" আ- আমি কিছু করিনি। পানি খাইনি আমি। বিশ্বাস করো পানি খাইনি আমি।"
বলেই রাফি পাশ ফিরে ব্যক্তিটিকে দেখে নিলো। ব্যক্তিটি আর কেউ নয় বরং স্মরণ। স্মরণের প্রতি বিশেষ ভীতি রয়েছে রাফি। কারণ সে যেভাবে রাম ধমক দেয় তাতে রাফির ছোট্ট আত্মাটা কেঁপে উঠে।
স্মরণ সিঁড়ি ঘরে দাঁড়িয়ে রাফিকে দেখছিলো। হঠাৎ রাফিকে সবার আড়াল হতে দেখে ভ্রু তুলে তাকায়। রাফিকে সে যতটুকু চিনে তাতে মনে হয়েছিলো নিশ্চয়ই রাফি কোনো কুবুদ্ধি এঁটেছে। তার ধারণাকে সঠিক প্রমাণ করে রাফি যে সত্যিই বৃষ্টির পানি খেয়ে নিবে এটা ভাবেনি।
চোরের মন পুলিশ পুলিশ রাফির দিকে সন্দিহান চাহনিতে চেয়ে স্মরণ বললো,
" আমি তো একবারও বলিনি তুই পানি খেয়েছিস!"
রাফি জিব কাটলো। ধরা পড়ে গিয়েছে সে! স্মরণ ক্ষণেই তার মাথায় গাট্টা মেরে বললো,
" শালা চুরি করতে গিয়ে কেমন দেখা যাচ্ছিলো জানিস?"
রাফি দৃষ্টি নত করলো। স্মরণ এবার বললো,
" ছাগল, পুরো রামছাগলের মতো দেখা যাচ্ছিলো তোকে। চোর কোথাকার! এভাবে বৃষ্টির পানি কে খায়!"
রাফি এবার ঠোঁট কামড়ে খিঁচে চোখ বুজে ফেললো। কয়েক সেকেন্ডের মাঝে মিনমিন করে বললো,
" কাউকে বলো না ভাইয়া। আম্মু মারবে আমাকে।"
বলেই সে নিরুপায় চাহনিতে চাইলো। স্মরণ তার কথার প্রত্যুত্তরে কিছু বলতে যাবে এবার পূর্বেই নীলিমা বললো,
" এই ছিলো তাহলে বৃষ্টিতে ভেজার কারণ।"
রাফি চমকে পিছে ফিরে তাকালো। নীলিমা যে কখন তার পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে টেরই পায়নি সে। ঘাবড়ে গেলো সে। এবার যে নিশ্চিত একটা ধোলাই খাওয়াট ম্যাচ হয়ে যাবে এতে সন্দেহ নেই। একদিকে স্মরণ, একদিকে নীলিমা, অপরদিকে তার মা। ভীষণ বিপদে পড়লো বেচারা।
নীলিমার কণ্ঠস্বর শোনা মাত্রই স্মরণ হাতে থাকা ছাতাটা সামান্য উঁচু করে ঘাড় ঘুরে তাকালো। দিনের আলোয় ছয় বছর পর আজ প্রথমবার নীলিমাকে দেখছে সে। গতকাল রাত হতে দুবার দেখেছে। কিন্তু দুবারের একবারোও মেয়েটা মুখ ফুটে কোনো কথা বলেনি। গতকাল দরজা থেকে লাফ দেয়া মাত্র নীলিমার সামনে পড়ে কয়েক সেকেন্ডের জন্য থ বনে দাঁড়িয়ে ছিলো সে। রাতে আবছা আলো ছায়ার খেলায় নীলিমাকে চিনতে পারেনি। কিন্তু অস্ফুট স্বরে উচ্চারণ করা তার নাম শুনে ঠিকই চিনে ফেলে স্মরণ। এরপর বাড়িতে ঢুকে তার জবাবদিহিতা, সেহরিতে একসাথে খাওয়া, মোটে দু'বার লক্ষ্য করেছে সে। মেয়েটা ভীষণ বদলে গিয়েছে। সেই ছোট নীলিমা আর নেই সে। বড় হয়ে গিয়েছে। শুনেছে অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছে। অথচ প্রথম যখন মেয়েটা প্রপোজ করে তখন সবে ক্লাস এইটে পড়তো। বয়স কত হবে, ১৪ বা ১৫। এখন সেই মেয়েরই বয়স ২১ বছর। যথেষ্ট বুদ্ধিমান হয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত তার সাথে কথা বলেনি। ভদ্রতার খাতিরে সামান্য 'কেমন আছেন'টুকুও জিজ্ঞেস করেনি। কি অদ্ভুত!
নীলিমার গায়ের রঙ বদলে গিয়েছে। পূর্বের তুলনায় আরোও উজ্জ্বল বর্ণের দেখাচ্ছে তাকে। বোধ হচ্ছে, এই বয়সে এসে তার সৌন্দর্য যেনো ঠিকরে পড়ছে। উপরন্তু বৃষ্টির ছোঁয়ায় মুখখানা আরোও স্নিগ্ধ ও শীতল দেখাচ্ছে। স্মরণ কয়েক সেকেন্ডের জন্য নীলিমার দিকে চেয়ে রইলো। একদম নিষ্পলক ও স্থির দৃষ্টিপাত তার! নীলিমা অবশ্য তা খেয়াল করলো না। সে এখন রাফিকে জব্দ করতে ব্যস্ত।
বৃষ্টি এখন অনেকাংশই কমে গিয়েছে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে। নীলিমা এগিয়ে এসে রাফি বরাবর দাঁড়ালো। কোমড়ে দু হাত চেপে গরম চোখে চেয়ে বললো,
" তাই বলে এভাবে রোজা ভেঙে ফেললি তুই!"
নীলিমার পাশে পাখি ও মানতাসাও এসে দাঁড়িয়েছে। মানতাসা জিজ্ঞেস করলো,
" কি হয়েছে রে নীলিমা?"
নীলিমা রাফির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে বললো,
" বজ্জাতটা পানি খেয়ে ফেলেছে। "
মানতাস অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
" পানি খেয়ে ফেলেছে মানে! "
" বৃষ্টির পানি খেয়ে ফেলেছে চুপিচুপি।"
রাফি নত দৃষ্টিতে মাটির দিকে চেয়ে রইলো। স্মরণের দিকে আকুতিপূর্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে বললো,
" আমাকে বাঁচাও ভাইয়া। আম্মু খুব মারবে। নীলুপুকে একটু বুঝাও।"
রাফির কথা শোনামাত্র স্মরণের দৃষ্টি নীলিমার উপর নিবদ্ধ হলো। তবে নীলিমা বাঁকা চোখে চেয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে স্পষ্ট গলায় বললো,
" চোরের ভাই ডাকাত, ডাকাতের ভাই চোর। পারফেক্ট কম্বিনেশন।"
বলেই সে স্মরণকে পাশ কাটিয়ে বাড়ির ভেতরে চলে গেলো। নীলিমার হেন কথায় স্মরণ কয়েক সেকেন্ডের জন্য হা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। নীলিমা কি বললো তার অর্থ উদ্ধারে ব্যস্ত হয়ে পড়লো সে।
***
লিলি বেগমের উত্তপ্ত মেজাজ সম্পর্কে সবারই মোটামুটি ধারণা আছে। এজন্য রাফির ব্যাপারটা কেউ বলেনি তাঁকে। সকলেই চেপে গিয়েছে, তাই রাফিও এ যাত্রায় এবারের মতো বেঁচে গিয়েছে। এই ভয়ে সে মনে মনে দৃঢ়ভাবে ওয়াদাবদ্ধ হয়েছে, আর এমন চোরামি করবে না সে। এতে ইহাকালেও বিপদ, পরকালেও বিপদ!
নীলিমা যোহরের নামাজ পড়ে এসে বিছানায় বসে জানালার গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে আছে। ভ্রু কুঁচকে হুমায়ুন আহমেদ এর ❝বৃষ্টি বিলাস❞ বইটি পড়ছে। আজ নওরীন ও তার স্বামী সাজিদের আসার কথা। এখনও আসেনি কেনো কে জানে!
তার বিক্ষিপ্ত পড়ুয়া সত্ত্বাকে খানিকটা বিরক্ত করতে রাফার আগমন ঘটলো। রাফা এসেই তার পিছে বসে জিজ্ঞেস করলো,
" তুই স্মরণ ভাইকে ওসব বলেছিলি কেনো?"
নীলিমা এ ব্যাপারে কিছুই জানে না এমন ভান করে বললো,
" কোন সব?"
" ঢং করিস না। ডাকাত, চোর এসব কি? তুই চলে যাবার পর স্মরণ ভাই পরে আমাকে জিজ্ঞেস করলো এ ব্যাপারে।"
" তো তুই কি বললি?"
" কি বলবো আর। চুপ করে ছিলাম।"
নীলিমা এবার ঠাস করে বই বন্ধ করলো। রাফার দিকে ঘুরে বললো,
" ভালো করেছিস। তো, এসব বলতে এসেছিস এখানে?"
রাফা নীলিমার বাচন ভঙ্গিতে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়লো। হতাশ কণ্ঠে বললো,
" দেখ নীলিমা, ছয় বছর আগে কি হয়েছে বা ছয় বছর ধরে কি হয়ে এসেছে এসব ভুলে যা। এ বাড়িতে দেড় সপ্তাহের মতো থাকতে হবে। রোজ স্মরণ ভাইয়ের সাথে দেখা হবে। কতদিন ইগনোর করবি উনাকে!"
নীলিমা নিঃস্পৃহ কণ্ঠে বললো,
" যতদিন দেখা হবে ততদিন।"
" পাগল তুই! "
" মনে হয়। যা, খালামনি ডাকছে তোকে।"
নীলিমার এ কথা বলার সাথে সাথে লিলি বেগমের ডাক এলো। রাফা কপাল কুঁচকে নীলিমার দিকে সন্দিহান চাহনিতে চাইলো। খানিক অবাকও হলো বটে। কই নীলিমা বলার আগে তো তার মা ডাকেনি। নীলিমা বলা মাত্রই তার ডাক এলো! অদ্ভুত!
রাফা চলে গেলে নীলিমা আবারও বইয়ে মনোযোগী হয়।
--------------------------
মাহবুব মাত্রই ওয়াশরুম থেকে বের হলো। দরজার পাশে দাঁড় করানো ওয়াকিং স্টিক নিয়ে ধীরেসুস্থে হেঁটে এসে স্মরণের পাশে বসলো সে।
মাহবুবের বাম পায়ে হাঁটুর নিচ হতে কার্যক্ষমতা অনেকাংশ কমে গিয়েছে। বছর দুয়েক আগে মহাসড়কে ভীষণ বাজেভাবে বাইক এক্সিডেন্ট করেছিলো সে। যে বন্ধুর সাথে মাহবুব বাইকে ছিলো, অর্থাৎ যে বাইক চালাচ্ছিলো, সে ছেলেটা এক্সিডেন্টের সময়ই স্পট ডেড হয়। আর মাহবুব ভীষণ বাজেভাবে আহত হয়। সেদিন প্রাণে বেঁচে গেলেও সময়ের সাথে সাথে খুইয়েছে বাম পায়ে কার্যক্ষমতা। এজন্যই ওয়াকিং স্টিকে ভর দিয়ে হাঁটে সে।
মাহবুব এসে স্মরণের পাশে বসে তার কাঁধে হাত রাখলো৷ স্মরণ ভ্রু জোড়া কুঁচকে ফেসবুক স্ক্রল করছে। মাহবুব যে তার পাশে এসে বসেছে ঠিকই টের পেয়েছে। তবে কোনো অভিব্যক্তি দেখায়নি। মাহবুব জিজ্ঞেস করলো,
" কি রে? কি দেখিস? "
" ফেসবুক। "
" তা তো দেখছিই। মুড খারাপ নাকি?"
মাহবুবের কথায় স্মরণ চট করে ফোন লক করে পাশে রাখলো৷ মাহবুবের দিকে ফিরে খানিকটা পিছে সরে বললো,
" আচ্ছা, নীলিমা আমার সাথে কথা বলছে না কেনো বলতো। "
মাহবুব জিজ্ঞাসু চাহনিতে চেয়ে নিশ্চিত হতে উল্টো একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলো,
" নীলিমা তোর সাথে কথা বলছে না?"
" না।"
" কেনো?"
স্মরণ মুখ গোঁজ করলো। সরু চোখে চেয়ে বললো,
" সেটাই আমি জানতে চাচ্ছি। "
মাহবুব স্মরণে এ মুখভঙ্গিমায় ফিক করে হেসে বললো,
" বাপু, এটা তো নীলিমা জানে। আমি এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারবো না। তুই নীলিমাকে গিয়ে জিজ্ঞেস কর।"
স্মরণ মুহূর্তেই মুখভঙ্গিমা পরিবর্তন করে নিলো। ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো,
" খেয়েদেয়ে কাজ নেই ওকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে যাবো৷ হাহ।"
" সত্যিই তো। তোর তো এখন খেয়েদেয়ে কাজ নেই। সারাদিন খালি ঘুম আর ঘুম৷ তবে আমার কি মনে হয় জানিস?"
" কি মনে হয়?"
" আমি নিজেও জানি না। "
বলেই সে হেসে ফেললো। স্মরণ এবার ভীষণ বিরক্তি নিয়ে বললো,
" আজ খুব মজা করার মুডে আছিস? "
মাহবুব চওড়া হাসি দিয়ে বললো,
" হ্যাঁ, আজ মনটা খুব ভালো।"
স্মরণ ভ্রু তুলে জিজ্ঞেস করলো,
" কেনো কি হয়েছে?"
" হয়েছে অনেক কিছু। এসব বাদ দে। আগে বল আসার আগে নীলিমার সাথে ঝগড়া করে এসেছিস? "
স্মরণ ছোট্ট নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,
" আর ঝগড়া। আমাদের দেখাই হয় না ছয় বছর যাবত।"
মাহবুব যেনো আচমকাই আকাশ থেকে পড়লো। বিস্ময়ে হা হয়ে বললো,
" ছয় বছর! সিরিয়াসলি! ছয় বছর দেখা হয় না কি করে! চাচারা যখন ঢাকা থাকতো তখন তো প্রায় শুনতাম, বড় ফুফু তোদের বাসায় গিয়েছে, তোরা বড় ফুফুর বাসায় গিয়েছিস। তাহলে দেখা হয় না কি করে!"
" হয় না দেখা। আসলে নীলিমাই দেখা করতে চায় না, দেখা করে না। "
মাহবুব এবার সন্দিহান চাহনিতে চেয়ে জিজ্ঞেস করলো,
" ও দেখা করতে চায় না? কিন্তু কেনো? কি জল ঘোলা করেছিস তুই? ওর প্রপোজের বিষয়টাকে আবার ঘাঁটাসনি তো?"
" ঘাঁটাঘাঁটির সময় পেলে তো! ঐ যে একবার ঈদে দেখা হয়েছিলো, এরপর ওকে যে রাগিয়েছিলাম, টন্ট মেরেছিলাম, তারপর থেকে আর দেখা হয়নি।"
মাহবুব অবাক হয়ে গালে হাত দিয়ে বললো,
" বাপরে! নীলিমার সেল্ফ রেসপেক্ট এত হাই লেভেলের! ভেরি ডেঞ্জারাস। "
বলেই সে স্মরণের কাঁধে হাত ঠেকিয়ে মিটিমিটি হাসতে লাগলো। এদিকে স্মরণ খানিক সময়ের জন্য চিন্তার সাগরে ডুব দিলো। তবে কি নীলিমা সত্যিই ঐ ঘটনার জন্য এতদিন তাকে উপেক্ষা করে গিয়েছে?
স্মরণের এই ভাবনার মাঝে ছেদ ঘটালো সাজিদ। বাইরের উঠোন থেকে সাজিদের উচ্চ গলার আওয়াজ ভেসে এলো,
" কোথায় সব বাচ্চা পার্টি? আমি এসে গিয়েছি।"
স্মরণ ও মাহবুব উভয়ই রুমের জানালা দিয়ে উঠোনো তাকালো। দেখলো নওরীন ও সাজিদ দুটো লাগেজ নিয়ে ভেতরে ঢুকছে। স্মরণ দ্রুত দৌড়ে বেরিয়ে গেলো, নওরীনের কাছ থেকে লাগেজ নিতে।
ইতোমধ্যে বাড়িতে থাকা প্রতিটা সদস্য বেরিয়ে এলো। এখন পর্যন্ত সাজিদ তাদের একমাত্র মেয়ে জামাই। সাজিদের প্রতি প্রায় সকলেরই আলাদা টান ও ভালোবাসা আছে। একে তো ব্যক্তিত্ব, দ্বিতীয়ত তার ব্যবহার। ছেলেটা আপাদমস্তক একজন ভালো মানুষের প্রতীক হিসেবে চলাফেরা করে।
রাফি ও পাখি এসেই সাজিদকে জড়িয়ে ধরলো। দুজনেরই উচ্চতা প্রায় সাজিদের বুকের নিচ বরাবর। পাখি এক গাল হেসে জিজ্ঞেস করলো,
" কেমন আছেন দুলাভাই?"
সাজিদ পাখির গাল টিপে মৃদু হেসে বললো,
" ভালো আছি মাই লিটল বার্ড। তুমি কেমন আছো?"
" খুব ভালো আছি।"
" আর এই যে বজ্জাতের হাড়,আপনি কেমন আছেন?"
বলে সে রাফির গাল চেপে ধরলো। রাফিও পাখির মতো জবাব দিলো। এরপর সাদ এসে সাজিদের সাথে করমর্দন করে জিজ্ঞেস করলো,
" কেমন আছেন দুলাভাই? "
সাজিদ প্রশংসিত সুরে বললো,
" আরে আমাদের আইটি ইঞ্জিনিয়ার সাহেব যে! ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?"
" আমিও ভালো আছি। "
এরপর একে একে স্মরণ, মাহবুব, রাফা ও মানতাসা এসে সাজিদের সাথে দেখা করলো। নীলিমা গিয়েছিলো ওয়াশরুমে। যখনই শুনেছে নওরীন ও সাজিদ এসেছে, দ্রুত এক দৌড়ে উঠোনে চলে এসেছে। এসেই সে সাজিদের বাহুতে আলতো ঘুষি মেরে বললো,
" ইয়ে দুলাব্রো! হোয়াটস আপ?"
নীলিমাকে দেখা মাত্রই সাজিদ ফুর্তিতে হেসে বললো,
" অল গুড বাডি। তোমার অবস্থা কি!"
" এজ ওলয়েজ গুড।"
" তো জার্নির সময় সমস্যা হয়নি তো? এই মেয়েটা বমি-টমি করে ডিস্টার্ব করেনি তো?"
বলেই সে নওরীনের দিকে আঙুল তাক করলো। সাজিদের জবাব দেয়ার পূর্বেই নওরীন গাল ফুলিয়ে কপট রাগ নিয়ে বললো,
" আমিই চলে যাই। এতজন গেট পর্যন্ত আসলো, অথচ কেউই আমার খোঁজ নিলো না। সবাই সাজিদকে নিয়ে ব্যস্ত। আমি গেলাম সিরাজগঞ্জ।"
বলেই সে যাবার জন্য পা বাড়ালো। স্মরণ হাসলো। এগিয়ে এসে নওরীনের হাত চেপে বললো,
" আরে আমাদের আদরের সিস্টার, এত অভিমান কেনো। আর কেউ না থাকুক, আমি আর মাহবুব তো আছি।"
স্মরণের আদরে নওরীন মুহূর্তেই মুচকি হেসে দিলো। এদিকে বাড়ির সিঁড়ি ঘরের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে নাজমা বেগম বললেন,
" আরে জামাই বাবাজিকে ভেতরে আসতে দে। রুমে এসেও তো কথা বলা যায়। শুধু শুধু ঐ বৃষ্টি কাঁদার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে সবাই। আয় আয়।"
নাজমা বেগমের কথা শুনে একে একে সবাই বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলো।
---------------------------
আজ ইফতারিতে জম্পেশ খাবারদাবারের আয়োজন করা হয়েছে। গরম গরম চালের রুটি ও ঝাল ঝাল গরুর গোশত, সাথে খেজুর জিলাপি, তরমুজ তো আছেই।
সবাই একসাথে বসে ইফতার করছে। ইফতারের এক পর্যায়ে রাফি, মানতাসা ও স্মরণ জিলাপি চেয়ে বসলো। সেসময় রাফির ঠিক বিপরীত দিকে ইফতার করা নীলিমার কাছে জিলাপির ঠোঙা ছিলো। মিলি বেগম পাশ থেকে বললেন,
" যা নীলু, ওদের পাতে জিলাপি দিয়ে আয়। তোর তো খাওয়া প্রায় শেষের দিকে। "
নীলিমা এ কাজে ভীষণ অনিচ্ছা সত্ত্বেও গেলো। ঈষৎ ভ্রু কুঁচকে মুখশ্রীতে শীতল এক অভিব্যক্তি নিয়ে হাঁটু ভেঙে মেঝেতে পা ঠেকালো। জিলাপির ঠোঙা নিয়ে প্রথমে মানতাসাকে দুটো জিলাপি দিলো, অতঃপর রাফিকে দুটো দিলো। সেই ঠোঙা নিয়ে এবার সে স্মরণের সামনে এলো। সকলে যে যার মতো ইফতার খেতে ব্যস্ত। নীলিমা স্মরণের সামনে এসে জিলাপির ঠোঙা ধরে এক পলের জন্য স্মরণের দিকে তাকালো। অতঃপর স্মরণকে অবাক করে চোখেমুখে বিরক্তি নিয়ে ভেঙচি কেটে উঠে দাঁড়ালো সে। স্মরণ কয়েক সেকেন্ডের জন্য হা হয়ে থাকলো। এভাবে জিলাপি না দিয়েই চলে গেলো নীলিমা! অদ্ভুত! এ ঘটনায় স্মরণ বিড়বিড় করে নিজেকেই শুধালো,
" অ্যাম আই ইনভিজিবল! আমি কি তবে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছি!"
.
.
.
চলবে.............................