স্যার I Love You - পর্ব ০৭ - শারমিন আক্তার বর্ষা - ধারাবাহিক গল্প


ইতি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। বেশ কয়েকবার শাড়ি পরার পর সে এখন শাড়ি পরতে পারদর্শী। শাড়ি পরলে মেয়েদের হালকা সাজতে হয়, হালকা সাজে খুব সুন্দর দেখায়। এটা হয়তো অনেকেই জানে না। ইতি চোখে কাজল দিল তারপর কিছু চুড়ি পরে নিল। কপালে ছোট্ট একটা কালো টিপ দিল। স্যারকে জায়গার ঠিকানা পাঠিয়ে ইতি বাসা থেকে বের হল।
আজকাল, যখন ইতি স্যারের সাথে দেখা করতে চায়, প্রথমে যে কথাটি মাথায় আসে তা হল শাড়ি পরার। দখিনা হাওয়ায় খোলা চুলগুলো চোখ-মুখে উড়ে আসছে। এক হাতে চুল সরিয়ে ইতি সামনের দিকে তাকাল। শাওন তার দিকে এগিয়ে আসছে। কালো টি-শার্ট পরা তাকে খুব সুন্দর লাগছে। ইতি অপলক চোখে তাকিয়ে আছে। শাওন এসে তার সামনে দাঁড়াল। ইতির ধ্যান ভেঙ্গে গেল।
শাওন মৃদু গলায় বলল, 'তুমি শাড়ি পরেছো।'
'আম্মু আমাকে পরার জন্য শাড়ি দিয়েছে।'
'আচ্ছা। আমাকে আসতে বললে কেন? এই কয়দিন ঠিকমতো পড়েছ তো?'
হতভম্ব মুখে বলল ইতি,
'আমি এখানে পড়াশোনার কথা বলতে আসিনি।'
'তাহলে কিসের জন্য আসছ?'
ইতি জোরে নিঃশ্বাস ফেলল। চারপাশে তাকিয়ে দেখল, কোনো মানুষ নেই। ইতি হঠাৎ হাঁটু গেড়ে বসে শাওনের পা চেপে ধরল, শাওন অবাক হয়ে গেল। শাওন বিভ্রান্ত গলায় বলল, 'কি করছ? পা ছাড়ো।'
'স্যার আমাকে বিয়ে করুন। বিশ্বাস করুন আমি আগের মতো নেই। বদলে গেছি শুধু আপনার জন্য। আমি আপনাকে ছাড়া এক মুহূর্তও থাকতে পারি না। আমি বিয়েতে রাজি। চলুন বিয়ে করি।'
শাওন অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ইতি হঠাৎ তার দিকে তাকিয়ে বলল, 'স্যার i Love You...'
শাওন হাসলো। তারপর নরম গলায় বলল, 'আমিও তোমাকে ভালোবাসি ইতি! যেদিন তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম সেদিন থেকেই তোমাকে ভালোবাসি।'

ইতি উঠে দাঁড়াল। হঠাৎ শাওনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। শাওন অকপটে বলল, 'ইতি আমি শ্বাস নিতে পারছি না।'
ইতি স্যারকে আরও শক্ত করে ধরে রাখল। এই ভয়ে ছেড়ে দিলে অদৃশ্য হয়ে যাবে। একটু এদিক ওদিক নড়াচড়া করতে করতে পড়ে গেল ইতি। ব্যথায় চিৎকার করে উঠল। সে চোখ খুলে দেখল সে তার ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে। বালিশ জড়িয়ে ধরে। বিরক্ত হয়ে গেল। তারপর মোবাইলে টাইম চেক করল, স্যার সকাল ৬টায় ফোন করেছে, এখন ৮টা বাজে। এই দুই ঘন্টার ঘুমের মধ্যে সে এমন স্বপ্ন দেখে ফেলছে। হা হা করে হেসে উঠল।

ক্লাসের বন্ধুরা আমার স্বপ্ন শুনে হাসছে আর হাসছে। ওরা খুব মজা পাচ্ছে, রুবেল বলল, 'যেহেতু তুই আজ স্বপ্ন দেখছিস, তাহলে সেটা সত্যি কর।'
'তুই যেহেতু আজ স্যারের সাথে দেখা করতে যাচ্ছিস, মনের কথা খুলে বলিস। আর তিন দিন আগে তোর জন্মদিন চলে গেছে।' আব্রু বলল।

হাসপাতালের অন্য একজন ডাক্তার শাওনকে তার চেম্বারে একা ডাকলেন। তিনি সত্যটা তাকে বললেন, যে ডাক্তার তার মায়ের অপারেশন করেছিলেন তিনি ভুল অপারেশন করে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে গেছেন এবং পুলিশ তাকে খুঁজছে। তার ভুল চিকিৎসায় এরই মধ্যে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু কোনো সাক্ষী প্রমাণ নেই। ডাক্তার শাওনকে তার মাকে ভালো জায়গায় নিয়ে গিয়ে ডাক্তার দেখানোর পরামর্শ দিলেন। নইলে বেশিদিন টিকবে না। শাওন দুই দিনে গ্রামের তিন বিঘা জমি বিক্রি করে, টাকা জোগাড় করে, মাকে মাদ্রাজে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাবে। সকালে বাসায় আসার পর সব গুছিয়ে নিয়েছে। রাতেই মাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হবে এবং সেখান থেকে বিমানবন্দরে যাবে। তার আগে একবার ইতি আর তার বাবার সাথে দেখা করবে। শাওন তার পরিকল্পনার কথা কাউকে বলেনি। সব নিজের কাছে গোপন রেখেছে। সময় হলে শুধু আকাশে উড়বে।

 সন্ধ্যা ছয়টা বাজে। ইতি শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে আছে। ইতির সামনে বসে দারোয়ান মামার মেয়ে ফুলের মালা সাজিয়ে দিচ্ছে, সে ফুল শেষ করে ইতির চুল বাঁধবে। ইতি আজ একটু মেক আপ করছে। যার জন্য তাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। গাড়িতে করে মেলায় এসেছে ইতি। শাওন ফোন করে বলে যে তাকে নিতেযেতে হবে না, সে নিজেই আসবে। কিছু পুরুষ লোকের দৃষ্টি পছন্দ করছে না ইতি। মেলা থেকে বের হয়ে ওভারব্রিজে উঠতে শুরু কর। একটু উপরে উঠল। এখান থেকে রাতের শহরটি আশ্চর্যজনক সুন্দর লাগছে। স্যার কাছে এসে কল করল। ইতি বলল সে ব্রিজে আছে। শাওন ফোনটা পকেটে রেখে ব্রিজে উঠে এলো। স্যার আগের মত ইতিকে দেকে হাসল না। চাপা গলায় বলল, 'সুন্দর লাগছে।'
ইতি ল্যাম্পপোস্টের আলোয় শাওনকে দেখে। হেসে বলল, 'ধন্যবাদ স্যার।'

ইতি নিজেকে প্রস্তুত করল। তারপর এক হাঁটু গেড়ে বসল। শাওনের দিকে একগুচ্ছ গোলাপ এগিয়ে দিয়ে বলল, 'স্যার I Love You..! আমি আপনাকে ভালোবাসি।'

শাওন মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে। কোন উত্তর নেই। ইতির মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল। শাওন উল্টো ঘুরে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল। কিছুদূর যাওয়ার পর হাত দিয়ে একটা সিএনজি থামিয়ে তাতে উঠে পড়ল। ইতি অবিশ্বাসের চোখে তাকাল। চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। ইতি ফুটপাথে থেকে নেমে, ব্যস্ত রাস্তায় দৌঁড়ে গেল। হঠাৎ একটি ট্রাক এসে তাকে ধাক্কা মারল। ঘটনাটি অতি জলদি হল। রাস্তা রক্তে ভিজে যাচ্ছে। লোকজন জড়ো হল, আবদুল মিয়া ছুটে এসে ভিড় ঠেলে ইতিকে দেখে চিৎকার করে বলে, 'মামণি।'

দুই মাস পর চোখ খুলল ইতির। সে হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে। নাসিমা বেগম মেয়ের পাশে বসে একা একা কথা বলছেন। তার বিশ্বাস ছিল ইতি তার কথা শুনে। ইতিকে কোমা থেকে ফিরে আসতে দেখেননি। ইতি আস্তে করে বলল, 'আম্মু।'
নাসিমা নার্সকে বললেম, 
'আমার মেয়ের জ্ঞান ফিরছে, অবিলম্বে ডাক্তারকে জানান।'
ডাক্তার এলেন। ইতির চেক-আপ করে বললেন, 'তার প্রত্যাবর্তন সত্যিই অপ্রত্যাশিত। এ ধরনের রোগী বছরের পর বছর শয্যাশায়ী থাকেন। কিছু মানুষের কপাল ভালো থাকলে সজ্ঞান ফিরে পায়, আবার কেউ কেউ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এমনই থাকে। ইতি খুব ভাগ্যবান।' ডাক্তার যাওয়ার আগে ইফাদ সিকদারের সাথে অনেক কথা বলে যা ইতি শুনতে পায়নি। তার কদিন কথা বলা নিষেধ। এ সময় যতটা সম্ভব কম কথা বলা উচিত। দুদিন পর ইতি জানতে পারল তার একটা ভয়ানক এক্সিডেন্ট হয়েছে। দুই মাস কোমায় ছিল ওঁ। ইতি দুর্বল গলায় বলল, 'আম্মু।'
'তোমার কথা বলার দরকার নেই মা, শুয়ে পড়।'

কয়েকদিনে ইতি মোটামুটি সুস্থ হয়ে উঠেছে। মেয়ের পাশে বসে আছে ইফাদ সিকদার ও নাসিমা। নাসিমা নিজ হাতে ইতিকে খাওয়াচ্ছে। ইতি হঠাৎ জিজ্ঞেস করল, 'আম্মু, আমাকে দেখতে কে কে এসেছিল?'
নাসিমা বললেন, 'প্রায় সবাই এসেছে।'
ইতি আবার জিজ্ঞেস করল, 'আম্মু! স্যার এসেছিল?'
'কোন স্যার?' নাসিমা বললেন।
ইতি একটা ছোট আর ভারী নিঃশ্বাস ফেলে বলল, 'শাওন স্যার এসেছিল?'
নাসিমা কিছুক্ষণ ভাবল, তারপর বলল, 'তোমার যেদিন এক্সিডেন্ট হয়েছিল সেদিন থেকে শাওনকে দেখিনি। ওই মাসের বেতন সংগ্রহ করতেও আসেনি শাওন। অদ্ভুত! তারপর তোমার বাবা ওকে কয়েকবার ফোন করেছিল, ওর ফোন বন্ধ।'

ইতি শাওনকে ভালোবাসে। ইতি নিজের মুখে একথা স্বীকার করেছে। এবং সে শাওনের বাড়িতে যেতে চায়। ইফাদ সিকদার চিন্তায় পড়ে গেলেন ইতিকে উত্তেজিত দেখে, নার্স একটি ঘুমের ইনজেকশন দিল। ইফাদ নাসিমাকে ইতি ও শাওনের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। নাসিমা মাথা নিচু করে বসে আছে। সন্দেহ করার মতো কিছু পড়েনি তার চোখে। ইফাদ শাওনকে খুঁজতে দুই দিন সময় নিল। সে কোথাও নেই। যেন আকাশ গিলে খেয়েছে।

ইতিকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দিল। সে একটু ফ্রেশ হয়ে নিল তারপর আবদুল চাচাকে নিয়ে শাওনের বাড়ি গলির মাথায় আসলো। বাড়িতে তালা ঝুলছে। বাড়িওয়ালা জানায়, আড়াই মাস আগে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। কোথায় যাবে? কিছু বলেও যায়নি। ইতি স্তব্ধ হয়ে গেল। পায়ে পায়ে হেঁটে গাড়ির কাছে এলো। ইতিকে দেখে মনে হচ্ছে সে গলা পর্যন্ত নেশা করেছে ঠিকমতো হাঁটতে পারছে না। এখুনি পড়ে যাবে। 
শাওনকে মাসখানেক খোঁজা হয়েছে। না পাওয়া গেল, না। 
ইতি হঠাৎ ঘুমের মধ্যে স্যার বলে চিৎকার করে উঠল। ইফাদ সিকদার মেয়ের গালে হাত রেখে বললেন, 'মামণি তুমি এভাবে আর কত নিজেকে কষ্ট দেবে?'
'আব্বু। স্যার, শাওন স্যার।'

