অন্ধবাড়ি
পর্ব ০৩
আতিয়া আদিবা
.
.
.
রুপসাকে জোর করে সেই ছোট অশ্লীল পোশাক পড়িয়ে একটি রুমে বসিয়ে রাখা হয়েছে। কিছুক্ষণের ব্যবধানেই একজন লোক ঢুকলো। বয়স পঁচিশ কি ছাব্বিশ হবে! গা দিয়ে মদের গন্ধ বেরুচ্ছে। গায়ের রঙ শ্যামলা। চোখ দুটি গনগনে লাল! দেখেই বোঝা যাচ্ছে নেশা করে এসেছে। রুপসাকে দেখে লোকটি অকারণে হাসতে লাগলো। রুপসা ভয়ে বিছানার একদম কোণায় দেয়ালের সাথে সিটিয়ে আছে। লোকটি যেনো তা দেখে আরো বেশি উৎসুক হয়ে উঠলো! দরজা লাগিয়ে দিয়ে কুৎসিত ভঙ্গিতে হাসতে হাসতে রুপসার পাশে এসে বসলো। রুপসার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে। ঠিকমত শ্বাস নিতে পারছে না। লোকটি প্রথমে রুপসার পায়ে হাত দিলো। রুপসা তার পা যতটুকু সম্ভব গুটিয়ে নিলো। লোকটি এতে বেশ মজা পেলো। এবার সে রুপসার পিঠে হাত রাখার চেষ্টা করলো। রুপসা আবার বাঁধা দিলো। লোকটি এবার যেনো তার আসল পশুত্ব ফিরে পেলো! দুই হাত দিয়ে রুপসার দুই হাত ধরে জবরদস্তী ধর্ষণের চেষ্টা করতে লাগলো। রুপসা পাগলের মতো ছটফট করছে। নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। চিৎকার করতে চাইছে কিন্তু লোকটি তার মুখ চেপে ধরেছে। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে রুপসা লোকটির হাতে কামুড় বসিয়ে দেয়। এতে লোকটি ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠে এবং কিছুটা নিস্তেজ হয়ে পড়ে। রুপসা যেনো এই সময়ের অপেক্ষা করছিলো! সে দ্রুত বেগে বিছানা থেকে নেমে দরজা খুলে ঘর থেকে বেরিয়ে প্রাণপনে ছুঁটতে লাগলো।
পতিতালয়ের সদর দরজা রুপসা চিনে না। রাইসার ঘরের এরিয়াটুকু ছাড়া এই পতিতালয়ের কোনো এরিয়া রুপসার কাছে পরিচিত না। সে কোনোদিকে না তাঁকিয়ে দৌঁড়াতে লাগলো। পেছোনে হৈ চৈ শোনা যাচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে রুপসাকে ধরার জন্য একদল ছুটে আসছে। হন্যে হয়ে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে রুপসা একসময় মেইন গেট খুঁজে পেলো। ওইতো! কাচা রাস্তা দেখা যাচ্ছে। রিক্সা চলাচল করছে। রুপসা আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলো। কোনোদিক না তাঁকিয়ে সে মেইন গেটের দিকে ছুটতে লাগলো। হঠাৎ অসাবধানতাবশত একটি ইটের টুকরায় হোচট খেয়ে রুপসা পড়ে গেলো। পেছোনের শোরগোল ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে। রুপসা দেখলো সে মেইন গেট থেকে মাত্র কয়েক ফুট দূরে! সে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না। মনে হয় পা মচকে গেছে। সে মাথা ঘুরিয়ে পেছোনে তাঁকিয়ে দেখলো জরিনা তার ছেলেপেলে নিয়ে এদিকেই তেঁড়ে আসছে। রুপসা চিৎকার করে উঠলো। হাতে ভর করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে লাগলো। রুপসার কান্নায় আকাশের মেঘগুলো যেনো থমকে গেছে। বাতাসে বেগ নেই। নারিকেল গাছে বসে থাকা পাখি দুটোও কিচির মিচির করে ডাকছে না। মেইন গেট আর রুপসা মাঝের ব্যবধান মাত্র কয়েক ইঞ্চির! রুপসা কাঁপা হাত দিয়ে গেইট স্পর্শ করার চেষ্টা করছে। ঠিক সেই মুহুর্তে কেউ একজন তাকে পাঁজাকোলা করে নিলো। রুপসা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো না। সে জানে আর কোনো লাভ নেই। মেইন গেটের সাথে তার দূরত্ব ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো। সে ঝাপসা চোখে গেটের দিকে তাঁকিয়ে আছে। জরিনা অনবরত গালি দিয়ে যাচ্ছে তাকে।
" মাগী! দশ হাজার টাকা দিয়ে কিনছি এসব দেখার জন্য? জামাইয়ের সংসার করে খাইতে পারে নাই। খালি ছ্যালৎ ছ্যালৎ সবসময় না? এই ভুলের কোনো ক্ষমা নাই। এই রফিক ওরে আমার নিয়ে ঘরে যা। ব্যবস্থা একটা তো করাই লাগবে আজকে।"
রফিক মাথা নেড়ে রুপসাকে নিয়ে ঘরে চলে গেলো।
রাইসা এতক্ষণ ক্লাইন্টের সাথে ছিলো। ক্লাইন্ট বিদায় দিয়ে সে তার রুমে যাওয়ার সময় দেখলো জরিনা গনগনে লাল রড নিয়ে নিজের রুমে ঢুকছে। রাইসা এক মুহুর্ত দেরী করলো না। দ্রুত পায়ে নিজের ঘরে ঢুকলো। না এখানে তো রুপসা নেই! সে নিজের ঘর থেকে বের হয়ে পা চালিয়ে জরিনার ঘরে যেতে লাগলো। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে। দরজার সামনে পৌঁছতেই রুপসার আর্তনাদ শোনা গেলো। রাইসা পর্দা ফাঁকা করে দেখলো রুপসার দুই পায়ের তলায় গরম রডের ছেঁকা দেওয়া হয়েছে। মেয়েটা কাটা কবুতরের মতো ছটফট করছে। রফিক আর জিল্লু তার হাত এবং পা ধরে রেখেছে। রাইসা কিছু বললো না। ধীর পায়ে সে নিজের রুমে চলে এলো। বিছানায় পা তুলে বসলো। রাইসার পায়েও গরম রডের ছেঁকার দাগ আছে। তবে এটা পুরোনো। দেখেই বোঝা যায় প্রায় এক বছর আগের!
রুপসার গা জ্বরে পুরে যাচ্ছে। সে রীতিমত কোঁকাচ্ছে। রাইসা তার পাশে বসে জলপট্টি দিয়ে দিচ্ছে। রাইসা রুপসার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,
" পাগলি মেয়ে, কেনো এভাবে বের হয়ে যেতে নিয়েছিলে? এখানে এসব করা যাবে না। ওরা মেরে ফেলবে তোমাকে।"
রুপসা একগাল হেসে বললো,
"বেঁচে থেকে এই কাজ করার চেয়ে মরে যাওয়াই তো ভালো আপু। তখন যদি বাবা মার কথা শুনতাম! যদি পালিয়ে গিয়ে বিয়ে না করতাম। বাবা ঠিক বলতেন আমার স্বামীর কথা। ছেলে ভালো না, নেশা করে! বিশ্বাস করি নি।"
" তোমার মা বাবার সাথে কথা হয় না?"
" মার সাথে হতো। বাবা রাগ করে কথা বলেন না।"
"তোমার বয়সও তো অল্প! কিসে পড়াশোনা করতে?"
" ইন্টার ফাস্ট ইয়ার।"
রুপসা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে রাইসার হাত ধরে বললো,
" আপু আমাকে এ জায়গা থেকে বের হতে সাহায্য করো প্লিজ! প্লিজ আপু। আমি এখানে বাঁচতে পারবো না। আমি মা-বাবার কাছে যাবো।"
এমন সময় রুমে সুরমা প্রবেশ করলো। হাতে জ্বরের ওষুধ। রুপসা রাইসার হাত ছেড়ে দিলো।
সুরমা বললো,
" নাও! ওষুধ টা খেয়ে নাও রুপসা।"
রুপসা বললো "না।"
সুরমা বললো,
" জিদ দেখিয়ে লাভ হবে না। ওষুধ খেয়ে নাও।"
রুপসা কথা না শোনার ভান করে রইলো। রাইসা বললো,
" আচ্ছা সুরমা রেখে যা। আমি খাওইয়ে দিচ্ছি।"
সুরমা ওষুধ টেবিলের ওপর রাখতে রাখতে বললো,
" একটা কথা শুনলাম। ভাসা ভাসা।"
রাইসা ভ্রুঁ কুচকে বললো,
" কি কথা?"
"আফজাল সাহেবের নেক্সট পচ্ছন্দ তুই। সে তোকে চায়। তার জন্য নাকি খালি চেক জরিনা আপার হাতে ধরিয়ে দিতেও রাজী হয়েছে! যত খুশি তত এমাউন্টের টাকা ভরতে পারবে সে।"
রাইসা অবাক হয়ে বললো,
" কি বলিস এসব। আর এখবর এখনো আমার কানে আসলো না?"
" আসে নি তার কারন আছে।"
" কি কারন?"
সুরমা রুপসার দিকে একবার আঁড়চোখে তাঁকিয়ে বললো,
" বাইরে আয়। বলছি।"
রাইসা সুরমার সাথে বাইরে গেলো। কিছুক্ষণ পর ফিরে এলো। রুপসা অচেতনের মতো পড়ে রয়েছে। রাইসা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। কি পবিত্র লাগছে মেয়েটিকে দেখতে!
.
.
.
চলবে..........................