আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

স্যার I Love You - পর্ব ০১ - শারমিন আক্তার বর্ষা - ধারাবাহিক গল্প


আজ ৬ বছর পর, ঠিক ওই জায়গাটায় এসে দাঁড়িয়েছি। যেখানে আমার প্রাইভেট স্যারকে আমি প্রপোজ করেছিলাম। বলেছিলাম, ‘ স্যার I Love You..’ এখন সব অতীত। আমি মাঝেমধ্যেই এখানে এসে দাঁড়াই, মনটা হালকা হয়। বুকের ওপর থেকে একটা চাপ কমে যায়। যেন আমার প্রিয় মানুষের ঘ্রাণ এই বাতাসের সঙ্গে মিশে আছে। এই জায়গাটা আমাকে টানে। ভীষণ টানে। এখানে, কখনো মানুষে ভরে উঠে আবার কখনো কি শান্ত! চোখের পাতাটা ছলছল করে উঠল নিমিষে। আমি ইতি চৌধুরী! বাবা-মার একমাত্র। আমার পরে আর কোনো সন্তান হয়নি তাই, আমাকে বেশ আদর যত্ন দিয়েই বড় করেছেন তাঁরা। আমি একজন ডক্টর। ছয়টা বছরে নিজেকে পরিপূর্ণ গুছিয়ে তুলতে পেরেছি। শুধু মুভ অন করতে পারিনি। আমি তোমাকে ভালোবাসি শব্দটি স্যার কখনো আমাকে বলে নি। কিন্তু আমি যে চোখে দেখেছি, না বলা ভালোবাসা।

আমি তখন ইন্টার সেকেণ্ড ইয়ারে পড়ি, বাড়িতে প্রাইভেট পড়ায় ছিল আমার অনিহা। বান্ধবীদের সঙ্গে কোচিং সেন্টারে পড়তে চাইতাম। বাবা রাজি হত না, বলতেন, ‘ একগাদা মানুষের সাথে পড়া হবে না।’ একারণে বাবা প্রতিবার একজন করে টিউটর জোগাড় করে নিয়ে আসতেন। কলেজে পা রাখার পর থেকে কোনো টিউটরের কাছে আমি বেশিদিন পড়তাম না, অদ্ভুত সব কাণ্ড করতাম আর তাঁরা পালিয়ে যেত। আমার মন বলছিল, এবারও বাবা নতুন একজন স্যার ধরে নিয়ে আসবেন। তবে করলো ও তাই। তারপর ধীরে ধীরে স্যারের প্রতি আমার ভালো লাগা শুরু হল, এরপর তা কখন যে ভালোবাসায় রূপ নিল। অবুঝ মন বুঝতেও পারে নি। এই জায়গাটা শহর থেকে একটু দূরে, ছিমছাম পরিবেশ। মাঝে মাঝে বাতাসের সঙ্গে ভেসে আসে হাইওয়েতে চলাচল করা গাড়ির হর্নের আওয়াজগুলো। সপ্তাহে এক, দু'বার এখানে হাঁট বাজার ও মেলা বসে, তখন চারদিকে মানুষ গিজগিজ করে, তাদের কোলাহলের শব্দে চারপাশ ম-ম করে। সেদিন এখানে বিশাল বড় উৎসব চলছিল, মানুষজন ভিড় করে চারদিক। আমার অনেক আগেই চিন্তা ভাবনা করা ছিল। কোনো এক সন্ধ্যে নামলে স্যারকে প্রপোজ করবো। ওইদিন কলেজ থেকে বাড়ি ফিরার সময় উৎসব চলছে দেখে মনে হয়েছিল, আজই সঠিক সময়। আমি মাঝেমধ্যে বায়না করতাম স্যারকে সঙ্গে নিয়ে বাহিরে যাবো। স্যার প্রথম প্রথম না করলেও, পরে ঠিক সঙ্গে যেতেন। একদিন স্যারকে নিয়ে বাহিরে বের হই, সেদিন ফুটপাতে দোকান গুলো অনেক জমজমাট হয়ে উঠে। আমি আর স্যার পাশাপাশি হাঁটছিলাম। তখন একটা ঝুড়িগাড়িতে আমার একজোড়া কানের দুল পছন্দ হয়। স্যার সঙ্গে ছিল বলে, আমি কেনার আগ্রহ মুছে ফেলি। আর স্যারকে ফেলে দ্রুত হাঁটতে শুরু করি। কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করার পর বাড়ি ফিরে আসার জন্য হাঁটা ধরি। স্যারের সঙ্গে কোথাও বের হলে তিনি বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে যেতেন। কখনো আসতে না করলে উনি বললেন, এটা না-কি ওঁর দায়িত্ব! বাড়ির গেইটের কাছাকাছি এসে স্যারকে বিদায় দিয়ে যেতে যাবো। তখন স্যার পিছু ডাকলেন। আমি ঘুরে চোখে চোখ রাখতে স্যার ইশারায় কাছে ডাকলেন। আমি হেঁটে এসে সামনে দাঁড়িয়ে গেলাম। তখন স্যার বললেন, ’ তোমার হাতটা পাতো।’
‘ হাত? কেনো?’
‘ দাও। বলছি।’

আমি ডান হাতটা রাখলাম। স্যার ওঁর শার্টের পকেট থেকে কি যেন বের করে আমার হাতের তালুতে রাখল। আমি জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে। স্যার বললেন, ‘ রুমে গিয়ে দেখো। এখন যাও।’

আমি রুমে আসলাম। বিছানার উপর বসে কাগজের পেঁচ খুলতে লাগলাম। উত্তেজনা তিরতির করে বাড়ছে। স্যার প্রথমবার কোনো গিফট দিল আমাকে। হাত পা কেমন শিরশির করছে। অবশ হয়ে যাচ্ছে যেন। কাগজে পেঁচানো আমার পছন্দ করা ঝুমকাটা, যেটা আমি কিছুক্ষণ আগেই পছন্দ করে ছিলাম। স্যার, সেটা লক্ষ্য করেছিল? ইশশ, কি লজ্জা! লক্ষ্য করছে বলেই তো নিয়ে দিল। দু’মাস আমি ঝুমকা জোড়া আগলে রাখি, সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। যেদিন স্যার কে প্রপোজ করবো। সেদিন পরব। তাই আজ পরেছি। দুই ঘন্টা সময় ব্যয় করে মায়ের গোলাপি রঙের শাড়িটা পরলাম। চোখে কাজল, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক ও দুইহাত ভর্তি চুড়ি। চুলগুলো সামনের দিকে হালকা ফুলিয়ে নিয়ে পেছনে খোঁপা করেছি। মা'কে বলেছিলাম, বেলি ফুলের মালা জোগাড় করে দিতে, দারওয়ান চাচার মেয়ে দারুণ মালা বানায়। মেয়েটি আগ্রহ নিয়ে মালাটা বানিয়েছে। এবং ওঁ নিজ হাতে খোঁপায় বেঁধে দিল। সন্ধ্যা সাতটা বাজে। আমি উৎসবের জায়গায় এসে দাঁড়ালাম। একটু পর লক্ষ্য করলাম কয়েকজন পুরুষ লোক আমাকে ঘুরে ঘুরে দেখছে, আমি জায়গা পরিবর্তন করে, ব্রিজের ওপর চলে আসি। এখানে দাঁড়িয়ে জায়গাটা আরও সুন্দর লাগছিল। তখন স্যারকে দেখলাম ব্রিজে উঠে আসছেন। আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে উনি আমাকে কিছুক্ষণ দেখলেন। প্রশংসা স্বরূপ বললেন, ‘ সুন্দর লাগছে।’
আমি মৃদু হাসলাম। ল্যাম্পপোস্টের বাতি এসে উপচে পরছে স্যারের মুখে, আমি ভেতর ভেতর প্রস্তুত হলাম। এরপর স্যারের সামনে হাঁটু ভাজ করে বসলাম। আমার একহাত পেছনে ছিল এবং ও হাতে একগুচ্ছ গোলাপ ছিল, ফুলগুলো স্যারের দিকে ধরে আমি বললাম, 

‘ স্যার I Love You..! আমি আপনাকে অসম্ভব ভালবাসি।’

স্যার জবাব দিল না। হঠাৎ আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল। ফুটপাত থেকে নিচে নেমে একটা সিএনজি তে উঠে বসল স্যার। আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম, মাথাটা ঝিমঝিম করতে লাগল। আমি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। সিএনজি ধরার জন্য ব্যস্ত রাস্তায় নেমে উঠতে লাগলাম। দু-চোখ দিয়ে অঝোরে গড়িয়ে পড়ছে রক্তধারা। চোখেও ঝাপসা দেখছি। পিছন দিক থেকে একটা গাড়ি এসে ধাক্কা দিল। রক্তাক্ত শরীর নিয়ে পড়ে রইলাম। আমার শরীর থেকে রক্ত বের হয়ে পথ ভিজে যাচ্ছে। আমার চোখ আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সিএনজি চোখের আড়ালে অনেক দূরে চলে গেল। আমার জ্ঞান ফিরলো হঠাৎ, চোখ খুলে নিজেকে হাসপাতালে পাই। আমি চোখ খুলেছি দেখে নার্স ছুটে বেরিয়ে গেল। এরপর সঙ্গে ডাক্তারকে নিয়ে আসলো। ডাক্তার আমাকে দেখছেন এরইমধ্যে বাবা ও মা আইসিইউ তে আসলো। ডাক্তার হাসিমুখে বললেন, ‘ ইতি এখন সুস্থ। ওঁর কামব্যাক সত্যি অপ্রত্যাশিত। চমৎকার না হলে এমন হয় না। এই টাইপের রোগী বছরের পর বছর চলে যায় তবুও তারা ক্যামব্যাক করতে পারে না। আর একটা কথা লক্ষ্য রাখবেন, মেয়ে যেন বেশি কথা না বলে।’ সতর্ক করে চলে গেল ডাক্তার। ওঁরা কি নিয়ে কথা বলছিল আমি বুঝতে পারলাম না। দেখলাম মা কান্না করছেন। আমাকে দু-দিন পর কেবিনে শিফট করা হল, তখন আমি মোটামুটি সুস্থ। মা কথায় কথায় বলে উঠলেন, আমি দুই মাস কোমায় ছিলাম। বুকের ভেতর ধুক করে উঠল যেন। সর্বাঙ্গ যেন অসাড় হতে লাগল। মা-কে আমি প্রশ্ন করলাম, ‘ মা, আমাকে দেখতে কে কে এসেছিল?’
মা বলল, ‘ মোটামুটি সবাই এসেছিল।’
এটা আমার প্রশ্নের উত্তর নয়। আমি আবারও জিজ্ঞেস করলাম, ‘ মা! স্যার কি এসেছিল?’
‘ কোন স্যার?’ মা যেন দ্বিধায় পড়ে গেল।
আমি ছোট্ট ও ভারী নিঃশ্বাস ফেলে বললাম, ‘ শাওন স্যার। এসেছিল?’
মা একটু ভাবলো, তারপর বলল, ‘ তুই যেদিন এক্সিডেন্ট করেছিস ওইদিন পর থেকে শাওনকে দেখিনি। ওই মাসের বেতন নিতেও শাওন আসেনি। অদ্ভুত! তোর বাবা কয়েকবার কল করেছিল, ওঁর ফোন বন্ধ।’

স্যারের কাছে যাওয়ার জন্য আমি মরিয়া হয়ে উঠলাম। বাধ্য হয়ে ডাক্তার আমাকে ঘুমের ইনজেকশন দিলেন। বাবা ও মায়ের চোখ এড়ালো না কিছুই, বাবা শক্ত ও গম্ভীর কণ্ঠে মা-কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ জল এতদূর কিভাবে গড়ালো? তুমি তো বাড়িতে থাকতে, কিছুই কি লক্ষ্য করোনি? ছেলেটার ফোন ও বন্ধ। কোথায় খুঁজবো তাকে? তোমার মেয়ের অবস্থা দেখেছ?’
মা কিছু বলল না।

এক সপ্তাহ পর হাসপাতাল থেকে আমার রিলিজ দিল। আমি বাড়ি আসলাম, নিজেকে একটু গুছিয়ে নিয়ে ড্রাইভার চাচার সঙ্গে বেরিয়ে পড়লাম স্যারের বাড়ির উদ্দেশ্য। স্যারের বাড়ি আমি চিনতাম এজন্য যেতে কোনো অসুবিধা হল না। দরজায় তালা ঝুলানো। আমাদের দেখে বাড়িওয়ালা এগিয়ে আসলেন। উনার কাছে জানতে পারি, স্যার দুই, আড়াই মাস আগেই বাড়ি ছেড়েছেন। কোথায় গিয়েছেন, উনি জানেন না। এই শহরে ওঁর কোনো আত্মীয় ও নেই। কোথায় খুঁজবো? মাথা ঘুরে গেল। ড্রাইভার চাচা আমাকে বাড়ি নিয়ে এলো।

প্রতি সপ্তাহে সময় করে এই জায়গায় আসা হয়। এখন চলে যাওয়ার সময়, অনেকটা দূরে ড্রাইভার চাচা গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। উনাকে আর অপেক্ষা করাবো না। অপেক্ষা যে বহু কষ্টের, যন্ত্রণার। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হাতখানা কানে ছোঁয়া মাত্র, স্মৃতিমাখা ঝুমকা জোড়া হাতে লাগল। বাতাসে মৃদু হেলছে দুলছে। শাড়ির কুঁচি সামলে নিয়ে ফুটপাত ধরে হাঁটতে লাগলাম আমি হঠাৎ মনে হল, কেউ আমার হাত ধরেছে। স্নেহমাখা, আদুরে কণ্ঠে বলে ওঠল, ‘ চল, তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দেই।’

চোখের কার্নিশ ভিজে টুপটাপ করে অশ্রু পড়ছে। হাতের উল্টো পিঠে জলটুকু মুছে নিলাম। শূন্য আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘ স্যার, আপনি কোথায়? আর কতগুলি বছর আমাকে কষ্ট দিবেন? ফিরে আসুন। প্লিজ।’
.
.
.
চলবে...........................
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।