দুপুরের নরম রোদ ঝিলিক দিচ্ছে জমিদারবাড়ির প্রাচীন ভোজনালয়ে। বংশ পরম্পরায় চলে আসা মূল্যবান কাঠের টেবিলে বসেছেন জমিদার সুফিয়ান, তার পুত্র জাওয়াদ ও অতিথি নাভেদকে নিয়ে।
হঠাৎ করেই সিঁড়ি বেয়ে তরতর করে নেমে এল রাইহা। ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল জাওয়াদের দিকে, তারপর অস্বস্তি নিয়ে বসল তার পাশে। সুফিয়ানের দিকে তাকাতেই বুকের ভেতর থেকে একটা অজানা ভয় উঠে আসে, কেঁপে ওঠে তার অন্তরাত্মা। বুড়োকে সে খুব ভয় পায়।
ললিতা ব্যস্ত খাবার পরিবেশনে, দাসীদের নিয়ে টিপটিপ ছন্দে চলছে তার তৎপরতা। এমন সময় শব্দর জুলফাকে সঙ্গে নিয়ে হাজির হলো। বসল নিজেদের চেনা জায়গায়।
জুলফার চোখে অদ্ভুত বেদনাভার, যেন অতল কোনও ব্যথার নদী তার দৃষ্টি জুড়ে বয়ে চলেছে। সেই গভীর দৃষ্টি সোজা গিয়ে আছড়ে পড়ল নাভেদের ওপর। মুহূর্তের জন্য দুজনের দৃষ্টি একসূত্রে বাঁধা পড়ল।
নাভেদ ভদ্রতাবশত অল্প হাসল মাত্র, অথচ সেই সামান্য হাসিতে জুলফার মন থেকে বিষাদের সমস্ত মেঘ এক নিমেষে উড়ে গেল। তার চোখের বেদনাবাহী জলকণা রূপান্তরিত হলো অপূর্ব আলোয়।
খাওয়া চলছে নিরবিচারে, খাবারের ঘ্রাণে ভরে আছে চারপাশ। হঠাৎ জুলফা হাতে মাছের ঝোল নিয়ে এগিয়ে গেল নাভেদের দিকে। আশপাশের সবাই খাবারে নিমগ্ন, আর জুলফার মন নিমগ্ন শুধু নাভেদের দিকে।
নাভেদের হাসিটুকু তার হৃদয়ে রঙ ছড়িয়ে দিয়েছে। হয়তো সেদিন সত্যিই ব্যস্ত ছিল, কোনো জরুরি কাজে গিয়েছিল! এই ভাবনায় নিজেকেই প্রবোধ দিল জুলফা। একটু সাহস সঞ্চয় করে আরও কাছে এগিয়ে এল সে। শব্দরের পছন্দের মাছের মাথাটা আলতো তুলে দিল নাভেদের পাতে।
সেই মুহূর্তে সমস্ত পৃথিবী থেমে গেল জুলফার কাছে। তার হৃদয়ের প্রতিটি স্পন্দন বলে উঠল, " এই তো আমার জীবন, আমি এই জীবনই চাই।"
নাভেদের মুখে ছড়িয়ে পড়ে অস্বস্তির ছায়া। আশপাশের সবাইও একটু থমকে গেল, কেউ কোনো কথা বলল না। অতিথির পাত্র থেকে মাছ সরিয়ে শব্দরের পাতে ফেরানো তো আর সম্ভব নয়!
জুলফা নিজের ভুল বুঝতে পেরে মুহূর্তেই শব্দরের দিকে তাকাল। তার চোখে নাটকীয় অসহায়তা। যেন বলতে চাইছে, "আমি কি ভুল করলাম?"
শব্দর বুঝল তার মনোভাব। দৃষ্টির ইশারায় আশ্বস্ত করল, "কিছু হয়নি, ঠিক আছে সব।" সেই বোবা সান্ত্বনায় প্রশান্তি ফিরে এল জুলফার মনে।
ধীরে ধীরে, নিঃশব্দে পা ফেলে গিয়ে শব্দরের পাশে বসল জুলফা। এখনো তার বুকের ভেতর হৃদস্পন্দন ছুটছে তীব্র গতিতে। চোখের কোণে নাভেদকে দেখল একঝলক। নাভেদও তাকিয়ে ছিল তার দিকে গভীর দৃষ্টি নিয়ে।
মাছের মাথা পাতে দেওয়ার সময় জুলফার চোখে যে আবেশ ছিল, তাতে লুকিয়ে ছিল কিছু না বলা কথা। সেই দৃষ্টির কথা মনে করতেই নাভেদ নড়েচড়ে বসে। জুলফার চোখে যে আবেগ ছিল, সে তা বোঝে। মেয়েদের এই বিশেষ দৃষ্টি সে চেনে। যেখানে মিশে থাকে অপার মায়া, নীরব ভালোবাসা, আর একরাশ অপেক্ষার গল্প।
বাড়ির বাকি সবাই তখন নিজের মতো করে খাবার খেতে ব্যস্ত। কেউ হয়তো মশলাদার মাংসের স্বাদ নিচ্ছে, কেউ বা ডাল দিয়ে ভাত মাখছে। কিন্তু নাভেদের মনের ভেতরে তখন চলছে এক গভীর আলোড়ন। আরেকবার জুলফার দিকে তাকাল। এবার তার চোখে একটু কৌতূহল, একটু বিস্ময়। সে প্রথমবারের মতো এভাবে দেখছে জুলফাকে, আবিষ্কার করছে তার মধ্যে লুকিয়ে থাকা অজানা রহস্য। জুলফাও তাকাল নাভেদের দিকে। পরক্ষণেই, কোনো অদৃশ্য শক্তির টানে দুজনেই চোখ ফিরিয়ে নিল।
দুপুরের খাওয়া শেষ করে সবাই যখন উঠতে যাবে, তখনই সুফিয়ান গলা খাঁকারি দিয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললেন, "সবাই বসো।"
সবাই পুনরায় বসলে তিনি বললেন, "শব্দর আগামীকাল শহরে যাবে। একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক চুক্তি জন্য।"
শব্দরের চোখে বিস্ময়ের ঝিলিক দেখা দেয়। এ খবর তার কাছেও নতুন। সুফিয়ান বলছেন, "চুক্তিটা সরিষা নিয়ে। বসন্তের এই সময়টা সরিষার ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জমিদারি এলাকায় যে সোনালি সরিষা ফলে, তার সবচেয়ে বেশি চাহিদা শহরে। এই চুক্তি সফল হলে আমাদের এলাকার চাষিদের জীবনে সমৃদ্ধির বন্যা বয়ে যাবে।"
শব্দর কথা বলল, "ব্যবসায়িক যেকোনো চুক্তিই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। শুধু আমাদের নয়, আমাদের এলাকার প্রতিটি মানুষের জন্য। আমি আগামীকালই রওনা দেব ভাইজান।"
সুফিয়ান এবার দৃষ্টি ঘুরিয়ে জাওয়াদের দিকে তাকালেন। গলায় একটু গাম্ভীর্য এনে বললেন, "তুমি জানো, আমাদের এই জমিদারি শুধু জমি-জমা নিয়ে নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে হাজার হাজার মানুষের ভাগ্য। যারা দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই সোনালি সরিষা ফলায়, তাদের স্বপ্ন, তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা সবই নির্ভর করে এই ধরনের চুক্তির ওপর।"
সুফিয়ানের কণ্ঠ এই পর্যায়ে করুণ শোনাল, "আমার আর তোমার চাচার আয়ু ক্রমশ কমে আসছে। আমাদের পূর্বপুরুষরা যে পবিত্র দায়িত্ব আমাদের হাতে অর্পণ করে গেছেন, তা যথাযথভাবে পালন করতে হবে। আমি আশা করি, আমার পরে যেভাবে তোমার চাচা দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, এরপর তুমিও সেই দায়িত্ব নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করবে। তাই এখন থেকেই নিজেকে প্রস্তুত করো। চাচার সঙ্গে যাও।"
জাওয়াদের মুখে অবহেলার ছায়া পড়ল, "আমার এখন অন্য কাজ আছে বাবা। এখন যেতে পারব না।"
নাভেদের উপস্থিতি অনুভব করে সুফিয়ান ছেলেকে কিছু বলার আগেই শব্দর পরিস্থিতি সামাল দিতে বিনীতভাবে বলল, "আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন, ভাইজান। আমি জাওয়াদকে সব শিখিয়ে দেব।"
সুফিয়ান তার ভেতরের ক্রোধটা সংযত করে নিয়ে দাস-দাসী সহ উপস্থিত সকলের দিকে তাকিয়ে বললেন, "আমি চাই, আগামীকাল সকালে তোমরা সকলেই শব্দরকে বিদায় জানাতে উপস্থিত থাকবে। তোমাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা বুকে নিয়ে গেলে শব্দরের মনে হবে, সে একা নয়, তার পিছনে রয়েছে একটা বিশাল পরিবার, এলাকার সমস্ত মানুষ। মনির, গ্রামের সবাইকে এ বিষয়ে জানানো হোক।"
রাতের গভীর অন্ধকারে গ্রামের নিস্তব্ধতা আরও গাঢ় হয়ে উঠেছে। দূরে কোথাও একটা শিয়াল ডেকে উঠল, তার করুণ আওয়াজ রাতের নীরবতা ভেঙে চুরমার করে দিল। এমন এক নিঝুম মুহূর্তে জুলফা একা শুয়েছিল তার ঘরে। শব্দর ঘরে ঢোকার শব্দে সে উঠে বসল, তার চোখে একটু বিস্ময়। সে ধীরে ধীরে জিজ্ঞেস করল, "আপনি শহরে যাবেন? আগে তো কিছু বলেননি।"
শব্দর পোশাক পাল্টাতে পাল্টাতে উত্তর দিল, "আমিও জানতাম না, জুলফা। ভাইজানের কাছ থেকে দুপুরে খবরটা পেলাম।"
জুলফার চোখে উঁকি দিল উদ্বেগ। সে আস্তে আস্তে জিজ্ঞেস করল, "কতদিন থাকবেন ওখানে?"
"সপ্তাহ দুয়েক তো লাগবেই," শব্দর বলল, তার কণ্ঠে একটু দ্বিধা।
জুলফার মুখ দিয়ে অজান্তেই বেরিয়ে এল, "এতদিন!"
শব্দর চমকে পিছন ফিরে তাকাল। জুলফা কি তার জন্য চিন্তিত? সে কি তার অনুপস্থিতি অনুভব করবে?
আবেগ সামলাতে বলল, "আরও কিছু জরুরি কাজ আছে। যখন যাচ্ছিই, সব মিটিয়ে আসব। সময় তো লাগবেই।"
জুলফা অনুভব করে তার বুকের ভেতর একটা অজানা ব্যথা হচ্ছে। কীসের ব্যথা? কেন এই ব্যথা? সে তো কখনোই শব্দরকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারেনি। ভালোবাসা তো অনেক দূরের কথা। তবে কেন এই অস্বস্তি? এই খালি খালি ভাব?
শব্দর এক গ্লাস পানি খেয়ে জুলফার কাছে এল। মমতা নিয়ে জিজ্ঞেস করল, "তোমার জন্য কী কী আনব বলো? বিশেষ কিছু চাও?"
জুলফা নিজের ভেতরের দ্বন্দ্ব চেপে রেখে উত্তর দিল, "কিছুই না।"
শব্দর জুলফার চোখের দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে জিজ্ঞেস করল, "মন খারাপ কেন? আমি চলে যাব বলে?"
জুলফা হঠাৎ অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। এরকম কিছু হওয়া অসম্ভব। সে কখনোই শব্দরের জন্য মন খারাপ করতে পারে না! তবে... তবে কেন তার বুকের ভেতর এই অজানা ব্যথা? কেন এই অস্বস্তি? জুলফা পালঙ্কে গিয়ে শুয়ে পড়ে।
শব্দর ধীরে ধীরে জানালার পাশের চেয়ারে গিয়ে বসল। বাইরে আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে, তার রূপালি আলোয় ঘরের অন্ধকার ধীরে ধীরে গলে যাচ্ছে। শব্দর মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল সেই অপরূপ দৃশ্যের দিকে। হঠাৎ তার মনে হলো, এই মুহূর্তটি জুলফার সাথে ভাগ করে নেওয়া উচিত।
"জুলফা, একটু এদিকে এসো তো।"
জুলফা অবাক হয়ে তাকাল শব্দরের দিকে। তার চোখে প্রশ্ন। সে উঠে এগিয়ে এল শব্দরের দিকে। শব্দর আলতো করে জুলফার হাত ধরে ধীরে ধীরে নিজের কোলে বসাল। জুলফা প্রথমে একটু অস্বস্তি বোধ করলেও, শব্দরের উষ্ণ স্পর্শে তা ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল।
শব্দর জুলফার কানের কাছে মুখ এনে মৃদু স্বরে বলল, "ওই দেখো, চাঁদটা কেমন সুন্দর।"
জুলফা তাকাল বাইরের দিকে। সত্যিই, চাঁদের আলোয় চারপাশ এতো মায়াময় লাগছে!
শব্দর জুলফার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল, "তুমি জানো জুলফা, তুমি ঠিক এই চাঁদের মতো।"
জুলফা অবাক হয়ে ফিরে তাকাল শব্দরের দিকে। তার চোখে বিস্ময় আর কৌতূহল। সে মৃদু স্বরে জিজ্ঞেস করল, "কীরকম?"
শব্দর জুলফার চোখের দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। তারপর ধীরে ধীরে বলতে শুরু করল, "দেখো, চাঁদ যেমন নীরবে আকাশে থেকে পৃথিবীকে আলোকিত করে, তুমিও তেমনি নীরবে আমার জীবনকে আলোকিত করে চলেছো। চাঁদের মতোই তুমি সুন্দর, নির্মল, পবিত্র। চাঁদের মতোই তোমার উপস্থিতি আমার জীবনে শান্তি নিয়ে আসে।"
জুলফার চোখ ছলছল করে ওঠে। সে কখনো ভাবেনি শব্দর তার সম্পর্কে এমন সুন্দর কথা ভাবতে পারে।
শব্দর আরও কাছে টেনে নিল জুলফাকে। তার কণ্ঠে এবার একটু কাঁপুনি, "যেমন চাঁদ ছাড়া রাত অন্ধকার, তেমনি তুমি ছাড়া আমার জীবনও অন্ধকার। আমি জানি, আমি তোমার হৃদয়ে কখনো স্বামীর মর্যাদা পাইনি। কিন্তু আমি চাই, তুমি আমাকে একটু জায়গা দাও তোমার হৃদয়ে।"
জুলফা স্তব্ধ হয়ে রইল। তার বুকের ভেতর কী একটা ঝড় বইছে। সে শব্দরের দিকে তাকাল। চাঁদের রূপালি আলোয় শব্দরের চেহারা তার সামনে নতুন করে ধরা দিল। পয়তাল্লিশ বছরের এই পুরুষের মুখে সময়ের ছাপ পড়লেও, তার চোখে এখনো জ্বলজ্বল করছে যৌবনের আগুন। জুলফা অবাক হয়ে লক্ষ্য করল, কীভাবে চাঁদের আলো শব্দরের কপালের রেখাগুলোকে মৃদু করে দিয়েছে, তার চোখের কোণের ছোট ছোট ভাঁজগুলোকে করেছে আরও আকর্ষণীয়। শব্দরের চোয়াল এখনো দৃঢ়, ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি। তার কালো চুলের মাঝে থাকা কয়েকগাছি রূপালি চুল তাকে দিয়েছে পরিণত পুরুষের আকর্ষণ।
গৌতমের মায়ের মুখে শুনেছে, একসময় শব্দর ছিল গ্রামের বহু নারীর স্বপ্নের নায়ক, তাদের গোপন আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রবিন্দু। সেই কথা মনে পড়তেই জুলফা নতুন দৃষ্টিতে দেখতে লাগল শব্দরকে। তার গভীর কালো চোখ, উচ্চ কপাল, সুগঠিত নাক। চাঁদের আলোয় শব্দরের ত্বকের রং আরও গাঢ় হয়ে উঠেছে, তার শরীরের প্রতিটি রেখা আরও স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে। তার চওড়া কাঁধ আর মজবুত বাহু এখনো বলে দেয় তার শারীরিক শক্তির কথা।
তাছাড়া শব্দরের দীর্ঘ উচ্চতা আর গম্ভীর আকর্ষণীয় কণ্ঠস্বর, এ দুটো বিষয় নিয়ে আজও গ্রামের মানুষ মুগ্ধ হয়ে কথা বলে৷ রাতের নিস্তব্ধতায় জুলফা আর শব্দর পরস্পরের দিকে তাকিয়ে ছিল। হঠাৎ করেই সেই নিস্তব্ধতা ভেঙে গেল। মুহূর্তের মধ্যেই শব্দর আরও কাছে সরে এল। জুলফা অনুভব করল তার নিজের হৃৎস্পন্দন দ্রুত হয়ে উঠছে। তারপর, সময় থেমে গেল। শব্দর আলতো করে জুলফার ঠোঁটে ছুঁইয়ে দিল তার ঠোঁট। সেই স্পর্শ ছিল পাখির পালকের মতো কোমল, কিন্তু তার প্রভাব ছিল বজ্রপাতের মতো তীব্র। জুলফার সারা শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেল। প্রথমে সে সচকিত হয়ে উঠে। নিজেকে সরিয়ে নেয়ার আগেই তার শরীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেল। অন্যদিনের মতো এবার কেন যেন খারাপ লাগল না। বরং একটা অদ্ভুত, মধুর অনুভূতি জেঁকে বসল তার মনের গভীরে।
শব্দর ধীরে ধীরে তার ঠোঁট সরিয়ে নিল জুলফার ঠোঁট থেকে। তার দৃষ্টি এখনো জুলফার চোখে নিবদ্ধ। সেই দীর্ঘ চুম্বনের পর তার নিশ্বাস একটু দ্রুত, চোখে জ্বলজ্বল করছে আবেগের ছটা। জুলফার মুখের দিকে তাকিয়ে শব্দর অনুভব করল, এই মুহূর্তে তার জীবনের সমস্ত অর্থ এই নারীর মধ্যেই নিহিত।
শব্দর জুলফার হাত দুটো নিজের হাতে তুলে নিল। কণ্ঠস্বর ভারী হয়ে এল আবেগে, "জুলফা..." সে থামল, ঠিক শব্দ খুঁজে পাচ্ছে না। তারপর বলল, "
তোমাকে দেখলেই আমার মনে হয়, আমার হারিয়ে যাওয়া অর্ধেকটা খুঁজে পেয়েছি।"
মধ্যরাত। হঠাৎ একটা তীব্র চিৎকার ভেসে এল। শব্দর চমকে উঠে, তার ঘুমের ঘোর মুহূর্তেই কেটে যায়। সে ধড়মড় করে উঠে বসে। চারপাশে তাকিয়ে দেখে জুলফার চেনা উষ্ণতা নেই।
·
·
·
চলবে..........................................................................