আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

অন্ধবাড়ি - পর্ব ০১ - আতিয়া আদিবা - ধারাবাহিক গল্প

অন্ধবাড়ি 
পর্ব ০১ 
আতিয়া আদিবা 
.
.
.
শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে নগ্ন রাইসার দিকে চকচকে চারটি পাঁচশ টাকার নোট ছুঁড়ে দিলো ক্লাইন্ট। দাঁতের ফাঁক দিয়ে ইংরেজি গালি দিয়ে মধ্যবয়স্ক লোকটি রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। রাইসা এতক্ষণ মুখে কৃত্রিম হাসি নিয়ে বসে ছিলো। চোখে কামনা। কিন্তু লোকটির প্রস্থান তার চেহারাকে পালটে দিলো। পাঁচশ টাকার নোটগুলো হাতে নিয়ে সে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো। এই টাকাগুলো জরিনা আপাকে দিতে হবে। তিনি এই পতিতালয়ের সর্দারনী। ক্লাইন্টকে খুশি করতে পারলে জরিনা আপাও খুশি হোন। সেই পতিতার জন্য ভালো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়, ভালো কাপড় দেওয়া হয়। আর ক্লাইন্ট যদি অভিযোগ করে তাহলে তিনি রেগে যান। আর তিনি রেগে গেলে সেই পতিতার জন্য ব্যবস্থা করে হয় নানাবিধ শাস্তির। সেটা হতে পারে গরম লোহার ছেঁকা অথবা পায়ে বেত দিয়ে বিরামহীন প্রহার অথবা একাধিক পুরুষ দিয়ে সারারাত ধর্ষণ।
রাইসা টাকাগুলো নিয়ে জরিনা আপার রুমে ঢুকতেই দেখলো নতুন একটি মেয়ে এসেছে। কান্না করতে করতে চোখ দুটো ফুলিয়ে ফেলেছে সে। হাত পা কাঁপছে। টাকাগুলো সর্দারনীর হাতে দিতে দিতে রাইসা হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলো,
" আমাদের নতুন অতিথি, আপা?"
" হ্যাঁ! আজই জামাই দিয়া গেছে। দশ হাজার দিয়া কিনলাম।"
একথা বলতে বলতে রাইসার হাত থেকে টাকাগুলো নিলো জরিনা।
"দুই হাজার টাকা দিসে ওই বুইড়া?"
" জ্বি আপা।"
রাইসা দেখলো জরিনার চোখ জ্বলজ্বল করছে। সে রাইসার চোয়াল ছুঁয়ে নিজের ঠোঁটে চুমু খেয়ে বললো,
" তুই তো আমার অন্ধবাড়ির রাজকুমারী রে! কাউকেই অখুশি করিস না। এই মোরসালিন, রাইসার জন্য বিরিয়ানির ব্যবস্থা কর।"
" জ্বি আপা করতেছি।" 
মোরসালিনের ভাঙ্গা কন্ঠ শোনা গেলো। নতুন মেয়েটা ভয়ার্ত গলায় বললো,
" আমাকে যেতে দিন দয়া করে।"
জরিনা বললো, 
" যাইতে দিমু? দশ হাজার টাকা দিয়ে কিনছি কি যাইতে দেওয়ার জন্য? জামা খুল দেখি! শরম কাটাইতে হবে।"
মেয়েটা এবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো। জরিনা করুন চোখে রাইসার দিকে তাঁকিয়ে বললো,
" কি বিপদ! বল দেখি। এমনে করলে হইবো? দশ হাজার টাকা দেওয়া লস হইলো না? এম্নেই কচি মাল।"
রাইসা ঠান্ডা গলায় বললো,
" আচ্ছা আমি বুঝিয়ে বলছি আপা। বাচ্চা মেয়ে তো! আজ রাতে আমার সাথে থাকুক? আমি সব আদব কায়দা শিখিয়ে দিচ্ছি।"
"হ থাকুক। তুই তো আজকে ফ্রি। আর কোনো ক্লাইন্ট নাই। যা ওরে নিয়া ঘরে যা।"
রাইসা মেয়েটাকে ইশারা করলো তার সাথে যাওয়ার জন্য। জরিনার রুম থেকে বের হয়ে রাইসার ঘরে ঢোকার সাথে সাথে নতুন মেয়েটি রাইসার পা ধরে বসে পড়লো। কান্না করতে করতে বললো,
" আপু, আমাকে দয়া করে যেতে দিন। আমি আজীবন আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো। আমাকে সাহায্য করুন।"
রাইসা দু হাত ধরে টেনে মেয়েটাকে দাঁড়া করালো। অল্প বয়স মেয়েটার। খুব বেশি হলে বয়স ষোলো কিংবা সতেরো হবে! মুখ থেকে কিশোরী ভাব এখনো যায় নি। রাইসা মুগ্ধ হয়ে কিছুক্ষণ তাঁকিয়ে রইলো। তারপর জিজ্ঞেস করলো,
" নাম কি তোমার?"
" রুপসা।"
" বাহ! ভারী মিষ্টি নাম। এখানে কি তোমার স্বামী দিয়ে গিয়েছে?"
মেয়েটি ছলছল চোখে মাথা নাড়লো। রাইসা চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস নিলো। তার চোখও ভিজে উঠেছে। 
" বিয়ে কি পরিবারের সম্মতিতে হয়েছে?"
" না। পালিয়ে বিয়ে করেছি।"
" প্রেমের বিয়ে?"
রুপসা চুপ করে রইলো। রাইসা বুঝতে পেরে কথা ঘুরিয়ে বললো,
" বাসা কোথায়?"
" ভুয়াপুর। আচ্ছা, এই জায়গাটা কোথায়? আমরা যেখানে আছি?"
"সেটা তো বলতে পারবো না। মানা আছে। যখন আমাদের পর্যায়ে আসবে তখন সব জানতে পারবে। এই জায়গা কোথায়, কি সমাচার! সব কিছু।"
রুপসা কোনো উত্তর দিলো না। হাঁ করে তাঁকিয়ে রইলো রাইসার দিকে। রাইসা রুপসার সামনেই নিজের জামা কাপড় পালটে ফেললো। লজ্জায় রুপসা মেঝের দিকে তাঁকিয়ে রইলো। বিষয়টা রাইসার দৃষ্টি এড়ালো না। সে হেসে বললো,
" কয়েকদিনের মধ্যে কত পর পুরুষের সামনে বস্ত্র বিসর্জন দিতে হবে! আমাকে দেখে লজ্জা পেয়ে আর কি হবে?"
রুপসা জিজ্ঞেস করলো,
" আপনি কি নিজের ইচ্ছায় এখানে এসেছেন?"
রাইসা মাথা নাড়লো। 
" তাহলে?"
" জামাই বিক্রি করে রেখে গিয়েছে।"
রুপসা বললো,
" আমার স্বামী আমাকে সারপ্রাইজ দিবে বলে সারা রাস্তা চোখ বেঁধে এখানে নিয়ে এসেছে! কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তাও বলে নি। সারপ্রাইজের কথা শুনে আমিও জিজ্ঞাসা করি নি কিছু। আপনাকেও কি তাই করেছে?"
রাইসা হেসে বললো, 
" না।"
রুপসা আর কিছু জিজ্ঞাসা করলো না তবে তার মাথায় আরো অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। রাইসা ব্যাগ থেকে সিগারেট বের করে ধরালো। দুই টান দিয়ে রুপসা কে জিজ্ঞেস করলো,
" অভ্যাস আছে?"
" না। স্কুলে বান্ধুবীদের সাথে মজা করে একবার একটান দিয়েছিলাম। আমি তো কাশতে কাশতেই শেষ!"
একথা বলে খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো রুপসা। রাইসা সিগারেটের ধোঁয়ার মাঝ দিয়ে দেখলো চোখে পানি নিয়ে হেসে যাওয়া এক অবুঝ কিশোরীকে। কয়েকদিনের মধ্যেই যে পরিচিত হতে যাচ্ছে ভয়ংকর বাস্তবতার! 
.
.
.
চলবে..........................
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।