তোহার কথার কোনো জবাব দিতে পারলো না কুহু।আমতাআমতা করে গেল।তবে জানাল এই মুহূর্তে বিয়ে করতে ইচ্ছুক নয় সে।পরশুদিন থেকে পরীক্ষা।পাত্রপক্ষের সামনে যাওয়ার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত নয়।মেয়ের এমন জবাব ভাল লাগলো না আফসানা বেগমের।মুখাবয়বে নামলো ঘন কালো আঁধার!আজকালকার ছেলেমেয়েদের নিয়ে একটু দুশ্চিন্তা বেশিই থাকে।বাবা-মার মতামতের গুরুত্ব দেয় ক'জন?ফুয়াদ জানাল কুহু যা চায় তা-ই হবে।আপাতত পড়ায় মন দিক মেয়ে'টা।ভাইয়ের কথা শুনে,মাথা থেকে দুশ্চিন্তার বোজা নামলো কুহুর!পাত্র আসলে'ই তো বিপদ!যদি পছন্দ করে'ই ফেলে,তবে ইহজনমে আর নিস্তার নেই!চাইলেও বিয়ে আঁটকে দিতে পারবে না কুহু।বিয়ে নামক কারাগারে যাবজ্জীবন কারাবাস হয়ে'ই যাবে।চিন্তা দূরীভূত হতে'ই গুনগুন করে সুর তুলে নিজের রুমে পা বাড়াল কুহু।রাস্তায় আসার সময় মনে মনে শপথ নিয়ে এসেছে ভাল রেজাল্ট সে করবেই!আর এটা রওনক ভাইয়ের জন্য দাঁতভাঙ্গা জবাব হবে।কথায় কথায় মাথামোটা,নির্বোধ মেয়ে,দূর্বল ছাত্রীর তকমা থেকে তো মুক্তি মিলবে!বেলকনিতে এসে গোলাপ গাছের চারাদুটোতে পানি দিল কুহু।মৃদু বাতাসে লকলকে গাছের ডালগুলো হেলছে-দুলছে!বরাবরের মতো আজকেও একটা সাদা গোলাপ ফুটে আছে।মন বেজায় খারাপ হলো কুহুর।সেদিকে স্থির দৃষ্টি রেখে ভাবনায় ডুবল।টকটকে লাল গোলাপ কুহুর ভীষণ পছন্দ!ভার্সিটি থেকে ফেরার সময় শখ করে কিনেছিল একটা রক্তিম গোলাপের চারা।তক্ষুণি পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল রওনক ভাই।সহাস্যে এই সাদা গোলাপের চারা'টা তুলে দিয়েছিল কুহুর হাতে।সাদা গোলাপ অপছন্দের তালিকায় থাকায় নিতে নারাজ হয়েছিল কুহু।ভরাট সেই চেনা গম্ভীর স্বর তুলে বলেছিল রওনক ভাই,
'আমরা যেটাকে অপছন্দ করি হয়তো সেটাই আমাদের জন্য ভাল কিছু বয়ে আনে।সাদা রঙ কেবলই শুভ্রতা,পবিত্রতার প্রতীক!লাল রঙটা যদিও ভালবাসার প্রতীকী বহন করে,তবুও লালে ক্রোধ,রক্ত,উত্তাপকেও বোঝায়!দু'টোকে নিজের কাছে রেখে চমৎকার এক পরীক্ষা করে দেখতে পারো তুমি!যদি আগে অপছন্দের সাদা গোলাপ ফোটে তবে ভেবে নিও তোমার মনে ক্রোধ,উত্তাপ আছে!এই শুভ্র গোলাপ তোমার সমস্ত রাগ,ভুল,উত্তাপকে মুছে দিতে এসেছে!
এই কথার অর্থ বোঝেনি কুহু।লালে তো ভালবাসারও প্রকাশ পায়!সেটুকু কেন বলেনি না রওনক ভাই?আনমনা কুহুর হাতে কাঁটা বিঁধতেই মৃদু কেঁপে উঠলো!ভাবনার অবসান ঘটলো।আঙ্গুলের ডগা বেয়ে ততক্ষণে নামলো রক্তের ধারা!মুহূর্তে একফোঁটা রক্তিম তরল ভিজিয়ে দিল শুভ্র সাদা গোলাপ খানা!কুহু যেন কোথা থেকে স্পষ্ট শুনতে পেল রওনক বলছে,দেখলে মেয়ে লাল কেবলই রক্তাক্তের প্রতীক!আর শুভ্র সাদা তোমায় একটা স্বচ্ছ,পবিত্র মনের অধিকারী করবে!ভালবাসতে শেখাবে!
!!৫!!
অম্বরের বক্ষস্থল জুড়ে টুকরো মেঘে'রা ভেসে বেরাচ্ছে!চাঁদের দেখা মিলছে না।ধূসর বারিদ ঢেকে দিচ্ছে তাকে।গভীর মনোযোগ নিয়ে মেঘ-শশীর লুকোচুরি খেলা দেখছে রওনক!চশমা চোখে যেন স্বচ্ছ সবকিছু!হাতে খোলা ডায়েরি।মনোহরনী'কে নিয়ে আওড়ে গেল কয়েক লাইন,কলমের আঁচড় তুলল সফেদ কাগজে"রক্তিম কিংবা শুভ্র গোলাপ,সবেতেই তোমার মনে'র নিদর্শন!সে ঘ্রাণ নিতে আমার হৃদয় ব্যাকুল!অন্তরিন্দ্রিয়ে তোমার ভালবাসার উদয় হোক নির্বোধ ফুল!ঝড়ে যাক আমায় নিয়ে ভাবনার অজস্র ভুল!"
ডায়েরি বন্ধ করে পকেট থেকে ফোন বের করলো রওনক।একের পর কুহুর ছবি স্ক্রল করে দেখল!ঠোঁটের কোণে লেপ্টে আছে মৃদু হাসি।কুহুর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ টা খুব একটা ভাল ছিল না তার।একদম শুরুতেই ঝগড়া বেঁধে গিয়েছিল।সেদিন প্রচন্ড ক্ষেপে গিয়েছিল কুহু!এরপর থেকে তাকে ক্ষেপানো'টা নেশার মতো হয়ে গেছে রওনকের কাছে!
•
রাস্তায় দাঁড়িয়ে কুহুর জন্য অপেক্ষা করছে রিশা।কাছেই নদীর ধারে ছোটখাটো মেলার মতো আয়োজন হয়েছে।খবর খানা ভাইয়ের থেকেই পাওয়া।কুহু'কে ফোন করে আসার কথা রওনক'ই বলেছে।সত্যি বলতে দু'জনের মাঝে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না রিশার।কিন্তু কুহু তো দুনিয়া উল্টে গেলেও রওনকের সঙ্গে একা মেলায় যাবে না!ভাবনার মাঝেই কুহুর আগমন ঘটলো।কয়েক রঙা মিশেল বুটিকস এর থ্রিপিস পরেছে সে।মাথায় ঘোমটা টেনে দেওয়া!পায়ে কালো স্লিপার।তাড়াহুড়ো করে আসার দরুন হাঁপাচ্ছে কুহু!কয়েক সেকেন্ড স্তব্ধ হয়ে কুহুর দিকে তাকিয়ে রইল রিশা।গোলাকৃতি গৌরবর্ণের মুখ জুড়ে ক্লান্তির ছাপ থাকলেও তাতে আনন্দ মিশ্রিত!সরু নাকের ডগা জুড়ে ঘাম বিন্দু্।কপালে ছোট্ট একটা কালো টিপ!ওষ্ঠ ছড়িয়ে হেসে বলল কুহু,
"জানিস মাকে কত বুঝিয়ে এসেছি?এই সন্ধ্যায় বের হতেই দিচ্ছিল না!মেলার কথা শুনলে স্থির থাকা যায় বল?আমার যে কি খুশি লাগছে!
কথাটুকু বলেই মাথার ঘোমটা ফেলে সামনে এনে ভাঁজ করে দিল কুহু।ফের রিশার দিকে তাকাতেই দেখল পেছনে হাতের শার্ট গুটাতে গুটাতে এগিয়ে আসছে রওনক!চোখ বড়ো বড়ো হয়ে আসলো কুহুর!তৎক্ষনাৎ রিশাকে প্রশ্ন ছুঁড়লো,
" কিরে রওনক ভাইও কি যাবে নাকি আমাদের সাথে?
হাসার চেষ্টা করলো রিশা।কাঁচুমাচু করে বলল,
"হ্যাঁ,মানে আমরা দু'টো মেয়ে একা যাব নাকি বল?ভাইয়া আমাদের বডিগার্ড হিসেবে যাবে।
অত্যল্পকালে এক অসস্থি ঘিরে ধরলো কুহুকে।তাঁর মেলা ভ্রমন যে আজ ভাল হচ্ছে না সেটুকু বুঝতে বাকি নেই।ততক্ষণে রওনক এসে দাঁড়াল সামনে।দৃষ্টি নিচু রাখলেও কুহুর চোখ আঁটকালো রওনকের লোমশ হাতে থাকা কালো ফিতার ঘড়ির দিকে।
" রিশা আমাদের সঙ্গে যে ব্রিটেনের রানীও যাচ্ছে আগে বলিসনি তো!
রওনকের কথার ঠিক কি জবাব দিবে বুঝতে পারলো না রিশা।দূর্দান্ত অভিনয় জানে তার ভাই।শিক্ষক না হয়ে অভিনেতা হওয়া উচিৎ ছিল মনে হচ্ছে।কুহু সে আসতে বলে এখন নিজেই ভাব নিচ্ছে!ফোঁসফোঁস দম ফেলে রওনকের দিকে তাকাল কুহু।গাঢ় বেগুনি শার্ট আর ধূসর রঙা চিনোস প্যান্ট পরেছে রওনক!পায়ে হোয়াইট স্নিকারস!ঠোঁটের কোণে ঝুলছে এক অদ্ভুত হাসি!যে হাসির মানে,রহস্য কখনোই উদঘাটন করতে সক্ষম হয়না কুহু।খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি সমেত থুতনিতে হাত রেখে কুহুর পানে তাকিয়ে বলল রওনক,
"তোমার ড্রেসআপের সঙ্গে টিপ'টা মানানসই না।ভাল লাগছে না ঠিক!
এবার আর চুপ থাকতে পারলো না কুহু।দাঁত কিরমিরিয়ে বলল,
" আমার কাছে আমাকে সুন্দর লাগলেই হলো।অন্যের পছন্দ,ভাল লাগায় আমার কিছু যায় আসে না।আপ.....
বাকি কথা বলার পূর্বেই কথা থামিয়ে দিল রিশা।মুখে ঈষৎ রাগ টেনে বলল,
"দু'জন এভাবে ঝগড়া করতে থাকলে রাত পেরিয়ে যাবে।মেলায় যাব কখন আমরা?
আচমকা চুপ হয়ে গেল কুহু।ততক্ষণে গিয়ে সিএনজি ডেকে নিল রওনক।মলিন মুখে উঠে বসলো কুহু।মেজাজ'টাই খারাপ হয়ে গেল।কত আনন্দ,আশা নিয়ে এসেছিল।এই জল্লাদ'টা আসবে শুনলে আসতোই না।সিএনজি'র সামনে বসা রওনক লুকিং গ্লাসে ঠিকই নজরবন্দী রাখছিল কুহু'কে।অভিমানিনী মেয়ে সর্ব রূপেই তুমি পরিপূর্ণা!নিঁখুত সুরূপা!কথাটুকু ভেবে আপন মনেই হাসলো সে!রিশা বেশ বকবক করলেও কুহু তেমন কথা বলল না।পাছে রওনক আবার কি বলে ক্ষেপিয়ে দেয় ঠিক নেই।গাড়ি গন্তব্যে আসতে'ই রিশা আর কুহু ছুটে গেল মেলার ভেতরে।ভাড়া মিটিয়ে এগিয়ে গেল রওনক।দৃষ্টি কেবল কুহু'তে আবব্ধ।অত্যল্পকালে মেয়েটা কেমন হাসিখুশিতে মেতে উঠেছে ছোট বাচ্চাদের মতো!হাসলে কুহুর থুতনিতে একটা দাগ পড়ে!যেটা মেয়েটার সৌন্দর্য দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়!চারিদিকে প্রায় অনেক দোকানপাট।কয়েকটা খাবারের আর বেশ কয়েকটা মেয়েদের সাজ সরঞ্জাম!অন্যপাশটায় ছোট পরিসরে বসেছে নাগরদোলা,নৌকা।গান বাজছে সেদিকটায়।কুহু হাত ধরে রিশাকে টেনে নিয়ে গেল চুড়ির দোকানে।বেশ উৎসাহ নিয়ে চুরি দেখায় ব্যস্ত রিশা।নিজের হাতেও পরে দেখছিল।রওনক এগিয়ে এসে রিশাকে পছন্দ করে দিল চুড়ি।ভাইয়ের পছন্দ একেবারে মনমতো হলো রিশার।দোকানি মহিলার দিকে টাকা বাড়িয়ে দিয়ে কুহুর দিকে দৃষ্টিপাত করলো রওনক!গাঢ় নীল রঙের কাঁচের চুড়ি হাতে পরে দেখছিল কুহু।গম্ভীর স্বরে বলল রওনক,
"একদম বাজে লাগছে ওটা!
ভরাট স্বরে চমকে তাকাল কুহু!মেজাজ বিগড়ে গেল তার।ভাইয়ের বাড়াবাড়ি ভাল লাগছে না রিশার।চুড়িগুলো দ্রুত হাত থেকে খুলে নিতে লাগলো কুহু।শেষের টা খুলতে গিয়ে অসাবধানতায় হাত অনেকটা কেঁটে গেল!চেহারায় স্পষ্ট উদ্বিগ্ন ফুটে উঠলো রওনকের!কাঁটা স্থানটা চেপে ধরলো কুহু।বিচলিত হয়ে হাত দেখছে রিশা।পকেট থেকে রুমাল বের করে নিয়ে কুহুর হাত চেপে ধরলো রওনক।ঝাপসা চোখে মুখ তুলে তাকাল কুহু!হাত শক্ত করে রাখলো।তার নারী শক্তি পেরে উঠলো না শক্তপোক্ত পুরুষ হাতের শক্তির সাথে।খুব যত্ন আর মনোযোগ নিয়ে হাত বেঁধে দিল রওনক।কোনোরকম রা করলো না কুহু।অজানা এক অসস্থি তাকে গলাধঃকরণ করে নিচ্ছে যেন!আর একমুহূর্তও থাকতে ইচ্ছে হচ্ছে না।হাত শক্ত করে ধরে রেখেই কালো রঙের একডজন চুড়ি হাতে তুলে নিল রওনক।বিস্মিত দৃষ্টি রিশার!নিজ হাতে কুহু'র অন্য হাতে চুড়ি পরিয়ে দিল রওনক।হতভম্ব,নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইল কুহু!কিরুপ প্রতিক্রিয়া জানাবে মস্তিষ্ক জানান দিল না!বিল পরিশোধ করতে করতে বলল রওনক,
"ছিচকাদুনে মেয়ে!সামান্য হাত কেঁটেছে বলে কেমন কাঁদছে!লোকে দেখলে হাসবে!
এক হাতের পিঠে চোখমুছে ব্যাগ থেকে টাকা বের করলো কুহু।চুড়িওয়ালিকে বলল তার চুড়ির দাম রাখতে।রওনকের দিকে ফিরেও তাকাল না।দোকানী মহিলা বলল,
" তোমার স্বামী তো টাকা দিল মাত্র'ই!
মহিলার কথায় ভয়ানক রেগে উঠলো কুহু!চোখমুখ কুঁচকে গেল বিশ্রিভাবে।কপালে হাত রেখে তপ্ত শ্বাস ফেলল রিশা।একটু আগে ভাইয়া কুহুকে চুড়ি পরিয়ে দেওয়ায় হয়তো মহিলা ভেবে নিয়েছে ওরা স্বামী-স্ত্রী!টাকাটা চুড়ির উপর ছুঁড়ে ফেলে বলল কুহু,
"কোন এঙ্গেল থেকে এই জল্লাদ,রগচটা লোকটাকে আমার জামাই মনে হলো আপনার?মানুষের সম্পর্কে কোনো ধারণা রাখার আগে অন্তত জিগ্যেস করে নিবেন।যত্তসব পাগল।
আচমকা কুহুর এই ভয়ানক রূপ দেখে হতবুদ্ধি হয়ে গেল চুড়িওয়ালী!পরিস্থিতি ঠিক করতে কুহুকে টেনে নিয়ে চলে গেল রিশা।রওনক বেশ বিনয়ের সহিত চুড়িওয়ালিকে বলল,
" কিছু মনে করবেন না প্লিজ।বউ আমার এমন অভিমানী আর পাগলেটেই!হুটহাট মাথা গরম হয়ে যায়।আবোলতাবোল বলে ফেলে।খুব কষ্টে সামলাই আমি।
আফসোসের সুরে বলল চুড়িওয়ালী,
"তোমার ধৈর্য্যের প্রশংসা করতে হয় বাবা!মাইয়াটার ভাইগ্যে অনেক ভালা।কয়জন স্বামী এমন রাগ সামলায়?
ছোট্ট একটা হাসি ফিরিয়ে দিয়ে চলে গেল রওনক!রিশা বায়না ধরলো নাগরদোলায় চড়বে।কুহুর আবার একটু-আধটু ভয় কাজ করে।মাথা ঘুরায় তার।রিশা উঠে হাত বাড়িয়ে দিল কুহুর দিকে।ভয় নিয়েই উঠলো কুহু।রওনক দ্রুত এগিয়ে এসে এক লাফে উঠে বসলো।অন্যপাশ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো কুহু।রিশা চোখের দৃষ্টিতে ভাইকে বুঝিয়ে দিল সে যেন আর কোনো গন্ডগোল না বাঁধায়।কুহুর মুখোমুখি বসলো রওনক।নাগরদোলা চলতে শুরু করলেই চোখমুখ ভয়ানক খিঁচে নেয় কুহু!উপর থেকে নিচে নামার সময়টা বড্ড ভয়ানক লাগে!সম্মুখে থাকা রওনকের হাঁটুতে খাঁমচে ধরে বেখেয়ালি!আঘাত পেলেও সে দিকে তোয়াক্কা নেই রওনকের।কুহুর ভয়ার্ত মুখশ্রী তাকে অস্থির করে তোলে!সম্ভব হলে এক্ষুনি এই অভিমানিনী'কে বুকের মাঝে আগলে নিয়ে সমস্ত ভয় দূর করে দিত!রিশা বেশ ইনজয় করছে।কিছুক্ষণ চলতেই থামিয়ে দিতে বলল রওনক।কুহু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে তাকাল সামনে থাকা পুরুষের পানে!কপালে পরে থাকা চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে রওনকের!কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে নেমে পরে কুহু।রওনক নেমে আসতেই মুখ বাঁকিয়ে রিশার উদ্দেশ্যে বলে কুহু,
"তোর ভাই যখন এত ভীতু তাহলে কেন উঠতে গেল নাগরদোলায়?ভয়ে একবারে থামিয়েই দিল মাঝপথে!
কুহুর কথায় বিস্ফোরিত দৃষ্টি ফেলে তাকাল রওনক!যার জন্য করলো চুরি সে-ই কিনা বলে চোর!এই মেয়ে তো মারাত্মক সাংঘাতিক!রিশা ঠোঁট টিপে হাসছে ভাইয়ের গোবেচারা মুখ দেখে!দূরের দোকানে লাড্ডু দেখে এগিয়ে গেল কুহু।ভীষণ পছন্দের খাবার তার!রিশা মিষ্টি ততটা খায় না।ফুচকার দোকানের দিকে গেল সে।রওনক এগিয়ে গেল কুহুর কাছে।মুখ ভর্তি করে লাড্ডু খাচ্ছে কুহু।পাশেই একদল ছেলে লোলুপ দৃষ্টি ফেলে দেখছিল কুহুর গৌরবর্ণ পৃষ্ঠদেশ!নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছে কিছু।অস্পষ্ট শোনাল তা।মুহূর্তে ভয়ানক রাগ হলো রওনকের।কপালে পরলো ভাজ।এই জন্যেই মেয়েটাকে বলে ড্রেসিং সেন্স ভাল নয়!ঘোমটা টেনে দিলে কি এমন ক্ষতি হতো?দু-কদম এগিয়ে গিয়ে কুহুর চুল থেকে হেয়ার ব্যান্ড খুলে নিল রওনক।মুহূর্তে একগোছা চুল ঢেকে দিল কুহুর অর্ধাংশ উন্মুক্ত পিঠ!চমকে তাকাল কুহু!চোখ-মুখ শক্ত করে বলল রওনক,
"চুল বাঁধা অবস্থায় একটুও ভাল লাগছিল না।রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে গেলে আশেপাশে খেয়াল রাখতে হয় নির্বোধ মেয়ে!
ফুচকার বিল পরিশোধ করার জন্য ভাইকে ডাকলো রিশা।সেদিকে পা বাড়াল রওনক।কুহুর হতবুদ্ধি চাহনি!এই হাবলা'টার মাথায় আসলেই সমস্যা আছে নাকি বুঝতে পারলো না।রিশা বেশ অনেক্ক্ষণ যাবৎ ভাইকে বোঝাল।খামোখা কুহু'কে ক্ষেপাতে নিষেধ করলো।এমন চলতে থাকলে কুহু'কে নিয়ে সংসার করার স্বপ্ন,স্বপ্নই থেকে যাবে বলল।নত মস্তকে বোনের সব আদেশ শুনলো রওনক।পরক্ষণে রিশাকে তাড়া দিল।এমনিতে অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে।বাড়ি ফিরতে হবে তাদের।ভীড় ঠেলে লাড্ডুর দোকানের দিকে তাকাতেই দেখলো কুহু নেই!মুহূর্তে চারিদিকে অস্থির,অশান্ত দৃষ্টি ফেলল রওনক!নাহ কোথাও কুহু নেই!ভয়ে কলিজা ধ্বক করে উঠলো রিশার!
·
·
·
চলবে................................................