রোদরঞ্জন - পর্ব ৪৪ - আশফি শেহরীন চিত্রা - ধারাবাহিক গল্প


‘এটা আমি প্রথমে একদমই ধরতে পারিনি। ইনানের অস্বাভাবিক ব্যবহার প্রথম দিন থেকেই সন্দেহজনক লাগলে ওকে চোখে চোখে রাখি সবসময়।’ তাজবীর দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বলতে লাগে। নির্বিকার গলা তার।

‘বারান্দায় একা একা এসে কথা বলতো‌, কাপল ডান্স করতো, এমনভাবে কথা বলত যেন ওর সাথে জেহফিল আছে। আমার চেয়ে থাকা ইনান লক্ষ্য করেছিল অবশ্য, তবে ও হয়তো ভেবেছিল আমি ওকে বিরক্ত করার চেষ্টা করছি বা ওর পিছু নিচ্ছি। তাই ও রেগেও গিয়েছিল। আর আমার ধারণা ওর মনের মধ্যে গেঁথে গিয়েছিল আমিও শরৎএর মতো কেউ একজন‌। ইনানের মধ্যে থাকা জেহফিলও ভেবেছে সেটা। যেহেতু ওরা কানেক্টেড। সেজন্য জেহফিল, আই মিন ইনান আমাকে মা’রার চেষ্টা করে। আমি যা ভেবেছি তাই সত্যি হলো। ও পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত।’

ইফাজ খান এবার তাজবীরকে প্রশ্ন করলেন, ‘তুমি কেন আমার মেয়ের উপর নজরদারি করছো? আর কেনই বা আমার পেছনে লেগেছ? উদ্দেশ্য কী তোমার?’ 

এই পর্যায়ে কিছুটা রেগে যান ইফাজ। তাজবীরের কারণেই আজকের সত্যটা সবার সামনে এলো, তাও জঘন্যভাবে। তাজবীর যদি তার ভিডিও না করতো তাহলে প্রমাণও থাকতো না, ইনান আর তিনি বেঁচেও যেতেন। 

তাজবীর বাঁকা হাসে। মশকরা করে বলল, ‘এই ধরুন আপনার কুকর্মের শাস্তি দেওয়াটাই উদ্দেশ্য ছিল।’

‘মানে?’ 

‘আরে আরে, ঘামছেন কেন?’ চিন্তিত হওয়ার ভান করে বলল তাজবীর।

ইফাজ কপালে হাত দিয়ে দেখলেন তিনি আসলেই ঘামছেন। ঢোক গিলে বললেন, ‘বাজে বকো না।’

‘এসব আমার ধাতে নেই‌। তবে একটা কথা বলি, আপনার থেকে প্রিয় জিনিস কেড়ে নেওয়াই ছিল আমার মেইন উদ্দেশ্য। আপনি শারীরিক শাস্তি পান কী পান না তা আমার কাছে ম্যাটার করে না। কিন্তু মানসিকভাবে আপনাকে ভেঙে ফেলতে চেয়েছি আমি। অ্যান্ড আই গেস, সাক্সেসও হয়েছি। আপনি সারাজীবন অনুতপ্ত হয়ে ধুঁকে ধুঁকে ম’রবেন, এটাই আমার চাওয়া।’

ইফাজ খানের চোখ অক্ষি কোটর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম। এই ছেলেকে তিনি ভালো করে চিনেনও অবধি না। শুধু ইনানের পড়শী হিসেবে যা-ই একটু চোখে চোখেষ পড়তো‌। আজকে তো এই ছেলেই তাদের কল দিয়ে ডেকে এনেছিল। কে ও? কীসের প্রতিশোধ নিতে এতটা ছটফট করছে এই ছেলে?

পলক ইফাজ আর তাজবীরের ব্যক্তিগত কথায় একদমই মাথা ঘামায় না। তার চিন্তা ইনানকে নিয়ে। নতুন করে ইনানকে পাবার আসায় উত্তেজিত সে, তবে কঠিন হবে অবশ্য! ইনানকে আগের রূপে ফিরিয়ে আনতে কত কংক্রিটের পথ অতিক্রম করতে হবে জানে না সে, তবে সব হাসিমুখে জয় করবে সে, শুধু ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের করে পাবার আশায়‌। তবে জেহফিলের লা’শ খুঁজে না পাওয়া অবধি ভবিষ্যৎ আগাম কল্পনা করা যাবে না। কিন্তু…কিন্তু পলকের মন বলছে জেহফিল নেই। একজন আহত মানুষের পক্ষে সম্ভব না বাঁধ দেওয়া নদীর তীরে ওঠা। 

‘আপনারা আপনাদের ব্যক্তিগত আক্রোশ ব্যক্তিগতভাবেই নাহয় মিটিয়ে নিবেন। এখন মূল বিষয় যেটা সেটা হচ্ছে ইনানের সুস্থতা এবং জেহফিলের লাশ খুঁজে বের করা…’

‘কার লাশ??’

সকলে হতচকিত হয়ে রুমের দরজার দিকে তাকায়। দেখল ইনান শূন্য চোখে তাকিয়ে আছে‌। ধীরে ধীরে সে দরজা ধরে বসে পড়ল। ইফাজ বিস্ফারিত চাহনিতে তাকায়। ইনান কি তবে তাদের বলা সব কথা শুনে ফেলেছে?? তাজবীর নিরুদ্বেগ ভঙ্গিতে ইফাজের দিকে তাকায়। বুড়োর ভাবখানা এমন যেন ইনান সত্যিটা শুনে পাপ করে ফেলেছে। সে প্রথম থেকেই দেখেছিল ইনান রুমের দরজা হালকা ফাঁকা রেখে তাদের কথা শুনছে। তাও কিছু বলল না সে, দেখুক, সবটা জানুক। আজ নাহয় কাল তো জানতেই হতো!

‘বাবা, জেহফিল কোথায় বাবা?’ বিকারহীন কণ্ঠ ইনানের। তার গলা থেকে থেকে কাঁপছে।

‘আসলে..ইনান…’

পাগলের মতো হাত পা ছোড়াছুড়ি করতে লাগল ইনান, গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলল, ‘জেহফিল কোথায়? আমার জেহফিল কোথায়?’ 

পলক এগিয়ে যায়, নরম সুরে বলল, ‘ইনান প্লিজ। কথা শুনো।’

‘জেহফিল মা’রা যায়নি। উনি মা’রা যায়নি। আপনারা সবাই মিথ্যা বলছেন। উনি মা’রা গেলে এতদিন কে ছিল আমার সাথে? ওনার আত্মা?’ চেঁচিয়ে উঠে ইনান।

‘আমরা কেউই বলতে পারছি না জেহফিল বেঁচে আছে নাকি ম..’

‘বেঁচে আছে, উনি বেঁচে আছে, কানে গেছে আমার কথা? একদম বাজে কথা বলবেন না। উনি বেঁচে আছে তার প্রমাণও আছে আমার কাছে।’

এই বলে ইনান পাগলের মতো আর্ট রুমে গিয়ে একটা বড় ক্যানভাস নিয়ে আসলো, সেটা পলকের মুখের সামনে ধরে গলা উঁচিয়ে বলল,

‘এই দেখুন, জেহফিল এঁকেছে আমাকে। কয়েকদিন আগেই এঁকেছে। উনি ছাড়া আর কে এখানে আর্ট করে? এই ছবিটা উনি না আঁকলে কি ওনার আত্মা এসে এঁকে গেছে?’

সবাই দেখল, ক্যানভাসে ইনানের পোর্ট্রেট আঁকা। গালে হাত দিয়ে বসে আছে ইনান, তবে চিত্রটা আনাড়ি হাতে আঁকা। দেখেই বোঝা যায় জেহফিলের মতো পেশাদার কেউ নয় বরং, নতুন আঁকতে শেখা বাচ্চাদের মতো আঁকা ছবিটা। পলক দীর্ঘশ্বাস ফেলল। কল্পনার জেহফিল চরিত্রটা তথা ইনান নিজেই এঁকেছে ছবিটা। পলক ক্যানভাস হাতে নিয়ে সোফায় রাখল। ইনানের কাঁধ ঝাঁকিয়ে ইনানের মতোই চেঁচিয়ে বলল,

‘এটা জেহফিল আঁকেনি, তুমি এঁকেছো তুমি। তোমার ভেতর থাকা জেহফিল চরিত্রটা এঁকেছে। ভালো করে দেখো। চোখ খুলে দেখো।’

ইনানকে বার কয়েক ঝাঁকাল পলক। ইনান স্ট্যাচুর মতো সটান দাঁড়িয়ে থাকল, ঘোলা চোখে দেখল ক্যানভাসের ছবিটা। এলোমেলোভাবে আঁকা একটা ছবি। পলক তারপর মোবাইলে ভিডিওগুলো দেখালো যেখানে ইনান একা একা হাসছে, কথা বলছে নাচছে। 

‘দেখো, নিজ চোখে দেখো‌। এটা তুমি। একা একা হাসছো, কথা বলছো। এইখানে তোমার সাথেই কেউ নেই। তুমি একা। সম্পূর্ণ একা। জেহফিল বলে কেউ নেই। ছিল। তবে এখন নেই। বোঝা গেছে? তুমি জেহফিলকে হারিয়ে ওর শোকে নিজেই জেহফিল হয়ে গেছ। শুনেছো তো সব কথা‌।’

পলকের কথাগুলো হাতুড়ির ন্যায় ইনানের হৃদয়ে জোরে জোরে আঘাত করল। প্রত্যেকটা শব্দ..প্রত্যেকটা অক্ষর। জেহফিল নেই..জেহফিল নেই…। সে প্রাণহীন মুখ তুলল ধীরে ধীরে,বাবার দিকে চেয়ে বলে,

‘আমি কি পাগল বাবা? ও বাবা…আমি…আমি কি সত্যিই পাগল?? আমার জেহফিল…’

পলক ইনানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো, ‘ভেঙে পড়ো না ইনান। তুমি বুঝতে পেরেছ তোমার মানসিক অবস্থা। এখন তুমিই একমাত্র তোমাকে সাহায্য করতে পারবে এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে‌। আমি প্রমিস করছি তোমাকে সুস্থ করে তুলব, শুধু তুমি নিজেকে একটু সামলাও। নিজেকে আশ্বাস দাও তুমি সুস্থ হবে।’

পলকের কথা কানে গেল না ইনানের। সে হাঁটু ভেঙে বসে পড়ল। হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল। ক্যানভাস জড়িয়ে। যেন জেহফিলকে জড়িয়ে ধরে আছে সে। জেহফিলের ছোঁয়া, জেহফিল মৃদু স্বর, জেহফিলের হাসি, জেহফিলের উপস্থিতি…তবে কি সবটাই ইনানের ভ্রম ছিল?? জেহফিল ভেবে নিজের সাথেই নিজে সংসার করে আসছিল? জেহফিল নেই…ভাবনা মাথায় আসতেই ইনান ডুকরে কেঁদে উঠে। দুই হাতে চুল টানতে থাকে। ‘আমার জেহফিল..জেহফিল..’ জপতে জপতে কান্না করে সে। গগন কাঁপিয়ে। জেহফিল আর নেই…তার জেহফিল…আগের মতো ভালোবাসবে না, শাসন করবে না…যত্ন করবে না…ধমকাবে না…বুকে জড়িয়ে ধরবে না… বলবে না..’আমার বাটারফ্লাই’

‘আমার বাটারফ্লাই।’

চমকে উঠে ইনান। শরীর শিহরিত হয় চেনা মানুষের আওয়াজে। কান্না থেমে যায়। মাথা উঠিয়ে দেখল তার সামনে মেঝেতে বসে সোফায় মাথা ঠেকিয়ে আছে, ঘাড় কাত করে ইনানের দিকে তাকিয়ে আছে জেহফিল। জেহফিলের ঘাড় সমান চুলগুলো দোল খাচ্ছে মৃদু বাতাসে‌। এই রাতের বেলাতেও যেন এক টুকরো মৃদু সোনালী আলো জেহফিলের মুখে লুটোপুটি খাচ্ছে, জেহফিলের পরনে সাদা শার্ট। নৈস্বর্গিক জেহফিলকে দেখে ইনান হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে যায়। জেহফিলের কাছে এসে গালে হাত রাখে ইনান। সেই স্পর্শ, শক্ত চোয়াল, কঠিন গাল, নরম ঠোঁট, এইতো তার জেহফিল…তার জেহফিল তার সামনে…অথচ তারা বলে কিনা জেহফিল মা’রা…না না, এসব বাজে কথা বলবে না ইনান। ইনান নাকি পাগল, পাগল তো সবাই। চোখের সামনে জেহফিল বসে আছে আর তারা জেহফিলকে নিয়ে বাজে বকছে! ধিক্ সবাইকে!

‘আপনি এতক্ষণ কোথায় ছিলেন জেহফিল?’

‘এখানেই তো ছিলাম। তোমার কাছে। তোমার পাশে।’

‘তাই না? আপনি এখানেই ছিলেন অথচ ওনারা কী বলেছে শুনেছেন? সবাই পাগল জেহফিল। সবাই পাগল হয়ে গেছে। ওনারা কেউই আপনার ভালো চায় না, আমাদের ভালো চায় না, চলুন না দূরে কোথাও চলে যাই, যেখানে শুধু আমি আর আপনি থাকবো…’

রুমের ব্যক্তিবর্গ সবাই দেখল ইনানের একা একা ব্যক্তিত্ব বদল হওয়া কথাবার্তা। ইফাজ মুখ চেপে কেঁদে ফেললেন,

‘সব আমার দোষ, সব আমার। আমি নিজ হাতে মেয়েটাকে শেষ করলাম‌। মেয়েটার জীবন নষ্ট করলাম।’
কাওসার ইফাজকে ধরে সামলান। এই মুহূর্তে কী বলে সান্ত্বনা দিবেন উনি?

পলক কোমড়ে হাত রেখে হতাশ চোখে চায় ইফাজে দিকে। ইফাজের সামনে গিয়ে বলল,

‘সবকিছুরই একটা শেষ থাকে ইফাজ স্যার। এখন সময় এসেছে ইনানের ব্যাপারটাও ক্লোজ করার। আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব ইনানকে ভালো কোনো সাইকিয়াট্রিস্ট দেখিয়ে সুস্থ করার। ওকে আদালতে মেন্টালি অ্যাবনরমাল প্রমাণ করলে ওর শাস্তি এড়ানো যাবে। কিন্তু আপনাকে..’

‘আমি সব শাস্তি মেনে নেব আমার। শুধু আমার মেয়েটাকে একটু সেফে রাখো। ওকে একটু চোখে চোখে রাখো, ওর যাতে কোনো শাস্তি না হয় আমি শুধু এটাই চাই। জেলের মুখ যাতে ওকে দেখতে না হয়। দয়া করো পলক..দয়া করো।’

পলকের হাত জড়িয়ে কাঁদতে লাগলেন ইফাজ। তিনি সব শাস্তি মেনে নিতে রাজি আছেন। দরকার হলে তার জীবনের বিনিময়েও ইনানকে বাঁচাতে রাজি আছেন। ইনান একটু সুস্থ, সুখে শান্তিতে থাকুক সেটাই তার চাওয়া‌।

কাওসার পলকের কাছে এসে মিনতি করলেন,

‘পলক, ব্যাপারটা ধামাচাপা দেওয়া যায় না? আমি জানি এটা অন্যায় কিন্তু আমরা বাদে কেউ যেহেতু জানে না তাহলে একটু দেখো না তুমি.. ইফাজ ভালো থাকবে না জেলে। এমনিতেও ওর শরীরের অবস্থা ভালো নেই। মেয়ের চিন্তায় আরো খারাপ হয়ে গেছে। একটু ম্যানেজ করো না।’

‘করতে পারতাম। কিন্তু শরৎএর বাবা তো বসে নেই। ওনার ছেলের মৃ’ত্যু উনি এত সহজে মেনে নেবেন না। উনি ঠিকই খতিয়ে দেখবেন।’

তাজবীর মাঝখান দিয়ে বলে উঠল, ‘শরৎএর ব্যাপারটাও ধামাচাপা দেয়া যাবে।’

‘নাহ। অসম্ভব হয়ে যাবে‌।’

তাজবীর মোবাইলে আরেকটা ভিডিও অন করল, যেখানে দেখা যাচ্ছে, শরৎ কয়েকবার ইনানের বাড়িতে এসে ঘুরঘুর করছে আর তার সাথেই গাড়িতে ছিল তার বোন রুহি। দুজনকে একসাথে ইনানের বাড়ির কাছে হাঁটাচলা করতে দেখা যাচ্ছে। 

‘শরৎকে আশকারা দিয়েছে ওর বোন। ওরা দুজন বেশ কয়েকবার এসেছিল, ইনানের বাড়ির মতিগতি দেখার জন্য। ওর বোনকে যদি চেপে ধরেন, আর শরৎএর মৃত্যুর জন্য ওকে ব্লেম করেন দেখবেন ব্যাপারটা দুইদিনেই খালাস হয়ে যাবে। রুহিও তো মডেল, ও ওর মডেলিং লাইফে কোনো কলঙ্ক চাইবে না নিশ্চয়ই।’

পলকের একদম মাথায়ই ছিল না ব্যাপারটা। রুহি যে ইনানকে দেখতে পারতো না সেটা সে আগে থেকেই জানতো। তার কারণ ছিল পলক ইনানকে ভালোবাসে রুহির সহ্য হতো না। দুই ভাই বোনের কেউই ইনানকে ভালো নজরে দেখত না। সুতরাং সে রুহিকে একটাবারও সন্দেহ করল না কেন?

রুহিকে কব্জা করা তার বা হাতের খেল। রুহিকে এই ভিডিও পাঠিয়ে কয়েকটা থ্রেট দিলে রুহি নিজেই তার বাবাকে শরৎএর ব্যাপারটা বন্ধ করে দিতে বলবে। এর জন্য সে তার মৃত ভাইয়ের কুকীর্তি সব বলে দিয়েও বাবাকে সরিয়ে নিতে পারে। রুহি নিজের ক্যারিয়ারের জন্য সব করতে পারে। পাবলিক ইমেজ তার কাছে তার ফ্যামিলির চেয়েও বড়। আর শরৎএর ব্যাপারটা নিয়ে এক দুই মাস হাউকাউ চলার পর এমনিতেও চুপ হয়ে যাবে সব। এমনই তো হয়…

‘তাহলে আর কী? ইনানকে সুস্থ করার সব ব্যবস্থা আমি করছি। আপনিও বেঁচে গেলেন এ যাত্রায় ইফাজ স্যার। ভাগ্য ভালো আপনার। একজন সৎ পুলিশ অফিসার হয়েও অসৎ একটা কাজ করতে হচ্ছে আমাকে…ঠিক আপনার মতো…’

পলক আর কিছু না বলেই কাওসারের সাহায্যে ইনানকে চেতনাহীন করে ওকে কোলে তুলে নিয়ে চলে যায়। ইফাজ তখনো অবাক চোখে তাজবীরের দিকে তাকিয়ে আছেন। এই ছেলে তাকে ফাঁসালো, আবার তাকে বাঁচালো। আসলেই ও চাইছেটা কী?

কম্পিত গলায় বললেন, ‘তুমি…তুমি কী চাও আমার থেকে? কেন এমন করছো?’ 

তাজবীর চুলগুলো ব্যাকব্রাশ করলো। ঠোঁট চেপে হেসে বলল,

‘কী চাই আমি বলুন তো? আপনার জেলে পঁচে মরাটা দেখতে আমার খুব কষ্ট হতো জানেন। এত বড় শাস্তি দেওয়ার মন আমার নেই। এত নিষ্ঠুর না আমি। উই আর ফ্যামিলি দো।’

ইফাজের দৃষ্টিতে চমক, ‘কী..কী বললে তুমি?’

‘কী বললাম?’ নিষ্পাপ স্বর তাজবীরের।

ইফাজ এতটাই চমকান যে কিছুই বলতে পারছিলেন না, গলায় কথা বেঁধে যাচ্ছিল।

‘ইটস ওকে, এত ভয় পাচ্ছেন কেন? ভয় পাওয়ার তো কিছুই নেই। এখন আপনি সেফ। টোটালি সেফ। তাই না, বা…বা..!’ টেনে টেনে সুর করে বলল তাজবীর।
.
.
.
চলবে…..........................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন