আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

নীরবে নিভৃতে - পর্ব ৩১ - তাসমিয়া তাসনিন প্রিয়া - ধারাবাহিক গল্প


" কী হলো? দুই বোন কি চুড়ি শুধু দেখেই যাবে? না-কি কিনবেও!"
রোশনের কথায় মেহেক ভেংচি কাটলো। মিষ্টি হেসে বললো, 
" হ্যাঁ কিনবো তো ভাইয়া। আপু তুমি এই লাল চুড়ি গুলো নাও না? "
" লাল? "
মেহেক ভ্রু উঁচিয়ে শুধালো। রোশন মাঝখানে বলে উঠে, 
" হ্যাঁ লাল। এখন লাল রেশমি চুড়ি পরে আমার সাথে ঘুরবে মেলায়।"
আহনাফ রোশনের কথায় ঠোঁট টিপে হাসছে। লোকটা কতটা ঠোঁটকাটা তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে মেহেক। কথা বাড়ালে হয়তো আরো বেফাঁস কথাবার্তা শুরু করবে রোশন, সেসব ভেবে মেহেক চুপচাপ এক ডজন লাল চুড়ি হাতে নিলো। 

" এক ডজন নিবেন আফা?"
দোকানদার মাঝবয়েসী, তবে হাস্যোজ্জ্বল মানুষ। হেসে হেসে কথা বলছেন। মেহেক কিছু বলার আগেই মিষ্টি বলে,
" চার ডজন দিন চাচা। আমার জন্য গোলাপি, সাদা আর আপুর জন্য লাল আর নীল রঙের। "
মেহেকের প্রিয় রঙ নীল সেটা ভালো করেই জানে মিষ্টি। 
" আচ্ছা আফা।"
দোকানদার চুড়ি প্যাকেট করে দিলেন। আহনাফ টাকা দিতে চাইলেও রোশন দিতে দিলো না। বয়সে ছোটো হলেও সম্পর্কে বড়ো হওয়ায় রোশনের জোড়াজুড়ির সাথে আহনাফ ঠিক পেরে উঠছে না। চুড়ির দোকান থেকে বেরিয়ে ওরা সামনে এগোচ্ছে। আহনাফ আর মিষ্টি আগের মতোই মেলা সংক্রান্ত কথা বলতে বলতে সামনে এগিয়ে গেছে। মেহেকও আশেপাশে দেখতে দেখতে হাঁটছে। হঠাৎ রোশন মেহেকের হাত ধরে দাঁড়িয়ে গেলো। 
" কী হলো?"
" দাঁড়াও একটু।"
রোশন মেহেকের ওড়না আরেকটু প্রসারিত পকেট থেকে একটা সেফটিপিন বের করে কাঁধে আঁটকে দিলো। জরজেট থ্রিপিস বলে বারবার ওড়না পড়ে যাচ্ছিল। মেহেক চুপচাপ লোকটার কান্ড দেখলো। এতো কেয়ার করে কেন লোকটা? মেহেক মৃদু হেসে শুধালো, 
" এখন যাই?"
" না, আরেকটু... "
চুড়ির প্যাকেট থেকে লাল রঙের চুড়ি ডজন বের করে সেগুলো মেহেকের হাতে পরিয়ে দিলো। সবুজ আর লাল রঙের থ্রিপিস পরনে মেহেকের, সাথে সবুজ রঙের হিজাব। 
" এখন ঠিক আছে। চলো সুন্দরী। "
" চলুন ডাকাত সাহেব...উঁহু হট বয়!"
মেহেক ফিক করে হেসে উঠলো কথাটা শেষ করে। বউয়ের মুখে হট বয় কথাটা শুনে রোশন তো বেজায় খুশি। মুহুর্তেই কোমরে হাত দিয়ে মেহেককে বুকের সাথে টেনে নিয়ে বললো,
" মুড হচ্ছে নাকি? চলো বাড়ি যাই..."
মেহেক রোশনকে সরিয়ে দিয়ে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আছে।
" আপনি একটা পাগল। এটা মেলা! চলুন.."

মেহেক হাঁটতে শুরু করেছে। রোশন জিহ্বায় কামড় দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বউয়ের প্রেমে স্থানকালের জ্ঞানও লোপ পেয়েছে তার। সামনে হাঁটতে হাঁটতে বললো সে,
" সরি সুন্দরী। আসলে তোমার মুখে এতোদিনে নিজের এতো সুন্দর প্রশংসা শুনে না মনটা নেচে উঠেছিল।"
" হ্যাঁ হ্যাঁ হয়েছে। চলুন এখন। ওরা অনেকটা সামনে এগিয়ে গেছে। "
" ওকে!"
দু'জনে এগোলো সামনে। রাত দশটা পর্যন্ত মেলায় ঘুরাঘুরি করলো চারজন। এরমধ্যে বেশকিছু জিনিসপত্র কিনেছে। যেমন - রেশমি চুড়ি, মাটির জিনিসপত্র, শাড়ি, পাঞ্জাবি, আরো টুকটাক কিছু। তারপর বাড়ির উদ্দেশ্য বেরিয়ে এসেছে। মিষ্টির তো এরমধ্যেই চোখে ঘুম নেমেছে। মেহেকের কাঁধে মাথা দিয়ে ঘুমাচ্ছে বেচারি। পুরো মেলায় থাকাকালীন সময় লিমন আর শান্ত দূর থেকে ওদের উপর নজর রেখেছিল। কিন্তু সেটা রোশন নিজেও টের পায়নি। 
" মেহেক মিষ্টি কি সত্যি ঘুমিয়ে গেছে? "
সামনের সিট থেকে পেছনে উঁকি দিয়ে জিজ্ঞেস করে আহনাফ। মেহেক মিষ্টির দিকে দৃষ্টিপাত করে নিশ্চিত হয়ে বলে,
" হ্যাঁ ভাইয়া। "
" মাথা ব্যথা করেছিল বললো তখন। সেজন্য হয়তো ঘুমিয়ে গেছে। "
" চিন্তা নেই। বাড়ি গিয়ে ঔষধ খেলেই ঠিক হয়ে যাবে। "
" তা ঠিক। তা রোশন কোনো সমস্যা হলে বলবে কিন্তু। "
আহনাফের কথার মানে রোশন বুঝতে পেরেছে। 
" ভাবছি কালকে চলে যাবো। রিস্ক নিয়ে থাকা ঠিক হবে না। তাছাড়া তোমাদের বিয়ের তো অনেক দেরি! "
আহনাফের মুখটা শুকিয়ে গেলো। বিয়েটা এতোদিন পর কেনো? 
" হ্যাঁ। যা ভালো হয় করো। কিন্তু আমি ভাবছি এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে কি জীবনের স্বাদ পাওয়া যায়? মুক্ত বাতাসে প্রাণভরে নিশ্বাস নিতেও পারো না।"
দীর্ঘশ্বাস ফেললো রোশন। সত্যি বলতে এই কয়মাসে ও নিজেও এসব ভেবেছে। এরকম জীবন আর চায় না রোশন। মেহেককে নিয়ে সুন্দর, স্বাভাবিক একটা জীবন চায়। কিন্তু সেটা কীভাবে সম্ভব হবে বুঝতে পারছে না। সবকিছু ছেড়ে দিলেও প্রশাসন তো ছাড়বে না! গাড়ি থেমে যাওয়াতে প্রসঙ্গ বদলে যায়। আহনাফের বাড়ির সামনে গাড়ি থেমেছে। ও এখান থেকে নেমে যাবে। মিষ্টির দিকে একঝলক তাকিয়ে গাড়ি থেকে নেমে বাসার দিকে এগোলো আহনাফ। এখান থেকে মিনিট সাতেক পরে মিষ্টিদের বাড়ির সামনে পৌঁছুবে। 

" এসেছিস আহনাফ? এদিকে আয় তো।"
বাবার ডাকে বসার ঘরেই দাঁড়িয়ে গেলো আহনাফ। আহনাফের চাচা,চাচিও বসে আছেন। আহনাফ অন্য একটা সোফায় বসলো।
" হ্যাঁ বাবা। ফ্রেশ হয়ে এসে শুনি?"
" তেমন কোনো কথা নেই। শুধু একটা মতামত নেওয়ার জন্য। "
" হ্যাঁ বলো তাহলে।"
আহনাফ উঠে দাঁড়িয়ে আছে। কথা শেষ হতেই গোসল করতে ছুটবে। গরমে অসহ্য লাগছে। 
" তোর চাচা, চাচি বলছিল বিয়েটা এই মাসের মধ্যে দিয়ে দিতে। মাস দুয়েক পরে ওরা ঢাকা চলে যাবে। "
আহনাফ চমকাল একটু। মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি! নিজেকে ধাতস্থ করে বললো,
" তোমরা যা ভালো মনে করো তাই করো। আমার কোনো সমস্যা নেই। এখন আসছি। বাকি কথা খেতে খেতে হবে। ছোটো মা খাবার রেডি করো।"
আহনাফ ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বলে। আহনাফের চাচি মুচকি হেসে ডাইনিং টেবিলের দিকে এগোলেন। 

মেলা থেকে কিনে আনা জিনিসপত্র নেড়েচেড়ে দেখছে মেহেক। রোশন শুয়ে শুয়ে ফোন টিপছে। একটা ইংরেজি আর্টিকেল পড়তে পড়তে সেদিকে খেয়াল চলে গেছে। মাঝে মধ্যে রোশনের অবাক লাগে। কীভাবে এই কঠিন ইংরেজি পড়তে পারে ও? লেখাপড়া করার কোনো চিত্র ওর মানসপটে ভেসে ওঠে না কখনো। 
" কী দেখছেন ফোনে? এদিকে আসুন একবার। "
মেহেকের ডাকে নড়েচড়ে উঠলো রোশন। পাশে তাকিয়ে দেখলো হাতে পাঞ্জাবি নিয়ে ডাকছে মেহেক। ড্রেসিং টেবিলের কাছে চেয়ারে বসে আছে মেহেক। 
" বাসর করতে চাইছো সুন্দরী? পাঞ্জাবি পরে আরেকবার বাসররাত কাটাতে কোনো আপত্তি নেই আমার। "
মেহেকের সামনে ঝুঁকে হাসছে রোশন। মেহেক নিজেও হাসলো। উঠে দাঁড়িয়ে পাঞ্জাবিটা রোশনের গায়ে জড়িয়ে ধরে দেখে বললো,
" সুন্দর লাগছে। পাঞ্জাবি পরেন না কেনো?"
" এমনিতেই। জঙ্গলে থাকি, করি ডাকাতি! পাঞ্জাবি পরে কী করবো সুন্দরী? "
" এখন থেকে পরবেন।"
" যো হুকুম মেরি বিবিজান। এখন পরতে হবে? "
মেহেক মাথা নেড়ে হু বললো। রোশন হেসে পাঞ্জাবি হাতে নিয়ে বললো,
" আমি পাঞ্জাবি পরলে তোমাকেও শাড়ি পরতে হবে। আর একটা কথা.. "
কোমরে হাত দিয়ে মেহেককে বুকের সাথে মিশিয়ে ফেলে বললো রোশন। মেহেক কণ্ঠ খাদে নামিয়ে শুধালো, 
" কী?"
" সুন্দরী বউকে শাড়ি পরা দেখে যদি দুষ্ট বর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে আমার কিন্তু কোনো দোষ নেই। "
" আপনি একটা বজ্জাত লোক।"
বউয়ের নাকের ডগায় ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে জোরে হেসে উঠলো রোশন।
" হ্যাঁ তা ঠিক। তুমি এখানেই শাড়ি পরে নাও। আমি একটু পর আসছি।"
হাতে পাঞ্জাবি নিয়ে ঘর থেকে বেরোতে উদ্যত হলো রোশন। 
" আপনি কোথায় যাচ্ছেন?"
" আসছি একটু পর। এতো টেনশন করো না সুন্দরী, প্রেমে পড়ে যাবে আমার। "
চোখ টিপ্পনী কেটে বললো রোশন। মেহেক ভেংচি কাটলো। 
" হ্যাঁ আমার ঠেকা পড়ছে। "
রোশন ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই মেহেক একা একা হাসতে লাগলো। ভালোই লাগে লোকটার দুষ্টমি। 

❝ কেনো মেঘ আসে 
হৃদয় আকাশে 
মোহমেঘে তোমারে 
দেখিতে দেয় না।❞

স্মৃতির পাতায় গানটা খুব স্পষ্ট সবুরের। এখন রাত আড়াইটার কাছাকাছি। রোজীর কথা ভীষণ মনে পড়ছে আজ। একটা মানুষকে তীব্রভাবে ভালোবেসে দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না সে কি ভীষণ যন্ত্রণা তা প্রতিদিন টের পায় সবুর। ভালোবাসার মানুষটিকে পাওয়ার তীব্র বাসনা আজীবন একরকম থাকে। হোক সেটা যৌবনে কিংবা বৃদ্ধ কালে। রোজীর উপর কোনো রাগ অভিমান নেই উনার। শুধু আছে ভালোবাসা..... 



চলবে..........................
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।