ভেজা চুলে হাত বুলিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো রাতিম। কোথা থেকে, কিভাবে বলা আরম্ভ করবে সে? অন্যকেউ হলে না হয় বিষয়টা এড়িয়ে গিয়ে কিছু একটা বুঝিয়ে দেওয়া যেত। তবে রিশার সঙ্গে এরুপ কিছু বলা সম্ভব নয়। রাতিমের অনেক কিছুই জড়িয়ে আছে এখানে। তীরে এসে তরী ডুবে যেতে দিলে তো হবে না। বৃষ্টির সঙ্গে বাতাসটা গা কাটাকাটা করে তুলল রাতিমের। পরিবেশ কেমন মুহূর্তেই অস্থির হয়ে উঠেছে তার কাছে।বুক ঢিপঢিপ করছে। রিশা স্পষ্ট খেয়াল করলো ফর্সা নাক রক্তিম হয়ে গেছে! বৃষ্টি কি তবে সহ্য করতে পারেনা লোকটা? খানিক আমতাআমতা করে রাতিম জানাল, সবটা ফোনে বলবে রিশাকে। আপাতত তার মাথা ধরেছে খুব। পরিস্থিতি যাই হোক মানুষ নিজের কৌতূহল কখনো দমাতে পারে না। রহস্য উদঘাটন করা না অবধি মন অশান্ত হয়ে থাকে। রিশা বেশ বুঝতে পারছে এই মুহূর্তে রাতিমের পক্ষে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব নয়। তবুও প্রশ্নের উত্তর চাই তার। কুহুকে বিয়ে করতে চাওয়া রাতিম ছেলেটা আর এই রাতিম ভাই যে একইজন সেটা এখন হলফ করে বলতে পারবে রিশা। রাতিমের হাতের পানে দৃষ্টি পরতেই দেখল আঙ্গুলের ডগাও লালচে হয়ে গেছে। ঠোঁট ফ্যাকাশে বর্ন হয়ে গেছে রাতিমের। কিয়ৎক্ষণ চুপ থেকে বলল রিশা,
"শুধু এইটুকু বলুন আপনিই কি কুহুর বিয়ে পাত্র ছিলেন রাতিম ভাই? এর বেশি জানবার প্রয়োজন নেই আমার।
রিশার ভাসা ভাসা চোখে দৃষ্টি রাখল রাতিম। কেমন চিন্তিত লাগছে মুখখানি! চট করেই মাথায় একটা কথা খেলে গেল রাতিমের। রিশা তো জানেই রাতিম শেষ মুহূর্তে বিয়ে করতে যায়নি। তবে এখন আবার জিগ্যেস করছে কেন রাতিমই পাত্র ছিল কিনা? উত্তর দেওয়ার একটা পথ পেতেই বলল রাতিম,
" তুমি কি কোনো কারণে আমাকে সন্দেহ করছো আইরিশ? তোমার যদি এই প্রশ্ন জানারই ছিল তাহলে আগে কেন জিগ্যেস করোনি?
চোখ বন্ধ করে প্রলম্বিত শ্বাস ফেলল রিশা। ফের তাকিয়ে বলল,
"কথা ঘোরাতে চেষ্টা করবেন না রাতিম ভাই। একটা ছেলের কথা বলার ধরণ, ভঙ্গিমা দেখলে মেয়েরা সহজেই সবকিছু আন্দাজ করে ফেলতে পারে। কাজেই আমার প্রশ্ন থেকে পালাতে পারবেন না আপনি।
" আমি কিন্তু অস্বীকার করিনি কিছু! আমি শুধু জিগ্যেস করেছি এতদিন পর এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চাওয়ার কারণ কি? তোমার বান্ধবী কি এখন সুখে নেই? ভাইয়ার বিয়ে হওয়াতে কি খুশি হওনি তুমি?
"আপনি কথার প্রসঙ্গ অন্যদিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন রাতিম ভাই।
রিশার চোখে স্পষ্ট রাগ দেখতে পাচ্ছে রাতিম। অভিমান করলে গালদুটো যেমন ফুলে যায় এই মুহূর্তে রিশাকেও তেমনি লাগছে! এই রাগ - অভিমানের কারণ কি? বান্ধবীর সঙ্গে প্রতারণা করেছে বলে? রিশার দৃষ্টি অন্যপাশে। একবার দৃষ্টি ঘোরালে বোধহয় দেখতে পেত সামনে থাকা যুবকটি তার সিক্ত রূপে মুগ্ধ! অন্য কেউ সামনে থাকলে বোধহয় এতক্ষণে অনর্গল সবকিছু বুঝিয়ে বলে ফেলতে পারতো রাতিম। বিপত্তি ঘটেছে সম্মুখে রিশা থাকায়। এই মেয়েটা সামনে এসে দাঁড়ালেই তো নিজের মধ্যে স্থির থাকতে পারে না রাতিম! অনুভূতিগুলো বুকের মধ্যে ধুমধুম ঢোল পেটাতে থাকে! শুকনো ঢোক গিলে বলল রাতিম,
"আমিই ছিলাম তোমার বান্ধবী কুহুর বিয়ের পাত্র। এর পেছনে অনেক কাহিনিও আছে।
কথাটুকু শুনতেই ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল রিশা। ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাতিম। কেন জানি একটুও ভাল লাগলো না রিশার। মাথা ধরেছে বলে দ্রুত প্রস্থান করলো সে। রাতিম হতবুদ্ধির মতো তাকিয়ে রইল! পরক্ষণে রিশাকে পিছু ডাকল। কোনো সাড়া মিলল না। সামনে রিকশা পেয়েই উঠে গেল রিশা। রাতিম আর পাল্টা ডাকলো না। পাথরের মতো দাঁড়িয়ে রইল! এসব ইনফরমেশন কোথা থেকে পেল মেয়েটা? রওনক আবার বলে দেয়নি তো? নিজে মহান, ভাল সাজার চক্করে রাতিমকে ফাঁসিয়ে দেয়নি তো! নাকি কুহু কিছু বলেছে? এই মুহূর্তে রওনককে বিষয়টা জানানো উচিত হবে কিনা সেটাও বুঝতে পারছে না। তখন প্রশ্ন উঠবে রিশা তার দেখা পেল কি করে? শত ভাবনা মস্তিষ্ক এলোমেলো করে তুলল রাতিমের। অত্যল্পকালে বার কয়েক হাঁচি দিল সে। তবুও বাড়ি যাওয়ার তাগাদা নেই তার। ভাল লাগছে না কিছুই!
•
কোলের উপর সাইড ব্যাগ নিয়ে চলন্ত রিকশায় বসে আছে রিশা। হঠাৎ এমন আচরণ করা কি ঠিক হয়েছে তার? কেন রাতিম ভাইয়ের ডাকে সাড়া দিল না সে? কোথাও একটা তীব্র অভিমান কাজ করছে। কেন জানি মনে হয়েছিল রাতিম ভাই তাকে পছন্দ করে! কুহুর বিয়ের পাত্র ছিল শুনে বাকিটুকু আর শুনতে ইচ্ছে হলো না। পাহারসম কৌতুহল নিমেষেই ধূলিসাৎ হলো কি করে?
◾
দুপুরের পর থেকে টানা বৃষ্টিপাত হয়েছে। বাড়ি পর্যন্ত আসতে আসতে কুহু আর রওনক একেবারে ভিজে চুপচুপ! রওনক বাইক রেখে আসতে আসতে কুহু কলিং বেল চেপে দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টির কারণে বাইক দ্রুত চালিয়ে বাসায় চলে এসেছে রওনক ভাই। ভাল মতো ভিজতে পারেনি বলে মন খারাপ লাগছে কুহুর। কোথাও একটু দাঁড়িয়ে ভেজা যেত! এই কথা বেরসিক রওনক ভাইকে কে বোঝাবে? মিনিট এক পর রিশা এসে দরজা খুলে দিল। বেশ চমকে উঠলো কুহু! কিছু বলার পূর্বেই রিশা চলে গেল। অন্যদিনের তুলনায় আজকে কেমন মনমরা লাগছে রিশাকে। রওনক এগিয়ে এসে বলল,
"দরজা তো খোলাই আছে! এখনো ভেজা গায়ে দাঁড়িয়ে আছ কেন?
ঘোর কাটতেই রওনকের দিকে তাকাল কুহু। লম্বা লম্বা পা ফেলে ভেতরে প্রবেশ করে বাম দিকে গেল। ওদিকটায় সিড়িঘর। ভ্রু কুঁচকে পিছু নিল রওনক। পেছনে তাকিয়ে বলল কুহু,
" এখনো বৃষ্টি একটুও কমেনি। আমি ভিজতে যাচ্ছি।
কথাটুকু বলেই প্রথম সিড়িতে পা রাখল কুহু। পেটে ধাক্কা খেল মনে হচ্ছে কিছুর সঙ্গে! নিচে তাকাতেই দেখলো রওনক ভাই পেছন থেকে শক্তপোক্ত হাতে আঁটকে দিয়েছে তাকে! অত্যল্পকালে সিনেমার ভিলেনদের মতো করে কুহুকে কোলে তুলে নিয়ে আশপাশে দৃষ্টি বুলালো একবার। পরক্ষণে একছুট লাগাল রুমে।দ্রুত যেন ঘটে গেল সব! রুমে আসতেই চেঁচিয়ে বলে উঠল কুহু,
"বাঁচাও, বাঁচা....
বাকিটুকু বলার আগেই কোল থেকে নামিয়ে মুখ চেপে ধরলো রওনক। চোখেমুখে তাঁর রাগ ঠিকর ঝরছে! চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে কুহু। দম আঁটকে যাচ্ছে তাঁর।কাঠিন্য স্বরে বলল রওনক,
" অসভ্যের মতো চেঁচাচ্ছ কেন? মা কিংবা রিশা যদি এসে যেত!
মুখের সামনে থেকে হাত সরিয়ে দিয়ে বলল কুহু,
"হ্যাঁ এসে দেখুক তারা আপনি আমাকে নাকমুখ চেপে মেরে ফেলার পায়তারা করছেন। তারপর ওই শাহিনূর মাহি ম্যামকে বিয়ে করবেন।
কুহুর কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকিয়ে আছে রওনক।এই মেয়ে কথা কোথা থেকে কোথায় টেনে নিয়ে গেল? নাকের পাটা ফুলিয়ে ফের বলল কুহু,
" আমার জীবনে আপনি হিরো নয় বরং ভিলেন। আচার-আচরণ তো ওইরকমই! কোন জনমে আপনার কি ক্ষতি করেছিলাম কে জানে!
কুহুর কথায় নিজকে মস্তিষ্ক শূন্য লাগছে রওনকের! ছোঁ মেরে পুনরায় কুহুকে কোলে তুলে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে বলল,
"ভিলেন যখন মেনেছ তাহলে এটাও জেনে রাখ আমার অনুমতি ছাড়া কিছুই করতে পারবে না তুমি।আর ক্ষতি, সর্বনাশ যা করার তা বহু আগেই করে ফেলেছ, সর্বনাশী! এখন পাল্টা শোধবোধ না নিয়ে ছাড়ছি না মেয়ে!
কুহুকে ওয়াশরুমে নামিয়ে দিয়ে ওয়ারড্রবের কাছে গেল রওনক।সমস্ত কথা কুহুর মাথার এক হাত উপর দিয়ে গেল!তবে শর্বনাশী শব্দটা কর্নপাত হতেই ভয়ানক রাগ উঠে গেল! রওনক ফিরে এসে কুহুর হাতে শুকনো নিপাট জামা ধরিয়ে দিয়ে বলল,
" জলদি চেইঞ্জ করো। নয়তো ঠান্ডা লেগে যাবে।
কাপড় সমেত রওনকের হাত টেনে ধরল কুহু।এহেন কান্ডে বেশ চমকাল রওনক।কুহুর চোখেমুখে রাগের আভা! মাথা ঈষৎ উঁচু করে রওনকের দিকে তাকিয়ে বলল সে,
"কি ক্ষতি, সর্বনাশ করেছি শুনি? ওই যে প্রথমদিন রিশার সঙ্গে যখন এবাড়িতে এসেছিলাম আপনার একটা নতুন টিশার্ট নিয়েছিলাম ওটাই অপরাধ ছিল আমার?
দু'হাতে কুহুকে টেনে নিজের ভেজা শরীরের সাথে মিশিয়ে নিল রওনক।নিভু স্বরে বলল,
" যদি বলি এরচেয়েও বড়ো ক্ষতি করেছ? যেটা পোষাতে তোমার আজন্ম কেটে যাবে!
রওনক এতটা কাছে আসায় অপ্রস্তুত হয়ে গেল কুহু৷ হাত সরিয়ে দিয়ে জানাল ঠান্ডা লাগছে তাঁর।কিছু বললেই লোকটা হুটহাট কাছে চলে আসে।কুহুর তখন হাত,পা কাঁপে।বুক ঢিপঢিপ করে! রওনক আর কিছু বলল না।বাইরে দাঁড়াল।এমনিতেও গা ভেজা তার।হেলমেট থাকার কারণে মাথা ভিজেনি।ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিল কুহু।মৃদু হাসলো রওনক।এই মেয়েকে আদৌ বোঝাতে সক্ষম হবে সে? তার ভেতর যে ভীষণ পোড়ায়! এই মুহূর্তে ডায়েরি লেখার খুব ইচ্ছে হলো রওনকের। কুহুর এই আর্দ্র, স্নিগ্ধ রূপে মোহিত হয়ে অনায়াসে লিখে ফেলা যেত কয়েক পাতা! খুঁটিয়ে দেখা লুকানো সৌন্দর্যটুকু কি কাগজে ব্যক্ত করতে পারতো রওনক? কুহুই যে তার কাছে জীবন্ত এক ডায়েরি! চোখের ভাষায় প্রতিনিয়ত লিখে যাবে সে।
◾
ঘড়িতে রাত দেড়টা।বন্ধ রুমে হালকা হলদে রঙা ডিমলাইট জ্বালিয়ে শুয়ে আছে রিশা।জানালা গলিয়ে বাতাস আসছে ভালই।আকাশ গুমোট ভাব।বরিষার পূর্বাভাস।সাদা রঙা পর্দা গুলো উদভ্রান্তের মতো ভাসছে।ঠিক রিশার ভেতরকার অবস্থার মতো।এই প্রথম বাড়িতে মিথ্যা বলল সে।খাবার টেবিলে রওনক যখন জিগ্যেস করেছিল কোথায় ছিল রিশা তখন চট করেই বলেছিল কিছু কেনাকাটা করতে গিয়েছিল সে। কেন জানি রাতিম ভাইয়ের কথাটা সবার সামনে বলতে পারেনি সে। কুহুর বিয়ের পাত্র রাতিম ভাই ছিল ভাবতেই অন্যরকম এক পীড়া দিচ্ছে। তবে এই জন্যই কি কুহুর বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ার পর ভাইয়ার কোনো প্রতিক্রিয়া ছিল না? শেষমুহুর্তে কি তবে ইচ্ছে করেই বিয়ে টা ভেঙ্গে দিয়েছে রওনক ভাইয়া? কিন্তু সে যে বলল কোনো অন্যায় করেনি! এমন কিছু করলে তো এটা ঘোর অপরাধ! নিজের বন্ধুর সাথে এটা কি করে করলো? রিশার ইচ্ছে হচ্ছে রওনককে সরাসরি গিয়ে বলতে, এতটা জঘন্য কাজ কি করে করলে ভাইয়া? কেন জানি বিষয়টা মানতে পারছে না রিশা।এখানে রাতিম ভাইয়ের কোনো দোষ নেই।বিছানায় পরে থাকা ফোনটা বেজে উঠতেই ভাবনার ঘোর কাটলো রিশার। স্ক্রিনে গোটা অক্ষরে রাতিম নামটা ভেসে আছে। মনে কোনোরকম দ্বন্দ্ব না রেখে রিসিভ করলো সে।
"আইরিশ তুমি হঠাৎ করে চলে গেলে! আসলে অনেক সময় আমাদের চোখের দেখা বা ভাবনাও ভুল হয়। আমার মনে হচ্ছে তুমি নীরবে একটা চাঁপা কষ্ট পাচ্ছ! নিজেকে খুব অপরাধী লাগছে। আমি ঘুমাতে পারছি না কেন জানি।
রাতিমের অনর্গল বলা কথায় অপ্রতিভ হলো রিশা। লোকটা তাকে বুঝে ফেলল কি করে? কাঠ গলায় শুধাল সে,
" আপনার খারাপ লাগার কারণ?
কয়েক সেকেন্ড থেমে বলল রাতিম,
"তুমি ভাবছ তোমার বান্ধবীর সাথে খুব অন্যায় হয়েছে।এর জন্য আমাকেও দোষী ভাবছ।সব শুনলে তোমার ভুল ভেঙ্গে যাবে।
রাতিমের কন্ঠস্বর কেমন পাল্টে গেছে মনে হচ্ছে। ঠান্ডা লেগেছে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।গলার স্বরটাও ভারী লাগছে খুব। লোকটার বলা কথাগুলো খুব সুন্দর।শেষের কথাগুলো দোটানায় ফেলে দিল রিশাকে।কুহুর সঙ্গে অন্যায় হয়েছে বলেই কি তার খারাপ লাগছে? নাকি অন্য কোনো কারণ আছে? মন বুঝতে পারলো না।
ফোনের ওপাশে অনবরত কেঁশে যাচ্ছে রাতিম।
" আদা- তেজপাতা থাকলে লাল চা খান।কমে যাবে। তুলসীপাতা থাকলে আরো ভাল।
নিজেকে যতেষ্ট স্বাভাবিক করে নিয়ে বলল রাতিম,
"সেই বিকেল থেকেই জ্বর। গা ম্যাজম্যাজে হয়ে আছে। বিছানা ছাড়তে পারছি না। আর চা করে খাব? রাতের খাবারটাও খেতে পারিনি।
" বৃষ্টির জল আপনার সহ্য হয় না জেনেও ভিজছিলেন কেন? এখন কি তাহলে নিজেকে দোষী ভাববো আমি?
"না না! একদম নয়। তুমি জানো আমি গ্রামের ছেলে।এরকম ভিজে অভ্যস্ত। জ্বর, ঠান্ডা হুটহাট সবারই হয়।
চুপ হয়ে গেল রিশা। একটা মানুষ এত সুন্দর করে কথা বলে কি করে? আবারও কয়েক সেকেন্ড কাঁশলো রাতিম। রিশা বলল,
" আজকে আর কিছু বলতে হবে না। যা বলার কালকে বলবেন। আমি অপেক্ষায় আছি।রাখছি ঘুমাব।
◾
রুমে বসে ফোনে খুব ব্যস্ত দেখাচ্ছে কুহুকে। গভীর মনোযোগ নিয়ে কিছু দেখছে সে।কানে হেডফোন। অগত্যা একটা বই নিয়ে বেলকনিতে গিয়ে বসেছে রওনক। মন বইয়ে দিতে পারছে না কিছুতেই।চোখ বার বার কুহুকে দেখছে।অথচ এই মেয়েটা তাকে খেয়াল করেছে? দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকাশে মনোযোগ দিল রওনক।বৃষ্টি আসবে আসবে ভাব।ঘরের ভেতর থেকে গানের আওয়াজ পেতেই তৎক্ষনাৎ সেদিকে তাকাল সে। খাটের উপর ফোনে গান বাজছে,
'সখী শিমুল তুলার বালিশে ঘুম পাড়াব আয়'
'পুবাল হাওয়ার বাতাসে চুল উড়াব আয়'
'কলমি শাকের ডগাতে ফুল ফুটাব আয়'
'আমন ধানের জমিতে আউষ ফলাব আয়'
গানের তালে কুহু নাচার চেষ্টা করছে। রওনক দ্রুত রুমে চলে আসলো।থামলো না কুহু। খুব সিরিয়াস লাগছে তাকে।বোকার মতো তাকিয়ে থেকে বলল রওনক,
"এসব কি?
এবার নাচ থামিয়ে দিল কুহু। কোমড়ে হাত রেখে বলল,
" এসব কি মানে? চোখে দেখতে পাচ্ছেন না আমি নাচ করছি! বই রেখে এখানে এসেছেন কেন? আমি একটু রিহার্সাল করার চেষ্টা করছি আরকি। আরিয়ান মাত্র পাঠালো গানটা।কনক স্যার নাকি এই গানটাই আমাদের জন্য সিলেক্ট করেছে। উনার ইউটিউব চ্যানেলে এই গানের নাচ দেখলাম একটা।ওটাই চেষ্টা করছি।
শেষে কুহুর গলা নরম হয়ে গেল। এগিয়ে গিয়ে রওনকের হাত ধরে টেনে নিয়ে আসলো সে। দীর্ঘকায় পুরুষকে খাটে বসিয়ে দিয়ে চমৎকার করে একটু হাসলো। রওনক এখনো হতবুদ্ধি! নাকি কোনো অলীক জগৎ এটা?
"এখন আমি নাচব আর আপনি দেখবেন। কেমন হয়েছে জাজ করবেন।ঠিকাছে?
·
·
·
চলবে.............................................