
#পর্ব ১৭



ফারিশ এক মিনিটের মধ্যে যা হয়েছ৷ তাতে সে অবাক সে একটা ঘোরের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু আঁধারের শরীর থেকে রক্ত বের হচ্ছে তার শরীর মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে সেটা দেখে ধ্যান থামে তার। ফারিশ একটা চিৎকার করে 

" আঁধার কি হয়েছে আপনার। আঁধার চোখ খোলেন গার্ড কোথায় তোমরা গার্ড "

গার্ড চলে আসে সবাই অবাক হয়ে যায় আর কলেজের মেয়েরাও। আঁধার কোনো ফারিশকে বাঁচাতে গুলির সামনে গেছে কি সম্পর্ক তাদের। কিন্তু এখন উত্তরের চেয়ে আঁধারের জীবন বাঁচানো অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সবাই আঁধারকে নিয়ে বাড়িতে যায়। 

ফারিশ বলে 

" তাড়াতাড়ি কোনো ডক্টর কল দেও না হলে আঁধারকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে "।

গ্রামের মানুষ অবাক হয়ে যায় এই ঘটনায় কিন্তু তারা আঁধাকে বাঁচাতে সাহায্য করতে থাকে। কারণ আঁধার অনেক উপকার করেছে তাদের কিন্তু একটা সমস্যা রয়েছে। তারা সেটা বলে 

" কিন্তু এমপি স্যার আপনি ওকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারবেন না। কারণ এই গ্রামে আশেপাশে কোনো হাসপাতাল নাই আর গুলি বের করবে এমন কোনো ডাক্তার নাই। কিন্তু মেয়েটার যা অবস্থা যদি এখুনি গুলি না বের করা যায় তাহলে মনে হয় মারা যাবে "।

কথাটা শুনে ফারিশের অনেক রাগ হয়েছে কিন্তু কি করবে এখন এমবোলেন্স করে নিয়ে যেতে সময় লাগবে আর ফোন করে আসতে সময় লাগবে। কি করবে সে নিজেকে পাগল লাগছে। 

" আপনার কি বলেন এইসব এই গ্রামে এমন কোনো ডাক্তার নাই যার চিকিৎসায় ভালো হয়ে যেতে পারে। ওর অবস্থা আমার কারণে এমন হয়েছে এখন কি ওকে মরতে দেখার জন্য অপেক্ষা করব "।

এতখন অনেক মানুষের বিড় দেখে নিরব ঘর থেকে নেমে আসে কিন্তু সবাইকে সরিয়ে দেখে আঁধার শুয়ে রয়েছে। ওর হাত থেকে রক্ত পড়ছে। নিরব বলে 

" আঁধার কি হয়েছে ওর। ওর শরীরে গুলি কি করে লেগেছে আর ওকে ডাক্তার কাছে কোনো নিয়ে যাওয়া হয় নাই "।

নিরবকে সবাই বলে গ্রামে ডাক্তার না থাকার কথা। নিরব শুনে আর দেখে আঁধারের শরীর থেকে অলরেডি অনেক রক্ত বের হয়ে গেছে। তাই তাড়াতাড়ি কোনো উপায় না পেয়ে বলে 

" দেখেন ওর শরীর থেকে অনেক রক্ত বের হয়ে গেছে তাই এখুনি অপারেশন করতে হবে। আমরা সবাই ডাক্তার তাই টেনশন করবেন না। আর এমপি স্যার আপনার ওকে নিয়ে টেনশন করার মতো কিছু নাই আমরা আছি "।

ফারিশ একটু শান্তি পেলো যদিও নীরকে ও একটু কম সয্য করতে পারে তবুও আঁধারের জীবন এখন নীরব বাঁচাতে পারে। আঁধারে একটা রুমে নিয়ে যায় সেখানে তার অপারেশন হয়। 

ফারিশ বাহিরে অপেক্ষা করতে থাকে তখন ওর গার্ড আসে। 
যারা সেইসব গুডাদের ধরতে যায় কিন্তু তারা আগে পালিয়ে যায়। 

" স্যার "।

ফারিশ এতখন চিন্তা থেকে বের হয়ে আসে শরীর রাগে ফেটে পড়ছে। সে বলে 

" কি হয়েছে কোনো খবর পাওয়া গেছে "।

" সরি স্যার তাদের ধরতে পারি নাই কিন্তু আপনি টেনশন করবেন না শুধু কয়েকদিন সময় দেন। আপনার পায়ের কাছে নিয়ে আসবো ওদের "।

" ঠিক আছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওদের খুঁজে নিয়ে আসো একবার শুধু চোখের সামনে আসুক ওরা। ফারিশ ফারহান চৌধুরী কি সেটা ওদের বুঝিয়ে দেবো একটাও বেঁচে বাড়ি ফিরতে পারবে না "।

বেশ কিছু সময় পর নিরব রুম থেকে বরে হয়ে আসে। ফারিশ ওর কাছে যায়। নিরব বলে 

" এমপি স্যার আপনি টেনশন করবেন না। আঁধার ঠিক আছে আসলে গুলি ওর হাতে লেগেছে তাই বেঁচে গেছে না হলে সমস্যা হতো "।

ফারিশ একটু টেনশন মুক্ত হয় আঁধারকে গাড়ি করে বড়ো একটা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাড়ির সবাই এসেছে ওকে দেখতে বড় আব্বু অনেক টেনশন করছে আসলে নিজের মেয়ে তাই। 

আঁধারের মাথার কাছে ফারিশ বসে আছে। মেয়েটি কতো ভালো ছয়মাস পড়ে চলে যাবে সেটা জানে তারপরও আমার জন্য জীবন দিতে গেছে তাহলে কি আমার একবার সুযোগ দেওয়া দরকার ওকে। ফারিশ দেখে আঁধারের জ্ঞান ফিরেছে। 

" আঁধার আপনার জ্ঞান ফিরেছে। কেমন আছেন আপনি "।

আঁধার খুব আসতে করে নিজের চোখ খুলে দেখে ফারিশ পাশে বসে রয়েছে। ওকে দেখে একটা শান্তি লাগছে। আঁধার বলে 

" আপনি ঠিক আছেন ফারিশ কিছু হয় নাই আপনার। আর গুডা চলে গেছে "।

ফারিশ একটু হাসি দেয় মেয়েটা এই অবস্থায় ওর কথা টেনশন করছে। ফারিশ বলে 

" কিছু হয় নাই আমার আর আপনি থাকতে কি হবে।কিন্তু এইসব কোনো করতে গেলেন যদি কিন্তু হয়ে যেতো "।

" আপনাকে এর উত্তর আগে দিয়েছি ছয়মাসের হলেও আপনি আমার হাসবেন্ড আপনাকে বাঁচানো আমার দায়িত্ব. আর আমি মারা গেলে কেউ কাঁদবে না কিন্তু আপনি মারা গেলে কাঁদতে বাকি থাকবে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না "।

ফারিশ একটু শুনে আঁধারের কথা যদিও কথা হাসির ছলে বলেছে কিন্তু হয়তো কথার ভিতরে একটু চাপা কষ্ট আছে। কিন্তু ফারিশ চাই না এখন আঁধার করতে পাবে তাই বলে

" আপনি সত্যি অনেক ভালো মেয়ে আঁধার। তবে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যেতে হবে বাড়ি ফিরতে হবে "।

বড় আব্বু তখন রুমে আসে দেখে আঁধারের জ্ঞান ফিরেছে তাই খুশি হয়ে যায়

" আঁধার মা তোর জ্ঞান ফিরেছে"।

ওরা দুইজনে পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে বড় আব্বু এসেছে। ফারিশ ওদের কথা বলতে দিয়ে বাহিরে চলে যায় কারণ বাব মেয়ের মধ্যে সে থাকতে চাই না।বড় আব্বু একটু কাছে আসে আঁধারের মাথায় হাত রাখে 

" তোর কিছু হয়ে গেলে এই বুড়ো লোককে কে দেখবে। তোর কি তোর মায়ের মতো দূরে চলে যেতে ইচ্ছা করে "।

আঁধার খুব ভালো করে পাশে থাকা মানুষের দিকে তাকিয়ে থাকে ওনার মুখ দেখে মনে হচ্ছে খুব টেনশন করেছে। আঁধার বলে 

" আমার মায়ের দূরে থাকা সেটা আপনার ভুলের জন্য হয়েছে। আর আমি চাই আপনার ধেকে দূরে থাকতে কারণ আপনি আমার মায়ের খুনি "।

" দূরে যদি চলে যেতে চাই তাকে ধরে রাখা যায় না। তবে তোর মায়ের খুনি আমি না কিন্তু আমাদের সম্পর্কের খুনি আমি। আর এই খুনের শাস্তি এতো বছর পেয়েছি আর তোকে হারিয়ে সেই খুনের শাস্তি আরো পেতে পারব না "।

আঁধার কি বলে না সত্যি ঘটনা সে জানে না তাই চুপ করে থাতে। বড় আব্বু কিছু কথা বলে চলে যায় আঁধারের রেস্ট করা দরকার। 

গুডারা গ্রাম থেকে পালিয়ে শহরে এসেছ৷ তারা অপরিচিত লোককে ফোন করে 

" হ্যালো স্যার আসলে একটা ঝামেলা হয়ে গেছে"।

অপরিচিত লোক রাগে ফেটে পড়ে 

" তোমাদের দিয়ে কোনো কাজ হবে না আর এখন ফারিশের থেকে তোমাদের বাচঁতে হবে। ওকে তোমরা চিনতে পারলে না ও শান্ত থাকে কিন্তু হিংস্র হলে কতো খারাপ সেটা জানে না "।

" স্যার সব ঠিক ছিলো কিন্তু হঠাৎ করে মেয়েটা এসে বাঁচিয়ে নেয়। কি করব "।

" হুম বুঝতে পারছি এখন ফারিশকে সামনে থেকে আঘাত করতে হবে আর আঁধার ওর সাথে একটা পুরানো হিসাব রয়েছে সেটা শেষ করতে হবে। ওর মায়ের সাথে যা করা হয়েছে ওর সাথে তাই করতে হবে "।

" ঠিক আছে স্যার আপনি যা ভালো মনে করেন তাই করেন। আর আমরা কয়েকদিন জন্য লুকিয়ে থাকব "।

" ফারিশ আর আঁধার তোমাদের জীবনে এখন নতুন ঝড় আসবে যেটা সামলাতে পারবে না তুমি। যেভাবে নিলয় চৌধুরীর সংসার নষ্ট করেছি আমরা সেই ভাবে তোমাদের সংসার নষ্ট করব। অপেক্ষা করো আমি আসছি"



চলবে.........................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন