অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি - পর্ব ০৬ - সাইরা শেখ - ধারাবাহিক গল্প


মাশহুদ সভ্যতার দিকে এগিয়ে আসে। যেখানে মাশহুদ অন্য মেয়েদের দিকে তাঁকালেও তারা লজ্জায় নুইয়ে পড়ত সেখানে সভ্যতার চেহারায় লজ্জার লেশমাত্র নেই। সভ্যতা নির্বিকার ভঙ্গিতে সামনে দণ্ডায়মান মাশহুদের চেহারা অবলোকন করছে। মাশহুদ অতিতের কথা ভাবে, বহু নারীর আকাঙ্ক্ষিত সেই স্বপ্নেরপুরুষ 'মাশহুদ' আজ নিজের-ই হবু বউয়ের অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি মনে পড়লেই ব্যাপক বিরক্তি লাগছে। তারপরও ঠোঁটের হাসি ধরে রেখে বলল,

'কিছু ভুল ধারণা মনে পুষে রেখেছ। সবার ভালোবাসা একরকম হয় না। কেউ কেউ সময় নিয়ে প্রেমে পড়ে, আবার অনেকে প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে। তোমার কুহু আপু প্রথমবার ব্যর্থ হওয়ায় দ্বিতীয় বার ভালোবাসতে সময় নিয়েছে। এর অর্থ এটা নয় যে সবার ক্ষেত্রেই এমন হবে। যদি আমার কথা বলো, তাহলে আমি তোমার এই স্বভাব পছন্দ করি না।'

সভ্যতা ব্যস্ততা দেখিয়ে বলল,'এটা মেইন পয়েন্ট, আসুন বিয়ে ভাঙার পরিকল্পনা এক সাথে করি।' 

মাশহুদ মুচকি হেসে প্যান্টের পকেটে হাত গুজে বলল,
'ভালোবাসা নিয়ে খুঁতখুঁতে স্বভাব বাদ দিয়ে তোমার বাকি অভ্যাস, আচার-আচরণ, তোমার রূপ-গুণ, কথা বলার ধরণ, একটু ছেলে ছেলে ভাব সর্বোপরি তোমাকে ভালোবাসি।আই লাভ দ্য ওয়ে ইউ আর সভ্যতা। যেমন আছো, তেমন-ই থেকো। আমার তোমাকে নিয়ে কোনো সমস্যা বা আপত্তি নেই, আর আমি এটাও নিশ্চিত করবো এই অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি যাতে ভবিষ্যতে তোমার আকাঙ্ক্ষিত মনের মানুষ হতে পারে।অতিথি হয়ে এসে আবার অতিথি হয়েই তোমার জীবন থেকে যেন চলে যেতে না হয়। এখন তুমি রেস্ট নাও, বাকি কথা পরে হবে।'

মাশহুদ চলে যাচ্ছে, সভ্যতা চোখমুখ কুঁচকে বলল, 'মাথা খারাপ নাকি? আশ্চর্য! আমিও দেখব কিভাবে টেম্পরারি মানুষ পার্মানেন্ট হয়। আপনাকে যদি আমি নাকের জলে-চোখের জলে না করি, তাহলে আমার নামও সভ্যতা নয় মিস্টার উসমান সিকান্দার মাশহুদ। এ্যাহ্, এত বড় নাম রাখে কে? থ্রেট করার সময় ডায়লগ মিস হয়ে যাবে নাম মুখস্থ করতে গিয়ে। আপনি হচ্ছেন, উসিমা! উফ! এটা আবার মেয়ে মেয়ে লাগে। থাক মাশহুদই ঠিক আছে।'
.
.
মাশহুদের জন্য কফি বানাতে বলেছেন মা।সভ্যতা প্রথমে রাজি না হলেও মায়ের চোখ রাঙানো দেখে গুটিগুটি পায়ে রান্নাঘরের দিকে গেল। সবাই ছাদে আড্ডা দিচ্ছে। চায়ের ব্যবস্থা করা হয়েছিল, হঠাৎ জানা গেল মাশহুদ চা পান করে না। নিম পাতার রসের মত তেতো কফি পছন্দ করে। নম্রতাই কফি বানাতে আসছিল, মাঝখানে এ্যান্টেনা ঘুরে গেল। মা এসে নম্রতাকে ছাদে পাঠিয়ে সভ্যতাকে কফি বানানোর কাজে লাগিয়ে দিলেন। পানি গরমে দিয়ে ভ্রুঁ কুঁচকে তাঁকিয়ে আছে সভ্যতা। আজ সে চমৎকার এককাপ কফি পরিবেশন করতে চলেছে, যার স্বাদ মাশহুদের ঠোঁটে লেগে থাকবে। 

কফিমগ হাতে ছাদের দরজা ঠেলে আসতেই শাহরিনের ওপর চোখ পড়ে সভ্যতার।মাশহুদের দিকে কেমন অদ্ভুত চোখে চেয়ে আছে সে। সভ্যতা চুপচাপ মাশহুদের সামনে গিয়ে কফিমগ এগিয়ে দিয়ে বলল,
'আপনার কফি।'
'থ্যাংকস।'
শাহরিন প্রশ্ন করে, 'কোন ক্লাসে পড়?'
'টুয়েলভ। আপনি?'
'আমি এখন একটি ব্যাংকে চাকরি করি।পড়াশোনা শেষ। তুমি তো বেশ ছোট সভ্যতা। এখনও বিয়ের বয়স হয়নি। তাহলে এত দ্রুত বিয়ে করছ কেন?'

সভ্যতা লাজুক ভাব নিয়ে মিষ্টি গলায় বলল,'হ্যাঁ, সবাই তা-ই বলে। তবে আপনাকে কিন্তু বেশ বড় মনে হয় আপু। আমি তো ভেবেছিলাম বিবাহিত। আপুর কাছে আপনার বর-বাচ্চার খোঁজ নিতে গিয়ে শুনলাম আপনার বিয়েতে অনিহা আছে। কুহু আপুর মতো কোনো কাহিনি আছে নাকি? থাকলে নির্দ্বিধায় আমাকে বলতে পারেন। আপুর যেমন সেটিং করিয়ে দিয়েছি, আপনারও করিয়ে দিব। আমার অনেক পরিচিত অবিবাহিত ভাই আছে।'

শাহরিনের চেহারায় পরিবর্তন আসে। সে মাশহুদের পাশ থেকে উঠে কিছুটা দূরে সরে বসল। সভ্যতা নম্রতার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,

'শাহরিন আপু অনিক ভাইয়ার খালাতো বোন না? মাশহুদ নামক পুরুষটিকে কিভাবে চেনে? তলে তলে ঘটনা ঘটে যাচ্ছে নাকি? কেমন পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছি।'

নম্রতা স্বল্পস্বরে বলল, 'নাবিলা আপুর বিয়েতে আলাপ হয়েছিল দুজনের। পছন্দ করে মাশহুদকে। মাশহুদের জন্যই বিয়ে করেনি।'

সভ্যতা উত্তেজিত কন্ঠে বলল, 'সিরিয়াসলি!'

নম্রতা থতমত খেয়ে তাঁকাল। সভ্যতা আফসোসের সুরে বলল, 'দুঃখজনক ব্যাপার! মেয়েটার চয়েজ খারাপ। এজন্যই আমার পেছনে লাগছিল। তোকে বলে রাখছি আপু তোর এই কাজিনদের কাজিনমহল আমার পেছনে লাগলে আমি কিন্তু ছাড় দেব না। আমার ব্যাপারে যেন এরা নাক না নাড়ে।'

'নাড়বে না। অনিক ভাইয়াকে বলে রেখেছি, সে সবকিছু দেখে রাখবে।'

'হুহ্।'

সভ্যতা মাশহুদের দিকে তাঁকাল। সে চুপচাপ কফি পান করছে। বাকিরা আড্ডা দিচ্ছে, গল্প করছে, গান গাইছে। কফি শেষ করে কফিমগ এগিয়ে দেয় মাশহুদ। সভ্যতা মগ নিয়ে বলল, 'আপনি কি এলিয়েন?'

মাশহুদ হেসে বলল, 'তুমি এত কষ্ট করে কফি বানিয়ে এনেছ ফেলে দেওয়া ঠিক হত না। তবে যতটা নুন দিয়েছ ততটা সহ্য করা যায়। পরের বার নুনের মাত্রা বাড়িয়ে দিও।' কিছুটা থেমে পুনরায় বলল, 'আমার ব্যাপারে কতটা জানো?'
'বেশি না। প্রয়োজন নেই জানার, তাই জানার চেষ্টা করিনি।'
'চলো ওদিকে গিয়ে কথা বলি।'
'না। আমার চিপায়-চাপায় গিয়ে কথা বলার অভ্যাস নেই।'
'আমাকে এত অপছন্দ করো কেন?'
'এমনি-ই ভালো লাগে না। আবার এমনও হতে পারে আমি অন্য একজনকে পছন্দ করি তাই আপনাকে ভালো লাগে না।'
'কে সে?'
'মীর, আমার ক্লাসমেট। ব্রিলিয়ান্ট ছেলে। ৯০এর নিচে নাম্বার আসে না। লাজুক, মেয়ে দেখলেই সেন্সলেস হয়ে যায় ভয়ে। কথা বলতে জানে না। আমাকে বেশ মান্য করে চলে, যা বলি তাই করে। এমন ছেলেকে বিয়ে করা উচিত আমার যে আমার কথায় উঠবে, আমার কথায় বসবে।'

মাশহুদ ইঙ্গিতপূর্ণ শব্দে বলল,'ওঠা-বসা ছাড়াও আরো অনেক কাজ আছে যা তোমার ওই মেয়ে দেখলেই সেন্স হারানো পছন্দের ছেলে করতে পারবে না। সেগুলো করার জন্য সেন্স থাকা দরকার, একারণেই তোমার আমাকে বিয়ে করা উচিত।'

সভ্যতা হাই তুলে বলল, 'এ-বারের ডোজটা কম হয়ে গেছে। আচ্ছা, সমস্যা নেই পরের বার খেয়াল রাখব।'

মাশহুদ হাসলো।সভ্যতা একটু কঠিন ভাব নেওয়ার চেষ্টা করে বলল,
'কারোর সঙ্গে থেকেছেন? আরীব ভাই কিন্তু দুইটা মেয়ের সঙ্গে থেকেছে।আপু জানে না, গোপন তথ্যটি দুর্ভাগ্যবশত ভাবে আমি জেনে গিয়েছি। আপনি সত্য বলুন, আমি মাইন্ড করব না। কারণ এমনিতেও আমার আপনাকে পছন্দ না, সত্য বললে বেশি জ্বা'লাতন করব না। নয়তো এ বাড়িতে আপনার থাকা মুশকিল হয়ে যাবে।'

মাশহুদ শঙ্কিত গলায় বলল, 'এ ব্যাপারে সবার সামনে কথা বলা কি ঠিক হবে?'
'না। চলুন ও-দিকে গিয়ে কথা বলি।'
ছাদের দক্ষিণে এসে দাঁড়াল দুজন। মাশহুদ প্রশ্ন করে,
'তুমি কি করে জানলে আরীব দুজনের সঙ্গে থেকেছে।'

'মারিয়া ভাবি বলেছে। তার ফোনে থাকা ছবি-টবিও দেখিয়েছে। আর ছবিগুলো অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সময়ের।তারা নাকি স্মৃতি হিসেবে ছবি তুলে রেখেছে। রিডিকিউলাস! ওই সময় অমন ছবি তোলে কোন নির্বোধ?'
'কোন সময়?' না জানার ভান করে মাশহুদ।

সভ্যতা ধমকে বলল, 'আপনি কি নাদান বাচ্চা? আমি যেখানে সব বুঝি, সেখানে আপনি কিছুই জানেন না? এত ভালো সাজতে হবে না। আপনার চেহারা, ব্যক্তিত্ব যথেষ্ট আকৃষ্ট করে মেয়েদের। সবকিছু না জানলেও একটা বিষয়ে আমি গুরুত্ব দিয়েছিলাম বলে কিছুটা জানতে পেরেছি।'

'কোন বিষয়?'

'মেয়েঘটিত একটি ঘটনার জন্য আপনাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। আপু অবশ্য বলেছে ওখানে আপনার কোনো দোষ ছিল না। কিন্তু দেশ ছাড়তে তো কেউ বাধ্য করেনি। আপনি নিজে তেজ দেখিয়ে চলে গিয়েছিলেন। দেশ ছাড়ার কি প্রয়োজন ছিল বুঝলাম না। কি প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন আপনি নির্ভেজাল? নির্দোষ? দুধে ধোয়া তুলসিপাতা? আপনার কোনোরকম ইঙ্গিত না পেলে একটা মেয়ে আপনার ঘরে ঢুকে, অন্ধকারে জড়িয়ে ধরে, এটা সেটা বলার সাহস পায় কি করে? আপনার পছন্দের খাবার রান্না করা, জামা-কাপড় গোছানোর কাজও নাকি সে-ই করত? ওয়াও..'

মাশহুদ সভ্যতার সকৌতুকের ঝাঁঝালো সুর, ও কথা বলার ভঙ্গি দেখে মুচকি হাসে। পরপরই হাসি থামিয়ে, চেহারায় গাম্ভীর্যপূর্ণ ভাব এনে বলল,

'লামিয়া আমার বড় ভাইয়ের শালিকা। আমাকে পছন্দ করত। একটা মিথ্যা ঘটনা সাজিয়েছিল আমাকে বিয়ে করার জন্য। পরে সেটা স্বীকার করেছে। বিনাকারণে দেশ ছাড়িনি আমি। আমাকে প্রেশার দেওয়া হচ্ছিল ওই নির্লজ্জ মেয়েটাকে বিয়ে করার জন্য। দু-বার সু'ই'সাইড করার চেষ্টা করেছে লামিয়া। আঙ্কেল আন্টি বারবার অনুরোধ করছিল, ভাবি অনুরোধ করছিল, বাবা সেসব দেখে, সবার কথা শুনে আমাকে বিয়েতে মত দিতে বললেন। আমি রাজি না হওয়ায় বাড়ি থেকে চলে যেতে বললেন। আমিও রাগ করে বেরিয়ে গেলাম, মামাদের ওখানে কিছুদিন থেকে বিদেশে পাড়ি জমানোর ব্যবস্থা করলাম। আমি দেশে ফিরেছি শুধুমাত্র মায়ের জন্য। ফেরার পর দেখলাম,আবারও বিয়ে বিয়ে খেলা খেলছে সবাই। লামিয়া গতবছর বিয়ে করেছে,তাই এবছর বিয়েতে মত দিলাম। কিন্তু ওর ঘটানো সেই ঘটনা দেখছি এখনও আমার পিছু ছাড়ছে না।একটা ষ'ড়য'ন্ত্রের গল্প শুনে আমার হবু বউ বিয়েতে অসম্মতি জানাচ্ছে এটা মেনে নেওয়া খুবই কঠিন। তোমার মনে হয় না, তুমি আমার ওপর অবিচার করছ?'

সভ্যতা কার্নিশের ওপর ভর দিয়ে দাঁড়াল। আকাশে মেঘ জমেছে। ঠান্ডা বাতাস ছেড়েছে, কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়ত বৃষ্টি নামবে। সভ্যতা একটু বিজ্ঞভাব নিয়ে বলে, 

'আমার কাছে 'লাভ' ওয়ার্ডটা সস্তা নয়। যাকে তাকে আমি ভালোবাসতে পারবো না। আপুদের সামনে আমার চটপটে স্বভাব দেখে আমাকে যেমন মনে করছেন আমি প্রকৃতপক্ষে তেমন নই। আমি নিজেকে এমন রাখি কারণ আমার চারপাশে থাকা মানুষ আমাকে এভাবে হাসিখুশি, চঞ্চল স্বভাবে দেখতেই পছন্দ করে। আমাকে ঠান্ডা দেখলে ওদের মন খারাপ হয়, ওদের মনে হয় আমার মন খারাপ। আমি আমার পরিবারকে প্রচণ্ড ভালোবাসি। আমার পরিবারের মত এত ভালো,মিষ্টি পরিবার খুব কম দেখেছি।আমার আপু আমার চাচাতো বোন, কিন্তু আমরা কখনও ওকে এটা ভাবার সুযোগ দিতে চাইনি। ছোট থেকে আমার বাবা-মা আমার আগে আমার আপুকে রাখতো। আগে তার সকল চাহিদা পূরণ হত তারপর আমার। আমিও প্রথমদিকে জানতাম না আপু আমার নিজের বোন না। কারণ তেমন কোনো লক্ষণ আচরণ, কথাবার্তা বাড়ির ভেতর হতই না।
ছোট থেকেই আমি স্বল্পভাষী ছিলাম। সারাক্ষণ বাড়ির ভেতর থাকতাম, আমার বন্ধু বোন সবটাই কুহু আপু আর আরীব ভাই। নানুবাড়িতে গেলে তখন একটু চঞ্চল হয়ে উঠতাম কিন্তু এখানে আমি বরফের মতো ঠান্ডা একটি বাধ্য, মিষ্টি মেয়ে। কিন্তু...
যখন সবাইকে বলতে শুনলাম, 'তোকে তো ওরা যখন তখন বাড়ি থেকে বের করে দেবে কুহু।'
'তোর তো কিছুই নেই, পিহু না দিলে এসব পুতুল খেলনা, বাড়িঘর কিছুই পাবি না।'
'রাবেয়া ভাবি? এটা আপনার ভাসুরের মেয়ে না? আপনার মেয়েটার গায়ের রঙ আপনার মত হয়েছে। কুহু কি ওর মায়ের গায়ের রঙ পেয়েছে?ওর গায়ের রঙ বেশ চাপা, তাই না বলুন?'
'চাচা-চাচি কি আর এমনি এমনি কুহুকে বাড়িতে রেখেছে? ওকে রেখেছে পিহুর দেখাশোনা করার জন্য।'
'ভাবি পিহুর রেজাল্ট তো কুহুর থেকে ভালো। দুজনকে আলাদা স্কুলে কেন পড়ান? এক স্কুলে দিলে তো দুজনেরই উন্নতি হত।'
'কতদিন চাচার ঘাড়ে বসে খাবে?'
এমন আরও কত কথা.. অথচ কেউ জানে না আমার আপু পড়াশোনায় একটু খারাপ হলেও দারুণ ছবি আঁকে। ওর ভিন্ন স্কুলে পড়ার কারণ, চাচ্চু ওকে সেই স্কুলে পড়াতে চেয়েছিলেন। 
আমার আপুর রান্নার হাত ভালো, ঘর গোছানোয় এক্সপার্ট, মেকআপে মেহেদী দেওয়ায় দক্ষ, মানিয়ে চলতে পটু, নম্র-ভদ্র, শান্ত-কোমল, কারোর দুঃখ দেখতে পারে না। অদ্ভুত ব্যাপার এতগুণ কারোর নজরেই পড়েনি।
ওকে যখন সবাই কথা শোনাতো তখন ওর হয়ে আমি উত্তর দিতে দুমদাম কথা বলে বসতাম। বাচাল, বেয়াদব হয়ে উঠলাম। আমি আসলে আপুর মতো এত ভালো নই। আমি কারোর মন্তব্যের পরোয়া করি না। কে কি বলল তা দেখার সময় নেই আমার, মানিয়ে নিতে পারি না, কেউ ভুল কিছু বললেই মুখের ওপর কথা বলার মত বাজে স্বভাব আছে। 
এমন নয় যে আমি বুঝি না ভালোবাসা কি? আমি আসলে নিজের ভালোবাসার মানুষ হিসেবে কেমন মানুষ চাই সেটা নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। আর এখন জানি আমি যেমন চাই, তেমন পাওয়া প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। তাই এসবের প্রতি এক্সট্রা আবেগ কাজ করেনা। কপালে যা আছে তাই হবে। আমি সেটা ভেবে নিজেকে বুঝিয়ে রেখেছি, কিন্তু সবকিছুতে ছাড় দিলেও চরিত্রের ব্যাপারে কোনো ছাড় নেই। আমার আপনার চরিত্র নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে। এরকম সন্দেহ নিয়ে আপনার সাথে কোনো সম্পর্কে জড়ানো অসম্ভব। আপনাকে বিয়ে করতে না চাওয়ার কারণ হয়তো এটাই। আরো একটা কারণ আছে, সেটা এখন বলবো না।'
.
.
.
চলবে..............................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন