আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

স্যার I Love You - অন্তিম পর্ব ০৮ - শারমিন আক্তার বর্ষা - ধারাবাহিক গল্প


সকালে জানালা দিয়ে হিমশীতল বাতাস আসে। আর মিটমিট করে মিষ্টি রোদ আসে। ইতি জানালার সামনে দাঁড়িয়ে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বুকটা হালকা করে নিল। আগের থেকে এখন একটু ভালো লাগছে। ইতির চেম্বার তিনটায় থাকায় আফরোজার স্কুলে নিয়মিত ইতি যেত। হঠাৎ করেই সে যাওয়া বন্ধ করে দিল। আজ দেখা করতে গেল মুন্নির ছেলে ও আব্রুর মেয়ের সঙ্গে। সারাটা সকাল বন্ধুদের সঙ্গে কাটিয়ে দুপুরের দিকে বাসায় ফিরে তারপর হাসপাতালে যাবে। মুন্নির ছেলে দিন দিন দুষ্টু হয়ে যাচ্ছে, জোর করে আব্রুর মেয়ের কাছ থেকে খেলনা ছিনিয়ে নেয় তারপর মেয়েটি কাঁদে। কখনও কখনও দুটির খুব মিল হয়, ইতি তার পুরোনো সময়সূচীতে ফিরে এলো। যার মধ্যে কোন পিছুটান নেই।

আফরোজা ইতি খাবার ঠিকমত খাচ্ছে না। গোমরা মুখ নিচু করে বসে আছে। মুখে একটাই কথা সে মিতার কাছে যাবে। অনেক বলা সত্ত্বেও শাওন তাকে খাওয়াতে পারেনি। লুৎফুন্নাহার বললেন, 'মেয়েটা খুব ভালো। হঠাৎ আসা বন্ধ হয়ে গেল কেন বুঝতে পারছি না। এখন স্কুলেও আসে না। তিনদিন কোনো খোঁজ নেই। তুই একবার আফরোজাকে নিয়ে মেয়েটার হাসপাতালে যা। খোঁজ নিয়ে আসবি এবং আফরোজা ও তার মিতার সাথে দেখা করে আসবে।'
শাওন ঢোক গিলল। সে আবার ইতির সামনে দাঁড়াবে কী করে? মাথা কাজ করছে না। এ সময় লুৎফুন্নাহার বলেন, 'এই মেয়েকে আগে থেকে চিনিস?'
শাওন তাকাল। উত্তর দিল না। লুৎফুন্নাহার আবার বললেন, 'তোর মানিব্যাগে মেয়েটির ছবি আছে। আজ তোর মানিব্যাগে তার ছবি দেখলাম। এটা কি সেই মেয়ে যার জন্য কখনো বিয়ে করবি না বলে শপথ করেছিলি?'
শাওন চুপ করে আছে।

থামলেন লুৎফুন্নাহার। তিনি বললেন, 'মেয়েটির নাম ইতি বলে আফরোজার নাম ও তুই ইতি রেখেছিস, আমি কি এটা ধরে নিতে পারি?'
'হ্যাঁ মা। আমি তার থেকে দূরে থাকলেও আমার হৃদয় সবসময় তার সাথে ছিল, তাই আমি আফরোজা ইতির নাম রেখেছি, যাতে ইতি নামটি আমার ঠোঁটে থাকে।'
শাওন তাকাল। তারপর আবার বলল, 'হাসপাতালের নাম বলো, আফরোজাকে নিয়ে যাব।'

শাওন হাসপাতালে এসেছে। কোনো সিরিয়াল নম্বর নেই। এ কারণে তাকে চেম্বারে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। দেখা করতে এসেছেন, তাই তাকে বিশ্রাম কক্ষে বসতে দেওয়া হলো। শাওন আর্জেন্ট দেখা করতে চেয়েছিলেন। নার্স বলল, 'ম্যাম, একটু পর ত্রিশ মিনিট বিশ্রাম নিবেন, তখন কথা বলতে সুবিধা হবে। এখন তিনি রোগী দেখার জন্য সঠিকমতো সময় দিতে পারবেন না।'

কথা অনুযায়ী, নার্স ত্রিশ মিনিট পরে শাওনকে ডাকলেন। আফরোজা চেম্বারে ঢুকে ইতির কাছে গেল। ইতি অবাক হয়েছে। শাওন ইতির ঠিক সামনে বসে আছে। আফরোজা গত তিনদিনের সব ঘটনা ইতিকে খুলে বলে এবং তাকে অনেক মিস করে। হাসপাতালের বুয়া এসে চা-নাস্তা দিল। ইতির দিকে তাকিয়ে হঠাৎ শাওন বলল, 'ইতি।'
ওর কণ্ঠে এত আকুলতা ছিল, ইতি মুখ তুলে তাকাল। তারপর বলল, 'আমাকে ডাকছেন?'
'আমার সাথে কথা বলবে না?'
'কিছু বলার বাকি নেই।'
'তুমি নিশ্চয়ই বিয়ে করেছ, স্বামী কি করেন?'
'বিয়ে হয়নি।'
'কেন?'
'যাকে ভালোবাসি তাকে পাইনি।'
ইতির প্রতিটা কথাই স্পষ্ট। শাওন চুপ করে রইল।

আফরোজা কে নিয়ে বাসায় ফিরল শাওন। আফরোজা দাদি দাদি বলে লুৎফুন্নাহারের কাছে গেল। গলা জড়িয়ে ধরে বলল, 'দাদি, আমি মিতার সাথে দেখা করছি।'
'আচ্ছা তুমি এখন রুমে যাও।'
'তুই কি তাকে সব কথা বলছিস?'
'না। আমি কিছু বলতে পারিনি। আমি তাকে অসম্ভব কষ্ট দিয়েছি, মা। মা তার এই অভিমান কখনো ভাঙবে না।'

আফরোজা তার মিতাকে খুব ভালোবাসে। লুৎফুন্নাহার নাতনিকে নিয়ে একটি পরিকল্পনা করেন। রাতে খাবার টেবিলে তিনজন একসাথে বসে, গরম গরম ছুটি পরিবেশন করছে কাজের মেয়ে।
আফরোজা বলল, 'আব্বু?'
'হ্যাঁ বলো।'
'আব্বু, আম্মু লাগবে। 
হঠাৎ শাওনের কাশি শুরু হলো।
'কি, কি লাগবে?'
'সবারই আম্মু আছে, আমার নেই। আমিও আম্মুকে চাই। আমার মিতাকে নিয়ে এসো।'
শাওন শুক্লা গলা পরিস্কার করে বলল, 'ইতি, কী কথা বলছ?'
'আমি আম্মু চাই।'
শাওন ধমকে কথা বলছে দেখে লুৎফুন্নাহার বললেন, 'তুই বাচ্চা মেয়েকে ধমকাচ্ছিস কেন? এছাড়া আর কত বছর একা থাকবি? তোরও একটা ভবিষ্যত আছে, তোকেও বিয়ে করে সংসার করতে হবে।'
'তুমি বুঝ না মা আমি ওকে অনেক কষ্ট দিয়েছি।'
শাওন টেবিল ছেড়ে চলে গেল।

লুৎফুন্নাহার বললেন, 'তুমি চিন্তা করো না বুবু। তোমার জন্য আম্মু নিয়ে এসে তোমার দাদি শান্ত হবে।'
লুৎফুন্নাহার রুমে এলেন। ঘড়িতে সময়ের দিকে তাকিয়ে দশটা বাজার অপেক্ষা করছেন। রাত দশটার দিকে ইতিকে কল দেন। মিনিট পাঁচেক কথা বলার পর একটা লেকের নাম বলল, যেখানে কাল আসতে অনুরোধ করল। ইতি আসবে।

কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল। গ্রামে এখন হালকা শীত। ধান শিশিরে ভেজা। লুৎফুন্নাহার ইতির সাথে টং এর দোকানে বসল। অনেকক্ষণ পর লুৎফুন্নাহার বললেন, 'ইতি মা, তোমাকে এখানে আসতে বলেছি কারণ আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই।'
'হ্যাঁ আন্টি বলুন।'
লুৎফুন্নাহার বললেন, 'আমার শাওন খুব চাপা স্বভাবের। কখনো মুখ ফুটে কিছু চায়নি। আমার দুটি সন্তান, প্রথমটি একটি কন্যা, সে আর এই পৃথিবীতে বেঁচে নেই। শাওন তার চেয়ে চার বছরের ছোট ছিল সে তার বড় বোনকে ভালবাসত, সে হঠাৎ তার বিয়ের রাতে পালিয়ে যায়। আমার স্বামী তার অনুপস্থিতির কারণে ব্রেন স্টেম মারা গেছে। এরপর আর আমরা ওই মেয়ের সাথে যোগাযোগ করিনি। ধীরে ধীরে আমিও অসুস্থ হতে লাগলাম। গ্রামের ক্ষেত ফার্ম, স্বামীর পেনশনের টাকায় সংসার চলত। শাওন ভালো ছাত্র ছিল তাই শহরের একটি কলেজে চান্স পায়। আমরা গ্রাম থেকে শহরে আসি। লেখাপড়ার পাশাপাশি ছেলেটি টিউশনি করে স্নাতক শেষ করেছে। দুর্ভাগ্যবশত, একা মা হওয়ার কারণে আমি এখানে অবদান রাখতে পারিনি। এমনকি স্নাতক শেষ করার পরে, চাকরি পাওয়াটা ছিল বিদ্রুপের বিষয়। তারপরও সে কয়েকটা টিউশনি করেছে ততক্ষণে আমি প্রায় মরি মরি অবস্থা। জানিনা কত রাত সে আমার সাথে হাসপাতালে ছিল। যদিও কখনো বিরক্ত হয়নি। তার কোন বন্ধু ছিল না তাই সে প্রতিদিনের ঘটনা আমার সাথে গল্প করে বলত। হঠাৎ রাস্তায় একটি মেয়ের সাথে দেখা এবং তারপর তাকে টিউটর করা সব বলেছে। সেদিন মেয়েটির জন্মদিন ছিল, শাওন খুশিতে প্রস্তুতি নিচ্ছিল, হঠাৎ আমার শরীর খারাপ হয়ে গেল। আমাকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে গেল। ডাক্তারকে পরে পুলিশ ভুল অপারেশনের জন্য গ্রেপ্তার করেছিল এবং ততক্ষণে আমরা মাদ্রাজে পৌঁছে যাই। মাদ্রাজে কয়েক মাস চিকিৎসা করিয়েছিলাম। আমি যখন সুস্থ হয়ে ফিরে আসবো, তখন সেখানে আমার মেয়েকে দেখি, আমার মেয়ের দুটি কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে, অপারেশন হবে। আমাকে ও শাওনকে দেখে সে অনেক কেঁদেছিল। বলে, আল্লাহ আমাকে এত কষ্ট দিয়েছেন আমি তোমাকে কষ্ট দিয়েছি, তোমার নাক ডুবিয়েছি তাই। আমাকে ক্ষমা করে দিও। শীলা শাওনকে বলল, ভাই, আমার মেয়েকে দেখিস। তার স্বামী তাকে হাসপাতালে রেখে যায় আর ফিরে আসেনি। আমার ছোট নাতনি আফরোজা হাসপাতালের বারান্দায় এক শ্রমিকের কোলে ঘুমাচ্ছিল। ওর তখন দুই বছর। শাওন তাকে প্রথম কোলে নিল। অপারেশন শেষ হলে খবর এলো আমার মেয়ে চলে গেছে। দুদিন পর থানা থেকে ফোন আসে। শীলার স্বামীর মাদ্রাজে একটি ছোট কোম্পানি ছিল, তিনি একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান। এরপর দুই মাস আমরা শোকে ছিলাম। আফরোজাকে নিজের মেয়ে হিসেবে পরিচয় দিল শাওন। তারপর ওঁর শেষ নাম রাখল ইতি। আফরোজা জানে না শাওন তার বাবা নয়, তার মামা। কয়েক বছরে শাওন আফরোজার বাবার ছোট ব্যবসাকে বড় করেছে। আমি তাকে প্রায় বিয়ের কথা বলেছি। কিন্তু সে বিয়ে করবে না। কারণ সে সেই মেয়েটিকে খুব খারাপভাবে আঘাত করেছিল, মাদ্রাজ যাওয়ার দুই সপ্তাহ পরে শাওন মেয়েটির এক বন্ধুকে ফোন করেছিল। সে মেয়েটির ভয়াবহ দুর্ঘটনার কথা বলে এবং জানায় মেয়েটি দুই সপ্তাহ ধরে কোমায় রয়েছে। সে ছেলেটি শাওনের উপর দোষ দেয়নি কিন্তু শাওন জানত এখানে সব দোষ তার। শাওন পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছিল এবং আমাকে এমন অবস্থায় ছেড়ে আসতেও পারেনি।' লুৎফুন্নাহার হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে আবার বললেন, 'আমার ছেলে মেয়েটিকে তার কল্পনার চেয়েও বেশি ভালোবাসে। কিন্তু আফসোস, সে তা জানে না। তার সম্পর্কে সব জেনেও আমি তার নাম বা চোখে কখনই দেখিনি। শাওনের মানিব্যাগে মেয়েটির একটি ছবি আছে, আমি গতকাল মেয়েটির ছবিটা দেখেছি। সে তুমি।'
ইতির চোখ থেকে এক ফোঁটা জল পড়ল, তারপর দুই ফোটা, তারপর আরও অনেক। 
লুৎফুন্নাহার হঠাৎ ইতির হাত ধরে বললেন, 'তুমি আমার ছেলেকে বিয়ে করো মা। তার অগোছালো জীবন নিখুঁতভাবে গুছিয়ে দাও। শাওন যে তোমাকে ছাড়া অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।'
 
সন্ধ্যা ছয়টা বাজে। ইতি ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর শাওন এলো। ইতিকে দেখে সে একটু অবাক হলো। শাওন বলল, 'ইতি?'
ইতি শাওনের দিকে তাকাল না। সুক্ষ্ম গলায় বলল, 'বলুন স্যার।'
'আমি আর তোমার স্যার নই।'
'চিরদিন থাকবেন।'
শাওন কথা খুঁজলো। বলল,
'প্রতিদিন এখানে আসো?'
'হ্যাঁ। পুরানো স্মৃতি আলিঙ্গনে আবদ্ধ করি।'
'ব্যাথা করে না?'
'সব কষ্ট একে একে সুখের কাছে বিলিয়ে দিতে হয়।'
হাইওয়ে রোড হরহামেশাই বাজছে। বাতাস ঠান্ডা। ইতি গম্ভীর ভঙ্গিতে সামনের দিকে তাকায়। সে একবারও শাওনের দিকে তাকায়নি।
 হঠাৎ কন্ঠ তুলল ইতি, 'স্যার?'
'হুম, বলো।'
' আমাকে বিয়ে করবেন।'
'হুম? কি?' চমকে উঠল শাওন।
ইতি ঘুরে দাঁড়াল। শাওনের দিকে তাকিয়ে বলল,
'চলুন বিয়ে করি।'
 'এটা সম্ভব না ইতি, আমার একটা মেয়ে আছে।'
'আপনার বলে কিছু নেই, স্যার, এখন থেকে আপনাকে যা আছে সবই আমার। আফরোজা আমারও।'
শাওন দুই আঙ্গুল নিয়ে নাকের মাঝখানে রাখল। চোখ বন্ধ করে ভাবছে। ইতি হঠাৎ তাকে জড়িয়ে ধরল। হতভম্ব হয়ে গেল শাওন।

এক সপ্তাহ পর। খুব ধুমধাম করে বিয়ে করল ইতি আর শাওন। আফরোজা ছুটে এসে শাওন আর ইতির মাঝখানে বসে খুশি মনে বলল, 'আজ আব্বু আর আম্মুকে একসাথে পেলাম। আজ থেকে আমি আমার আব্বু-আম্মুর কাছে থাকব।'
লুৎফুন্নাহার রুমে এলেন। আফরোজা কে বললেন, 'আজ না বুবু আরেকদিন থাকবে। আজ তুমি দাদির বিছানায় যাও।'
'দাদি আজ নয় কেন?'
লুৎফুন্নাহারের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আফরোজা। তিনি এখন এই ছোট মেয়েকে কি করে বোঝাবেন আজ কেন নয়? লুৎফুন্নাহার আফরোজাকে প্রলুব্ধ করে রুম থেকে নিয়ে যায়।
ইতি বিছানা থেকে নামল। তারপর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের দিকে তাকাল। প্রতিটি মেয়ের স্বপ্ন একদিন বউ হওয়া। শাওন এগিয়ে গেল। পিছন থেকে ইতিকে জড়িয়ে ধরে বলল, 'কি দেখছ?'
'আমাকে।'

খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠল ইতি। লুৎফুন্নাহারকে রান্নায় সাহায্য করছে সে। আফরোজা এগিয়ে এলো। ইতির হাত ধরে টেনে নিয়ে বলল, 'আমি খাব।'
ইতি আফরোজাকে পরোটা মাংসের ঝোল মাখিয়ে খাওয়াচ্ছে। হঠাৎ শাওন ডেকে উঠল, 'ইতি।'
আফরোজা বলল, 'জি আব্বু।'
ইতি বলল, 'হ্যাঁ?'
দুই হাতে দুটি শার্ট নিয়ে শাওন অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। লুৎফুন্নাহার হাসতে হাসতে চেয়ার টেনে বসলেন। তারপর হাসিমুখে বললেন, 'কাকে ডাক দিচ্ছ বাবা?'
শাওন ঠোঁট চেপে বলল, 'কাউকে না।'
ইতি কিছুক্ষণ পর রুমে এলো। শাওন আজ যে পোশাকটি পরবে তা বেছে দিল। গম্ভীর ভাব নিয়ে এগিয়ে এলো শাওন। পিছন থেকে ইতিকে জড়িয়ে ধরে ওর কানের কাছে ঠোঁট রেখে ফিসফিস করে বলল, 'ভালোবাসি বউ।'

ছয় মাস পর। 
শাওন অফিস থেকে বাসায় এসেছে। শাওনের মুখে মিষ্টি পুড়িয়ে দেন লুৎফুন্নাহার। শাওন কথা বলতে পারছে না। আফরোজা বলল, 'তাত্তাড়ি খাও আব্বু, তারপর আমার মিষ্টিটাও খেতে হবে।'
শাওন মিষ্টিটা শেষ করে জিজ্ঞেস করল, 'আজ এত মিষ্টি কেন?'
লুৎফুন্নাহার শাওনের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, 'তুমি বাবা হতে যাচ্ছ, আমি দাদি।'
আফরোজা বলল, 'আর আমি বড় আপু।'
শাওনের চোখ বড় হয়ে গেল। জিজ্ঞাসা করল,
'ইতি কোথায়?'
'আব্বু, আম্মু ঘরে।'

শাওন রুমে এলো। ইতিকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিল। তারপর হঠাৎ কোলে তুলে নিল। শাওন প্রফুল্লভাবে বলল, 'আমি আজ ভীষণ খুশি এবং তুমি আমাকে এই সুখ দিয়েছ।'
ইতি লজ্জায় লাল হয়ে গেল। সে শাওনের বুকে মুখ লুকিয়ে দুর্বল গলায় বলল, 'আপনাকে একটা কথা বলব?'
'হুম। একটা বা যত খুশি বল, আমি সব শুনব।'
ইতি শাওনের গলা জড়িয়ে ধরে। ঠোঁট কানের লতিতে স্পর্শ করে ফিসফিস করে বলল, 'স্যার I Love You!'
 
শাওন ইতিকে বিছানায় বসিয়ে দিল। তারপর তার পেটে হাত রেখে আস্তে করে বলল, 'ভালোবাসি আমিও।'
.
.
.
সমাপ্ত.......................
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।