বাড়ি ফিরে সভ্যতা জানতে পারলো শাহরিন আগামীকাল সকালেই চলে যাবে। সভ্যতা সব শুনেও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাল না। এই বিষয়ে তার কোনো অভিমত নেই। যার মন চাইবে সে থাকবে, যার চাইবে না সে থাকবে না।কাউকে জোর করে আটকে রাখা নিরর্থক।
রাত ১২টা। ঘুম আসছে না সভ্যতার। ব্যালকোনি থেকে ঠান্ডা হাওয়া আসছে, সভ্যতা ব্যালকোনির গ্লাস লাগিয়ে চুপিসারে ঘুমন্ত নম্রতাকে ফেলে ছাদে চলে আসে। ঠান্ডা পরিবেশে একটু ঘুরে বেড়ালে মন ফুরফুরে হবে।সভ্যতার প্রশান্তির জায়গা এই ছাদ।ফোনে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে ছাদের দরজা ঠেলতেই সম্মুখপানে কারোর উপস্থিতি টের পেল সভ্যতা। দৃষ্টি তুলে সামনে তাঁকাল সে। শাহরিন মাশহুদের পায়ের কাছে বসে ফুপিয়ে কাঁদছে। মাশহুদের হাত ধরার চেষ্টা করছে। দৃশ্যটি চোখে পড়ামাত্র সভ্যতার মন ফুরফুরে তো দূরে, মেজাজ জলন্ত লাভায় রূপ নিল। সে একবার ভাবলো নিচে নেমে যাবে,পরে ভাবলো সে কেন নামবে? যারা নিচে নামতে অভ্যস্ত, তারা নামবে।
ছাদে পা রাখতেই সভ্যতা শুনতে পেল,মাশহুদের বলা বাক্যটি, 'যা খুশি করো। আই ডোন্ট কেয়ার এ্যাবাউট ইট।'
শাহরিন সভ্যতাকে লক্ষ করে বলল, 'সভ্যতাকে দেখেই কথার টোন পাল্টে গেল? সভ্যতাও জানুক, আমাদের সম্পর্ক কত গভীর।'
সভ্যতা গম্ভীরগলায় ক্রোধ নিয়ে বলল, 'আমার জানার প্রয়োজন নেই।'
সভ্যতা খেয়াল করলো, দোলনার ওপর মাশহুদের ল্যাপটপ পড়ে আছে। তার পাশেই ২টি চায়ের কাপ ও ১টি কফিমগ। শাহরিন উঠে এসে সভ্যতার হাত ধরে বলল,
'তোমাকে সবকিছু আগে থেকে না জানানোর জন্য মাফ করে দাও বোন।'
সভ্যতা হাত ছাড়িয়ে নিজের রাগতভাব বজায় রেখে বলল,'আমি আপনার নাটকে গলে যাব,ভাবলে ভুল ভাবছেন আপু। হ্যাঁ, আমি মনে করেছি আপনারা ছাদে ইটিশ-পিটিশ করার জন্য এসেছেন কিন্তু এখন মনে পড়ল মাশহুদের কিছু কাজ ছিল, যেটা তাকে রাতের মধ্যেই শেষ করতে হবে।তার কাজের জন্য খোলামেলা পরিবেশ প্রয়োজন। বাড়ির ভেতর আপাততো এমন জায়গা না থাকায় সে ছাদে এসেছে, কিন্তু আপনি ওনার পিছু পিছু এসে ঠিক করেননি। একজন মেয়ের এমন নির্লজ্জ, ছুকছুকানি স্বভাবের, আত্মসম্মানহীন হওয়া উচিত না। যাই হোক, এই বিশ্রি বিষয়টি নিয়ে আমি কোনো তর্কে যেতে চাচ্ছি না। আগামীকাল সকালে আপনি চলে যাবেন, তাই কান্নাকাটি করে প্রেম ভিক্ষা না চেয়ে, গিয়ে ঘুমান। আর হ্যাঁ, কথা বলার সময় দু-চারটা বাজে শব্দ ব্যবহার করেছি, কিন্তু তার জন্য আমি মোটেও দুঃখিত নই। ইউ ক্যান গো নাও, গুড নাইট..'
শাহরিন থমথমে চেহারায় চলে যেতেই মাশহুদ হেসে ফেললো। সভ্যতা উত্তরকোণে দিকে দাঁড়ায়। মাশহুদ চেঁচিয়ে বলে, 'মিস সভ্যতা.. ওপাশে ভীষণ মশা। আপনি চাইলে আমার পাশে এসে দাঁড়াতে পারেন।'
সভ্যতা রগড়াই কন্ঠে বলল 'এত খুশি হওয়ার প্রয়োজন নেই মিস্টার হ্যান্ডসাম। আপনাকে আমি বিশ্বাস করি, এটা ভাবারও কোনো কারণ নেই। আমি শুধু, আমার বাড়িতে নিরপরাধ কারোর আবার বদনাম হোক, সেটা চাইনি। তাই ব্যাপারটা হ্যান্ডেল করলাম। এই সাহায্যের খাতিরে আপনি আমাকে বিরক্ত না করলে খুশি হবো।'
মাশহুদ সভ্যতাকে টেনে পূর্বকোণে নিয়ে আসলো।হালকা হেসে বলল,
'তোমাকে বিরক্ত না করলে আমি নিজে বিরক্তবোধ করবো তাই এই অনুরোধ রাখতে পারছি না। তবে তোমার বুদ্ধিমত্তা দেখে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। এমন একটা বউ পেলে আর কি লাগে..'
সভ্যতা শুকনো ঢোক গিলে বলল, 'আর কে কে ছিল এখানে? তিনটা কাপ কেন?'
'আঙ্কেল-আন্টি আর আমি কথা বলছিলাম। আমাদের কথা শেষ হওয়ার পাঁচমিনিট পর শাহরিন আসে। তুমি আসার একটু আগেই এসেছে।'
'কি নিয়ে কথা বলছিলেন আব্বু-আম্মুর সাথে?'
'অনেক কিছু নিয়ে কথা হয়েছে। তোমাকে নিয়ে তেমন কথা হয়নি তাই নিশ্চিন্তে থাকো। আমি তাদের বলিনি তুমি আজ, আমাকে, ঠিক কি প্রকারে বাজারে হেনস্তা করতে চেয়েছিলে।'
সভ্যতা কঠিনসুরে বলল, 'কিন্তু আপনি আমার সেই পরিকল্পনায় পানি ঢেলে, আমাকে বোকা বানিয়ে, সবার সামনে অপদস্ত করেছেন।'
বলতে বলতে সভ্যতা শিউরে উঠল শীতে। বৃষ্টির কারণে এখন একটু ঠান্ডা নেমেছে। সভ্যতার পরনে ঢোলা থ্রিপিচ। এভাবে বেশিক্ষণ থাকলে নির্ঘাত ঠান্ডা লাগিয়ে বসবে। তাই সেটা ভেবে মাশহুদ নিজের শার্টটি খুলে সভ্যতার গায়ে জড়িয়ে দিল কিন্তু সভ্যতা বিষয়টি টের পেতেই ছটফট করে উঠল। সে মাশহুদের শার্ট নেবে না। একজন পুরুষের শার্ট সে এভাবে নিজের গায়ে জড়াবে না।শার্ট খুলে ফেরত দিতে চাইলে মাশহুদ ধমক দিয়ে বলল,
'একদম নড়বে না।চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো। এই ঠান্ডায় এমন ফিনফিনে থ্রিপিচ পড়ে, এত রাতে এখানে কি করছ? অসুস্থ হবার শখ জেগেছে নাকি?'
ধমক শুনে সভ্যতা নরম হলো, মিনমিনে কন্ঠে বলল, 'যদি শখ জেগেও থাকে, তবে আপনার কি?'
মাশহুদ শার্ট ঠিকভাবে টেনে সভ্যতাকে ঢেকে দিয়ে বলল, 'আমার-ই তো সব। তুমি বলেছিলে আমাকে বিয়ে না করার আরও একটি কারণ আছে। সেটা কি?'
সভ্যতা ছাদ থেকে নেমে যেতে যেতে বলল,'আপনার জন্য প্রথম কারণটাই যথেষ্ট।শত-নারীর ক্রাশ, এমন পুরুষকে আমি বিয়ে করবো না। আমি এমন একটা সভ্য, ভদ্র, হাঁদা ছেলেকে বিয়ে করতে চাই যাকে মেয়েরা পাত্তা দেয়না। যার আগে-পিছে আমি ছাড়া আর কেউ থাকবে না।'
.
.
সকাল থেকে নম্রতার মন খারাপ।মনম'রা হয়ে রান্নাঘরে ঢুকে বসে আছে। তার সকল মনোযোগ রান্নায়, যেন পৃথিবীতে রান্না ছাড়া আর কিছু নেই। পিয়াজ কাটার অছিলায় অনবরত চোখের জল ফেলছে। সভ্যতা পেছনে হাত বেঁধে ঘুরে ঘুরে দেখছে রান্নাঘর। নম্রতা নড়েচড়ে, তরকারিতে নুন দিল। সভ্যতা নিঃশব্দে পাশে এসে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করল,
'তোর বর তো দিব্যি খোলা হাওয়ায় প্রাণভরে শ্বাস নিচ্ছে তাহলে ম'রা কান্না কার জন্য?আমরা বেঁচে আছি তা সহ্য হচ্ছে না?'
নম্রতার হাত কেঁপে উঠল। গরম খুন্তি লাগে বাম-হাতে। সভ্যতা এগিয়ে এসে কাপড় দিয়ে খুন্তি ধরে সেটা পাশে রেখে বলল,
'মাহিন ভাইয়ের মতো ভালো কোনো ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক হলে, আমি নাচতে নাচতে শ্বশুরবাড়ি চলে যেতাম। তোর মত রান্নাঘরে বসে চোখের পানি ফেলতাম না। তোর কি কোনো কমনসেন্স নেই?
আমার কথা একবার ভাব, দেখবি সব দুঃখ ঘুচে গেছে। আমি বলছি, তুই ইমাজিন কর, যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে তার চরিত্র সম্পর্কে কোনো পরিপূর্ণ সত্য তথ্য জানা নেই। মেয়েরা তাকে দেখলেই জড়িয়ে ধরতে চায়, বিয়ে করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। বিদেশে থেকে এসেছে, সেখানে সুন্দরী মেয়েদের দেখে চোখের, চরিত্রের বারোটা তো বেজেছেই। সত্য না জানা অবধি আমার ধারণা বারোটা নয় তিন বারোং ছত্রিশ বেজেছে। আটচল্লিশ বাজানোর জন্য দেশে ফিরেছে এবং দেশে ফিরেই সে তার কাজে লেগে পড়েছে।
ভাবতে পারছিস? কেমন ফিল হচ্ছে? আমার হবু বর! যাকে আমি দু-দিন পর বিয়ে করবো তার চরিত্রের কি দশা? যেই আমি কল্পনায় দেখি, আমার বরকে যে টাচ করতে তার হাত কে'টে ফেলব। সেই আমার বর একটা প্লে-বয়। যেখানে যায়, সেখানকার মেয়েদের নিজের হ্যান্ডসাম লুক দিয়ে বশ করে ফেলে। কত জনের হাত কা'টবো আমি? তাই ঠিক করেছি মেয়েদের হাত নয়, ওই ব্যাটার মেইন জিনিসটা-ই কে'টে ফেলবো। ঠিক বললাম না, বল?'
নম্রতা হতবিহ্বল চোখে চায়।বি'ষম খায়,সভ্যতার বলা বাক্য শুনে।এমন সময় দরজার মুখ থেকে মাশহুদ সন্দিহান গলায় প্রশ্ন করে,
'আমার মেইন জিনিস কাটার চিন্তা করার আগে,আমার পার্মিশন নেওয়া উচিত! বলে মনে হয় না তোমার?'
নম্রতা বিভ্রান্ত দৃষ্টি মেলে দ্রুত থালা-বাসন গোছানোয় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ওদিকে সভ্যতা তাকের ওপর বসে পা দুলিয়ে বলল, 'আমি কারোর পার্মিশন নিয়ে কাজ করতে অভ্যস্ত নই। যখন যা মন চায়, তাই করি। ওয়েলকাম সবার পছন্দের হবু জামাই। আসুন ফ্রিজ থেকে ডিম বের করে, আমাকে একটা ডাবল আন্ডার অমলেট বানিয়ে দিন। রাঁধতে জানেন তো? আমার বর হতে গেলে কিন্তু রাঁধতে জানতে হবে।'
মাশহুদ ফ্রিজ খুলতেই নম্রতা বলল, 'আমি একটু দেখে আসি আম্মু কি করছে। গ্যাসের চুলা দু-মিনিট পর অফ করে দিস।'
'আপু? এই আপু? দাঁড়া! আমার কথা শেষ হয়নি তো..'
নম্রতা দৌড়ে বেরিয়ে গেল। মাশহুদ ডিম নিয়ে এগিয়ে আসে। সভ্যতার সামনে দাঁড়িয়ে, সভ্যতার দুপাশে হাত রেখে বলল, 'খুব সাহস তাইনা? মেইন জিনিস কা'টার মত সাহস পেলে কোথ থেকে?'
সভ্যতা চোখমুখ কুঁচকে বলল, 'সিনেমা পেয়েছেন? কি ভেবেছেন? এমন করলে আমি নায়িকাদের মতো ভয়ে, লজ্জায় কাঁপাকাঁপি শুরু করবো? ওসব আমার দ্বারা হবে না। কাঁপাকাঁপির সিস্টেম ইনস্টল করা নেই আমার সভ্য জীবনে। যদি বিয়ে হয়, আর আপনি উল্টা পাল্টা কিছু করেন তাহলে, যা বলেছি সেটাই করবো।'
মাশহুদ বিস্ময় নিয়ে বলল,'সিরিয়াসলি সভ্যতা? আমি তোমাকে বাচ্চা ভেবেছিলাম কিন্তু তুমি দেখছি..'
সভ্যতা ডিম ভেঙে বাটিতে রেখে বলল, 'কে বাচ্চা? এই মাসে আঠারোয় পড়বে বয়স। আমাদের দাদির যখন আঠারো বছর তখন বড়চাচার বয়স দুই। সেই তুলনায় পিছিয়ে আছি আমি।'
মাশহুদ চাপাস্বরে বলল, 'সমস্যা নেই। একুশ হওয়ার আগেই একবছরের বাচ্চা ধরিয়ে দেব কোলে।'
'সে তো এমনিতেও আসবে, আপনার বলা লাগবে না।'
মাশহুদ আশাহ'ত কন্ঠে বলল, 'আমি না বললে কিভাবে আসবে?'
সভ্যতা নিরীহভাব নিয়ে বলল,'আশ্চর্য! আপুদের বিয়ে হচ্ছে তাদের বেবি হবে না? আমার বিয়ে তো আরও ২-৩ বছর পর হবে। আপুর বাচ্চা না হলে, আর কার বাচ্চা আসবে? কে থাকবে আমার কোলে?'
মাশহুদ সন্দিহান গলায় বলল, 'আচ্ছা? তুমি এতক্ষণ কি কা'টার কথা বলছিলে?'
'গলা।হাত-পা না কে'টে একবারে গলা কেটে দেব। ব্যাস, ঝামেলা শেষ! কেন আপনি কি ভেবেছেন?'
মাশহুদ খুকখুক করে কেঁশে উঠলো। সভ্যতা সন্দিগ্ধ চোখে তাঁকাল। নম্রতা ফিরে আসতেই সভ্যতা জিজ্ঞেস করে, 'আপু বলতো তখন কি কা'টার কথা বলেছি?'
সভ্যতার প্রশ্নে নম্রতার পা পিছলে উল্টে পড়ার উপক্রম হলো। লজ্জায় আবারও চোখমুখ লাল হয়ে উঠলো। সভ্যতা নম্রতার কাছে এসে দাঁড়ায়। মাশহুদ ততক্ষণে ডিমের অমলেট বানানোর জন্য পিয়াজ কাটতে শুরু করেছে। নম্রতা সভ্যতার কান টেনে বলল,
'ফাজিল মেয়ে।কোথায় কি বলতে হয় এখনও শিখিসনি? মাশহুদের সামনে দাঁড়িয়ে এখনও উল্টাপাল্টা কথা বলে চলেছিস।'
'উল্টা-পাল্টা কি বললাম?'
নম্রতা ইশারায় বলল, 'মেইন জিনিস..'
নম্রতার ইশারা দেখে সভ্যতা লাফিয়ে দুকদম পেছনের দিকে সরে গেল, চেঁচিয়ে বলল, 'আস্তাগফিরুল্লাহ্ আপু। এসব কি বলছিস? তাহলে মাশহুদও এটা ভেবেছে? তাই কাঁশছিল? ছি! ছি! নষ্ট হয়ে গেছিস তোরা। তোদের মাথার মধ্যে এসব ঘোরে? আজ থেকে আমার ধারে কাছে ঘেসবি না। তোদের জন্য আমি পেঁকে যাব। ছি! এখনও সময় আছে, ভালো হয়ে যা। নাহ্, আমার রান্নাঘরে ঢোকাটাই ভুল হয়েছে। আসা উচিত হয়নি।'
সভ্যতা দ্রুত রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেল। মাশহুদ ফ্রাই প্যানে ডিম ঢেলে নম্রতার দিকে তাঁকাল। নম্রতা হতভম্ব, আহাম্মক বনে মাশহুদের দিকে তাঁকিয়ে আছে। মাশহুদ নম্রতার বোকা বনে যাওয়ায় ব্যাথিত। সে নিজেও ভুক্তভোগী তাই হাসার চেষ্টা করে বলল,
'বাদ দাও..আমরা-ই ভুল বুঝেছি।'
নম্রতা কাজে মনোযোগ দিয়ে বলল, 'আমি ভাবতে পারছি না, এমন কিছু চিন্তা করেছি আমি। তাই তো বলি পিহু এত বড় হলো কবে?ও সরল মনেই কথাগুলো বলল, অথচ আমরা কি না কি মনে করলাম।'
মাশহুদ স্বল্পস্বরে আওড়ায়, 'জ্বি না। তোমার বোন যা বলেছে, আমরাও সেটাই ভেবেছি। কিন্তু এটা জোর দিয়ে বলার উপায় নেই। তোমার সেয়ানা বোনের মাথা ভর্তি প্লান বি। এত চালাক একটা মেয়ে, যে কাউকে তুরিতে বোকা বানাতে পারে। গতকালের শোধ নিল এভাবে লজ্জায় ফেলে..'
অমলেট নিয়ে সভ্যতার ঘরে আসে মাশহুদ। বিছানার ওপর প্লেট রেখে সে ফিরে যাচ্ছিল, এমন সময় সভ্যতা ওয়াশরুম থেকে বের হলো। অলসভঙ্গিতে ছোট ছোট পা ফেলে বিছানা অবধি এসে বলল, 'আপুর কান্না থেমেছে?'
'হুম..'
মাশহুদ চলে যেতে লাগলে, সভ্যতা কঠিনগলায় বলল,
'আমি কিন্তু ওটাই মিন করেছি যেটা আপনারা ভেবেছেন। তাই আমাকে বিয়ে করার আগে ভালো করে চিন্তা করুন, ভেবে দেখুন রিস্ক নিতে চান কিনা। আমি মেয়েটা কিন্তু সুবিধার না।'
মাশহুদ সমানভাবে বলল, 'আমি ছেলেটাও সুবিধার না মিস। একবার বউ হয়ে এসো, বুঝতে পারবে।'
'দেখলেন তো? আপনি নিজেই স্বীকার করলেন আপনি সুবিধার না। এমন অসুবিধাজনক মানুষকে বিয়ে করা আমার পক্ষে অসম্ভব। লিস্টের দুই নম্বার পয়েন্ট কেটে নিলাম। বাকি থাকলো ৮ পয়েন্ট, কম করে হলেও ৩টা পয়েন্ট থাকা উচিত। টোটাল ৩পয়েন্ট না পেলে আপনি আপনার পথে, আর আমি আমার।'
মাশহুদ সরল দৃষ্টিপাত নিক্ষেপ করে সভ্যতার পানে। সভ্যতা টেবিলের ওপর ইশারা করে।সেখানে ছোট্ট একটি আংটির বক্স পড়ে আছে। সভ্যতা মাশহুদের দেওয়া আংটি খুলে সযত্নে গুছিয়ে রেখেছে,ফেরত দেবে বলে। মাশহুদ একনজর বক্সটির দিকে তাঁকিয়ে এমন ভাব নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল যেন সে অন্ধ,বোবা-বধির। সভ্যতার কথা শুনেও শোনেনি। সভ্যতা হতাশ হলো। বুঝতে পারলো মাশহুদ এই আংটি ফেরত নেবে না। তাই উঠে আংটির বক্সটি পুনরায় আলমারিতে তুলে রাখলো।
.
.
.
চলবে...................................