অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি - পর্ব ০৭ - সাইরা শেখ - ধারাবাহিক গল্প


রাতে সবাই বাইরে ডিনার করবে ঠিক করল। অনিক ভাই রেস্তোরাঁ ঠিক করেছেন। যাদের বাইক আছে তারা বাইকে যাবে, বাকিরা রিকশায়। নম্রতা রিকশায় বসে হাত বাড়িয়ে দিল সভ্যতার পানে। তখনই মাহিন এসে দ্রুততার সাথে সভ্যতাকে পাশ কাটিয়ে নম্রতার পাশে উঠে বসলো। সভ্যতা চোখ রাঙিয়ে বলল, 'এটা কি হলো?'

মাহিন চাপাস্বরে হেসে বলল, 'সঠিক জায়গা দখল করা হলো। তোর জন্য তো বাইক আছে, যা বাইকে উঠে পড়।'

'বাইক তো তোমারও ছিল, আনোনি কেন?'

'বাইকের পনেরো মিনিটের পথ, রিকশায় আধঘন্টায় যাব বলে।'

'আমিও রিকশায় যাব। বাইকে যাব কেন?'

মাশহুদ আসে, ওরা চারজন বাদে বাকি সবাই চলে গিয়েছে। মাহিন মাশহুদকে বাইক ছাড়া আসতে দেখে বলল, 'তোমার বাইক কোথায় মাশহুদ?'

'বাইকে একটু সমস্যা হচ্ছে,আগে খেয়াল করিনি।রিকশা কি এখানে পাবো? নাকি মোড় অবধি হেটে যেতে হবে?'

মাহিন একটু থেমে বলল, 'হাটতে থাকো, আমরা সামনে গিয়ে দেখছি, রিকশা পেলে পাঠিয়ে দিবো।'

ওদের রিকশা কিছুটা দূরে আসলে, মাহিন পেছনে ঘুরে তাঁকাল। দেখল, সভ্যতা চোখমুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে। ওর পাশেই মাশহুদ একধ্যানে চেয়ে আছে সভ্যতার দিকে। মোড়ে এসে নম্রতা ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলল,
'আমরা তো চলে যাচ্ছি, ওদের জন্য রিকশা পাঠাবেন না?'
'হেটে আসুক।তাছাড়া মাশহুদের চেহারা দেখেই তো বোঝা যাচ্ছে,ও পিহুর সঙ্গে আলাদা আসতে চাচ্ছে। একান্তে সময় কাটাতে চাচ্ছে, আমাদের এখানে আগ বাড়িয়ে সাহায্য করার প্রয়োজন নেই। তাই ওদের নিয়ে চিন্তা না করে ওয়েদার-টা এঞ্জয় করো।'
.
.
পাশাপাশি হাটছে সভ্যতা ও মাশহুদ। দুজনের কেউ-ই কথা বলছে না।মাশহুদ নিরবতা ভেঙে বলল,'ছেলেগুলো এভাবে তাঁকাচ্ছে কেন?'
'কোন ছেলে?'
সভ্যতাও দেখলো, ৫-৬টা ছেলে কেমন চোরাচাহনি নিক্ষেপ করে আছে। সভ্যতা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ক্লান্তসুরে বলল,
'সবুজ টিশার্ট পরা ছেলেটা ৪ দিন আগে আমার হাতের গরম গরম চড় খেয়েছে। বাকিরা আমাকে ভাবি ডাকে। তাই দেখছে তাদের ভাবি কার সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছে।'
'আর ওই শাড়ি পড়া আন্টি? উনিও তোমার পরিচিত নাকি? এই নিয়ে তিনবার তাঁকালেন, ঘুরে ঘুরে দেখছেন আমাকে।'
'উনি গুজব, কাল্পনিক ও অসত্য গল্প রচনাকারী 'মুক্তা' আন্টি। কার বাড়িতে কি হচ্ছে, কার মেয়ে কোথায় যাচ্ছে, কার সাথে যাচ্ছে, হাত ধরে যাচ্ছে নাকি জড়িয়ে ধরে যাচ্ছে সেসব খোঁজ রাখার কাজ বিনামূল্যে করে সবার উপকার করেন। ইগনোর দেম।'
মাশহুদ হেসে বলল, 'আচ্ছা।'

মাশহুদের 'আচ্ছা' শুনে সভ্যতার অকস্মাৎ মনে পড়ল সে মাশহুদের সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণ করছে। যেটা ওর পরিকল্পনায় ছিল না।কয়েক ঘন্টার মধ্যে এত স্বাভাবিক ব্যবহার করলে সবাই মনে করবে সভ্যতাও মাশহুদকে পছন্দ করতে শুরু করেছে। সভ্যতার এখন উচিত এমন কিছু করা যা মাশহুদ পছন্দ করবে না কিংবা তার মনে সভ্যতাকে নিয়ে নেগেটিভিটি তৈরি হবে।

'আপনার কাছে টাকা আছে? 
২-৩ হাজার টাকা দিন তো।'

মাশহুদ তৎক্ষণাৎ কিছু না বলেই ওয়ালেট থেকে টাকা বের করে দিল। সভ্যতা চোখমুখ কুঁচকে ফেলল। কোনোরকম প্রশ্ন না করে তার টাকা বের করে দেওয়াটা একেবারেই কাম্য ছিল না। মাশহুদের জিজ্ঞেস করা উচিত ছিল, সভ্যতা কেন টাকা চাচ্ছে?সভ্যতা রুক্ষস্বরে বলল,

'এ ব্যাপারে আপনার কিছু বলার নেই? হঠাৎ কেন টাকা চাচ্ছি? টাকা দিয়ে এখন কি করবো? কিছু জানতে চান না?'

'না। তোমার যখন মন চাইবে তখন আমার থেকে টাকা নিতে পারো। বিয়ের পর আমাকে না বলে টাকা নিলেও কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তুমি যখন প্রশ্নটি নিজেই করলে, তখন কেন চেয়েছ সেটাও বলতে পারো।'
কিছুটা থেমে বলল,' বলতে না চাইলেও সমস্যা নেই।'

সভ্যতা টাকা চাওয়ার কি কারণ দেখাবে বুঝে উঠতে পারলো না। মাশহুদ যদি প্রথমেই প্রশ্নটি করতো তাহলে একটা কথা কা'কাকা'টির সুযোগ পেত। এখন কি বলবে? কিছু না বললে বিষয়টি খারাপ দেখাবে। এখন নিজের সম্মানের ব্যাপার, তাই হালকা হেসে বলল,

'তেমন কিছু না। একটু শপিং করতে চাচ্ছিলাম। আমার কেনাকাটা করতে ভালো লাগে, টাকার ওপর দরদ কম। চলুন কিছু কিনি।'

'আচ্ছা চলো।'

বাজারের মধ্যে ঢুকলো দুজন। সভ্যতা দোকান ঘুরে দেখছে, কি কিনবে মাথায় আসছে না। একের পর এক দোকান বদলাচ্ছে। মাশহুদও প্রচণ্ড ধৈর্য সহকারে সঙ্গ দিচ্ছে সভ্যতাকে। মানুষটা এত ধৈর্যশীল?

সভ্যতা ভেবেছিল মাশহুদ সভ্যতার এমন অদ্ভুত অদ্ভুত স্বভাব ও আচরণ নিয়ে কিছু বলামাত্র সভ্যতা একটা ঝগড়া বাধিয়ে দেবে।কিন্তু মাশহুদকে দেখো? সবকিছুতে সায় দিয়ে ঝগড়াসহ, সকল মুডের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে। কিছুসময় কেটে গেলে মাশহুদ প্রশ্ন করে,

'এভাবে কতক্ষণ হাটবে?কি কিনবে বলো..ওরা অপেক্ষা করছে, নীলয় বারবার ফোন দিচ্ছে। আমরা না যাওয়া অবধি ওরা খেতে পারছে না।'

'ওরা খেতে পারছে না তাতে আমার কি?আমি তো খেতে মানা করিনি। আমি শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবি, আর কার কি হলো তা নিয়ে ভাবার সময় নেই।'

মাশহুদ এবার ভ্রুঁ কুঁচকে তাঁকাল।সভ্যতা মনে মনে তৈরি হয়ে নিচ্ছে, মাশহুদ নিশ্চই কিছু বলবে এটার পরিপ্রেক্ষিতে। নম্রতা-রা না খেয়ে ওদের জন্য বসে আছে আর সভ্যতা সেটা শুনে এমন মন্তব্য করেছে। এরপর মাশহুদ অবশ্যই ভাববে সভ্যতা স্বার্থপর মেয়ে। এটাই তো চায় সভ্যতা,কিন্তু মাশহুদ সভ্যতার চাওয়াকে বুড়োআঙ্গুল দেখিয়ে বলল,

'আচ্ছা। তোমার যতটা সময় লাগে, নাও।'

সভ্যতা থম মে'রে গেল।নাহ্, এভাবে হবে না। নতুন কিছু ভাবতে হবে। এতো কম সময়ের মধ্যে আর কি ভাবা যায়? কি করা যায়? নতুন কোনো টপিকেও তো যাওয়া যাচ্ছে না। কি এক ঝামেলায় পড়লো সে? সভ্যতা ধমকের সুরে বলল,

'বিরক্ত করবেন না। চুপচাপ হাটুন আমার সাথে। কোনো কথাও বলবেন না, আমার অতিরিক্ত কথা বলা ছেলে পছন্দ না। বুঝেছেন?'

মাশহুদ মাথা উপরনিচ নাড়ে, সে বুঝেছে। সভ্যতা স্তব্ধ হয়ে গেল। সভ্যতার চাল-চলন লক্ষ করেছে মাশহুদ। এটাও টের পেয়েছে সভ্যতা শুধু ওকে জ্বা'লাতে চাচ্ছে। আজেবাজে কথা বলছে যাতে সে সভ্যতাকে খারাপ ভাবতে শুরু করে। কিন্তু মাশহুদ কিছু না বলার কারণে বারংবার হতাশ হচ্ছে মেয়েটা।নীলয় পুনরায় কল করে। মাশহুদ এবার একটু সিরিয়াস ভাব নিয়ে প্রশ্ন করে, 'কোনো কিছুই পছন্দ হচ্ছে না, তাই না?'

'হু। আরেকটু দেখি, আচ্ছা মেক-আপের আইটেম দেখা উচিত.. ওদিকে কসমেটিকসের দোকান, চলুন দেখে আসি, নতুন কোনো ভালো প্রডাক্ট এসেছে কিনা।'

মাশহুদ সভ্যতার হাত ধরে বলল, 'এত সময় নেই। এখন আমি যা কিনে দেব, তাই নিয়েই ফিরতে হবে।'

সভ্যতা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করেও পারলো না।ঝগড়া করার উপযুক্ত সুযোগ পেয়েছে।সভ্যতা চেঁচাতেই যাবে এমন সময় কয়েক হাত দূরে হাসান আঙ্কেলকে দেখলো। এবার চতুর্দিকে চোখ বুলালো সে। আশেপাশে যারা আছে তারা সবাই কম-বেশি পরিচিত।এখন সবার সামনে ঝগড়া করে সম্মান ডোবানো বুদ্ধিমানের কাজ নয়। বাবা যদি জানতে পারেন? ভীষণ কষ্ট পাবেন। তাই সেসব ভেবেই চুপচাপ মাশহুদের সঙ্গে যেতে লাগলো সে। একটি জুয়েলারি শপের ভেতর ঢুকলো দুজন। মাশহুদ আংটি দেখছে, একটি আংটি পছন্দ হলো। আংটি নিয়ে প্রথমে নিজে দেখে সভ্যতার দিকে এগিয়ে দিল। সভ্যতা বাঁকা হেসে মাশহুদকে একটি ব্রেসলেট দেখালো। এরপর শক্তগলায় বায়না ধরলো,

'আমি এই আংটি নেব না। ব্রেসলেট নেব। ওই যে ওটা নেব।' 

মাশহুদ ব্রেসলেটটি দেখলো।সভ্যতার চেহারায় নজর বুলিয়ে দোকানের মালিককে ডেকে কিছুটা দূরত্বে গিয়ে নিচু স্বরে কথা বলছে সে। সভ্যতা তাদের কথা শুনতে পাচ্ছে না।
চারপাশে ফোনে বিল পে করার কোনো সিস্টেম চোখে না পড়ায় সভ্যতা একটু খুশি হলো। মাশহুদকে অপদস্ত হতে দেখতে চায় সভ্যতা। যে মেয়ে পদে-পদে ওকে অপদস্ত করার চেষ্টা করে তাকে নিশ্চই মাশহুদ বিয়ে করবে না। মাশহুদ ফিরে এসে নরমসুরে বলল,

'আমার কাছে এখন এতটাকা ক্যাশ নেই।ওনার ফোনও নাকি বাড়িতে ফেলে এসেছেন, তাই ফোনে পে করা যাবে না। এখন গিয়ে টাকা তুলে আনতে হলে অনেক সময় লাগবে তাই আপাততো এই রিং-টা রাখো। আমি কাল বা পরশু এসে ব্রেসলেট নিয়ে যাব।এটা উনি বিক্রি করবেন না। কথা হয়েছে আমাদের।'

সভ্যতা হতভম্ব। মাশহুদের মাথা ঠিক নেই। এতকিছুর পরও যে-ই মানুষ এমন কথা বলে সে স্বাভাবিক হতে পারে না।নম্রতার মতো তার কাজিনমহলও অস্বাভাবিক। সভ্যতা আজ বুঝল নম্রতা কেন এমন হয়েছে। গুণটা বোধ হয় জেনেটিক্যালি পেয়েছে সে। আংটির দিকে তাঁকিয়ে সভ্যতা একরোখা গলায় বলল,
'কিন্তু আমি তো আংটি নেব না। আমার পছন্দ হয়নি।'

মাশহুদ বলল, 'এটা কিনে ফেলেছি সভ্যতা। তাই পছন্দ না হলেও রাখো।'

সভ্যতা শুনলো না। অপদস্ত করতে পারেনি যখন, তখন এত টাকা খরচ করবে কেন? ত্রিশহাজার টাকা কম নাকি? উদ্দেশ্য পূরণ হয়নি তাই টাকাগুলো নষ্ট করা উচিত নয়। সভ্যতা দুঃখী গলায় দোকানের মালিককে বলল,'না, আঙ্কেল। আপনি এটা রেখে দিন। আমার পছন্দ হয়নি।'

তিনি রুক্ষভাষায় জানালেন,'বিক্রীত জিনিস আমরা ফেরত নেই না।'

সভ্যতা মুহূর্তেই ক্রোধে জ্ব'লে উঠলো। দোকানের মালিককে বলল, 'মগের মুল্লুক নাকি? এটা কি জুতা, হাড়ি, কড়াই যে ফেরত নেবেন না। বিক্রীত জিনিসটা এখনও আপনার দোকান থেকে বের হয়নি, তাই এটা ফেরত নিতে বাধ্য আপনি। এখুনি আংটি রেখে টাকা ফেরত দিন, আপনার দোকান থেকে আমরা কিছু নেব না। আপনি টাকা ফেরত দেবেন নাকি পুলিশে কল করবো?'

মাশহুদ দ্রুত আংটির বক্স আর সভ্যতাকে টেনে বাইরে নিয়ে আসে। সভ্যতা হাত ছাড়িয়ে বলল, 'এসব আপনার কারসাজি। তাই না? আপনি নিশ্চই বলেছেন ফেরত দিতে চাইলে যেন না নেয়।নাহলে এমন গাঁজাখুরি কথা বলে কি করে লোকটা?'

মাশহুদ নির্লিপ্ত গলায় বলল, 'আমি এসব কেন বলবো? ফেরত নিলে তো আমারই লাভ হতো,টাকা বেঁচে যেত। হয়তো ওনাদের পলিসি-ই এমন। তবে বেশ ভালো হয়েছে আজেবাজে জিনিস না কিনে একটা টেকসই জিনিস কেনা হলো।'

কিছুটা থেমে মাশহুদ পুনরায় বলল, 'তাছাড়া একটু আগে তুমি-ই তো বললে,তোমার টাকার ওপর দরদ কম। স্বর্ণ তো আর পঁচে যাবে না, কেনা হয়েছে যখন তখন থাকুক এভাবে।'

সভ্যতা ছোটাছুটি বন্ধ করে।একটু খারাপ লাগছে, সামান্য একটি বিষয়ের জন্য এতগুলো টাকা এখন খরচ হওয়ায়। মাশহুদ আংটি এগিয়ে দিয়ে বলল, 'তোমার কাছে রাখো।'
সভ্যতা তেজ দেখিয়ে বলল, 'না। আপনার পছন্দ করা আংটি আপনি-ই রাখুন।'

মাশহুদ এবার বক্স থেকে রিং বের করে বক্সটি অন্ধকারে ফেলে দিল। সভ্যতা আঁতকে উঠে বলল, 'কি করছেন? বক্স-টা ফেলে দিলেন কেন?'

মাশহুদ সভ্যতার হাতের মুঠোয় আংটি গুজে দিয়ে বলল, 'আমি এসব সামলে রাখতে পারি না। বক্সটাও ফেলে দিয়েছি তাই এই রিং গুছিয়ে রাখার দায়িত্ব এখন তোমার।'

সভ্যতা রাগত স্বরে বলল,'আপনি একজন সুবিধাবাদী মানুষ।'

সভ্যতা আংটি ব্যাগে রাখছে, সেটা দেখে মাশহুদ শক্ত গলায় বলল,
'রিং ব্যাগে রাখছ, ভালো কথা। কিন্তু হারিয়ে ফেললে আমাকে এর পরিপূর্ণ দাম দিতে হবে। আমার আবেগ মিশে আছে রিং-য়ের সাথে, আবেগের দাম হয় না, এটা অমূল্য! তারপরও তোমার জন্য পঞ্চাশ হাজার ফিক্স করতে পারি। তাহলে হিসেব দাঁড়াচ্ছে রিংটা হারালে তুমি আমাকে আশি হাজার টাকা দেবে।'

'এতই যখন ভয় তখন নিজের কাছে রাখছেন না কেন? আমি এসব রেখে রিস্ক নেব কেন?'

'নিতে তো হবেই।কারণ কিছু কেনার জেদ তোমার ছিল। যদি রিস্কের ভয় পাও তাহলে একটা সলুশন দিচ্ছি, রিংটা চোখের সামনেই রাখো। তাহলে আমিও নজর রাখতে পারবো।'

সভ্যতা মাশহুদের ইঙ্গিত ধরতে পেরে বলল, 'অসম্ভব। আপনার দেওয়া রিং আমি পরবো না।'

'ওকে, পরো না।তবে টাকার কথা মজা করে বলেছি, এমনটা ভেবো না। রিং হারিয়ে গেলে তোমাকে সম্পূর্ণ টাকাটা-ই দিতে হবে। এক টাকাও কম নেব না।' 

সভ্যতা র'ক্তচক্ষু নিক্ষেপ করে। নিজের ভুলেই এমন হলো, ক্রোধ বাড়ছে সভ্যতার। মাশহুদ আড়চোখে তাঁকাল। দেখল, সভ্যতা হাতের মাঝে আংটি রেখে হাত কচলাচ্ছে। চোখেমুখে রাগ ও বিরক্তির আভা। সভ্যতার ওপর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মুচকি হাসে সে। এরপর রিকশা ডেকে রিকশায় চেপে বসলো মাশহুদ। সভ্যতা থমথমে মুখে বলল,

'আপনি আংটি নেবেন নাকি ফেলে দেব?'

মাশহুদ নির্বিকার ভঙ্গিতে উত্তর দিল, 'ফেলে দাও। প্রয়োজনে টাকা নেব তবুও আংটি নেব না।'

সভ্যতা বুঝল মাশহুদ শুনবে না, তাই বামহাতের মধ্যমা আঙ্গুলে আংটি পড়ার চেষ্টা করে, অর্ধেক আঙ্গুল অবধি এসে আটকে গেছে। বাধ্য হয়ে অনামিকা আঙ্গুলেই পড়ে ফেলল আংটি-টি। মাশহুদ হাত বাড়িয়ে দিল যাতে সভ্যতা তার হাত ধরে রিকশায় উঠতে পারে। মাশহুদের সে হাত উপেক্ষা করে সভ্যতা একাই রিকশায় উঠে বসলো।
.
.
.
চলবে............................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন