শ্রীঘর
পর্ব ০১
আতিয়া আদিবা
.
.
.
আপনি যখন বাসায় থাকেন না তখন ভাই আমার শরীরে হাত দাওয়ার চেষ্টা করে আফা।_
একথা বলে জমিলা হাত দিয়ে মুখ ঢেকে নাকি কান্না জুড়ে দিলো। দিবা পাথরের মতো রান্নাঘরের দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। জমিলার কথা কেনো যেনো তার বিশ্বাস হচ্ছে না। সাহিলকে সে চিনে। খুব কাছের থেকে চিনে। ও কখনো মেয়েদের দিকে চোখ তুলে তাঁকায় পর্যন্ত না। সেই সাহিল জমিলার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করবে? এ হতেই পারে না। দিবার চুপ করে থাকা হয়তো জমিলাকে একটু বেশিই ভাবিয়ে তুললো। সে ভাঙ্গা ভাঙ্গা কন্ঠে বললো,
" ভাইরে কত ভালো মানুষ ভাবছিলাম! আপনাগো মধ্যে কত ভালোবাসা, কত প্রেম। আমি তো সবসময় ভাবতাম ভাই আমারে বোনের চোখে দেখে। কিন্তু আমি কি জানতাম ভাইয়ের মনে এইসব..."
জমিলা কথা শেষ না করেই আবার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো। দিবার হঠাৎ করে গা গুলিয়ে উঠলো। রান্নাঘর ছেড়ে দ্রুত নিজের রুমে চলে এলো সে। ওয়াশরুমের দরজা লাগিয়ে বেসিং এর ওপর মুখ রাখতেই হড়হড় করে বমি করে দিলো। সকালে যা খেয়েছে তার একটি দানাও হজম হয় নি। কল ছেড়ে চোখে মুখে পানির ঝাঁপটা দিলো। বেসিং এর ওপর কাঁচের তাকে প্রেগনেন্সি কিট রাখা। আজ সকালেই পরীক্ষা করেছে। রেজাল্ট পজিটিভ। সাহিল বাবা হতে যাচ্ছে। এই খবরটা জানার পর সাহিলের প্রতিক্রিয়া কি হবে তা নিয়ে দিবা খুব উত্তেজিত ছিলো। এখন আর সেই উত্তেজনা কাজ করছে না। দম বন্ধ হয়ে আসছে। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। খুব কান্না পাচ্ছে। যদি জমিলার কথা সত্যি হয়? যদি সত্যি সাহিল এরকমটা করে থাকে? জামিলার গায়ে হাত দেওয়ার চেষ্টা করে থাকে! তাহলে দিবা কি সিদ্ধান্ত নিবে? এসব ভাবতে ভাবতে দিবার গা আবার গুলিয়ে উঠলো। মুখ চেপে বিছানা ছেড়ে উঠে পুনরায় দৌঁড়ে ওয়াশরুমে গেলো সে।
কয়েকদিন আগে।
রাত দুইটা বেজে পঁনেরো মিনিট। রুমের লাইট অফ। পূর্ব দিকের খোলা জানালা ভেদ করে আসছে পূবালী হাওয়া। দিবা সাহিলের বুকে শুয়ে গুনগুন করে রবীন্দ্রসংগীত গাইছে_
" চির-পুরানো চাঁদ,
চিরদিবস এমনি থেকো আমার এই সাধ ।
পুরানো হাসি পুরানো সুধা মিটায় মম পুরানো ক্ষুধা, নূতন কোনো চকোর যেন পায় না পরসাদ।"
সাহিল চোখ বন্ধ করে গান শুনছে। দিবা গান গাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে সাহিলকে দেখছে। কি সুন্দর চোখের পাপড়ি গুলো মিটমিট করে। মাঝে মাঝে আবার মাথা নাড়িয়ে নাড়িয়ে নাক দিয়ে সুরও দেয়। গান শেষ করার সাথে সাথে সাহিল বললো,
" দিবা।"
" হুম বলো।"
" সামনে আমাদের দ্বিতীয় বিবাহবার্ষিকী।"
" হুম।"
" একটা কথা ভাবছিলাম।"
" কি কথা?"
" আমাদের পরিবারের সদস্য অফিসিয়ালি বাড়ালে কেমন হয়?"
দিবা চাদর ভালো করে গায়ে জড়িয়ে আধশোয়া হয়ে বসে চোখ পাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
" মানেটা কি?"
" মানে ওই দুইজন থেকে তিনজন।"
"কি বলতে চাইছো পরিষ্কার করে বলো।"
" চলোনা বাবু নেই। গুটগুট করে হাঁটবে। তোমাকে মুম্মুম বলবে, আমাকে পাপা বলবে।"
" ইস! শখ কত ছেলের।"
সাহিল একটু গম্ভীর গলায় বললো,
" আই মিন্ট ইট, দিবা।"
" সাহিল, আমরা এখনো সংসার গুছিয়ে উঠতে পারিনি। কত কিছু বাকি আছে! তাছাড়া আমরা মানসিক ভাবে প্রস্তুত নই। খরচের বিষয়ও আছে।"
"পরিবারে একজন মানুষ বাড়লে কি না খেয়ে মরবো নাকি? মাসখানিকের মধ্যে আমার প্রমোশন! আর মানসিক ভাবে প্রস্তুতি যেকোনো সময় নেওয়া যায়। এই যে আমাকে দেখো। আমি বাবা হবো। এক দুই তিন এবং আমি মানসিক ভাবে প্রস্তুত। দেখেছো? ইজি!"
" হ্যাঁ। খুব দেখলাম। আমি মা হবো না। এক দুই তিন এবং আমি মা হওয়ার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত নই। দেখেছো? নট সো ইজি!"
সাহিল নরম গলায় বললো,
" এই একটু ভেবে দেখো না, প্লিজ?"
দিবা কোনো উত্তর না দিয়ে উলটো দিক ঘুরে শুয়ে পড়লো। সাহিল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
"আচ্ছা, তুমি যা বলবে তাই হবে। এদিকে ঘুরো। ঘুরো না।"
দিবা সাহিলের দিকে ঘুরে শুলো। সাহিল কানে ধরে বললো,
" সর্যি।"
দিবা হেসে বললো,
" এখন কি ঘুমাবে? নাকি আবার উলটো ঘুরে শুবো?"
" না না! এই যে এখনি ঘুমাচ্ছি।"
একথা বলেই সাহিল ঘুমের ভান ধরে নাক ডাকতে শুরু করলো। দিবা খিলখিলিয়ে হাসছে! খুব হাসছে!
.
.
.
চলবে..........................