'স্মরণ ভাই, আমি আপনাকে ভালোবাসি। বড় হলে বিয়ে করবেন আমাকে?'
কথাটা বলা মাত্রই যে আমার দু গালে দুটো গরম গরম চড় পড়েছিলো না তাতেই আলহামদুলিল্লাহ। তবে অপমানিত হয়েছিলাম ভীষণ। সেই অপমান আজও মনে আছে। একদম দিন তারিখসহ।”
নীলিমার জবান হতে এহেন কথা শুনে থ বনে রইলো রাফা। সে কস্মিনকালেও চিন্তা করেনি নীলিমা স্মরণকে প্রপোজ করেছে। চরম বিস্ময়ে তার চোখজোড়া বড় দেখালো। হা হয়ে অবাকের চূড়ান্ত সীমায় গিয়ে বললো,
" তুই সিরিয়াসলি স্মরণ ভাইকে প্রপোজ করেছিলি নীলু!"
নীলিমা নিজের প্রতি ক্ষোভ ও বিরক্তি প্রকাশ করে বললো,
" জি ম্যাডাম। ছয় বছর আগে অকামটা করেছিলাম। ওসব এখন মনে পড়লেই গা গুলিয়ে আসে।"
রাফা'র বিস্ময় যেনো কমছেই না। আঙুলের কড় গুনে এখন হতে ছয় বছর পিছনের হিসেব কষলো। হিসেব মতে নীলিমা তখন ক্লাস এইটে পড়তো। রাফা এবার আরোও বিস্মিত হলো। কণ্ঠে কৌতূহল ও বিস্ময় বজায় রেখে বললো,
" নীলু! তুই তখন ক্লাস এইটে পড়তি! ঐ পিচ্চিকালে স্মরণ ভাইকে প্রপোজ করেছিলি! হ্যাটস অফ টু ইউ।"
নিজের কাজে লজ্জায় অপমানে মাটিতে মিশে যাওয়ার জোগাড় হলো নীলিমার। এখনও সেসব পুরোনো কথা ভাবলে মনে মনে নিজেকে চড়ায় সে। রাফার কথার প্রত্যুত্তরে খানিক নড়েচড়ে বসে ছোট্ট নিঃশ্বাস ছাড়লো সে। নিজের উপর হতাশ হয়ে বললো,
" আবেগের জোয়ারে ভেসে গিয়েছিলাম তখন৷ উনার চেহারা সুরুত দেখে ক্রাশ খেয়েছিলাম। টিনএজের হরমোনগুলো দাপিয়ে বেড়াচ্ছিলো। আমার খুব কাছের বান্ধবীকে বলেছিলাম এ ব্যাপারে। ও আবার ছিলো পাক্কা খেলোয়ার। ওটুকু বয়সেই তার দুটো প্রেম করা সারা। বেটি আমাকে এমন মন্ত্র পড়িয়েছিলো যে স্মরণ ভাইকে ছাড়া আর কিছুই চোখে দেখতাম না৷ ওরই কুমন্ত্রণায় কনকনে শীতের বিকেলে স্মরণ ভাইকে প্রপোজ করে বসি। আমার এখমও মনে আছে। স্মরণ ভাই আমার কথা শুনে কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলো আমার দিকে। মাহবুব ভাইও পাশে বসে ছিলো। এরপর হুট করে উনি এমন হাসাহাসি শুরু করে দেয় যেনো আমি কোনো কৌতুক বলেছি৷ পিচ্চি, বাচ্চা, পাকনা, নাক টিপলে দুধ বের হয় এমন অনেক কথা বলেছিলো। ছোট্ট আমি'টার মনে যে উনি কি আঘাত দিয়েছিলো তা উনি নিজেও হয়তো জানেন না। তো, ঘটনা ঐ বিকেলে শেষ হলেই পারতো। কিন্তু তা না করে যে কয়দিন নানুবাড়ি ছিলাম প্রতিদিন উনি আমাকে দেখে হাসাহাসি করতেন, ক্ষ্যাপাতেন। এমনভাবে কিছু কথা বলতেন যেনো আমি মহা বড় পাপ করে ফেলেছি। আমি মানছি, খারাপ প্ররোচনায় কিশোরী মনকে প্রাধান্য দিয়েছিলাম। তাই বলে এত অপমান! ক্লাস নাইনে উঠার পর ঈদে যে বাড়িতে এসেছিলাম তখনও আমাকে দেখা মাত্র পুরোনো ঘটনা মনে করিয়ে খোঁচা দিয়েছিলেন উনি। এরপর থেকে উনাকে পুরোপুরি এভয়েড করে চলি। তুই জানিস আমি স্মরণ ভাইয়ের সাথে দেখা করি না অনেক বছর। উনার ফোন নাম্বারটাও সেভ নেই। এবার বুঝেছিস উনার আসার কথা শোনার পর থেকে কেনো আতঙ্কে আছি?"
রাফা সব বুঝেছে এমন ভঙ্গিতে মাথা নাড়িয়ে বললো,
" হ্যাঁ, সবই বুঝলাম। কিন্তু একই শহরে থেকে তুই এতদিন উনাকে এভয়েড করেছিলি কিভাবে? আগে তো মামা মামি দুজনই তোদের বাসায় যেতো, তোরাও যেতি৷ তাহলে দেখা হলো না কিভাবে?"
"আমি দেখা করিনি। সবসময় এই ঐ নানা অজুহাত দিয়ে সামনে আসিনি, বাসায় থাকিনি। এমনকি আমাদের দেখা হয়েছে, এ নিয়েও মিথ্যে বলি। একই পরিবারের অংশ হওয়ায় উনাকে এভয়েড করা চাট্টিখানি কথা না। কিন্তু এবার ফেঁসে গিয়েছি রাফা। মানতাসা আপুর বিয়ে না হলে কোনোদিনও এভাবে আসতাম না। এখন একই ছাদের নিচে এতোদিন থেকে কিভাবে এভোয়েড করা সম্ভব জানি না। "
নীলিমার কথা শেষ হতে না হতেই বাহাদুর শেখ অন্য রুম হতে উচ্চস্বরে ডাকলেন,
" কই রে নীলু? আমার নীলু কই? বাড়িত আসে দেখাও করলি না। "
রাফা সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো,
" যা, নানা ডেকেছে তোকে। আবারো বোধহয় ভুলে গিয়েছে তোর কথা।"
নীলু মুচকি হাসলো৷ আজ প্রায় এক সপ্তাহ যাবত সে ও তার পরিবারের সবাই নানাবাড়িতে এসেছে। তার নানা বাহাদুর শেখ বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। শরীরে বেঁধেছে নানা বার্ধক্যজনিত রোগ। মাঝে মাঝে কি করেছেন, কার সাথে দেখা করেছেন, এসব ভুলে বসেন৷
নীলিমা তার পছন্দের নাতি নাতনিদের একজন। নীলিমাকে ভীষণ ভালোবাসেন। আজ ইফতারের সময়ই নীলিমার সাথে দেখা হয়েছিলো। অথচ তা ভুলে বসেছেন তিনি। এজন্য নীলিমাকে এক নজর দেখার জন্য বিছানায় বসেই ডাকলেন তিনি।
নীলিমা দ্রুত ওড়না ঠিক করে বাহাদুর শেখের রুমে চলে এলো। আসমানী বেগম বাহাদুর শেখের পাশে বসেই পান চিবুচ্ছেন। পান চিবুতে চিবুতে তাঁর দাঁত ও জিহ্বা লাল টুকটুকে রঙ ধারণ করেছে। নীলিমা রুমে প্রবেশ করতেই আসমানী বেগম বাহাদুর শেখের হাঁটুতে হাত রেখে বললেন,
" ঐ যে তোমার নীলু আইসে। "
বাহাদুর শেখ কুঁজো পিঠে চুপচাপ বসে ছিলেন। স্ত্রীর কথা শুনে মাথা তুললেন তিনি। ছানি পড়া দূর্বল ও অস্পষ্ট দৃষ্টিতে নাতনির দিকে চাইলেন। অতঃপর আলতো হেসে হাত বাড়িয়ে দিলেন নীলিমার দিকে। ধীর গলায় বললেন,
" আয় নীলু আয়। ঢাকা থেক আইছিস একটু দেখাও করবার আইলি না। আমি পর হইয়ে গেছি তাই না?"
নীলিমা হাসলো। নানার এই ভুলো মনা রোগ নিয়ে আর পারে না সে। বাহাদুর শেখের হাত ধরে সে এগিয়ে এসে বসলো। পরম আদরে নানার হাত দুটো আগলে ধরে বললো,
" আমি এক সপ্তাহ আগেই ঢাকা থেকে এসেছি নানা। ইফতারেই তো দেখা হলো। একসাথে বসে ইফতার করলাম। আর এইটুকু সময়ে নীলুকে ভুলে গেলে নানা!"
বাহাদুর শেখ নিজের ভুল বুঝতে পেরে আচমকাই হো হো করে হেসে উঠলেন৷ নীলিমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগলেন,
" আমার তো কিছু মনে থাকে না রে নীলু। তুই সবসময় আমার পাশে বইসা থাকবি।"
" আচ্ছা আচ্ছা বসে থাকবো।"
আসমানী বেগম এবার জিজ্ঞেস করলেন,
" স্মরণ কি আইছে রে নীলু? "
স্মরণের নাম শোনামাত্রই নীলিমার ভেতরটা বিষিয়ে উঠলো। ভীষণ বিরক্তি নিয়ে বললো,
" জানি না। তুমি গিয়ে তোমার আদরের নাতির খোঁজ নাও।"
আসমানী বেগম বালিশের কাছ থেকে নিজের বাটনওয়ালা ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বললেন,
" একটু ফোন লাগা ওরে। কদরের নামাজের আগে আইবো বলছিলো। "
" পারছি না। "
" দে না একটু। চোহে দেহি না তো।"
বাধ্য হয়ে নীলিমা নাম্বার বের করে স্মরণকে কল করলো। কিন্তু স্মরণ কল রিসিভ করলো না। নীলিমা এবার ফিসফিস করে কিছু বলে আসমানী বেগমের হাতে মোবাইল দিয়ে বললো,
" তোমার আদরের নাতি ফোন ধরেনি। ঘুমাচ্ছে মনে হয়৷ এই নাও তোমার ফোন। আমি একটু চা খেয়ে আসি।"
বলেই নীলিমা সোজ রান্নাঘরে চলে এলো। এখন এক মগ ধোঁয়া উঠা গরম গরম চা খাবে সে। একটা চেয়ার নিয়ে উঠোনে বসে তৃপ্তির সাথে চায়ে চুমুক বসাবে।
---------------------
আজ ইফতার বাহিরেই করতে হয়েছে স্মরণকে। কাল থেকে ছুটি। তাই আজ কাজের চাপ একটু বেশি। এজন্য একটু দেরিতেই বেরিয়েছে অফিস থেকে। উপরন্তু ঢাকার জ্যামের জন্য আরোও দেরি হয়ে গিয়েছে। রাত ১১.৩০ এ বাস। তাই বাসায় এসেই তাড়াহুড়ো করে ফ্রেশ হয়ে রেডি হলো। এমন সময়ে পিছন থেকে সাদের কণ্ঠস্বর ভেসে এলো,
" ভাইয়া! প্যান্টের চেইন আটকাচ্ছে না!”
শেষ মুহূর্তের উৎকণ্ঠায় প্রচন্ড ঘাবড়ে গিয়েছে সাদ। এই সময়ে এসে চেইন আটকাবে না জানতো! ওদিকে বাসেরও সময় হয়ে যাচ্ছে। জিন্সের প্যান্টের চেইন ধরে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। স্মরণ এবার প্রচণ্ড বিরক্ত হলো। অফিস থেকে ফিরে কোনোমতে ফ্রেশ হয়ে বাড়ি যাবার জন্য রেডি হলো সে। আর এ সময়ে সাদের এই প্যানপ্যানানি! ছেলেটা বড্ড জ্বালায়।
স্মরণ ঘড়ি হাতে নিতে নিতে ক্রুদ্ধ স্বরে বললো,
" দেখ সাদ, সারাদিন অফিস করে মেজাজটা আমার গরম হয়ে আছে। বকবক না করে দ্রুত রেডি হো। বাস ছেড়ে দিলে কিন্তু আজ আর বাড়ি যাওয়া হবে না। "
ওদিকে সাদ এখনও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। স্মরণের কথার প্রত্যুত্তরে সে উৎকণ্ঠিত হয়ে বললো,
" সত্যি চেইন লাগাতে পারছি না ভাইয়া।"
স্মরণ পূর্বের ন্যায় বললো,
" ইহজাগতে কি তোর একটাই প্যান্ট? ফকিরের মতো ওটা নিয়েই পড়ে আছিস কেনো? যা, দ্রুত চেঞ্জ কর। এক মিনিট সময় দিলাম৷ "
সাদ এবার হাল ছেড়ে অসহায় চাহনিতে চেয়ে বললো
" আর প্যান্ট নেই ভাইয়া। এই একটাই প্যান্ট আছে।"
স্মরণ অবাক হলো,
" হ্যাহ! একটাই প্যান্ট মানে? ড্রয়ারে ওগুলো কি? বস্তা রাখছিস নাকি? আর প্যান্ট কই?"
সাদ মিনমিন করে বললো,
" ইয়ে মানে, সব ময়লা হয়ে গিয়েছে। "
স্মরণের ধৈর্য্যের বাঁধ এবার ভেঙে যাচ্ছে বলে। উষ্ণ মেজাজে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
" ছ্যাঁদর কোথাকার! দুদিন খালা না আসায় ঐ রমিজ পাগলার মতো হয়ে গিয়েছিস একদম।"
বলেই সে এগিয়ে এসে মেঝেতে হাঁটু গেঁড়ে বসলো। আকাশসম বিরক্তি নিয়ে সাদের সেই চেইন লাগানোর প্রচেষ্টা আরম্ভ করলো।
স্মরণ যে-ই না প্যান্টে হাত দিয়েছে ওমনিই সাদ মিনমিনে স্বরে সতর্ক গলায় বললো,
" ধীরেসুস্থে কাজ করো ভাইয়া। আমার বংশের প্রদীপ আবার নিভিয়ে দিও না। "
এমনিতে সারাদিনের রোজা শেষের ক্লান্তি, উপরন্তু সাদের এমন কথাবার্তা, সব মিলিয়ে তিরিক্ষি মেজাজ নিয়ে স্মরণের মন চাইলো এক্ষুনি এই বংশের মূলোৎপাটন করে ফেললে ভালো হতো। তবে নিজেকে সংযম করে ধৈর্য্যের বাঁধকে আরোও শক্তপোক্ত করে বেঁধে সাদকে বললো,
" বংশের প্রদীপ জ্বললো কবে যে নিভিয়ে দিবো? যে-ই না আমার প্রদীপ! তার আবার জ্বলা-নেভা.."
স্মরণের খোঁচাটা সোজা সাদের আত্মসম্মানে আঘাত হানলো। হতে পারে সে ছোট, মাত্র ভার্সিটিতে চান্স পেয়েছে। তাই বলে কি তার পুরুষত্বে আঙুল উঠাবে! সাদ ক্ষণেই প্রতিবাদী স্বরে বললো,
" এভাবে আমাকে অপমান করো না ভাইয়া।"
স্মরণ চেইন লাগাতে ব্যস্ত। প্রথমটুকু কেবল লেগেছে। কিন্তু আর এগুচ্ছে না। এমতাবস্থায় সাদের কথার প্রত্যুত্তরে বললো,
" তোর মান আছে যে অপমান করবো? চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাক। ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চার মতো ম্যাঁ ম্যাঁ করবি না। "
" আব্বু আম্মুকে ছাগল বললে তুমি!"
কয়েক সেকেন্ডের জন্য স্মরণ থতমত খেয়ে গেলো। তবে পরমুহূর্তেই বললো,
" আব্বু আম্মু্কে ছাগল বললো কে! আমি তোকে ছাগল বলেছি। তুই তো ছাগলের পেট থেকে হয়েছিস। "
সাদ কিছু বলতে যাবে এর মধ্যেই স্মরণের কাজ হয়ে গেলো। সে দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে সাদের পিঠে ধাম করে মে' রে বললো,
" এইটা তোর প্রাপ্য।"
স্মরণের পুরুষালী শক্ত হাতের আঘাতে ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলো সাদ। কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বললো না। বললে নির্ঘাত দ্বিতীয় ঘা খাবে সে।
-------------------
আজ কদরের রাত। বাড়ির সমস্ত প্রায় সবাই কয়েক রাকাত নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে গিয়েছে। জেগে আছে শুধু বাহাদুর শেখ, নীলিমা ও রাফি। নীলিমা ও রাফিকে বাড়ির বড়রা বলেছে রাত ২টার দিকে ডেকে দিতে। বাকি নামাজ পড়ে, কোরআন তেলোয়াত করে একেবারে সেহরি খেয়ে ঘুমাবে। নীলিমার ঘুম আসছিলো না বলেই সে স্বেচ্ছায় এ দায়িত্ব নিয়েছে। নীলিমা ড্রইংরুমে বসে টিভির চ্যানেল ঘুরাচ্ছে। দেখার মতো কিছুই নেই আপাতত। তাই বিরক্ত হয়ে টিভি বন্ধ করে ফোন নিয়ে বসলো। অমনি বাড়ির প্রধান দরজা হতে ধুমধাম কড়াঘাতের আওয়াজ ভেসে এলো। চমকে উঠলো নীলিমা। হয়তো ভুল শুনেছে এই ভেবে সে বসে রইলো। কিন্তু কয়েক সেকেন্ড পর আবারও শব্দ কানে এলো। ঘড়ি দেখলো সে। রাত প্রায় ১টা পনেরো বাজে। এই গভীর রাতে কে এলো! ডাকাত নয় তো! দুদিন আগেই শুনলো, পাশের গ্রামে ডাকাত পড়েছে। আর এ তো বিয়ে বাড়ি। ডাকাত পড়া অস্বাভাবিক কিছু না। ঘাবড়ে গেলো নীলিমা। এখন কি করবে সে? বাড়ির সবাইকে ডেকে জড়ো করবে? নাকি চিৎকার করে গ্রামের লোক জড়ো করবে? কিন্তু দরজার ওপাশে যদি ডাকাত না হয় তবে? মানসম্মান তো আর থাকবে না। কয়েক সেকেন্ড এ নিয়ে ভাবার পর রাফির কথা পড়লো। সে দ্রুত উঠে পাশের রুম থেকে মাঝারি সাইজের একটা বাঁশ নিলো। অতঃপর সেই রুম থেকেই গেম খেলারত অবস্থায় রাফির টিশার্টের কলার ধরে রুমের বাইরে নিয়ে এলো। এদিকে রাফি তার এমন ব্যবহারে খিচমিচ করে বললো,
" নীলু আপু ছাড়ো আমাকে। হচ্ছেটা কি!"
নীলিমা গরম চোখে ঘাবড়ে গিয়ে সতর্ক করলো,
" রাফির বাচ্চা! আস্তে কথা বল। বাড়িতে ডাকাত এসেছে মনে হয়!"
রাফির চক্ষু চড়কগাছ হয়ে উঠলো। ডাকাত! এই শব্দটা এতদিন বইয়ে পড়ে এসেছে। আজ বুঝি সচক্ষে দেখার সুযোগ হবে। বেশ এডভেঞ্চারাস হবে ব্যাপারটা। সে কৌতূহল প্রকাশ করে বললো,
" ডাকাত! ভেরি ইন্টারেস্টিং! চলো আপু চলো। আমি তোমাকে প্রটেকশন দিবো। ডাকাত শিকার করবো আমরা। ইয়েস!"
নীলিমা রাফির এত আগ্রহ ক্রোধ নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
" ইন্টারেস্টিং এর গুষ্টি কিলাই। ডাকাত দা' ছু'ড়ি বের করলে তোকে সামনে ঠেলে দিবো। পারবি শিকার করতে?"
রাফির মুখের রঙ উড়ে গেলো যেনো। তবুও দাপট দেখাতে আমতা আমতা করে বললো,
" পা- পারবো পারবো। চলো তুমি। আমি না তোমার ভাই! ভাইদের দায়িত্বই তো বোনকে রক্ষা করা। চলো যাই। উই আর কামিং ডাকাত ব্রো।"
.
.
.
চলবে................................