অরু অনুদ্ধত হয়ে নীরবে কাঁধে পড়ে থাকায়—ওর অস্তিত্ব হাওয়াতে বিলীন হয়েছে যেমন। তন্ময়ের বলবান কাঁধে কিচ্ছুটির অনুভব হয় না কিছুক্ষণের জন্যে। অথচ জলজ্যান্ত এক রমণী তার দক্ষ কাঁধে রয়েছে। দোরগোড়ায় পৌঁছুতেই অরু পুনরায় ছটফটিয়ে উঠল। নামবার বেশ তাড়া। তন্ময় তখন এমনিতেও দাঁড়িয়ে পড়েছে আকস্মিক। কারণ সম্মুখেই দীপ্ত দাঁড়িয়ে। ছোটোখাটো মুখটার দু'ঠোঁটের মধ্যিখানে বৃহৎ ফাঁক হয়ে আছে হাস্যকর ভাবে। চোখদুটো অনৈসর্গিক বড়ো। যেন চোখের কোটর ছেড়ে মণি দুটো বেরিয়ে আসবে। ড্যাম্ন! এই দুরন্ত;অশান্ত ছেলেটি মুখ ফসকে বলে বেরালেই হেডলাইন ছেপে যাবে। যেভাবে পত্রিকায় ছাপে। শাহজাহান বাড়ির কোণায়-কোণায় দীর্ঘতম সময় ধরে এই রমরমা ঘটনার বিবৃতি চলবে।
তন্ময় দ্রুত নিজ ঠোঁটে আঙুল চেপে ইশারা করে নিশ্চুপ থাকবার জন্য। পরপর হাতের ইশারায় চলে যেতে বলে এক্ষণ। দীপ্ত কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে থাকলেও এযাত্রায় মিটিমিটি হাসতে শুরু করেছে। বাচ্চা হাতটা মুখে চেপে রেখেছে। অরুর মুখখানা তখনো তন্ময়ের সুগঠিত পিঠেই অনড়। সে আঙুল দিয়ে গুঁতিয়ে নামিয়ে দেবার জোরালো প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছে। তন্ময়ের গম্ভীরমুখের সামনে কী আর দীপ্তর দুষ্টুমি চলে? দীপ্ত চোখ রাঙানো খেয়ে উদ্যত হয়ে সরে যেতেই তন্ময় অরুকে নামায় কাঁধ থেকে। নেমেই মেয়েটা স্বস্তির শ্বাস ফেলতে পারে না। ব্যগ্র চোখেতে চতুর্দিক পর্যবেক্ষণ করে নেয় তীক্ষ্ণ চোখে। কাউকে না দেখতে পেয়ে তবেই ভেতরে আটকে রাখা শ্বাসটুকু ছাড়ে। সজ্জিত আঁখিজোড়া দ্বারা ধারালো দৃষ্টিতে চেয়ে মুখ ভেঙিয়ে হনহনিয়ে বেরিয়ে যায়। তন্ময় হতাশ এবং উদাস–দুটোই। প্রিয়তমার অভিমান তো ভাঙলোইনা উল্টো মাঝ দিয়ে দীপ্ত অদৃষ্ঠচর এক দৃশ্য দেখে বসে আছে। আশ্চর্যজনক! তন্ময় ওকে একলা পেতেই কানটা আচ্ছাকরে টেনে দেবে।
অস্থির বদনে সে গাড়ির সামনে এসে দেখল মহারানি ভিক্টোরিয়া সামনের সিটে বসেনি। দীপ্তকে বসিয়ে নিজে গিয়ে দীপ্তর গদিতে বসে আছে আমোদে। গর্দান ঘুরিয়ে বাইরের দিকে চেয়ে আছে সন্ন্যাসিনী সেজে। এই যেন বাংলা পূর্ণদৈর্ঘ্য ছায়াছবি। নাম ‘অভিমানের বর্ষণ।’ তন্ময় একঝলক দেখে ড্রাইভিংয়ে বসল। সিটবেল্ট বেঁধে গাড়ি স্টার্ট করল। ইতোমধ্যে ফোন কয়েকবার বেজেছে। এই ছোটোখাটো দেহের অভিমানিনী ভিক্টোরিয়ার সাথে আজ একটু দুষ্টুমি করাই যায়। কল্পনা করেই তন্ময় নিজমনে হাসলেও মুখমণ্ডল গম্ভীর করে রাখল চূড়ান্ত পর্যায়ে। যেন মাত্রই পকেট থেকে ছয়টা হাজার টাকার নোট চুরি হয়েছে। অরুকে বেশ কয়েকবার চোরাচাহনিতে তাকাতে দেখা গেল। শাবিহা, রুবি এবং দীপ্তও অনুভব করতে পারল তন্ময়ের আকাশছোঁয়া গম্ভীরতা। নিজেদের মধ্যে খুব আড়ালে মুখ চাওয়াচাওয়ি করেও—তিনজনেই অরুর পানে চাইল। এরপর তন্ময়ের পানে।
তন্ময়ের বন্ধুবান্ধব সবগুলো লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে কমিউনিটি সেন্টারের এর সম্মুখে। পাশেই দাঁড়ানো মোস্তফা সাহেব তাদের ভেতরে নিতে উতলা হলেও তন্ময়ের বেয়ারা বন্ধুমহল সামান্যতমও উৎসুক নয়। তারা আনন্দে গদগদে স্বরে হেসে হেসে জানাচ্ছে,
‘আংকেল, আপনি যান ভেতরে। গেস্টস অ্যাটেন্ড করুন। আমরা তন্ময়ের সাথে আসছি।’
মোস্তফা সাহেব নিরুপায় হয়ে একপর্যায়ে ভেতরে চলে গেলেন। পাঠালেন ছোটো ভাই আনোয়ার সাহেবকে। আনোয়ার সাহেব সখ্যতা গড়তে পারেন দারুণ। এসেই তিনি হাঁটুর বয়সী ছেলের সঙ্গে অট্টোহাসির মজলিশ বসিয়ে দিলেন। মাহিন সর্বদাই মুখ চালানোতে একশোতে দুশো,
‘আংকেল, ভাইপুতকে মেয়েজামাই বানিয়ে কেমন বোধ করছেন বলুন তো! আমরা কিন্তু ছোটো বোনকে– ভাবি বানিয়ে বেশ চমৎকৃত।’
কাঁধ কাঁপিয়ে চোখ বুজে হেসে ওঠেন আনোয়ার সাহেব। চুপিসারে উচ্ছ্বাসিত গলায় জানান, ‘ফ্যান্টাসটিক।’
এতে যেন হৈচৈ পড়ে গেল। পালাক্রমে হেসে দাঁড়িয়েই গল্প চলল মিনিটখানেক। তন্ময় অদূর হতেই সুপরিচিত দেহগুলো দেখে নিয়েছে। বখাটেপনায় উচ্চতম ডিগ্রি হাসিল করা বন্ধুদের সাথে— নিজের অতিমাত্রায় সরলশান্ত চাচ্চুকে দেখে তন্ময় ঘাবড়াল। আল্লাহমাবুদ জানেন কীসব বকেছে! পার্কিং লট আজ গাড়ি দ্বারা আঁটসাঁট। কয়েক রাউন্ড ঘুরেফিরে অবশেষে গাড়ি পার্ক করা গেল। তন্ময় দরজা খুলে বেরোল প্রথমেই।
পেছনের দরজা খুলে শাবিহাকে আলতোভাবে রয়েসয়ে ধরে-ধরে নামতে সাহায্য করল। তারপরও আর দাঁড়াল না। বড়ো বড়ো পদচারণে এগিয়ে যাচ্ছে আপনমনে। সে ঠিক জানে প্রিয়তমা তার হতবিহ্বল হয়ে চেয়ে আছে। হয়তো-বা এইমুহূর্তে ছলছল নয়নজোড়ার দুর্দশা। হবার কথাইতো। কখনো ওকে সে একা নামতে দিয়ছে? কথায় কথায় অভিমান করে তন্ময়ের হৃদয় র ক্তাক্ত করা এই অভিমানী ভিক্টোরিয়াকে একটা সুইট ডোজ দেয়াই যায়। এখন দেখার পালা কতদূর নিতে পারে। বেশিক্ষণ নিতে না পারলে— একটা চমৎকার গিফট আছে। তন্ময় হাসতে হাসতে স্বতঃস্ফূর্ত ভঙ্গিতেই চাচ্চু-বন্ধুদের দিকে এগুল। তন্ময়ের স্বতঃস্ফূর্ততা বেশিক্ষণ টেকসই রইল না। আশ্চর্যজনকভাবেই তন্ময়ের মস্তকের ভেতরে যেন একের পর এক আগুন ধরতে আরম্ভ হলো।
অয়নের গোষ্ঠীতালিকাতে এতো-এতো চ্যাংড়া ছেলেপুলে কেন? এই কেমন অসভ্যতামি? একটা পরিবারে একই বয়সের এতোগুলো নৌজোয়ান কেন রইবে? সবই অরুর বয়সের কাছাকাছি। বা ওরচেয়ে দু'তিন বছরের বড়ো। হলরুম জুড়ে বেশ কয়েকটাকেই দেখা গেল ফুল্কিবাজ ধাঁচের। এদের চোখের সামনেই অরু স্বাধীন পাখির মতন উড়ছে। ব্যস্ত পায়ে এদিক-ওদিক ছুটে বড়োদের ফরমাইশ খাটছে। রোদ্দুরের মতন ঝলমলে হাসি যেন ঠোঁট থেকে নড়ছেই না। কয়েক প্রকার সাদা বাল্বের আলোতে একটি ছোটোখাটো পরির বাচ্চাই দেখতে লাগছে। তখন না দেখতে পেলেও তন্ময় এখন সু'স্পষ্ট দেখতে পেলো, তার কিনে দেয়া ডায়মন্ডের ছোটো নাকফুলটাও পরির বাচ্চা পরে আছে। অয়নের বড়ো চাচার ছেলেটার দৃষ্টি অরুতেই নিগূঢ়ভাবে সেঁটে। আধঘণ্টা ধরে। তন্ময় আলাপের মধ্যেও অন্যমনস্ক হচ্ছে। অতিথি আপ্যায়ন করাও অস্বস্তিকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতো জ্বলন বোধহয় সে এহজন্মে অনুভব করেনি কখনো। মনে হচ্ছে বুকের ভেতরটা জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যাবে। আগুনে তরল ঘি ঢালতে মাহিন শীর্ণ স্বরে ফিসফিস করে বলল,
‘অরুর জন্য কয়টা বিয়ের প্রপোজাল পাস আমায় জানাতে ভুলিস না কিন্তু!’
রিয়ান একইরকম ভাবে পূর্বের ন্যায় সুরে সুর মেলাল, ‘গুণে গুণে বলিস।’
তন্ময় চিবিয়ে চিবিয়ে জবাবে বলল, ‘তোদের আমি কা চা খা ব।’
সৈয়দ দুষ্টু হাসল। বন্ধুর কাঁধ জড়িয়ে বলল, ‘এতো চ্যাতিস ক্যান? চুল পাইকা যাইব।’
তন্ময় নীরব রইল। ওদের লেগপুলিং এর স্বীকার সে আজ নতুন নয়। তবে, মাহিনের ঠাট্টা মেশানো বাক্যটুকু পড়তে দেরি সত্য হতে দেরি হয়নি। তন্ময় জবেদা বেগমের ডাকে –পূর্বদিকের পঞ্চম সারির দিক এসে পৌঁছায়। মূলত তার পরিচয় করিয়ে দেবেন। এরপূর্বেই চেয়ারে বসা অয়নের মেজো মামি উৎসুক কণ্ঠে অরুর জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছেন। প্রত্যুত্তরে জবেদা বেগম শুকনো মুখে হাসেন। আড়চোখে দেখেন তার ছেলে ভোঁতা মুখে দাঁড়িয়ে আছে। ভদ্রমহিলা সেখানেই থেমে রইলেন না। ইনিয়েবিনিয়ে নিজের ছেলের সম্পর্কে বিবৃতি দিতে ব্যগ্র হলেন। ছেলে মাস্টার্সে পড়ছে। ভবিষ্যৎ ইঞ্জিনিয়ার। পিএইচডি করবে ইউএসএ-তে। লম্বা প্যাঁচাল। তন্ময় কাটকাট গলায় থামাল ভদ্রমহিলার আলাপ,
‘আমি ওর হাজবেন্ড।’
ভদ্রমহিলা একপ্রকার চ্যাঁচালেন, ‘জি?’
তন্ময় নির্বিকার, ‘অরু আমার ওয়াইফ। শি'জ ম্যারিড।’
বাক্যটি তন্ময় উঁচু গলায় ডিক্লেয়ার করে দিলো। আশেপাশে সমাগত সবাই শুনে আশ্চর্য, কিংকর্তব্যবিমূঢ়। কারণ সবাই জেনে এসেছে তন্ময় আর অরু ভাইবোন। ওদের একান্তগত বিয়ের বিষয়টা এখনো অপ্রকাশিত। অয়নের মামির মাথায় ছোটোখাটো এক বজ্রপাত পড়ল। তবে পরমুহূর্তেই তিনি হেসে আশীর্বাদ দিতে দিতে মুখে ফ্যানা তুলে ফেললেন। তাতেও তন্ময়ের রাগ নিভল না। ওপরিভাগে ভদ্রসভ্য ভাবে হাসলেও রাগান্বিত সে দীর্ঘসময় দাঁড়াল না। সরে এলো। তার বউয়ের দিক নজর! এতবড় স্পর্ধা!
ক্যামেরাম্যান, ফটোগ্রাফার আনা হয়েছে। অয়ন-শাবিহার আকদের প্রিপ্ল্যানিং ভিডিও ধারণ করা হচ্ছে ক্যামেরায়। এরপর তোলা হয়েছে দারুণ সব ছবি। আংটি পরানোর সময় সেই কী উচ্চস্বরের হৈচৈ! সবশেষে শাহজাহান পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্যকে একই ফ্রেমে বন্দি করা হবে। এরজন্যই স্টেজে উঠছে একে-একে সবাই। তন্ময় দেখল অরু দ্রুত আনোয়ার সাহেবের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে যেন তার রাগটা মাথায় ভালোভাবে চাপল। এতো নির্দয় এই মেয়েটা! তন্ময় কী ডোজ দেবে? তন্ময়কেই নিয়মিত ডোজ দিচ্ছে। আজ তো মিনিটে মিনিটে। মোস্তফা সাহেবের ডাকে তন্ময়ও উঠে এলো স্টেজে। অরু আড়চোখে চাইতেই চোখাচোখি হলো। অরু ত্বরিত দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল। যেন মাছ চুরি করা বেড়াল ধরা পড়েছে।
তন্ময় গিয়ে দাঁড়াল অরুর পেছনে। দেখতে পেলো অরুর কম্পিত দেহখানা। কাছ থেকে দৃশ্যটুকু সুস্পষ্ট বড্ড। লম্বা, খোলা –কালো চুলগুলোও একনজর দেখল। সুন্দর ঘ্রাণ আসছে নাকে। আকস্মিক সে হাত বাড়িয়ে অরুর কোমর ছুঁলো। পাঁচ আঙুলের থাবা বসিয়ে একমুহূর্তেই টেনে নিজের পাশে নিয়ে এলো দেহটি। এতো দ্রুত এবং শব্দহীন যে কেউই কিচ্ছুটি উপলব্ধি করতে পারল না। অরু আশ্চর্যের সপ্তমে। চেঁচাতে গিয়েও ভাগ্যক্রমে চেঁচায় নিই। তন্ময় ওর পাতলা কোমর শক্ত হাতে জাপটে নিজের পাশে লেপ্টে নিলো। ক্রুদ্ধ চোখে একপলক চেয়ে ক্যামেরার পানে চাইল। ফটোগ্রাফার তখন বারংবার সবাইকে আদেশ ছুঁড়ছে ক্যামেরার পানে চাইতে। শব্দ করে ছবি তোলা হলো কয়েকবার। অরু যেন তন্ময়ের ক্ষোভ বুঝে নিয়েছে। বেচারি ভয়ে এইটুকুন মুখ নিয়ে দূরেদূরে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। ধারেকাছে ভিড়ছে না। সেখান থেকেই আড়ে-আড়ে চাইছে।
রাত একটা পঁয়তাল্লিশে অনুষ্ঠান শেষপ্রান্তে পৌঁছুল। সবাই তখন পার্কিং এরিয়াতে দাঁড়িয়ে। বিদায় নিয়ে যে যার মতন গাড়ি চড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। শাহজাহান বাড়ির প্রত্যেকেই তখন দাঁড়িয়ে হাসিমুখে বিদায় জানাচ্ছে— সময় নিয়ে। পার্কিং এরিয়া ফাঁকা হতেই মোস্তফা সাহেব গাড়িতে উঠে বসেছেন। ভদ্রলোক ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আপ্যায়ন করা তো চারটিখানি কথা নয়। একে-একে বাকিরাও উঠে বসছে। তন্ময় এগিয়েছিল অরুকে আটকাতে। তবে সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তাকে আসতে দেখেই ও দ্রুত আনোয়ার সাহেবের পাশেই চড়ে বসেছে। বিরক্ত তন্ময় ড্রাইভিং-য়ে উঠে বসে। মেইনরোড দিয়ে যাওয়ার পথে অয়নের গাড়ি পাশ দিয়ে পাল্লা ধরে চলছে। শহুরে রাস্তাঘাট তখন কুয়াশায় ভেঁজা, আচ্ছাদিত। দূরদূরান্ত শুধু মেঘেদের বাড়ি বলে মনে হয়। এসময় গাড়িও সাবধানে চালাতে হচ্ছে। মিরোরে অরু মুখটা দেখা যাচ্ছে। গল্প করছে আনোয়ার সাহেবের সাথে।
——
শাহজাহান বাড়ির সদরদরজা খুলে দেয়া হয়েছে। গাড়ি গুলো ঢুকছে লাইন ধরে। তন্ময় গাড়ি পার্ক করে বেরোল চটপট। একমুহূর্ত দেরি না করে অরুর পাশের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। ওকে অপ্রকাশ্যে বেরুতে দিলো না। আনোয়ার সাহেব, শাবিহা, দীপ্ত বেরিয়ে যেতেই অরুকে বেরুতে হলো একই দরজা দ্বারা। বেরিয়ে সে হতভম্ব। সবাই ক্লান্ত ভঙ্গিতে বাড়ির ভেতর ঢুকে যাচ্ছে। অরু লেহেঙ্গা দু'হাতে তুলে নিয়েছে। ছুটবে বলে হয়তো-বা। তন্ময় দিলে তো? সেই ইতোমধ্যেই সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। দারোয়ান চাচা দরজায় তালা মেরে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন ঘুম ঘুম গলায়,
‘বাবা, বাতি বন্ধ করমু?’
তন্ময় জবাব দিল অরুর মুখে চেয়েই, ‘করুন।’
দারোয়ান চাচা বাতিগুলো বন্ধ করে দিতেই আঁধার নামল। আকাশের জ্যোতি অনেকটাই স্বচ্ছ করে দিয়েছে দেখবার তৃষ্ণা। আঁধারে, নীরবে তন্ময় এগুল দু'পা। অরু তৎক্ষণাৎ পিছু চলে গেল। আওড়ানো স্বরে শুধাল,
‘কী হয়েছে?’
তন্ময় এগুতে এগুতেই সাবলীল স্বরে পালটা প্রশ্ন ছুঁড়ল, ‘কী হবে?’
অরু থেমে যায়। পাশ কেটে যেতে উতলা হয়। তন্ময় একঝটকায় হাত টেনে গাড়ির সামনে নিয়ে আসে। অরুর পিঠে ঠেকে গাড়িতে। তন্ময় দু’হাত ওর মাথার দু’পাশে রেখে, মাথা ঝুঁকিয়ে গভীর কণ্ঠে শুধোয়,
‘খুব এঞ্জয় করেছিস?’
অরু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রয় জবাবে। এই প্রশ্নের কী জবাব হয় আদতেও? তন্ময় জবাবের আশাতে রয়ও না, ‘আমি এঞ্জয় করিনি। একটুও না। নাও ইট’স মাই টার্ন টু এঞ্জয়।’
এরপর এক ভূমিকম্প বয়ে যায় ওষ্ঠতে ওষ্ঠদ্বয়ের। গভীর থেকেও গভীরতম হয় স্পর্শেরা। সবকিছু নীরব, শান্ত। কিয়ৎক্ষণ পরেই আনোয়ার সাহেবের ডাক শোনা গেল। হঠাৎ ডাকে অরু হকচকাল। চোখ মেলে চাইল। তন্ময়ের প্রশস্ত বাহু থেকে ছাড়া পেতে মরিয়া হয়ে উঠল। তন্ময় ছাড়লে তো? সে শান্ত না হওয়া পর্যন্ত কোনো ছাড়াছাড়ি নেই। আলগোছেই ওকে জাপ্টে নিয়েই সরে গেল পেছনটায়।
.
.
.
চলবে...................................