আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

অন্ধবাড়ি - পর্ব ০৪ - আতিয়া আদিবা - ধারাবাহিক গল্প

অন্ধবাড়ি 
পর্ব ০৪ 
আতিয়া আদিবা 
.
.
.
রাইসা আফজাল সাহেবের বাড়ির ড্রইং রুমে বসে আছে। পড়নে জর্জেটের পাতলা শাড়ি। হাত কাটা এবিং বড় গলার ব্লাউজটি স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। রাজু না চাইতেও তার চোখ বারবার সেদিকে চলে যাচ্ছে। রাইসার তাতে কোনো মাথা ব্যাথা নেই। তাকে এক কাপ দুধ চা খেতে দেওয়া হয়েছে। সাথে কেক, বিস্কুট, চানাচুর এবং তিন পদের মিষ্টি। রাজু তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। রাইসা বললো,
"আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? বসুন।"
রাজু মাথা নেড়ে বললো,
"না ম্যাডাম। আমি বসবো না।"
"আফজাল সাহেবকে বলেছেন আমি এসেছি?"
" জ্বি বলা হয়েছে। স্যার এক্ষুণি চলে আসবেন আপনি দয়া করে আর একটু অপেক্ষা করুন।"

রাইসা সম্মতি জানালো। সে চায়ের কাপ ছুঁয়েও দেখে নি। ছুঁয়ে দেখবে কিনা তা নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগতে লাগলো। অথচ এসব চা নাস্তা তাকেই খেতে দেওয়া হয়েছে! রাজু বললো,
"ম্যাডাম, চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। আমাদের চা বানানোর খালা অনেক ভালো চা বানায়। টেস্ট করে দেখুন।"
রাইসা চায়ের কাপ হাতে নিতে নিতে বললো,
"চা বানানোর খালা মানে?"
"এ বাড়িতে সব কাজের জন্য আলাদা আলাদা মানুষ নিয়োগ করা। যে চা বানায় তার কাজ শুধু চা বানানো। সকালের নাস্তার জন্য আলাদা বাবুর্চি, দুপুরের জন্য আলাদা, রাতের জন্যও ঠিক তাই!"
রাইসার খুব ইচ্ছে করলো জিজ্ঞেস করতে কফি বানানোর জন্য আলাদা কাউকে রাখা হয়েছে কিনা? কিন্তু সে কোনো প্রশ্ন করলো না চায়ের কাপে চুমুক দিলো। ঠিক সেসময় আফজাল হোসেন প্রবেশ করলেন ঘরে। রাইসা চায়ের কাপ টি টেবিলে রেখে উঠে দাঁড়ালো। তিনি হো হো করে হেসে উঠলেন।
"আরে বসো, বসো! দাঁড়াচ্ছো কেনো? আমি কি মন্ত্রী নাকি মিনিস্টার নাকি অন্যকিছু? বসো।"
রাইসা বসলো। আফজাল সাহেব রাজুর দিকে তাঁকিয়ে ইশারা করতেই সে বের হয়ে গেলো। আফজাল সাহেব বললেন,
"রাজু বললো তুমি এখানে এসেছো জরিনা নাকি জানে না?"
রাইসা মাথা নাড়লো, "জ্বি।"
"তুমি আমার নাম্বার খুঁজে পেলে কিভাবে?"
"আপনার ভিজিটিং কার্ড থেকে। জরিনা আপার ঘরের ড্রয়ারে ছিলো। চুরি করে নিয়েছি।"
"স্মার্ট লেডি! কিন্তু আমাকে একটা কথা বলো রাইসা। তুমি তো অবশ্যই সবকিছু জানো। তারপরেও কেনো রাজি হলে?"
"পরিবর্তে আপনার কাছে অবশ্যই কিছু চাইবো বলে! দেওয়া এবং নেওয়ার সম্পর্ক ছাড়া কোনো সম্পর্কই এই পৃথিবীতে বিদ্যমান নয়।"
আফজাল সাহেব আবার হো হো করে হেসে উঠলেন। 
" চাওয়ার পরিমাণটা অবশ্যই আকাশচুম্বী?"
" না। খুবই সাধারণ একটি চাওয়া। আপনি চেষ্টা করার আগেই পারবেন।"
" ঠিকাছে। হয়ে যাবে!"
" ধন্যবাদ।"
"তোমাকে দেখেই বোঝা যায় অনেক ভালো পরিবারের মেয়ে ছিলে। এ অবস্থা হলো কি করে?"
"প্রেম করে বিয়ে করেছিলাম পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে।"
আফজাল সাহেব খসখস করে দাড়ি চুলকে বললো,
" তোমার পরিবার থেকে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে নি?"
"বাবা এই ধাক্কাটা নিতে পারেন নি। তার প্রেসার বেড়ে যায়। আমি পালিয়ে যাওয়ার দ্বিতীয় দিন তিনি মারা যান। বাবা মারা যাওয়ার পর আমার মাও আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।"
"আর তোমার স্বামী সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তোমাকে বিক্রি করে দেয়?"
রাইসা সহজ গলায় বললো,
" আমার গয়না, বাড়ি, জায়গা জমি সব বিক্রি করে দেওয়ার পর আমিই বাকি ছিলাম। তাই আমাকেও বিক্রি করে দিয়েছে। যারা নেশা করে তাদের কাছে বউয়ের চেয়ে বোতল বেশি দামী"
আফজাল সাহেব কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। তারপর বললেন,
" মদ খাওয়ার অভ্যাস আছে?"
" আছে।"
"আমার বাড়িতে ছোট্ট একটি বার কর্ণার আছে। যেতে চাও?"
রাইসা বললো,
"যেতে চাই।"
আফজাল সাহেব উঠে দাঁড়ালো। তার সাথে সাথে রাইসাও উঠে দাঁড়ালো। সে আফজাল সাহেবকে অনুসরণ করে তার সঙ্গে এগোতে লাগলো। 

বাড়ির এই জায়গাটা ভীষণ সুন্দর। নানা রঙের শো লাইট লাগানো। বিভিন্ন ধরণের মদের বোতল। সব বিদেশি। কিন্তু বারে সার্ভ করার কোনো মানুষ নেই। রাইসা চারিদিক দেখতে দেখতে জিজ্ঞেস করলো,
"আপনার পি.এ বলছিলো এবাড়িতে সব কাজের জন্য আলাদা আলাদা লোক রয়েছে। কিন্তু বারে সার্ভিং এর জন্য কেউ নেই?"
আফজাল সাহেব দুটো কাচের গ্লাসে রেড ওয়াইন ঢালতে ঢালতে বললো,
"কিছু কিছু সময় মানুষের একান্তে সময় কাটাতে ইচ্ছে করে। আশেপাশে কোনো মানুষ সহ্য হয় না। তখন আমি এ জায়গায় আসি। তাই কাউকে রাখা হয় নি।"
দুটো কাচের গ্লাসে অর্ধেক করে ওয়াইন ঢেলে রাখা। দূর থেকে বেশ সুন্দর লাগছে দেখতে। রাইসার ওয়াইন খেতে ইচ্ছে করছে না। তবুও সে ইচ্ছার বিরুদ্ধে গ্লাস হাতে নিলো। 
আফজাল সাহেব জিজ্ঞেস করলেন,
" আচ্ছা তোমার কি মনে হয়? মানুষ একা বাঁচতে পারে? বন্ধু ছাড়া, সঙ্গী ছাড়া।"
রাইসা অন্যদিকে তাঁকিয়ে বললো,
"পারে। তবে ছেলে মানুষ সবচেয়ে বেশি একা বোধ করে বিছানায়। তখন তার সঙ্গীর প্রয়োজন হয়। খুব প্রয়োজন হয়।"
আফজাল সাহেব রাইসার দিকে তাঁকিয়ে আছে। মেয়েটা সুন্দর। ভয়ংকর সুন্দর। এত সুন্দর একটি মেয়ের জীবনও সুন্দর হওয়া উচিত ছিলো। আকাশে ভেসে বেড়ানো মুক্ত মেঘের মতো সুন্দর! মেয়েটার বয়স খুব বেশি হলে পঁচিশ হবে। এ বয়সের মেয়েরা স্বামী সংসার নিয়ে খুব উৎসুক থাকে। রোজ রাতে স্বামীর সাথে ঝগড়া করে প্রথম বাচ্চা ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে তা নিয়ে। প্রতিদিন নতুন নতুন রেসিপি দেখে রান্না করে, স্বামীর কাছে প্রশংসিত হতে চায়। কিন্তু সেই বয়সে এসে এই মেয়ে কি করছে? বাস্তবতা কি এতটাই জঘন্য? এতটাই কঠিন?
আফজাল ওয়াইনের গ্লাস রেখে দিয়ে বললো,
" চলো বেডরুমে যাওয়া যাক। বাকি কথা না হয় সেখানেই হবে।"
রাইসা মাথা নাড়ালো। আফজাল সাহেবের পিছে পিছে সে শোবার ঘরে ঢুকলো।
.
.
.
চলবে..........................
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।