#চোখের_তারা_তুই
#পর্ব ১৪
#লেখিকাঃতাইয়েবা_বিন_কেয়া
আঁধার গ্রামের সবাইকে চিকিৎসা দিয়ে হোটেলে ফিরে আসে তখন কেউ দরজা কড়া নাড়ে। দরজা খুলে দেখে দিশা দাঁড়িয়ে আছে।
" আরে দিশা আপু তুমি এখানে কোনো কাজ আছে কি "।
" শোনো আঁধার কালকে গ্রামে একটা বিয়ের অনুষ্ঠান আছে। আসলে শহরে সবাই বিয়েতে দাওয়াত করে তারপর বিয়ে খেতে যায়। কিন্তু গ্রামে একজনের বাড়িতে বিয়ে হলে সবাই আমন্ত্রণ থাকে। আর আমরা এই গ্রামে এসে সবার সাহায্য করেছি তাই পাএীর বাবা এসে আমাদের বিয়েতে দাওয়াত দিয়ে গেছ৷। তাই যেতে হবে সবাইকে রেডি হয়ে থাকবে "।
গ্রামের মানুষের একে অপরের উপর ভালোবাসা দেখে আঁধার খুশি হয়ে যায়। কিন্তু তার বিয়েতে যেতে ইচ্ছা করছে না আর ও ছোটবেলা থেকে খুব বেশি ঘুরাঘুরি করা পছন্দ করত না। তাই আঁধার বলে
" দিশা আপু যখন দাওয়াত দিয়েছে তখন যেতেতো হবে কিন্তু আমার এইসব বিয়েতে যাওয়া পছন্দ না। তোমরা যাও আমি যাবো না "।
দিশা কথা শুনে বলে
" শোনো আঁধার গ্রামের সবাই তোমার কাজে অনেক খুশি সবাই তোমার প্রশংসা করছে। তোমার ভালো ব্যবহার কাজের প্রতি নিষ্ঠা এইসব করার জন্য সবাই তোমাকে পছন্দ করে। তাই তোমাকে যেতে হবে"।
দিশার কথা শুনে আঁধার কি বলবে সবাই যখন যেতে বলছে তাকে যেতে হবে। নিজের বিয়েতে ইনজয় করতে পারে নাই কিন্তু অন্য কারো বিয়েতে ইনজয় করতে সমস্যা কোথায়।
" ওকে দিশা আপু সবাই যখন চাই তাহলে বিয়েতে যেতে রাজি আমি।আর গ্রামের মানুষের জন্য যেটুকু করা দরকার তাই করেছি "।
দিশা একটু খুশি হয়ে বলে
" আঁধার তুমি অনেক ভালো মেয়ে। স্যার যখন জুনিয়র হিসাবে তোমার নাম রেফার করেছে তখন একটু সন্দেহ হয়েছে স্যার মনে হয়েছে কোনো পারসোনাল কারনে। কিন্তু তোমার কাজ দেখে মনে হলো তুমি সত্যি যোগ্য এই কাজে আসার জন্য "।
আঁধার অনেক খুশি হয়েছে দিশার কথা শুনে। রাতের তারার দিকে তাকিয়ে রয়েছে আর নিজের মাকে মিস করছে। ওর যখন মায়ের কথা মনে পড়ে তখন আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।
" মা আজকে আমি অনেক খুশি। তুমি সবসময় চাইতে আমি যেনো ডক্টর হয় তাই ছোটবেলা থেকে পড়াশোনার বিষয়ে তুমি খুব কঠোর ছিলে।গ্রামের সবাই আমার চিকিৎসা পেয়ে অনেক খুশি হয়েছে মা। তুমি যদি আজকে থাকতে তাহলে কতো খুশি হতে "।
আঁধার একটু আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে বিয়েতে কি পড়ে যাবে সেটা ঠিক করতে থাকে। একটা লাল শাড়ি ঠিক করে পড়বে বলে।
অন্যদিকে ফারিশ আর ফাহিমকে একটা সুন্দর ঘর দিয়েছে যাতে তারা থাকতে পারে। আর গ্রামের সবাই ওদের অনেক যত্ন করছে আর টুনি সবসময় খেয়াল রাখছে ফারিশের কিছু লাগবে কি না।
" আচ্ছা ফারিশ তুই গ্রামে আসার পর থেকে ফোন নিয়ে বসে গেলি কেন। সারাদিন ফোনে কি তোর গ্রামে এসেছি একটু ঘুরে দেখব তাহ না সারাদিন ফোন "।
ফাহিমের কথা শুনে ফারিশ মাথা তুলে দাঁড়ায়। আসলে ফাহিম একটা বিরক্ত নিজের কোনো কাজ নাই আর সবসময় ওকে বিরক্ত করে।
" শোন ফাহিম আমি তোর মতো সারাক্ষণ মোবাইল নিয়ে মেয়েদের সাথে কথা বলি না। আমি একজন এমপি তাই কাজে বিজি থাকতে হয় আর আমি গ্রাম দেখতে পারব সময় করে যখন তুই পিয়ে হয়ে সব দায়িত্ব ঠিক করে পালন করবি। সারাদিন থাকবি মেয়েদের সাথে প্রেম করা নিয়ে একটা কাজ ঠিক করে করতে পারবি না "।
ফাহিম বলে
" শোন আমি নিজের কাজ খুব ভালো করে করতে পারি শুধু তুই চোখ খুলে দেখ। আর মেয়েদের সাথে সবসময় কথা বলি না আমি "।
" হুম কতো ভালো কাজ করেন আপনি সেটা আমি জানি একটা রাস্তার দায়িত্ব আপনাকে দেওয়া হয়েছে কিন্তু আপনি তার কোনো খবর রাখেন নাই। এখন রাস্তায় কোন খাতে কতো খরচ হয়েছে সেটা আমাকে জানতে হচ্ছে আর মেয়েদের সাথে আপনি সবসময় কথা বলেন এই ছোট থেকে কতো প্রেম করেছেন সেটা খুব ভালো করে জানি আমি "।
" শোন আমিতো প্রেমে করেছি কিন্তু তুই কিছু করতে পারলি না আর এখন বিয়ের পর বউয়ের থেকে দূরে থাকতে হচ্ছে। শোন যদি আমার বিয়ে হতো তাহলে সাতদিনে এক বাচ্চার বাপ হয়ে যেতাম আর তুই বাচ্চার বাপ কি করে হবি বাসর টা ঠিক মতো করতে পারলি না "।
ফাহিমের কথা শুনে ফারিশ অবাক সাতদিনে এক বাচ্চার বাপ হওয়া কি সম্ভব। ফাহিমের সাথে কথা বললে নিজের মান সম্মান যাবে সেটা বুঝতে পারে। তাই উঠে চলে যায়।
" তুই থাক আমি যায় আর ফোন করে তোর মাকে বলব যেনো তাড়াতাড়ি তোর বিয়ে দেয়। তাহলে তুই সাতদিনে এক বাচ্চার বাপ হতে পারবি
সকাল হয়ে যায় আঁধার রেডি হয়ে নিচে আসে বিয়ে বাড়িতে যেতে হবে। সবাই বেরিয়ে পরে। বিয়ে বাড়িতে পৌঁছাতে গ্রামের সকলে তাদের অনেক সুন্দর করে আপ্যায়ন করে।
" আরে তোমরা এসে পড়েছে্ আসো আসো "।
সবাই ঘরে ঢুকে যায় তখন আঁধার নিজের রুমে যায় বাকি সবাই নিচে আছে কিন্তু আঁধারের দাঁড়িয়ে থেকে ভালো লাগছে না। আসলে বিয়ে বাড়ি কখনো এতো পছন্দ করে না সে তবে তাদের রেস্ট নেওয়ার জন্য একটা রুমে দেওয়া হয়ে ছে। কিন্তু অনেক রুম কোন রুমে ঢুকবে সেটা বুঝতে পারে না।
" এখানে অনেক রুম আছে কিন্তু কোন রুমে যাবো সেটা বুঝতে পারছি না। আচ্ছা এই রুমে অনেক সুন্দর এখানে ঢুকে যায়।
ফারিশ বাহিরে থেকে রুমে আসে আসলে ফাহিম এতো বকবক করছিলো তাই বাহিরে চলে গেছে। কিন্তু এখন ফাহিম বাহিরে আছে তাই রুমে আসে কিন্তু হঠাৎ কোনো অপরিচিত মহিলাকে দেখে অবাক হয় ফারিশ। ফারিশ বলে
" আপনি কে আমার রুমে কি করেন। আর পিছন দিকে তাকিয়ে আছেন কোনো এই দিকে তাকান।
আঁধার কারো আওয়াজ শুনে অবাক হযে যায় কিন্তু গলার সুর পরিচিত মনে হয়। তাই পিছনে ফিরে তাকিয়ে ফারিশকে দেখে অবাক হয়ে যায়
" আপনি এখানে কি করেন। আমি কি সপ্ন দেখছি "।
ফারিশ ওকে দেখে অবাক হয়ে যায়। আঁধার এখানে কি করছে এই বিয়ে বাড়িতে।
"আঁধার আপনি এখানে কি করেন। আপনার তো মেডিক্যাল কাজে কোথাও যাওয়ার কথা ছিলো তাহলে এই বিয়ে বাড়িতে কেনো "।
" হুম মেডিক্যাল কাজে এসেছি এই গ্রামে এখানে সবাইকে দাওয়াত দিয়েছে তাই এসেছি। কিন্তু আপনার শহরে থাকার কথা ছিলো আপনি এখানে কোনো "।
ফারিশ এখন বুঝতে পারে তারমানে এই গ্রামে আঁধার কাজে এসেছে। ফারিশ বলে
" আসলে এই গ্রামে এসেছি টুনির বিয়েতে টুনির বাবা আমাদের পুরানো লোক। তাই টুনির বিয়েত আসা "।
আঁধার যখন ফারিশের সাথে কথা বলতে থাকে তখন টুনি ঘরে আসে।
" আরে তুমি সেই মেয়ে মেডিক্যাল কাজে এসেছো। কিন্তু তুমি এই রুমে কি করছো তোমাদের রুম পাশে আছে"।
"ওহ আসলে এখানে অনেক রুম তাই ভুল করে ফেলেছি। আমি নিজের রুমে চলে যাচ্ছি আর ফারিশ আপনাকে বিরক্ত করে থাকলে সরি "।
ফারিশের নাম শুনে টুনি অবাক হয়ে যায়। আঁধার এই নাম কি করে যানে
" তুমি ফারিশ ভাইয়ার নাম কি করে যানো। তোমরা কি পূর্ব পরিচিত "।
চলবে.......................