সময় গেল, দিন গেল, বছর গেল। সময় কারো জন্য থেমে থাকে না। মন শুধু একজন বিশেষ মানুষের জন্য থেমে যায়। 
ফুফাতো বোনের বিয়ে। ফুপি ফোন করে বলে যে সবার এক সপ্তাহ আগে যেতে হবে। ইফাদ সিকদার বিয়ের দিন যাবে বলে ইতিকে আজ যেতে বলল। ইতির যেতে ইচ্ছে করে না, আজকাল কোথাও তার ভালো লাগে না। বাবা-মায়ের কথা ভেবে দুদিন আগে যাবেন বলে জানায়। হাসপাতালে রোগী দেখার সময় বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। এখন দুইটা বেজে গেছে, তাই বেশি কথা না বলে হাসপাতালের উদ্দেশ্য চলে গেল।

মায়া আপু কল দিয়েছিল। কাল সকালেই গুলশান যেতে বলেছে। ইতি যাওয়ার পরেই, তিনি ওঁকে সাথে নিয়ে কেনাকাটা করতে যাবেন। হাসপাতাল থেকে রাত দশটার দিকে বাসায় আসে ইতি। তারপর তিনটি কাপড় গুছিয়ে একটি ব্যাগে রাখল। সকালে বের হবে।

চার ঘণ্টার যাত্রা শেষে ফুপির বাসা গুলশানে পৌঁছাল ইতি। একদিন বিশ্রাম নিয়ে মায়া আপু পরের দিন থেকে তাকে নিয়ে ঘুরতে শুরু করে, যেখানেই যায় ইতিকে সাথে নিয়ে। শপিং মলে আরও বিরক্ত বোধ করছে। কিছু কিনছে না, শুধু দোকানে দোকানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ইতির পছন্দ অনুযায়ী বিয়ের পোশাক কেনা হয়েছে। 

বিয়ে বাড়িতে মানুষ মজা করছে। তাদের চিৎকারে ইতি রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেনি। মাথা ব্যথা ধরল। ফুপু চা বানিয়ে নিয়ে এলো। 'এটা নাও।'
'কি ফুপু?' 
'তোমার জন্য চা বানালাম। আমি বুঝি এখানে থাকতে তোমার কষ্ট হচ্ছে।'
ইতি কথা বলল না। চুপ করে রইল।

মায়া আপুর বিয়ে ও বিদায় সবকিছুর মধ্যে সবার আগে ছিল ইতি। এখন রাত ১টা বাজে, কাল সকালে গাজীপুর ফিরবে। 

রাস্তায় প্রচুর জ্যাম। কোনাবাড়ি যেতে পাঁচ ঘণ্টা লাগল। ইতি আবদুল মিয়াকে গাড়ি থামাতে বলল, 'চাচা গাড়ি থামান।'
আবদুল গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞেস করল, 'কি হয়েছে মামণি?'

এক তরুণী রাস্তার পাশে বসে কাঁদছে। ইতি গাড়ি থেকে নেমে মেয়েটির কাছে গিয়ে বসল। তার সাথে কথা বলল, মেয়েটি এক চাচার হাত ধরে এখানে আসছিল, ওই চাচা তাকে এখানে বসিয়ে গেল, আর আসেননি। ইতি বুঝল এই মেয়েটা মেয়েধরার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। ছোট হলেও তার বাড়ির ঠিকানা জানে। ইতি তার বাড়ির ঠিকানা জানতে চাইল। স্কুলের পোশাক পরা বোধহয় স্কুল থেকে এনেছে। ইতি প্রথমে তাকে কিছু খেতে দিল তারপর তার নাম পরিচয় জিজ্ঞেস করল।

ছোট্ট তরুণী বলল,
'আমার নাম আফরোজা ইতি।'
ইতি ভ্রুকুটি করল। তারপর বলল, 'আমার নামও ইতি। তাহলে তো আমরা মিতা হলাম।'
আফরোজা ইতি জিজ্ঞেস করল, 'আন্টি মিতা কি?'
'উম্ম, যখন কারো নাম অন্যের সাথে মিলে যায়, তারা মিতা হয়ে যায়। যার অর্থ বন্ধু।'
'তুমি কি আমার বন্ধু?'
'হুম।'

আবদুল আফরোজা ইতির বাসার ঠিকানায় গাড়ি থামায়। বাচ্চা মেয়েকে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়ল ইতি। দারোয়ান তাদের ভিতরে ঢুকতে দিল। বেল টিপারর পর একজন ভদ্রমহিলা দরজা খুললেন, অশ্রুসিক্ত হয়ে তাকিয়ে আছেন। আফরোজা ইতিকে দেখেই তাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল। দীর্ঘ তিন ঘণ্টা ধরে তাকে খুঁজছেন তারা। ইতি বিস্তারিত জানাল। লুৎফুন্নাহার আন্তরিকতা দেখাল, খাবারের ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলেন। ইতি কিছু খাবে না। মানা করে। ইতি চলে যেতে উদগ্রীব হল। আফরোজা ইতি তাকে তার স্কুলে আসার দাবি জানায়। লুৎফুন্নাহারও তাকে আবার আসার আমন্ত্রণ জানান। ইতি কথা দিল সে আবার আসবে। চলে যাওয়ার পর লুৎফুন্নাহার মাথায় হাত রেখে হায় হায় করলেন, এত কথা বলল কিন্তু মেয়েটির নাম জিজ্ঞেস করতে ভুলে গেল। আফরোজা ইতিকে জিজ্ঞেস করলে সে বলতে পারে না, সে ভুলে গেছে। শুধু মিতা টুকু মনে রাখছে।

 সপ্তাহ দুয়েক পরে। লুৎফুন্নাহার ফোন করে বললেন, ' আজ ইতির জন্মদিন। আর সে জন্মদিনে তার মিতাকে চায়। আমার নাতনি কিছুদিনের মধ্যেই তোমার প্রতি খুব আসক্ত হয়ে পড়েছে মা। সারাদিন তোমার কথাই বলে। তুমি আজ আসবে কিন্তু মা।'
ইতি আজ ফ্রি এজন্য সে যাবে বলে জানিয়ে দিল। মুন্নির সাথে কথা বলে জেনে নিল বাচ্চাদের কি পছন্দ। তারপর শপিং মল থেকে কিছু উপহার কিনলো। ইতি আজকাল প্রায় শাড়ি পরে, আজ নাসিমার সাদা শাড়ি পরল।

আফরোজা ইতির বাবা ফ্ল্যাট বেশ সুন্দর করে সাজিয়েছেন। লোকে ভরা ফ্ল্যাট। এদিকে হঠাৎ আফরোজা ইতি দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে বলল, 'তুমি আসছ মিতা? আমি জানতাম তুমি আসবে।'
ইতি মৃদুস্বরে বলল, 'আমাকে তুমি ডাকছ, আমি আসব না কেমন করে হয়? শুভ জন্মদিন।'

ইতির বাবা দূর থেকে দেখছিলেন, তিনি এগিয়ে এসে বললেন, 'আসসালামু আলাইকুম। আপনি ইতির বিশেষ অতিথি। ওর মুখে আপনার কথা অনেক শুনেছি।'
লোকটার গলা শুনে ইতি থমকে গেল। এই কণ্ঠ তার খুব পরিচিত। তার শরীর কাঁপতে লাগল। তারপর উঠে দাঁড়াল। আফরোজা ইতির বাবার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে গেল সে। ইতি ক্ষীণ স্বরে বলল, 'স্যার!'

ইতি হঠাৎ চলে গেলে ছোট্ট মেয়েটার মন খারাপ হবে ভেবে অনুষ্ঠান শেষ করে বাড়ি ফিরে আসে ইতি। সে এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না যে স্যার বিবাহিত এবং একটি মেয়ে আছে। বাসায় এসে দরজা বন্ধ করে ফুপিয়ে কেঁদে উঠল।
.
.
.
চলবে............................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন