তুমি রবে নীরবে - পর্ব ০১ - নাদিয়া সাউদ - ধারাবাহিক গল্প


!!১!!

বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে সবে রিকশা থেকে নামলো কুহু।ব্যাগ হাতড়ে টাকা নেওয়ার সময় ভরাট এক পুরুষালি কন্ঠস্বর তাকে থামিয়ে দিল!সামনে থাকা লোকটাকে দেখার পূর্বে নিজের মাথার উপর তাকাল সে।নীলচে রঙা ছাতা ধরা।আশ্চর্য হয়ে গেল মুহূর্তে!
সামনে দৃষ্টি ফেলতেই স্বগোতক্তি করলো,
'রওনক ভাই'!

মিনিট এক যেন ভ্রমেই কাটলো কুহুর।ততক্ষণে ভাড়া মিটিয়ে রিকশাওয়ালাকে বিদায় করে দিয়েছে রওনক!বৃষ্টির সাথে শিরশিরে বাতাসটা গায়ে কাঁটা তুলল কুহুর!তখনো বিস্মিত দৃষ্টি ফেলে রওনককে দেখছে সে!এই ছেলেটা তাকে সাহায্য করতে এসেছে,ব্যাপারটা ঠিক হজম হচ্ছে না!রওনকের মাথার উপরটা উন্মুক্ত।অবলীলায় ভিজছে সে।কপালে লেপ্টে আছে চুল।ফর্সা নাকের ডগা বেয়ে জল ঝরছে।ঘোলাটে চশমা ভেদ করে চোখদুটো দেখতে পারলো না কুহু।তবে কপালে সুক্ষ্ম ভাজ পরেছে বোঝা গেল!থমথমে গম্ভীর স্বরে বলল রওনক,
"তোমার যে বোধবুদ্ধি নেই সেটা আরো একবার প্রমাণ করলে!এখন প্রায়ই বৃষ্টি হয়।অন্তত ছাতা নিয়ে বেরোনো উচিৎ ছিল!

সবসময়ের মতো এবারও রওনকের তিক্ত কথা ভাল লাগলো না কুহুর।চোখেমুখে রাগ টেনে বলল সে,
" আপনাকে কে বলেছে নিজের ছাতা নিয়ে এসে দয়া দেখাতে?রিকশাভাড়া কেন দিলেন?এগুলো শোধবোধ করার জন্য এখন কথা শোনাচ্ছেন!

কুহুর ঝাঁঝাল স্বর চোখমুখ কাঠিন্যে করে দিল রওনকের।কিঞ্চিৎ থতমত খেল কুহু!এ চোখের ভাষা সে সহজেই বুঝতে পারে।এমুহূর্তে যে লোকটা মনে মনে তাকে বেয়াদব,নির্বোধ বলছে এটুকু বুঝতে বাকি নেই।টিচার হিসেবে রওনক তাঁর থেকে যথাযথ সম্মান পাওয়ার মতো ব্যাক্তি।তবে সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ে।এখানে নয়।নিজের মতো ভেবে নিয়ে,হনহন করে সামনে যাত্রী ছাউনিতে গিয়ে দাঁড়াল কুহু।এক্ষুনি বাস ধরতে হবে তাকে।আরো বেশ কয়েকজন লাইনে দাঁড়িয়ে আছে বাসের অপেক্ষায়।ভেজা গা ঝেড়ে নিল কুহু।আশ্বিন মাসে বৃষ্টির সাথে ঠান্ডা বাতাস থাকে।মুহূর্তে মাথা ধরে গেল!সামনেই পরীক্ষা।আজকে এডমিট কার্ড নেওয়ার শেষ তারিখ।কেন যে দুদিন আগে রিশার সাথে এলো না।তাহলে আজকে একা আসতে হতো না তাঁকে।ঠান্ডায় হাঁচি আসছে কুহু'র।দ্বিতীয় বার আর রওনকের দিকে দৃষ্টিপাত করলো না সে।মিনিট পাঁচের মধ্যে সামনে সিএনজি এসে থামলো।গাড়ি থেকে রওনককে বেরুতে দেখে আরেক দফা চমকে গেল কুহু!লোকটা একেবারে ভিজে চুপচুপ হয়ে গেছে!আকাশী রঙা চেইক শার্টটা ভিজে গায়ের সঙ্গে লেপ্টে গেছে একদম।থমথমে গলায় কুহুকে সিএনজিতে উঠে বসতে বলল রওনক।চোখমুখ শক্ত করে বলল কুহু,
"অনেক উপকার করেছেন স্যার।আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।এখন এই সিএনজি নিয়ে আপনি চলে যান।আমি বাস ধরে নিব।ধন্যবাদ।

সফেদ রঙা কুর্তি পরেছে কুহু।গলায় স্কার্ফ ঝোলানো।ভিজে যাওয়ার দরুন শরীরের ভাজ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।আশেপাশে কয়েকটা ছেলেপেলে আড় চোখে দেখছে!বিষয়টা দৃষ্টিগোচর হলো না রওনকের।কপালে থাকা মোটা রগগুলো দৃশ্যমান হলো।রাগত্ব দৃষ্টি ফেলে কুহুর হাত চেপে ধরল শক্তপোক্ত পুরুষালি হাতে।বিস্ময়ে কথা বলতে পারলো না কুহু!রওনকের এই রূপ তার কাছে নব্য!একপ্রকার টেনে নিয়ে সিএনজির সামনে চলে আসলো রওনক।রাগে শরীর কাঁপছে কুহুর!দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
"আশ্চর্য!কি শুরু করেছেন রাস্তাঘাটে?বলেছি তো বাস ধরে নেব!

চোখ বন্ধ করে প্রলম্বিত শ্বাস ফেলল রওনক।নিজেকে ধাতস্থ করে নিয়ে বলল,
"বাসায় চলে যাও তুমি।এডমিট কার্ডের ব্যাপারটা আমি দেখছি।এমনিতে তো পড়াশোনা ঠিকঠাক করো না।সামনে পরীক্ষা।জ্বর বাঁধিয়ে নিলে নিশ্চিত ইমপ্রুভমেন্ট দিতে হবে।আর আমার সাবজেক্টে কোনো স্টুডেন্টের রেজাল্ট খারাপ হোক আমি চাই না।

রওনকের কথার প্রতিউত্তরে কিরুপ প্রতিক্রিয়া জানাবে বুঝতে পারলো না কুহু!তার রেজাল্ট খারাপ নিয়ে প্রায়ই কথা শোনায় লোকটা!কারো দূর্বল জায়গায় আঘাত করে কথা শোনানো নিশ্চয়ই উচিৎ না!একজন টিচার হয়েও সে জ্ঞানটুকু নেই লোকটার।
নাকের পাটা ফুলিয়ে সিএনজিতে উঠে বসলো কুহু।এমনিতেও ভেজা গায়ে ভার্সিটিতে যেতে অসস্থি কাজ করছিল!অপরপাশ দিয়ে সিএনজিতে উঠে বসলো রওনক।যতেষ্ট দূরত্ব বজায় রাখল।কুহু মনে মনে বলল, একবার শুধু বাড়ি পৌছাক।রিশাকে এসব না বলা অব্ধি শান্তি নেই।তার বদরাগী,কলহপ্রিয় ভাই কি জগড়া করার জন্য আর কাউকে খুঁজে পায়না?কুহু তার কোন জনমের শত্রু ছিল?এই বৃষ্টির মধ্যেও বদ'টা চলে এসেছে এখানে!

" তোমার ড্রেসিং সেন্স খুবই জঘন্য!তার উপর জামায় ময়লা লেগে আছে!এটা পরেই চলে যাচ্ছিলে ভার্সিটি?

রওনকের কথায় অত্যাশ্চর্য হয়ে পাশ ফিরে তাকাল কুহু!এই নিয়ে জামাটা দুদিন পরেছে সে।আহামরি খারাপ তো লাগছে না তাকে।মোট কথা এই লোকের বচসা করতেই হবে!রওনক নিশ্চুপ তাকিয়ে আছে সামনে।পাশে থাকা অগ্নি কন্যার রাগের উত্তাপ ঠিক'ই টের পাচ্ছে।এখন কিছু বলতে গেলে নির্ঘাত রক্ষা নেই!রাগে ফোঁস ফোঁস করলো কুহু।চোখ জলে ভরে গেল।ইচ্ছে করছে চলন্ত গাড়ি থেকে ঝাপিয়ে পড়ুক।এই লোকটাকে ফাঁসিয়ে দিয়ে বিদেয় নিক ধরনী থেকে।বাকি আর একটা টুঁশব্দও করলো না।চলন্ত গাড়ির হিম হাওয়ায় দাঁতের পাটি শক্ত হয়ে আছে তার।নয়তো উচিৎ জবাব ঠিকই দিয়ে দিত।

!!২!!

আফাসানা বেগম,তিন বছরের ছোট নাতিকে নিয়ে খেলছেন।রান্নাঘরে ব্যস্ত তোহা।কলিং বেল বাজতেই গ্যাস বন্ধ করে এগিয়ে গেল সে।দরজা খুলে কুহুকে দেখে অবাক হলো!খানিকক্ষণ আগেই তো বেরিয়েছিল মেয়েটা!চোখেমুখে কেমন রাজ্যের আঁধার!নিশ্চুপ রুমের ভেতর চলে গেল কুহু।পেছন পেছন তোহাও আসলো।আয়নায় দাড়িয়ে নিজেকে দেখছে কুহু।খারাপ তো লাগছে না দেখতে!জামাটা একদমই নতুন!সবচেয়ে বড়ো কথা কহুর পছন্দের জামার মধ্যে এটা একটা।অবশ্য ওই গেঁয়ো ছেলেটা বুঝবে কি ড্রেস সেন্স!

"তোমাকে এমন বিধ্বস্ত লাগছে কেন কুহু?ভার্সিটিতে যেতে পারোনি?কিছু হয়েছে?

ভাবীর কথায় ঘুরে তাকাল কুহু।অপ্রস্তুত হয়ে বলল,
" হ্যাঁ,না মানে যে বৃষ্টি নেমেছে দেখো না!আমি তো ছাতা নেইনি।এই ভেজা জামা নিয়ে কি যাওয়া যায়?

"ভাল করেছো।অসুখ বেঁধে যেত নয়তো।যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।রান্না প্রায় শেষ।খাবে এসো।

কথা শেষ করে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল তোহা।পিছু ডেকে বলল কুহু,
" এই জামাটায় কি আমাকে খুব বাজে দেখতে লাগছে ভাবী?

কুহুর কথায় ঘুরে তাকাল তোহা।সন্দিহান দৃষ্টিতে দেখে নিয়ে বলল,
"একদম না।ফর্সা গায়ে সাদা রঙটা খুব মানানসই।তবে তোমাকে শাড়িতে বেশি সুন্দর লাগে কুহু!

আফসানা বেগম বসার ঘর থেকে ছেলের বউকে ডাকলেন।তড়িঘড়ি করে চলে গেল তোহা।কুহু হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।এখন কি শাড়ি পরে ভার্সিটিতে যাবে নাকি সে?ফের আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে নিয়ে, ঠোঁট উল্টে ওয়াশরুমে চলে গেল।


সারাদিন তুমুল বর্ষনের পর বিকেলটা একেবারে স্নিগ্ধ লাগছে।চারিদিকে ভেজা এক ঘ্রাণ ছড়িয়ে আছে।ডায়েরি নিয়ে বেলকনিতে এসে বসলো রওনক।সামনে ছোট গোল টি টেবিলটায় ডায়েরি রেখে আকাশে মত্ত হলো।এখনও মেঘেদের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে।প্রলম্বিত শ্বাস ফেলে ডায়েরী খুলে লিখতে বসলো সে,

‘ বৃষ্টিস্নাত দিনে আর্দ্র গায়ে তুমি যেন এক জীবন্ত কাঠগোলাপ!অপার সে সৌন্দর্য,মোহনীয় যার সুভাস!মুগ্ধকর এই রূপ!মিলেমিশে এক মায়াবতী!যার জন্য হাজার বছর চাতকের মতো অপেক্ষা করা যায়।তৃষ্ণার্ত বুকে তোমার একফোঁটা ভালবাসায় পিপাসা মেটাতে আমি অপেক্ষারত মেয়ে!

ভাইয়ের রুমে আসলো রিশা।হাতে গরম কফির মগ।বোনের উপস্থিতি টের পেতেই ডায়েরি বন্ধ করে একপাশে রাখলো রওনক।ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে হাত বাড়িয়ে কফির মগ নিল।রিশার কৌতুহল টেবিলে থাকা সোনালী রঙা শক্ত মোড়কের ডায়েরিতে।কখনো ওটা হাতে ধরার সৌভাগ্য হয়নি।রওনক না থাকলে এটা খুঁজেও পাওয়া যায় না।কফিতে চুমুক রেখে বলল রওনক,
"আমার টেবিলের উপর কুহুর এডমিট কার্ডটা রাখা আছে।আসলে দিয়ে দিস।একটুপরই বোধহয় এসে যাবে নালিশ জানানোর জন্য।

রওনকের কথা শুনে তপ্ত শ্বাস ফেলল রিশা।তারমানে আজকেও কিছু ঘটেছে!এই মেয়েটাকে ভাইয়ের বউ করে নিয়ে না আসা পর্যন্ত শান্তি মিলবে না।ভ্রু দ্বয়ের মাঝে ঈষৎ ভাজ ফেলে বলল রিশা,
"দিন দিন তুমি যেভাবে কুহুর মন থেকে উঠে যাচ্ছ,আমার মনে হয় না ইহজনমে কুহু তোমাকে বিয়ে করবে।ওর কথায় বোঝা যায় তুমি ওর চক্ষুশূল!ছোট থেকেই শান্তি দিচ্ছ না মেয়েটাকে!

মৃদু হাসলো রওনক।কফিতে মনোযোগী হয়ে বলল,
" সাধে কি নির্বোধ বলি?বোঝার ক্ষমতা থাকলে আমার প্রতিটা কথা,জগড়া করার মানে খুঁজতো।

"তুমি খুব সিরিয়াস হয়ে জগড়া করো কুহুর সাথে।বোঝার উপায় নেই এতে ভালবাসার সংমিশ্রণ আছে।

ভেতরের রুম থেকে মায়ের ডাক আসলো।কথা শেষ না করেই চলে গেল রিশা।সোফায় বসে আছে কুহু।হাতে বই-খাতা।চেহারায় ক্লান্তির ভাজ পরলো রিশার।এক্ষুনি কুহু শুরু করে দিবে ননস্টপ বকবক!হাসার চেষ্টা করে কুহুকে নিয়ে রুমে চলে গেল রিশা।নাশতার ব্যবস্থা করতে গেলেন শারমিন বেগম।সন্ধ্যা প্রহর।বাইরে আবারও শুরু হলো ঝিঝিরি বৃষ্টি!জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আছে রিশা।খাটে বসে কথার ঝুড়ি খুলেছে কুহু।হাইস্কুল থেকে দুজনের বন্ধুত্বের সম্পর্কটা খুব গভীর।রিশার কাছে লুকাবার মতো কিছুই নেই কুহুর।কথার মাঝে নাশতা নিয়ে আসলেন শারমিন বেগম।কথা বিরতি দিল কুহু।শান্ত হয়ে হাসার চেষ্টা করলো।একটু আগে যে রুমে কথার যুদ্ধ চলেছে সেটুকু বুঝতে দিল না আন্টিকে।রিশা এগিয়ে এসে হামলে পড়ল চিকেন বলের বাটির উপর।কুহু চোখ বড়ো বড়ো করে বলল,
"এ্যাই তুই আমার ভাগেরটাও নিয়ে নিলি কেন রিশু?

একটা মুখে পুরে নিয়ে চিবুতে চিবুতে বলল রিশা,
"তোর সামনেই তো বাটি রাখা ছিল।আগে নিতে পারলি না?

কুহু উঠে আসতেই বাটি নিয়ে দৌড় লাগাল রিশা।কড়া স্বরে মেয়েকে বাটি ফিরিয়ে দিতে বললেন শারমিন বেগম।স্থির হয়ে দাঁড়াল রিশা।মুখে আরও দুই-তিনটা পুরে নিল।কোমড়ে হাত রেখে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে রইল কুহু।ভীষণ অভিমান হলো তার।রিশা সবসময়ই তার ভাগের সবকিছু এভাবে ছিনিয়ে নেয়!শারমিন বেগম এগিয়ে এসে কুহুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।ঠোঁটের কোণে হাসি নিয়ে জানালেন এক্ষুনি আরেক বাটি তৈরি করে নিয়ে আসছেন।সেখান থেকে রিশাকে একটাও দেওয়া হবে না।কুহুকে ডাইনিং রুমে যেতে বলে,বেরিয়ে গেলেন শারমিন বেগম।অত্যল্পকালে অভিমানটুকু উবে গেল কুহুর।মুখটা চুপসে গেল রিশার।মা আগেই জানতো রিশা যে হামলে পরবে খাবারে।তাই অল্পকয়টা নিয়ে এসেছিল।ভেংচি কেটে বলল কুহু,
" হামলে পরার শাস্তি বুঝ এবার।আমার সকল কিছুতেই তোর ভাগ চাই।বিয়ের পর না জানি বলবি আমার জামাইয়ের ভাগও তোর চাই!

শেষের কথাটা শুনে খাবার গলায় আঁটকে গেল রিশার।কোনোরকম গিলে নিয়ে বলল,
"জামাইয়ের ভাগ নিয়ে তোর এত চিন্তা?ঠিক আছে তাহলে আমার ভাইয়ের বউ করে নিয়ে আসব তোকে।

কথাটা শুনে ভয়ানক রাগ হলো কুহুর।চোখমুখ কুঁচকে নিয়ে বিরস মুখে বলল,
" জীবনে বিয়ে না হলেও তোর ভাবী হবো না।তোর ওই রগচটা,ঝগড়ুটে ভাইয়ের সঙ্গে একমিনিটও সংসার সম্ভব না।যার মুখ দেখলে আমার দিনটাই খারাপ যায়।আর তাকে কিনা সর্বক্ষণ দেখব?

কথাটুকু বলেই চোখমুখ বিশ্রীভাবে কুঁচকে নিয়ে বেরিয়ে গেল কুহু।কয়েক পা হাঁটতেই শক্ত কিছুর সঙ্গে সজোড়ে ধাক্কা খেল!পড়ে যাওয়ার আগ মুহূর্তে আগলে নিল রওনক।চোখ তুলে তাকাতেই মুখটা থমথমে হয়ে গেল কুহুর!গম্ভীর এক মুখশ্রী তার দিকে ঝুঁকে তাকিয়ে আছে!অপ্রস্তুত হয়ে বার কয়েক চোখের পাতা ঝাপটালো কুহু!ভরাট স্বরে বলল রওনক,
"এখানে কি রেইস খেলছো?এত স্পিডে কেউ হাঁটে?

আমতাআমতা করছিল কুহু।আচমকা খেয়াল হলো রওনকের এক হাত তার কোমড় জড়িয়ে!পরার সময় বেখেয়ালি ধরে ফেলেছে হয়তো!দ্রুত ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল সে।ঠিকঠাক হয়ে দাঁড়াল।হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে বলল রওনক,
" কি বলছিলে রিশাকে?আমার সঙ্গে সংসার সম্ভব নয়?আরও কি কি জানি বলছিলে?তোমার কি ধারণা এমন একটা গর্দভ মেয়েকে আমি বিয়ে করবো?মাথা ভর্তি গোবর!যে কিনা পড়াশোনায় ডিম!কি ভাবো নিজেকে?

রওনকের কথায় তেঁতে উঠলো কুহু!চোখেমুখে ভয়ানক রাগ টেনে বলল,
"আমি নিজেকে রানী এলিজাবেথ মনে করি রওনক ভাই।আপনি কোথাকার কোন রাজকুমার শুনি?চোখে সারাক্ষণ একটা আদিকালের ফ্রেমের চশমা পরে থাকেন।নাক টাও কেমন মোটা।ক্লাসে পড়ানোর সময় তো হাবলার মতো দেখতে লাগে!ভার্সিটিতে কত ছেলে আমার পেছনে ঘুরে জানেন?আর আমি কিনা এই কানা মাস্টারকে বিয়ে করবো!বয়েই গেছে।

কথাটুকু বলেই ধুপধাপ পা ফেলে ডাইনিং রুমে চলে গেল কুহু।রওনক দাঁড়িয়ে রইল কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে!ভাষা হারিয়ে ফেলল সে।তার মানে কুহু তাকে নিয়ে এই ধারণা রাখে মনে?মেয়েটা সত্যিই স্টুপিড!কত মেয়ের প্রেমের প্রপোজাল উপেক্ষা করেছে রওনক,তার কোনো ধারণা আছে এই নির্বোধ মেয়ের?রাগত চোখেমুখে রিশার রুমে গেল সে।বেশ কড়া মেজাজেই বই নিয়ে বসতে বলল বোনকে।আচমকা ভাইয়ের এমন গম্ভীর রাগী স্বরে চমকে গেল রিশা!নির্ঘাত পাশের রুমে দুই সাপ আর নেউলে ঝগড়া বেঁধেছে আবার।কপালে ভাজ ফেলে হিসাববিজ্ঞান নীতিমালা বই খুলে বসলো রওনক।মনে মনে বলল,আজকে কুহু পড়া না পারুক।শাস্তি কি,আর কতপ্রকার খুব ভাল মতোই বুঝিয়ে দিবে।যতবার 'হাবলা' কথাটা কানে বাজছে রাগের মাত্রা দ্বিগুন হচ্ছে রওনকের!
·
·
·
চলবে...............................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন