আচমকা কুহুর মুখে এরুপ কথা শুনে হতবুদ্ধি হয়ে তাকিয়ে রইল রওনক!একটা মানুষ এতটা নির্বোধ কথাবার্তা বলে কি করে?কুহুর চোখের দিকে গভীর দৃষ্টি রেখে বলল রওনক,
"হ্যাঁ চেঁচাও,দেখি তোমার গলায় কত জোড় আছে!বাহিরে যারা আছে সবাই নিশ্চিত হয়ে যাক এখানে তোমার বাসর সুসম্পন্ন হচ্ছে!
কুহুর টনক নড়লো!সম্মুখে থাকা পুরুষটি যে তার স্বামী কথাটা বেমালুম ভুলে গিয়েছিল।রওনকের ঠোঁটকাটা জবাবে একরকম লজ্জায় পরে গেল কুহু।রওনকের তখনও শীতল দৃষ্টি নিবদ্ধ কুহুর মুখাবয়বে!চোখদুটো শান্ত দিঘির জলের মতো লাগছে!এতটা নমনীয় ভাব আগে খেয়াল করেনি কুহু।উত্তপ্ত প্রগাঢ় শ্বাসপ্রশ্বাস ছুঁয়ে দিচ্ছে মুখশ্রী!চোখের মণি ঘুরিয়ে দেখে যাচ্ছিল কুহু।হঠাৎই বোধহয় খেয়াল হলো রওনকের একখানা হাত তার শাড়ি গলিয়ে উন্মুক্ত কোমড় ছুঁয়েছে!মুহূর্তে অসস্থিতে পায়ের তলা শিরশির করে উঠল।রওনককে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে চাইল কুহু।একটুখানিও হেলাতে পারল না শক্তপোক্ত শরীর টা!রওনকের ওষ্ঠকোণে ধরা দিল ঈষৎ হাসি।কুহু চোখেমুখে রাগ টেনে বলল,
" বিদ্যুতের খাম্বার মতো শরীর টা দয়া করে সরান।চাপা পরে মরা ছাড়া উপায় থাকবে না।
গায়ের ভার সম্পূর্ণ আলগা করে দিল রওনক।ওভাবেই আঁটকে রাখল কুহুকে।মতিগতি কিছুই ঠাওর হচ্ছে না কুহুর।বিয়ে করে নিয়েছে বলে কি যা খুশি করবে নাকি?যে চোখে সর্বদা রাগের বাস সেখানে তো হুট করে ভালবাসার উদয় হতে পারে না!আচমকা রওনকের খেয়াল হলো কুহুর এক কানের জিনিস এখনো খোলা হয়নি।ভ্রুকুঞ্চন করে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে,খানিকটা ঝুঁকে খুলে দেওয়ার জন্য উদ্যেত হলো সে।অজানা ভয়ে কুহুর অন্তর আত্না কেঁপে উঠলো!দিকবিদিকশুন্য হয়ে রওনকের লোমশ বক্ষস্থলে কামড় বসিয়ে দিল!মৃদু আর্তনাদ করে একপাশে সরে গেল রওনক।এলোমেলো শাড়ি নিয়ে দ্রুত উঠে দাঁড়াল কুহু।মনে হচ্ছে জোড় বাঁচা বেঁচে গেছে!বুকের বা পাশে হাত চেপে ধরে উঠে বসল রওনক।চোখমুখ শক্ত করে বলল,
"এটা কি রকম অসভ্যতা?আমাকে নিষেধ করে এখন নিজেই অসভ্যতা শুরু করেছ?একটা হ্যান্ডসাম,হট ছেলেকে একা রুমে পেয়ে যা খুশি তো করতে পার না তুমি!
রওনকের কথায় যেন মাথায় বাজ পরলো কুহুর!নিজের অপরাধ অন্যের ঘাড়ে চাপাতে ভালই জানে।নাকের পাটা ফুলিয়ে বলল কুহু,
" একটু আগে কি করতে গিয়েছিলেন আপনি?অসভ্য পুরুষ!এখন আমার ফুলের মতো চরিত্রে দাগ লাগাচ্ছে।
উঠে দাঁড়িয়ে কুহুর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেলল রওনক।তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল,
"হ্যাঁ,তোমার ফুলের মতো পবিত্র চরিত্র সম্পর্কে জানা আছে আমার।হ্যান্ডসাম,হট,ড্যাশিং ছেলে দেখলে তো চোখদুটো সামলাতে পার না।একেবারে কামড়ে খেয়ে ফেলতে চাইছ!দেখ কি অবস্থা করেছ!এখন যদি পাল্টা আমি শোধবোধ নেই তখন কি হবে ভেবেছ?
রওনকের কথায় থতমত খেল কুহু।সেদিন কোন কুলক্ষণে যে রওনকের সামনে আশফিককে ওসব বলেছিল!তাও কুহু কি জানতো নাকি বদমায়েশ টা পেছনে দাঁড়িয়ে ছিল!কোনোরকম তুতলে বলল,
" পা...পাল্টা শোধবোধ নিবেন মানে?আর আপনি নিজেকে কোন দিক দিয়ে হট,হ্যান্ডসাম মনে করেন?বয়েই গেছে আপনার দিকে তাকাতে!
কুহুর কথা শুনে কালবিলম্ব করল না রওনক।একটানে গা থেকে পাঞ্জাবী খুলে নিল।আশ্চর্য হয়ে গেল কুহু!তৎক্ষনাৎ চোখ ঢেকে নিল দুহাতে!
"ভাল করে তাকিয়ে দেখ নির্বোধ মেয়ে!তোমার হাসবেন্ডও কিন্তু হ্যান্ডসাম,হট,ড্যাশিং!
ভরাট পুরুষালি কন্ঠস্বর শুনে কান ঝাঝা করে উঠল কুহুর।ঘুরে ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে বলল সে,
" নির্লজ্জ পুরুষ!
খানিক শব্দ করে হাসল রওনক।স্বগোতক্তি করলো,
"পৃথিবীর সমস্ত বিবাহিত পুরুষ তার স্ত্রীর কাছেই নির্লজ্জ,অসভ্য হয়, নির্বোধ মেয়ে!
!!২১!!
ঘড়িতে সকাল আটটা।সকালের খাবার তৈরিতে ব্যস্ত শারমিন বেগম।খানিকক্ষণ বাদেই রাশেদ জামাল বের হবেন।অন্যদিনের তুলনায় আজকে স্ত্রীর মেজাজ খুব একটা ভাল নয়।কাল থেকেই লক্ষ্য করছেন তিনি।কুহুদের বাড়ি থেকে ফেরার পর ভাল করে কথা অব্দি বলেনি।টেবিলের উপর চায়ের কাপ রাখলেন শারমিন বেগম।প্রতিদিন খুব যত্ন নিয়েই স্বামীর হাতে তুলে দেয়।চোখ থেকে চশমা খুলে নিয়ে চা'য়ের কাপ হাতে তুলে নিলেন রাশেদ জামাল।তপ্ত শ্বাস ফেলে গম্ভীর স্বরে স্ত্রীকে ডাকলেন।প্রথমে না শোনার ভান করলেও দুই-তিনটা ডাকের পর সাড়া দিলেন শারমিন বেগম।স্বামীর সামনে এসে দাঁড়ালেন।দৃষ্টি নিচু।ব্যস্ত স্বরে জানালেন জরুরি কাজ আছে তার।চা'য়ে চুমুক রেখে বললেন রাশেদ জামাল,
"এসব অযথা রাগের কোনো মানে হয় না শারমিন।ছেলে তো ইচ্ছে করে যেচে বিয়ে করেনি।রওনক যখন প্রথমে কুহুর কথা বলেছিল আমি নিষেধ করেছিলাম।তখন কিন্তু সে বলেছে ঠিক আছে বাবা যেটা তোমার ইচ্ছে।যখন আমি দেখলাম পরিস্থিতি সত্যিই খারাপের পর্যায়ে।লোকে মেয়েটাকে নিয়ে কতরকম কথা বলছে।এতসব আয়োজন করে বিয়েটা না হলে তার পরিবারের খুব খারাপ লাগবে।হয়তো এই ধাক্কাটা কুহু কোনোদিন সামলাতে পারবে না।ছেলেকে বিয়ে করানোর সিদ্ধান্ত যখন নিয়েছি,তখন ভাবলাম কুহুকে বিয়ে করালে সমস্যা কোথায়?ছোট থেকে চিনি মেয়েটাকে।খুব ভদ্র স্বভাবের।এটাও জানি তোমার খুব ইচ্ছে ছিল নিজে পছন্দ করে পুত্রবধূ আনবে।ছেলে তো আর প্রেম করে নিজের ইচ্ছেতে বিয়ে করেনি।আমি বলেছি বলেছি বলেই বিয়ে করেছে।মন খারাপ করো না।মানিয়ে নাও সব।
"বিয়ে ভাঙ্গার দায় আমার ছেলে কেন নেবে?সব জায়গায় মহান সাজা মানায় না।রওনকের বিয়ে নিয়ে কত কিছু ভেবে রেখেছিলাম।কুহুকে আমি অপছন্দ করি এমন নয়।রিশার মতোই দেখি।কিন্তু আমার রওনকের বউ হিসেবে পছন্দ নয়।
"ব্যাপারটা মহান সাজার বিষয় না শারমিন।সে মুহূর্তে আমার যেটা সঠিক মনে হয়েছে আমি সেটাই করেছি।রওনকের অনিচ্ছায়ও হয়নি বিয়েটা।নয়তো তোমার ছেলে প্রথমেই কুহুর কথা বলতো না।আমরা কি কখনো ভেবেছিলাম কুহু এ বাড়ির বউ হবে?এরকম মন খারাপ করে থাকলে মনোমালিন্য হবে।
স্বামীর কথার পাল্টা জবাব দিতে পারলেন না শারমিন বেগম।মনকে কিছুতেই বোঝাতে পারছেন না।সরাসরি ছেলেকেও দোষারোপ করতে পারবেন না।
•
জানালা গলিয়ে তীব্র আলোকরশ্মি চোখমুখ ছুঁয়ে দিল কুহুর।ঘুম ছুটে যেতে সেকেন্ড সময় লাগল না।চোখ ডলে তাকাতে চেষ্টা করল।চোখমুখ বিশ্রিরকম কুঁচকে গেল আলোর দাপটে।উঠে বসার চেষ্টা করতেই চুলে প্রখর টান অনুভব হলো।ফের ঠাস করে শুয়ে পরলো কুহু।পাশ ফিরতেই দেখল বেঘোরে ঘুমাচ্ছে রওনক।কুহুর অর্ধেকটা চুল রওনকের শরীরের নিচে চাপা পরেছে!একেবারে গায়ের সঙ্গে লেপ্টে এসে শুয়ে আছে!মাঝখান বরাবর দৃষ্টি পরতেই চমকে উঠলো কুহু!কাল রাতে তো এখানটায় কোলবালিশ ছিল!টানা আধঘন্টা জগড়া করার পর এই বর্ডার দিয়েছিল কুহু!আর ঘুমিয়ে পরার সুযোগ নিয়েই কি সেটা সরিয়ে নিলেন রওনক ভাই?রাগে ফোঁস ফোঁস করল কুহু।ঘুমন্ত রওনককে ধাক্কা দিয়ে চুল ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে বসল।সাড়া খাটে কোথাও কোলবালিশ নেই!আশ্চর্য!গুম করে দিল নাকি?ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই খেয়াল করলো কুহু যে পাশটায় শুয়েছে ঠিক তার মেঝেতেই কোলবালিশ পরে আছে!চক্ষু চড়কগাছ কুহুর!সর্বনাশ!ঘুমের ঘোরে কোলবালিশ সে সরিয়ে দিল?
"ঝগড়াঝাটি করে বর্ডার স্থাপন করলে!তারপর নিজেই গায়েব করে দিলে!না জানি আমার ঘুমের সুযোগ নিয়ে আর কি কি করেছো তুমি!নিজেকে নিরাপদ মনে হচ্ছে না তোমার সঙ্গে এক রুমে!
ঘুম জড়ানো ভরাট স্বরে তৎক্ষনাৎ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল কুহু।সকাল সকাল তার রাগ চরমে ওঠে গেল!দাঁত চিবিয়ে বলল,
" ঘুমের মধ্যে মানুষের হুশ থাকে নাকি?স্বজ্ঞানে কি সরাতাম এটা?এতই যখন ভয় তাহলে কাল থেকে আমার সঙ্গে এক রুমে থাকবেন না।
কথাটুকু বলেই খাট থেকে নেমে গেল কুহু।রওনকের ঠোঁটের কোণে মৃদু দুষ্ট হাসি লেপ্টে আছে।অগোছালো চুলে,এলোমেলো ওড়না গায়ে মেয়েটাকে নেহায়েত মন্দ লাগছে না!ঘুমন্ত ফোলা চোখদুটোতে অবলীলায় চুমু খেতে ইচ্ছে করছিল!কালকে রাতের কথা ভাবতেই আপন মনে হেঁসে ফেলল রওনক।মাঝ রাতে খুব সাবধানে বালিশটা কুহুর দিকে ফেলে দিয়েছে সে।ঘুমন্ত মুখশ্রী জুড়ে অধরোষ্ঠের আদুরে ছোঁয়া দিয়েছিল শ'খানেক।খুব করে ইচ্ছে করছিল বক্ষস্থলে জড়িয়ে নিতে।ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার ভয়ে সেটুকু সাহস করে উঠতে পারেনি।ঘড়ির দিকে দৃষ্টি পরতেই হকচকিয়ে উঠলো রওনক।দশটায় ভার্সিটিতে যেতে হবে।অলরেডি নয়টার উপর বেজে গেছে!দ্রুত খাট থেকে নেমে গিয়ে কুহুকে ওয়াশরুম থেকে বেরোবার জন্য তাড়া দিল।
!!২২!!
ঘুম থেকে জেগে খানিকক্ষণ থ মেরে বসে থাকতে হয় রিশার নয়তো সারাদিনের জন্য মস্তিষ্ক সচল থাকে না।কাল রাত থেকে একটা হিসেব কিছুতেই মেলাতে পারছে না সে।মানে কুহুর বিয়েতে ভাইয়ার কোনো প্রতিক্রিয়া ছিল না!অথচ শেষ মুহূর্তে মিরাকল হলো!এটা কিভাবে সম্ভব?মনে হচ্ছে সব প্রশ্নের উত্তর জানতে পারবে ভাইয়ার কাছেই!কিছু তো একটা গন্ডগোল পাকিয়েছে সে!
"রিশা জানু?
কুহুর ডাকে ভাবনার ঘোর কাটলো রিশার।সাদা আর হলুদ রঙা মিশ্রিত থ্রিপিস পরে আছে কুহু।মাথায় ঘোমটা টেনে দেওয়া।কেমন স্নিগ্ধ লাগছে দেখতে!নাকে ফুল।দু'হাতে চুড়ি!সম্পূর্ণ রূপটাই বদল করে দিয়েছে যেন!আগের তুলনায় কুহুর রূপ যেন বেড়েছে বহুগুণ!প্রায় অনেক্ক্ষণ যাবৎ খুঁটিয়ে কুহুকে দেখল রিশা।ততক্ষণে রিশার পাশে এসে বসেছে কুহু।ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে একটুখানি হাসল রিশা।খাট থেকে নেমে দাঁড়িয়ে বলল,
" কিরে তোর আকস্মিক বাসর কেমন কাটল?ঝগড়া বাঁধলো?
লম্বা এক শ্বাস ফেলল কুহু।চোখেমুখে আঁধার টেনে বলল,
"জীবনে কি এমন অন্যায় করেছিলাম জানি না।যার জন্য এরকম দিন আসলো আমার জীবনে।সবচেয়ে অপছন্দের মানুষটাকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করতে হলো।
কুহুর কথায় ভুরু কুঁচকে গেল রিশার।মেয়েটা হয়তো জানেও না কত সৌভাগ্যবতী সে!এরমন ভালবাসা কয়জন পায়?অথচ রিশা মনেপ্রাণে একজনকে চেয়েও পেল না!নিয়তি বড্ড অদ্ভুত!ভালবাসার মানুষকে পাওয়ার ভাগ্য নিয়ে জন্ম হয় না সবার।তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল রিশা,
" এমন ভাবে বলছিস যেন আগুনে ফেলে দেওয়া হয়েছে তোকে!বিয়ে খুব পবিত্র বন্ধন কুহু!বিয়ের আগে হয়তো তোদের সম্পর্ক ভিন্ন ছিল এখন অন্যরকম।
"ছাই!তোর ভাই কি শুধরে যাওয়ার মতো লোক?কাল রাতে কি অসভ্যতা করেছে জানিস?
কথাটুকু বলতে গিয়েও গিলে ফেলল কুহু।বিস্ফোরিত দৃষ্টি ফেলে তাকিয়ে আছে রিশা!অপ্রস্তুত হাসার চেষ্টা করে বার কয়েক চোখের পাতা ঝাপটালো কুহু!রিশার সঙ্গে সব কিছু শেয়ার করতে করতে এখন মুখ ফসকে এটাও বলে ফেলেছে!অবশ্য দোষ তো ষোলআনা তাঁর!কামড়ে দিয়েছে সে।শারমিন বেগম এসে জানালেন কুহুর মা আর ভাবী এসেছে।প্রচন্ড খুশিমনে বসা থেকে উঠে দাঁড়াল কুহু।এই প্রথম পরিবার ছাড়া থেকেছে সে।কি যে মন খারাপ করছিল!এক ছুটে বেরিয়ে চলে গেল সে।রিশা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।কুহুর মন ভীষণ সরল।মাঝেমধ্যে মেয়েটা অবুঝ আচরণ করে ফেলে বড্ড!এই বাচ্চাসুলভ মেয়েটাকে সামলাবে কি করে তার ভাই?নাকানিচুবানি খাইয়ে ছাড়বে।
•
বসার ঘরে আফসানা বেগম আর তোহা বসে আছে।হাসিমুখেই কথা বলছেন শারমিন বেগম।এবার নিয়ে মাত্র দুইবার এই বাড়িতে এসেছেন আফসানা বেগম।তবে তোহা এই প্রথম।আশেপাশে দৃষ্টি বুলিয়ে দেখছিল সে।ছয় রুমের ফ্ল্যাট।বেশ গোছানো আর পরিপাটি!শৌখিন জিনিসের ছড়াছড়ি!মায়ের পাশে বসে আছে কুহু।শারমিন বেগম হাসিমুখে কুহুকে বললেন মিষ্টির প্যাকেট গুলো যেন কিচেনে নিয়ে যায়।আর অতিথিদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করে।কুহু একটু আৎকে উঠলো!দু'দিন আগেও এটা কেবল বন্ধুর বাড়ি মনে করলেও,আজ যেন নিজের সংসার মনে হচ্ছে!মাথা কাত করে সায় জানিয়ে মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে চলে এলো কুহু।অন্যদিনের তুলনায় আজকে অনুভূতি ভিন্ন!ভয়ও হচ্ছে কিঞ্চিৎ!কি খাবার দিবে বুঝতে পারল না কুহু।ঘাবড়ে গেল।মিষ্টিগুলো কেবল প্লেটে সাজিয়ে নিল।আর কি দেবে?মনে হচ্ছে রিশাকে ডাকতে হবে।ঘুরে হাটা ধরতেই কিছুর সঙ্গে ধাক্কা খেল।সম্মুখে তাকাতেই দেখল রওনক দাঁড়িয়ে আছে।একেবারে ফর্মাল স্টাইলে!আদেশের সুরে বলল,
"ইতিউতি না তাকিয়ে,স্বামীকে নাশতা দাও জলদি।এক্ষুনি বেরোবো আমি।
কথাটুকু বলেই হাত ঘড়ি দেখল রওনক।এমনিতে চিন্তায় অস্থির হয়ে আছে কুহু।নিজেরই তো খাওয়া হয়নি সকাল থেকে।এখন আবার আরেক উটকো ঝামেলা।পাশ থেকে মিষ্টির প্লেট থেকে একটা মিষ্টি তুলে নিল কুহু।রওনক মাথা তুলে তাকাতেই সোজা তার মুখে পুরে দিল সেটা!হতভম্ব হয়ে মিষ্টি মুখে নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল রওনক!মিষ্টির সিরা তার পুরো ঠোঁট মাখিয়ে গেছে একেবারে!
" বাহ!আমরা ওদিকে অপেক্ষা করছি,এদিকে ননদী রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে স্বামীকে মিষ্টি খাইয়ে দিচ্ছে!সঠিক সময়ে আসার কারণে রোমান্টিক দৃশ্যটা চোখে পরলো।
ভাবীর কথায় অপ্রস্তুত হলো কুহু।বাঁকা দৃষ্টিতে কুহুর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি চিবুতে চিবুতে উত্তর দিল রওনক,
"কাল থেকে আপনার ননদী রোমান্টিক অত্যাচার করেই যাচ্ছে আমাকে।
চোখ গরম করে রওনকের দিকে তাকাল কুহু।তোহা হাসতে হাসতে প্রস্থান করল।যাবার জন্য পা বাড়াল কুহু।খপ করে হাত ধরে ফেলল রওনক।রসহ্যময় দৃষ্টি ফেলে তাকিয়ে রইল কুহুর পানে।হাতের দিকে তাকিয়ে বলল কুহু,
" কি হলো?মিষ্টি খেয়ে পেট ভরেনি?ভাবীর সামনে কি বললেন এটা?নির্লজ্জ!
কুহুকে টেনে নিজের কাছাকাছি নিয়ে আসল রওনক।কপালে পরে থাকা চুলগুলো ফু দিয়ে বলল,
"বউ এত আদর করে খাইয়ে দিল!পেট না ভরে উপায় আছে?কিন্তু মুখে যে সিরা লেগে আছে এটা?
" আশ্চর্য!ধুঁয়ে ফেলুন!আর ইচ্ছে না করলে এমনি চলে যেতে পারেন ভার্সিটিতে।
"উহুম!বউ আমাকে মিষ্টি খাইয়ে দিল!আমার একটা দায়িত্ব আছে না?আমাকেও তো খাইয়ে দিতে হবে।
" আপনার আধিখ্যেতা রেখে সরুন।আমি নিজেই মিষ্টি খেয়ে নিব।
"না খাইয়ে তো ছাড়ছি না বউ!আজকের এই মিষ্টি খাওয়া তোমার স্বরণে ইতিহাস হয়ে থাকবে!
·
·
·
চলবে..............................................