উন্মুক্ত লাইব্রেরী - পর্ব ১৫ - আয্যাহ সূচনা - ধারাবাহিক গল্প


উন্মুক্ত লাইব্রেরী
পর্ব ১৫
আয্যাহ সূচনা



বর্ণ যেখানে থাকে সেটি সেকেলের বাড়ি।দেয়ালে দেয়ালে শেওলা পরা।কিছুটা ভঙ্গুর।বারবার এই ফাটল ধরা অংশে সিমেন্টের প্রলেপ দিয়ে দিয়ে এখন অব্দি টিকিয়ে রাখা হয়েছে।দুটো তলা এই বাড়ির।নিচ তলায় বসবাস বর্ণ আর তার সাথে থাকা ব্যাচেলরদের। সাথের ঘরে বাড়িওয়ালা থাকেন।দোতলা পরিত্যক্ত।মালপত্র বোঝাই করা সিঁড়িতে।উঠবার কায়দা নেই।সিঁড়ির অবস্থা যে অনেক ভালো তাও নয়।

 জরাগ্রস্ত সিঁড়ির শতশত বাঁধা পেরিয়ে ছাদে গিয়েছে বর্ণ। কাঠের দরজা একপাশ ভগ্ন।অন্যপাশে সংযুক্ত নাট বল্টুর অবস্থাও আধমরা।বর্ণের মন চেয়েছিলো।অর্ধ ভাঙা দরজা থাকার চেয়ে না থাকা ভালো।পায়ের জোরালো লাথি দিয়ে দরজার আরেকপাশ ভেঙে ছাদে এসেছে।সাদা রঙের রেলিং কালোতে পরিণত।সেখানেই পা ঝুলিয়ে বসে।পাশে সিগারেট এর প্যাকেট।সেই কবে অন্বেষার কাছ থেকে ভুলিয়ে ফুঁসলিয়ে কিনিয়েছিলো।যত্ন করে রেখেছে।বেশি খায় না।খেলেই শেষ হয়ে যাবে।

আজ ভাতটা খাওয়া হয়নি। অন্বেষার কিনে দেওয়া মোগলাই পরোটা রুমমেটদের পেটে পড়েছে। বর্ণ নিশ্চুপ।কিছুটা স্তব্ধ।পায়ের ক্ষণেক্ষণে ব্যথা অন্বেষার অবদানের কথা মনে করায়।যেই সিগারেট এর ধোঁয়া মাথা ঠাণ্ডা করার জন্য উড়াচ্ছে সেটিও অন্বেষার দেওয়া।ঘিরে ফেলেছে সবকিছুই সে।আজ জনসম্মুখে এমন কিছু চেয়েছে যা শুনে বর্ণ এক মুহুর্ত সেখানে থাকেনি।আজও কাজ কামাই দিলো।মনের সুখে বেতন কেটে রাখবে মালিক।কিন্তু বর্ণ নিজের মর্জির মালিক।এই অশান্ত চিত্ত নিয়ে কিছুতেই কাজে যাওয়া যাবে না।নয়তো মালিকেরও রেহাই নেই। চোটপাট খেতে পারে তার হাতে।

এই অস্থিরতা কি করলে কমবে?কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।ছটফট করছে বর্ণ।মাথার চুল খামচে ধরলো।

“তোমারে আমি একটা কথা ক্লিয়ার বুঝাই?বুঝবা?বাংলায় কমু!”

ফোন করেছে অন্বেষা।জানতে খেয়েছে কিনা?তিনবার ফোন করেছিলো।কেটে দিয়েছে বর্ণ। হাল ছাড়েনি অন্বেষা।অবশেষে রেগে ফোন রিসিভ করে।

“বলো?”

“আমার কি সমস্যা আমি জানি না।আমার দিকে আওয়া সব মায়া, দয়া, ভালোবাসা আমার অস্থিরতার কারণ।আমি মনে হয় পাগল।দুনিয়াতে মানুষ যেসব জিনিস বেশি বেশি চায় ঐটা আমি চাই না।এমনকি ট্যাকাও না।কেউ আমার লগে মুখ ফুইটা দুইটা ভালো কথা কইলেও আমার সহ্য হয়না।এটা আমার সমস্যা!”

“নিজের অন্তরকে কুঁকড়ে রাখলে হবে? উন্মুক্ত করো।”

“পারি না! পারতে চাই না…”

“তাহলে কি চাও?”

“আমি যেমন আছি তেমনি থাকবার চাই”

“হতে পারে আমার সাথে ভালো থাকতে পারো”

বর্ণের অধিরতা বাড়লো।বুক ধড়ফড় করছে।মাথা দুদিকে জোরে দুলায়। অন্বেষার কথাগুলো যেনো অসহ্যকর।

“কি পাইছো কি আমার মধ্যে!কেন পিছে পড়ছো আমার?”

অন্বেষা নরম সুরে আওড়ায়, “কিছু পাইনি বলেই পিছু নিয়েছি।”

“এসব রং তামাশার প্যাচাল আমার লগে পাইরো নাতো ভাই!আমার জীবন এটা!এদিকে আমি একলাই থাকুম।আমি আর কেউরে চাই না।একবারে না!কোনোদিন না”

“তাহলে তোমার সাথেসাথে আমারও জীবন একাকীত্বের ভয়াবহতার মধ্যেই কাঁটবে। নিঃসঙ্গ!”

বর্ণ কথার অর্থ বুঝলো না।বিরক্তির সুরে প্রশ্ন করলো,

“কেন?তুমি একলা কেন থাকবা?শিক্ষিত মাইয়া পড়ালেখা করো।ভালো দেইখা একটা পোলা খুঁইজা বিয়া করো।”

“ঘর বাঁধলে তোমার আধ ভাঙা ঘরেই বাঁধবো।নাহয় না”

লম্বা নিঃশ্বাস টেনে নিয়ে ধীরগতিতে ছাড়ে বর্ণ। নাছোড়বান্দাপনা শুরু করেছে।তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে বর্ণের মস্তিষ্কে।কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে।অসহ্য রকমের ভয়।গ্রহণ করার ভয়। অন্বেষাকে জড়াবে না কিছুতেই জীবনে।

“আমার জীবনের ঠিক ঠিকানা নাই।”

“আমারও”

“এমন জিদ এর লেইগা সামনে থাকলে তোমার গালে এবার সত্যিই একটা থাপ্পড় মাইরা দিতাম।”

“আমি বুঝি থেমে থাকতাম?”

“আচ্ছা কি করতা তুমি?”

অন্বেষা চাপা হাসলো।বর্ণের এমন মেজাজ গায়ে মাখছে না।মনের অভ্যন্তরে আশা আছে জয়ী হওয়ার।জবাবে বললো,

“কলার ধরে মারতাম।পরে মানুষ জড়ো করে গণধোলাই খাওয়াতাম।”

বর্ণও হেসে উঠলো।অহংকারের হাসি।বললো সেই সুরে,

“আমার এলাকা এটা!তোমার মত দুয়েকটা চুনোপুটিরে মাইরা কবর দিয়া ফালাইলেও কেউ একটা শব্দ করবো না।”

“মরে গেলেতো আর ভালো।তোমাকে জ্বালাতন করবে না আর কেউ।কোথায় কবর দেবে আমায়? বলি কি তোমার বাড়ির আঙিনায় দিও।মাঝেমধ্যে আসবো ভূত হয়ে দেখা করতে।”

বর্ণ বুঝতে পারে অন্বেষা মজা করছে। প্রত্যুত্তরে বলে উঠলো,

“মজা লও?”

অন্বেষা কথা ঘুরিয়ে বলে, 

“এই কালকে বুড়িগঙ্গার তীরে যাবে?আমি নৌকায় ঘুরবো।তারপর সেখান থেকে বাংলা বাজার যাবো।আমরা আগামীকাল দুপুরে হাজী বিরিয়ানীও খাবো ঠিক আছে?তারপর বিউটি লাচ্ছি। নাম শুনেছি।কিন্তু কখনও যাইনি।যাওয়ার মানুষ নেই।একা গিয়ে কোনো মজা আছে।যাবে?”

বর্ণ কোনো প্রকার ভাবনা চিন্তা ছাড়া জবাব দিলো,

“না”

“আচ্ছা আমি বারোটার তৈরি থাকবো কেমন?”

মুখ শক্ত করে চুপ বনে গেলো বর্ণ। চোরের উপর বাটপারি।না বলা সত্ত্বেও ঘাড়ে চেপে গেলো! অন্বেষা ঠোঁট কামড়ে হাসছে।

“কালকে শুক্রবার কিন্তু…আর হ্যাঁ স্বাভাবিক মানুষের মতো আসবে।পরিপাটি হয়ে।অগোছালো যেনো না হয়….”

জোৎস্না স্নাত রাত।শীতকাল বলছে আসি আসি। শীত আসার পূর্বে হাওয়ায় এক অপরূপ ঘ্রাণ ভাসে।ঠিক নতুন প্রেমে পড়ার মতো অনুভূতি। শিরায় উপশিরায় অসদৃশ সম্বেদন এর সাথে সাক্ষাত করায়।পবনে মাখা সুবাসে মাতোয়ারা প্রাণ। নীরব ফোনে কান পেতে এই অন্তর্ধান সৌরভ শুঁকে নিলো অন্বেষা।ভালো লাগায় ভরে গেলো চিত্ত।শিরশির করে কেঁপে উঠলো।তার ভালো লাগাকে বেগ দান করতে ওই ঘ্রাণ মিশ্রিত হাওয়া একটু এসে ছুঁয়ে গেছে। ওষ্ঠ প্রসারিত করে অর্থহীন হাসে অন্বেষা।বর্ণ কানে ফোন চেপে রেখেছে।কিছুই বলছে না তেমন।

______

সুদীপ্তা এসে দরজায় দাঁড়িয়েছে।সাথে তার মেয়ে।দরজায় কড়া নাড়তেই অন্বেষা উঠে এলো।দেখলো ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সুদীপ্তা।মেয়েটি ‘আন্টি’ ডেকে ভেতরে প্রবেশ করে।সুদীপ্তার হাতে বাটি। অন্বেষা বললো,

“বাহিরে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো দিদি?ঘরে আসুন”

অনুমতি পেয়ে সুদীপ্তা ঘরে এলো। অন্বেষার দিকে বাটি এগিয়ে দিয়ে বললো,

“আজকে মেয়ে বায়না করছিলো ফিরনি খাবে।ওকে বানিয়ে দিয়েছিলাম।তোমার জন্যও একটু আনলাম।”

“কি দরকার ছিলো বলুনতো?”

“দরকারে সব কাজ করতে হবে কেন?তুমি আমার প্রতিবেশী এতটুকু করতে পারি না?একা থাকো।কি খাও না খাও জানিওতো না।”

অন্বেষা সুদীপ্তাকে বললো, “বসুন।গল্প করি”

সুদীপ্তা বসলো।সাথে তার মেয়েও অন্বেষাকে ঘেঁষে বসে। অন্বেষা তাকে কোলে তুলে নেয়।বলে,

“এসো তোমার চুলে ঝুঁটি করে দেই”

বাচ্চা মেয়েটি মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানায়।বাড়ি মিষ্টি আর লক্ষী মেয়ে।সুদীপ্তা হাসলো দুজনকে দেখে। ঝুঁটি করা শেষে অন্বেষা ফিরনি হাতে তুলে খেতে খেতে প্রশংসায় পঞ্চমুখ।তারপর বললো,

“আমার মাও প্রতি ঈদে রান্না করতেন ফিরনি, জর্দা সেমাই।কি যে মজা হতো!”

সুদীপ্তা অন্বেষার কথার প্রেক্ষিতে প্রশ্ন করলো, 

“তারা কোথায়?গ্রামে থাকে?”

হাত থেমে যায় অন্বেষার।কিছু ফিরনি অবশিষ্ট আছে পেয়ালাতে।ঠোঁটে ঠোঁট চেপে নেয়।ভেজা ঢোক গিলে মাথা নাড়ায় দুদিকে। অন্বেষার ম্লান মুখাবয়ব দৃষ্টিগোচর হয় সুদীপ্তার।দ্রুত চোখ পিটপিট করে বলে,

“আমি কি ভুল কিছু জিজ্ঞেস করে ফেললাম?”

তৎক্ষনাৎ হেসে অন্বেষা জবাব দেয়, 

“না দিদি।আমার বাবা মাকে সৃষ্টিকর্তা ভালোবেসে তার কাছে নিয়ে গেছেন।এই সমাজটা সবার জন্য নয়।”

সুদীপ্তার মুখ মিয়ে আসে।জবাবে কোনো শব্দ বেরোলো না আর।কিছু ক্ষণের নীরবতার পর সুদীপ্তা বলে উঠলেন,

“আমার বাবা মা-তো থেকেও নেই।”

“কেনো?”

“তোমার দাদাকে ভালোবেসে পালিয়ে বিয়ে করেছিলাম।এরপর থেকে বাবা মা,দাদা দিদিদের মুখ কখনো দেখিনি”

অন্বেষা জানতে চাইলো, “কোনোদিন ক্ষমা চাইতে ইচ্ছে হয়নি?”

“চেয়েছি।বাবার পায়ে পড়ে ক্ষমা চেয়েছিলাম।কেউ ক্ষমা করেনি।তোমার দাদার পরিবারও একমাস আমাদের বাড়িতে রেখেছিলো।যখন দেখলো তোমার দাদা সংসারের হাল ধরতে পারছে না?তখন তারাও মুখ ফিরিয়ে নেয়।অল্প বয়সে ভুল করেছিলাম দুজনে।এখনও মাশুল দিচ্ছি।”

অন্বেষা শীতল সুরে শুধায়, “সুখে আছেন?”

হঠাৎ সুদীপ্তার মুখে হাসি ফুটলো। সে হাসিতে প্রাণের অস্তিত্ব ছিল। অন্বেষার বুঝতে আর কোনো অসুবিধে হয়নি। সুদীপ্তাও লাজুক সুরে বলে উঠে,

“তার নাম জীবন।আমরা তার জীবন, সে আমাদের।”

“দাদা কি করেন?”

“গার্মেন্টসে চাকরি করে।নাইট ডিউটি।”

অন্বেষার গার্মেন্টস আর নাইট ডিউটির কথা শুনে বর্ণের কথা মনে পড়লো।সে কোন গার্মেন্টসে কাজ করে সেটা জানা নেই।মন হুট করেই দুজনের যোগসূত্র স্থাপন করতে চাইলো।পরপর অন্বেষা মনের ভুল বলে চিন্তা ঝেড়ে ফেলে দেয়।

সুদীপ্তা বলে, “তুমি বিয়ে শাদী করবে না?”

অন্বেষা মিটিমিটি হাসছে।ভাবলো কিছু সময় নিয়ে। পরক্ষণে জবাব দিলো,

“করবো।বাঁকা ঘাড় আগে সোজা করে নেই।”

_____

অন্বেষা গুনগুন করতে করতে তৈরি হচ্ছে।আজ গায়ে দিয়েছে তার খুব পছন্দের একটি কালো রংয়ের ড্রেস।জব্বার চাচার স্ত্রী বানিয়ে উপহার দিয়েছিলেন তাকে।প্রসাধনী সামগ্রী তেমন নেই।যা আছে সেসব ব্যবহার করেই নিজেকে সাজালো।কপালে কালো রঙের টিপ দিতে ভুলেনি। ফোনের ঘড়িতে দেখলো বারোটা বাজতে দশে মিনিট বাকি।বর্ণকে একটা ফোন করা উচিত। ফোন হাতে তুলে কল মেলায় ‘ছন্নছাড়া’ নামে সেভ করা নাম্বারটিতে।

হাত পা ছড়িয়ে ঘুমোচ্ছে বর্ণ।ঠোঁট জোড়া ফাঁকা হয়ে আছে।স্বল্প আওয়াজে নাক ডাকছে।আকস্মিক ফোন বেজে উঠতেই ধড়ফড় করে উঠলো।চোখ খুলতেই মাথাটা ঝিমঝিম করতে শুরু করে।বুকে একহাত রেখে নিঃশ্বাস ফেলে বাটন ফোনটি হাতে তুলে রিসিভ করে।রাগী ঘুমঘুম কণ্ঠে বলে,

“কি সমস্যা!”

“তুমি এখনো ঘুমোচ্ছো?”

“তো কি করমু বাল? ঘুমামু না?”

“আজকে ঘুরতে যাওয়ার কথা ভুলে গেছো?”

আবার ধপাস করে শুয়ে পড়ে।কপালে হাত রাখে।পরক্ষণে চুল খামচে ধরলো একহাতে।বললো,

“আমি যামু না।”

“রেডি হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি।লোকজন কেমন করে যেনো তাকাচ্ছে।পাঁচ মিনিটে গলির মোড়ে হাজির হও।রাখলাম”

“আমি আইতাম না। খাড়ায় থাকো।রাস্তায় কেউরে ভাল্লাগলে ওর লগে যাইও গা।”

বলতে বলতে ফোন কেটে দিলো অন্বেষা।বর্ণ খিচে চক্ষু জোড়া বন্ধ করে সেভাবেই শুয়ে রইলো কিছুক্ষন।নিজের কথামত গলির মোড়ে হাজির অন্বেষা।ঘড়ি দেখছে বারবার।আধ ঘন্টা হতে চললো।বর্ণের কোনো খোঁজ নেই।

______

কোলাহলে পূর্ণ স্থান নাজিরা বাজার। ঐতিহ্যে পূর্ণ।ইংরেজ আমলের মত এখনও দৃষ্টি কারে ঘোড়ার গাড়িগুলো।হাজী বিরিয়ানির সুগন্ধ ছড়িয়ে চারিদিকে।দুপুরের সময়। জম্পেশ পেট পুজো করে মন শান্ত হলো।এই স্বাদের তুলনা হয়না।গরম গরম ধোঁয়া উঠানো বিরিয়ানি খেয়ে এবার অন্তর ঠান্ডা করার পালা।ধীর পদচারণ এবার বিউটি লাচ্ছির স্বাদ নিতে গেলো বর্ণ অন্বেষা।বর্ণের মুখ রুষ্টতায় পূর্ণ। অন্বেষাকে আধ ঘন্টা অপেক্ষা করিয়ে এসেছে। পরিপাটি নয় বরং অন্যদিনের চেয়ে আরো অগোছালো। অন্বেষার খুশি দেখে দাউদাউ করে অদৃশ্য আগুনে জ্বলছে যেনো বর্ণের সর্বাঙ্গ।নাজিরা বাজার থেকে বেরিয়ে বাংলা বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।বাংলা বাজারে বইয়ের সমারোহ। রাস্তার দু দ্বারে সাজানো বই আর বইয়ের দোকান জ্ঞানের আলোয় উজ্জলিত। ঐতিহ্যের ঘ্রাণ মিশে।

হঠাৎ অন্বেষার চোখ গেলো সাদা রঙের যাত্রীবাহী গাড়ির দিকে।প্রশ্ন করলো,

“এই এই! সাদা গাড়িগুলোর নাম কি?”

বর্ণ রুক্ষ গম্ভীর গলায় জবাব দেয়, “মুড়ির টিন”

অন্বেষার হাস্যোজ্জ্বল মুখ কুচকে গেলো নাম শুনে।বললো,

“এটা আবার কেমন নাম?”

“এটাই নাম!”

“এসো চড়ি”

বর্ণ ঘুরে তাকায়।তার চোখ রাঙানি দেখে দমে গেলো অন্বেষা।ইচ্ছে করে অনেকটা জ্বালাচ্ছে তাকে।বেশি বাড় বাড়লে এই গাড়ির নিচেই ছুঁড়ে দিবে।তাই থেমে গেলো।দেখলো বর্ণ এগিয়ে যাচ্ছে।উঠে বসলো গাড়িতে।ভার মুখে চাইলো অন্বেষার দিকে।রাগী দৃষ্টিতে ইশারা করছে আসতে। অন্বেষা ঠোঁট কামড়ে হেসে উঠে গেলো তৎক্ষনাৎ।

বুড়িগঙ্গার তীর ধরে ঢাকার প্রাণ বয়ে চলেছে।নদীর জল রোশনিতে ঝলমলে।মানুষের আনাগোনা ব্যাপক।তবে আজ অন্বেষার মন উদ্দীপ্ত।এটি স্মৃতির শহর সেখানে লিখা আছে তার হাজারো স্মৃতি।সুখের শহর যেখানে সুখ ছিলো।মধ্যে এসেছে দুঃখের ভার।আজ মনে হচ্ছে এখানেই স্বস্তি মিলবে আবারো।এই শান্তি যেনো বর্ণের হৃদয়ে রেখাপাত করে।এই শহরে গড়ে উঠা নতুন গল্প দাগ কাটে চিত্ত গভীরে।

“আমার পিছনে পাগলা কুত্তার মত বাইজা থাকা ছাড়া জীবনে আর কোনো উদ্দেশ্যে নাই?”

“নয়ে আকার না”

“একটা চটকোনা দেই?”

গাল পেতে দিলো অন্বেষা।বললো, “দাও…ওই দেখো সামনেই পুলিশ দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছে।”

“শালার আমার জীবনটাই ঠাডা পড়া!কোন জনমের পাপ পোহাইতাছি আল্লাহ মালুম!”

শহরে সন্ধ্যা নামছে।তামাশায় অন্বেষার হৃদ গহ্বরে আকাঙ্ক্ষা জাগলো।বর্ণ চেয়ে আছে সামনে। সারি সারি নৌকার দিকে।ধ্যান নেই অন্বেষার কোনো কাজ কর্মে।হুট করে অনুভব করলো কিছু।চক্ষু গোলগোল হয়ে উঠে। চঞ্চল হয়,অস্থিরতা আবার ঘিরে ধরছে।অন্বেষা অবলীলায়; অধিকারবোধে মাথা নুয়েছে তার কাঁধে।



চলবে...............................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন