বর্ষণের সেই রাতে - পর্ব ৩৮ - অনিমা কোতয়াল - ধারাবাহিক গল্প

বর্ষণের সেই রাতে 
পর্ব ৩৮ 
অনিমা কোতয়াল 
.
.
.
অনিমাকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে একটু ঘাবড়ে গেলেও আদ্রিয়ান একটু হাসার চেষ্টা করে করে বলল,

--- " তুমি ঘুমাও নি এখোনো।"

অনিমা কিছু না বলে অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে তাতে আদ্রিয়িনের ভয় আরো বেড়ে গেলো। আদ্রিয়ান কিছু বলবে তার আগেই অনিমা ভ্রু কুচকে বলল,

--- " এতো রাতে কার সাথে কথা বলছিলেন? আর কাকে কীসের সময় দেওয়ার কথা বললেন?"

আদ্রিয়ান কী বলবে বুঝতে পারছেনা। কারণ অনিমা যেই রকম মেয়ে তাতে ওকে আটকানোর চেষ্টা করবেই। ও চাইবেনা ওর মামা মামীর কোনো ক্ষতি হোক, মেয়েটা যে এরকমি। আর ও এখন অনিমাকে নিজের ব্যাপারে কিচ্ছু বলতে চায় না। তাই আদ্রিয়ান কিছু একটা ভেবে বলল,

--- " অ্ আসলে একজন ডিরেক্টর তার একটা ফিল্মের গান এর জন্যে বলছিলো এমনিতেই আমার কতোগুলো কনট্রাক্ট সাইন করা তাই আমি একটু সময় দিতে বললাম এই আর কী।"

অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে সন্দিহান আর অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

--- " কিন্তু আপনিতো বললেন.."

অনিমাকে কিছু না বলতে দিয়ে আদ্রিয়ান বলল,

--- " ওসব ছাড়ো তুমি এখনো জেগে আছো কেনো? তুমি জানো তোমার শরীর ঠিক নেই। তোমার প্রপার ঘুমের প্রয়োজন। "

অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,

--- " হ্যাঁ কিন্তু..."

আদ্রিয়ান এবারো অনিমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,

--- " আবার কথা বলে। চলো ঘুমোবে।"

বলেই অনিমাকে টেনে ভেতরে নিয়ে গেলো রুমে। অনিমা বেশ অবাক হলো। ওর মনে হচ্ছে যে আদ্রিয়ান কিছু লুকোচ্ছে। কিন্তু এটাও বুঝতে পারছে যে আদ্রিয়ান ওকে কিছু বলতে চাইছেনা আর আদ্রিয়ান যখন বলতে চাইছেনা তাই ও আর কথা বাড়ালোনা। কারণ যেটা আদ্রিয়ান ওকে জানাতে চায় না সেটা ও শুনতেও চায়না। ও জানে আদ্রিয়ান ওকে কতোটা ভালোবাসে আর ও কিছু লুকিয়ে থাকলে তার পেছনে যথেষ্ট কারণ থাকবে। আদ্রিয়ান অনিমাকে শুইয়ে দিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিলো। অনিমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে আদ্রিয়ান মনে মনে বলল। আ'ম সরি জানপাখি। তোমাকে মিথ্যে কথা বলতে চাইনি আমি কিন্তু আপাদত আমার কাছে সেকেন্ড কোনো অপশন ছিলোনা। তবে কথা দিচ্ছি সময় এলে সব সত্যিটা তোমাকে বলবো। এসব ভাবতে ভাবতে আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ অনিমার দিকে তাকিয়ে থেকে সোফায় শুতে চলে গেলো।

___________________

একটা স্টুডিও থেকে গানের রেকর্ডিং কম্প্লিট করে সোফায় বসে আছে আর ওর দুই পাশে আদিব আর আশিস। এখানে ওদের স্নাক্স এর ব্যবস্থা করেছে ডিরেক্টর তাই ওদের একটু বসতে হচ্ছে। আপাদত কফি দেওয়া হয়েছে ওদের। কিছুক্ষণ তিনজনেই চুপ ছিলো। কফির মগে চুমুক দিতে দিতে আদ্রিয়ান আশিসকে বলল,

--- " অরুমিতার সাথে কী চলছে তোর?

আশিস কফির মগে চুমুক দিতে গিয়েও থেমে গেলো, আর আদিব তাকালো আশিসের দিকে। আশিস জানে যে আদ্রিয়ানকে মিথ্যে বলে কোনো লাভ নেই। ও সব জেনেই তবে কাউকে প্রশ্ন করে এটাই ওর স্বভাব । তাই গলাটা একটু ঝেড়ে নিয়ে বলল,

--- " একচুয়ালি উই আর ইন এ রিলেশনশিপ।"

আদিব বেশ অবাক হলো কিন্তু আদ্রিয়ান একটুও অবাক হলোনা কারণ ও আগে থেকেই সব জানতো আর জেনে শুনেই জিজ্ঞেস করেছে। আদ্রিয়ান কফির মগটা টেবিলে রেখে বলল,

--- " দেখ তোকে আমি আগেও বলেছি। অরুমিতা মেয়েটা অন্যরকম। ও তোর ঐসব গার্লফ্রেন্ডস দের মতো নয়। তাই বলছি হয় ওর প্রতি পুরোপুরি সিরিয়াস হ নয়তো সম্পর্কটা এখানেই শেষ কর। এন্ড আ'ম ভেরি সিরিয়াস হ্যাঁ?

আশিস হেসে বলল,

--- " হুম।"

আদিব ভ্রু কুচকে আশিসের দিকে তাকিয়ে বলল,

--- " তুই আর সিরিয়াস? আদোও হতে পারবি তো ভাই?"

আশিস কিছু না বলে হাসলো খানিকটা। আদ্রিয়ান কিছু বলবে তার আগেই ওখানকার একজন এসে বললো,

--- " স্যার আপনার সাথে মিনিস্টার রঞ্জিত চৌধুরীর ছেলে রিক চৌধুরী এসছেন দেখা করতে। উনি ওয়েটিং রুমে আছেন। আসতে বলবো?"

আদ্রিয়ান এর ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটে উঠলো। আদ্রিয়ান লোকটির দিকে তাকিয়ে বলল,

--- " নাহ। ওনাকে ওখানেই বসতে বলো আমি যাচ্ছি।"

লোকটি মাথা নেড়ে চলে গেলো ওখান থেকে। আদিব অবাক হয়ে বলল,

--- " তুই কেনো যাবি? ওকে এখানে আসতে বলতি।"

আদ্রিয়ান খানিকটা আলসেমি ঝেড়ে বললো,

--- " কী সব বলিস তোরা? এতো নামিদামী একজন এতোটা পথ পেরিয়ে আমার সাথে দেখা করতে এসছে, আমিতো এটুকু তো যেতেই পারি। "

বলেই মুচকি হাসলো আদ্রিয়ান উত্তরে আশিস আর আদিব ও হেসে দিলো। আদ্রিয়ান উঠে চলে গেলো রিকের সাথে কথা বলার জন্যে। গিয়ে দেখলো রিক সোফায় পায়ের ওপর পা তুলে বসে। আদ্রিয়ানকে দেখে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালো। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে গিয়ে রিকের সামনে বরাবর রাখা সোফায় পায়ের ওপর পা তুলে বসলো। রিক তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে ওর বসার ধরণটাও দেখলো। আদ্রিয়ান হাসি মুখেই বলল

--- " আজ হঠাৎ আমাকে আবার কেনো মনে পরলো রিক চৌধুরী?"

রিক চোখ মুখ শক্ত করেই বলল,

--- "যেটা করছো সেটা কিন্তু মোটেও ভালো করছোনা। তুমি জানোনা আমি কতোটা ভয়ংকর হতে পারি। অনিকে দিয়ে দাও আমায়। এতে তোমারো ভালো হবে আর অনিরো!"

আদ্রিয়ান রিকের দিক থেকে চোখ সরিয়ে একটা তাচ্ছিল্যের বাঁকা হাসি দিলো তারপর আবারো রিকের দিকে তাকিয়ে বলল,

--- " আচ্ছা? তাই নাকি? তা কীকরে ভালো রাখবেন ওকে? নিজের বেল্ট দিয়ে মেরে? নাকি স্টিলের গরম নাড়ানি ওর হাতে চেপে ধরে? নাকি গরম জল মুখে ঢেলে দিয়ে? হুম? এসব করে ভালো রাখবেন ওকে?"

রিক রেগে গিয়ে বলল,

--- " বেশি বেশি বলে ফেলছো কিন্তু।"

আদ্রিয়ানও হেসে দিয়েই বলল,

--- " একটা কথাও বেশি বলিনি আমি। যা করেছেন সেটাই শোনাচ্ছি আপনাকে।"

এরপর বেশ কিছুক্ষণ দুজনেই চুপ ছিলো। এরপর কিছু একটা ভেবে রিক আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,

--- " কী চাই তোমার?"

আদ্রিয়ান ঠোঁটে হাসি রেখেই কপালটা কুচকে বললো,

--- " মানে?"

রিক একটু হাসলো তারপর নিজের থুতনিতে হাতে দুটো আঙ্গুল স্লাইড করে বলল,

--- " টাকার লোভ কম বেশি সবার থাকে। চলো একটা ডিল করা যাক। তোমার যতো টাকা লাগবে আমি দেবো তোমাকে। শুধু একবার না যখন যতো লাগবে ততোই দেবো। তুমি চাইলে আমি এগ্রিমেনট ও সাইন করাতে পারি। কিন্তু তার বদলে তুমি আমাকে আমার অনিকে দেবে। কী বলো? ডিলটা ভালো না? " 

আদ্রিয়ান খানিকটা বাঁকা হেসে বলল,

--- " হুমমম। বেশ ভালো ডিল। আমিতো রাজি।"

আদ্রিয়ানের উত্তর শুনে রিকের মুখে হাসি ফুটে উঠল। রিক হেসে বলল,

--- " বলেছিলাম না? টাকার কাছে সবাই মাথা নামিয়ে নেয়? বলো কতো চাই?"

আদ্রিয়ান হেসে বলল,

--- " আরে দাঁড়ান এতো তাড়ার কী আছে? আমি এই ডিলটা মানবো যদি আপনিও আমার সাথে একটা ডিল করেন তো।"

রিক ভ্রু কুচকে বলল,

--- " কীসের ডিল?"

আদ্রিয়ান সোফায় হেলান দিয়ে আয়েশ করে বসে বলল,

--- " আপনার হৃদপিণ্ড টা আমায় দিয়ে দিন। আর তার বদলে আমি আমার সমস্ত কিছু, প্রপার্টি ব্যাংক ব্যালেন্স সব আপনার নামে করে দেবো। বলুন? রাজী?"

রিক রাগে গজগজ করে বলল,

--- " মজা করছে আমার সাথে? যদি আমার হৃদপিন্ডটাই দিয়ে দেই তাহলে এই প্রপার্টি দিয়ে কী করবো?"

আদ্রিয়ান মুচকি হেসে দিয়ে স্হির গলায় বলল, 

--- " তাহলে আমি আমার হৃদপিণ্ডটা আপনাকে দিয়ে দিলে ঐ টাকা দিয়ে কী করবো? ও তো শুধু আমার হৃদপিণ্ড নয় আমার শরীরের অর্ধেক অংশ। পৃথিবীর কোনো কিছুর বিনিময়ে ওকে দিতে পারবোনা আমি । আর আপনি ওকে নিয়ে ডিল করছেন?" 

এটুকু বলার পরেই আদ্রিয়ানের চোখে মুখে চরম রাগ ফুটে উঠলো আদ্রিয়ান রাগী কন্ঠে বলল,

--- " আমি আপনাকে আগেও বলে দিয়েছি যে ও কোনো জিনিস নয়। আমাকে ওর সেই মামা আর মামী পেয়েছেন নাকি কটা টাকার লোভ দেখাবেন আর আমি ওকে বেঁচে দেবো? তখন আপনি সেটা করতে পেরেছিলেন কারণ ওর পাশে কেউ ছিলোনা। কিন্তু এখন এসব চিন্তাও করবেন না কারণ ওর পাশে আমি আছি। ওর সব বিপদে ওর সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়াবো আমি। তাই এখনও বলছি ওর কথা ভুলে যান।"

রিক কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে তারপর আদ্রিয়ানের কথাগুলো মাথায় যেতেই চরম মাত্রায় রেগে গিয়ে বলল,

--- " এভাবে মানবেনা তুমি তাইনা?"

বলেই উঠে নিজের পেছন থেকে গান বেড় করে আদ্রিয়ানের দিকে তাক করল কিন্তু আদ্রিয়ানের চোখে মুখে ভয়ের কোনো ছাপ নেই। রিক রেগে গিয়ে একটা হাওয়ায় একটা শুট করলো আদ্রিয়ানের পাশ দিয়েই। আদ্রিয়ান হুট করেই রিকের হাতে একটা লাথি মারলো। বন্দুকটা রিকের হাত ফসকে ওপরে উঠে যেতেই আদ্রিয়ান ওটা ক্যাচ করে রিকের চারপাশ দিয়ে পরপর বিরতিহীন পাঁচটা শুট করলো। সবগুলো গুলি রিকের পাশ ঘেসে ঘেসে চলে গেলো কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো একটা গুলিও রিকের গায়ে লাগলোনা। রিক তাল সামলাতে না পেরে সোফায় পরে গেলো ও হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান রিকের কাছে গিয়ে ওর পাশে সোফার ওপর পা রেখে শক্ত কন্ঠে বলল,

--- " আমি এমনিতে খুব ভালো। কিন্তু যদি একবার খারাপ হয়ে যাই না তাহলে সামনে উপস্হিত ব্যাক্তিটির জন্যে সেটা ভীষণ ভারী হয়ে পরে। তাই বলছি এরপর আমার সাথে ভেবে চিন্তে কথা বলবেন আর কাজ করবেন।"

এটুকু বলে গানটা রিকের হাতে ধরিয়ে দিয়ে আদ্রিয়ান চলে গেলো ওখান থেকে। রিক বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো আদটরিয়ানের যাওয়ার দিকে আর বিড়বিড় করে বলল,

--- " ও শুধু একজন সিঙ্গার হতে পারেনা। ইম্পসিবল।"

আদ্রিয়ান ওখান থেকে আদিব আর আশিসের কাছে গিয়ে বসে কাউকে ফোন করে বলল,

--- " তোমার ম্যামকে ঠিকভাবে খাবারটা দিয়ে এসো আর ওকে বলো আমার আসতে লেট হবে, অপেক্ষা যাতে না করে। এক জায়গায় যাবো আমি।"

এটুকু বলে ফোনটা রাখতেই আদিব জিজ্ঞেস করলো,

--- " কোথায় যাবি?"

আদ্রিয়ান বাঁকা হেসে বলল,

--- " হিসেব মেটাতে। এখোনো অনেকের সাথে অনেক হিসেব মেটানো বাকি। কিছু অমানুষকে মানুষ করতে হবে।"

এটুকু বলে ও আবার আরেকজনকে ফোন করে বলল,

--- " ফোনে অর্ক মৃধা বলে একজনের ডিটেইলস পাঠাচ্ছি ও এখন কোথায় আছে আধা ঘন্টার মধ্যে জানান আমাকে।"

______________________

সোফায় বসে টিভি দেখছিলেন আফরাফ মৃধা। আর তার পাশে বসে ফোনে অনলাইনে শাড়ি দেখছেন মিসেস রাহেলা। আশরাফ মৃধা বহুত টেনশনে আছেন এতোটা টেনশনে আছেন যে টেনশনে চা ও ঠিকভাবে খেতে পালছেননা। উনি বিরক্ত হয়ে ওনার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলল,

--- " আমি ওই হুমকি ফোনের টেনশনে বাঁচি না আর তুমি এসব ফালতু জিনিস দেখছো?"

মিসেস রাহেলা ফোনের দিকে তাকিয়েই ভ্রু কুচকে বললো,

--- "তুমি এতো বেশি কেনো ভাবছো সেটাইতো বুঝতে পারছিনা? কাল রাত থেকেই জালিয়ে মারছো আমাকে। বললাম তো অসব ফাঁকা আওয়াজ। কিচ্ছু হবেনা।"

--- " আরে তুমি বুঝতে পারছোনা ও..."

 আর কিছু বলবে তার আগেই হঠাৎ সামনে কিছু পড়ার শব্দে পেয়ে ওনারা চমকে তাকালেন আর তাকিয়ে যা দেখলেন তাতে ওনারা অবাক হয়ে গেলেন। কারণ ওনাদের সামনে ওনাদের ছেলে আহত অবস্হায় পরে আছেন। ওনারা কিছু বলবেন তার আগেই শিস বাজাতে বাজাতে এনট্রি নিলো আদ্রিয়ান । আদ্রিয়ানকে দেখে ওনারা আরো অবাক হয়ে গেলেন। মিসেস রাহেলা বিষ্মিত কন্ঠে বললেন,

--- " গায়ক? আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের?"

আদ্রিয়ান মুচকি হেসে পকেটে হাত ঢুকিয়ে বলল,

--- " বাহ চিনে ফেলেছেন দেখছি? তবে আমার আরেকটা পরিচয় হলো আপনাদের জামাই রাজা ওরফে যম।"

বলে ফ্লোরে পরে থাকা অর্কের ওপর নিজের পা রাখলেন। আশরাফ মৃধা চেঁচিয়ে বললেন,

--- " ওই ছাড়ো আমার ছেলেকে। তুমি ফোন করেছিলে না?"

আদ্রিয়ান অর্কর ওপর পা রেখেই বলল,

--- " আরে বাহ? আপনি খুব বুদ্ধিমান মামাবাবু কেমন ঝটাক করে ধরে ফেললেন।"

মিসেস রাহেলা এগিয়ে আসতে নিলেই হঠাৎ বেশ কিছু লোক ভেতর চলে আসলো আর ওরা আশরাফ মৃধা আর মিসেস রাহেলা কে আটকে রেখে দিলো। মিসেস চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলল,

--- " আমার ছেলের কষ্ট হচ্ছে ওকে ছেড়ে দিন প্লিজ!"

আসলেই অর্কর অবস্হা খুবই খারাপ দেখেই বোঝা যাচ্ছে ভীষণ মেরেছে ওকে। বেচারা ঠিক করে কথাও বলতে পারছেনা। আদ্রিয়ান হেসে দিয়ে বলল,

--- " আরে বাহ মামী শাশুড়ি, আপনার ছেলের কষ্টে আপনার কতো কষ্ট হচ্ছে। অথচ বাপ মা হারা একটা অসহায় মেয়েকে রোজ অমানুষের মতো মারার সময় মনে হয় নি যে ওর ও কষ্ট হচ্ছে? নাকি ওর হয়ে কেউ বলার ছিলোনা বলে আপনারা বুঝতেই পারেননি?"

অর্ক অস্ফুট স্বরে বলে উঠল,

--- " বাবাহ আমাকে বাঁচাও।"

আদ্রিয়ান এবার ইশারা করতেই কিচেন থেকে ওর এক লোক একটা মগে করে গরম পানি নিয়ে এলো। আদ্রিয়ান একহাটু ভেঙ্গে অর্কের সামনে বসে ওর হাত ধরে সেই মগের মধ্যে চুবিয়ে দিলো। জ্বালায় চিৎকার করে উঠল অর্ক, আদ্রিয়ান ওপর হাতে ওর চুলের মুঠি ধরে উঁচু করে বলল,

--- " খুব কষ্ট হচ্ছে বুঝি? অথচ এই কষ্টটাই অন্যকে দিতে খুব মজা লাগে তাইনা? আমারও লাগছে। ওয়েট, মজাটা আরো বাড়ানো যাক।"

বলেই আদ্রিয়ান পকেট থেকে একটা ছুড়ি বের করল। সেটা দেখে মামা মামী আর অর্ক তিনজনেরই আত্মা শুকিয়ে গেলো। আদ্রিয়ান ছুড়িটা অর্কর হাতে বসিয়ে জোরে একটা টান মারলো অর্ক চিৎকার করে উঠল সাথে আশরাফ মৃধা আর মিসেস রাহেলাও। কিন্তু লোকগুলো ঘিরে রেখেছে বলে ওনারা যেতে পারছেননা মিসেস রাহেলা কাঁদতে কাঁদতে বলল,

--- " দয়া আমার ছেলেটাকে ছেড়ে দাও। ও মরে যাবে।"

আদ্রিয়ান অর্কের পিঠে ছুরি দিয়ে একটা টান মারলো। এভাবে আশরাফ মৃধা আর মিসেস রাহেলাকে দেখিয়ে একটার পর একটা ছুরির আঘাত করতে লাগলো অর্কর শরীরে আদ্রিয়ান। অর্কর একেকেটা চিৎকারে বাড়ি কেঁপে উঠছে। ওনারা দুজন আর সহ্য করতে পারলেন না। নিজের সন্তানের এই অফস্হা কেউ সহ্য করতে পারেনা সে যেমন মানুষই হোক। কাদঁতে কাঁদতে বসে পরে আশরাফ মৃধা হাত জোর বললেন,

--- " তোমার যা চাই আমরা দিয়ে দেবো কিন্তু আমার ছেলেকে ছেড়ে দাও দয়া করে।"

আদ্রিয়ান এবার মুখটা একটু চিন্তিত করে বলল,

--- " কিন্তু আপনার ছেলের কলিজাটা তো আমার চাই মামাবাবু । যে কলিজা নিয়ে ও আমার জানপাখিকে ছোয়ায় সাহস দেখিয়েছে সেই কলিজাটাকে কেটে কুচিকুচি না করা অবধি যে আমার ঘুম হবে না। কী করি বলুনতো? আ'ম হেল্পলেস। তবে একটা কাজ করছি আমি। আপনাদের ছেলের কলিজাটা আমি নিয়ে নিচ্ছি তার বদলে আপনাদের আমি আপনাদের খুব পছন্দের একটা জিনিস দেবো। আপনাদের যতো টাকা লাগে দেবো। দরকার পরলে ব্লাঙ্ক চেইক ধরিয়ে দেবো। ভাবুন তো কতো টাকা পাবেন? বাকি জীবণটা বসে বসে টাকা উড়িয়ে উড়িয়ে খরচ করলেও শেষ হবেনা এতো টাকা দেবো আপনাদের। কিন্তু তার বিনিময়ে একটা সামান্য জিনিস চাই। আপনার ছেলের কলিজা। ডিলটা দারুণ না? বলুন রাজি তো?"
.
.
.
চলবে........................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন